রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা,
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্য্যাদা আলোচনা করো।
অথবা, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
এই সম্পূর্ণ নোটটি ছায়া প্রকাশনীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহায়িকা থেকে নেওয়া হয়েছে। সময়ের অভাবেই এমনটা করতে হলো।। এতে যদি কারোর কোনো সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন।।
উত্তরঃ মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা ব নেত্রীকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। অবশ্য রাজ বিধানসভায় কোনো দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতেপারেন। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রের মতো অঙ্গরাজ্যগুলিতে যে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু রয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
(1) রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা:
সংবিধানের ১৬৩ (১) নং ধারা অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভা শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে সাহায্য করতে ও পরামর্শ দিতে পারে। মন্ত্রীসভায় গৃহীত যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও আইন সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্বন্ধে রাজ্যপালকে অবহিত করানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যপাল এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী তা জানিয়ে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী অনেক সময় নিয়মিতভাবে রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার জন্য সচিবদের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তবে দেখা যায় যে, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই রাজনৈতিক দলের শাসন জারি থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের অধিকতর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
[2] রাজ্য বিধানসভার নেতা:
রাজ্য বিধানসভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ভূমিকা পালন করেন | বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা, প্রয়োজনে ভেঙে দেওয়ার জন্য রাজ্যপালকে পরামর্শ দিতে পারেন তিনি। বিধানসভায় সরকারি নীতি উপস্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তিনি সহকর্মী মন্ত্রীদের সাহায্য করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি বিধানসভায় পাস করানোর দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখেন। রাজ্যের জটিল কোনো সমস্যা নিয়ে তিনি বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।
[3] রাজ্য মন্ত্রীসভার নেতা:
রাজ্য মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রীর স্থান সবার ওপরে। মন্ত্রীসভায় তিনি সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। সংবিধানের ১৬৩(১) নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন এবং প্রয়োজন হলে পদচ্যুত করতে পারেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন এবং পুনর্বণ্টন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি দপ্তরের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। সেদিকে তিনি দৃষ্টি রাখেন। মন্ত্রীসভার বৈঠক তিনি আহ্বান করেন এবং সভায় সভাপতিত্ব করে থাকেন। কোনো কারণে কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মতবিরোধ ঘটলে সেই মন্ত্রীকে তিনি পদত্যাগ করতে বলতে পারেন ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান।। সরকারি নীতির সমন্বয়সাধনের প্রধান দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। বিভিন্ন দফতরের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। অত্যন্ত বিচক্ষগতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভার। ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে চলতে হয়।
[4] সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা:
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতাও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। রাজ্য আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে দল বা জোটকে সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। দলের বা জোটের নীতি ও কর্মসূচিকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি নীতির মাধ্যমে রূপায়ণ করেন। দলের বা জোটের ভাবমূর্তি মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের ওপর নির্ভরশীল। দলের বা জোটের শৃঙ্খলা ও সংহতি রক্ষায় তিনি সদা সতর্ক থাকেন। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সাহায্য করে।
[5] জনমতের সংগঠক:
জনসংযোগ রক্ষা মুখ্যমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাজ্যের বিভিন্ন জনপ্রিয় উৎসব-অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেন। এ ছাড়া বেতার, দূরদর্শন, সংবাদপত্র, জনসভা ইত্যাদির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নানারকম সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলেন। বস্তুতপক্ষে, রাজ্যের জনগণ মুখ্যমন্ত্রীকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের কান্ডারি বলে মনে করে। এই কারণে রাজ্যবাসীর দাবিদাওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে মুখ্যমন্ত্রীকে কাজ করতে হয়। রাজ্যের জনমত অনুধাবন ও নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদাঃ
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলির প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর পদটির স্বতন্ত্র পুরুত্ব রয়েছে। রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়, কারণ তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্য প্রশাসন পরিচালিত হয়। তবে কেন্দ্রের মতো রাজ্যগুলিতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থাকলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রবল ক্ষমতার অধিকারী নন। কেন্দ্রের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সঙ্গে রাজ্যের সংসদীয় কাঠামোর পার্থক্যের প্রধান কারণ রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই, কিন্তু অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্ববিবেচনা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার মধ্য দিয়ে স্বীকৃত হয়েছে। রাজ্যপালের এই ক্ষমতার প্রয়োগকে আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে রাখা হয়েছে। তবে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই রাজনৈতিক দল সরকারি ক্ষমতায় আসীন থাকলে রাজ্যপাল নেহাতই নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভূমিকা পালন করেন। সেক্ষেত্রে রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাজ করার পথে কোনো বাধা থাকে না। অন্যদিকে, কেন্দ্র ও রাজ্যে ভিন্ন দল ক্ষমতাসীন থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনপুষ্ট রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিকূল অবস্থায় ফেলতে পারে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের দলীয় সমর্থন ও সহযোগিতা এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা, ক্যাবিনেটের সহযোগিতা প্রভৃতির উপর মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভরশীল।
ধন্যবাদ।