স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো| একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
কিছুদিন আগেই আমরা একটি পোস্টের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2022 ( wb class 11 political science suggestion 2022 ) এ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শেয়ার করেছিলাম। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা সেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ( wb class 11 political science ) এর কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উওর শেয়ার করবো। আজকে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় " আইন,স্বাধীনতা সাম্য ও ন্যায় " থেকে যেই প্রশ্নটি তোমাদের সামনের পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার উওর তোমরা পেয়ে যাবে। প্রশ্নটি হলো " স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো "। আজকে আমরা একাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায় আইন,স্বাধীনতা সাম্য ও ন্যায় থেকে শুধুমাত্র "স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা " সম্পর্কে নোট শেয়ার করবো। পরবর্তীতে তোমরা একাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায় সহ অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবে।
স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো| একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
উওর : স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো লিবার্টি। লাতিন শব্দ লাইবার থেকে থেকে লিবার্টি কথাটি এসেছে। সাধারণভাবে স্বাধীনতা বলতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে যা খুশি তাই করার অধিকার কে বোঝায়। কিন্তু তাই বলে সভ্য সমাজে অবাধ স্বাধীনতা বলে কোনো কিছু থাকতে পারে না। খুব সাধারণভাবে, স্বাধীনতা বলতে বোঝায় অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে বাঁধাবিহীন ভাবে নিজের কাজ করার অধিকার।
• অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, স্বাধীনতা বলতে এমন একটি বিশেষ পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণকে বোঝায়,যেখানে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তাকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ করার সুযোগ পায়।
Read More👇
What Is Car Insurance? Best Car Insurance Plan & Companies সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
What Is Car Insurance | Types Of Car Insurance | Best Car Insurance Plan For You
স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা : রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন - ব্যক্তিগত ও জাতীয় স্বাভাবিক স্বাধীনতা, সামাজিক স্বাধীনতা এবং আইন সংগত স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু যেসব স্বাধীনতা আমরা ভোগ করি, তা হতেই পারে যে সেই স্বাধীনতা গুলো আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। সুতরাং আমাদের যেই স্বাধীনতা গুলি আমরা ভোগ করি, তার রক্ষাকবচ কি অথবা কিসের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা গুলো রক্ষা করা যায়,সেগুলোই আমরা নিচের আলোচনার মাধ্যমে দেখবো।
◆ সংবিধানে মৌলিক অধিকারের লিপিবদ্ধকরণ :
সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহের লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি স্বাধীনতার রক্ষাকবচের একটি অন্যতম উপায় বলে মনে করা হয়। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ সংবিধানের লিপিবদ্ধ করা থাকলে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বা স্বাধীনতাতা সম্পর্কে যথেষ্ট সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। যার ফলে যদি কোনো সরকার বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার অধিকার বাস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে,সেই ব্যক্তি স্বাধীনতা ভঙ্গ করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।
তবে সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধ করা হলেই যে প্রত্যেকের স্বাধীনতা রক্ষিত হবে,তা কিন্তু নয়। কারণ জনগণ যদি অজ্ঞ ও অশিক্ষিত হয়, তাহলে সরকার ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও জনগন তার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না। সুতরাং, জনগন শিক্ষিত হলেই সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি অধিক কার্যকর বলে মনে করা হয়। )
◆ সচেতন জনসমাজ :
স্বাধীনতার সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ হলো সদাজাগ্রত জনসমাজ। স্বাধীনতা তখনই সঠিকভাবে রক্ষিত হবে যখন জনগণ নিজেদের স্বাধীনতা সম্পর্কে অবগত থাকবে বা তাদের মধ্যে নিজেদের স্বাধীনতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকবে। কখনো যদি কোনো সরকার, ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তাহলে জনগণ সেটা বুঝতে পেরে তাদের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রসর হবে। তাই জনগণকে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বদা সচেতন থাকতে হয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, স্বাধীনতার সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবজ হলো নাগরিকদের গর্বিত চৈতন্য।
◆ আইনের অনুশাসন : স্বাধীনতার রক্ষাকবচের ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসনও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আইনের অনুশাসন বলতে প্রথমত বোঝায় আইনের প্রাধান্য এবং দ্বিতীয়ত আইনের চোখে সবাই সমান। রাষ্ট্রের আইনের প্রাধান্য থাকলে কোনো সরকারই বেআইনিভাবে কোনো কাজ করার মাধ্যমে কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এবং দ্বিতীয়তো আইনের চোখে সবাই সমান বলে ধনী-গরিব, উচু-নীচু বা যেকোনো ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সমান অধিকার থাকবে। এবং সবার সমান অধিকার ভোগ করার মাধ্যমে সবার অধিকারও হবে সমান। তাই আইনের অনুশাসন থাকার মাধ্যমে কেউই অন্য কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এবং এভাবেও স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।
তবে অনেকের মতেই আইনের অনুশাসন স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষাকবচ নয়। কারণ ধনবৈষম্যমূলক সমাজে আইনের অনুশাসন কখনোই যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কারণ এরুপ সমাজ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ সমূহের মালিক হলো পুঁজিপতি শ্রেণী। তাদের স্বার্থেই সরকার পরিচালিত হয় এবং সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা করে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনসাধারণের অধিকার ও স্বাধীনতা উপেক্ষিত হয়। তাই মার্কসবাদীরা এটা মনে করেন যে, পুঁজিবাদী সমাজে আইনের অনুশাসন কখনোই স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষাকবচ নয়।
◆ সামাজিক এবং রাজনৈতিক ন্যায় :
ন্যায়ের প্রধান নীতিই হলো সকলকে সমানভাবে স্বাধীনতা ভোগ এর সুযোগ দেওয়া। সুতরাং যতই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হবে সমাজে ততোই স্বাধীনতা হারানোর আশঙ্কা কম থাকবে। মার্কসবাদীরা মনে করেন যে অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার, না হলে সমাজ থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা যাবে না।।
◆ দায়িত্বশীল সরকার :
অনেকের মতে দায়িত্বশীল সরকার স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কারণ একটি সরকার দায়িত্ববান হলে, তারা কখনোই বেআইনিভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না। এটা করলে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষিপ্ত হতে পারে এবং তারা গণতন্ত্রের অধিকারের মাধ্যমে সেই ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। তাই একটি সরকার কখনোই এটা চাইবে না যে, জনগণ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এরকম কোনো কাজ করুক। তাই স্বাধীনতা রক্ষাকবচ হিসেবে সরকারের দায়িত্বশীল হওয়াটাও একান্ত ভাবে প্রয়োজন।
◆ একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি : যদি কোনো সরকার বেআইনিভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে,তাহলে সেই সরকারের ভুল ত্রুটি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল সেই সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে তুলতে পারে। এবং জনগণ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের এই সমালোচনা ও তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য, সেই সরকারকে পরবর্তী নির্বাচনে তার ক্ষমতায় কেড়ে নিতে পারে। তাই অনেক সরকার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে ভয় পায়। এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। সুতরাং রাষ্ট্র যদি একাধিক রাজনৈতিক দল উপস্থিত থাকে, তাহলে তারা পরোক্ষভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করে।
◆ ক্ষমতাবিকেন্দ্রীকরণ :
অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে যে রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা থাকে, সেখানে কখনোই স্বাধীনতা রক্ষিত হতে পারে না। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তার স্বাধীনতা ধ্বংস করতে পারে।। তাই স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ একান্ত প্রয়োজন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলতে বোঝায় একটি রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার,আঞ্চলিক সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপস্থিতি।
এইভাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলে কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই স্বৈরাচারী হয়ে কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে সবার স্বাধীনতা রক্ষা পায়।
◆ উপসংহার ;: সুতরাং সবশেষে বলা যে, স্বাধীনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পন্ন সদাজাগ্রত জনসমাজ, মৌলিক সমুহের লিপিবদ্ধ করন, দায়িত্বশীল সরকার প্রভৃতি হলো অন্যতম। তবে সদাজাগ্রত জনসমাজ ছাড়াও, স্বাধীনতার অন্যান্য রক্ষাকবজ গুলিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেমন একদিকে যেমন সদা জাগ্রত জনতার প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনি বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ প্রভৃতিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশাকরি যে, আজকের এই একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় আইন, স্বাধীনতা,সাম্য ও ন্যায় " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো " এর উওর পেয়ে গেছো। যদি এই পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ে দেখো।
Tags :