![]() |
একাদশ শ্রেণির ডাকাতের মা গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগে আমরা একাদশ শ্রেণির বাংলা শতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা " ডাকাতের মা গল্পের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " ডাকাতের মা গল্প অনুসারে সৌখীর মায়ের চরিত্র " সম্পর্কে বিস্তারিত ভালো আলোচনা করবো।
ডাকাতের মা গল্প অনুসারে সৌখীর মায়ের চরিত্র আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর রচিত ডাকাতের মা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বা মূল চরিত্র হলেন ডাকাতের মা। এই গল্পে আমরা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের কোনো নাম খুঁজে পাইনা। গল্পের প্রথম দিকে আমরা তাঁকে ডাকাতের বউ এবং দ্বিতীয় ভাগে আমরা তাঁকে ডাকাতের মা হিসেবেই চিনতে পারি।। গল্পে কোনো নাম না থাকা, এমনই এক চরিত্র রহস্যেহীন চরিত্র হলেন ডাকাতের মা। সতীনাথ ভাদুড়ী রচিত ডাকাতের মা গল্পে, ডাকাতের মায়ের চরিত্রের বেশ কিছু দিক সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। যেমন -
আমাদের গ্রুপে যোগ দিতে ক্লিক করো এখানে।
আত্মগর্ববোধঃ সৌখির মায়ের জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো, তাহলে হয়তো সে কখনোই একজন ডাকাতের স্ত্রী, ডাকাতের মা অথবা এক ডাকাতের পরিবারের সদস্য হয়ে কখনোই এ বিষয়ে গর্ব করতেন না যে সে একজন ডাকাতের পরিবারের সদস্য। কিন্তু সৌখীর মা এক্ষেত্রে একদমই আলাদা। একজন ডাকাতের পরিবারের সদস্য হয়ে সৌখীর মায়ের গর্ভ বোধ হয়।।
পরিশ্রমীঃ সৌখীর মা যে পরিশ্রম করতে ভয় পেতেন না অথবা তিনি যে একজন অত্যন্ত পরিশ্রমি মানুষ, তা আমরা এই কথা থেকেই বুঝতে পারি, সৌখীর জেলে যাবার পর দলের লোক গত তিন বছর ধরে সৌখীর মাকে কোনো টাকা পয়সা দেয় না। এই অবস্থায় সৌখির মায়ের মায়ের আর্থিক অবস্থা একদম খারাপ হয়ে পড়লেও, তিনি নিজের আত্মমর্যাদার টিকিয়ে রাখতে, তিনি বৃদ্ধ বয়সেও খই মুড়ি বিক্রি করে নিজের সংসার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিঃ একজন ডাকাতের স্ত্রী এবং ডাকাতের মা হিসেবে সৌখির মায়ের ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি। দরজায় কতবার এবং কি রকম ভাবে টোকা পড়লে বুঝতে হবে যে- দলের লোক টাকা দিতে এসেছে নাকি সৌখী বাড়ি ফিরে এসেছে, সেগুলো সব সময়ই একজন ডাকাতের মা হিসেবে সৌখীর মাকে মনে রাখতে হতো।। এছাড়াও দরজায় টোকা করার পর কতবার নিঃশ্বাস ফেলার পর দরজা খোলা উচিত কিনা, সেটাও তার মাকে মনে রাখতে হতো। সৌখী দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে যখন ঘরে ফেরে, তখন সৌখীর মায়ের ৫ বছর পরেও সেই নিয়মকানুনগুলো মনে থাকে। এবং সেই নিয়ম গুলো অনুসরণ করেই তিনি সেদিন দরজা খুলে সৌখীর ভেতরে আসার জন্য দরজা খোলেন।
মাতৃস্নেহঃ ডাকাতের মা গল্পের আমরা সৌখির মায়ের মাতৃস্নেহ দুইভাবে দেখতে পাই।
প্রথমতঃ সৌখির মায়ের মাতৃস্নেহ থাকে তার নিজের সন্তান সৌখীর প্রতি। গল্পে আমরা সৌখীর প্রতি তার মায়ের যে ভালোবাসা বা মাতৃস্নেহ রয়েছে, সেটা আমরা বিভিন্ন ভাবে দেখতে পাই।
দ্বিতীয়তঃ একজন শাশুড়ি হিসেবেও সৌখীর মায়ের যে নিজের পুত্রবধূ এবং নিজের নাতির প্রতি অগাধ মাতৃস্নেহ এবং ভালোবাসা ছিল,তা আমরা এই কথার মাধ্যমেই বুঝতে পারি - জেলা যাওয়ার পর সৌখীর সংসারের অবস্থা যখন খুবই খারাপ হয়ে পড়ে,,তখন সখির মা নিজের পুত্রবধূ এবং নাতির ভালো-মন্দ বিচার করেই তিনি তাদের সৌখীর শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। যাতে সেখান থেকে এবং তার নাতি এবং পূত্রবধূ একটু ভাল মন্দ খেতে পেয়ে সেখানে একটু ভালো থাকতে পারে।।
উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্না একজন নারীঃ সৌখীর মায়ের ছিল ভয়ঙ্কর উপস্থিত বুদ্ধি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর, সৌখী যখন
বাড়ি ফেরে, তখন সৌখীর মা বুঝতে পারেন, যদি তিনি এই সময়ে সৌখীর তার দলের লোকের সেই টাকা না দেওয়ার কথা বলে ফেলেন তাহলে,, সৌখী তার মেজাজ গরম করে তখনই হয়তো দলের লোকের সঙ্গে ঝামেলা করতে চলে যাবে। তাই তিনি অন্যান্য কথা বলে সেই ঝামেলাটা এড়ানোর করেন।।
সন্তান প্রেমঃ ডাকাতের মা গল্পের আমরা সৌখির মায়ের মধ্যে নিজের সন্তানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং মাতৃস্নেহ দেখতে পাই। সৌখী জেলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি সৌখীর স্বৃতি নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। সৌখীর কথা ভাবতে ভাবতেই যখন সে ফিরে আসে তখন বাড়িতে আসার পরেই সৌখির মা তার সন্তানের জন্য, ব্যবসার পুঁজি হিসেবে রাখা হয়েছে খই মুড়িও সৌখীকে খেতে দিয়ে দেন। এছাড়াও সৌখীর আলু চচ্চড়ি খেতে ভালোবাসে বলে, তিনি সেই অভাবের মধ্যেই তাকে আলু চচ্চড়ি করে খাওয়ানোর কথা ভাবেন।। এবং ছেলেকে আলু চচ্চড়ি রান্না করে খাওয়াতে গিয়েই তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল গুলোর মধ্যে একটি করে বসেন।।
উপসংহারঃ এরকম ভাবেই সৌখীর মায়ের চরিত্রের আরও নানা দিক তুলে ধরে, সতীনাথ ভাদুড়ী ডাকাতের মা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সৌখীর মার চরিত্রকে একটি আদর্শ নারী চরিত্র হিসাবে তুলে ধরেছেন।।