ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন | বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
আজকে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস ( wb class 10 history ) দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন অথবা বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা " এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন বা বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কী ছিল এই প্রশ্নটি তোমাদের মাধ্যমিক পরিক্ষায় 4 নম্বরের ( class 10 history question answer ) জন্য এসে থাকে। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে তোমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন তার একটি খুব সুন্দর ইতিহাস নোট ( wb class 10 history notes in Bengali ) এখান থেকে পেয়ে যাবে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন | বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
ভূমিকা : 1829 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের প্রধান নেতা " রাজা রামমোহন রায় " এর নেতৃত্বে যে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার চাপে তীব্রে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সরকার তার চাপে পড়ে বা সেই আন্দোলনকে সমর্থন করে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 ই ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে। যার অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়া মেয়েগুলো সমাজে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আইনি অধিকার পায়। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর এই বিধবাদের ভবিষ্যৎ কি হবে অথবা তারা ভবিষ্যতে কোন সামাজিক অধিকার নিয়ে বাঁচবে অথবা তাদের পরবর্তী সামাজিক জীবনকি হবে? তারা কী পূনরায় সংসারী হতে পারবে? সেই বিষয় গুলি নিয়ে সেরকম কোনো উদ্যোগ কাউকে নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিধবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছিল বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে। তিনি সর্বপ্রথম বিধবাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং তিনি শুরু করেছিলেন বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার নিয়ে আসার আন্দোলন।
◆ বিধবা বিবাহ আন্দোলন : সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো। এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না। যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1856 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।
বিধবা বিবাহ আন্দোলনকে সফল করার জন্য বিদ্যাসাগর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যেমন -
◆ শাস্ত্র নির্ভরতা : বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন' যাতে এই বিষয়টি সবার সামনে আসে যে, বিধবা বিবাহের বিষয়টি হিন্দু শাস্ত্রেও সমর্থন করা হয়েছে।। এর জন্য বিদ্যাসাগর ভারতের প্রাচীন পুঁথিপত্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে সেখান থেকে কিছু তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করেন। এরপর বিদ্যাসাগর " পরাশর সংহিতা "থেকে উদ্ধৃতি তুলে এনে প্রমাণ করে দেখান যে - বিধবা বিবাহকে হিন্দু শাস্ত্রে সমর্থন করা হয়েছে।
◆ গ্রন্থ প্রকাশ : বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন যে,মানুষ এই জিনিসটা বুঝতে পারুক যে -বিধবা বিবাহ সমাজে আদতেও প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা। এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর 1855 খ্রিস্টাব্দে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম ছিল " এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব "। যদিও সেই সময়ে অনেকেই এই গ্রন্থটির বিরুদ্ধে অথবা অথবা বিবাহের বিরুদ্ধে অনেক পুস্তিকা রচনা করে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে,বিধবা বিবাহ সমাজে আদতেও সমর্থনযোগ্য নয়।
◆ সরকারের কাছে আবেদন : দীর্ঘ সময় ধরে বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা এবং বিভিন্ন পুস্তিকা এবং লেখালেখির পর বিদ্যাসাগর অবশেষে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সেই সময়কার প্রায় 1000 জন জ্ঞানীগুনি ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা করেন। এই আবেদন পত্রের বিধবা বিবাহকে সরকারি সম্মতি জানানোর জন্য আবেদন করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই কাজের সঙ্গে সঙ্গেই বিধবা বিবাহকে যেন আইনিভাবে পাস না করা হয়না সেজন্য, বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে প্রায় 14 টি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা পড়েছিল।
◆ বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে আইন : বিধবা বিবাহের পক্ষে একটি এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে অনেকগুলি আবেদন পত্র পাওয়া সত্ত্বেও,সরকার বিধবা বিবাহকে সমর্থন জানায়। এবং তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় বড়লাট লর্ড ক্যানিং 1855 খ্রিষ্টাব্দে আইন পাস করে সরকারিভাবে বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করে। ফলে সমাজে বিধবারা পুনরায় বিবাহ করে সংসার জীবনে ফিরে আসার অধিকার পায়।।
◆ প্রথম বিধবা বিবাহ : লর্ড ক্যানিং এর 1855 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহকে আইনিভাবে সম্মতি জানানোর পর, বিদ্যাসাগর নিজেএ উদ্যোগে প্রথম একটি বিধবা বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিদ্যাসাগর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারন্তের সঙ্গে কালীমতি দেবীর নামে এক বিধবার সঙ্গে তার বিয়ে দেন। এছাড়াও বিদ্যাসাগর নিজের পুত্র নারায়নচন্দ্র সঙ্গেও অপর এক বিধবা মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। এবং এভাবেই বাংলার সমাজে তিনি বিধবা বিবাহের প্রচলন করে গিয়েছিলেন।
বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১- বিধবা বিবাহ আইন পাশের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?
উওর : লর্ড ডালহৌসি।
২ - বিধবা বিবাহ আইন কে প্রবর্তন করেন?
উওর : লর্ড ডালহৌসি।
আশাকরি যে আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি আজকের ব্লগ থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন সম্পর্কের আলোচনা তোমাদের একটুও ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোস্ট গুলি পড়ে দেখতে পারো।
Tags :