গারো পাহাড়ের নিচে বড় প্রশ্ন উত্তর || উচ্চমাধ্যমিক বাংলা || আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর

0

 

গারো পাহাড়ের নিচে বড় প্রশ্ন উত্তর || উচ্চমাধ্যমিক বাংলা || আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর
গারো পাহাড়ের নিচে বড় প্রশ্ন উত্তর


প্রশ্নঃ যেন রাবণের চিতা—জ্বলছে তো জ্বলছেই।”—রাবণের চিতার মতো আগুন কারা, কী উদ্দেশ্যে কোথায় জ্বালিয়েছে? এই আগুন তাদের কীভাবে সাহায্য করে থাকে ?

উওরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা গ্রন্থের "গারো পাহাড়ের নিচে রচনায়" জানিয়েছেন যে ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়বাসি বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে জঙ্গলে আগুন লাগায়। এখানে সেই আগুনকেই লেখক রাবণের চিতার আগুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আগুন লাগানোর উদ্দেশ্যঃ গারো পাহাড়বাসী বসে গারো পাহাড়ের জঙ্গলে আগুন লাগায় এই আগুন লাগানোর উদ্দেশ্য বা কারণ হলো- 

গারো পাহাড়বাসীর বেঁচে থাকার জন্য চাষবাস প্রয়োজন। কিন্তু চাষবাস করার জন্য গারো পাহারবাশির কাছে হাল,লাঙ্গল কিছুই নেই। তারপর পাহাড়ে যে চাষ করবে সেখানে কিছুতেই চাষ হবে না। কারণ পাহাড়ে মাটি কোথায়? সেখানে তো শুধুই পাথর আর গাছ। 

তাই গারো পাহাড়বাসী পাহাড়ে চাষ করার জন্য জঙ্গলে আগুন লাগায়। আগুন লাগানোর ফলে বনজঙ্গলপুরে গাছপালা আগুনে পুড়ে গিয়ে,সেখানে ছাই-এর স্তুপ আকারে পড়ে থাকে। এবং তাই হয় তাদের চাষের মাটি। 

জঙ্গলে আগুন লাগানোর ফলে গারোদের উপকারঃ 

জঙ্গলে বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে আগুন লাগানোর ফলে গারো চাষীদের দুইভাবে উপকার হয়। 

• প্রথমত জঙ্গলে আগুন লাগানোর ফলে জঙ্গলের সমস্ত বন্যপ্রাণী নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এদিক সেদিক ছুটতে শুরু করে। ঠিক সেই সময় পাহাড়িরা তাদের শিকার করে। 

• গারো পাহাড়ে মাটি নেই শুধু। পাথর আর গাছ। জঙ্গলে আগুন লাগানোর ফলে সমস্ত গাছপালা পুড়ে গিয়ে ছাই আকারে পড়ে থাকে। সেই ছাই হয় তাদের মাটি। গারো পাহাড়বাসি সেই ছাইয়ের উপরে ফসলের বীজ বপন করে। এবং একসময় তা থেকেই তামাক, ধান এবং অন্যান্য ফসল হয়। 


প্রশ্নঃ "‘গারো পাহাড়ের নীচে' রচনা অবলম্বনে সুসং পরগনার নিসর্গ-প্রকৃতি এবং মানবপ্রকৃতির বর্ণনা দাও।


উত্তরঃ বিশিষ্ট লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘গারো পাহাড়ের নীচে' শীর্ষক রচনায় গারো পাহাড়ের অবতলবর্তী সুসং পরগনার বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন।

রেললাইন থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত এই সুসং পরগনার রাস্তাঘাট খারাপ হলেও গারো পাহাড়ের এই উপত্যকা অঞ্চলটি অতীব শস্যশ্যামলা। এই পরগনার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী। এতে শীতকালে জল খুব কম থাকে। কিন্তু শীতের শীর্ণ এই নদীর ঠান্ডা জলে এমন স্রোত থাকে যে, তাতে পা ডোবালে মনে হয় যে, কুমিরে দাঁত বসিয়ে যেন পা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ফেরিনৌকোতেই মানুষজনকে পারাপার করতে হয়।

সুসং পরগনায় হাজং, গারো, কোচ, বানাই, ডালু, মার্গান প্রভৃতি নানা উপজাতির মানুষ বাস করে। তবে, গারো পাহাড়তলিতে গারোরা নয়, হাজংরাই সংখ্যাগুরু। চাষাবাদে দক্ষ এই উপজাতির এই অঞ্চলে প্রথম পা রেখেছিলেন। তবে বাসস্থানের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে গারোদের। গাছের উপর মাচা বেঁধে বাসস্থান তৈরি করে সেখানেই শোওয়া -বসা, রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া করে গারোরা। পোষা হাঁস-মুরগিকেও তারা বন্যজন্তুর থেকে বাঁচাতে মাচাঘরেই রাখে। গারো পাহাড়তলির প্রতিটি উপজাতির চোখে-মুখে পাহাড়ি ছাপ থাকলেও তাদের ভাষা কিন্তু আলাদা। অবশ্য বাংলা ভাষার প্রভাবে গারো ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাগুলির অস্তিত্ব আর বিশেষ নেই। এইসব উপজাতির মানুষের উচ্চারণে বাংলা শব্দ অনেকটাই বদলে যায়। তাঁরা ‘ত’কে ‘ট’, ট’-কে ‘ত’, ‘ড’-কে ‘দ’ এবং ‘দ’ কে ‘ড’ বলো। তাই ‘দুধ’-কে ‘ডুড' এবং ‘তামাক’কে তারা ‘টামাক’ বলে থাকেন ।

প্রশ্নঃ "কিন্তু হাতি বেগার আইন আর চলল না"- হাতি বেগার আইন কি ছিল তা আলোচনা করো কেন তা আর চললো না?

উওরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা গ্রন্থের "গারো পাহাড়ের নিচে" রচনায় গারো পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাচীন জমিদারদের এক অমানুষিক এবং ভয়ানক প্রথার কথা তিনি জানিয়েছেন। উনিশ শতকের শেষ থেকে গারো পাহাড়ে হাতি ধরার জন্য এক জমিদারি আইন ছিল, যা হাতি বগার আইন নামে পরিচিত। 

জমিদারদের এই হাতি বেগার আইনের পেছনে রয়েছে এক ভয়ানক ইতিহাস। সেই ইতিহাস কিছুটা এরকম যে- 

আজ থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে গারো পাহাড়ের স্থানীয় জমিদাররা হাতি ধরার জন্য এক নিয়ম চালু করেছিলেন যা, হাতিবেগার আইন নামে পরিচিত ছিল। জমিদারদের হাতি ধরার জন্য কোনো এক জায়গায় একটি মাচা বাঁধা হতো। সেই মাচার উপর জমিদার তার সিপাহীন্ত্রী সহ বসে থাকতেন। নিয়ম ছিল এমন যে, যে জঙ্গলে হাতি থাকবে,সেই জঙ্গলকে গ্রামের সবাই ঘিরে ফেলবে।  এজন্য গ্রামের লোকেদের জমিদার কোনো খাবার দেবে না। গ্রামের লোকেদের নিজের খাবার তাদেরকেই সঙ্গে করে আনতে হবে। জমিদারদের এই শখ মেটাতে গিয়ে অনেকেই মানুষই সাপের কামড়ে বা বাঘের মুখে প্রাণ হারিয়েছিল।। 

হাতি বেগার আইন বতর্মানে না চলার কারণঃ

৫০ থেকে ৬০ বছর আগে জমিদারদের হাতি বেগার আইন চালু থাকলেও,বর্তমানে এই আইন আর চলে না। এর কারণ হলো- নিজেদের শখ মেটাতে গিয়ে জমিদাররা সাধারণ মানুষের উপর যে অত্যাচার করতেন, সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে গারো পাহাড়বাসী স্থানীয় গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন মিটিং মিছিল এবং অস্ত্র তৈরির পর তারা জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কিন্তু তাদের বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও জমিদাররা তাদের এই শখ আর চালিয়ে রাখতে সাহস পাননি। যার ফলে ধীরে ধীরে জমিদারদের হাতি বেগার আইন বন্ধ হয়ে যায়।।

প্রশ্নঃ “একটা দুষ্টু শনি কোথাও কোনো আনাচে যেন লুকিয়ে আছে।”—এই দুষ্টু শনির পরিচয় দাও। 
অথবা, 
“জমিদারকে টঙ্ক দিতে গিয়ে চাষিরা ফকির হয়।” সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'আমার বাংলা' গ্রন্থের ‘গারো পাহাড়ের নীচে' রচনা অবলম্বনে উদ্ধৃতিটি বিশ্লেষণ করো।

উওরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় তার গারো পাহাড়ের নিচে রচনা গারো পাহাড়ে বসবাসকারী স্থানীয় কৃষকদের উপর সেখানকার জমিদারদের যে, শোষণ তুলে ধরেছেন। এখানে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় দুষ্টু শনি বলতে গারো পাহাড়ের স্থানীয় জমিদারদের বুঝিয়েছেন। লেখক জানিয়েছেন যে, গারো পাহাড়ের নিচে সবুজের সমাহার অর্থাৎ ধানের প্রাচুর থাকলেও সেখানকার কৃষকদের মনে কোনো শান্তি ছিল না। এই শান্তি না থাকার প্রধান কারণ ছিল দুষ্টু শনি রূপ জমিদার।।

যদি কখনো গারো পাহাড়ের কোন উঁচু টিলা থেকে নিচের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে শুধুমাত্র সবুজের সমাহার। সেই ধানের ক্ষেত দেখে মনে হবে পৃথিবী যেন সবুজ রঙের মলাট গায়ে বসে আছে। 

চারদিকে কেবল ধান আর ধান। প্রতি বছর ধান কাটার মরশুমে প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ-শিশু প্রত্যেকেই কাস্তে হাতে নিয়ে মাঠে যায়। পিঠে ধানের আঁটি বেঁধে ‘ছোটো ছোটো ছেলের দল' ফিরে আসে বাড়ির খামারে। কিন্তু চাষের মাঠ থেকে খামারে তোলা এই ফসলের সবটা তাদের ঘরে থাকে না। জমিদারের প্রাপ্য আদায় করতে তার পাইক-বরকন্দাজরা ঠিক সময়েই চলে আসে। এসব দেখেশুনে গারো পাহাড়িরা একটা ছড়া নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে। ছড়াটির বাংলা তরজমা হল—

খুব জটিল ধন্দে পড়েছি বন্ধু। ছোটোবেলা থেকে গ্রামেই বাস করছি। প্রতি বছরই জমিতে ধান বুনে ভাবি যে, এবার আরামে বাঁচতে পারব। তাই মাঠ যখন পাকা ফসলে ভরে ওঠে, তখন ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে মনের সুখে গান গাই। তারপর একদিন সকলে মিলে কাস্তে হাতে চলি ধান কাটতে। কিন্তু তখনই লাঠি নিয়ে পাড়াকে শান্ত করতে আসে জমিদারের পেয়াদা। খালি পেটে তাই চোখে ধাঁধা লাগছে। ফসলের মরশুমে গ্রামের আলপথে লোহার খুর দেওয়া নাগরাজুতোর খটখট শব্দ শুনতে পায় গ্রামবাসীরা। দূর থেকে দেখা যায় মোটা কঞ্চির আগা। ছোটোরা তা দেখে মায়ের আঁচলে আশ্রয় নেয়। খিটখিটে বৃদ্ধরা অভিশাপ দিতে থাকে। লেখক এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন যে, “জমিদারের টঙ্ক দিতে দিতে চাষিরা ফকির হয়।”


Tags : গারো পাহাড়ের নিচে বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা | আমার বাংলা বড় প্রশ্ন উওর | HS Bengali Question Answers | Amar Bangla Question Answer | Garo Paharer Niche Question Answers 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top