নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল |
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল,নীল বিদ্রোহের সময়কাল,নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল,নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে - ইত্যাদি বিষয়গুলো তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
Table of Contents
• নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল
• নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব
• নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• নীল বিদ্রোহের সময়কাল
• নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতার নাম
• নীল বিদ্রোহের অঞ্চল
• নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?
• নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব
• নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• নীল বিদ্রোহের সময়কাল
• নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতার নাম
• নীল বিদ্রোহের অঞ্চল
• নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকা : বাংলার কৃষক বিদ্রোহের মধ্যে, একটি উল্লেখযোগ্য সফল কৃষক বিদ্রোহ ছিল 1859 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ। উনিশ শতকে উউরোপে বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটলে,নীলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই চাহিদা মেটাতে কিছু ইংরেজ বণিকরা ভারতে এসে নীল চাষ শুরু করে। নীলকর বণিকদের হয়ে ভারতের মূলত নীল চাষ করতো ভারতীয় চাষিরাই। নীল চাষ করার সময় চাষীদের নানারকম শোষণ-অত্যাচার এবং এবং দুর্ভোগের শিকার হতে হতো। সেসব শোষণ - অত্যাচার ও দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস,বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখের নেতৃত্বে 1859 চাষিদা সংঘবদ্ধভাবে যে ভয়ঙ্কর বিদ্রোহ শুরু করেছিল, তাই নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।
1859 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় চাষীদের নীল বিদ্রোহ করার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। নীল বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করার মাধ্যমে আমরা সেই কারণগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
◆ নীল বিদ্রোহের কিছু উল্লেখযোগ্য নেতা : 1859 খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশকিছু স্থানীয় নেতা নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। যেমন - নদীয়ার বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, বিশ্বনাথ সর্দার, বৈদ্যনাথ সর্দার,আসননগরের মেঘাই সর্দার, খুলনার কাদের মোল্লা, পাবনার মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালদহের রফিক মন্ডল, বাঁশবেড়িয়ার নড়াইলের জমিদার রাম রতন মল্লিক, চন্ডিপুরের জমিদার শ্রীহরি রায়, রানাঘাটের জমিদার শ্রীগোপাল পাল চৌধুরী, সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এবং তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমি নীল বিদ্রোহ একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল।
◆ নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
সর্বপ্রথম নদীয়ার চৌগাছা গ্রামে
বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস অন্যান্য কিছু নেতাদের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নীল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।
◆ নীল বিদ্রোহের বিস্তার ;
নদীয়ার পর,পরবর্তীতে বিশ্বনাথ সর্দার, বৈদ্যনাথ সর্দার,আসননগরের মেঘাই সর্দার, খুলনার কাদের মোল্লা, পাবনার মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালদহের রফিক মন্ডল, বাঁশবেড়িয়ার নড়াইলের জমিদার রাম রতন মল্লিক, চন্ডিপুরের জমিদার শ্রীহরি রায়, রানাঘাটের জমিদার শ্রীগোপাল পাল চৌধুরী, সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নদীয়া, যশোর, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, বারাসাত প্রভৃতি স্থানের প্রায় 60 লক্ষ কৃষকদের মধ্যে এই নীল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল।
ক্লাস টেনের ইতিহাস মকটেস্ট দিতে নিচের লিঙ্কের ওপর ক্লিক করো👇
1859 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের কারণ -
◆পঞ্চম আইন পাস : তৎকালীন সময়ে ইংরেজ নীলকর বণিকদের চাপে পড়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার 1830 খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম আইন পাস করে। এই আইনে নীলকর বণিকদের পক্ষ নিয়ে বলা হয় যে,কোন নীলচাষী যদি কোনো নীলকরের কাছ থেকে দাদন নিয়ে অথবা অগ্রিম অর্থ নিয়ে পরবর্তীতে নীল চাষ করতে রাজি না হয়,তাহলে সেই নীলকর সাহেব চাষিকে জেলে পাঠাতে পারবে। এবং সামরিক কালের জন্য সেই চাষির সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এই আইনের পর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার এবং চাষীদের দুর্দশা আরও বাড়ে।
◆ খাদ্য সংকট : নীলকর সাহেবদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নীল চাষ করার ফলে চাষীরা তাদের নিজের জমিতে অন্য কোনো খাদ্য ফসল,যেমন - ধান গম ইত্যাদি চাষ করার সুযোগ পেত না। যার ফলে তাদের ঘরে খাদ্য ফসলের অভাব হয়ে পড়ে। এবং একসময় চাষীদের খাদ্য সঙ্কটে ভুগতে হয়।।
◆ অর্থসংকট : নীলকর সাহেবের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নীল চাষ করার ক্ষেত্রে চাষীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের সঞ্চিত অর্থ খরচ করে সেই নীল চাষ সম্পন্ন করতে হতো।।যার ফলে তাদের নিজস্ব অনেক টাকাই খরচ হয়ে যেত।
দ্বিতীয়তঃ জমিতে নীল চাষ করার জন্য চাষিরা নিজের জমিতে অন্য কোন চাষ করার সুযোগ পেত না। যার ফলে তারা কোনো অর্থকরী ফসল চাষ করে সেই অর্থকরী ফসল বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতে পারত না। যার ফলে চাষীদের ঘরে প্রবল অর্থ সংকট শুরু হয়।
◆ নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার : নীল বিদ্রোহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল নীলকর সাহেবদের চাষিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার। নীলকর সাহেবরা নীলচাষিদের উপর বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার করতো। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ছিল নীলচাষীদের নীলকুঠিরে নিয়ে গিয়ে চাবুকের আঘাত করা। নীলকর সাহেবরা চাহিদার উপর কখনো কখনো এমন ভয়ানক অত্যাচার করতো, যে কখনও কখনও চাষিরা সেই ভয়ানক অত্যাচারের, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষ পযর্ন্ত মারা যেত।
◆ পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থা : নীল চাষীদের উপর যে সমস্ত নানা ধরনের অত্যাচার করা হতো, সে সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে চাষীরা যদি কোনো অভিযোগ নিয়ে আইন,প্রশাসন অথবা সরকারের দ্বারস্থ হতো,তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি আদালত শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের পক্ষ নিয়ে নীলচাষীদের কোনো অভিযোগকেই গুরুত্ব দিত না। ফলে নীলচাষীরা তাদের উপর হওয়া বিভিন্ন অত্যাচারের কোনো সঠিক বিচার সরকারের কাছ থেকে পেত না।
◆ নীল বিদ্রোহের ফলাফল | নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব
ভূমিকা : 1859-60 খ্রিস্টাব্দে দিগম্বর বিশ্বাস,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস,বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় 60 লক্ষ কৃষক মিলে ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের শোষণ- অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং এদেশ থেকে নীলচাষকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার উদ্দেশ্যে " নীল বিদ্রোহ " বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। নীল বিদ্রোহের নেতাদের সঠিকভাবে নেতৃত্বদান ও বিদ্রোহ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতার জন্যই শেষ পর্যন্ত নীল বিদ্রোহ একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে হয়েছিল। নীল বিদ্রোহএকটি সফল কৃষক বিদ্রোহ হওয়ার কারণে নীল বিদ্রোহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। যেমন -
◆ নীল কমিশন গঠন : নীলচাষিদের চাপে পড়ে সরকার 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠন করে।। এই নীল কমিশনের কাজ ছিল নীলচাষীদের বিভিন্ন অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখা। এবং সেই অভিযোগগুলি সত্য বলে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
◆ অষ্টম আইন : 1830 খ্রিস্টাব্দে পাশ হওয়া পঞ্চম আইনের মাধ্যমে সরকার পরোক্ষভাবে নীল চাষীদের নিয়ে নীল চাষ করার বাধ্য করেছিল। কিন্তু নীল বিদ্রোহের পর 1860 খ্রিস্টাব্দে " অষ্টম আইন " পাশ করা হয়। এবং এই আইনের মাধ্যমে " নীল চুক্তি আইন " বন্ধ করা হয়। যার ফলে নীল চাষ করা চাষীদের সম্পূর্ণ ইচ্ছার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারের মাধ্যমে চাষীদের এই অধিকার দিলে, চাষিরা নিজেদের এই ভয়ঙ্কর নীলচাষ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনার সুযোগ পায়।
◆ ঐক্যের প্রতিষ্ঠা : নীল বিদ্রোহে দিগম্বর বিশ্বাস,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় 60,000 হিন্দু এবং মুসলিম কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিল।
◆ জাতীয় চেতনার বিকাশ : জাতীয় চেতনার বিকাশে নীল বিদ্রোহ কাজ করেছিল। বাংলায় নীল বিদ্রোহের মাধ্যমেই বাংলায় প্রথম কৃষক, জমিদার, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয়।
◆ নীল বিদ্রোহের প্রথম সহিদ হলেন বিশ্বনাথ সর্দার।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায়, নীলকর সাহেবদের নানা শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নীল বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এবং দীর্ঘদিন বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার পর নীল বিদ্রোহ ভারতের প্রথম একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে প্রণীত হয়।
আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে তোমরা 1859 খ্রিষ্টাব্দের নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছো। এবং ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল, নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব,নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?, নীল বিদ্রোহের সময়কাল, নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতার নাম,নীল বিদ্রোহের অঞ্চল, নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে? - সেই সম্পর্কে তোমরা অনেকটা জেনে গেছো। যদি আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লাগে,তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোষ্ট পড়ে দেখতে পারো।
Tags :