দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা বড় প্রশ্ন উওর || উচ্চমাধ্যমিক আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর

0

 

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা বড় প্রশ্ন উওর || উচ্চমাধ্যমিক আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা বড় প্রশ্ন উওর

এই ব্লগে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অথবা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা আমার বাংলার কলের কলকাতা রচনার কয়েকটি বড় প্রশ্ন উত্তরের 1st part তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা কলের কলকাতা গল্পটি থেকে যে কিছু বড় প্রশ্ন উওর 2023 শেয়ার করলাম, তার বাইরের প্রশ্ন গুলো পরবর্তীতে শেয়ার করা হবে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা বড় প্রশ্ন উওর || উচ্চমাধ্যমিক আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর 

প্রশ্নঃ মোনা ঠাকুর তার কলের কলকাতা ভ্রমণের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন,তা রচনা অবলম্বনে আলোচনা করো

উওরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কলের কলকাতা রচনাটি লেখার ২৫-৩০ বছর আগে তাদের লেখকদের গ্রামের মোনা ঠাকুর ছোটবেলায় কলকাতায় গিয়েছিলেন কালীঘাটের মন্দিরে পইতে নিতে। গ্রামের বালক মোনা ঠাকুর কলকাতায় রীতিমত বিস্মিত হয়ে যান যান্ত্রিক কলকাতার রুপ দেখে। 

কলকাতায় এসে বিস্মিত মোনা বে দেখে যে, সেখানে মোটরগাড়ি চলে হুসহুস করে, ট্রাম ঠনঠন করে। রাস্তায় সর্বত্র লোক গিজগিজ করছে। কত কত বাড়ি, কত কাঁ কত গাড়ি ! কোথাও মাটি নেই, নেই কোনো সাঁকোও। শুধু বালি চুন-ইট আর পাথর। এই কলের কলকাতায় টাইমকল খুললে জল পড়ে, সুইচ টিপলে অন্ধকারে জ্যোৎস্না বিচ্ছুরিত হয়।

এখানকার রাত রাত নয়, দিন নয় দিন। কত শত অলিগলি, কত শত মোড় এখানে। এসব গলিতে ঘুরতে ঘুরতে তার মাথা বনবন করে, পা টনটন করে। একদিন হাঁটতে হাঁটতে মোনা দেখে তার ছায়ার পাশে লম্বাচওড়া আর একটা ছায়া। পেছন ফিরে দেখে তার প্রায় মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। মোনা দেখে ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, ইয়া বড়ো গোঁফ-দাড়ি বিশিষ্ট একটি লোক লম্বা একটি লাঠি হাতে। দাঁড়িয়ে। পরনে তার পাঞ্জাবির ওপর রংচঙে, হাফহাতা ফতুয়া, কাঁধে ঝুলি। মোনা ভীষণাকৃতি এই লোকটাকে ছেলেধরা ভেবে আশঙ্কা করছিল যে, লোকটি নিশ্চয়ই তাকে খপাৎ করে ধরবে। এ কথা ভেবে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে যখন মোনা ভগবানের নাম নিচ্ছিল, তখন লোকটি হঠাৎ তাকে ছাড়িয়েএগিয়ে গেলে ধড়ে প্রাণ আসে তার। পথে হাঁটতে হাঁটতে মোনা পথের দু-পাশের অসংখ্য দোকান, বাজার দেখতে থাকে।  লেখককে জানায়, কলকাতায় “গাড়ি চাইলে গাড়ি, বাড়ি চাইলে বাড়ি। যা চাইবে তাই পাবে।” মোনা ঠাকুর ‘কলের কলকাতা’-র এই বর্ণনাই দিয়েছিল বালক লেখককে।

প্রশ্নঃ কলকাতা থেকে মোনা ঠাকুররা সাত তাড়াতাড়ি কেন ফিরে এসেছিল, তা 'কলের কলকাতা' রচনার অন্তর্গত মোনা ঠাকুরের ভাষ্য অবলম্বন করে লেখো।

উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচিত আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত 'কলের কলকাতা' রচনায় হিন্দু-মুসলিমের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখা যায়। লেখকের গ্রামের বালক মোনা ঠাকুর কালীঘাটে পইতে নিতে কলকাতায় গিয়ে সপরিবারে এক ধর্মশালায় উঠেছিল। মোনার নিজস্ব ভাষ্য অনুযায়ী, পইতে নেওয়ার পর হঠাৎ একদিন তারা দেখে যে খেপে উঠেছে কলকাতা। শহরের বাড়িগুলোর দরজা-জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িগুলো তাই ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। বাড়িগুলোর বড়ো বড়ো দালানগুলি তখন যেন একেবারে হানাবাড়ি। রাস্তাঘাট শুনসান। শহরে মানুষজন আছে কিনা তা বোঝাই যাচ্ছে না। অন্ধকার রাতে মাঝে মাঝেই প্রবল চিৎকার কানে ভেসে আসে—“হা রে রে রে রে রে! মুসলমানগুলোকে কাটব। হা রে রে রে রে। হিন্দুগুলোকে কাটব।” প্রকাশ্য রাস্তায় শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। প্রত্যেকের হাতেই লাঠি বা ছুরি। রক্তের স্রোত বয়ে যায় রাস্তায়। পথে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘরবাড়িতে শুরু হয় আগুন ধরানো। সাহেবদের অবশ্য কোনো ভয় নেই এই দুঃসময়েও। হিন্দু বা মুসলমান—কেউই তাদের স্পর্শ করে না। যাইহোক, এই দাঙ্গা দেখে ধর্মশালায় থাকা যাত্রীরা স্বভাবতই অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রাণ নিয়ে যেভাবেই হোক পালাতে চায় তারা, মোনারাও। তারা চলে গেলে পান্ডাদের উপার্জনের ব্যাঘাত ঘটবে বলে কালীঘাটের পান্ডারা তাদের কলকাতা ত্যাগ করতে নিষেধ করে। অভয় দিয়ে জানায় যে, তারা থাকতে যাত্রীদের কোনো ভয় নেই। কিন্তু সে কথা ধর্মশালাবাসীরা শোনে না। খ্যাপা শহর কলকাতা। কখন যে কী হয়—কিছু বলা যায় না। এসব ভেবে তারা কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ছ্যাকড়া গাড়ি পর্যন্ত তারা ভাড়া করে না। এক রাতের অন্ধকারে মোনা ঠাকুররা নিঃশব্দে কলকাতা থেকে বিদায় নেয়। এভাবেই মোনা ঠাকুররা সাত তাড়াতাড়ি কলকাতা থেকে বিদায় নিয়েছিল।

প্রশ্নঃ “তবু ভালো এই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তা”—এই রাস্তার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ ‘কলের কলকাতা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় গ্রামের বাড়িতে তাঁর এগারো বছরের শৈশব কাটিয়ে পরিবারের সঙ্গে কলকাতা শহরে উঠে আসার পর বিকেলবেলায় রাস্তায় একা একা ঘুরে বেড়াতেন। বউবাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে এভাবেই তিনি একদিন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তায় এসে পৌঁছোন। এই রাস্তা থেকে আকাশ অনেক চওড়া দেখা যায়। এ রাস্তার মানুষগুলো একটু আলাদা ধরনের। তারা হো হো করে হাসে, হাততালি দেয়, ঢোলক বাজায়। কেউ কাউকে উড়ে বা মেড়ো বা বাঙাল বলে খ্যাপায় না। এখানকার একটি সরু গলির মধ্যে এঁদো ঘরে থাকে ফুচকা, পকোড়া আর আলুকাবলিওয়ালার দল। নেবুতলার মোড়ে থাকে কাবলিওয়ালারা। এই রাস্তার কাছ দিয়ে যেতে বালক লেখক ভীষণ ভয় পেতেন। কারণ, তিনি শুনেছিলেন জায়গাটি নাকি ছেলেধরাদের আস্তানা। লেখক তাদের হাতে কখনও কোনো ঝুলি দেখতে না পেলেও ঝুলি না থাকার ব্যাপারটা তিনি একেবারে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি।

সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তার কলে লেখক প্রত্যক্ষ করেছিলেন ভিস্তিওয়ালাদের ভিড়। এ ছাড়া ছিল আরও একদল মানুষ, যারা ড্রেনের জলে গা ধুচ্ছিল। সুর টেনে টেনে সেখানে রাস্তার সুরকির ওপর দুরমুশ চালাচ্ছিল কর্পোরেশনের কুলি। এভাবেই ঘামের গন্ধ আর গাড়ি চলার শব্দকে সঙ্গে নিয়েই সেখানকার চুন-বালি ইটের সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করেছিলেন লেখক। সন্ধ্যাবেলায় সেখানেই দাঁড়িয়ে লেখক দেখেছিলেন ট্রামের তারে চকমকির আগুন আর পেতলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মুস্কিল আসান’-দের।

প্রশ্নঃ কলকাতায় আসার পর 'কলের কলকাতা' রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কলকাতাকে একেবারেই ভালো লাগেনি কেন ?

উত্তরঃ ‘কলের কলকাতা' রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় শৈশব জীবন গ্রামবাংলায় কাটিয়ে এগারো বছর বয়সে কলকাতায় আসেন।

কলকাতায় এসে বালক লেখক দেখতে পান চারদিকে প্যাকিং বাক্সের মতো অসংখ্য বাড়ি। একটা বাড়ির সঙ্গে আর একটা বাড়ি যেন আঠা দিয়ে আটকানো। সকালবেলায় জলের

কলের এবং বাসন মাজার শব্দে এখানে তাঁর ঘুম ভাঙে। রোদ্দুরের দেখা তেমন পাওয়া যায় না গলির মধ্যে থেকে। তবু ঘুম থেকে উঠে কাকের ত্রাহি ত্রাহি আওয়াজ শুনে বুঝতে পারেন যে, সকাল হয়েছে। গ্রামবাংলায় খোলা আকাশের নীচে শৈশব কাটানো লেখক এখানে আকাশের দেখা পান না। গলির মোড়ে গেলে দেখা যায় ফুটো পয়সার মতো আকাশ। তাও যে তিনি দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে তা দেখবেন, উপভোগ করবেন, তার উপায় নেই। পেছন থেকে মানুষের ভিড় তাঁকে ঠেলে নিয়ে যাবে। তা ছাড়া, এ শহরের মানুষজন গম্ভীর, কেউ কখনও কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাও করে না। যে, “কেমন আছো হে!” লেখকের শৈশবের পূর্ব বাংলার ডুগডুগির হাট, দুধপাতলার মাঠ অনেক বেশি সুন্দর। কলকাতার লোকেরা বিকেলবেলায় কলকারখানার কাজ সেরে কালিঝুলি মেখে শ্রান্ত শরীরে টলতে টলতে বাড়ি ফেরে। আর উলটোদিকে লেখকদের গ্রামের পশ্চিমদিকের আকাশে অস্তমিত সূর্যের মনভোলানো সিঁদুরের টিপের মতো আভা লেখকের মনকে লুঠ করে নিত। আর সেখানকার ইচ্ছামতী নদীর তো তুলনাই নেই। পাড়ে দাঁড়িয়ে বুক টান করে জলে ঝাঁপ দাও আর ডুবসাঁতার দিয়ে জলের ভেতর থেকে শামুক তোলো। সেই নদীর কাছে কলকাতার সুতোর মতো জলের কলের কোনো তুলনাই হয় না। গ্রামবাংলায় শৈশব কাটিয়ে সদ্য কলকাতা আসা বালক লেখকের তাই মনে হয়েছিল যে, ‘খোলা মাঠ আর নীল চোখের মণির মতো আকাশ'-এর অধিকারী গ্রামবাংলার কাছে কলকাতা শহর কিছু নয়।

ধন্যবাদ।

Tags : কলের কলকাতা বড় প্রশ্নোত্তর | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা কলের কলকাতা প্রশ্ন উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা প্রশ্ন উত্তর | আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কলের কলকাতা বড় প্রশ্ন উওর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top