সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | সন্নাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ, ফলাফল
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় ( class 10 history 3rd chapter ) প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই আলোচনা করবো। সেই সঙ্গে এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম ক্লাস টেনের ইতিহাস বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বিদ্রোহ অধ্যায়ে যে সন্নাসী ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে,তা আমরা এখানে আরো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। এবং এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা " সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ, সন্নাসী ও ফকির ফলাফল,সন্নাসী ও ফকির প্রধান নেতা, সন্নাসী ও ফকির বিদ্রো প্রথম কোথাও শুরু হয়েছিল" -এসব প্রশ্ন ছাড়াও আরও একাধিক বিষয় তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
Table Of Contents | আজকের ব্লগে যেই সমস্ত বিষয়ের উওর দেওয়া হবে
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের উল্লেখ আছে কোন উপন্যাসে?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল কী?
• ভবানী পাঠক কোন বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের উল্লেখ আছে কোন উপন্যাসে?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল কী?
• ভবানী পাঠক কোন বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?
সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | সন্নাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
ভূমিকা : ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন এবং শোষণের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ ছিল সন্ন্যাস - ফকির বিদ্রোহ। কৃষিজীবী সন্নাসী এবং ফকিরদের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1763 খ্রিস্টাব্দে এবং 1800 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রায় 37 বছর ধরে এই বিদ্রোহ করার পেছনে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের একাধিক কারণ ছিল। যার জন্য তারা এই দীর্ঘ বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন। নিচের আলোচনার মাধ্যমে আমরা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ-
◆ রাজস্ব বৃদ্ধি : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1765 খ্রিষ্টাব্দে মোগল বাদশার কাছ থেকে বাংলার দেওয়ানি লাভ করে। দেওয়ানি লাভ করার পর ব্রিটিশ সরকার বাংলার কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। সন্ন্যাসী ও ফকিররা নামে সন্নাসী ও ফকির হলেও, পেশাগত দিক থেকে তারা মূলত ছিলেন কৃষক। সুতরাং তাদের জমিতে এত পরিমান উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি করলে তারা সেই পরিমাণ কর দিতে গিয়ে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পরে। যার ফলে সন্ন্যাসী ও ফকিররা কোম্পানির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
◆ সন্ন্যাসী ও ফকিরদের অধিকার কেড়ে নেওয়া : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে সন্ন্যাসী ও ফকিররা জায়গীর এবং দান হিসেবে তাদের ভক্ত বা অন্যের কাছ থেকে কিছু জমি পেতেন। এবং তার ওপর সন্ন্যাসী - ফকিরদের সম্পূর্ণ অধিকার থাকতো। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর কোম্পানি সন্নাসী ফকিরদের সেই অধিকার কেড়ে নেয়। যার ফলে সন্নাসী ও ফকিররা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যকলাপে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
◆ জমিদার ও মহাজনদের শোষণ : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া, কোম্পানি এবং কৃষকদের মাঝখানে এমন জমিদার, মহাজনদের জন্ম দিয়েছিল,যারা মুনাফা লাভের জন্য এবং উচ্চহারে কর আদায়ের জন্য,কৃষকদের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারতো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এটা বলেছিল যে, যে জমিদার / ব্যক্তি নিজের এলাকা থেকে সর্বোচ্চ কর আদায় করে দিতে পারবে, ব্রিটিশ সরকার তাকেই কর আদায়ের অধিকার দেবে। ব্রিটিশ সরকারের এই ঘোষণার পর প্রত্যেক জমিদার বা স্থানীয় নেতারা সন্ন্যাসী - ফকিরদের কাছ থেকে বা কৃষকদের কাছ থেকে জোড় করে বেশি কর আদায় করে নিজের মুনাফা লাভের চেষ্টা করতো। যার ফলে সন্ন্যাসী - ফকিরদের নানা রকম অত্যাচার সহ্য করতে হতো।
◆ তীর্থকর ও নিষেধাজ্ঞা : ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নিজেদের তীর্থক্ষেত্র বা ধর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য কোনোরকম কর বা খাজনা দিতে হতো না। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর ব্রিটিশ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সন্ন্যাসী ও ফকির তীর্থক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কর আদায় করা শুরু করে।
ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মুসলিম ফকিরদের দাড়ি রাখার উপরেও কর আদায় করার পদ্ধতি চালু করে। এবং ফকিরদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কোম্পানি তাদের ধর্মীয় দরগায় যাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এসব কার্যকলাপ থেকে সন্ন্যাসী ও ফকিররা মারাত্মক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
◆ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা জারি : সন্ন্যাসী ও ফকিররা ভারতের বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যেই ঘুরে বেড়াতেন। যার ফলে তারা আত্মরক্ষার জন্য অথবা অন্যান্য কিছু কারণে নিজেদের সঙ্গে কিছু অস্ত্র রাখতেন। কিন্তু ওয়ারেন্ট হেস্টিং একটি ঘোষণার মাধ্যমে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নিজেদের সঙ্গে অস্ত্র রাখার এই অধিকার কেড়ে নেয়। এক সরকারী ঘোষণাপত্রের মধ্যে জারি করা হয়, কেউ যত্রতত্র নিজেদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে পারবে না। ওয়ারেন হেস্টিংস এর সরকারি নিষিদ্ধ করার পরে, সন্নাসী ও ফকিররা সরকারের এই ঘোষণার প্রতি যথেষ্ট রেগে যায়।
◆ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : 1770 খ্রিস্টাব্দের দিকে ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্য, উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি, নানা শোষণ অত্যাচার,অনাবৃষ্টি, অজন্মা ইত্যাদির ফলে 1770 সাল থেকে বাংলায় ভয়ংকর ছিয়াত্তরের মন্বন্তর শুরু হয়। বাংলার এই দুর্দিনেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের শোষণ অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। যার ফলে বহু শিল্পী, কারিগর,কৃষকরা বাংলা থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।।পরবর্তীতে তারাই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উপসংহার : উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণে কৃষিজীবী সন্ন্যাসী ও ফকিররা এই বিদ্রোহের প্রধান কিছু নেতারা যেমন ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, চিরাগ আলি, পরাগল শাহ, অনুপ নারায়ন প্রমুখের নেতৃত্বে ব্রিটিশ কোম্পানির শোষণ অত্যাচার এর বিরুদ্ধে তাদের উৎখাত করার জন্য 1763 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু করেছিল। যেই বিদ্রোহ দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলার পর 1800 খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে গিয়েছিল।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন | সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ
ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1763 খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলার পর 1800 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে গিয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতা একাধিক কারণ ছিল একাধিক। যেমন -
◆ আধুনিক অস্ত্রের অভাব : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর কাছে ছিল সমস্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের কাছে সেরকম ভাবেও কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। যার সাহায্য তারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারতো।
◆ বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক পরিকল্পনার অভাব : একটি বিদ্রোহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্রোহের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের সেরকম কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না,যে তারা কিভাবে এই বিদ্রোহকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
◆ সঠিক নেতৃত্বের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের শুরুর দিকে ভবানী পাঠক, মজনুশাহ,দেবী চৌধুরানী প্রমুখ নেতারা থাকলেও,পরবর্তীকালে বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক নেতার অভাব হয়ে পড়ে। যার ফলে অযোগ্য নেতাদের হাতে পড়ে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।।
◆ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের জন্য। তাই প্রথম দিকে হয়তো তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের সেসব শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া। কিন্তু মনে করা হয় যে,বিদ্রোহীদের অনেকের মধ্যেই এই বিদ্রোহের লক্ষ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিলনা। কিন্তু অনেক সময় এটা দেখা গেছে যে, বিদ্রোহীরা ইংরেজদের বিভিন্ন কুটির আক্রমণ করে সেখানে ডাকাতি করেছে। তাই উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ডাকাত বা দস্যু বলে অভিহিত করেছিলেন। সুতরাং সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের লক্ষ্য যদি ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করে তাদের শোষণ অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া হতো,তাহলে তারা ডাকাতি করার পরিকল্পনা কেন করতেন। তাই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের সঠিক লক্ষ্য কী ছিল তা, বলা মুশকিল।
◆ আর্থিক সমস্যা : একটি বিদ্রোহকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়। বিদ্রোহীদের থাকা-খাওয়া, অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সন্ন্যাসী ও ফকিরদের প্রচুর পরিমানে অর্থের ক্ষয় হয়। এবং শেষ দিকে তাদের কাছে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক অর্থ ছিলনা বলে মনে করা হয়।
◆ অন্যান্য কারণ : বিদ্রোহের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের মধ্যে নেতৃত্ব দান এবং অন্যান্য কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে আদর্শগত আত্মকলহ এবং বারংবার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে যাওয়ার পথে এসে দাড়ায়।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের চরিত্র প্রকৃতি বিশ্লেষণ
ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম সংগঠিত সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের মধ্যে নানা চরিত্র লুকিয়ে রয়েছে। যেমন -
◆ ধর্মীয় আন্দোলন : 1763 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ মূলত সন্নাসী এবং প্রকৃতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল বলে, অনেকে একে ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে মনে করেন।
◆ কৃষক বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সন্ন্যাসী উপকৃত দ্বারা শুরু হলেও মূলত এটি ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ। কারণ সন্ন্যাসী ফকিররা ছিলেন মূলত কৃষিজীবী মানুষ। এবং সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কারণ হিসেবে রাজস্ব বৃদ্ধি,জমির অধিকার অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি কারণগুলো ছিল বলে,এই বিদ্রোহের মধ্যে একটি কৃষক বিদ্রোহের ছাপও রয়েছে। উইলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন
◆ পেশাদার ডাকাতদের বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ চলাকালীন বিদ্রোহীরা ইংরেজদের নানা কুটির আক্রমণ করে সেখানে লুটপাট চালাতো। যার ফলে তারা এক প্রকার পেশাদার ডাককতে পরিণত হয়েছিল। তাই ইংরেজি ইতিহাস উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ডাকাত বা দস্যু বলে অভিহিত করেছেন।
◆ সন্ন্যাসী - ফকিরদের বিদ্রোহ ; 1763 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ছিল মূলত গিরি ও দশানন সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী ও মারাঠি সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের আন্দোলন।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলিম কৃষকরা যৌথভাবে অংশগ্রহণ করে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?
উওর : 1787 খ্রিস্টাব্দে ভবানী পাঠকের মৃত্যুর পর সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ থেমে যায়। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখা যায়নি।
◆ ফকির বিদ্রোহের প্রধান নেতা | সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান নেতাদের মধ্যে ছিলেন - ভবানী পাঠক ও মজনু শাহ। এছাড়াও সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা ছিলেন দেবী চৌধুরানী। চিরাগ আলি, পরাগল শাহ, অনুপ নারায়ন, মুসা শাহ, পীতাম্বর শ্রীনিবাস, নূরল মোহাম্মদ প্রমুখ।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
◆ বিদ্রোহের স্থান : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়েছিল ঢাকায়। পরবর্তীতে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ বাংলা এবং বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ রাজশাহী,রংপুর, বিহার, উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেছিল।ম
◆ আনন্দমঠ উপন্যাস : 1763-1800 খ্রিষ্টাব্দের সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তাই সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার আনন্দমঠ উপন্যাস এবং দেবী চৌধুরানী উপন্যাসে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
আশা করি আজকের ক্লাস টেনের ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর এই আলোচনা থেকে তোমরা ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দের সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছো। এবং ১৭৬৩ - ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের " সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ, সন্নাসী ও ফকির ফলাফল,সন্নাসী ও ফকির প্রধান নেতা, সন্নাসী ও ফকির বিদ্রো প্রথম কোথাও শুরু হয়েছিল,এসব প্রশ্ন ছাড়াও আরও একাধিক প্রশ্নের উওর সেই তোমরা পেয়ে গেছো। যদি আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লাগে,তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোষ্ট পড়ে দেখতে পারো।
Tags :