![]() |
দশম শ্রেণি বাংলা সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণীর বাংলা অথবা মাধ্যমিক বাংলা (WBBSE Class 10 Bengali Question Answer And Suggestion) নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকের বিভিন্ন বড় প্রশ্ন উওর তোমাদেরসঙ্গে শেয়ার করবো। এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা মাধ্যমিক বাংলা নাটক বা দশম শ্রেণীর বাংলা (WBBSE Madhyamik Bengali Question Answer And Suggestion 2023)
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বড় প্রশ্ন উত্তর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব,যা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের এই ব্লগে থাকছে-
• প্রশ্নঃ জানিনা, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি। - পলাশি নামকরণের কারণ নির্দেশ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
• প্রশ্নঃ “আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে আশ্বাস দিন কাদের কাছে বক্তা ‘ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?
• প্রশ্নঃ 'আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ' -আমি ও আমাদের বলতে এখানে কার, কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে?
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।।
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
• প্রশ্নঃ- 'কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা' —কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী?
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অনুসারে লুৎফার চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা
• প্রশ্নঃ “আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে আশ্বাস দিন কাদের কাছে বক্তা ‘ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?
• প্রশ্নঃ 'আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ' -আমি ও আমাদের বলতে এখানে কার, কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে?
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।।
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
• প্রশ্নঃ- 'কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা' —কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী?
• প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অনুসারে লুৎফার চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা
দশম শ্রেণি বাংলা সিরাজউদ্দৌলা নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর || WBBSE Class 10 Bengali Question Answer And Suggestion 2023
প্রশ্নঃ জানিনা, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি। - পলাশি নামকরণের কারণ নির্দেশ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উওরঃ নদীয়া জেলার ভাগীরথীর পূর্বদিকে বাংলার ঐতিহাসিক স্থান হল পলাশি। পলাশি নামক এই স্থানটিতে লাল পলাশের রঙে রঙিন হয়ে থাকতো বলে এই জায়গাটির নাম হয়েছিল পলাশি।
প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ এখানে এই বক্তব্যটি হল বাংলার শেষ নবাব সিরাজ এর। সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে পলাশির যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা না জেনেই সিরাজ তার এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নবাব সিরাজ জানতেন যে কোম্পানির সাথে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া কঠিন! কিন্তু তবুও তিনি যুদ্ধ করবেন। নবাব হলেন এমন একজন ট্রাজিক নায়ক যার চারিদিক শত্রুদের দ্বারা ঘেড়া। নবাব সিরাজের বাইরে রয়েছে ইংরেজরা,তার সভার মধ্যে রয়েছে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ ও মীরজাফরের মত কিছু সভাসদ, যারা আদতেও পলাশির যুদ্ধে নবাবকে সাহায্য করবে কিনা তা নবাব জানে না। সেইসঙ্গে নবাবের মহলেই রয়েছেন ঘষেটি বেগম যিনি নিজ পুত্রশোকে এবং নিজের কষ্টে নবাবকে অভিশাপ দিয়ে তার মৃত্যু কামনা করেন। চারিদিকে শত্রু এবং মানসিক চাপ ও মনোকষ্টের দ্বারা জর্জরিত হয়ে নবাব নানাভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এবং এরই মধ্যে নবাব মানসিক টানাপোড়েন এ আশঙ্কা করেন যে পলাশে রাঙা পলাশির রক্তেরনেশা মেটেনি। তাই সে রক্ত চায়! কিন্তু নবাব ভালো করে জানেন না যে আদতেই পলাশি কার রক্ত চায়.. আর কী-ই বা এই পলাশির যুদ্ধের পরিণতি।
আরও পড়ো👉 : 20 টি সেরা বাংলা গুড মর্নিং মেসেজ বা বাংলা সুপ্রভাত শুভেচ্ছা বার্তা
প্রশ্নঃ “আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে আশ্বাস দিন কাদের কাছে বক্তা ‘ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?
উত্তরঃ প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাটক থেকে গৃহীত এই উক্তিটির বক্তা হলেন নাটকের প্রধান চরিত্র, অর্থাৎ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের। তিনি তাঁর সভাসদ জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, দুর্লভ রায়, মীরজাফর প্রমুখর কাছে নবাব সিরাজ, সাহায্যের ভিক্ষাপার্থী। এখানে সেই কথাই বলা হয়েছে।।
নবাবের সভাসদ জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, দুর্লভ রায়, মীরজাফর প্রমুখ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়ে তাঁকে বাংলার সিংহাসন থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। নবাব একথা জানার পরেও, তিনি তাঁদের শাস্তি বিধান না করে সৌহার্দ্যের ডাক দেন। কারণ বাংলার নবাব হিসেবে, সিরাজের কাছে ব্যক্তিগত শত্রুতার চেয়ে, বাংলা সুরক্ষাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই নবাব সিরাজ তার সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিভেদ এবং শত্রুতা বাংলার এই দুর্দিনে,সিরাজের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। নবাব ভালো করেই জানতেন, ইংরেজদের থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে হলে সবার আগে তাকে দেশীয় শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এবং সেজন্যই তিনি, বাংলাকে রক্ষা করার স্বার্থে তার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা সভাসদদের কাছেও সাহায্যের ভিক্ষা চাইতে পিছুপা হননি।।
সিরাজ মনে প্রানে চেয়ে ছিলেন, তার সমগ্র বাংলায় দুর্দিনে তাঁর সভাসদরা যেন তাকে ছেড়ে না যায়।। এবং তারা নবাবের পাশে দাড়ানোর মাধ্যমে যেন সমগ্র বাংলাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে।।
প্রশ্নঃ 'আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ' -আমি ও আমাদের বলতে এখানে কার, কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে?
উওরঃ প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটক থেকে গৃহীত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস। নবাব সিরাজ তার কিছু সভাসদদের এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের নিজেদের সন্ধি ভঙ্গ করে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ ওয়াটসের বিরুদ্ধে আনেন এবং তিনি যখন নিজের ডেকে ওয়াটসের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ করেন, তখন ওয়াডস আলোচ্য উক্তিটি করেন। বক্তা ওয়াটস এখানে আমি বলতে নিজেকে এবং আমাদের বলতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাকি কর্মচারীদের কথা বলেছেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজদ্দৌলার মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্থাপিত হয়েছিল। কোম্পানি যাতে সন্ধির সকল শর্ত পূরণ ও রক্ষা করে, তা দেখার জন্য কোম্পানির প্রতিনিধিরূপে ওয়াটস্স্কে মুর্শিদাবাদে রাখা হয়েছিল। ওয়াটস্কে লেখা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের চিঠি নবাবের হস্তগত হওয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা প্রমাণিত হয়ে যায়। অন্যদিকে, ওয়ার্টসের লেখা একটি চিঠি নবাব পেয়েছিলেন যা থেকে ষড়যন্ত্রে ওয়াটসের ভূমিকাটিও স্পষ্ট হয়। এইভাবে নবাব যখন কোম্পানির যাবতীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি দরবারে স্পষ্ট করে তুলেছিলেন তখন ওয়াটস্ না জানার ভান করে উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্নঃ সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।।
উওরঃ প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের এক অসাধারণ রচনা হলো সিরাজউদ্দৌলা নাটক। এই নাটকের প্রধান চরিত্র হলেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজ। সিরাজদ্দৌলা নাটক থেকে আমরা সিরাজের চরিত্রের অসাধারণ কিছু দিক আমরা দেখতে পাই। যা সিরাজকে আমাদের কাছে সত্যিই একজন অসাধারন নায়ক হিসেবে তুলে ধরে।
নাট্যাংশ অনুসারে সিরাজের চরিত্র যেই প্রধান দিক গুলি তাকে অসাধারণ করে তোলে, তা হল -
দেশাত্মবোধঃ নবাব সিরাজ তার কিছু সভাসদদের করা, তার বিরুদ্ধেই যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তিনি সেটা জানার পরেও তিনি তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। নবাব চাইলেই তাদের শাস্তি দিতে পারতেন কিন্তু তিনি জানেন যে, তিনি যদি তাদের শাস্তি দিতেন তাহলে দেশের স্বার্থে বা বাংলার স্বার্থে যে যুদ্ধ তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছেন, সেই লড়াইতে নবাব মীরজাফরদের দেশীয় শক্তির সাহায্য কখনোই পাবেন না। এজন্য নবাব তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে নিজের শত্রুদের কাছে মাথানত করেছিলেন।
বুদ্ধিমানঃ নবাবের সাধারণ বুদ্ধির পরিচয় তখনই পাওয়া যায়, যখন নবাব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ পেয়েও তিনি তাদের কোন শাস্তি দেন না। কারণ নবাব জানতেন,, যদি নবাব সেই সময়ে তাদের শাস্তি দিয়ে ফেলেন তাহলে ভবিষ্যতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে করা লড়াইয়ে নবাব কখনোই দেশীয় শক্তির সাহায্য পাবেন না। আর এজন্যই নবাব সিরাজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই বতর্মান পরিস্থিতিতে সেই কাজটি করেন, যেটি করা হয়তো তার উচিত ছিল না। কিন্তু নবাব সেটি করেছিলেন তার ভবিষ্যতকে চিন্তা করেই।
মুক্ত- মানসিকতাঃ নবাব সিরাজ একজন মুসলিম শাসক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই বাংলাকে না তো শুধুমাত্র মুসলিমদের বলেছিলেন! আর নাতো শুধুমাত্র হিন্দুদের বলেছিলেন। তিনি বাংলার দুর্দিনে হিন্দু-মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই খারাপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে বলেন। এবং নবাব সিরাজের এই হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথার মাধ্যমেই তার মুক্ত জাতীয়তা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
আত্মসমালোচনাঃ নবাবের সভাসদদের করা ষড়যন্ত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, নবাবের সামনে তার এমন কিছু ভুল উঠে আসে যার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন, নবাব সিরাজের নিজেরও কিছু ভুল হয়েছে।। এবং তার এই ভুলের জন্য নবাব সিরাজ নিজের ভুল স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
দুর্বল মানসিকতাঃ নবাব সিরাজ তার শত্রুদের চক্রান্ত বুঝতে পারার পরেও তিনি তাদের কোন শাস্তি দিতে পারেন না অন্যদিকে ঘষেটি বেগম যখন নবাব সিরাজকে অভিশাপ দিয়ে তার মৃত্যুর কামনা করেন, তখন সেই পরিস্থিতিতে নবস্ব নিজের মুখ থেকে কোন কঠোর শব্দ বের করতে পারেন না।
তার বদলে নবাব সিরাজ নিজেই তার মানসিক দূর্বলতার কথা স্বীকার করেন- "আমি পারি না! শুধু আমি কঠোর নই বলে।"
এবং উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমেই আমরা নবাব সিরাজের এক অসাধারণ চরিত্রের সম্পর্কে জানতে পারি। সব মিলিয়ে নবাব সিরাজ হলেন বাংলার একজন ট্র্যাজিক নায়ক।
প্রশ্নঃ সিরাজদৌলা নাটক অনুসারে লুৎফা চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো
উওরঃ- প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রধানত দুটি নারী চরিত্র রয়েছে। একটি হলো সিরাজের মাসি ঘষেটি বেগম এবং দ্বিতীয়টি হলো বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সহধর্মিণী বা সিরাজপত্নী লুৎফা। সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সমগ্র অংশজুড়ে আমরা লুৎফা চরিত্রটির কোনো বাক্য না দেখতে পেলেও নাটকের শেষ পর্যায়ে নবাব সিরাজ যখন বিভিন্ন দিক থেকে ক্লান্ত হয়ে মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েছেন, ঠিক তখনই আমরা লুৎফা চরিত্রটির বিশেষ আগমন ঘটতে দেখি এবং সেখানে নাটকে লুৎফা চরিত্রটির বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে। যেমন-
স্বামীর শুভচিন্তকঃ-
নাট্যাংশে লুৎফাকে আমরা প্রথম দেখতে পাই ঘসেটি বেগমের সাথে নবাবের মতিঝিলের অধিকার নিয়ে যখন বাদানুবাদ চলছিল তখন। ঘসেটির কথায় শওকতের মতো নবাবকে কেউ যেদিন হত্যা করবেন সেদিনই তিনি শান্তি পাবেন। স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিসম্পাত শুনে লুৎফা অনুরোধের সুরে ঘসেটিকে এমন কথা বলতে বারণ করেন। ঘসেটির ভর্ৎসনা সত্ত্বেও লুৎফা তাঁর উদ্দেশ্যে একটা কটু কথাও উচ্চারণ করেননি, এটি তার বিনয়।
প্রকৃত সহধর্মিনীঃ-
স্বামীর প্রতি লুৎফা একনিষ্ঠ, তাই স্বামীর বিপদের বিষয়ে সে উদ্বিগ্না। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বামীর পাশে থেকে, কাজে সাহায্য করেছেন। ঘসেটির প্রতিহিংসা থেকে বাঁচাতে নবাবকে মতিঝিল ফিরিয়ে দেবার কথা বলেছেন। স্বল্প রাজত্বকালে নানান সমস্যায় দীর্ণ সিরাজকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে যোগ্য সঙ্গিনীর পরিচয় দিয়েছেন। লুৎফা হলেন সেই নারী যিনি ট্র্যাজিক নায়কের পাশে থেকে তাকে ভালোবাসা-সেবা-সাহস ও আস্থা জুগিয়েছেন যাতে হতাশ সমস্যাদীর্ণ নবাবের যন্ত্রণার ক্ষর্তে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়েছে।
প্রশ্নঃ“মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।” – কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল?
উওরঃ প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন সেনগুপ্তের এক অসাধারণ রচনা হলো সিরাজদ্দৌলা নাটক। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজউদ্দৌলা নাটকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি রয়েছে। নাট্যাংশে ইংরেজ অ্যাডমিরাল ওয়াটশন পত্র লিখেছিলেন মুর্শিদাবাদে থাকা ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসনকে। এই পত্রটি যখন নবাব সিরাজের হাতে আসে তখন নবাব সিরাজের দরবারে ওয়াটসনকে হাজির করা হয়, নবাব সেই চিঠির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে হওয়া চক্রান্ত সম্পর্কে জানতে পারেন। কিন্তু নবাব সেই চিঠির তার সমস্ত সভাসদদের মুখোশধারী শয়তান দের মুখোশ দিত চান। এজন্যই তিনি ওয়াটস কে সামনে রেখে মুন্সিজি কে চিঠিটা পড়তে বলেন - এতে লেখা ছিল - কর্নেল ক্লাইভ যে সৈন্যের কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন, তাহা শীঘ্রই কলিকাতায় পৌছিবে। আমি সত্বর আর একখানা জাহাজ মাদ্রাজে পাঠাইয়া সংবাদ দিব যে, আরাে সৈন্য এবং আরাে জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানাে যাইবে না।।।
প্রশ্নঃ- 'কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা' —কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী ?
উঃ- প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রধান চরিত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব,সিরাজ তার সভায় উপস্থিত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।
নবাব সিরাজের ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য উক্তিটি করার পেছনে যে কারণ ছিল, তা হল-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে আগমনের পর 1717 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির প্রতিনিধিরা দিল্লির মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে বার্ষিক 3000 টাকার বিনিময় বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার এবং অন্যান্য কিছু অধিকার পায়। এদিকে বাংলায় নবাব আলীবর্দী খাঁর কোন পুত্র না থাকায় তার কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের প্রথম পূত্র সিরাজকে বাংলার সিংহাসনে বসান। সিংহাসনে বসার পর থেকেই সিরাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত চলতে শুরু করে।।সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঘষেটি বেগম, সিরাজের সভাসদ রাজবল্লভ, জগৎশেঠ? রায়দুর্লভ,মীরজাফর প্রমুখ। সিরাজ তার বিরুদ্ধে হওয়া সেই সমস্ত চক্রান্তের গতি প্রকৃতি বুঝতে তাঁর সভাসদদের সকল গোপনীয় কার্যকলাপের খবরাখবর রাখতেন। এরমধ্যেই ইংরেজ প্রতিনিধি, ওয়াটসের কাছে আসা কিছু গোপন পত্রও সিরাজের হাতে এসে পৌঁছায়। এই পত্রগুলির মধ্যে ছিল অ্যাডমিরাল ওয়াটসন -এর পত্র ও ওয়াটসের পত্র। পত্রগুলি থেকে সিরাজ জানতে পারেন, কোম্পানির ফৌজ আরো জাহাজ ও আরো সৈন্যদলসহ বাংলার অভিমুখে যাত্রা করেছে, এমনকি অ্যাডমিরালও বলেছেন যে, তিনি বাংলায় তএমন আগুন জ্বালাবেন যে তা গঙ্গার জল দিয়েও নেভানো যাবে না। অর্থাৎ এটা থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা বাংলাতে দখল করার জন্য এবং বাংলার সিংহাসন থেকে সিরাজকে উৎখাত করার জন্য কঠিন চক্রান্ত শুরু করেছেন। ওয়াটসের পত্রে বলা ছিল নবাবের উপর নির্ভর না করে চন্দননগরের ফরাসি কুঠি আক্রমণ করাই শ্রেয়। নবাবের প্রতি এহেন অমর্যাদা প্রদর্শন ও চক্রান্ত স্বভাবতই সিরাজের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া তিনি আরো জানতে পারেন যে, ওয়াটস তাঁরই সভায় স্থান পেয়ে সভাসদ ও আত্মীয়স্বজনের কানে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদের নবাব বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছেন। তারা নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য রাতের আঁধারে অস্ত্রে শান দিচ্ছে। নবাবের পিঠ পেছনে এরূপ কুৎসিত এক চক্রান্ত স্বাভাবিকভাবেই নবাবের পক্ষে কখনই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই তিনি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে 'কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা' মন্তব্যটি করেছিলেন।
আশাকরি যে, দশম শ্রেণীর বাংলা অথবা মাধ্যমিক বাংলা (WBBSE Class 10 Bengali Question Answer And Suggestion) নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটক থেকে যে সমস্ত প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।
Tags: দশম শ্রেণি বাংলা সিরাজউদ্দৌলা নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক বাংলা সিরাজউদ্দৌলা বড় প্রশ্ন উত্তর | সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উওর | WBBSE Class 10 Bengali Question Answer And Suggestion 2023