উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
আজকে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস ( wb class 10 history ) দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা অথবা, সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা " এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। "। তোমাদের পরিক্ষায় প্রধানত " সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা " এই প্রশ্নটিই 4 নম্বরের ( class 10 history question answer ) জন্য বেশি এসে থাকে। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে তোমরা " উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা বা, সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা " সম্পর্কে একটি খুব সুন্দর ইতিহাস নোট ( wb class 10 history notes in Bengali ) এখান থেকে পেয়ে যাবে।
Table Of Contents
• উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
• পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
• সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রাজা রামমোহন ভূমিকা
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা
• নারীদের অধিকারের সমর্থনে
• রাজনৈতিক চেতনার প্রসারে রামমোহন রায়
• ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতা
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
• পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
• সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রাজা রামমোহন ভূমিকা
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা
• নারীদের অধিকারের সমর্থনে
• রাজনৈতিক চেতনার প্রসারে রামমোহন রায়
• ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতা
উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
ভূমিকা : উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সেই সময়ে সমাজ ছিল একেবারেই অ-আধুনিক। তৎকালীন সময়ে সমাজ থেকে বিভিন্ন খারাপ দিকগুলি দূর করে সমাজে নবজাগরনের ক্ষেত্রে বা সমাজ সংস্কার করার জন্য সেরকমভাবে কেউ এগিয়ে আসেননি। বা এগিয়ে আসলেও তার সংখ্যা খুবই কম। তাই রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ থেকে সেই সমস্ত খারাপ দিক গুলি দূর করে সমাজ সংস্কার করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাই মূলত রাজা রামমোহন রায় ই ছিলেন ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত। তাই রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়।
Read More👇
What Is Car Insurance? Best Car Insurance Plan & Companies সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
What Is Car Insurance | Types Of Car Insurance | Best Car Insurance Plan For You
Read More 👇
সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটা। যেমন -
◆ সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা :
রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে " ব্রাহ্মসমাজ " করা হয়।
◆ সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন :
রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ গঠন করার পর, তিনি সেই সময়কার সমাজের একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কুপ্রথা " সতীদাহ প্রথা " -র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের সকল নেতারা সেরকমভাবেও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে আসেননি, কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত সেই ভয়ঙ্কর প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। রামমোহন রায় সেইসময়কার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাধারা যুক্ত কিছু মানুষের সইস্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। এবং সেখানে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের দাবি জানান। সরকার রাজা রামমোহন রায়ের এই আবেদন মেনে নিয়ে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 জ ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। ব্রাহ্মসমাজের অথবা রাজা রামমোহন রায়ের এই আন্দোলনের ফলেই সেই সময় সমাজের একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা বন্ধ হয়।
◆ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতা : রাজা রামমোহন রায় বিভিন্ন ধর্মে প্রচারিত জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা ইত্যাদি গুলির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। রাজা রাজা রামমোহন রায়ের কাছে পৌত্তিলিকতা, পুরহিততন্ত্র, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল অর্থহীন। রাজা রামমোহন রায় নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন।
◆ শিক্ষা বিস্তারে সমাজ সংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা :
◆ পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ : রাজা রামমোহন রায় তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সমাজ থেকে আধুনিক শিক্ষার অভাবকে দূর করে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তিনি সমাজকে আধুনিক করে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।
◆ অ্যাংলো হিন্দু স্কুল : তৎকালীন সময়ে খুবই কম পরিমাণ ইংরেজি বিদ্যালয় ছিল। তাই সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ছিল প্রচুর। তাই রাজা রামমোহন রায় এই অভাব দূর করতে 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের উদ্যোগেই কলকাতায় " অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক " একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলে।
◆ বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে সমাজকে আধুনিক করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূর করে সমাজে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসার করা।
আরও পড়ুন👇
◆ নারীদের অধিকারের সমর্থনে : রাজা রামমোহন রায় সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে প্রসারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে আসেন। এবং ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষার সমর্থন,সমাজে নারীদের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
◆ রাজনৈতিক সংস্কার : রাজা রামমোহন রায় রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় 1821 খ্রিস্টাব্দে সংবাদ কৌমুদী নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক গুলি আলোচনা করতেন।
◆ উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে, রাজা রামমোহন রায় সেই সময়ের একজন আধুনিক চিন্তাশীল মানুষ হয়েও তার মধ্যে যথেষ্ট আধুনিক মানসিকতা ছিল। রাজা রামমোহন রায়ের সেই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি সমাজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভালো -মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাই তিনি সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে এবং সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে এবং নানা ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার ডাফ,ডেভিড হেয়ার প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের নানাভাবে সমর্থন করে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটান। এবং সতীদাহ প্রথার বন্ধ, ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে নারীদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের পুস্কত- পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটান।
আশাকরি যে আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি আজকের ব্লগ থেকে " উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা অথবা,সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা " তার সম্পর্কের যে আলোচনা করা হয়েছে,তা তোমাদের একটুও ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোস্ট গুলি পড়ে দেখতে পারো।
Tags :