দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় - সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত ছোট এবং বড় প্রশ্ন উওর | WBBSE Class 10 History Question Answer Chapter 2 in Bengali

0

  

দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় - সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত ছোট এবং বড় প্রশ্ন উওর | WBBSE Class 10 History Question Answer Chapter 2 in Bengali
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত ছোট এবং বড় প্রশ্ন উওর


দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় - সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত ছোট এবং বড় প্রশ্ন উওর | WBBSE Class 10 History Question Answer Chapter 2 in Bengali 


আজকে আমরা দশম শ্রেণীর( WBBSE class 10 ) মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর তোমাদের সাথে শেয়ার করবো। আজকে আমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস ( wbbse class 10 history question answer chapter 2 in Bengali ) দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " থেকে সেই সমস্ত অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর ( wb class 10 history 2nd chapter saq question answer ), মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় "সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা" অধ্যায়ের সমস্ত 2 মার্কের এবং মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত  4 ও 8 মার্কের  প্রশ্ন উওর এবং নোটস তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।


সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের 110 + প্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 ইতিহাস | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর

1 - বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িক পত্রিকা কোনটি?

উওর: বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িক পত্রিকা হলো সমাচার দর্পন।

2- ভারতের প্রথম সাপ্তাহিক পএিকা কোনটি?

উওর- বেঙ্গল গেজেট।

3 - বেঙ্গল গেজেট পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উওর : বেঙ্গল গেজেট পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি।

4 - কত খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ঘটে?

উওর ; 1780 খ্রিষ্টাব্দে।

5- ভারতের প্রথম বাংলা দৈনিক সংবাদ কোনটি?

উওর- ভারতের প্রথম বাংলা দৈনিক সংবাদ হলো " সংবাদ প্রভাকর"।

6 - সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক কে ছিলেন?

উওর ; ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক।

7- বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পএিকার নাম কোনটি ?

উওর- " দিগদর্শন " হল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পএিকা।

8 - দিগদর্শন পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উওর : জোশুয়া মার্শম্যান।

9 - কত খ্রিষ্টাব্দে দিগদর্শন পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ঘটে?

উওর : 1818 খ্রিষ্টাব্দে।

10 - ভারতের প্রথম সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদপত্রের নাম লেখো।

উওর : সমাচার দর্পন হলো ভারতের প্রথম সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদপত্র।

11 - কত খ্রিষ্টাব্দে সমাচার দর্পন পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ঘটে

উওর : 1818 খ্রিষ্টাব্দে।

12 - সমাচার দর্পন পত্রিকাটির সম্পাদকের নাম লেখো।

উওর : জোশুয়া মার্শম্যান।

13 - বামাবোধিনী সভা কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত করা হয়?

উওর : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের।

14- কে বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : উমেশচন্দ্র দত্ত বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

15-  কত খ্রিস্টাব্দে বামাবোধিনী পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল?

উওর : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে।
16-  বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উওর : বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক  ছিলেন উমেশচন্দ্র দও।

17 -  হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়েছিল ?

উওর: ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারি।।

18 - হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম প্রকাশক কে ছিলেন?

উওর : হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম প্রকাশক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ।

19- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাতে কোন ভাষায় সংবাদ প্রকাশ হতো?

উওর : হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাতে ইংরেজি ভাষায় সংবাদ প্রকাশ হতো।

20 - হিন্দুপ্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি সাপ্তাহিক ছিল ____ পত্রিকা।

উওর : হিন্দুপ্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

21 - হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কত খ্রিস্টাব্দে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন?

উওর: হরিশচন্দ্র 1854 খ্রিষ্টাব্দে সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।

19 - হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কত খ্রিস্টাব্দে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মুখ্য সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন?

উওর : 1855 খ্রিষ্টাব্দে।

20 - হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি কত খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক পত্রিকায় পরিণত হয়?

উওর: 1892 খ্রিষ্টাব্দের 16 ই মার্চ।


21 - তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উওর : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

21 - " হুতোম প্যাঁচার নকশা " -  গ্রন্থটি কার রচনা??

উওর : সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহ।

22 -  হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়??

উওর : 1864 খ্রিষ্টাব্দে।

23- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার।

24- কত খ্রিস্টাব্দে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রমম প্রকাশিত হয়??

উওর : 1863 খ্রিষ্টাব্দে।

25 -  কোন পত্রিকাকে গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক বলা হয়?

উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পএিকাকে গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক বলা হয়।

26- কত খ্রিস্টাব্দে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা বন্ধ হয়ে যায়?

উওর : 1884 খ্রিষ্টাব্দে।

27 -  1884 খ্রিস্টাব্দে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ কি ছিল?

উওর : কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের আর্থিক দুরবস্থা বা সংকটের কারণে, তিনি আর এই পত্রিকাটির প্রকাশনা সচল রাখতে পারেননি।

28 - হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উওর : কালীপ্রসন্ন সিংহ।

29- হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের আমরা কলকাতার কোন সম্প্রদায়কে দেখতে পাই??

উওর : কলকাতার বাবু সম্প্রদায়কে।

30 - নীলদর্পণ নাটকটির রচয়িতা কে?

উওর.: দীনবন্ধু মিত্র।

31 -  নীলদর্পণ নাটকটি কিসের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল??

উওর :  1859-60 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের উপর ভিত্তি করে।

32-   নীলদর্পণ নাটকটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়?

উওর : 1860 খ্রিষ্টাব্দে।

33 - নীলদর্পণ নাটকটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
উওর : ঢাকায়।

< p dir="ltr">34- কে " নীলদর্পণ ' নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন?

উওর : মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

35- নীলদর্পণ নাটকটের ইংরেজি প্রকাশকের নাম কী?

উওর : রেভারেন্ড জেমস লঙ।

36-  ব্রিটিশ সরকার কত খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস করে??

উওর : 1813 খ্রিষ্টাব্দে।

37-  কোন চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে ভারতের শিক্ষা খাতে প্রতি বছর এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা ঘোষণা করা হয়?

উওর: 1813 খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট এর মাধ্যমে।

38- কত খ্রিস্টাব্দে কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন বা জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়??

উওর : 1823 খ্রিষ্টাব্দে।

39 - ভারতে কবে পাশ্চাত্য শিক্ষা নীতি সরকারি ভাবে গ্রহণ করা হয়?

উওর : 1835 খ্রিষ্টাব্দে।


40- ভারতে কত খ্রিস্টাব্দে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে?

উওর : 1835 খ্রিস্টাব্দের 7 ই মার্চ.

41- জনশিক্ষা কমিটি বা কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি কে ছিলেন?

উওর :  টমাস ব্যাবিংটন মেকলে।

42- টমাস বেবিংটন মেকলে কত খ্রিস্টাব্দে তার মেকলে মিনিট পেশ করেন?

উওর: 1835 খ্রিষ্টাব্দের 2 ই ফেব্রুয়ারি।

43 - কাকে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার ম্যাগনাকার্টা বলা হয়??

উওর :  উডের ডেসপ্যাচ কে।

44 -  কত খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচ প্রকাশিত হয়?

উওর : 1854 খ্রিষ্টাব্দে।

45-  উডের ডেসপ্যাচ এর প্রণেতা কে??

উওর : চার্লস উড।

46-  চার্লস উড কে ছিলেন??

উওর :  চার্লস উড ছিলেন বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর সভাপতি এবং উডের ডেসপ্যাচ এর প্রণেতা।

47-  চার্লস উডের সুপারিশ মেনে কবে সরকারি শিক্ষা দপ্তর খোলা হয়?

উওর : 1855 খ্রিষ্টাব্দে।

48- ভারতে কত খ্রিস্টাব্দে হান্টার কমিশন নিযুক্ত  হয়?

উওর : 1872 খ্রিষ্টাব্দে।

49- কত খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হয়?

উওর : 1817 খ্রিষ্টাব্দে।

50 - কে স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : ডেভিড হেয়ার।

51 - কবে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়?

উওর : 1817 খ্রিস্টাব্দে।

52-  হিন্দু কলেজ পরবর্তীকালে কী নামে পরিচিত হয়?

উওর :  প্রেসিডেন্সি কলেজ।

53 - হিন্দু কলেজের বর্তমান নাম কী?

উওর : প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।

54- প্রেসিডেন্সি কলেজের বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগটি কী নামে পরিচিত?

উওর: হিন্দুস্কুল নামে পরিচিত।

55- কে " হেয়ার স্কুল " প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর: ডেভিড হেয়ার।

56- ডেভিড হেয়ার কত খ্রিস্টাব্দে হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : 1818 খ্রিষ্টাব্দে।

57-  হেয়ার স্কুল এর পূর্ব নাম কী ছিল?

উওর : পটলডাঙ্গা একাডেমি।

58- কে এবং কত খ্রিস্টাব্দে অরিয়েন্টাল সেমিনারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : গৌরমোহন আঢ্য 1828 খ্রিস্টাব্দে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

59-  কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উওর : 1781 খ্রিষ্টাব্দে।


60- কত খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উওর : 1784 খ্রিষ্টাব্দে।

61-  কত খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উওর : 1800 খ্রিষ্টাব্দে।

62- কত খ্রিস্টাব্দে " বারাণসী সংস্কৃত কলেজ " প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উওর :  1792 খ্রিষ্টাব্দে।

63 - কত খ্রিস্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়?

উওর : 1835 খ্রিষ্টাব্দে।

64-   কত খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন - প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উওর : 1830 খ্রিষ্টাব্দে।

65- জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন এর বর্তমান নাম কী?

উওর : স্কটিশ চার্চ কলেজ।

66- জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন কে প্রতিষ্ঠা করেন?,

উওর ; আলেকজান্ডার ডাফ।

67-  ভারতবর্ষের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?

উওর : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

68 -  ভারতে কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়?

উওর  : 1857 খ্রিষ্টাব্দের 24 ই জানুয়ারি।

69 - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য কে ছিলেন?

উওর : লর্ড ক্যানিং।

70- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য কে ছিলেন?

উওর : জেমস উইলিয়াম কোলভিন।।

71 - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য কে ছিলেন?

উওর : স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

72 - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক কারা?

উওর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং জদুনাথ বোস।

73 - কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়?

উওর : 1835 খ্রিষ্টাব্দের 28 ই জানুয়ারি।

74- কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম মুসলিম  গ্রাজুয়েট ছাত্র কে?

উওর : রহিম খান।

75 - মধুসুদন দও বিখ্যাত কেন?

উওর :  কারণ মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন প্রথম যিনি প্রথম ভারতীয় শল্যচিকিৎসক হিসেবে শব ব্যবচ্ছেদ।  করেছিলেন।

76 - বাংলার প্রথম মহিলা স্নাতক কারা?

উওর : চন্দ্রমুখি বসু ও কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।

77 - ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসকের নাম কী?

উওর : কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

78- কে এবং কত খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন?

উওর : জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন সাহেব আঠার 1849 খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

79- ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় কোনটি?

উওর : হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়।


80-  হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় বর্তমান নাম কী?

উওর : বেথুন স্কুল।

81-  রাজা রামমোহন রায় কত খ্রিস্টাব্দে " অ্যাংলো হিন্দু স্কুল " প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : 1815 খ্রিষ্টাব্দে।

82- কত খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উওর : 1800 খ্রিষ্টাব্দে।

83 - কত খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উওর ; 1818 খ্রিষ্টাব্দে।

84- কাদের উদ্যোগে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়?

উওর : শ্রীরামপুর মিশনারীদের উদ্যোগ।

85- কাদের শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হত?

উওর : উইলিয়াম কেরি,  জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড - কে একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হত।

86-রাজা রামমোহন রায় কত খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?

উওর : 1826 খ্রিষ্টাব্দে।

87 - " স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক " নামক পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন?

উওর : রাজা রাধাকান্ত দেব।।

88 - রাজা রামমোহন রায় কত খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠা করেন?

উওর : 1828 খ্রিস্টাব্দে।

89- কাকে ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয়?

উওর : " রাজা রামমোহন রায় "- কে।

90-  তত্ত্ববোধিনী পএিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উওর :  মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

91 - ব্রাহ্মসমাজের কে ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত ছিলেন?

উওর:  কেশবচন্দ্র সেন।

93- কেসবচন্দে সেনকে - কে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিলেন?

উওর ; দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

93- কত খ্রিস্টাব্দে তিন আইন পাশ হয়?

উওর : 1872 খ্রিষ্টাব্দে।

92-  কত খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা রদ করা হয়?

উওর : 1829 খ্রিষ্টাব্দে 4 ই ডিসেম্বর।

93 - কোন বড়লাটের আমলে সতীদাহ প্রথা রদ করা হয়?

উওর: লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর আমলে।

94 -  কত খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়?

উওর : 1856 খ্রিস্টাব্দের 16 ই জুলাই বিধবাবিবাহ আইন পাশ করা হয়।

95 - কে বিধবাবিবাহ আইন পাস করেছিলেন?

উওর: লর্ড ক্যানিং।

96 - ডিরোজিও ও তা অনুগামীরা কী নামে পরিচিত ছিল?,

উওর :  ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী।

97 - কত খ্রিস্টাব্দে এবং কে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন?

উওর : 1828 খ্রিস্টাব্দে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।

98 - " যত মত তত পথ " বাণীটি কার?

উওর : শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের।

99 - কত খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা হয়?

উওর ;  1897 খ্রিস্টাব্দে।

100 -  রামকৃষ্ণ মিশন কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উওর : স্বামী বিবেকানন্দ।

101 - Man Making Religion কথাটি কে বলেছিলেন?

উওর : স্বামী বিবেকানন্দ।

102 - স্বামী বিবেকানন্দ কত খ্রিস্টাব্দে শিকাগোয় বক্তৃতা দিয়েছিলেন?.

উওর; 1893 খ্রিষ্টাব্দের 11 ই সেপ্টেম্বর।

103 - বাংলার কোন শতকের নবজাগরণের যুগ বলা হয়?

উওর : উনিশ শতক-কে।

104 - বাংলার নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র কোথায় ছিল?

উওর : কলকাতা।।

105 - কে নববিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : কেশবচন্দ্র সেন।

106-  কে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উওর : রাজা রামমোহন রায়।।

107-  কে রামমোহন রায়কে রাজা উপাধি দেন?

উওর : মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর।

108 -  লালন ফকির কে ছিলেন?

উওর : লালন ফকির ছিলেন একজন মানবতাবাদী ও অসংখ্য বাউল গানের রচয়িতা।

109 - কেশবচন্দ্র সেন সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম কী?

উওর : ইন্ডিয়ান মিরর।।

110- গোঁসাইজী নামে কে পরিচিত ছিলেন?

উওর : বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।


সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের 110 + প্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 ইতিহাস | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর

◆ সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করো ◆

1 - বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ।
উওর : মিথ্যা।
2 - হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
উওর : মিথ্যা।
3- হুতুম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি রচয়িতা হলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ।
উওর: সত্য।
4- নীলদর্পণ নাটকটি প্রকাশিত হয়েছিল 1864 খ্রিষ্টাব্দে।
উওর : মিথ্যা।
5- নীলদর্পণ নাটকটের ইংরেজি অনুবাদক হলেন জেমস লং।
উওর: মিথ্যা।
6- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার।
উওর : সত্য।
7 - জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন গঠিত হয় 1823 খ্রিষ্টাব্দে।
উওর : সত্য।
8 - গ্রামবার্তা প্রকাশিকাকে গ্রামীন সংবাদ পত্রের জনক বলা হয়।
উওর : সত্য।
9- পটলডাঙ্গা একাডেমির বর্তমান নাম হেয়ার স্কুল।
উওর : সত্য।
10- কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন মধুসূদন গুপ্ত।
উওর: সত্য।
11- শ্রীরামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
উওর: মিথ্যা।
12- রাজা রামমোহন রায় কেশবচন্দ্র সেনকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিলেন।
উওর : মিথ্যা।
13- নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন কেশব চন্দ্র সেন।
উওর : সত্য।


সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের 110 + প্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 ইতিহাস | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর

◆ নিম্নলিখিত বিবৃতি গুলির মধ্যে সঠিক ব্যাখা নির্বাচন করা। ◆

বিবৃতি 1 - কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত হুতোম প্যাঁচার নকশা একটি উৎকৃষ্ট রচনা -
  • এটি প্যাঁচার উপর লেখা মূল্যবান গ্রন্থ।
  • সমসাময়িক কলকাতার সমাজজীবনের সুস্পষ্ট প্রতিফলন।
  • এটি একটি হাস্যরসাত্মক রচনা।
উওর : সমসাময়িক কলকাতার সমাজজীবনের সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

বিবৃতি 2 - রাজা রামমোহন রায়ের লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লিখেছিলেন -
• সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য।
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসেবে।
• ভারতে সংস্কৃত শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসেবে।
উওর : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসেবে।

বিবৃতি 3 - হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওকে  হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে হয়েছিল -
• তার শিক্ষকতায় খামতি থাকার জন্য।
• ছাত্রদের মধ্যে প্রগতিশীল মনোভাব সঞ্চারের জন্য।
• শারীরিক সমস্যার জন্য
উওর : ছাত্রদের মধ্যে প্রগতিশীল মনোভাব সঞ্চারের জন্য।

বিবৃতি 4 - উনিশ শতকে বাংলায় যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল -
• বাংলায় সাহিত্য,শিক্ষা ও সমাজ ওধর্ম সংস্কারের নবযুগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
• সমাজে কোনো উন্নতি হয়নি।
• শুধুমাত্র সাহিত্যে পরিবর্তন এসেছিল।
উওর : বাংলায় সাহিত্য,শিক্ষা ও সমাজ ওধর্ম সংস্কারের নবযুগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল

বিবৃতি 5 - উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের ঘটনা একটি প্রতারণা মাত্র।
• এর ফলে সঠিক জাগরণ ঘটেনি।
•  মানুষ কুসংস্কার মুক্ত হয়নি।
•  পাশ্চাত্য শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
উওর : পাশ্চাত্য শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

বিবৃতি 6 - জনশিক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মেকলে মিনিট প্রকাশিত হয়েছিল।
• তিনি ভারতে খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটাতে চেয়ে ছিলেন।
• তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন।
• তিনি ভারতের সংস্কার আন্দোলন শুরু করতে চেয়ে ছিলেন।
উওর : তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন।


সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


আজের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের 10 সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  2 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class X History Question Answer &  Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনার যে সমস্ত বাকি দুই নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি থেকে গেল, সেগুলি আমরা পরবর্তীতে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আমরা প্রতিদিন মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।

সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর  | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড়ো প্রশ্ন উওর | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর


আজকের প্রশ্ন উওরের বিষয়ঃ 

• বামাবোধিনী পত্রিকা বিখ্যাত কেন?
• হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা টি বিখ্যাত কেন?
•  হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের কলকাতার কিরূপ সমাজ চিত্র ফুটে উঠেছে? 
•  ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট গুরুত্বপূর্ণ কেন ছিল? 
•  মেকলে মিনিট বলতে কী বোঝো বা মেকলে মিনিট কি?
•  উডের নির্দেশনামা অথবা উডের ডেসপ্যাচ কি? 
• হান্টার কমিশন বলতে কী বোঝো?
• ডেভিড হেয়ার স্মরণীয় কেন?
• গ্রামবার্তা প্রকাশিকা ছিল একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা- কেন তা আলোচনা করো। 
• ভারতের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে  প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদীর বিতর্ক বলতে কী বোঝো?
• বাংলার নারী শিক্ষার বিকাশে, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কী ছিল??
• ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন?
• ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন? অথবা, নববিধান কি?
• কে কবে এবং কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
• ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ সম্পর্কে লেখো।।
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো?,
অথবা, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হতো??
• সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো
• শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝো বা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্তের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• বাংলার নবজাগরণ কী?

 

প্রশ্নঃ বামাবোধিনী পত্রিকা বিখ্যাত কেন ?? 


উঃ ১৮৬৩ উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত বামাবোধিনী পত্রিকার বিখ্যাত ছিল- 

প্রথমতঃ বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক উমেশচন্দ্র দত্ত তৎকালীন সময়ের নারী সমাজের কল্যাণের জন্যেই এই পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন।

দ্বিতীয়তঃ বামাবোধিনী পত্রিকা বাংলার নারীদের জন্য-  শিক্ষা , নারীদের অধিকার , পারিবারিক চিকিৎসা , বিজ্ঞান,  ইতিহাস  প্রভৃতি বিষয়ে লেখালেখি করা হতো।। 

তৃতীয়তঃ বামাবোধীনি পত্রিকার মাধ্যমে নারীরা শুধু শিক্ষাই অর্জন করার সুযোগ পায়নি, সেই সঙ্গে তারা  নিজেদের বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার গুলি সম্পর্কেও জানার সুযোগ পেয়েছিল।

প্রশ্নঃ হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কিরুপ সমাজচিএ পাওয়া যায়??

উওরঃ  - কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত হুতো। প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি ছিল মূলত উনিশ শতকের কলকাতার আয়না বা দর্পণ। যেখানে তিনি কলকাতার শিক্ষিত বাবু সমাজের অথবা কলকাতার বিভিন্ন সমা চিত্র বিভিন্ন ভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন - 

•কালী প্রসন্ন সিংহ তার এই গ্রন্থে কলকাতার, বিশেষ করে বাঙ্গালীদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান,যেমন- নীলের ব্রত, চড়ক মেলা, রথযাত্রা,রামলীলার মতো প্রভৃতির কথা তুলে ধরেছেন।

• এই গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে  কলকাতার সেই বাবু সমাজের কথা,  যারা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, ইউরোপীয় বাবুদের অনুসরণ করতো।। মূলত এসব চিত্রই হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে।।

প্রশ্নঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা কেন একটি ব্যতিক্রমি পএিকা ছিল??

উওরঃ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থেকে হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি সত্যিই একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা ছিল। এর কারণ হলো 

প্রথমত গ্রামবার্তাপ্রকাশিকাই ছিল সেই প্রথম পএিকা যেটা শহরের সমাজ ও রাজনৈতিক আলোচনা বাদ দিয়ে গ্রামের সাধারন মানুষের নিয়ে আলোচনা করতো।। 

দ্বিতীয়তঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পএিকাই ছিল সেই পত্রিকা যেখানে  নীল বিদ্রোহ, চাষীদের দুরবস্থা তাদের সাধারণ জীবন যাপনের নানা কাহিনীর কথা জানা যেতো।।

এছাড়াও গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা ছিল এমন একটি পএিকা,যেটা নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও বিভিন্ন জমিদারদের খারাপ, অন্যায় সম্পর্কে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করা হতো। মূলত এই সমস্ত কারণের জন্যেই গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা পএিকটিকে একটি ব্যতিক্রমি পএিকা বলা হয়।।

প্রশ্নঃ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পএিকাটি বিখ্যাত কেন??


উওরঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার আগে যে পত্রিকাটি সাধারণ সমাজের নানা কথা নির্ভীকভাবে শিক্ষিত সমাজের সামনে তুলে ধরতো, সেটি হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা। 

যখন হরিশচন্দ্র এই পএিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন, তখন তিনি নির্ভিক ভাবে, নীলচাষিদের ওপরে করা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা, জনস্বার্থবিরোধী ব্রিটিশ কার্যকলাপ, জনসাধারণের নানা সুখ দুঃখের কথা তিনি প্রকাশ করেন।।

• হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকাটি শুধুমাত্র খবর প্রকাশ করেনি, সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছিল।

এবং সেজন্যই হিন্দু প্যাট্রিয়ট পএিকাটি জাতীয়তাবাদী পএিকার মর্যাদা লাভ করেছিল।।

প্রশ্নঃ ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের বা
চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব কি??


উত্তরঃ ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাশ করএ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এখন থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিক্ষার জন্য প্রতিবছর ভারতের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা করে ব্যয় করবে।। ব্রিটিশ সরকারের 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট পাস করানো এবং দীর্ঘদিনের প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের পর ব্রিটিশ সরকার সনদ আইনের মাধ্যমেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে সরকারি টাকা খরচ করেছিল।

প্রশ্নঃ ভারতের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে  প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদীর বিতর্ক বলতে কী বোঝো??

উত্তরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাশ করএ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এখন থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিক্ষার জন্য প্রতিবছর ভারতের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা করে ব্যয় করবে  কিন্তু এই এক লক্ষ টাকা ভারতে কোন ধরনের শিক্ষায় খরচ করা হবে এই নিয়ে জনসংখ্যা কমিটির সদস্যদের মধ্যে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তাই ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব অথবা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক নামে পরিচিত।। 

প্রশ্নঃ মেকলে মিনিট কি??


উওরঃ উইলিয়াম বেন্টিং আইন সচিব এবং সেই সঙ্গে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের জনশিক্ষা কমিটির সদস্য টমাস বেবিংটন মেকলে তার একটি এক মিনিট প্রতিবেদন দ্বারা ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট নিয়ে যে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বিতর্কে সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছিলেন। টমাস ব্যাবিংটন মেকলের সেই প্রতিবেদন মেনে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থাকেই সরকারি শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।। মেকলের সেই প্রতিবেদন ই মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।।

প্রশ্নঃ উডের নির্দেশনা কী? অথবা, উডের ডেসপ্যাচ কী?

উওরঃ ভারতের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পযর্ন্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড তার একটি নির্দেশনামায় সরকারের কাছে অনেক সুপারিশ বা আবেদন করেন।। ভারতের শিক্ষার উন্নতির জন্য স্যার চার্লস উডের করা সেই সমস্ত সুপারিশ বা নির্দেশনামাকে উডের ডেসপ্যাচ বলা হয়।।

প্রশ্নঃ হান্টার কমিশন কী?? হান্টার কমিশনের গুরুত্ব কী ছিল?


উওরঃ  ভারতের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি ও তার বিভিন্ন 1882 খ্রিষ্টাব্দে স্যার উইলিয়াম হান্টার নামে এক শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে ভারত সরকার একটি শিক্ষা কমিটি নিয়োগ করেছিল যার নাম হান্টার কমিশন।

এই হান্টার কমিশন

1883 খ্রিষ্টাব্দে হান্টার কমিশন তাদের একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয় এবং সেউ রিপোর্টে হান্টার কমিশন ভারত সরকারের কাছে - প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষার বিকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়ার আবেদন জানায়।।

প্রশ্নঃ ডেভিড হেয়ার বিখ্যাত কেন??
অথবা,
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ডেভিড হেয়ারের অবদান উল্লেখ করো ।।

উত্তরঃ ডেভিড হেয়ার স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী একজন হলেও তিনি ভারতে স্বরনীয় হয়ে আছেন। কারণ ডেভিড হেয়ার কলকাতায় একজন ঘড়ি সারাইওয়ালা হিসেবে এলেও,ভারতবর্ষকেও নিজের মাতৃভূমির মতো ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন। ডেভিড হেয়ার যখন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার করুন অবস্থার কথা উপলব্দি করেছিলেন, তখন তিনি জীবনে যা কিছু উপার্যন করেছিলেন, সেই সমস্ত কিছুই ভারতের শিক্ষার উন্নতির জন্য খরচ করে ফেলেন। 


• তার উদ্যোগেই 1817 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।।

• বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তক রচনার উদ্দেশ্য, এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তা কম দামে বিলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য 1817 খ্রিষ্টাব্দে স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মূলত এসব কারণেই ডেভিড হেয়ারের এরকম মহান কাজের জন্যই তিনি আজও আমাদের মধ্যে স্বরনীয় হয়ে রয়েছেন।।


প্রশ্নঃ বাংলার নারী শিক্ষার বিকাশে, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কী ছিল??

উওরঃ উনিশ শতকের যে সমস্ত বাঙালিরা বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন একজন। রাজা রাধাকান্ত দেব, নিজে একজন সংস্কৃত পন্ডিত হয়েও তিনি নারীদের শিক্ষার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষাকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

• রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারীশিক্ষার বিস্তারে 1819 খ্রিষ্টাব্দে  ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি " প্রতিষ্ঠায় সাহায্যে করেছিলেন।

• রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারীদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বা নারী শিক্ষার প্রসারের সমর্থনে  গৌরমহন বিদ্যালংকারের মাধ্যমে  স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন।।

• রাজা রাধাকান্ত দেব নিজের বাড়িতেই ক্যালকাটা স্কুলবুক সোসাইটির ছাএীদের নিজের বাড়িতে পরীক্ষা দানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।। 

• মূলত এভাবেই রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে সাহায্য করেছিলেন।

প্রশ্নঃ ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন???

উওরঃ ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত বা স্বরনীয় হয়ে থাকার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। যেমন- 

• মধুসুদন গুপ্ত ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিখ্যাত বাঙ্গালী চিকিৎসক। যিনন 1836 খ্রিষ্টাব্দের 10 জানুয়ারি কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম বাঙ্গালি ছাত্র হিসাবে সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার এবং বাধার বিপত্তি কাটিয়ে  প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। যা ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা।

• ডা. মধুসুদন গুপ্ত,  নিজহাতে ' লন্ডন ফার্মাকোপিয়া' গ্রন্থটি বাংলা ভাষায়, এবং "অ্যানাটমি " গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।।।

এবং ডা. মধুসুদন গুপ্তের এসব কাজে জন্যেই তিনি আজও সবার মধ্যে স্বরনীয় হয়ে আছেন।।

প্রশ্নঃ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন?? অথবা, নববিধান কি??

উত্তরঃ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দ মোহন বসু, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এবং কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে মতবিরোধ।।

 ব্রাহ্মসমাজে ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের নীতি এবং আদর্শ উপেক্ষা করে তিনি নিজের ১৪  বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের মহারাজের সঙ্গে বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন।  এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী , বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের এর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এবং এই বিতর্কে জেরেই 1878 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ,আনন্দমোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে থাকা ভাগটি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাগটি নববিধান নামে পরিচিতি লাভ করে।।

প্রশ্নঃ কে, এবং কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন??

উওরঃ উনিশ শতকে বাংলায় যথেষ্ট শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় বাধানিষেধ ইত্যাদি কারণে সমাজে যে কূপ্রথা, কুসংস্কার, প্রচলিত ছিল, সমাজের সেই সমস্ত কুসংস্কার দুর করে, সমাজে শিক্ষা আলোর প্রসার ঘটিয়ে সমাজের উন্নতির জন্য রাজা রামমোহন রায়  ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠা করেন।। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ব্রাহ্ম সভা পরবর্তীকালে ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে  'ব্রাহ্মসভা' নামে নাম পরিচিত হয়।।

প্রশ্নঃ ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ সম্পর্কে লেখো।।

উওরঃ ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ হলো- 

প্রথমতঃ ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজারামমোহন রায়ের  তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে 1829 খ্রিষ্টাব্দের 4 ই ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথার মতো একটা ভয়ংকর কুপ্রথা সমাজ থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া।

দ্বিতীয়তঃ ব্রাহ্মসমাজের ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত কেশবচন্দ্র সেনের  নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের ফলে সরকার 1872 খ্রিষ্টাব্দের "তিন আইন" পাস হওয়া।। 

প্রশ্নঃ নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো?,
অথবা, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হতো??

উওরঃ উনিশ শতকের, হিন্দু কলেজের একজন তরুন অধ্যাপক, "হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু কলেজের একদল তরুন যুবক ছাত্রদের নিয়ে যে সমাজ সংস্কার মূলত সংগঠন তৈরি হয়েছিল, তাকেই বলা হতো "ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী" বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী। যার প্রানপুরুষ ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও নিজেই।। 

এবং এই দলের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্যারিচাদ মিএ, রসিককৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ী,প্রমুখ।।

প্রশ্নঃ সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা কী ছিল??

উত্তরঃ  উনিশ শতকে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার ছাত্ররা মূলত সমাজ সংস্কারের জন্যই "ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী " বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল।।

•নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে স্পর্শ না করতে পারলেও কলকাতার মধ্যে ডিরোজিও এবং তার অনুগামীরা অস্পৃশ্যতা ,জাতিভেদ প্রথা ,সতীদাহ প্রথা ,মূর্তিপূজা , প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তীব্র আন্দোলন করেছিলেন।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলেই কলকাতার সমাজে বা ভারতীয় সমাজে নতুন যুক্তিবাদী ভাবধারা গড়ে উঠেছিল।। এবং তাদের আন্দোলনের ফলেই সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার গুলির প্রথম যুক্তিবাদী আঘাত পরেছিল।।

প্রশ্নঃ শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝো বা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।

উওরঃ শ্রীরামকৃষ্ণের কোনো ধর্মকেই ছোটো বা বড়ো করে তাকে নিয়ে কথা বলেননি। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন সকল ধর্ম ই সমান এবং সত্য।

সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝায় যে-  শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের মতে আমাদের ধর্ম আলাদা আলাদা হতে পারে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই।আর সেই লক্ষ্য হলো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো। আর সেই লক্ষ্য পৌঁছনোর জন্যেই আমরা ধর্ম গ্রহণ করি। কেউ একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী তো আবার কেউ বহুশ্বরবদাদে বিশ্বাসী।। কিন্তু ঈশ্বর একই। শুধুমাত্র তার নাম আলাদা।।

তিনি বলেছিলেন যে, যেমন একটি ছাদে যেমন বিভিন্ন উপায়ে ওঠা যায়, ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধর্ম ও সাধনার মধ্যে দিয়েও ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যায়।। অথাৎ- "যত মত! তত পথ"।। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তার এই বাণীর মাধ্যমেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন।।

প্রশ্নঃ স্বামী বিবেকানন্দের নব্যবেন্দান্ত কী? বা স্বামী বিবেকানন্দের নব্যবেন্দান্তের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।

উওরঃ স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্ত নিয়ে, তার নিজস্ব নতুন মতামত দিয়েছিলেন। তিনি প্রাচীন বেদান্তের ভাবধারায়, তার নিজস্ব ধর্মচিন্তা নতুন ভাবে নিজের মতো করে যোগ করেছিলেন।।

এবং ধর্মচিন্তার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের সেই নতুন আদর্শই হলো নব্য বেদান্ত।। স্বামী বিবেকানন্দ তার নব্য বেদান্তে বলেছিলেন সর্বএ ব্রহ্মের উপস্থিতি এবং জনসাধারণের সেবা করা মানেই হলো ব্রহ্মের সেবা করা।।। ধর্মকে মনে রেখে মানুষের শেবা করাই হবে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম।।

প্রশ্নঃ উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ কী??

উওরঃ উনিশ শতকে, বাংলায় তথা বিশেষ করে কলকাতায় যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল, সেই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে  বাংলার তথা বিশেষ করে কলকাতার সমাজ সংস্কৃতির বিভিন্ন অগ্রগতি ঘটেছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার এই অগ্রগতিকেই বাংলার নবজাগরণ বলা হয়।

• বাংলার এই নবজাগরণ নিয়ে অনেকর অনেক আলাদা আলাদা মতামত রয়েছে। কেউ এই বৌদ্ধিক অগ্রগতিকে বাংলার নবজাগরণ বলে মেনে নিয়েছেন.. তো অনেকেই আবার একে বাংলার নবজাগরণ হিসেবে মেনে নেননি।। এবং এই মানা আর না মানা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার নবজাগরণ বিতর্ক।।


পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো | পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহনের ভূমিকা 


পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো | পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহনের ভূমিকা


ভূমিকা: উনিশ শতকে ভারতবর্ষের মূলত প্রাচ্য ধাচের শিক্ষাকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া হতো। কিন্তু সেই সময়ে অনেকেই এটা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে,দেশের উন্নতির জন্য বা ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্য এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার। যারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। রাজা রামমোহন রায়ের উনিশ শতকে নিজ অর্থ ব্যয় করে এবং নিজ উদ্যোগে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেন। যেমন - 


উদ্যোগ : পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়কে পথিকৃত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। রাজা রামমোহন রায় উপলব্ধি করেছিলেন যে আমাদের সমাজে যদি পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষার আলো না পরে,তাহলে আমাদের সমাজ থেকে কখনোই অন্ধ কুসংস্কার, সমাজের বিভিন্ন ভুল ধারণা, বা খারাপ দিকগুলি কখনোই শেষ হবেনা।। এবং আমাদের মধ্যে কখনোই যুক্তিবাদী মানসিকতা মনে জেগে উঠবে না । তাই আমাদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।।  এবং এই চিন্তা ভাবনা থেকেই রাজা রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগে পরেন।। 

• সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন 

1813 খ্রিষ্টাব্দে সনদ আইনে সরকার ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতি বছর 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করবে। কিন্তু সেই এক লক্ষ টাকা ভারতের কোন ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থাৎ প্রাচ্য নাকী পাশ্চাত্য  শিক্ষায় ব্যয় করা হবে তা নিয়ে সে সময়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব চলছিল। ঠিক এই সময়ে রাজা রামমোহন রায় লর্ড আমহার্স্টকে একটি চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করেছিলেন, যে ভারতবাসী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সরকার যে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে, সেই টাকা এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্যয় করা হয়।।

• অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : 

ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় নিজে যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছিলেন,তার মধ্যে অন্যতম একটি উদ্যোগ হলো 1815 খ্রিস্টাব্দে তার অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ। এই ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তিনি নিজের অর্থ খরচ করে 1815 খ্রিষ্টাব্দের এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।।


• বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা:

রাজা রামমোহন রায় যে সময়কার মানুষ ছিলেন, সেসময় হিন্দু সমাজে বিভিন্ন সামাজিক কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। রাজা রামমোহন রায় সমাজ থেকে সেই সমস্ত বিভিন্ন কুসংস্কার, কূপ্রথা দূর করার জন্য এবং পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজ বিজ্ঞানের ধারণা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি তার নিজের অর্থ খরচ করে 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।।

• আলেকজান্ডার ডাফ কে সাহায্য:

এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে, যেসমস্ত অন্যান্য ব্যক্তিরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আলেকজান্ডার ডাফ ছিলেন একজন। আলেকজান্ডার ডাফ যখন এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য উদ্যোগ নেন, তখন রাজা রামমোহন রায় আলেকজান্ডার ডাফকে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার সময়  বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন।।

উপসংহার

পরিশেষে আমরা দেখতে পাই যে,রাজা রামমোহন রায় ভারতবর্ষের অবস্থা দেখেই, এদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি নিজ উদ্যোগ সব রকম ভাবে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। এবং যেভাবে পেরেছেন অন্যকে সাহায্য করে এবং সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতবাসীর জন্য আধুনিক জ্ঞান লাভের দরজা খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। এবং

তিনি সেগুলোতে সফলও হয়েছিলেন।  এবং এভাবে রাজা রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজ থেকে বিভিন্ন কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করে ভারতে আধুনিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।।


হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কিরুপ চিত্র পাওয়া যায় | হুতোমপ্যাঁচার নক্সা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কী প্রতিফলন পাওয়া যায় ?


হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কিরুপ চিত্র পাওয়া যায় | হুতোমপ্যাঁচার নক্সা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কী প্রতিফলন পাওয়া যায় ?


উওর : প্রথম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি রচনা করেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। এই গ্রন্থটি প্রথম ভাগ 1862 সালের এবং দ্বিতীয় ভাগ 1863 সালে প্রকাশ পায়। পরে অবশ্য দুটি ভাগ একত্রে 1864- 1865 সালে প্রকাশিত হয়।

◆  সমাজ চিত্র বা সমাজের :
▪ বাবু কালচার: কালীপ্রসন্ন সিংহ তার এই গ্রন্থে সেইসময়ের কলকাতার বাবুকালচার কে স্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।  তিনি তাঁর রচনায় ধনি বাবুদের ভন্ডামীর কথা তুলে ধরেছেন। তার ভাষা ছিল ঝাঝালো প্রকৃতির।

▪ পূজা পার্বণ ও উৎসব : এই গ্রন্থ থেকে তৎকালীন কলকাতার প্রচলিত বারোয়ারি পুজো,রথযাত্রা, নীলষষ্ঠী, রাসলীলা,দুর্গোৎসব ইত্যাদির কথা জানা যায়।

▪ কুসংস্কার : কালীপ্রসন্ন সিংহ সমাজে প্রচলিত সতীদাহ, প্রথা,বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন।


▪ সমাজ বিন্যাস : ইংরেজ শাসনের আগে বাংলায় বড় বড় বংশের,যেমন - কৃষ্ণচন্দ্র,জগৎশেঠ,রাজবল্লভ, নন্দকুমার বংশের পতন ঘটে। একইসাথে বাংলার বেশকিছু নামজাদা বংশের উদ্ভব লক্ষ্য করা যায়। যেমন - মল্লিক পরিবার, শীলপরিবার ইত্যাদি।। রচনার কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি স্তরের মানসিকতাকে আমরা অতি সহজেই প্রত্যক্ষ করতে পারি।

◆ উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ তার ছদ্মনামে ( হুতোম প্যাচা ) ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং হাস্যরসের মিলনে তৎকালীন সমাজের ধনীদের লাঞ্ছনা, মাদকাসক্তি, নানা অপকর্ম মধ্যবিত্ত ও সাধারণ নানা আমোদ-প্রমোদের জীবন,সংসারের কথা এক বিচিত্র নকশাধর্মী ভাষায় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।।

 

উচ্চ শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কিরূপ ছিল? অথবা,পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ


উচ্চ শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কিরূপ ছিল? অথবা,পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ।

উত্তর : 1857 সালের 24 শে জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে উচ্চশিক্ষা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে দরজা খুলে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন লর্ড ক্যানিং এবং প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যার উইলিয়াম জোন্স কোলভিন। এবং প্রথম ভারতীয় উপাচার্য ছিলেন স্যার বন্দ্যোপাধ্যায়। 

◆ কার্যাবলী : 

• প্রথম থেকেই পূর্ব মধ্য ভারতের বেশিরভাগ কলেজগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করে। এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজকে অনুমোদন দানের ব্যবস্থা করে। 

• সাহিত্য,বিজ্ঞান, শিল্পকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। 

• বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকাদের এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা হয়। 

• 1882 সালে যেখানে কলেজের সংখ্যা ছিল 72 টি, সেখানে 1901 সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টায় কলেজের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় 145 টিতে।


•  বৃত্তি প্রদান : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা। শিক্ষা প্রসারের জন্য প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি, ঈশান বৃত্তি, স্যার আশুতোষ স্বর্ণপদক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়।

প্রথম স্নাতক : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রাজুয়েট বা স্নাতক ছিলেন যদুনাথ বোস এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক ছিলেন চন্দ্রমূখী বসু এবং কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। এশিয়ার প্রথম ডি.লিট ছাত্র ছিলেন বেনীমাধব বড়ুয়া। 

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বা প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা কিরূপ ছিল?


এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বা প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা কিরূপ ছিল?

উওর : 

ভূমিকা : 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য নীতির প্রথম প্রতিফলন ঘটে। এবং ভারতে পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিদ্যার সূচনা ঘটে। 

▪ মেডিকেল কলেজের ভূমিকা :- 

▪ প্রশিক্ষণ:  পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যা প্রশিক্ষণের জন্য 14 থেকে 20 বছর বয়সের 100 জন ভারতীয় ছাত্রের ভর্তির পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর থেকে 49 জন ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয় মেডিকেল কলেজের প্রথম ক্লাস। 

▪  পাঠ্যবিষয় : কলকাতা মেডিকেল কলেজে ব্যবহারিক রসায়ন,ব্যবহারিক মেডিসিন চিকিৎসা, ওষুধ তৈরি করা ইত্যাদি শেখানো হতো। প্রথমদিকে মেডিকেল কলেজে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হতো পরবর্তী সময় দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান শুরু হয়। 

▪ বহির্বিভাগ: কলকাতা মেডিকেল কলেজে 20 টি শাখা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এবং পরে 100 টি শাখা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন করা হয়।


▪ ছাত্রদের বিদেশে প্রেরণ : ভোলানাথ দাস, দ্বারকান্থ গুপ্ত প্রমুখ ছিলেন সেযুগের বিলেত ফেরত ডাক্তার। তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গাতে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। 

পরিশেষে বলা যায়, পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গুরুত্ব অপরিসীম। এই কলেজের জন্য জমি দান করেছিলেন মতিলাল শীল। এটি ছিল এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় কলেজ যেখানে ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা সেখানে শুরু হয়। রহিম খান এখান থেকে প্রথম মুসলিম ছাত্র হিসেবে ডাক্তারি পাশ করেন। এছাড়া মধুসূদন গুপ্ত শব ব্যবচ্ছেদ করে এক যুগান্তকারী ঘটনা পরিচয় দেন। কলকাতাকে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠানের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। 


ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান কি ছিল | এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা


ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান কি ছিল | এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা


◆ ভূমিকা : ভারতের সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের,আগে মূলত বেসরকারী উদ্যোগেই পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোদটা অনেক বেশি নেওয়া হয়েছিল। সেসময়কার কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নিজের উদ্যোগেই পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ভূমিকা নিয়েছিল। তাদের মতো  সেসময়ে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীরাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এবং সেগুলো তারা সঠিকভাবে পালনও করেছিল।

◆ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ :  ভারতের মূলত খ্রিস্টান মিশনারী এসেছিলেন তাদের খ্রিস্টধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারীরা দেখেছিলেন বা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ই ইংরেজিতে লেখা বাইবেল পাঠ করতে পারে না। যার ফলে তারা বাইবেলের মাহাত্ম্য বা বাইবেলের বিষয়বস্তু কখনোই বুঝতে পারতো না। খ্রিস্টান মিশনারীরা এই কথাটা বুঝতে পেরেই তারা এদেশে ইংরেজি স্কুল অথবা পাশ্চাত্য ধাচের বিদ্যালয় স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিল। যাতে এদেশের লোকেরা ইংরেজি শিখে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পাঠ করতে পারে। এবং খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্রতা বা ভালো দিক গুলি দেখে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। 


পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিস্থান স্থাপন - 

◆ শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগ : এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য সেই সময়কার বিখ্যাত তিনজন খ্রিস্টান মিশনারী, উইলিয়াম ওয়ার্ড,উইলিয়াম কেরি এবং জোশুয়া মার্শম্যান - যারা শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত,তারা তিনজন মিলে 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তারা তিনজন মিলে পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রায় 126 টি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এবং এই উদ্যোগটি ছিল সম্পূর্ণ ভাবে তাদের নিজস্ব। এক্ষেত্রে তারা হয়তো কোনো রকম সরকারি সহযোগিতা পাননি বা পেলেও তা খুবই কম। তাদের প্রতিষ্ঠিত এই সমস্ত বিদ্যালয়ে প্রায় 10,000 ছাত্ররা পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল।

◆ লন্ডন মিশনারীদের উদ্যোগ : লন্ডন মিশনারি সোসাইটির সদস্য রবার্ট মে তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রথমে 1795 খ্রিস্টাব্দে চুচুড়ায় একটি ইংরেজী বিদ্যালয় এবং তার পরবর্তী কালে ভারতের অন্যান্য স্থানে 36 টি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

◆ মিশনারি ও উচ্চ শিক্ষা : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীরা অনেক ইংরেজি স্কুল স্থাপন করেছিল। কিন্তু তারা শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা বিস্তারেই উদ্যোগ নেননি। বরং তারা ভারতে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারেও ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। যেমন - 


• 1818 খ্রিস্টাব্দে ব্যাপ্টিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর কলেজ তৈরি করা হয়। 

• এরপর 1836 খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনের উদ্যোগে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউট যা পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত হয়,সেটি তাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

• বেলজিয়ামের মিশনারিদের উদ্যোগে 18345 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও লরেটো হাইস স্থাপিত হয়।

◆ উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথমস খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারতে তাদের পবিত্র খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এবং তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পাঠের জন্য,এ দেশের জনসাধারণের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নিলেও,পরবর্তীকালে তাদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে অন্য রূপ ধারণ করে। এবং তাদের গ্রহণ করা নানা উদ্যোগের মাধ্যমে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভের নানা দিক উন্মোচিত হয়।।

 প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক বলতে কী বোঝো? | এদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝ?

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক বলতে কী বোঝো? | এদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝ?

ভূমিকা :1813 খ্রিস্টাব্দের আগে ব্রিটিশ সরকার এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থাৎ ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের কোনো রকম অর্থ ব্যয় এর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কিন্তু 1810 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল মিন্টো ভারতীয়দের শিক্ষার শোচনীয় অবস্থার কথা একটি রিপোর্টে তুলে ধরেন। এই রিপোর্টে তিনি কোম্পানির কাছে ভারতীয় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন। গভর্নর-জেনারেল মিন্টোর সাথে সাথে খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারত ও ইংল্যান্ডে কোম্পানির শিক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করেছিল, যার ফলে সরকার 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস করে। 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় যে,ব্রিটিশ সরকার এবার থেকে প্রতিবছর এক লক্ষ টাকা ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করবে।


সরকারের এই ঘোষণা করার পর সেই সময়কার, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত কিছু উচ্চবিত্ত ব্যক্তির মধ্যে তর্কের সৃষ্টি হয়,যে সরকার এই এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর ভারতের কোন ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় করবে। অর্থাৎ সেই এক লক্ষ টাকা প্রাচ্য নাকী পাশ্চাত্য শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে,,সেই সম্পর্কেও 1820 এর দশকে যে বিতর্কের সূচনা হয়,তাকেই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক অথবা প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলা হয়

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের সৃষ্টি : 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস হওয়ার পর, 1820 খ্রিস্টাব্দে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের সূচনা হয়। এরপর গঠিত হয় 1823 খ্রিস্টাব্দের জনশিক্ষা কমিটি অথবা কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন। এই কমিটির সদস্যদের মূলত এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল যে, কোম্পানির খরচ করা সেই এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর ভারতের ক্ষেত্রে কোন ধরনের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। তা নিয়ে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী এই দুই দলের মধ্যে সেই সময়ে যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তাকেই ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিতর্ক অথবা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলে। 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বাদী কাদের বলা হয়?

যারা সেই সময়ে প্রাচ্য ভাষায় অর্থাৎ সংস্কৃত আরবি-ফারসি ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারে সেই এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা বলেছিলেন তাদের বলা হতো প্রাচ্যবাদী অথবা ওরিয়েন্টালিস্ট। এদের মধ্যে ছিলেন এইচ.টি. প্রিপেন্স, উইলসন, কোলব্রুক প্রমুখ। এবং অন্যদিকে ছিলেন লর্ড মেকলে,চার্লস গ্রান্ট, আলেকজান্ডার ডাফ,সন্ডার্স কোলভিন প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদীরা, যারা এদেশে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষার  প্রসারে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের বলা হতো পাশ্চাত্যবাদী অথবা অ্যাংলিসিস্ট। 

◆ প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের বা দ্বন্দ্বের অবসান 1820 এর পর আস্তে আস্তে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে এই বিতর্ক আকার বড় আকার ধারণ করতে থাকে।  এই জিনিসগুলো  লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তিনি এই জিনিসটির নিষ্পত্তি চাইতেন।  এরপর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর আইন সচিব এবং জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস বেবিংটন মেকলে 2 ফেব্রুয়ারি 1835 সালে একটি প্রতিবেদন পেস করে, যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত। টমাস বেবিংটন মেকলে তার মেকলে প্রতিবেদন এর ইংরেজি শিক্ষার প্রসারমেই সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন জানায়। এই নিয়ে বহু তর্কবিতর্কের পর অবশেষে সরকার মেকলের প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকেই মেনে নেয়। এবং প্রতি বছর ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য ধাচের শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়


উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায়, 1810 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল মিন্টোর প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো অর্থ ব্যয় করার একটি ভেবে দেখেন এবং তার হাত ধরেই 1817 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাশ হয় এবং সনদ আইন পাস হওয়ার পর 1823 খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে জনশিক্ষা কমিটি অথবা কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন। এবং জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া এই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসান ঘটে কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি টমাস বেবিংটন মেকলের " মেকলে মিনিট অথবা মেকল প্রতিবেদনের মাধ্যমে।


হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কিরুপ চিত্র পাওয়া যায় | হুতোমপ্যাঁচার নক্সা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কী প্রতিফলন পাওয়া যায়?


হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কিরুপ চিত্র পাওয়া যায় | হুতোমপ্যাঁচার নক্সা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কী প্রতিফলন পাওয়া যায় ?


উওর : প্রথম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি রচনা করেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। এই গ্রন্থটি প্রথম ভাগ 1862 সালের এবং দ্বিতীয় ভাগ 1863 সালে প্রকাশ পায়। পরে অবশ্য দুটি ভাগ একত্রে 1864- 1865 সালে প্রকাশিত হয়।

◆  সমাজ চিত্র বা সমাজের :
▪ বাবু কালচার: কালীপ্রসন্ন সিংহ তার এই গ্রন্থে সেইসময়ের কলকাতার বাবুকালচার কে স্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।  তিনি তাঁর রচনায় ধনি বাবুদের ভন্ডামীর কথা তুলে ধরেছেন। তার ভাষা ছিল ঝাঝালো প্রকৃতির।

▪ পূজা পার্বণ ও উৎসব : এই গ্রন্থ থেকে তৎকালীন কলকাতার প্রচলিত বারোয়ারি পুজো,রথযাত্রা, নীলষষ্ঠী, রাসলীলা,দুর্গোৎসব ইত্যাদির কথা জানা যায়।

▪ কুসংস্কার : কালীপ্রসন্ন সিংহ সমাজে প্রচলিত সতীদাহ, প্রথা,বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন।


▪ সমাজ বিন্যাস : ইংরেজ শাসনের আগে বাংলায় বড় বড় বংশের,যেমন - কৃষ্ণচন্দ্র,জগৎশেঠ,রাজবল্লভ, নন্দকুমার বংশের পতন ঘটে। একইসাথে বাংলার বেশকিছু নামজাদা বংশের উদ্ভব লক্ষ্য করা যায়। যেমন - মল্লিক পরিবার, শীলপরিবার ইত্যাদি।। রচনার কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি স্তরের মানসিকতাকে আমরা অতি সহজেই প্রত্যক্ষ করতে পারি।

◆ উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ তার ছদ্মনামে ( হুতোম প্যাচা ) ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং হাস্যরসের মিলনে তৎকালীন সমাজের ধনীদের লাঞ্ছনা, মাদকাসক্তি, নানা অপকর্ম মধ্যবিত্ত ও সাধারণ নানা আমোদ-প্রমোদের জীবন,সংসারের কথা এক বিচিত্র নকশাধর্মী ভাষায় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।।


শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো || সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর

শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো || সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড় প্রশ্ন উত্তর


উওর : উনিশ শতকে বাংলায় ধর্ম যখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে তখন বাঙালি জাতিকে ধর্ম ভাবনার এক নতুন পথের দিশা দেখান শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তিনি ছিলেন আর পাঁচটা সাধারণ দরিদ্র পরিবারের মানুষের মতো। সাধাসিধে এই মানুষটির মনে ছিল নির্ভেজাল আধ্যাত্মিক চেতনা যা তিনি সহজ-সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করতেন

 তার এই ব্যাখ্যায় আকৃষ্ট হতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন শিক্ষিত-অশিক্ষিত আপামর বাংলা সমাজ। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের সমস্ত বাণী পরবর্তীকালে নিসৃত বাণী কথামৃত " গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের দিকটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাই। যেমন- 


শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ধর্মচিন্তাঃ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ধর্মচিন্তা বলতে বোঝায়,  তিনি কি আদতেও কোনো বিশেষ একটি ধর্মেই বিশ্বাসী ছিলেন কিনা বা তিনি শুধুমাত্র একটি ধর্মকেই নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন না। -  এক্ষেত্রে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি বিশেষ একটি ধর্মকেই নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন না। এজন্য তিনি বলেছিলেন যত মত তত পথ। যেকোনো একটি ধর্মকে অবলম্বন করে সেই ধর্ম অনুযায়ী সঠিক পথে চলে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। তার মতে সব ধর্মই সত্য। আমাদের ধর্ম আলাদা হলেও আমাদের লক্ষ্য সবার একই। অর্থাৎ পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়া। এজন্য তিনি কোনো বিশেষ একটি ধর্মকে গ্রহণ করতে বলেননি। তিনি বলেছিলেন যেকোনো একটি ধর্ম গ্রহণ করে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হতে। 

সব ধর্মই সমানঃ সর্বধর্ম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সব ধর্মই সমান। যদিও শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব কথাটিকে এভাবে বলেননি। কিন্তু তিনি যেভাবে এই বিষয়টিকে দেখতেন,সেটা হলো -শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব কখনোই কোনো ধর্মকে ছোট-বড়ো করে দেখেননি। রামকৃষ্ণদেবের কাছে সব ধর্মই ছিল সমান। হিন্দু হোক বা মুসলিম, যেকোন ধর্মের সাহায্যে মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হয়ে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হতে চায়। এজন্যি মানুষ বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে। সুতরাং কোনো ধর্মই ছোট বা কোনো ধর্ম বড়ো নয়। সেজন্য শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব সকল ধর্মকেই সম্মান করতেন।


জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতাঃ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মতে প্রত্যেক মানুষই হলো শক্তির আধার। তাই তিনি প্রত্যেক মানুষের সমান মর্যাদা দান এর কথা প্রচার করেছিলেন। যার ফলে সেই সময় সমাজে যে সামাজিক জাতিভেদ প্রথা বা অস্পৃশ্যতা ছিল, সেটা অনেকটাই হ্রাস পায়।

মানুষসেবাঃ শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ  পরমহংসদেবের কাছে মানুষের ধর্মের চেয়ে মানুষের মানবতাবোধটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার মতে ধর্ম নয়, মানুষের মনুষ্যত্বই হলো গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেজন্যই শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে ধর্মমতেরল একটি বিশেষ দিক হলো মানবতাবোধ। 

উপসংহারঃ সবশেষে বলতে হয় যে,ভারতীয় নবজাগরণে রামকৃষ্ণ দেবের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তিনি সর্বধর্ম সমন্বয় আদর্শকে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠা করেছেন। 

মেকলে মিনিট কি? এর গুরুত্ব কী ছিল?| সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর

মেকলে মিনিট কি? এর গুরুত্ব কী ছিল?| সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর


উওর : 1813 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সনদ আইন অথবা চার্টার অ্যাক্ট পাস করে একথা ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ সরকার প্রতিবছর ভারতের শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা করে ব্যয় করবে। কিন্তু সেই এক লক্ষ টাকা ভারতের কোন ধরনের শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থাৎ আধুনিক পাশ্চাত্য নাকি প্রাচ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে, সেটা ঠিক করতে গঠিত হয় কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন বা জনশিক্ষা কমিটি ব্রিটিশ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারি শিক্ষানীতি কী হবে? সেই নিয়ে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বির্তকের সৃষ্টি হয়।  ভারতের শিক্ষা বিষয়ক প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বির্তকের অবসান ঘটাতে সেই সময়ের লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর আইন সচিব, টমাস বেবিংটন মেকলে তার একটি প্রতিবেদন মাধ্যমে সরকারের কাছে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাখাতে সেই এক লক্ষ ব্যয় করার জন্য আবেদন জানায়। টমাস বেবিংটন মেকলের সেই প্রতিবেদন ই " মেকলে মিনিট নামে পরিচিত। "। 

মেকলে মিনিট এর গুরুত্ব : 

সরকার টমাস বেবিংটন মেকলের সেই প্রতিবেদনটি স্বীকার করে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সরকারি নীতি হিসেবে মেনে নিয়েছিল।


উডের নির্দেশনামা বা উডের প্রতিবেদন কী? | উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলি কী কী? | উডের ডেসপ্যাচ এর গুরুত্ব কি 

উডের নির্দেশনামা বা উডের প্রতিবেদন কী? | উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলি কী কী? | উডের ডেসপ্যাচ এর গুরুত্ব কি
ক্লাস 10 ইতিহাস বড় প্রশ্ন উওর


উডের নির্দেশনামা কী? | উডের ডেসপ্যাচ বলতে কী বোঝো? 

ভূমিকা : 1844 খ্রিস্টাব্দে লর্ড হার্ডিঞ্জ এক ঘোষণায় এটা বলেন যে,এবার থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র তাদেরকেই চাকরি দেওয়া হবে,যারা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে অর্থাৎ এক কথায় যারা ইংরেজি জানে। এই ঘোষণার পর 1854 খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড - তার একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেন, যা উডের ডেসপ্যাচ বা  উডের নির্দেশনামা বা উডের প্রতিবেদন নামে পরিচিত।

উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা : ভারতবর্ষে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য এবং ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে গুরুত্ব দিয়ে 1854 খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি স্যার চার্লস উড যে নির্দেশনামা জারি করেছিলেন, তাকে উডের ডেসপ্যাচ বা নির্দেশনামা বলা হয়। 

উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলি কী কী?

উডের নির্দেশ নামা ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উডের নির্দেশনামায় স্যার চার্লস উড সরকারের কাছে ভারতের শিক্ষার উন্নতির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেন।  যেমন - 

▪ ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি প্রেসিডেন্সি শহর,যেমন -কলকাতান মুম্বাই এবং মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

▪ দ্বিতীয়ত ন গণশিক্ষা,নারীশিক্ষা মাতৃভাষার উন্নয়ন এবং শিক্ষক- শিক্ষণ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। 

▪ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

▪ একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর গঠন করতে হবে।

▪ সমস্ত বিদ্যালয় গুলিকে সরকারি অনুদান প্রদান করতে হবে।

উডের ডেসপ্যাচ এর গুরুত্ব কি | শিক্ষা বিস্তারে চার্লস উডের ভূমিকা

উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল : বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড,তার নির্দেশনামা সরকারের কাছে যে সমস্ত সুপারিশ করেছিল,তার কয়েকটি মেনে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন -

◆প্রথমতঃ সরকার উডের নির্দেশনামা সুপারিশ অনুসারে সরকার 1855 খ্রিষ্টাব্দের সরকারি শিক্ষাবিভাগ বিভাগ খোলে। 

◆দ্বিতীয়তঃ উডের নির্দেশনামা অনুযায়ী আঠারোশ 1856 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা,মাদ্রাসা এবং বোম্বাইয়ে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

◆ তৃতীয়তঃ বিদ্যালয়কে সরকারি অনুদাদ প্রদান করা হয়। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে।


নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা  | নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল

নারী সমাজের কল্যাণে বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


ভূমিকা : 1863 খ্রিস্টাব্দে উমেশচন্দ্র দত্ত কয়জন তরুনকে নিয়ে বামাবোধিনী নামক একটি সভা গঠন করে। বামা শব্দের অর্থ হলো নারী বা সমগ্র নারীসমাজ। উমেশচন্দ্র দত্তের বামাবোধীনি সভা প্রতিষ্ঠার আগে বাংলায় নারীদের সামাজিক অবস্থা সেরকম ভাবেও ভালো ছিলনা। কারণ  বাংলায় সমাজে তখন নারীদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের বিষয়টা সেরকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা হলো,বাংল্য তখন বিদ্যালয় সংখ্যা ছিল খুবই কম। মনে করা হয়, নারীদের জন্য সেসময় বাংলায় মোট 35 টি  বিদ্যালয় ছিল। আর তাতে ছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় এক থেকে দেড় হাজার। উমেশচন্দ্র দত্ত নারীদের মধ্যে এই শিক্ষার অভাবটা বুঝতে পেরেছিলেন। এবং সেই কারণেই তিনি বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে,তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।। 1863 খ্রিষ্টাব্দের উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদনায় প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকার মূলত বাংলার নারীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য। বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকা সেই সময় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন - 


◆ নারী শিক্ষা সম্পর্কে জনমত গঠন : বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষার প্রসারে যে কাজটা সবার আগে করেছিল,সেটা হলো নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে জনমত গঠন করা।সেই সময়ে সমাজে এমন কিছু অন্ধ বিশ্বাস প্রচলিত ছিল,যার জন্য অনেকেই নারী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখাননি। সেই সময় এমন কিছু বিশ্বাস প্রচলিত ছিল - নারীরা শিক্ষিত হলে, বিয়ের পর অল্প সময়ের সে বিধবা হবে।। এরকম কিছু অন্ধবিশ্বাসের জন্য তখনকার অনেক পিতা-মাতাই নিজের মেয়েকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দিতেন না।বামাবোধিনী পত্রিকা সমাজ থেকে এই সমস্ত ভুলভাল চিন্তাধারা দূর করে। এবং সমাজে নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরে। বামাবোধিনী পত্রিকার সমাজের কাছে এই বার্তা তুলে ধরে -যদি সন্তানকে শিক্ষিত হতে হয়, তাহলে আগে মায়ের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ মায়ের শিক্ষার ছাপ তার সন্তানদের মধ্যে পরে।

◆ নারীদের আগ্রহ বাড়ানো : বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার কথা নারী সমাজের কাছে তুলে ধরে,নারীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল।। 


◆ গৃহ শিক্ষা : বামাবোধিনী পত্রিকায় নারীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশ করা হতো। যে সমস্ত নারীরা অল্প শিক্ষিত ছিলেন কিন্তু তাদের পারিবারিক চাপে পড়াশোনা করতে পারেননি, তাদের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে বাহুবলী পত্রিকা এগিয়ে এসেছিল। মেয়েরা যাতে বাড়িতে বসেই শিক্ষা লাভ করতে পারে, সেজন্য বামাবোধিনী পত্রিকা 5 বছরের একটি অন্তঃপুর পাঠ্যক্রমের তৈরি করেছিল। এই 5 বছরে নারীরা কি কি বিষয়ে পড়বে,সে সম্পর্কে বামাবোধীনি পত্রিকা একটি সূচি প্রকাশ করতো। এবং সেই পাঁচ বছর পড়ার পর, পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন কারীদের নাম বামাবোধীনি পত্রিকাতেই প্রকাশ করা হতো।

◆ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি :বামাবোধিনী পত্রিকার নারী শিক্ষার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল - বামাবোধিনী পত্রিকার নারীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশ করা হতো। যেমন -ইতিহাস,ভূগোল,দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভাষাজ্ঞান ইত্যাদি। 

এছাড়াও বামাবোধিনী পত্রিকায় প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার বিষয়েও লেখালেখি করা হতো যেমন - ঘরোয়া চিকিৎসা,গৃহ পরিচর্যা, শিশু প্রতিপালন, স্বাস্থ্য, ধর্ম ইত্যাদি। 

◆ সামাজিক সচেতনতা :বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের সামাজিক দিক থেকেও সচেতন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তৎকালীন সময়ে সমাজে নানা অন্ধ,ম বিশ্বাস এবং কূপ্রথা প্রচলিত। যেমন বাল্যবিবাহ,অসম বিবাহ,বহুবিবাহ ইত্যাদি।।  বাল্য বিবাহের ফলে কিভাবে একটি মেয়ের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং অসম বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় তা বামাবোধিনী পত্রিকা প্রকাশ করতো। এভাবে বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরে বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সফল হয়েছিল।


◆ সামাজিক অধিকার : 

বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের বিভিন্ন সামাজিক মর্যাদা এবং অধিকার সম্পর্কেও তাদের সচেতন করে তোলে, বিভিন্ন লেখনি প্রকাশের মাধ্যমে। বিভিন্ন সামাজিক মর্যাদা লাভ ও অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে নারীদের কেন শিক্ষা গ্রহন প্রয়োজন,সেকথাও বামাবোধিনী পত্রিকা সমাজের নারীদের কাছে তুলে ধরেছিল।

উপসংহার : সব শেষে বলা যায় যে, উনিশ শতকে বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে 1863 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এখানে একটি বিষয় ছিল - বামাবোধিনী পত্রিকা যে 5ছরের অন্তপুর শিক্ষাব্যবস্থার শুরু করেছিল, তা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছিল। কারণ অনেকেই পারিবারিক চাপে সেই সময়টা ধরে তার শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারেনি। আবার অনেকের শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও,উনিশ শতকে নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকা যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল,তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না।।

ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা

ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর


Table Of Contents

• ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? 
• সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল  গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল  গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য 
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল  গোষ্ঠীর কার্যাবলী
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল  গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য 
• সমাজ সংস্কার মূলক আন্দোলন নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ
• নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অবসান
•  নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ 
•  মূল্যায়ন 


ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা

নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল কাদের বলা হত? 

ভূমিকা : উনিশ শতকে বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনে বাংলার সমাজে বিশেষ করে হিন্দু সমাজে বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা এবং ধর্মীয় গোড়ামী প্রচলিত ছিল। উনিশ শতকে বাংলার সমাজেদ বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই আধুনিক চিন্তাধারা বা যুক্তিবাদী চিন্তা ধারা ছিল না। যার ফলে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কূপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজকে পেয়ে বসেছিল। সেই সময় হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজ থেকে সেই সমস্ত কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করে সমাজে যুক্তিবাদী এবং আধুনিক চিন্তাধারা প্রসারের উদ্দেশ্যে,তার কয়েক জন অনুগামীদের নিয়ে যে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাই ছিল ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।  এবং হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার কয়েকজন অনুগামীদের বলা হত ইয়ং বেঙ্গল অথবা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী।।

নব্য বঙ্গ আন্দোলন অথবা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। যেমন - 

 1- বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস গুলি বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চালিয়ে সমাজ তা থেকে দূর করা। এবং সমাজে আধুনিক এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়ে, সমাজকে আধুনিক করে তোলা। 

 2 - ছাত্র সমাজের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের মধ্যে সেই সমস্ত সামাজিক এবং ধর্মীয় কুপ্রথার প্রভাব দূর করে তাদের বিজ্ঞান মনষ্ক করে তোলা।

 3 - সমাজের নারী শিক্ষার অধিকার আদায় করা এবং নারীদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

 4 - দেশীয় সংবাদপত্র গুলির স্বাধীনভাবে লেখা প্রকাশের অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য আন্দোলন করা ইত্যাদি।।

ইয়ংবেঙ্গল অথবা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সদস্য :

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী অথবা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাকে ছাড়াও নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কিছু উল্লেখযোগ্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন - রামগোপাল ঘোষ,কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক,রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর ভূমিকা : 

হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস যেমন- জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর ছাত্র মন্ডলীদের নিয়ে তাদের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেই সময়টা জুড়ে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন চলদছিল, সেই সময়ের সবটা জুড়েই তারা সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গিয়েছিলেন। যেমন - 

◆ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন :নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর অথবা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল 1827 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত তাদের অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। নববঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে,,তারা  সমাজে প্রচলিত অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা,সতীদাহ প্রথা, মূর্তিপূজা ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে, সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রচার করার চেষ্টা করতেন।।

◆ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ :নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী সদস্যরা সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথা গুলির বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য বেশ কিছু পত্র-পত্রিকার সাহায্য নিয়েছিলেন। যেমন- এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা ক্যালাইডোস্কোপ প্রভৃতি পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশ করতেন।। নব বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা প্রভৃতি পত্রিকায় শিক্ষা নারী স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। এবং অন্যদিকে ক্যালাইডোস্কোপ পত্রিকার ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজদের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখনি প্রকাশ করেছিলেন।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের অবসান : 

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল বলে, তারা খুব শীঘ্রই রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের কাছে একপ্রকার পথের কাটা হয়ে দাড়ায়। নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল সমাজকল্যাণে। কিন্তু সমাজকল্যাণে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।  1831 খ্রিস্টাব্দে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও মৃত্যুর পর,এই আন্দোলন ধীরে ধীরে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে। এবং একসময় নব্যবঙ্গ  আন্দোলন ব্যর্থ হয়। 

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ : নব্য বঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার পেছনে একাধিক কারণ লুকিয়ে ছিল। যেমন - 

• প্রথমত নব্যবঙ্গ আন্দোলন হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রথাগুলির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছিল বলে, সাধারণ হিন্দু সমাজের কোনো সমর্থন তারা পায়নি। 

• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন শুধুমাত্র হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কূপ্রথার বিরুদ্ধে। এবং কিছু ক্ষেত্রে নারীদের স্বার্থেও তারা কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা দেশের সাধারণ শ্রমিক শ্রেণী ও কৃষক শ্রেণীর জন্য কোনো রকম কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। যার ফলে তারা সাধারণ শ্রমিক শ্রেণী এবং কৃষক শ্রেণীর কোনোরকম কোন সমর্থন লাভ করেনি।

• নব্যবঙ্গ আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে এই আন্দোলন সাধারণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েনি। 

• নববঙ্গ আন্দোলন কারীদের,, আন্দোলনের ভীত ছিল খুবই দুর্বল। 

উপরিক্ত কারণ সহ 1831 খ্রিস্টাব্দে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর মৃত্যুর পরেই, নব্যবঙ্গ আন্দোলন ধীরে ধীরে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে দিতে শুরু করে।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কার্যাবলী মূল্যায়ন : নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করা হয়। যেমন - 

• ঐতিহাসিক ডেভিড কফ নব্য গোষ্ঠীর সদস্যদের ভ্রান্ত পুথিপড়া বুদ্ধিজীবী বলে সমালোচনা করেছেন।

•  অনেকে আবার নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের উশৃংখল বা কালাপাহাড় বলে অভিহিত করেন। 

কিন্তু সবকিছুর পরেও একথা কখনোই অস্বীকার করা যায় না যে, সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী দের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই সর্বপ্রথম হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কূপ্রথা গুলির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছিলেন। ফলে তাদের জন্যেই সমাজের একটা বড় অংশের মধ্যে আধুনিক ভাবনাচিন্তার প্রসার ঘটেছিল।।


শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


ভূমিকা : উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা, নারীদের যথেষ্ট অধিকারের অভাব, নারী শিক্ষার অভাব ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষরা সমাজ থেকে সেই  খারাপ দিকগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন, বা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন,তাদের মধ্যে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন। বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতের তথা বাংলার সমাজ সংস্কারে নিজের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তিনি উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করে গেছেন। এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাজ সংস্কারে তিনি সফলও হয়েছিলেন

◆ স্কুল প্রতিষ্ঠা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর সহকারী পদে থাকাকালীন, বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলার নারীদের জন্য 35 টি বালিকা বিদ্যালয় এবং 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেছিলেন।  এছাড়াও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।


◆ নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জিনিসটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বর্তমান সমাজের উন্নয়নের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য সমাজে নারীদের শিক্ষার প্রসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে মায়ের শিক্ষার হাত ধরেই ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষায় আগ্রহী হবে বা সমাজ শিক্ষিত হবে। এজন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

◆ বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহের বিরোধিতা ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের নারীদের উন্নয়ন এবং নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন সময়ে সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ এবং বহু বহুবিবাহের তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করেছিলেন।

◆ বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা : সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো। এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না। 


যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1857 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।

◆ অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরোধিতা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন আধুনিক চিন্তাশীল ব্যক্তি হওয়ার কারণে, তার কাছে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কূপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ অর্থহীন। হিন্দু সমাজ তথা প্রাচীন বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এবং বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রসার এবং কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা তৈরী করার চেষ্টা করেছিলেন।


 ◆ পাঠ্যপুস্তক রচনা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি। তিনি শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও নিজের উদ্যোগেই রচনা করেছিলেন। যেমন শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়,কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি ইত্যাদি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এইসব গ্রন্থ গুলি ছিল মূলত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য। 

◆ উপসংহার, 

সবশেষে বলা যায়,বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত বাঙালি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে, তিনি সমাজ সংস্কারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের শিক্ষা, নারীদের অধিকার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধিতা,শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কাজ কর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত এবং শিক্ষিত করে তোলার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।।

 

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা 


উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা


Table Of Contents

• উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা 
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা 
• পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা 
• সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রাজা রামমোহন ভূমিকা 
• সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা
• নারীদের অধিকারের সমর্থনে
• রাজনৈতিক চেতনার প্রসারে রামমোহন রায়
• ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতা


উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা 


ভূমিকা : উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সেই সময়ে সমাজ ছিল একেবারেই অ-আধুনিক। তৎকালীন সময়ে সমাজ থেকে বিভিন্ন খারাপ দিকগুলি দূর করে সমাজে নবজাগরনের ক্ষেত্রে বা সমাজ সংস্কার করার জন্য সেরকমভাবে কেউ এগিয়ে আসেননি। বা এগিয়ে আসলেও তার সংখ্যা খুবই কম। তাই রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ থেকে সেই সমস্ত খারাপ দিক গুলি দূর করে সমাজ সংস্কার করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাই মূলত রাজা রামমোহন রায় ই ছিলেন ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত। তাই রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়। 

Read More 👇


সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটা। যেমন - 

◆ সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা 


রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে " ব্রাহ্মসমাজ " করা হয়।

◆ সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন : 

রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ গঠন করার পর, তিনি সেই সময়কার সমাজের একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কুপ্রথা " সতীদাহ প্রথা " -র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের সকল নেতারা সেরকমভাবেও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে আসেননি, কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত সেই ভয়ঙ্কর প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। রামমোহন রায় সেইসময়কার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাধারা যুক্ত কিছু মানুষের সইস্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। এবং সেখানে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের দাবি জানান। সরকার রাজা রামমোহন রায়ের এই আবেদন মেনে নিয়ে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 জ ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। ব্রাহ্মসমাজের অথবা রাজা রামমোহন রায়ের এই আন্দোলনের ফলেই সেই সময় সমাজের একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা বন্ধ হয়।


◆ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতা : রাজা রামমোহন রায় বিভিন্ন ধর্মে প্রচারিত জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা ইত্যাদি গুলির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। রাজা রাজা রামমোহন রায়ের কাছে পৌত্তিলিকতা, পুরহিততন্ত্র, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল অর্থহীন। রাজা রামমোহন রায় নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন।

◆  শিক্ষা বিস্তারে সমাজ সংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা :

◆ পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ : রাজা রামমোহন রায় তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সমাজ থেকে আধুনিক শিক্ষার অভাবকে দূর করে  পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তিনি সমাজকে আধুনিক করে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। 

◆ অ্যাংলো হিন্দু স্কুল : তৎকালীন সময়ে খুবই কম পরিমাণ ইংরেজি বিদ্যালয় ছিল। তাই সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ছিল প্রচুর। তাই রাজা রামমোহন রায় এই অভাব দূর করতে 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের উদ্যোগেই কলকাতায় " অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক " একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলে।


◆ বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে সমাজকে আধুনিক করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূর করে সমাজে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসার করা।

◆ নারীদের অধিকারের সমর্থনে : রাজা রামমোহন রায় সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে প্রসারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে আসেন। এবং ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষার সমর্থন,সমাজে নারীদের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

◆ রাজনৈতিক সংস্কার : রাজা রামমোহন রায় রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় 1821 খ্রিস্টাব্দে সংবাদ কৌমুদী নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক গুলি আলোচনা করতেন।


◆ উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে, রাজা রামমোহন রায় সেই সময়ের একজন আধুনিক চিন্তাশীল মানুষ হয়েও তার মধ্যে যথেষ্ট আধুনিক মানসিকতা ছিল। রাজা রামমোহন রায়ের সেই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি সমাজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভালো -মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাই তিনি সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে এবং সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে এবং নানা ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার ডাফ,ডেভিড হেয়ার প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের নানাভাবে সমর্থন করে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটান। এবং সতীদাহ প্রথার বন্ধ, ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে নারীদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের পুস্কত- পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটান।


শিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা | পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা


ভূমিকা : উনিশ শতকে যে সমস্ত ব্যক্তিরা বাংলায় নিজ উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে বা শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন,তাদের মধ্যে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকে সমাজে যে সমস্ত অন্ধবিশ্বাস কুপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা ধর্মীয় গোঁড়ামি ইত্যাদি ছিল,সেই সমস্ত খারাপ দিক গুলো সমাজ থেকে দূর করার জন্য সমাজে শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জিনিসটা খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেকারণেই তিনি নিজের উদ্যোগেই শিক্ষার প্রসার বা পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেমন - 

◆ স্কুল প্রতিষ্ঠা : বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর সহকারী পদে থাকাকালীন, বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলার নারীদের জন্য 35 টি বালিকা বিদ্যালয় এবং 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্থাপন করা সেই সমস্ত বিদ্যালয়ে বাংলার অসংখ্য ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়াও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।


◆ নারী শিক্ষার প্রসারে : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই জিনিসটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন যে,সমাজ তখনই প্রকৃত ভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠবে, যখন সমাজের নারীরাও শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং তারা শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজ উদ্যোগে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে,তিনি 1849 খ্রিস্টাব্দে যখন বেথুন সাহেব এ দেশের নারীদের শিক্ষার জন্য " হিন্দু ফিমেল স্কুল " প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন,তখন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন।

◆ ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার নিজের গ্রামে অর্থাৎ, মেদিনীপুরের বীরসিং গ্রামে তার মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে 1890 খ্রিস্টাব্দে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন,যার নাম হয় ভগবতী বিদ্যালয়। 

◆ পাঠ্যপুস্তক রচনা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের শুধুমাত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি। তিনি শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও নিজের উদ্যোগেই রচনা করেছিলেন। যেমন শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়,কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি ইত্যাদি।

◆ নারী শিক্ষা ভান্ডার : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় গুলির মধ্যে, কিছু বিদ্যালয়কে সরকার আর্থিক হবে কিছু সাহায্য করতো। কিন্তু একসময় সরকার সেই বিদ্যালয়কে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়। ফলে এরপর বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষা ভান্ডার নামে একটি তহবিল গঠন করেছিলেন।

উপসংহার : সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র এদেশীয় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেননি, সেইসঙ্গে  তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন।


গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার বিষয়বস্তু কী ছিল | গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় কী কী আলোচনা প্রকাশিত হতো?



গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় কী কী আলোচনা প্রকাশিত হতো? | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


উওর :
উনিশ শতকে বাংলায় প্রকাশিত যে সমস্ত সংবাদপত্র বা পত্রপত্রিকা সমাজে নিজের একটি আলাদা পরিচিতি তৈরি করে গেছে,তাদের মধ্যে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা হলো একটি অন্যতম পত্রিকা। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক নামে পরিচিত ছিল।। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি 1863 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে হরিনাথ মজুমদার,যাকে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার বলা হতো- তাঁর সম্পাদনায় বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী গ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি 1863 এর পর এক বছর পত্রিকাটি মাসিক পত্রিকা ছিল। কিন্তু 1864 খ্রিস্টাব্দে এটি পাক্ষিক এবং 1871 খ্রিস্টাব্দে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। এই পত্রিকাটি ছিল মূলত বাংলা ভাষায়।

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় কি কি আলোচনা প্রকাশিত হতো? | গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার বিষয়বস্তু কী ছিল?

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার কি কি আলোচনা করা হতো অথবা গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার বিষয়বস্তু কি ছিল? তা আমরা নিম্নলিখিত আলোচনার মাধ্যমে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করবো।

◆ গ্রামীণ সমাজের বিষয়বস্তু : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তার পত্রিকা গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় মূলত গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন বিষয়বস্তু তুলে ধরাএ চেষ্টা করতেন। তিনি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেখানে নানা ধরনের খবরা খবর সংগ্রহ করে,সেগুলিকে তার সংবাদপত্রে প্রকাশের মাধ্যমে জনসমাজের কাছে তুলে ধরতেন।

ক্লাস টেনের ইতিহাস মকটেস্ট দিতে নিচের লিঙ্কের ওপর ক্লিক করো👇



গ্রামবার্তা প্রকাশিকা কিরুপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায় | গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার আলোচনার বিষয়বস্তু

◆ নীলকর সাহেবদের অত্যাচার :কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি প্রকাশের আগে তিনি কিছুদিন নীলকুঠিরে কাজ করেছিলেন। সেই সময় তিনি নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিষয়টি নিজের স্বচোক্ষে দেখেছিলেন। অর্থাৎ নীলকর সাহেবরা কী করে নীল চাষীদের উপর অত্যাচার করে, তা তিনি নিজের চোখে দেখেছিলেন। পরবর্তীকালে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তাঁর গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় নীলকর সাহেবদের সেই সমস্ত অত্যাচারের বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষিত সমাজের সামনে তুলে ধরেছিলেন।

◆ নীলচাষীদের দুর্দশা : নীল চাষ করার ফলে চাষীদের ঘরে আর্থিক দুরবস্থা কোন পর্যায়ে ছিল এবং নীলচাষীদের অত্যাচারের ফলে তাদের দুরবস্থা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল,সেটাও হরিনাথ মজুমদার তাঁর গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তুলে ধরেছিলেন।


◆ ব্রিটিশবিরোধী আলোচনা :কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তাঁর গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় নির্ভীকভাবে বিভিন্ন ব্রিটিশবিরোধী আলোচনা করতেন।  তিনি তার পত্রিকায় এই বিষয়টিও তুলে ধরেছিলেন যে, কোনো সাধারণ মানুষ যদি কোনো অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে যেত, তাহলে পুলিশ তো তাকেসাহায্য করতেই না বরং সেই অভিযোগকারীকে পুলিশের নানারকম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এরকম ভাবে পুলিশের বিভিন্ন খারাপ কাজকর্ম সম্পর্কে নির্ভীক ভাবে আলোচনা করার জন্য, একসময় পাবনার ডিসি হরিনাথ মজুমদারকে একটি চিঠির মাধ্যমে বলেছিলেন -  সম্পাদক,আমি তোমাকে ভয় পাই না ঠিকই, তবে তোমার লেখনীর জন্য অনেক অপকর্ম ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। " সুতরাং লেখনীর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সমাজে ঠিক কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

◆ জমিদারদের অত্যাচারের কাহিনী : সেই সময় নীলকরদের পরেই ছিল বিভিন্ন জমিদার, সুদখোর ও অসাধু ব্যবসায়ী। সেই সময়ে বিভিন্ন জমিদার, সুদখোর এবং মহাজনরা নিরীহ, সাধারণ ও অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত কৃষকদের ওপর নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতো। নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের কর,উপকর, সুদ  আদায় এবং বিনা কারণেই জমি থেকে উচ্ছেদ ইত্যাদি অত্যাচার করা হতো। এই সমস্ত ঘটনাগুলো হরিনাথ মজুমদার গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় প্রকাশ করতেন।


◆ শিক্ষার প্রসার : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার গ্রামবার্তা প্রকাশিকার মাধ্যমে শিক্ষা প্রসারেও কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সময় বেশিরভাগ গ্রামের লোকেরাই অশিক্ষিত অথবা অল্পশিক্ষিত ছিলেন। এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাদের শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে অনেকটা। তাই তিনি সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় বিভিন্ন শিক্ষামূলক লেখা প্রকাশ করতে থাকেন।

◆ সুখদেব অত্যাচারের কাহিনী : গ্রামীণ সাধারণ নিরীহ এবং অশিক্ষিত চাষীদের বা সাধারণ মানুষদের সরলতার সুযোগ নিয়ে কিকরে সুদখোররা তাদের চড়া হারে সুদ দিত, এবং সুদ আদায় কালে, সেই সুদের টাকা না দিতে পারলে কি করে তাদের উপর অত্যাচার করা হতো, সেই কাহিনীও গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তুলে ধরা হতো।

উপসংহার : হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা টি 1863 খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সমাজের বিভিন্ন বিষয়কে তুলে ধরে,বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশ করার পর, একসময় প্রবল আর্থিক সংকটে পড়ে হরিনাথ মজুমদার 1885 খ্রিস্টাব্দে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করতে বাধ্য হন। হরিনাথ মজুমদারের প্রবল আর্থিক সংকট ছাড়াও, ব্রিটিশ বিরোধী এবং জমিদার,মহাজন বিরোধী লেখার জন্য তিনি ব্রিটিশ শাসন এবং স্থানীয় কিছু জমিদার ও মহাজনদের ক্ষোভের শিকার হন। এবং সেই জমিদার, মহাজনদের ক্ষোভ, ব্রিটিশ শাসনের নানা বাধা-বিপত্তি এবং প্রবল আর্থিক সংকটের কারণে তিনি 1292 বঙ্গাব্দে বা 1885 খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেন।


অতিরিক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উওর :

1- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সময়কাল
উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সময়কাল ছিল মাত্র 22 বছর। অর্থাৎ 1863-1885 পযর্ন্ত।

2 - গ্রামবার্তা প্রকাশিকা কোন স্থান থেকে প্রকাশিত?
উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল কুমারখালী জেলার কুষ্টিয়া গ্রাম থেকে।

3- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা কে প্রকাশ করেন তিনি কি নামে সুপরিচিত ছিলেন?
উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার,- কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নামে সুপরিচিত ছিলেন।

4- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা কে প্রকাশ করেন?
উওর : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি হরিনাথ মজুমদার প্রকাশ করেন।
5- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সম্পাদক কে ছিলেন?
উওর : হরিনাথ মজুমদার।


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন | বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর

ভূমিকা : 1829 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের প্রধান নেতা " রাজা রামমোহন রায় " এর নেতৃত্বে যে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার চাপে তীব্রে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সরকার তার চাপে পড়ে বা সেই  আন্দোলনকে সমর্থন করে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 ই ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে। যার অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়া মেয়েগুলো সমাজে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আইনি অধিকার পায়। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর এই বিধবাদের ভবিষ্যৎ কি হবে অথবা তারা ভবিষ্যতে কোন সামাজিক অধিকার নিয়ে বাঁচবে অথবা তাদের পরবর্তী সামাজিক জীবনকি হবে? তারা কী পূনরায় সংসারী হতে পারবে? সেই বিষয় গুলি নিয়ে সেরকম কোনো উদ্যোগ কাউকে নিতে দেখা যায়নি।  কিন্তু সেক্ষেত্রে বিধবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছিল বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে। তিনি সর্বপ্রথম বিধবাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং তিনি শুরু করেছিলেন বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার নিয়ে আসার আন্দোলন।


◆ বিধবা বিবাহ আন্দোলন :  সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো।এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না। যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1856 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।


বিধবা বিবাহ আন্দোলনকে সফল করার জন্য বিদ্যাসাগর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যেমন - 

◆ শাস্ত্র নির্ভরতা : বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন' যাতে এই বিষয়টি সবার সামনে আসে যে, বিধবা বিবাহের বিষয়টি হিন্দু শাস্ত্রেও সমর্থন করা হয়েছে।। এর জন্য বিদ্যাসাগর ভারতের প্রাচীন পুঁথিপত্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে সেখান থেকে কিছু তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করেন। এরপর বিদ্যাসাগর " পরাশর সংহিতা "থেকে উদ্ধৃতি তুলে এনে প্রমাণ করে দেখান যে - বিধবা বিবাহকে হিন্দু শাস্ত্রে সমর্থন করা হয়েছে।

◆ গ্রন্থ প্রকাশ :বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন যে,মানুষ এই জিনিসটা বুঝতে পারুক যে -বিধবা বিবাহ সমাজে আদতেও  প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা। এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর 1855 খ্রিস্টাব্দে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম ছিল " এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব "। যদিও সেই সময়ে অনেকেই এই গ্রন্থটির বিরুদ্ধে অথবা অথবা বিবাহের বিরুদ্ধে অনেক পুস্তিকা রচনা করে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে,বিধবা বিবাহ সমাজে আদতেও সমর্থনযোগ্য নয়।

◆ সরকারের কাছে আবেদন :দীর্ঘ সময় ধরে বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা এবং বিভিন্ন পুস্তিকা এবং লেখালেখির পর বিদ্যাসাগর অবশেষে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সেই সময়কার প্রায় 1000 জন জ্ঞানীগুনি ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা করেন। এই আবেদন পত্রের বিধবা বিবাহকে সরকারি সম্মতি জানানোর জন্য আবেদন করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই কাজের সঙ্গে সঙ্গেই বিধবা বিবাহকে যেন আইনিভাবে পাস না করা হয়না সেজন্য, বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে প্রায় 14 টি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা পড়েছিল। 


◆ বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে আইন :  বিধবা বিবাহের পক্ষে একটি এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে অনেকগুলি আবেদন পত্র পাওয়া সত্ত্বেও,সরকার বিধবা বিবাহকে সমর্থন জানায়। এবং তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় বড়লাট লর্ড  ক্যানিং 1855 খ্রিষ্টাব্দে আইন পাস করে সরকারিভাবে বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করে। ফলে সমাজে বিধবারা পুনরায় বিবাহ করে সংসার জীবনে ফিরে আসার অধিকার পায়।। 

◆ প্রথম বিধবা বিবাহ :লর্ড ক্যানিং এর 1855 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহকে  আইনিভাবে সম্মতি জানানোর পর, বিদ্যাসাগর নিজেএ উদ্যোগে প্রথম একটি বিধবা বিবাহ সম্পন্ন করেন।  বিদ্যাসাগর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারন্তের সঙ্গে কালীমতি দেবীর নামে এক বিধবার সঙ্গে তার বিয়ে দেন। এছাড়াও বিদ্যাসাগর নিজের পুত্র নারায়নচন্দ্র সঙ্গেও অপর এক বিধবা মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। এবং এভাবেই বাংলার সমাজে তিনি বিধবা বিবাহের প্রচলন করে গিয়েছিলেন।


বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১- বিধবা বিবাহ আইন পাশের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন? 

উওর : লর্ড ডালহৌসি।

২ - বিধবা বিবাহ আইন কে প্রবর্তন করেন? 

উওর : লর্ড ডালহৌসি।

আশাকরি যে আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি আজকের ব্লগ থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন সম্পর্কের আলোচনা তোমাদের একটুও ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোস্ট গুলি পড়ে দেখতে পারো।


ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান |ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? 

ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান |ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন?


ভূমিকা : উনিশ শতকে সমগ্র ভারতে এবং বিশেষ করে বাংলায় হিন্দু ধর্মে বা বাংলার সমাজে বিভিন্ন কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা বিভিন্ন ভুল বা খারাপ ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই ভুল বা খারাপ জিনিস গুলোর বিরুদ্ধে তখন সেরকম ভাবে কেউ কোনো প্রতিবাদ অথবা আন্দোলন গড়ে তোলেননি, যার মাধ্যমে সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস গুলি দূর হতে পারতো। কিন্তু সেই সময়ের আধুনিক মানুষ " রাজা রামমোহন রায় " সমাজ থেকে এই সমস্ত খারাপ জিনিসগুলি দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং হিন্দু ধর্ম বা বাংলার সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস দূর করে সমাজকে আধুনিক করে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। রাজা রামমোহন রায়ের এই ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠে ব্রাহ্ম সভা বা ব্রাহ্মসমাজ। 

◆ রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ : রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে সূত্র " ব্রাহ্মসমাজ " করা হয়।


◆ ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ : 1828 থেকে 1833 পর্যন্ত রাজা রামমোহন রায়  ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান নেতা। কিন্তু 1833 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের হাল ধরেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবং তিনিই হয়ে ওঠেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান। কিন্তু পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ব্রাহ্মসমাজে কিছু নতু যুবক উঠে নেতা হিসেবে উঠে আসে। যেমন - কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী এবং অন্যান্যদের মধ্যে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দমোহন বসু প্রমুখ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। 

◆ ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন : উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজ ছিল সমাজের একটি বৃহৎ শক্তিশালী ও উল্লেখযোগ্য সভা। কিন্তু এই সভার নেতৃবৃন্দের মধ্যে তাদের নিজস্ব কিছু কারণে,ব্রাহ্মসমাজ বারবার ভেঙে বিভাজিত হয়েছে। এবং নিজেরা আলাদা আলাদা নাম নিয়ে ব্রাহ্মসমাজের ব্রাহ্ম আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ বার বার বিভাজিত হওয়ায়,ব্রাহ্ম আন্দোলন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিল। 


ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা 

আদি ব্রাহ্ম সমাজ এবং ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ :

ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাজন ঘটে 1866 খ্রিস্টাব্দে। ব্রাহ্মসমাজের প্রথম এই বিভাজনের কারণ ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে কিছু মতপার্থক্যের জন্য।। কেসবচন্দ্র সেন যখন প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেয়,তখন তার কাছে খুশি হয়েই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ফলে 1866 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ প্রথমবারের জন্য ভাগ হয়। ব্রাহ্মসমাজের যে অংশটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো?তার নাম হয় " আদি ব্রাহ্মসমাজ " এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অংশটি " ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ " নামে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে শুরু করে। 

◆ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ : 

প্রথমবার 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হওয়ার পর, পুনরায় 1878 খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে কিছু কাজের জন্য, কেশবচন্দ্র সেন এবং শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ব্রাহ্মসমাজ দ্বিতীয়বার জন্য বিভাজিত হয়। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল। 


ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? | কেশবচন্দ্র সেনের নববিধান 

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, কেশবচন্দ্র সেন তাঁর 14 বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে, এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে সঙ্গে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী,শিবনাথ শাস্ত্রী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে কেসবচন্দ্র সেনের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়। কারণ সেক্ষেত্রে কেসবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম সমাজের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করেছিলেন। তাছাড়াও তিনি সরকারি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট আইন এর ভঙ্গ করতে যাচ্ছিলেন। যার ফলে এই বিরোধকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ 1878 খ্রিস্টাব্দে আলাদা হয়ে যায়। ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে আবারো দুটি ভাগের সৃষ্টি হয়। শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের যে নতুন শাখাটি তৈরি হয়,তার নাম হয় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের অংশটি " নববিধান " নামে তাদের ব্রাহ্ম আন্দোলন পরিচালনা করতে শুরু করে।।

 ব্রাহ্মসমাজ এর কার্যকলাপ অথবা, সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান

এর উওর টি দেখতে হলে নিচের ছবির ওপর অথবা, উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা " এখানে ক্লিক করো।।



ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান |ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? 

ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান |ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন?


ভূমিকা : উনিশ শতকে সমগ্র ভারতে এবং বিশেষ করে বাংলায় হিন্দু ধর্মে বা বাংলার সমাজে বিভিন্ন কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা বিভিন্ন ভুল বা খারাপ ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই ভুল বা খারাপ জিনিস গুলোর বিরুদ্ধে তখন সেরকম ভাবে কেউ কোনো প্রতিবাদ অথবা আন্দোলন গড়ে তোলেননি, যার মাধ্যমে সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস গুলি দূর হতে পারতো। কিন্তু সেই সময়ের আধুনিক মানুষ " রাজা রামমোহন রায় " সমাজ থেকে এই সমস্ত খারাপ জিনিসগুলি দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং হিন্দু ধর্ম বা বাংলার সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস দূর করে সমাজকে আধুনিক করে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। রাজা রামমোহন রায়ের এই ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠে ব্রাহ্ম সভা বা ব্রাহ্মসমাজ। 

◆ রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ : রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে সূত্র " ব্রাহ্মসমাজ " করা হয়।


◆ ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ : 1828 থেকে 1833 পর্যন্ত রাজা রামমোহন রায়  ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান নেতা। কিন্তু 1833 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের হাল ধরেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবং তিনিই হয়ে ওঠেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান। কিন্তু পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ব্রাহ্মসমাজে কিছু নতু যুবক উঠে নেতা হিসেবে উঠে আসে। যেমন - কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী এবং অন্যান্যদের মধ্যে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দমোহন বসু প্রমুখ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। 

◆ ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন : উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজ ছিল সমাজের একটি বৃহৎ শক্তিশালী ও উল্লেখযোগ্য সভা। কিন্তু এই সভার নেতৃবৃন্দের মধ্যে তাদের নিজস্ব কিছু কারণে,ব্রাহ্মসমাজ বারবার ভেঙে বিভাজিত হয়েছে। এবং নিজেরা আলাদা আলাদা নাম নিয়ে ব্রাহ্মসমাজের ব্রাহ্ম আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ বার বার বিভাজিত হওয়ায়,ব্রাহ্ম আন্দোলন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিল। 


ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা 

আদি ব্রাহ্ম সমাজ এবং ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ :

ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাজন ঘটে 1866 খ্রিস্টাব্দে। ব্রাহ্মসমাজের প্রথম এই বিভাজনের কারণ ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে কিছু মতপার্থক্যের জন্য।। কেসবচন্দ্র সেন যখন প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেয়,তখন তার কাছে খুশি হয়েই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ফলে 1866 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ প্রথমবারের জন্য ভাগ হয়। ব্রাহ্মসমাজের যে অংশটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো?তার নাম হয় " আদি ব্রাহ্মসমাজ " এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অংশটি " ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ " নামে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে শুরু করে। 

◆ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ : 

প্রথমবার 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হওয়ার পর, পুনরায় 1878 খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে কিছু কাজের জন্য, কেশবচন্দ্র সেন এবং শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ব্রাহ্মসমাজ দ্বিতীয়বার জন্য বিভাজিত হয়। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল। 


ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? | কেশবচন্দ্র সেনের নববিধান 

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, কেশবচন্দ্র সেন তাঁর 14 বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে, এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে সঙ্গে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী,শিবনাথ শাস্ত্রী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে কেসবচন্দ্র সেনের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়। কারণ সেক্ষেত্রে কেসবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম সমাজের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করেছিলেন। তাছাড়াও তিনি সরকারি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট আইন এর ভঙ্গ করতে যাচ্ছিলেন। যার ফলে এই বিরোধকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ 1878 খ্রিস্টাব্দে আলাদা হয়ে যায়। ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে আবারো দুটি ভাগের সৃষ্টি হয়। শিবনাথ শাস্ত্রী,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং আনন্দমোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের যে নতুন শাখাটি তৈরি হয়,তার নাম হয় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের অংশটি " নববিধান " নামে তাদের ব্রাহ্ম আন্দোলন পরিচালনা করতে শুরু করে।।

 ব্রাহ্মসমাজ এর কার্যকলাপ অথবা, সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান

এর উওর টি দেখতে হলে নিচের ছবির ওপর অথবা, উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা " এখানে ক্লিক করো।।

 

উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা করো| সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান কী ছিল? 

উনিশ শতকের বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা করো| সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান কী ছিল?

◆ সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন :রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ গঠন করার পর, তিনি সেই সময়কার সমাজের একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কুপ্রথা " সতীদাহ প্রথা " -র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের সকল নেতারা সেরকমভাবেও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে আসেননি, কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত সেই ভয়ঙ্কর প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। রামমোহন রায় সেইসময়কার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাধারা যুক্ত কিছু মানুষের সইস্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। এবং সেখানে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের দাবি জানান। সরকার রাজা রামমোহন রায়ের এই আবেদন মেনে নিয়ে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 জ ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। ব্রাহ্মসমাজের অথবা রাজা রামমোহন রায়ের এই আন্দোলনের ফলেই সেই সময় সমাজের একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা বন্ধ হয়।


◆ সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট : তৎকালীন সময়ে ভারতে তথা বাংলার সমাজে আরো একটি খারাপ অথবা ভয়ঙ্কর প্রথা ছিল অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ যাকে সাধারণত বাল্যবিবাহ বলা হয়। সেসময়কার বেশিরভাগ পরিবারি ই অল্প বয়সে তাদের মেয়েদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক অথবা বৃদ্ধ বয়স্ক লোকের বিয়ে দিত। যার ফলে মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যেত এবং তাদের কষ্টের জীবন শুরু হতো।  ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশব চন্দ্র সেন সমাজে প্রচলিত এই খারাপ প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।কেশব চন্দ্রসেন এবং সমগ্র ব্রাহ্ম সমাজ সরকারের কাছে এই বাল্যবিবাহ বন্ধ করার আবেদন জানায়। সরকার ব্রাহ্মসমাজের এই তীব্র আন্দোলনের চাপে পড়ে 1872 খ্রিস্টাব্দে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট বা তিন আইন পাস করে বাল্যবিবাহ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। যার ফলে সেই সময়কার নারীরা অল্প বয়সে সংসারের চাপে পড়ে নাজেহাল ও বিধবা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।  

◆ নারী শিক্ষা : রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় সমাজে সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়। এবং কেশবচন্দ্র সেন এবং সমগ্র ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে সমাজে বাল্যবিবাহের মত কিছু প্রথা সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু  এখানে ব্রাহ্মসমাজ এখানেই থেমে থাকেনি।ব্রাহ্মসমাজ চেয়েছিল সমাজে নারীদের শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়ন করা। কারণ তারা এই ব্যাপারটা জানতো যে,সমাজ তখনই উন্নত হবে বা শিক্ষিত হয়ে উঠবে বা সঠিকভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠবে, যখন সমাজের নারীরাও সঠিকভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠবে। এজন্য ব্রাহ্মসমাজ বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এবং ব্রাহ্মসমাজের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে বাঙালি নারীরা শিক্ষাপাভের সুযোগ পেয়েছিল।


◆ নৌশ বিদ্যালয় : ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো - ব্রাহ্মসমাজ শ্রমিক, কৃষক এবং অন্যান্য শ্রেণীর জন্য,যারা প্রথমে শিক্ষালাভ করতে পারেনি,তাদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল।  ব্রাহ্মসমাজ চেয়েছিল যাতে শ্রমিক, কৃষক এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষেরা ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে নিজেদের অধিকার টুকু বুঝে নিতে পারে। এবং তারা এজন্যই নৌশ বিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে কৃষক, শ্রমিক এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের জন্য শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা করেছিল।

◆ জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো : সমাজ সংস্কারে উপরিক্ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়াও, ব্রাহ্মসমাজ সেই সময়ে বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ, মহামারী অথবা অন্যান্য পরিস্থিতিতে জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়াতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং সকল সদস্যরা বিভিন্ন সময় মহামারী, দুর্ভিক্ষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণকার্য, উদ্ধারকার্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিজেরা ঝাপিয়ে পরেছিল।

◆ ধর্ম সংস্কারে : ব্রাহ্মসমাজের নেতারা তাদের বিভিন্ন সভা সমিতির এবং  পত্র-পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস,জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি জিনিস গুলোকে খুবই কড়াভাবে আক্রমণ করে। এবং এর বিরুদ্ধে আধুনিক চিন্তাধারা এবং যুক্তিবাদী মতবাদ প্রকাশ করার মাধ্যমে সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস গুলি দূর করার চেষ্টা করে।


◆ শ্রমিক শ্রেণি সমর্থন : ব্রাহ্মসমাজ সমাজ শ্রমিকশ্রেণীকে সমর্থন করেছিল। ব্রাহ্ম সমাজের নেতা বা সদস্য শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের " ভারত শ্রমজীবী " নামক একটি পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সেখানে শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে লেখালেখি করতেন। এছাড়াও রামকুমার বিদ্যারত্ন কুলি কাহিনী নামক গ্রন্থে কুলি শ্রমজীবী মানুষদের উপর হওয়া বিভিন্ন নির্মম অত্যাচার সম্পর্কে লেখালেখি করেছিলেন। এছাড়াও ব্রাহ্মসমাজের নেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রীও এক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গিয়েছিলেন।

উপসংহার :সুতরাং দেখা যায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দের ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজা রামমোহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন,শিবনাথ শাস্ত্রী, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও ব্রাহ্ম সমাজের অন্যান্য নেতা এবং সদস্যদের উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ বাংলায় বিভিন্ন ধরনের সমাজ সংস্কার করে গেছেন। এবং ব্রাহ্ম সমাজের উদ্যোগে গ্রহণ করা বিভিন্ন উদ্যোগ, এবং আন্দোলন, প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কিছু ক্ষেত্রে সমাজ আধুনিক হয়ে উঠেছিল এবং বাকি ক্ষেত্রে আধুনিক হয়ে ওঠার পথ খুঁজে পেয়েছিল।


ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান কি ছিল | এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা


ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান কি ছিল | এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা


◆ ভূমিকা : ভারতের সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের,আগে মূলত বেসরকারী উদ্যোগেই পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোদটা অনেক বেশি নেওয়া হয়েছিল। সেসময়কার কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নিজের উদ্যোগেই পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ভূমিকা নিয়েছিল। তাদের মতো  সেসময়ে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীরাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এবং সেগুলো তারা সঠিকভাবে পালনও করেছিল।

◆ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ :  ভারতের মূলত খ্রিস্টান মিশনারী এসেছিলেন তাদের খ্রিস্টধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারীরা দেখেছিলেন বা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ই ইংরেজিতে লেখা বাইবেল পাঠ করতে পারে না। যার ফলে তারা বাইবেলের মাহাত্ম্য বা বাইবেলের বিষয়বস্তু কখনোই বুঝতে পারতো না। খ্রিস্টান মিশনারীরা এই কথাটা বুঝতে পেরেই তারা এদেশে ইংরেজি স্কুল অথবা পাশ্চাত্য ধাচের বিদ্যালয় স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিল। যাতে এদেশের লোকেরা ইংরেজি শিখে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পাঠ করতে পারে। এবং খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্রতা বা ভালো দিক গুলি দেখে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। 


পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিস্থান স্থাপন - 

◆ শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগ : এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য সেই সময়কার বিখ্যাত তিনজন খ্রিস্টান মিশনারী, উইলিয়াম ওয়ার্ড,উইলিয়াম কেরি এবং জোশুয়া মার্শম্যান - যারা শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত,তারা তিনজন মিলে 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তারা তিনজন মিলে পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রায় 126 টি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এবং এই উদ্যোগটি ছিল সম্পূর্ণ ভাবে তাদের নিজস্ব। এক্ষেত্রে তারা হয়তো কোনো রকম সরকারি সহযোগিতা পাননি বা পেলেও তা খুবই কম। তাদের প্রতিষ্ঠিত এই সমস্ত বিদ্যালয়ে প্রায় 10,000 ছাত্ররা পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল।

◆ লন্ডন মিশনারীদের উদ্যোগ : লন্ডন মিশনারি সোসাইটির সদস্য রবার্ট মে তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রথমে 1795 খ্রিস্টাব্দে চুচুড়ায় একটি ইংরেজী বিদ্যালয় এবং তার পরবর্তী কালে ভারতের অন্যান্য স্থানে 36 টি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

◆ মিশনারি ও উচ্চ শিক্ষা : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীরা অনেক ইংরেজি স্কুল স্থাপন করেছিল। কিন্তু তারা শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা বিস্তারেই উদ্যোগ নেননি। বরং তারা ভারতে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারেও ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। যেমন - 


• 1818 খ্রিস্টাব্দে ব্যাপ্টিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর কলেজ তৈরি করা হয়। 

• এরপর 1836 খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনের উদ্যোগে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউট যা পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত হয়,সেটি তাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

• বেলজিয়ামের মিশনারিদের উদ্যোগে 18345 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও লরেটো হাইস স্থাপিত হয়।

◆ উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথমস খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারতে তাদের পবিত্র খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এবং তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পাঠের জন্য,এ দেশের জনসাধারণের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নিলেও,পরবর্তীকালে তাদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে অন্য রূপ ধারণ করে। এবং তাদের গ্রহণ করা নানা উদ্যোগের মাধ্যমে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভের নানা দিক উন্মোচিত হয়।।

 প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক বলতে কী বোঝো? | এদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝ?

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক বলতে কী বোঝো? | এদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝ?

ভূমিকা :1813 খ্রিস্টাব্দের আগে ব্রিটিশ সরকার এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থাৎ ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের কোনো রকম অর্থ ব্যয় এর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কিন্তু 1810 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল মিন্টো ভারতীয়দের শিক্ষার শোচনীয় অবস্থার কথা একটি রিপোর্টে তুলে ধরেন। এই রিপোর্টে তিনি কোম্পানির কাছে ভারতীয় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন। গভর্নর-জেনারেল মিন্টোর সাথে সাথে খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারত ও ইংল্যান্ডে কোম্পানির শিক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করেছিল, যার ফলে সরকার 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস করে। 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় যে,ব্রিটিশ সরকার এবার থেকে প্রতিবছর এক লক্ষ টাকা ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করবে।


সরকারের এই ঘোষণা করার পর সেই সময়কার, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত কিছু উচ্চবিত্ত ব্যক্তির মধ্যে তর্কের সৃষ্টি হয়,যে সরকার এই এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর ভারতের কোন ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় করবে। অর্থাৎ সেই এক লক্ষ টাকা প্রাচ্য নাকী পাশ্চাত্য শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে,,সেই সম্পর্কেও 1820 এর দশকে যে বিতর্কের সূচনা হয়,তাকেই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক অথবা প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলা হয়

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের সৃষ্টি : 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস হওয়ার পর, 1820 খ্রিস্টাব্দে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের সূচনা হয়। এরপর গঠিত হয় 1823 খ্রিস্টাব্দের জনশিক্ষা কমিটি অথবা কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন। এই কমিটির সদস্যদের মূলত এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল যে, কোম্পানির খরচ করা সেই এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর ভারতের ক্ষেত্রে কোন ধরনের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। তা নিয়ে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী এই দুই দলের মধ্যে সেই সময়ে যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তাকেই ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিতর্ক অথবা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব বলে। 


প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বাদী কাদের বলা হয়?

যারা সেই সময়ে প্রাচ্য ভাষায় অর্থাৎ সংস্কৃত আরবি-ফারসি ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারে সেই এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা বলেছিলেন তাদের বলা হতো প্রাচ্যবাদী অথবা ওরিয়েন্টালিস্ট। এদের মধ্যে ছিলেন এইচ.টি. প্রিপেন্স, উইলসন, কোলব্রুক প্রমুখ। এবং অন্যদিকে ছিলেন লর্ড মেকলে,চার্লস গ্রান্ট, আলেকজান্ডার ডাফ,সন্ডার্স কোলভিন প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদীরা, যারা এদেশে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষার  প্রসারে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের বলা হতো পাশ্চাত্যবাদী অথবা অ্যাংলিসিস্ট। 

◆ প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের বা দ্বন্দ্বের অবসান 1820 এর পর আস্তে আস্তে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে এই বিতর্ক আকার বড় আকার ধারণ করতে থাকে।  এই জিনিসগুলো  লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তিনি এই জিনিসটির নিষ্পত্তি চাইতেন।  এরপর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর আইন সচিব এবং জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস বেবিংটন মেকলে 2 ফেব্রুয়ারি 1835 সালে একটি প্রতিবেদন পেস করে, যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত। টমাস বেবিংটন মেকলে তার মেকলে প্রতিবেদন এর ইংরেজি শিক্ষার প্রসারমেই সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন জানায়। এই নিয়ে বহু তর্কবিতর্কের পর অবশেষে সরকার মেকলের প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকেই মেনে নেয়। এবং প্রতি বছর ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য ধাচের শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়


উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায়, 1810 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল মিন্টোর প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো অর্থ ব্যয় করার একটি ভেবে দেখেন এবং তার হাত ধরেই 1817 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাশ হয় এবং সনদ আইন পাস হওয়ার পর 1823 খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে জনশিক্ষা কমিটি অথবা কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন। এবং জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া এই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসান ঘটে কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি টমাস বেবিংটন মেকলের " মেকলে মিনিট অথবা মেকল প্রতিবেদনের মাধ্যমে।

আশাকরি যে,  মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় "সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা" অধ্যায়ের সমস্ত 1, 2 মার্কের এবং মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত  4 ও 8 মার্কের  প্রশ্ন উওর গুলো তোমাদের কাজে আসবে।

Tags:-

মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা | দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের সাজেশন | দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের 4 মার্কের নোট | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের 8 মার্কের নোট | ক্লাস 10 ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | ক্লাস 10 ইতিহাস বড় প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড় প্রশ্ন উত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উত্তর | class 10 history 2 nd chapter notes | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 10 history question answer | wb class 10 history suggestion | History question answer|  class 10 history 2nd chapter question answer | class 10 history question answer | wb class 10 history notes in Bengali | history notes | class 10 history notes


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top