আজের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'ডাইরেক্টরী শাসন বলতে কী বোঝায়? ডাইরেক্টরী শাসনের বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।' তার উওর ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
ডাইরেক্টরী শাসন বলতে কী বোঝায়? ডাইরেক্টরী শাসনের বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।
উওরঃ ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের জাতীয় কনভেনশন দ্বারা রচিত নতুন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ফ্রান্সের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় পাচজন সদস্য বিশিষ্ট ডাইরেক্টরি নামে একটি পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ডাইরেক্টরি নামে সেই পরিষদের মাধ্যমে ফ্রান্সে যে শাসন চলেছিল, তা ডাইরেক্টরী শাসন নামে পরিচিত।।
ডাইরেক্টরি শাসনের বিভিন্ন কার্যাবলীঃ
ডাইরেক্টরি শাসনের মূলত দুই ধরনের অভ্যন্তরীণ নীতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থা কখনোই রাজতন্ত্রকে সমর্থন করতো না। রাজতন্ত্রের অসমর্থনকারী ডাইরেক্টরিদের দুই ধরনের অভ্যন্তরীণ নীতির মধ্যে ছিল,
• প্রথমত, রাজতন্ত্রের সমর্থকদের ষড়যন্ত্র থেকে আত্মরক্ষা করা এবং দ্বিতীয়তো, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রেখে দেশের উন্নতি সাধন করা।
যাযকদের বিরোধীতাঃ
ডাইরেক্টরির সদস্যরা কখনোই রাজতন্ত্রকে সমর্থন করেননি। এছাড়াও রাজতন্ত্রের সমর্থক উচ্চশ্রেণীর যাযকগন যাতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে এবং দেশে পুনরায় রাজতন্ত্র ফিরে না আসে, সেদিকে ডাইরেক্টরির সদস্যরা বিশেষ নজর রেখেছিলেন। এবং সেইসঙ্গে উগ্রপন্থী প্রতিবিপ্লবীদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা সজাগ ছিলেন।।
অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপঃ
যে সময়কাল পর্যন্ত ডাইরেক্টরি দের হাতে ফ্রান্সের শাসন ক্ষমতা ছিল সেই সময়টাতে ডাইরেক্টির সদস্যরা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে তা সমাধান করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা মূলত ফ্রান্সের সম্পদশালী উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায় করতেন এবং ফরাসি সামরিক বাহিনী ইউরোপের বিভিন্ন স্থান অধিকার করেযে উদ্বৃত্ত অর্থ প্রেরণ করেছিল, তার সাহায্যে ডাইরেক্টরি শাসন নতুন কর ধার্য না করে আর্থিক সমস্যার সমাধান করেছিল।।
কর ব্যবস্থাঃ
ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থায় ফ্রান্সে করে কোনো কর চালু করা হয়নি। বরঞ্চ ডাইরেক্টরির সদস্যরা ফ্রান্সে করের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে এনেছিল। এবং বকেয়া কর আদায়ের জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও বাজেটে সরকারি ব্যয়সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
শিল্প এবং বাণিজ্যের প্রসারঃ
ডাইরেক্টরীর আমলে ফ্রান্সে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। ডাইরেক্টরীর শাসন ব্যবস্থায় শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়েছিল এবং বিভিন্ন ধরনের করের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়াও তা শিল্প এবং বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়ে উঠেছিল।
ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থার বিক্ষোভঃ
ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থা ফ্রান্সে শান্তি শৃঙ্খল বজায় রেখে ফ্রান্সের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থা ফ্রান্সের জনগণের কাছে তাদের সমর্থন হারায়। এর পেছনে মূলত যে সমস্ত কারণ ছিল, তা হল -
স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাঃ
ডাইরেক্টরী শাসকরা মূলত স্বৈরাচারী নীতি ব্যবহার করে ফ্রান্সে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল এক্ষেত্রে তারা সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছিল। এবং সামরিক শক্তির সাহায্যে দেশকে শাসন করে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কররছিল। কিন্তু ডাইরেক্টরী শাসকদের এরুপ শাসন নীতি জনগনের মনে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।।
ধর্মীয় অসন্তোষঃ
ডাইরেক্টরি শাসকরা রাজতন্ত্র এবং ধর্মীয় যাজকদের সমর্থন করতেন না। এজন্য তারা যাজক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রাধান্য খর্ব করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ডাইরেক্টরী শাসনকদের যাজক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যকলাপ জনগণের মোটেও পছন্দ হয়নি। এবং তাদের বিভিন্ন কাজ জনগণকে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট করেছিল।।
মতানৈক্যঃ
ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থায় মূলত ৫ জন শাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।কিন্তু কিছু সময় পরেই ডাইরেক্টরীদ সদস্যদের নিজেদের মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিতে শুরু করলে তারা কোনো বিষয়ে আর কোনো একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতে পারায় তাদের শাসন ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পরে। মূলত এই সমস্ত কারণেই ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটেছিল।
Tags :