আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা তোমাদের সঙ্গে দশম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা ( wbbse class 10 history question answer in Bengali chapter 4 ) এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু 2 ও 4 মার্কের প্রশ্নের উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আজকে আমরা ক্লাস 10 ইতিহাস আর চতুর্থ অধ্যায়ের সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা থেকে শুধুমাত্র ১১ টি 2 ও 4 মার্কের প্রশ্ন উওর শেয়ার করবো। মাধ্যমিক ইতিহাস আর চতুর্থ অধ্যায়ের সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথার বাকি প্রশ্ন উওর আমরা আগামীকাল শেয়ার করবো।
দশম শ্রেণির ইতিহাস সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর || WBBSE Class 10 History Question Answer in Bengali Chapter 4
প্রশ্নঃ সিপাহী বিদ্রোহ কি? বা সিপাহী বিদ্রোহ কাকে বলে?
উওরঃ বড়লাট লর্ড ক্যানিংএর শাসনকালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় হিন্দু এবং মুসলিম সিপাহীরা এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে 1857 খ্রিস্টাব্দে যে ভয়ঙ্কর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, তাই মহাবিদ্রোহ নামে বা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে মার্চ ব্যারাকপুরে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। এবং মঙ্গল পান্ডেই ছিলেন সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ।।
প্রশ্নঃ সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?
উওরঃ সিপাহী বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ কারণ ছিল এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন। ব্রিটিশ সরকারের সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তনের পর, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় হিন্দু এবং মুসলিম সিপাহীদের মধ্যে এই গুজব ছড়ায় যে,এনফিল্ড রাইফেলের যে টোটা রয়েছে তার মধ্যে গুরু এবং শুয়োরের চর্বি মেশানো হয়েছে। এর ফলে হিন্দু এবং মুসলিম উভয় ধর্মের সিপাহীদের মধ্যেই ধর্ম নাশের ভয় দেখা দেয়। যার ফলে তারা এনফিল্ড রাইফেল ব্যবহার করতে অস্বীকার করে। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় সিপাহিদের এই দাবি মানতে নারাজ হলে মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয়।।
প্রশ্নঃইলবার্ট বিল কি?
উওর, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফৌজদারি আইন দ্বারা আদালতে কোনো ভারতীয় বিচারপতির কোনো ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারতেন না। তাই বিচার ব্যবস্থায় এরূপ বৈষম্য দূর করার জন্য লর্ড রিপন তার আইন সদস্য সিপি ইলবার্টকে একটি বিল বা খড়সা তৈরি করতে বলেছিলেন যার মাধ্যমে ভারতীয় বিচারপতিদের সেই অধিকার দেওয়া হবে যার মাধ্যমে তারা আদালতের কোনো ইউরোপীয় অপরাধের বিচার করতে পারবেন।। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের সি.পি ইলবার্টের সেই বিল বা খড়সাই ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।।
প্রশ্নঃ ইউরোপীয়রা কেন ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিলেন?
উওরঃ ইলবার্ট বিলের আগে কোনো ভারতীয় বিচারপতিরা আদালতে কোনো ইউরোপীয় অপরাধীর বিচার করতে পারতো না। কিন্তু ইলবার্ট বিল এর মাধ্যমে ভারতীয় বিচারপতিদের সেই অধিকার দেওয়া হলে, ভারতে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের এই বিষয়টা আত্মসম্মানে লাগে যে, কোনো ভারতীয় বিচারপতি তাদের অপরাধের বিচার করবে। আদালতে গিয়ে ভারতীয়দের দ্বারা বিচার পাওয়ার বিষয়টা তারা মেনে নিতে পারেননি। এই কারণেই তারা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিলেন।।
প্রশ্নঃ ঝাঁসির রানী বিখ্যাত কেন?
উওরঃ ঝাঁসির রানীর বিখ্যাত হওয়ার কারণ হলো, প্রথমত তিনি ব্রিটিশ কোম্পানির অধিগ্রহণ করার প্রতিবাদে আঠারোশ সাতান্ন খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের যোগদান করেছিলেন। ঝাঁসির রানী একজন মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষদের মতো যুদ্ধবেশে যুদ্ধ করতে যেতেন।
দ্বিতীয়ত ঝাঁসির রানী একজন মেয়ে হয়েও তিনি মহাবিদ্রোহে প্রত্যক্ষ খণ্ডযুদ্ধে তাঁর অসামান্য সাহস ও বীরত্বের জেরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হয়েছিলেন। এবং তিনি সেই যুদ্ধে 1858 খ্রিস্টাব্দে 17 জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন বা শহীদ হয়েছিলেন।।
প্রশ্নঃ মঙ্গল পান্ডে স্মরণীয় কেন?
উওরঃ মঙ্গল পান্ডে আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন এর কারণ হলো- উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় জন্মগ্রহণকারী মঙ্গল পান্ডে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর 34 নং বেঙ্গল আর্মির একজন সিপাহী ছিলেন। একজন সিপাহী হওয়ায় তাকে সবসময় সরকারের কথা মেনে চলতে হতো কিন্তু যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1857 খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার শুরু করেছিল,
তখন এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার নিয়ে মঙ্গল পান্ডে তার উচ্চ পদস্থ অফিসার লেফটেন্যান্ট বোগের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। এবং এই ঝামেলাকে কেন্দ্র করেই মঙ্গল পান্ডে বোগকে আক্রমণ করে এবং তার এই কাজের জন্য মঙ্গল পান্ডের ফাঁসি হয়। এবং এভাবেই মঙ্গল পান্ডে সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ হয়ে ওঠেন এবং এজন্যই মঙ্গল পান্ডে আজও স্মরনীয় হয়ে রয়েছেন।।
প্রশ্নঃ মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ লেখ।
উওরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় হিন্দু এবং মুসলিম সিপাহীদের দ্বারা পরিচালিত সিপাহী বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো -
প্রথমতঃ সিপাহী বিদ্রোহ যেহেতু হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, তাই এই বিদ্রোহকে সঠিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য এবং এই বিদ্রোহের ভবিষ্যৎ কি হবে সেই নিয়ে কোনো পরিকল্পনা সিপাহিদের মধ্যে বা বিদ্রোহীদের মধ্যে ছিল না। যার ফলে তারা সঠিকভাবে বিদ্রোহকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
দ্বিতীয়তঃ সিপাহী বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা তাদের কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। যার ফলে তারা তেমনভাবেও জনগণের সমর্থন লাভ করতে পারেনি এবং জনগণের সমর্থন লাভ করতে না পারায় এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল।।
প্রশ্নঃ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহ কী শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ বলা যায়?
উওরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ সিপাহীদের নিজস্ব কারনে শুরু হলেও এবং বিদ্রোহের বেশির ভাগটাই সিপাহিদের দ্বারা পরিচালিত হলেও এই বিদ্রোহকে শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ বলা যায়না। কারণ এই বিদ্রোহে উত্তর এবং মধ্যভারতের জনসাধারণ বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাঁরা মহাবিদ্রোহকে বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল। শুধুমাত্র তাই নয়, উত্তর এবং মধ্যভারতের জনসাধারণ মহাবিদ্রোহ যোগদান করার মাধ্যমে তারা ব্রিটিশ শাসনকে ভারত থেকে বিতাড়িত করার স্বপ্ন দেখেছিল। সুতরাং তাই বলা যায় যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ ছিল না।
প্রশ্নঃ ভারত শাসন আইন কি?
উওরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এটা বুঝতে পেরেছিল যে, এখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দ্বারা ভারতের মতো একটি দেশলে নিয়ন্ত্রণ করা বা শাসন করা সম্ভব নয়। তাই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 1858 খ্রিস্টাব্দে একটি আইন প্রবর্তন করে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই আইনকেই ভারত শাসন আইন বলা হয়।।
প্রশ্নঃ মহারানীর ঘোষণাপত্র কি? বা মহারানির ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?
উওরঃ মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেয়। এরপর মহারানী ভিক্টোরিয়া যে ভারতের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নিয়েছে? এই ঘোষণাই ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং 1858 খ্রিস্টাব্দের 1 লা নভেম্বর এলাহাবাদের আয়োজিত এক সভায় ঘোষণা করেন যা মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত।
• মহারানীর ঘোষণাপত্রে ভারতীয়দের কল্যাণকামী যে সমস্ত ঘোষণা গুলি করা হয়েছিল, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়নি। এজন্য মহারানীর ঘোষণাপত্রকে অনেক সময়ই একটি রাজনৈতিক ধাপ্পা বলে অভিহিত করা হয়।।
প্রশ্নঃ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে সভা সমিতির যুগ বলা হয় কেন?
অথবা,
সভা সমিতির যুগ বলতে কী বোঝায়?
উওরঃ ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে ১৮৩০ এর দশক থেকেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বাংলার বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক নেতাদের উদ্যোগে তাদের নিজেদের স্বার্থের উদ্দেশ্যে এবং সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার প্রসার ঘটানোর জন্য বিভিন্ন সভা সমিতি গড়ে উঠতে শুরু করে। সেই সময় ভারতের প্রেসিডেন্ট শহর যেমন বোম্বাই,কলকাতা এবং মাদ্রাজে বেশকিছু সভা-সমিতির গড়ে ওঠে। এজন্য ঐতিহাসিক অনিল শীল উনিশ শতককে সভা সমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন। উনিশ শতকে বাংলায় গড়ে ওঠা একটি বিখ্যাত সভা ছিল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা। যেটি ছিল ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।।
Tags :