মহারানি ঘোষণা পত্র কী? | মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য | মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল?

0


মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য | মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল? | সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর


আজকের বিষয় : 

• টীকা লেখ - মহারানির ঘোষণা পত্র
• মহারানির ঘোষণা পত্র কী? বা মহারানীর ঘোষণাপত্র কাকে বলে? 
• মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
• মহারানীর ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ভারতের রাজ প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম নিযুক্ত হন কে? অথবা, ভারতের প্রথম ভাইসরয় কে? 
• মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল? 
• মহারানীর ঘোষণাপত্র কে পাঠ করেন?
• মহারানির ঘোষণা পত্রের ১৮৫৮ গুরুত্ব লেখো 
• ঘোষণাপত্রের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? 


মহারানি ঘোষণা পত্র কী? | মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য | মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল? 


মহারানির ঘোষণা পত্র কী? : 1857 খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর, ব্রিটিশ 1858 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটায়। এরপর ইংল্যান্ডের তৎকালীন মহারানি -  মহারানি ভিক্টোরিয়া এক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতের শাসনভার তিনি নিজের হাতে তুলে নেন। 1858 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর প্রকাশিত এই ঘোষণাপত্রটিই মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত। মহারানির ঘোষণাপত্রের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী  ছিলেন উইলিয়াম ডার্বি

◆ প্রকাশ : 1858 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর মহারানীর ঘোষণাপত্র লর্ড ক্যানিং এর দ্বারা এলাহাবাদের এক সভায় প্রকাশ করা হয়েছিল। এলাহাবাদে আয়োজিত এক দরবারে লর্ড ক্যানিং মহারানীর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। লর্ড ক্যানিং মহারানীর রাজপ্রতিনিধি হিসেবে ভারতের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। সুতরাং,ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন লর্ড ক্যানিং। 

◆ পটভূমি : মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শক্তি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল।1857 খ্রিষ্টাব্দের পর, ইংরেজরা এটা বুঝতে পেরেছিল যে, ভারত কে শাসন করতে হলে তাদের নিজস্ব কিছু নীতি পরিবর্তন করতে হবে। ফলে হলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 1858 খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটায়।  মহারানী ভিক্টোরিয়া তাঁর ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে, তিনি এমন কিছু ঘোষণা ভারতবর্ষের জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন, যা শুনে ভারতবাসীর মনে হয়েছিল যে মহারানী ভিক্টোরিয়া সত্যি ভারতের জন্য অনেক কিছুই করতে চলেছেন।। মহারানী ভিক্টোরিয়া যদি ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন, তাহলে তিনি সেসব নীতি গ্রহনের মাধ্যমে ভারতবাসীর কল্যান করতে পারেন। মহারানীর ঘোষণাপত্রে ভারতবাসীর কল্যাণকারী একাধিক ঘোষণা করা হয়েছিল। যেমন - 


মহারানীর ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তু - 

1- মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র মাধ্যমে এটা ঘোষণা করেছিলেন যে এবার থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কোন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। 

2 - মহারানীর ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে স্বত্ববিলোপ নীতির বাতিল করা কথা বলা হয়েছিল। লর্ড ডালহৌসির আমলে স্বত্ববিলোপ নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল।  এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে থাকা কোনো দেশীয় রাজ্যের রাজার,যদি নিজের কোনো সন্তান না থাকে,তাহলে সেই রাজা কোনো সন্তানকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না। এবং সেই রাজার মৃত্যুর পর তাঁর কোনো সন্তান না থাকায় সেই রাজার যাবতীয় সম্প্রতি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যাবে। লর্ড ডালহৌসির এই স্বত্ববিলোপ নীতি মহারানি তাঁর ঘোষণা পত্রে বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। 

3 - মহারানীর ঘোষণাপত্রে স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল করার পর,এটা ঘোষণা করা হয় দেশীয় রাজাদের দত্তক সন্তান গ্রহণ করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।এবং তারা যে সন্তান গ্রহণ করবেন, তারাই হবেন সেই রাজার পরবর্তী উত্তরাধিকারী। এবং সেই রাজার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির উপর কম্পানি কবনা করবে না। রাজা যেই সন্তান দত্তক নিয়ে ছিলেন, সেই হবে রাজার মালি সম্পত্তির।

4 - মহারানীর ঘোষণাপত্রের এটাও ঘোষণা করা হয়েছিল যে, এবার থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের যোগ্যতা অনুসারে তাদের সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত করবে। এক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ কোনটাই দেখা হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকার তাদের সহকারী পদে নিযুক্ত করবে। যার ফলে ভারতীয়দের সহকারী পদে চাকরি করার অনেক সুযোগ থাকবে। 


5 -  এছাড়াও মহারানীর ঘোষণাপত্র এটাও জারি করা হয়েছিল যে,ব্রিটিশ সরকার এখন আর তাদের সাম্রাজ্যর বিস্তারে আগ্রহী নয়। অর্থাৎ তারা এখন আর কোনো রাজ্যকে নতুন করে দখল করতে চায়না। এই ঘোষণার পর দেশীয় রাজারা অনেকটাই নিরাপত্তা লাভ করেছিল।

6 - দেশীয় রাজ্য গুলির সঙ্গে কোম্পানি স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তি ও সন্ধিগত গুলো সরকার এখন থেকে মেনে চলবে ইত্যাদি। 

 উপসংহার : মহারানীর ঘোষণাপত্রে যেসব কল্যাণকর কথা বলা হয়েছিল, তার বেশির ই বাস্তবে রুপায়িত হয়নি।  মহারানীর ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে যে সমস্ত আশা বা স্বপ্নের বীজ বপন করা হয়েছিল,তা পরবর্তীকালে বাস্তবে রূপায়িত না হওয়ার ফলে ভারতীয়দের মনে মহারানির বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সঞ্চার হয়।

মহারানীর ঘোষণাপত্র মূল উদ্দেশ্য কি ছিল? 

1858 খ্রিস্টাব্দের 1 লা নভেম্বর প্রকাশিত, মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল তা স্পষ্ট করে বলা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু মনে করা হয় যে মহারানীর ঘোষণাপত্রের যে সব ভারতবাসীর জন্য যেসব কল্যাণকর নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, তার মাধ্যমে ভারতবাসীকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে, ব্রিটিশ শাসন ভারতবাসীর পক্ষে কল্যাণকর। 


মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

আধুনিক ভারতের ইতিহাসে 1858 খ্রিস্টাব্দের মহারানী ভিক্টোরিয়ার এই ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য রয়েছে অনেকখানি। যেমন - 

প্রথমত ঃ মহারানীর ঘোষণাপত্র ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায়। 

দ্বিতীয়তঃ 1858 খ্রিস্টাব্দের মহারানির ঘোষণা পত্রের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গ্রহণ করে সরাসরি ভাবে ভারতের শাসনভার গ্রহন করে। 

তৃতীয়তঃ ভারতের গভর্নর জেনারেল পদের সরিয়ে, ভাইসরয় বা রাজপ্রতিনিধিদের ভারতের শাসন কার্য পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top