শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

0


শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


আজকে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস ( wb class 10 history ) দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান অথবা, উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা "এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। । তোমাদের পরিক্ষায় প্রধানত " শিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা  " এই প্রশ্নটিই 4 নম্বরের ( class 10 history question answer ) জন্য বেশি এসে থাকে। যদিও সমাজ ও শিক্ষার সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা তোমাদের মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু তবুও আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে তোমরা " শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান বা, উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা " সম্পর্কে একটি খুব সুন্দর ইতিহাস নোট ( wb class 10 history notes in Bengali ) এখান থেকে পেয়ে যাবে।

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


ভূমিকা : উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা, নারীদের যথেষ্ট অধিকারের অভাব, নারী শিক্ষার অভাব ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষরা সমাজ থেকে সেই  খারাপ দিকগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন, বা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন,তাদের মধ্যে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন। বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতের তথা বাংলার সমাজ সংস্কারে নিজের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তিনি উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করে গেছেন। এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাজ সংস্কারে তিনি সফলও হয়েছিলেন

◆ স্কুল প্রতিষ্ঠা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর সহকারী পদে থাকাকালীন, বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলার নারীদের জন্য 35 টি বালিকা বিদ্যালয় এবং 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেছিলেন।  এছাড়াও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।


◆ নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জিনিসটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বর্তমান সমাজের উন্নয়নের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য সমাজে নারীদের শিক্ষার প্রসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে মায়ের শিক্ষার হাত ধরেই ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষায় আগ্রহী হবে বা সমাজ শিক্ষিত হবে। এজন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

◆ বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহের বিরোধিতা ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের নারীদের উন্নয়ন এবং নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন সময়ে সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ এবং বহু বহুবিবাহের তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করেছিলেন।

◆ বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা : সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো। এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না। 


যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1857 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।

◆ অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরোধিতা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন আধুনিক চিন্তাশীল ব্যক্তি হওয়ার কারণে, তার কাছে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কূপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ অর্থহীন। হিন্দু সমাজ তথা প্রাচীন বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এবং বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রসার এবং কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা তৈরী করার চেষ্টা করেছিলেন।


 ◆ পাঠ্যপুস্তক রচনা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি। তিনি শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও নিজের উদ্যোগেই রচনা করেছিলেন। যেমন শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়,কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি ইত্যাদি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এইসব গ্রন্থ গুলি ছিল মূলত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য। 

◆ উপসংহার, 

সবশেষে বলা যায়,বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত বাঙালি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে, তিনি সমাজ সংস্কারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের শিক্ষা, নারীদের অধিকার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধিতা,শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কাজ কর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত এবং শিক্ষিত করে তোলার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।।

আশাকরি যে আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি আজকের ব্লগ থেকে " শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান অথবা, উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা " তার সম্পর্কের যে আলোচনা করা হয়েছে,তা তোমাদের একটুও ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোস্ট গুলি পড়ে দেখতে পারো।


Tags : 

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা | ক্লাস 10 ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | ক্লাস 10 ইতিহাস বড় প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড় প্রশ্ন উত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উত্তর | class 10 history 2 nd chapter notes | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 10 history question answer | wb class 10 history suggestion | History question answer| wb class 10 history 2nd chapter question answer | class 10 history question answer | wb class 10 history notes in Bengali | history notes | class 10 history notes | class 10 history notes | history suggestion | class 10 history question answer | class 10 history suggestion | history notes | class 10 history notes | class 10 history suggestion 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top