ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান |ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন?
ভূমিকা : উনিশ শতকে সমগ্র ভারতে এবং বিশেষ করে বাংলায় হিন্দু ধর্মে বা বাংলার সমাজে বিভিন্ন কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা বিভিন্ন ভুল বা খারাপ ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই ভুল বা খারাপ জিনিস গুলোর বিরুদ্ধে তখন সেরকম ভাবে কেউ কোনো প্রতিবাদ অথবা আন্দোলন গড়ে তোলেননি, যার মাধ্যমে সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস গুলি দূর হতে পারতো। কিন্তু সেই সময়ের আধুনিক মানুষ " রাজা রামমোহন রায় " সমাজ থেকে এই সমস্ত খারাপ জিনিসগুলি দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং হিন্দু ধর্ম বা বাংলার সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস দূর করে সমাজকে আধুনিক করে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। রাজা রামমোহন রায়ের এই ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠে ব্রাহ্ম সভা বা ব্রাহ্মসমাজ।
◆ রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ : রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে সূত্র " ব্রাহ্মসমাজ " করা হয়।
◆ ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ : 1828 থেকে 1833 পর্যন্ত রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান নেতা। কিন্তু 1833 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের হাল ধরেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবং তিনিই হয়ে ওঠেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান। কিন্তু পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ব্রাহ্মসমাজে কিছু নতু যুবক উঠে নেতা হিসেবে উঠে আসে। যেমন - কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী এবং অন্যান্যদের মধ্যে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দমোহন বসু প্রমুখ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।
◆ ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন : উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজ ছিল সমাজের একটি বৃহৎ শক্তিশালী ও উল্লেখযোগ্য সভা। কিন্তু এই সভার নেতৃবৃন্দের মধ্যে তাদের নিজস্ব কিছু কারণে,ব্রাহ্মসমাজ বারবার ভেঙে বিভাজিত হয়েছে। এবং নিজেরা আলাদা আলাদা নাম নিয়ে ব্রাহ্মসমাজের ব্রাহ্ম আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ বার বার বিভাজিত হওয়ায়,ব্রাহ্ম আন্দোলন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিল।
ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা
আদি ব্রাহ্ম সমাজ এবং ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ :
ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাজন ঘটে 1866 খ্রিস্টাব্দে। ব্রাহ্মসমাজের প্রথম এই বিভাজনের কারণ ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে কিছু মতপার্থক্যের জন্য।। কেসবচন্দ্র সেন যখন প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেয়,তখন তার কাছে খুশি হয়েই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ফলে 1866 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ প্রথমবারের জন্য ভাগ হয়। ব্রাহ্মসমাজের যে অংশটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো?তার নাম হয় " আদি ব্রাহ্মসমাজ " এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অংশটি " ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ " নামে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে শুরু করে।
◆ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ :
প্রথমবার 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হওয়ার পর, পুনরায় 1878 খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে কিছু কাজের জন্য, কেশবচন্দ্র সেন এবং শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ব্রাহ্মসমাজ দ্বিতীয়বার জন্য বিভাজিত হয়। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল।
ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? | কেশবচন্দ্র সেনের নববিধান
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, কেশবচন্দ্র সেন তাঁর 14 বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে, এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে সঙ্গে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী,শিবনাথ শাস্ত্রী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে কেসবচন্দ্র সেনের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়। কারণ সেক্ষেত্রে কেসবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম সমাজের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করেছিলেন। তাছাড়াও তিনি সরকারি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট আইন এর ভঙ্গ করতে যাচ্ছিলেন। যার ফলে এই বিরোধকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ 1878 খ্রিস্টাব্দে আলাদা হয়ে যায়। ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে আবারো দুটি ভাগের সৃষ্টি হয়। শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের যে নতুন শাখাটি তৈরি হয়,তার নাম হয় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের অংশটি " নববিধান " নামে তাদের ব্রাহ্ম আন্দোলন পরিচালনা করতে শুরু করে।।
ব্রাহ্মসমাজ এর কার্যকলাপ অথবা, সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান
এর উওর টি দেখতে হলে নিচের ছবির ওপর অথবা, উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা " এখানে ক্লিক করো।।
উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা করো| সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান কী ছিল?
আশাকরি যে, আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা ব্রাহ্মসমাজ এর প্রতিষ্ঠা, ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন,ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছো। যদি আজকের এই পোস্টটি তোমাদের একটুও ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করো এবং অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটিকে আরও বড়ো করে তোলো। ধন্যবাদ।
Tags :