ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা আলোচনা করো |
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
বাংলার ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী -
ভূমিকা : ছাখাপাখা অথবা ছাপাখানার বিকাশের প্রসঙ্গে যে সমস্ত ব্যক্তিদের কথা সবার আগে আসে, তাদের মধ্যে ভারতীয় তথা বাঙালি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার জগতে এমন কিছু কাজ করে গেছেন, যার জন্য ছাপাখানা জগত ছাড়াও, তার অন্যান্য কিছু কার্যকলাপের জন্য তাকে সবসময়ই মনে রাখা হয়।
ক্লাস টেনের ইতিহাস মকটেস্ট দিতে নিচের লিঙ্কের ওপর ক্লিক করো👇
◆ নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে তিনি " ছেলেদের রামায়ণ " নামক একটি বই লেখেন। ছেলেদের রামায়ন নামক সেই বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের " সিটি বুক সোসাইটি " নামক একটি ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ছেলেদের রামায়ণ নামক সেই বইটি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, তাদ প্রকাশনা থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সেরকমভাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ছেলেদের রামায়ণ বইটির প্রকাশনা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে খুবই হতাশ করেছিল। এবং এই হতাশার পরেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজস্ব একটি আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেছিলেন বা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
◆ ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স প্রতিষ্ঠা : ছেলেদের রামায়ণ বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটির প্রকাশনার হতাশা থেকে,উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজস্ব একটি আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগ অনুযায়ী তিনি 1885 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শিবনারায়ন লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে,অর্থাৎ 1895 খ্রিস্টাব্দে সেই ছাপাখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স।
◆ হাফ টোন ব্লকের প্রবর্তন : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স - এ হাফ টোন ব্লকের প্রবর্তন করেছিলেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কাঠের পাতে খোদাই করা অক্ষর ব্যবহার করার বদলে, তিনি তামা ও দস্তার পাতে খোদাই করা অক্ষর ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন।
◆ রঙ্গিন ছবির ব্যবহার :
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর আগে, কোনো ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বইপত্র বা সংবাদপত্রে শুধুমাত্র সাদাকালোর ছবির ব্যবহার করা হতো। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছাপাখানার জগতে এমন এক পরিবর্তন এনেছিলেন,যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ছাপাখানার জগতে খুব উচু পরিচিতি লাভ করেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ইউ.এন.রায় এন্ড সন্সে প্রথম রঙিন ছবির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তাঁর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন গ্রন্থে রঙিন ছবি ব্যবহার করা হতো। যার ফলে বিভিন্ন বয়সের পাঠকদের কাছে সেই সমস্ত পত্র-পত্রিকা ও বইগুলি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো।
◆ বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভাবন : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং তিনি ছাপাখানার বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজকর্ম করেছিলেন। তিনি ছাপাখানার প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম মুদ্রণ যন্ত্র যেমন- ডায়াফর্ম যন্ত্র,স্ক্রিন অ্যাজাস্টার, ডুয়োটাই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলেন।।
◆ পথ প্রদর্শক হিসেবে : অনেকে মনে করেন যে, উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর পরিকল্পনা অনুসরণ করে ইংল্যান্ডে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রন যন্ত্র বানানো শুরু হয়েছিল। যেমন - স্ক্রিন অ্যাডজাস্টিং মেশিন বানানোর ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোরের পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছিল। তাই অনেকে তাকে এ বিষয়ে পথ প্রদর্শক হিসেবে মনে করেন
◆ সুকুমার রায়ের ভূমিকা : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি তার পুত্র সুকুমার রায়কে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন। সুকুমারায় লন্ডন থেকে ছাপাখানা সংক্রান্ত বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করেন। এবং তিনি ফিরে এসে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন.রায় এন্ড সন্সকে নিজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার মাধ্যমে আরো উন্নত একটি ছাপাখানায় পরিণত করেন।
উপসংহার,
পরিশেষে বলা যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ছেলেদের রামায়ণ গ্রন্থটির প্রকাশনা থেকে হতাশ হয়েই তিনি তা নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এবং তারপর থেকেই তিনি ছাপাখানার বিকাশ অথবা ছাপার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নানা রকমের চেষ্টা করে গেছেন । উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং সুকুমার রায় ছাপাখানা থেকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করেননি। বরং সেই সঙ্গে তারা ছাপাখানার বিকাশের জন্যেও অনেক কাজ-কর্ম করে গেছেন।