1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? অথবা সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনোভাব কিরুপ ছিল?

0

 

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? অথবা সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনোভাব কিরুপ ছিল? 


1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? অথবা সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনোভাব কিরুপ ছিল?


আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমি তোমাদের সঙ্গে দশম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় " সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন,যেটা প্রায়শই মাধ্যমিকে এসে থাকে সেটা নিয়ে একটি নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। " 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? "  প্রশ্নটি তোমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের খুব ভালো করে পড়া উচিৎ। ক্লাস টেনের ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা  এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে আগেও শেয়ার করা হয়েছে। আজকের পোস্টেও সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বড় প্রশ্ন উওর হিসাবে " 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? অথবা সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনোভাব কিরুপ ছিল " এর উওর শেয়ার করা হবে।

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল? অথবা সিপাহী বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনোভাব কিরুপ ছিল?


ভূমিকা : 1857 খ্রিস্টাব্দে বাংলার ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডের হাত ধরে মহাবিদ্রোহের শুরু হয়েছিল। যদিও এই মহাবিদ্রোহ শুরু হওয়ার পেছনে বিদ্রোহীদের নিজস্ব কারণ ছিল,কিন্তু তবুও 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনসাধারণের সমর্থন লাভ করেছিল। এবং অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণ মহাবিদ্রোহের অংশগ্রহণও করেছিল।  কিন্তু সবচাইতে বড় কথা হলো, মহাবিদ্রোহ বাংলার ব্যারাকপুরে শুরু হলেও,সেই সময়ের শিক্ষিত বাঙালি সমাজ মহাবিদ্রোহকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনি। তার বদলে অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালিই মহাবিদ্রোহের প্রতি তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন বা বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সেই সময় হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সহ খুব অল্পসংখ্যক বাঙালিরা মহাবিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তার পরিমাণ ছিল খুবই কম। বেশিরভাগ শিক্ষিত বাঙালিরাই মহাবিদ্রোহকে অসমর্থন করেছিল।

সেই সময়ে যারা মহাবিদ্রোহ কে সমর্থন করেনি বা যারা মহাবিদ্রোহের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখিয়ে ছিলেন,তাদের মধ্যে রাজনারায়ণ বসু, দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়,রাধাকান্ত দেব, রাধাকান্ত দেব,কিশোরী চাঁদ মিত্র, শম্ভুচরন মিত্রের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন। সেই সময়কার কলকাতায় অথবা বাঙালি সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিরা মহাবিদ্রোহকে সমর্থন মা করার পেছনে অনেক কারণ ছিল। যেমন - 


কল্যাণকর ব্রিটিশ শাসন : সেসময়কার কিছু উচ্চবিত্ত বাঙালিরা এটাই মনে করতেন যে,ব্রিটিশ শাসন ই বাঙালি সমাজের পক্ষে সবচেয়ে ভালো বা কল্যাণকর। ব্রিটিশ শাসনের মাধ্যমে বাঙালি সমাজের উন্নতি ঘটবে। তাই সেই সময়কার বাঙালি সমাজ কখনই এটা চাইত না, যে তারা যেন কখনোই ব্রিটিশ সরকারের এই আধুনিক শাসনের ছত্রছায়া থেকে হারিয়ে না যায়। কিন্তু মহাবিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর বাঙালি সমাজ এটা ভয় পেয়েছিল যে, বিদ্রোহীরা যদি জিতে যায় তাহলে কল্যাণকর ব্রিটিশ শাসন এদেশ থেকে দূরে হবে। আর ব্রিটিশ সরকারের সেই আধুনিক শাষন যদি দূর হয়, তাহলে বাঙালিদের আধুনিক হয়ে উঠা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক কিছুই হারাতে হতে পারে। এজন্য বাঙালি সমাজ মহাবিদ্রোহকে সমর্থন করা থেকে  সবসময় দূরে ছিল।

মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থার ভয় : মহাবিদ্রোহের বিদ্রোহীরা বিদ্রোহ চলাকালীন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট। শিক্ষিত বাঙালি সমাজ ভেবেছিল যে, যদি বিদ্রোহীরা কোনভাবে এই বিদ্রোহ জিতে যায় এবং ব্রিটিশ সরকার ভারত থেকে বিতাড়িত হয়,তাহলে ভারত থেকে ব্রিটিশদের এই আধুনিক শাসন উঠে গিয়ে ভারতে আবারও সেই রাজা-মহারাজাদের মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থা চলে আসবে। যেখানে জনসাধারণের কোনো অধিকার থাকবে না। এবং শিক্ষিত বাঙালি সমাজ বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের কাছে থেকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে,সেটা তারা কখনোই পাবে না যদি ভারতে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। 


বিদ্রোহীদের লক্ষ্যের : শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মহাবিদ্রোহ কে সমর্থন না করার আরও একটি বড় কারণ হলো, 1857 খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ হঠাৎ করেই সিপাহিদের নিজস্ব ধর্মীয় কারনে শুরু হয়েছিল।। সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হওয়ায়  বিদ্রোহীদের মধ্যে তখন হয়তো নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল না,কিন্তু পরবর্তীকালে এদেশ থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করাই ছিল সিপাহী বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু এই লক্ষ্যটা বিদ্রোহীদের মধ্যে এবং উত্তর ও মধ্য ভারতের জনগণের কাছে পরিষ্কার থাকলেও শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কাছে এই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য স্পষ্ট ছিল না। শিক্ষিত বাঙালি সমাজ বিদ্রোহীদের মধ্যে বিদ্রোহের সঠিক কোনো লক্ষ্য খুঁজে পাইনি। এই বিদ্রোহের মাধ্যমে তারা কী করতে চাইছে,সেই জিনিসটা তারা শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারেনি। যার ফলে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সিপাহী বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল।

রাধাকান্ত দেব ও কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রমুখের কার্যকলাপ : কালীপ্রসন্ন সিংহ এবং রাধাকান্ত দেব ছিলেন সেই সময়কার কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। যারা কলকাতায় মানিজ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মহাবিদ্রোহ চলাকালীন কলকাতার ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এর কর্তাব্যক্তি রাজা রাধাকান্ত দেব এবং কালীপ্রসন্ন সিংহ কলকাতা হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে সিপাহী বিদ্রোহের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। এবং তারা এই প্রস্তাবও গ্রহণ করেছিলেন যে,বিদ্রোহ দমনে তারা সরকারকে সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন। অনেক সময়ে মহাবিদ্রোহের নেতা নানাসাহেব,লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ নেতা-নেত্রীর বিভিন্ন নিন্দাও তারা করেছিলেন।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে এটা বুঝতে পারা যায়, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সহ অল্প কিছু শিক্ষিত বাঙালি মহাবিদ্রোহের প্রতি সদয় থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষিত বাঙালিরাই মহাবিদ্রোহকে সমর্থন করেননি।


আশাকরি উপরের আলোচনা থেকে তোমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা এর " মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব " সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছো। এই অধ্যায়ের পরবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেমন - 1858 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ, আনন্দমঠ উপন্যাস কিভাবে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটেছিল ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে পরবর্তীকালে শেয়ার করব।


Tags

ক্লাস টেনের সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বড় প্রশ্ন উওর | দশম শ্রেণির সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | মাধ্যমিকের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | wb class 10 history question answer  | wb class 10 history short question answer | wb class 10 history saq question answer | wb class 10 history mcq question answer | Madhyamik History question and answer | Madhyamik History question and answer Bengali | history question answer | history saq | history question answer | class 10 history short question answer | class 10 history question answer | history question answer | class 10 history question answer | class 10 history notes | wb class 10 history notes in Bengali | wb class 10 history question answer chapter 4 | wb class 10 history chapter 4 question answer in Bengali | history notes | class 10 history suggestion | class 10 history question answer | class 10 history notes | Madhyamik history suggestion | history test

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top