আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার ভূমিকা এবং কার্যাবলী || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্য্যায়ের প্রশ্ন উওর

0

 

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার ভূমিকা এবং কার্যাবলী || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্য্যায়ের প্রশ্ন উওর


আজকের ব্লগের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্যায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'আইনসভার ভূমিকা ও কার্যাবলী আলোচনা -এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার ভূমিকা এবং কার্যাবলী || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্য্যায়ের প্রশ্ন উওর

আধুনিক বিশ্বে প্রায় সব রাষ্ট্রেই একটি করে আইনসভা রয়েছে। আরব এবং আমেরিকার কিছু রাজান্তিক এবং একনায়ক একতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনসভার নাম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নাম কংগ্রেস, ইংল্যান্ড এবং ভারতের আইনসভার নাম পার্লামেন্ট। অন্যদিকে রাশিয়ার আইনসভার নাম ডুমা ইত্যাদি। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা পার্লামেন্ট বা সংসদ নামে পরিচিত। তত্ত্বগতভাবে আইনসভা হলো বহু সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচিত সংখ্যা,আইন প্রণয়ন করা যার প্রধান কাজ। বিশ্বের প্রাচীনতম আইনসভা হলো ব্রিটেনের আইন সভা। সেই কারণে ব্রিটেনের আইনসভাকে আইনসভার জননী বলা হয়।

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার ভূমিকা এবং কার্যাবলী || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্য্যায়ের প্রশ্ন উওর


আইনসভার কার্যাবলী

সাধারণভাবে একটি রাষ্ট্রের আইনসভাকে যে সমস্ত কাজ করতে হয়,সেসব নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা হলো।

আইন প্রণয়ন করাঃ 

আইন ছাড়া রাষ্ট্রের নীতি,আদর্শ এবং সরকারের কর্মসূচি ও লক্ষ্য বাস্তবে রূপায়ন করা সম্ভব নয়। সেই কারণে দেশের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জনগণের প্রয়োজন বা চাহিদা অনুসারে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে আইনসভা নতুন আইন তৈরি করে এবং প্রচলিত আইন সংশোধন বা বাতিল করে। আধুনিক রাষ্ট্রের সমস্ত রকম আইনের প্রধান উৎস হল আইনসভা। 

সরকার গঠন

আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার গঠনে আইনসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রীকেই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের নিয়োগ করে থাকেন। 

শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ 

আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও আইনসভার রয়েছে  বিভিন্ন দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর তারতম্যের জন্য এক্ষেত্রেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ভারত ব্রিটেন প্রভৃতি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সহ তার মন্ত্রিপরিষদ তাদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। মন্ত্রী পরিষদ যদি আইনসভার আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে সমস্ত মন্ত্রী পরিষদকেই পদত্যাগ করতে হয়।

বিচার সংক্রান্ত কাজ 

আইনসভার হাতে বিচার সংক্রান্ত কিছু ক্ষমতাও রয়েছে। আইনসভার সদস্যদের আচরণের বিচার, নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিরোধের মীমাংসা, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগের বিচার আইনসভা করে থাকে। এছাড়াও ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিদের সংবিধান ভঙ্গের মতো গুরুতর বিষয়ে আইনসভা তাদের বিচার করে থাকে। ব্রিটেনের আইনসভার উচ্চ কক্ষ অর্থাৎ লর্ড সভা আবার দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে।

অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা

সরকারের আয় ব্যয় সংক্রান্ত বাজেট একমাত্র আইনসভাতেই পেশ করতে হয়। আইনসভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো আয়-ব্যয় করতে পারে না। সুতরাং অর্থ সংক্রান্ত বিষয়েও আইনসভার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও ক্ষমতা রয়েছে। 

সংবিধান সংক্রান্ত কাজ

নতুন সংবিধান প্রণয়ন সংবিধানের সংশোধন সংক্রান্ত ক্ষমতা আইনসভার হাতে অর্পণ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের আইনসভা সংবিধান সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা করার ক্ষমতা অধিকারি।

জনগণ ও সরকারের সংযোগ রক্ষা করে

আইনসভা জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযোগ রক্ষা করে। আইনসভার সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার জনগণের দাবি - দাওয়া বা চাহিদা মেটানোর জন্য সেই সমস্ত বিষয়গুলো সরকারের প্রতি নিধিদের কাছে তুলে ধরে এবং তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করে থাকে। এইভাবে আইনসভা জনগণ এবং সরকারের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।

উপসংহার 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলিতে তত্ত্বগতভাবে আইনসভার হাতে অধিক ক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলীয় ব্যবস্থার প্রচলন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্যার জটিলতা ইত্যাদির ফলে শাসন বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবু আইনসভার গুরুত্বকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না।।

ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top