1857 সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ বা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ | সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বড় প্রশ্ন উওর
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমি তোমাদের সঙ্গে দশম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় " সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন,যেটা প্রায়শই মাধ্যমিকে এসে থাকে সেটা নিয়ে একটি নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এর আগে একটি পোস্টে আমরা মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙ্গালী সমাজের মনোভাব এবং 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল বা ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহীবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করেছিললাম। আজকে আমরা 1857 খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সম্পর্কে আরও কিছুটা আলোচনা করবো। আজকের এই পোস্টে আমরা " 1857 সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ বা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল " তা নিয়ে আলোচনা করবো। ক্লাস টেনের ইতিহাস বইয়ে 1857 সালের মহাবিদ্রোহ কী কী কারণে ব্যর্থ হয়েছিল কারণ অথবা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী " সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। তাই আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় " সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বড় প্রশ্ন উত্তর " হিসেবে " 1857 সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ বা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ " এবং তার পরবর্তী পোস্টে আমরা 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ সম্পর্কে তোমাদের সঙ্গে তার নোট শেয়ার করবো করবো।
1857 সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ বা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
ভূমিকা ; 1857 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের প্রচলন নিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিম সেনাবাহিনীর মধ্যে কোম্পানির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় হয়েছিল, তাকেই মূলত মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এই এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন ছাড়াও ছাড়াও আমরা দেখেছি যে মহাবিদ্রোহের পেছনে আরও একাধিক কারণ লুকিয়ে ছিল। মূলত এক বা একাধিক কারণ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতীয় সিপাহীরা বা সেনারা সিপাহী বিদ্রোহ শুরু করেছিল। 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের যোগ দিয়েছিল উত্তর ভারতের সাধারণ জনগণ। কিন্তু এরপরও 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ শুধু মাত্র এক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এবং উত্তর ও মধ্য ভারতের জনগণের দ্বারা পরিচালিত 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার পেছনে একাধিক লুকিয়ে ছিল। সেই সম্পর্কে আলোচনা করলে মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। যেমন -
◆ আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা : মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল এর আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা। 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েনি। যার ফলে সমস্ত জায়গার জনগণ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে এই আন্দোলনকে একটি তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেনি। 1857 সালের মহাবিদ্রোহ মূলত উত্তর প্রদেশ, বাংলা ও বিহারের কিছু অংশ, দিল্লি অযোধ্যা, রোহিকখন্ড প্রভৃতি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল।
◆ জনগণের সমর্থনের অভাব : যেকোনো বিদ্রোহকে সফল করতে হলে জনগণের সমর্থন একান্ত ভাবে প্রয়োজন। অন্যান্য বিদ্রোহ বা আন্দোলনের মতো মহাবিদ্রোহেরও প্রয়োজন ছিল জনগণের সমর্থন। কিন্তু এই বিদ্রোহ সেরকমভাবেও জনগণের সমর্থন লাভ করতে পারেনি। উত্তর ও মধ্য ভারতের সাধারণ জনগণ ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলের জনগণ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ মহাবিদ্রোহ হয়তো জনগণের কাছে সেরকম ভাবেও বিদ্রোহের কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য তুলে ধরতে পারেনি যা সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুন
মহারানির ঘোষণা পত্র সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো
মহারানি ঘোষণা পত্র কী? | মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য | মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল?
◆ মহাবিদ্রোহের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যর অভাব : 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পেছনে একাধিক কারণ থাকলেও, মহাবিদ্রোহ শুরু হয়েছিল মূলত হঠাৎ করেই। বিদ্রোহীরা তাদের বীরত্বের প্রতি আস্থা রেখে মহাবিদ্রোহ শুরু করেছিল। কিন্তু এই বিদ্রোহের লক্ষ্য কী বা এই বিদ্রোহের মাধ্যমে তারা কী করতে চাইছে, সেই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সিপাহীরা সাধারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারেনি। এটাই ছিল একটি প্রধান কারণ, যার জন্য 1857 খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহে বেশির ভাগ সাধারণ জনগনই অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল না বা তারা অংশগ্রহণ করেননি। প্রথমদিকে এই বিদ্রোহের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলেও পরবর্তীতে বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারত থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটিয়ে তাদের বিতাড়িত করা। কিন্তু এই সিপাহীদের মধ্যে এবং উত্তর ও মধ্যে ভারতের সাধারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকলেও,তা সবার কাছে স্পষ্ট ছিল না।
◆ আধুনিক অস্ত্রের অভাব : ভারতীয় ঐতিহাসিক প্রমোদ সেনগুপ্তের মতে 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে সমস্ত আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার করেছিল,সেই পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে ছিল না। অস্ত্র ছাড়া ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে নানা রনকৌশল অবলম্বন করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক যুদ্ধে ভারতীয় সিপাহীরা, বিদ্রোহে জয়ী হওয়ার জন্য সেরকম ভাবে কোনও রণকৌশল অবলম্বন করতে পারেনি।
◆ ব্রিটিশদের কূটনীতি : ব্রিটিশরা জনগণকে এই বিদ্রোহ থেকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকার কূট নীতি প্রয়োগ করে। তারা ভারতীয়দের বিভিন্ন উচ্চ পদে চাকরি প্রদান, বিভিন্ন খেতাব এবং নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে,যার ফলে ভারতীয়রা সেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য সিপাহী বিদ্রোহ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে।
আরও পড়ুন
◆ সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব : সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সুযোগ্য নেতৃত্বে অভাব। যেকোন বিদ্রোহকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্বের। লক্ষ্মীবাঈ কুনওয়ার সিংন তাতিয়া টোপি, নানাসাহেব, হযরত মহল আপলোক নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারলেও, অন্যান্য অঞ্চলের সিপাহী বিদ্রোহের নেতারা সঠিকভাবে নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।
◆ বিদ্রোহকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সঠিক পরিকল্পনার অভাব : 1857 খ্রিস্টাব্দের 29 শে মার্চ মহাবিদ্রোহ শুরু হয়েছিল হুট করে। কিন্তু এই বিদ্রোহ শুরু হবার পর বিদ্রোহকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সেরকম কোনো সঠিক পরিকল্পনা বিদ্রোহীদে মধ্যে ছিল না।
◆ যোগাযোগের অভাব ; একস্থান থেকে অন্য স্থানে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মতো রসদ, বিদ্রোহের পরিকল্পনা এবং নানা সংবাদ পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। ডাক এবং তার বিভাগের সাহায্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীরা যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা লাভ করেছিল, তা সিপাহী বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের হাতে ছিল না।।
এছাড়াও সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কিছু কারণের মধ্যে, বিদ্রোহীদের মধ্যে নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার অভাব এবং দীর্ঘদিন একটি বিদ্রোহকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা তাদের মধ্যে ছিল না।
উপসংহার : সুতরাং পরিশেষে বলা যায় 1857 খ্রিস্টাব্দে সিপাহীদের দ্বারা সংগঠিত মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহেরব্যর্থতার পেছনে একটি কারণ নয় বরং একাধিক কারণ লুকিয়ে ছিল।
আশাকরি যে উপরের আলোচনা থেকে তোমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা এর " 1857 সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কি ছিল বা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী কী ছিল? " সেই সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছো। এই অধ্যায়ের পরবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে পরবর্তীকালে শেয়ার করব।
Tags :