দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্নোত্তর || West Bengal Class 12 Political Science Question Answer And Suggestion

0

  

দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্নোত্তর || West Bengal Class 12 Political Science Question Answer And Suggestion
Class 12 Political Science Question Answer And Suggestion 


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় (West Bengal Class 12 Political Science Question AnswerAnd Suggestion 2023) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের (West Bengal Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali) এর সমস্ত বড়  প্রশ্ন উওর বা উচ্চ মাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধায়ের সমস্ত রকমের নোটস (West Bengal Higher Study Political Science Question Answer)

তোমাদর সঙ্গে শেয়ার করবো।।

আজকের বিষয়ঃ-


  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
  •  আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো। 
  • ক্ষমতা বা শক্তি কাকে বলে? ই.এইচ. কার শক্তি কে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। 
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো। বা, জাতীয় ক্ষমতার মূল উপাদান গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও পরিধি বিশ্লেষণ করো।
  • জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে জাতীয় কত প্রকার এবং কি কি
  • জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি সম্পর্কে লেখো
  • পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা || জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো
  • পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশি নীতিনির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা লেখ। 
  • বিশ্বায়ন কী? বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।।
  • বিশ্বায়ন কাকে বলে বা বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও। বিশ্বায়নের প্রকৃতি অথবা রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো
  • বিশ্বায়নের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 


দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্নোত্তর || West Bengal Class 12 Political Science Question Answer And Suggestion 

1- একমেরু বিশ্বের প্রধান শক্তির নাম কি?


উত্তর : একমেরু বিশ্বের প্রধান শক্তির নাম হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।


2- বিশ্বায়নের অর্থ কি?


উত্তর : বিশ্বায়নের অর্থ হলো পূঁজির বিকেন্দ্রীকরণ।


3- কে প্রথম শক্তির উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন?


উওর : টমাস নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম শক্তির ওপর গুরুত্ব দেন।।


4- বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের উপর এর কী প্রভাব পড়েছে?


উওর : বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির উপর এর যে প্রভাব পড়েছে, তা হলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দারিদ্রতা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।


5- 'রাজনৈতিক ক্ষমতা হলো সম্পর্ক'- এই কথাটি কে বলেছিলেন?


উওর : রাজনৈতিক ক্ষমতা হলো সম্পর্ক'- এই কথাটি বলেছিলেন হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল।


6- আন্তর্জাতিকতা মূলত কাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে থাকে?


উওর : আন্তর্জাতিকতা মূলত অহিংসাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে থাকে।


7- contemporary theory in international relations এই গ্রন্থটির রচয়িতা কে? 


উত্তর : কনটেম্পোরারি থিওরি ইন ইন্টার্নেশনাল রেলেশনস গ্রন্থের রচয়িতা হলেন স্টোনলি হোফম্যান


8- কত খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?


উত্তর : 1648 সালে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।


9- Politics Among Nations গ্রন্থের রচয়িতা কে?


উওর : Politics Among Nations গ্রন্থের রচয়িতা হলেন হ্যান্স.জে. মর্গেন্থাউ।


10-  বিশ্বায়নের ধারণা একমাত্রিক নাকি বহুমাত্রিক? 


উত্তর : বিশ্বায়নের ধারণা হলো বহুমাত্রিক।


11- আরব রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার কি?


উত্তর : আরব রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার হল খনিজ সম্পদ বা খনিজ তেল।


12- কত খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব হয়েছিল? 


উত্তর : 1917 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব হয়েছিল।


13- 'রুশ বিপ্লব বিপ্লবে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে' উক্তিটি কার-


উওর : এই উক্তিটি হল লেনিনের।


14- 'জাতীয় মূল্যবোধের যোগফল হল জাতীয় স্বার্থ'- এই উক্তিটি কার?


উত্তর :  'জাতীয় মূল্যবোধের যোগফল হল জাতীয় স্বার্থ'- এই উক্তিটি হলো জোসেফ ফ্রাঙ্কেলের।


15-  An Introduction To International Relations গ্রন্থটির রচয়িতা কে?


উওর : An Introduction To International Relations গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন কৌলমবিস ও উলফ 


16-  জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একটি প্রাচীন পন্থা লেখো।


উওর : জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একটি প্রাচীন পন্থা হলো কূটনৈতিক আচরণ।


17- বিশ্বায়ন বর্তমান বিশ্বে কিসের সৃষ্টি করেছে?


উওর : বিশ্বায়ন বর্তমান বিশ্বের বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে।


18- জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম নেতার নাম কি?


উওর : জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম নেতার নাম হল মার্শাল টিটো।


19- ওয়ার্ল্ড ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?


উওর : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয় জেনেভাতে অবস্থিত।


20- কখন জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন শুরু হয়েছিল?


উওর : মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠে।


21- জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রধান প্রবক্তা কে?


উত্তর : জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রধান প্রবক্তা হলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।


22- ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন ( International Relations ) গ্রন্থটির রচয়িতা কে?


উওর : ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন ( International Relations ) গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন পামার ও পারকিনস।


23- International Relations In A Changing World গ্রন্থের রচয়িতা কে?


উওর : International Relations In A Changing World গ্রন্থের রচয়িতা হলেন জোসেফ ফ্রাঙ্কেল।


24- আচরণ বাদের অন্যতম প্রবক্তা কে?


উওর : অধ্যাপক E.H.Carr হলেন আচরণ বাদের অন্যতম প্রবক্তা।


25- একজন চৈনিক দার্শনিকের নাম লেখ।


উওর : মেনসিয়াস ছিলেন একজন চৈনিক দার্শনিক।


26- 'শক্তি থেকে রাজনীতিকে পৃথক করা যায় না'- এই উক্তিটি কার?


উওর : এই উক্তিটি হলো ঐতিহাসিক কার্ল বেকারের।


27- জোট-নিরপেক্ষ ধারণাটি সর্বপ্রথম কোথায় জন্ম লাভ করেছিল?


উত্তরঃ জোট-নিরপেক্ষ ধারণাটি সর্বপ্রথম ভারতে জন্ম লাভ করেছিল।


28- 'Twenty Years Crisis' টুয়েন্টি ইয়ার্স ক্রাইসিস গ্রন্থটির রচয়িতা কে?


উওর : Twenty Years Crisis' টুয়েন্টি ইয়ার্স ক্রাইসিস গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন E.H.Carr


29- জাতীয় স্বার্থের প্রধান রূপকার কে?


উওর :  জাতীয় স্বার্থে প্রধান রূপকার হলেন প্লেটো।


30- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী ধারণার প্রধান প্রবক্তা কে?


উওর : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী ধারণার প্রধান প্রবক্তা হলেন  হ্যান্স.জে. মর্গেন্থাউ।


31- জোট নিরপেক্ষতার অর্থ কি?


উত্তর : জোট নিরপেক্ তার অর্থ হলো সামরিক জোট থেকে দূরে থাকা।


32- কূটনীতিকে, কে জাতীয় ক্ষমতার চক্ষু ও কর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন?


উওর : কূটনীতিকে, পামার ও পারকিনস জাতীয় ক্ষমতার চক্ষু ও কর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।


33- বিশ্বায়নের বিকল্প ব্যবস্থা কি?উত্তর : বিশ্বায়নের বিকল্প ব্যবস্থা হল সমাজতন্ত্র।


34- বিশ্বায়ন ধারণার প্রবর্তক কে?


উওর : অধ্যাপক রোনাল্ড রবার্টসন হলেন বিশ্বায়ন ধারণার প্রবর্তক।


35- কোন বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?


উওর : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


36- কোন বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?


উওর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


35- কত খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?


উওর : 1920 খ্রিস্টাব্দের 10 ই জানুয়ারি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


36- কত খ্রিস্টাব্দে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?


উওর : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর 1945 খ্রিস্টাব্দে 24 অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


37- জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা কত ছিল?


উওর : জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ছিল 51 টি।


38- 'The Prince' দ্য প্রিন্স গ্রন্থের লেখক কে?


উওর : দ্য প্রিন্স গ্রন্থের রচয়িতা হলেন টমাস নিকালো ম্যাকিয়াভেলি।


39- কে বিশ্বায়নকে দরিদ্রের বিশ্বায়নকে বলে অভিহিত করেছিলেন?


উওর : জোসেফ স্টিভলিৎস বিশ্বায়নকে দরিদ্রের বিশ্বায়নকে বলে অভিহিত করেছিলেন।


40-  আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নয়া বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা কে?


উওর : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নয়া বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন কোনেত ওয়ালাজ।


41- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আদর্শবাদী ধারণার প্রধান প্রবক্তা কে?


উওর : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আদর্শবাদী ধারণার প্রধান প্রবক্তা হলেন উড্রো উইলসন।


42- কোন শতাব্দীতে উদারনীতিবাদের উদ্ভব হয়েছিল?


উওর : মূলত ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে উদারনীতি বাদের উদ্ভব হয়েছিল।


43- কোন সময় থেকে ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল?


উওর : 1991 সাল থেকে ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।


44- 14 দফা নীতি কে ঘোষণা করেছিলেন?


উওর : 14 দফা নীতি ঘোষণা করেছিলেন উড্রো উইলসন।


45- ক্ষমতার এলিট তত্ত্বের একজন প্রবক্তার নাম লেখ।


উওর : ক্ষমতার এলিট তত্ত্বের একজন প্রবক্তার নাম হলো প্যারেটো।


46- ক্ষমতার চক্রাকার আবর্তনে কারা বিশ্বাস করেন?


উওর : এলিট তত্ত্বের প্রবক্তা যেমন- মস্কা,প্যারেটো,মিচেল প্রমুখ ব্যক্তিগণ ক্ষমতার চক্রাকার আবর্তনে বিশ্বাষ করেন।


47- রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা কত প্রকার এবং কি কি?


উওর : রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার দুই প্রকার। যথা অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা এবং বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা।


48- অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিতার অর্থ কি?


উওর : অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বলতে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন সীমানার মধ্যে রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারকে বোঝায়।


49- তৈল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?


উওর : হ্যান্স.জে. মর্গেন্থাউ এর মতে আরব দেশগুলির তৈল সম্পদের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গ্রেট ব্রিটেন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যেকার যে প্রতিযোগিতা তাকেই তৈল কূটনীতি বলা হয়।


50- ক্ষমতা 3 টি দৃষ্টিভঙ্গি লেখো।


উওর : ক্ষমতার তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি হল এলিট দৃষ্টিভঙ্গি,ক্ষমতার বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্ষমতার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।


51- একজন বহুত্ববাদী তাত্ত্বিকের নাম লেখ।


উত্তর : রবার্ট কিউহান হলেন একজন বহুত্ববাদী তাত্ত্বিক।


52- ক্ষমতা ও বল প্রয়োগের মধ্যে পার্থক্য লেখ।


উওর : বলপ্রয়োগের সঙ্গে সামরিক সামর্থ অর্থাৎ হিংসা জড়িত থাকে। কিন্তু ক্ষমতার ধারণার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা,সাহায্য,অর্থনৈতিক সহায়তা,মতাদর্শগত প্রভৃতি বিভিন্ন অহিংস মাধ্যমে যুক্ত থাকে।


53- বল প্রয়োগ বলতে কী বোঝো উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় ভীতিপ্রদর্শন বস শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা, হয় তাকে বলপ্রয়োগ বলে।।


54-  কত খ্রিস্টাব্দে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়?


উওর : 1961 সালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়।


55- উদারীকরণ কথার অর্থ কি?


উওর : আর্থিক বিষয়ে উদারনীতি বলতে বোঝায়,দেশের সকল বৈশরিক বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে একটা খোলামেলা সুসঙ্গত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলা।।


56- কত সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়?


উওর : 1991 সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়।


57- জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দুটি নির্ধারক কি কি?


উওর : জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দুটি অন্যতম নির্ধারক হলো কূটনীতি এবং পররাষ্ট্র নীতি।


58- কত খ্রিস্টাব্দে এবং কোথায় আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্মেলন হয়েছিল?


উওর : 1948 খ্রিস্টাব্দে, প্যারিসে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্মেলন হয়েছিল।


59- SEATO কথার অর্থ কী?


উওর : SEATO কথার অর্থ হলো South East Asia Treaty Organization।


60- Hire and Fire নীতি কী?


উওর : হায়ার এবং ফায়ার নীতিটি বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মুল কথা হলো কাজ থাকলে শ্রমিকদের ডাকো আর কাজ না থাকলে শ্রমিকদের তাড়িয়ে দাও।।


61- বৈধ ক্ষমতাকে কি বলে?


উত্তর : বৈধ ক্ষমতাকে কর্তৃত্ব বলে।


62- পলিশ শব্দের অর্থ কি?


উত্তর : গ্রিক শব্দ পলিশের অর্থ হলো নগর।


63- ক্ষমতায়নের দুটি উপাদানের নাম লেখ।


উওর : ক্ষমতার দু'টি প্রধান উপাদানের নাম হল ভৌগলিক উপাদান এবং সামরিক শক্তি।


64- বৈদেশিক নীতির মূল ধারণা কি?


উওর : বৈদেশিক নীতির মূল ধারণা হলো জাতীয় স্বার্থ।


65- পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের উদ্দেশ্য কি?


উওর : পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা লাভ করা।


66- জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে?


উত্তর : জাতীয় নিরপেক্ষতা,জাতীয় উন্নয়ন,জাতীয় অখন্ডতা, বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য কোনো রাষ্ট্র যে প্রচেষ্টা চালায়, তাকে জাতীয় স্বার্থ বলে।


67- জাতীয় ক্ষমতা কাকে বলে?


উত্তর : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিষয়কে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষমতা বা সামর্থ্যকে জাতীয় ক্ষমতা বলে।


68- ক্ষমতার প্রধান উৎস কি?


উওর : অধ্যাপক ই.এইচ.কারের মতে ক্ষমতার প্রধান উৎস হল অর্থনৈতিক এবং সামরিক সম্পদ।


69- ক্ষমতা ও প্রভাব এর মধ্যে পার্থক্য কি?


উওর : ক্ষমতার সঙ্গে ভীতিপ্রদর্শন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা,বলপ্রয়োগ ইত্যাদি যুক্ত থাকে। কিন্তু প্রভাবের সঙ্গে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে স্বতঃস্ফূর্ততার বিষয়টি যুক্ত থাকে।। 


70- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য কি?


উওর : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান লক্ষ্য হলো বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা।


71- সীমান্ত লোপ করা কথার অর্থ কি?উওর : রাষ্ট্রের ভূকেন্দ্রিকতার বিলোপ সাধন করা যা বিশ্বায়নে আরেক নাম।।


72- কোন দেশের নেতৃত্বে NATO গড়ে ওঠে?


উওর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে NATO গড়ে  উঠেছিল।


73- NATO কথার পুরো অর্থ কী?


উওর : North Atlantic Treaty Organization 


74- কোন রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?


উওর : সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্যোগেই WARSAW চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।


75- কবে WARSAW চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?


উওর : 1955 সালের 14 ই মে WARSAW চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।


76- NATO কবে গড়ে উঠেছিল?


উওর : 1949 সালের 4 ঠা এপ্রিল NATO গড়ে উঠেছিল।।


77- সিসিল.ভি.ক্র্যাব আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচ্য বিষয় গুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন?

উওর : সিসিল.ভি.ক্র্যাব আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচ্য বিষয় গুলিকে সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন।।

এগুলি হল—[১] রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বজায় রাখার উপায়, [২] রাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্ধারণের উপায়, [৩] নিজেদের লক্ষ্যপূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক অনুসৃত পদ্ধতি, [৪] নিজেদের লক্ষ্যপূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক অনুসৃত কর্মসূচি নির্ধারণের প্রক্রিয়া, [৫] নিজের লক্ষ্যপূরণের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি অপসারণের পদ্ধতি,[৬] জাতীয় লক্ষ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিরোধিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া এবং [৭] সমাজের লক্ষ্যপূরণের জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকার পরিবর্তন প্রক্রিয়া।


78- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে কোনটির আলোচনার পরিধি অনেক বৃহৎ?


উওর : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনার পরিধি অনেক বৃহৎ।


79- ই.এইচ.কার ক্ষমতাকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন ও কী কী?


উওর : ই.এইচ.কার ক্ষমতাকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- সামরিক ক্ষমতা,অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং জনমত গঠনের ক্ষমতা।


80- কে জাতীয় স্বার্থের ধারণাটিকে অস্পৃষ্য বলে চিহ্নিত করেছেন?


উওর : জোসেফ ফ্রাঙ্কেল;জাতীয় স্বার্থের ধারণাটিকে অস্পৃষ্য বলে চিহ্নিত করেছেন।।


81- WTO এর পুরো কথা কী?


উওর : WTO এর পুরো কথা হলো World Treaty Organization।


82- IMF এর পুরো কথা কী?


উওর : IMF এর পুরো কথা হলো International Monetary Fund।


83- UNESCO এর পুরো কথা কী?


উওর : UNESCO এর পুরো কথা হলো


উওর : UNESCO এর পুরো কথা হলো


United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization


প্রশ্নঃ- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য লেখো। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে মর্যাদা লাভ করলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনো সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। কিন্তু বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যে সংজ্ঞা পাওয়া যায় তা, হলো - 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয় যা বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক, অরাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান,তাদের ক্ষমতা,শান্তি, যুদ্ধ, সহযোগিতা নিরস্ত্রীকরণ আন্তর্জাতিক সংগঠন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ, কূটনীতি, বিশ্ববাণিজ্য, সন্ত্রাসবাদ, বিশ্ব পরিবেশের মতো প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তাকে বলা হয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিঃ 

আন্তর্জাতিক রাজনীতি হলো এমন একটি বিষয় যা প্রধানত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের রাজধানী সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। যেমন বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক মতানৈক্যে, প্রতিযোগিতা,প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবী, রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পরিবর্তনে আশঙ্কা থেকে উদ্ভূত ফলাফলের বিষয়গুলি ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্যঃ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির সংজ্ঞা থেকেই আমরা এটা বুঝতে পারি যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে যেসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য গুলি লক্ষণীয়, তা হলো - 

আলোচনার ক্ষেত্রে পরিধিগত পার্থক্যঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সংজ্ঞা থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনার ক্ষেত্রের পরিধিগত পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এমন একটি বিষয় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের একাধিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি এমন একটি বিষয় যা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের রাজধানী সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনাগত পরিধি, আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনাগত পরিধির তুলনায় অনেক বেশি ব্যাপক।।

বিষয়বস্তুগত পার্থক্যঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয় হলো একাধিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তু হলো রাষ্ট্রের রাজনীতি সম্পর্কিত বিষয় গুলোই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক,অরাষ্ট্রীয় সংস্থা,সংগঠন, জনস্বার্থ,বিশ্বশান্তি বিশ্ব পরিবেশ, যুদ্ধ, নিরস্ত্রীকরণ,সহযোগিতা বিভিন্ন সংগঠন, ক্ষমতা, রাজনৈতিক মতাদর্শ,বিশ্ববাণিজ্য কূটনীতি, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। এবং অপরদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তু শুধুমাত্র রাজনীতিকেন্দ্রিক। অর্থাৎ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্ধিতা,বিরোধ, সংঘর্ষ ইত্যাদি বিষয় গুলি।।

দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যঃ 

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শুধুমাত্র বৃহৎ এবং ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলির আলোচনা করা হয়। এখানে শুধুমাত্র বৃহৎ এবং ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতার উপাদান, পারস্পরিক সম্পর্ক,,তাদের ক্রিয়া-কলাপ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে রাজনীতি, অর্থনীতি,আইন, তাদের সম্পর্ক,যোগাযোগব্যবস্থা,আন্তর্জাতিক সংগঠন, বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্ব পরিবেশ, বিশ্ববাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যুক্ত।

শাস্ত্রগত দিক থেকেঃ 

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয় শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি শাস্ত্র যা সমাজবিজ্ঞানের একটি নবীন শাস্ত্র হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এমন একটি ক্ষমতা যা প্রতিযোগিতা , মতানৈক্য , রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পরিবর্তন , বিবর্তন , পদ্ধতি এবং সমসাময়িকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে।।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হলো দুটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি আন্তর্জাতিক রাজনীতি তুলনায় অনেক বড় হলেও যেহেতু আন্তর্জাতিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে একটি অংশমাত্র, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।।

প্রশ্নঃ- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশের ধারাটি আলোচনা করো। 

উওরঃ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হলো এমন একটি বিষয়, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, বিভিন্ন অরাষ্ট্রীয় সংগঠন, ক্ষমতা, বিশ্বরাজনীতি, বিশ্বপরিবেশ, বিশ্বশান্তি, যুদ্ধ, বাণিজ্য, রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশের ধারাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এবং পরেই হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের ধারনা যে তার আগে শুরু হয়নি সেটা ভুল। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠেছিল। এবং বিভিন্ন পর্যায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশ ঘটিছিল। যেমন - 

প্রাক শিল্প বিপ্লব পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ 

প্রাক শিল্প বিপ্লবের পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্তিত্ব ছিল। তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তিদের রচনায় রাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সংক্রান্ত নানা বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর থেকেই এটা বলা যায় যে, প্রাক শিল্প বিপ্লব পর্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ শুরু হয়েছিল। 

শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ 

ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। তার কারণ ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে কাচামাল সংগ্রহ করা এবং বিদেশী বাজার দখল করে সেখানে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর একটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক গড়তে শুরু করে। এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার দখলকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন গোপন চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ ঘটে।।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, ধ্বংসলীলা ইত্যাদি মানুষকে শান্তিকামী করে তোলে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা পররাষ্ট্র নির্ধারণ ও রুপায়ণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকার দাবীতে 1814 সালে লন্ডনে ইউনিয়ন অফ ডেমোক্রেটিক কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ করে তার 14 দফা নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিন্তন কেন্দ্রের ভূমিকাঃ 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস করে এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠন-পাঠনের উদ্দেশ্যে 1927 সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এখানেই বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী দেওয়া শুরু হয়েছিল যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান ইন্সটিটিউড অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, নিউজিল্যান্ড ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স,লন্ডন ইন্সিটিউট অফ ওয়াল্র্ড আফেয়ারস ইত্যাদি বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হোক জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল। জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছে। তাই তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও,

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চিন্তন কেন্দ্রগুলি, যেমন - ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ রিভিউ,অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ পার্সপেক্টিভস, ফরেন পলিসি অ্যানালিলিস প্রভৃতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

প্রশ্নঃ- ক্ষমতা বা শক্তি কাকে বলে? ই.এইচ. কার শক্তি কে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। 

উওরঃ 

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা বা শক্তি উৎপন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণভাবে ক্ষমতা বা শক্তি বলতে কাজ করার সামর্থ্যকে বোঝায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতা বা শক্তির অন্য অর্থ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ যে মর্গেনথাথ ক্ষমতা বা শক্তির যে সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন তা হলো, শক্তি বা ক্ষমতা বলতে অন্য কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়। তার মতে এক জাতির মন ও কাজের উপর অন্য জাতির ক্ষমতা বা শক্তির প্রয়োগ হলো জাতীয় শক্তি।

শক্তি বা ক্ষমতার শ্রেণীবিভাজনঃ 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার শ্রেণীবিভাজন করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশারদ ই.এইচ.কার ক্ষমতা বা শক্তি তিনটি প্রকার আলোচনা করেছেন।সেগুলো হলো - সামরিক শক্তি,অর্থনৈতিক শক্তি এবং জনমত গঠনের শক্তি।

সামরিক শক্তিঃ 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র ঠিক কতটা শক্তিশালী সেই বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই রাষ্ট্রের সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে থাকে। একটি রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি যত বেশি হবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের স্থান তত উচ্চতর হবে।

অতীতের মতো বর্তমানেও যে রাষ্ট্র সামরিক দিক থেকে যত শক্তি শক্তিশালী, সেই রাষ্ট্রকে অতি বৃহৎ শক্তির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। জোসেফ ফ্রাঙ্কেল তার ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস গ্রন্থের বলেছেন যে, কোন রাষ্ট্র কামান ও বিমানের সামর্থ্য না থাকলে সেখানে নরম ধাঁচের কূটনীতিও সফল হতে পারে।

অর্থনৈতিক শক্তিঃ 

সামরিক শক্তির পরেই আসে অর্থনৈতিক শক্তি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের স্থান উচ্চতর হওয়ার ক্ষেত্রে  রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তি থাকা প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক থেকে যতটা শক্তিশালী হতে পারবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের গুরুত্ব তত বেশি হবে।  কারণ অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকলেই সেই রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে, অন্য কোনো রাষ্ট্রকে সাহায্য করতে পারবে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিতে, প্রযুক্তিবিদ্যা,বিজ্ঞান গবেষণা, শিল্প, বাণিজ্য

প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্রগতি করে আরো উন্নত হতে পারবে। এমনকি সেই পররাষ্ট্রনীতই সফল করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। এজন্যই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ।।

জনমত গঠনে শক্তিঃ

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনমত গঠনের শক্তি বলতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি রাষ্ট্রের  বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। যেই রাষ্ট্র নিজের স্বপক্ষে বিশ্ব রাজনীতিতে যত বেশি জনমত গঠন করতে সক্ষম হবে, সেই রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ততবেশি নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্বঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই আন্তর্জাতিক রাজনীতি চালিত হয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের ভূমিকা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্ষমতা বা শক্তি। 

আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা হলেও, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে। এবং দেখা গেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির শুধুমাত্র অধিক ক্ষমতা শালী অথবা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষমতার গুরুত্ব রয়েছে।।

রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণকারীঃ 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের শক্তি বা ক্ষমতা কে কেন্দ্র করে প্রতিটি রাষ্ট্রের স্থান নির্ণয় করা হয় যেমন ক্ষুদ্র শক্তি, মাঝারি শক্তি, বৃহৎ শক্তি,অতি বৃহৎ শক্তি ইত্যাদি। 

পররাষ্ট্র নীতির প্রধান লক্ষ্যঃ 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হয়,আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করার প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতা অর্জন করা। মর্গেন্থাও এর মতে, শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে।

বস্তুত ক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে তার অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ছোট-বড় প্রতিটি রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা অর্জন করা।।

প্রশ্নঃ- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো। বা, জাতীয় ক্ষমতার মূল উপাদান গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠ করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার বিচার বিশ্লেষণ করা। পামার, পারকিন্স হার্টম্যান ও ফ্রাঙ্কেল প্রমুখ একটি রাষ্ট্রের জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার উপাদান গুলিকে মূলত ছয় থেকে সাত ভাগে ভাগ করেছেন।

একটি রাষ্ট্রের শক্তি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রধান উপাদান গুলির মধ্যে সেই রাষ্ট্রের ভৌগলিক উপাদান, জনসংখ্যা,প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক সামর্থ্য, সামরিক ব্যবস্থা, সরকারের প্রকৃতি জাতীয় চরিত্র বা জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আত্মবিশ্বাস, কূটনীতি ইত্যাদি উপাদানগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।।

জাতীয় শক্তি বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা বা শক্তির ক্ষেত্রে ভৌগলিক উপাদানঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ মর্গেনথাও বলেছেন 'ভৌগলিক উপাদান হলো এমন একটি উপাদান যার উপরে কোনো জাতীয় শক্তি নির্ভরশীল'. প্রতিটি রাষ্ট্রের শক্তি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভৌগলিক উপাদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগলিক উপাদান এর মধ্যে রয়েছে চারটি উপাদান। যথা- রাষ্ট্রের অবস্থান, রাষ্ট্রের আয়তন,  ভূপ্রকৃতি এবং জলবায়ু।

• ভৌগলিক অবস্থানঃ

অনুকূল ভৌগলিক অবস্থান একটি রাষ্ট্রকে বিভিন্ন দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করে। একটি রাষ্ট্রের চারিদিকে যদি সমুদ্র থাকে বা জলরাশি থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা মোটেও সহজ হবে না। এবং সে রাষ্ট্রটি সাধারণভাবেই নৌ শক্তির দিক থেকে শক্তিশালী হবে। ঠিক একইভাবে যদি একটি রাষ্ট্র পাহাড়-পর্বতে ঘেরা থাকে তাহলে সে রাষ্ট্রটিও পাহাড় পর্বতের উপর ভিত্তি করেউ সেটি নিজেকে অন্য ভাবে শক্তিশালী করে তুলবে। 

• রাষ্ট্রের আয়তনঃ

একটি রাষ্ট্রের নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে গেলে সেই রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আয়তন সেক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ একটি রাষ্ট্রের ভৌগলিক আয়তন যত বেশি হবে, সেখানে শিল্পের প্রসার,কৃষি জমির আয়তন বৃদ্ধি, বনজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের  পরিমাণ ততো বেশি হবে।

• জলবায়ুঃ

এক রাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে বা একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা স্বাভাবিক থাকার ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের জলবায়ু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ুর মানুষের বসবাসের উপযোগী না হলে,তাদের শিল্প,বাণিজ্য কৃষি ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুবিধাজনক না হলে সেই রাষ্ট্র কখনোই উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না। এবং এর ফলে সেই রাষ্ট্র কখনোই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না।।

• ভূপ্রকৃতিঃ

এক রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি-শিল্প যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের ভূপ্রকৃতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। একটি রাষ্ট্রের ভূপ্রকৃতি যদি পাহাড়, পর্বত,  মরুভূমি, ঘন অরণ্য, নদী, সমূদ্রে ঘেরা থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই রাষ্ট্রটি অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে।।

একটি রাষ্ট্রের জাতীয় ক্ষমতা বা শক্তির ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের জনসংখ্যাঃ

একটি রাষ্ট্রের জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের জনসংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কারণ একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা তত বেশি হবে, সেই রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা অথবা সেই রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে থাকে প্রধানত করে রাখা অন্যান্য রাষ্ট্রের পক্ষে ততোই কঠিন হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে শক্তির ক্ষেত্রে জনসংখ্যা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সেই রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক, জাতীয়তাবোধ,দেশ প্রেম, সঠিক শিক্ষা,  আধুনিক মানসিকতা,জাতীয় ঐক্য ও সংহতি  ইত্যাদিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদঃ 

রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে প্রধানত বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদের শক্তিকেই বোঝানো হয়। বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ গুলির মধ্যে প্রধান হলো খনিজ তেল,  ইউরোনিয়াম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি। যে সব রাষ্ট্রের অন্তরে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ গুলি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে,  সেই রাষ্ট্রগুলির স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় শক্তিশালী। 

কারণ বর্তমানে সকল রাষ্ট্রের কাছে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে, তাদের থেকে যখন এই সমস্ত সম্পদ অন্য রাষ্ট্র আমদানি করে থাকে, তখন সেই রাষ্ট্রগুলি অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর বিভিন্ন ধরনের পররাষ্ট্রনীতির চাপিয় দেয় এবং এর ফলে যেই সমস্ত রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন উপাদান আমদানি করে থাকে, তাদের আমদানিকারী রাষ্ট্রের বিভিন্ন শর্ত গুলি মেনে চলতে হয় এবং এভাবেই তারা ক্ষমতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে।।

জাতীয় ক্ষমতা ও শক্তির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সামর্থ্যঃ 

অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র কখনোই যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভয় পায় না। কারণ যুদ্ধে যেই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে, সেই ক্ষয়ক্ষতির অনেকটাক মিটিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষমতা তার থাকে। যেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যতো মজবুত হবে, সেই রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য,শিল্প, সংস্কৃতি,কৃষি,শিক্ষা, প্রযুক্তি বিদ্যা, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ততো বেশি অগ্রসর হবে।

এবং এই সমস্ত দিকে অগ্রসর হওয়ার ফলে সেই রাষ্ট্রটি তত বেশি উন্নত হয়ে উঠবে এবং এভাবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রটি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের পরিণত হয়। কিন্তু যেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শক্তিশালী নয়, সেও রাষ্ট্রটি কখনোই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না।।

জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে সামরিক ব্যবস্থাঃ 

বর্তমানে একটি রাষ্ট্রের যদি খুব শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্রটির আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হয় না। কারণ একটি রাষ্ট্রের যদি শক্তিশালী নৌবাহিনী, আকাশ বাহিনী এবং স্থলসেনা না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্রটি কখনোই নিজের অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হবে না। তিন প্রকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি 

রাষ্ট্রের থাকা চাই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, মারণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমা।।আধুনিক বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত না হলে একটি রাষ্ট্রের পক্ষে শক্তিশালী বা ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব নয়।

জাতীয় ক্ষমতা বা শক্তির ক্ষেত্রে সরকারের প্রকৃতিঃ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশারদ হ্যান্ড জে মর্গেন্থাও এর মতে, একটি উৎকৃষ্ট সরকার ছাড়া পররাষ্ট্রনীতির সার্থক রূপায়ন সম্ভবপর নয়। একটি রাষ্ট্রের শক্তিশালী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কার্যকরী সরকার জনগণের সমর্থনে গঠিত হয় এবং জনগণের পক্ষে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করে সেই সরকার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উন্নতি ঘটায়। ফলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার গৃহযুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি হয় না এবং সেইসঙ্গে সেই রাষ্ট্রের সর্বপ্রকার উন্নয়ন ঘটার ফলে, সেটি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।।

জাতীয় নেতৃত্বঃ

অনেকেই জাতীয় শক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে জাতীয় নেতৃত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাদের মতে সুযোগ্য,দূরদর্শী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃত্ব জাতীয় শক্তির উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  কারণ সুযোগ্য,দূরদর্শী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃত্ব জাতীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতিকে মর্যাদামন্ডিত ও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

নেতৃত্ব দূরদর্শী ও সুদক্ষ হলে দেশের ভৌগলিক অবস্থান আয়তন,জনসংখ্যা,প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক সামর্থ, সামরিক শক্তি ইত্যাদি বিচার বিবেচনা করে নিজের সামর্থের ভিত্তিতে এমন পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করেন যা নিশ্চিত সাফল্য লাভ করে ম এবং এভাবেই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। 

জাতীয় ক্ষমতা বা শক্তির ক্ষেত্রে কূটনীতিঃ 

হ্যান্স মরগেনথাউ জাতীয় শক্তির উপাদানগুলির মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে ‘অস্থায়ী’ ('unstable') হলেও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে 'কূটনীতির উৎকর্ষ' ('quality of diplomacy)-কে চিহ্নিত করেছেন। একটি দেশের সরকার যে-পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে, তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কূটনীতিবিদদের ওপর। শান্তির সময়ে একটি জাতির পররাষ্ট্রবিষয়ক আচরণের ওপর তার জাতীয় শক্তির হ্রাসবৃদ্ধি যথেষ্ট পরিমাণে নির্ভরশীল।

বলা বাহুল্য, এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে অবস্থানকারী রাষ্ট্রদূতদের ওপর। যে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের দেশের সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ়করণ; বিদেশে নিজ দেশের সরকারের গৃহীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতির যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান এবং সে বিষয়ে জনমত গঠন, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, কারিগরি, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে আদানপ্রদান বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন ও প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ; পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ও উপায় (ends and means)- এর মধ্যে সমন্বয়সাধন প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি তাঁরাই সম্পাদন করেন। জাতীয় সরকারের দুর্বলতা পূরণের ক্ষেত্রে সুদক্ষ কূটনীতিবিদরা থেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

এমনকি, স্বদেশের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন কোনো রাষ্ট্রের মনোভাব রিবর্তনের মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও কূটনীতিবিদদের বিশেষ ভূমিকা পালন ভরতে দেখা যায়। এইসব কারণে মর্গেনথাউ কূটনীতিকে 'জাতীয় শক্তির মস্তিষ্ক’ (“The brain of national power) বং পামার ও পারকিস কূটনীতিবিদদের নিজ নিজ দেশের ‘চক্ষু ও কর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

প্রশ্নঃ- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও পরিধি বিশ্লেষণ করো।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতিঃ 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই এইচ কার তার টুয়েন্টি ইয়ার্স ক্রাইসিস গ্রন্থে বলেছেন, দীর্ঘকাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল বিষয় ছিল যুদ্ধ প্রতিরোধের উপায় অনুসন্ধান। অন্যদিকে লারকে এবং সৈয়দ এই অভিমত পোষণ করতেন যে,  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ছিল মূলত কূটনৈতিক ইতিহাস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতির আমূল পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজের পরিবর্তন ধারাকে অনুসরণ করেছে।।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধিঃ 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারাবাহিক চর্চা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি নির্দিষ্ট আলোচ্য সূচী তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচ্যসূচি দ্রুত পরিবর্তনশীল।

সাধারণ অনুমান ও বিধিঃ

একটি স্বতন্ত্র বিষয়ের ক্ষেত্রে যেভাবে তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ অনুমান  ও বিধি গড়ে তোলা হয়, সেই পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।।

নয়া বিশ্বব্যবস্থাঃ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক সমাজ এবং রাজনীতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হওয়ার ফলে পুরনো জাতীয় রাষ্ট্র নতুন রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। অসংখ্য আন্তরাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সমাজকে প্রভাবিত করে চলেছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের ইচ্ছায় বা অপরের চাপের ফলে আঞ্চলিক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছে। 

1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এবং ঠান্ডা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটায় এক মুখে বিশ্ব গড়ে উঠেছে। নয়া বিশ্বব্যবস্থায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারিং ফান্ড প্রভৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বায়নের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনৈতিক দ্রুত পথ পরিবর্তন হয়ে চলেছে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিঃ 

অন্যান্য স্বতন্ত্র শাস্ত্রের মতো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলোচনার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রবণতা দেখা গেছে। এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলোচনার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, গেম থিওরি,ভারসাম্য তত্ত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কে তথ্য প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ভৌতবিজ্ঞান,পদার্থবিদ্যা,রসায়ন বিদ্যার মত প্রকৃত বিজ্ঞানের মর্যাদা লাভ না করতে পারলেও,এটিকে নিঃসন্দেহে একটি গতিশীল সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা যায়।।

প্রশ্নঃ- জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে জাতীয় স্বার্থ কত প্রকার এবং কি কি

উওরঃ জাতীয় স্বার্থ বলতে একটি জাতির সর্বনিম্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহকে বোঝায়, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহকে পূরণ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বাকার্য সম্পন্ন করে থাকে,তাকে বলে জাতীয় স্বার্থ বলে। 

টমাস রবিনসন জাতীয় স্বার্থকে মূলত ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা মুখ্য জাতীয় স্বার্থ,গৌণ জাতীয় স্বার্থ, স্থায়ী জাতীয় স্বার্থ,পরিবর্তনশীল জাতীয় স্বার্থ, সাধারণ জাতীয় স্বার্থ ও সুনির্দিষ্ট জাতীয় স্বার্থ।।

মৌলিক বা মুখ্য স্বার্থঃ 

যে সমস্ত স্বার্থের ওপর মূলত কোনো একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নির্ভর করে,সে সমস্ত স্বার্থকেই মৌলিক স্বার্থ বলে। যদি কোনো রাষ্ট্র সেই সমস্ত স্বার্থ গুলিকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে সেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। সেই কারণে প্রতিটি রাষ্ট্র মৌলিক বা মুখ্য স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যে কোন মুল্য দিতে পারে। এমনকি মৌলিক বা মুখ্য স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে অপর এক রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকে।  মৌলিক বা মুখ্য স্বার্থ গুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সীমানা গত, রাজনৈতিক ইত্যাদি স্বার্থ রয়েছে।।

গৌণ জাতীয় স্বার্থঃ 

রাষ্ট্রের গৌণ জাতীয় স্বার্থ বলতে সেই সমস্ত স্বার্থকে বোঝায় যেগুলি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় কিন্তু তবুও রাষ্ট্র সেই সমস্ত জাতীয় স্বার্থ গুলিকে সংরক্ষিত করে থাকে। যেমন কূটনৈতিক কর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বিদেশী কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি হচ্ছে গৌন স্বার্থের উদাহরণ।।

স্থায়ী জাতীয় স্বার্থঃ

যে সমস্ত স্বার্থ পরিবর্তনশীল নয় অথবা দীর্ঘমেয়াদি বা সেগুলো পরিবর্তন হলেও অত্তন্ত ধীরে ধীরে হয়, ধরনের স্বার্থকেই একটি রাষ্ট্রের স্থায়ী জাতীয় স্বার্থ হিসেবে নির্দিষ্ট করা যায়। অপর একটি রাষ্ট্রের ওপর বিভিন্ন ভাবে নিজের প্রভাব সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা হলো স্থায়ী জাতীয় স্বার্থের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।।

পরিবর্তনশীল জাতীয় স্বার্থঃ 

পরিবর্তনশীল জাতীয় স্বার্থ হলো সেই সমস্ত স্বার্থ যা বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো রাষ্ট্রের জাতীয় কল্যাণের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে হিসেবে বিবেচিত হয়।। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এই ধরনের স্বার্থেরও পরিবর্তন ঘটে থাকে সেই কারণে এই ধরনের জাতীয় স্বার্থকে পরিবর্তনীয় জাতীয় স্বার্থ বলে। সাধারণভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ, বিদেশি নীতি-নির্ধারকদের ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি ধরণের স্বার্থ নির্ধারিত হয়ে থাকে।

সাধারণ জাতীয় স্বার্থঃ 

সাধারণ জাতীয় স্বার্থ বলতে একটি রাষ্ট্রের সেই সমস্ত স্বার্থকে বোঝায় যে,  সমস্ত জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার রাষ্ট্র তার গুরুত্ব অনুযায়ী নির্ধারণ করে।  ইতিবাচক শর্তযুক্ত এই ধরনের জাতীয় স্বার্থ বহুসংখ্যক রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে যুক্ত হতে পারে। যেমন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বার্থ সমান ভাবে যুক্ত থাকে।।

সুনির্দিষ্ট জাতীয় স্বার্থঃ 

নির্দিষ্ট স্থান এবং সময়ের মানদণ্ডে সাধারণ জাতীয় স্বার্থের যুক্তিসঙ্গত সম্প্রসারণে নির্ধারিত স্বার্থগুলোকে সুনির্দিষ্ট জাতীয় স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বিকাশ শীল দেশগুলির সাধারণ স্বার্থ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো প্রচেষ্টা হলো সুনির্দিষ্ট জাতীয় স্বার্থের উদাহরণ।। 

প্রশ্নঃ- জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়গুলি সম্পর্কে লেখো

উওরঃ জাতীয় স্বার্থ হলো এমন একটি বিষয় যার কোন সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত যে সমস্ত সংজ্ঞা রয়েছে সেই সংজ্ঞাগুলিকে বিচার-বিশ্লেষণ করে বা সেগুলো সমন্বয় করে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে যে সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তা হলো-

জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতির সেই সমস্ত সর্বনিম্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহকে বোঝায়,যেই সমস্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে  পূরণ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বা কার্যকলাপ করে থাকে, তাকে বলা হয় জাতীয় স্বার্থ বলে।।

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পদ্ধতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা-  

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পদ্ধতিঃ জাতীয় স্বার্থ মূলত পাঁচটি উপায় রক্ষিত হয়ে থাকে। যথা - কূটনীতি,প্রচার, বলপ্রয়োগ, জোট গঠন এবং অর্থনৈতিক ঋণ প্রদান ও সাহায্য। 

কূটনীতিঃ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায় হলো কূটনীতি। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা নিজেদের সরকারের গৃহীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং জনগণের সামনে এমনভাবে প্রকাশ করেন যে,তা যেন সেই রাষ্ট্রপ্রধান এবং জনগণের কাছে সমর্থন লাভ করে। নিজেদের দেশে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কূটনীতিবিদরা মূলত তিনটি পদ্ধতি অনুসরন করে থাকেন। যথা- বিশ্বাস উৎপাদন,আপসরফা এবং বলপ্রয়োগের ভীতিপ্রদর্শন।।

প্রচারঃ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা। যেমন বেতার, দূরদর্শন সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি প্রচার করে থাকে। প্রতিটি রাষ্ট্র জাতীয় স্বার্থ বিশেষত পররাষ্ট্রনীতির স্বপক্ষে অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণের সরকার এবং জনগণকে প্রভাবিত করার জন্য প্রচারের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।।

জোট গঠনঃ 

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে  রাষ্টগুলি অনেক সময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে জোট গঠন করে। জোট গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সহায়তা করার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে। 

অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদানঃ

উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে অনুন্নত এবং আর্থিক দিক থেকে দুর্বল উন্নতিকামক দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সাহায্য এবং ঋণ প্রদান করে এই ঋণ প্রদানের পেছনে উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঋণগ্রহণকারী রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করা।। 

বল প্রয়োগঃ 

বল প্রয়োগ বলতে সামরিক শক্তির প্রয়োগকে বোঝায়। বিভিন্ন রাষ্ট্র অনেক সময় তাদের জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অপর একটি রাষ্ট্রের ওপর বল প্রয়োগ করে থাকে বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। যেমনটা 1956 সালে কাশ্মীর দখলের জন্য পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছিল। এখানে পাকিস্তান তার জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভারতের ওপর বল প্রয়োগ করেছিল।।

উপসংহার,  নিজের জাতীয় স্বার্থ 

রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি রাষ্ট্র উপরিক্ত উপায় গুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক উপায় অনুসরণ করতে পারে। তবে নিজেদের জাতীয় স্বার্থের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিটি রাষ্ট্রকে নিজেদের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা উচিত এবং বলপ্রয়োগের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেই নীতি অনুসরণ করা উচিত। অন্যথায় সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রশ্ন দাড়িয়ে পরবে।। 

প্রশ্নঃ পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা || জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকাঃ জাতীয় স্বার্থের অর্থ নিয়ে অস্পষ্টতাজনিত বিতর্ক থাকলেও এখনও পর্যন্ত এর কোনো বিকল্প নেই বলে ফ্রাঙ্কেল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রই মূলত নিজেদের জাতীয় স্বার্থের উপর ভিত্তি করেই নিজেদের বিদেশ নীতি বা পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারণ করে থাকে।

জাতীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাঃ- 

প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থের উপাদান গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার। ক্ষুদ্র বৃহৎ প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। কারণ দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা অক্ষুন্ন না থাকলে সেই দেশটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি লাভ করে না। তাই কোনো রাষ্ট্রই কখনোই এমন কোনো পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে না যার মাধ্যমে তাদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা ভঙ্গ হবে।

তাই প্রত্যেক রাষ্ট্রই তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সর্বতোভাবে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।। দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকেই নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হয়। এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতি রাষ্ট্রকেই আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়। সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার পর প্রতিটি রাষ্ট্র জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক পররাষ্ট্রনীতির গ্রহন করে।।

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণেজাতীয় উন্নয়নঃ- 

প্রতিটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণের অন্যতম লক্ষ হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই প্রয়োজন জাতীয় উন্নয়ন। জাতীয় স্বার্থের এই দিকটির উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়। প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

রাষ্ট্রের জাতীয় উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বোঝায় না সেইসঙ্গে শিল্পউন্নয়নকেও বোঝায়।। যেমনটি একটি কৃষি প্রধান দেশের উৎপন্ন কৃষিপণ্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর রাষ্ট্র সেই সমস্ত পণ্য অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে। এর ফলে তাদের মধ্যে যে পরনীতি গৃহীত হয় তার মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সেইসঙ্গে রপ্তানিকৃত দ্রব্যসামগ্রী থেকে যে সমস্ত অর্থ সংগ্রহ হয় তার মাধ্যমে সেই রাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম করতে পারে। এবং এভাবেই জাতীয় উন্নয়ন ঘটে।।

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে বিশ্বব্যবস্থাঃ- 

বর্তমানে বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য অনেক সময় সামরিক শক্তির প্রয়োগ করে থাকে বা প্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে। যার ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রকৃতিগতভাবে আগ্রাসী ও ভীতিপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং বিশ্বসমাজে ধ্বংসের পথ সৃষ্টি হয়।। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

এবং এই বিশ্বব্যবস্থা তখনই গড়ে উঠবে যখন প্রত্যেক রাষ্ট্রই এমন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করবে যার মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ,আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা দূর হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তাই প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন করা যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে।। 

বিশ্ব জনমত গঠনঃ-

বর্তমানের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিশ্ব জনমত গঠনের। অনেক সময় সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্ব জনমত গঠনের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল।

সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাসবাদ কবলিত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিশ্ব জনমত গঠনের প্রয়াস করে চলেছে। 2011 সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পর পাক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বৃহৎ শক্তির কাছে ভারত বারেবারে মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের স্বরুপ তুলে ধরেছে। 

আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণঃ- 

প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ পূরণ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি দেশ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সংগঠনের কতখানি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে তার ওপর সেই দেশের জাতীয় স্বার্থ পূরণের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে থাকে।

বর্তমানে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। সেখানে জাতীয় স্বার্থ পূরণের বিষয়টি একটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। উদাহরণ হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এশিয়ান সার্ক, আফ্রিকান ঐক্য প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। এই সমস্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের জাতীয় স্বার্থ পূরণ হয়ে থাকে।

জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে নিরস্ত্রীকরণঃ- 

বর্তমানে যে সমস্ত শক্তিশালী রাষ্ট্র রয়েছে সেই সমস্ত রাষ্ট্রপতি মূলত একসময় নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পারমানবিক বোমা আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু সময় এগিয়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে এখন পারমানবিক বোমা রয়েছে এবং পারমাণবিক বোমা থাকায় বতর্মান বিশ্ব এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে রয়েছে।কারণ যদি কোনভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে অনেক রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে এবং এর ফলে বিশ্ব ধ্বংস হতে বাধ্য।

তাই বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সমস্ত কথা উপলব্ধি করতে পেরেই শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি তাদের জাতীয় স্বার্থেই - নিরস্ত্রীকরণ, পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের প্রসার রোধ, মারণাস্ত্রের সীমিতকরণ প্রভৃতির সঙ্গে যুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমন, পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে মত ঐক্যের কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলতে শুরু করেছে। এই ভাবে অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার ফলে প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থই সংরক্ষিত হবে বলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি মনে করে।।

প্রশ্নঃ বিশ্বায়ন কাকে বলে বা বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও। বিশ্বায়নের প্রকৃতি অথবা রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো

বিশ্বায়ন কাকে বলে? বা বিষয় বলতে কি বোঝায় বা বিশ্বায়নের সংজ্ঞাঃ- 

বিশ্বায়ন কাকে বলে বা বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝায় বা বিশ্বায়নের কোনো সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। 

জোসেফ স্টিগলিৎস এর মতে বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এমন এক ঘনিষ্ঠতর সংহতি সাধন যা পরিবহন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইস্বাভাবিকভাবে ব্যয় হ্রাস করেছে। এবং দ্রব্যসামগ্রী, জ্ঞান, পুজি এমনকি মানুষের বিশ্বব্যাপী অবাধ যাতায়াতের ওপর আরোপিত সমস্ত কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা কেউ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।। 

খুব সংক্ষেপে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিতে গেলে বলা যায়, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি বিষয় যাতে রাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবাধ বিশ্বব্যাপী আদান-প্রদান চালানো হয়, তাকে বিশ্বায়ন বলে।।

• খুব সহজভাবে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের বিস্তার। এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মুক্ত বা খোলা বাজার।

এটি হলো এমন একটি অর্থনীতি বিষয়ক প্রক্রিয়া যা সমগ্র বিশ্বকে একটি উন্মুক্ত বাজারে পরিণত করতে চায় এবং যেখানে দেশের বাজার এবং বিশ্বের বাজারে মধ্যে কোনো বাধার প্রাচীর থাকবেনা। কোন দেশে যে জিনিস ভালো উৎপাদন করা হবে সেই দেশ সেই উৎপন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করবে এবং বিদেশি মুদ্রা রোজগার করবে। এবং সেই দেশ যা উৎপন্ন করতে পারবেনা সেই জিনিসগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। অর্থাৎ এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির এক সম্পর্ক স্থাপন করে।।

বিশ্বায়নের প্রকৃতি অথবা রূপ সম্পর্কে আলোচনাঃ-

বিশ্বায়নের বিভিন্ন সংজ্ঞাকে আমরা বিশ্লেষণ করলে অথবা বিশ্বায়নের প্রকৃতিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা বিশ্বায়নের কয়েকটি রূপের সন্ধান পাই। যেমন - 

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নঃ- 

বিশ্বায়ন সমগ্র বিশ্বজুড়ে একই ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় বর্তমানে সমস্ত দেশের অর্থনীতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমিও কুমার বাগচী আর্থিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর মতে আর্থিক বিশ্বায়ন হলো - 

• আর্থিক বাণিজ্যের প্রসার। 

• বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে লোকজনের অভিগমন ও নির্গমন। 

• বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থ ও অন্যান্য বিনিময় মাধ্যমে সঞ্চারণ।

• এক দেশের পুঁজি অন্য এক দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে শিল্পজাত দ্রব্য, কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট দেশে কিংবা অন্য দেশে বিক্রয়ের প্রভাব সৃষ্টি। 

• এক দেশ থেকে অন্য দেশে পুজি লগ্নির প্রধান আদান প্রদান।

•  আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা গুলিকে বানিজ্য-বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা প্রদান।

•  বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রযুক্তির আদান-প্রধান এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্যমাধ্যমের বিস্তার বিভিন্ন দেশের তথ্য ওপর বৈদ‍্যতিন প্রযুক্তির প্রয়োগ।।

রাজনৈতিক বিশ্বায়নঃ- 

রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন হলো জাতি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। জাতিরাষ্ট্র বলতে বোঝায় প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের শ্রম এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের ক্ষেত্রে পুঁজির অবাধ মুনাফা ও অবাত লুন্ঠনের উপর বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি যেটা চায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমন এক বাণিজ্য সম্পর্ক বা আদান-প্রদানের সম্পর্ক গড়ে তুলতে যেখানে রাষ্ট্রের কোনো প্রকার সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।।

তাই বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। কিন্তু বিশ্বায়নের প্রবক্তারা জাতি-রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিলোপ সাধন করতে না চাইলেও তারা এমন একটি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পক্ষপাতি যা পুঁজিপতি শ্রেণীর একচেটিয়া সম্পত্তিও ও একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার রক্ষার প্রয়োজনে সীমাহীন হিংসার আশ্রয় গ্রহণ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এইভাবে বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কমিয়ে দেয়।। কিন্তু এরপরও বিশ্বায়ন বিস্ময়করভাবে স্বায়ত্তশাসনের নানাবিধ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে আগ্রহী।।

বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক দিকঃ- 

বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর সাংস্কৃতিক দিক। বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা সমগ্র বিশ্বে একই ধরনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায়। ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে এরুপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার কাজে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো আত্মনিয়োগ করেছে। তারা সংস্কৃতিক প্রবাহকে জাতিরাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।এর ফলে এক দেশের মানুষ স্বল্প ব্যয়ে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে। এবং উন্নত সংস্কৃতির সাহায্যে নিয়ে নিজেদের পুরোনো সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে বলে বিশ্বায়নের প্রবক্তারা দাবি করেন।।

প্রশ্নঃ বিশ্বায়ন কী? বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।।

বিশ্বায়ন হলো এমন একটি বিষয় যাতে রাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবাধ বিশ্বব্যাপী আদান-প্রদান চালানো হয়, তাকে বিশ্বায়ন বলে।।

• খুব সহজভাবে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের বিস্তার। এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মুক্ত বা খোলা বাজার। এটি হলো এমন একটি অর্থনীতি বিষয়ক প্রক্রিয়া যা সমগ্র বিশ্বকে একটি উন্মুক্ত বাজারে পরিণত করতে চায় এবং যেখানে দেশের বাজার এবং বিশ্বের বাজারে মধ্যে কোনো বাধার প্রাচীর থাকবেনা।

বিশ্বায়নের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনাঃ- 

বিশ্বায়নের কতগুলি অপরিহার্যভাবে ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন -

বাণিজ্য শিল্প ও সংস্কৃতির প্রসারঃ- 

বিশ্বায়ন কথার মূল অর্থই হলো বাণিজ্য, শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রসার। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উন্নয়নশীল বা উন্নয়নকামী দেশগুলিতে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বাণিজ্য,শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটায়। 

বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতি সাধনঃ-

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জোসেফ স্টিগলিৎস বলেছেন, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সংগতি সাধন করে।। বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সংহতি গড়ে তুলতে চায়। বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই একাকী বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্বায়ন এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র গড়ে তুলতে চায়।।

পারস্পরিক নির্ভরশীলতাঃ- 

বিশ্বায়ন সচেতনভাবে সমগ্র বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলার পক্ষপাতী। বিশ্বায়নের মাধ্যমে যে সমস্ত দেশ বা রাষ্ট্র যে সমস্ত জিনিসপত্র উৎপাদন করতে সক্ষম নয় সেগুলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে অবাধ আদান-প্রদানের মাধ্যমে তারা পেতে পারে। ঠিক একই ভাবে তাদের উৎপাদিত জিনিসপত্রগুলিও বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারে।। এভাবে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর একটি রাষ্ট্রের বা সংস্থার পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।।

পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচলঃ- 

বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আধুনিক বিশ্বের পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচল। বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দেশের পুঁজি শুধুমাত্র তার নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বায়নের যুগে পূজি, প্রযুক্তি ও কারিগরি কৃৎকৌশল কোনো একটি দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তা বিভিন্ন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।। 

বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্যঃ- 

বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বেই বহুজাতিক সংস্থা গুলি সেই দেশ গুলিকে এমন কিছু শর্ত প্রদান করে যার মাধ্যমে সেই দেশ গুলোকে নিজের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হয়। যেমন সংস্থাগুলির জন্য দেশের বাজার উন্মুক্ত করা,তাদের অর্থনীতিতে বাজারে বহুজাতিক সংস্থা গুলির পুঁজির অবাধ যাতায়াতের পথ মসৃণ করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ইত্যাদি।। 

মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠাঃ- 

বিশ্বায়নের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো,বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া এমন একটি মুক্তবাজার বা মুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বিশ্বায়ন সারা বিশ্বের বাজারকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে চায় যেখানে উন্নত দেশগুলি ও বহুজাতিক সংস্থা গুলি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে শিল্প বাণিজ্যে প্রসার ঘটাতে পারবে।।

রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌমত্বের পরিবর্তনঃ- 

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া হল জাতি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। জাতি রাষ্ট্র হল, কোনো দেশ নিজেদের শ্রম এবং জনসাধারণের কল্যাণের জন্য পুঁজির অবাধ মুনাফা ও লুন্ঠনের ওপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন সেই বাধা নিষেধকে মুক্ত করতে চায়।। তাই সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অনেকটাই রাস পায়।

উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবঃ- 

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার একটি খারাপ দিক হল এটি অনুন্নত বা উন্নতশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। কারণ উন্নত দেশগুলি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বহুজাতিক সংস্থা গুলির বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করার ফলে, সেই দেশের বেকারত্ব, শ্রমিক ছাটাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অসক্রিয়তা দেখা দেওয়ার ফলে দেশে দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি পায়। ফলে আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।।

প্রশ্নঃ বিশ্বায়নের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ বিশ্বায়নের প্রবক্রারা বিশ্বায়নকে সংহতি ও সংযুক্তি সাধনের এক স্বাভাবিক ও মহান প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বায়নের ফলে মূলত উন্নত দেশগুলি আরো উন্নত হয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া মূলত বাণিজ্যে-শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নত রাষ্ট্র এবং বহুজাতিক সংস্থা গুলির নয়া সাম্রাজ্যবাদী নীতি। কিন্তু অপরদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ফলাফল গুলিকর মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ফলাফলঃ- 

বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড,ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বায়নের প্রবক্তারা বিশ্বব্যাপী লগ্নিপুঁজি সম্প্রসারণের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে শোষণ করার চেষ্টা করে। ঋণগ্রহণকারী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থা গুলির কাজ থেকে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বেই সেউ সংস্থাগুলো সেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন কিছু শর্ত প্রদান যার মাধ্যমে সেই দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।।

এছাড়াও উন্নত দেশগুলি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বহুজাতিক সংস্থা গুলির বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করার ফলে, সেই দেশের বেকারত্ব, শ্রমিক ছাটাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অসক্রিয়তা দেখা দেওয়ার ফলে দেশে দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি পায়। ফলে আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।। 

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবঃ- 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের দিক থেকে অনুন্নত দেশগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজের শ্রম এবং জনসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে পুঁজির অবাধ মুনাফা লুণ্ঠনের উপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রকে অকেজো করে তোলার পক্ষপাতী। বিশ্বায়ন এমন এক উন্মুক্ত বিশ্ববাণিজ্য বাজার গড়ে তোলার পক্ষপাতী যেখানে রাষ্ট্রের সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাই এক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়।।

পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ- 

বিশ্বায়নের সবচাইতে খারাপ দিকটি হলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অননন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সেই সমস্ত শিল্প ও বাণিজ্য গড়ে তোলে, যেগুলো তারা নিজেদের দেশে স্থাপন করলে ক্ষতি হতে পারে। এর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলে যেগুলো তাদের নিজেদের পক্ষে ক্ষতিকর। 

এসব শিল্পের মধ্যে জৈব রসায়ন শিল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া কলকারখানার উৎপাদনের বর্জ্য ফেলে দেওয়ার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে পরিবেশ দূষিত হয়। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে পরিবেশ রক্ষা আইন যথেষ্ট কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলার কাজ করে থাকে।।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ- 

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নিজস্ব সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামো ও গণমাধ্যমের ওপর বহুজাতিক সংস্থাগুলির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পশ্চিমি ভোগবাদী সংস্কৃতি আজ ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করতে পেরেছে। এর ফলে বাড়ি, গাড়ি, জমি, টিভি, ফ্রিজ, এয়ার কুলার প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা একদিকে যেমন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি টিভি ও সিনেমার দৌলতে যৌনতা ও মাফিয়াতন্ত্রের পাশাপাশি হিংস্রতাকেও মানবসমাজের স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

তা ছাড়া, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফ্যাশন শো-র প্রদর্শনী, বিজ্ঞাপনে নারীর খোলামেলা শরীর প্রদর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে বিকৃত সংস্কৃতিকে প্রকৃত সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরার অন্তহীন প্রয়াস লক্ষ করা যায়। শিশু ও কিশোরকিশোরীদের মনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা সুস্থ জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথগামী হতে থাকে। বলা বাহুল্য, পাশ্চাত্যের এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের আসল লক্ষ্য হল মানুষের সমাজমনস্কতা ও বিপ্লবী চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়া।

উপসংহারঃ-

লগ্নি পুঁজির বিশ্বজয়ের অভিযানের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যাবে। কিন্তু ডেভিড হেল্ড শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কর্মকর্তারা যেখানেই নীতি নির্ধারণের জন্য সমবেত হয়েছেন, সেখানেই বিশ্বায়ন, উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নই যে শেষ কথা নয়, আগামীদিনের সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের ইতিহাসই তার প্রমাণ দেবে।

প্রশ্নঃ পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশি নীতিনির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা লেখ। 

ভূমিকাঃ

জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে কোনো সর্বজন গ্রাহ্য সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে অনেক সংজ্ঞা রয়েছে। সেউ সমস্ত সংজ্ঞাকে বিচার-বিশ্লেষণ করে জাতীয় স্বার্থের সম্পর্কে যে সংজ্ঞাটি পাওয়া যায়, তা হলো জাতীয় স্বার্থ হলো জাতির সেই সমস্ত নূন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেগুলোকে পূরণ করার জন্য অথবা চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।। মূলত একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিজেদের জাতীয় রাষ্ট্রকে চরিতার্থ করা অথবা জাতীয় স্বার্থ পূরণ করা।।

বিদেশ নীতি নির্ধারনে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকাঃ 

কোনো দেশের বিদেশ নীতি নির্ধারণের ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সেই দেশের জাতীয় স্বার্থ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলত প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে পূরণ করার জন্য বা চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে কোনো রাষ্ট্র বা কোনো দেশই নিজে থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে এবং নিজেদের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন বিদেশ নীতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু প্রত্যেক রাষ্ট্রই এমন ভাবে বিদেশ নীতি গ্রহণ করে যার মাধ্যমে সেই দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা,রুচি,সংস্কৃতি ইত্যাদি মূল্যবোধ জড়িয়ে থাকবে। এবং সেই সমস্ত কিছু সঠিক বিকাশের জন্যই তারা বিভিন্ন বিদেশ নীতি গ্রহণ করে থাকে।

কোনো রাষ্ট্র কখনোই এমন কোন বিদেশ নীতি গ্রহণ করে না যার মাধ্যমে যার মধ্যে তাদের জাতীয় স্বার্থ থাকবে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রই এমন ভাবে বিদেশ নীতি গ্রহণ করে যার মধ্য দিয়ে তাদের জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ বা তাদের জাতীয় স্বার্থ পূরণ হতে পারবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকরা এটা মনে করেন যে ন কোনো রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির মূল ভিত্তি হলো জাতীয় স্বার্থ। তাই রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি কখনোই জাতীয় স্বার্থের ধারণাকে অতিক্রম করে গড়ে উঠতে পারে না। 

কারণ আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের ধারণা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পৃথকভাবে দুটি সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল। সেই দুটি শক্তির মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষিত ও প্রসারিত করা। আবারও মার্কিন জোটের বাইরে অবস্থানকারী রাষ্ট্রগুলিও নিজেদের জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল। তাই প্রত্যেক রাষ্ট্রই এমনভাবে বিদেশ নীতি গ্রহণ করে যাদের মধ্যে তাদের জাতীয় স্বার্থ লুকিয়ে থাকবে এবং সব সময় তারা ঠিকমতো বিদেশ নীতি গ্রহণ করে তাদের জাতীয় স্বার্থ পূরণ করে।।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় (West Bengal Class 12 Political Science Question AnswerAnd Suggestion 2023) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের (West Bengal Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali) থেকে শেয়ার করা নোটস গুলো তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 political science question answer  | wb class xii political science question answer | hs political science question answer | wb hs political science question answer 2023 | west Bengal board political science question answer and suggestion 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top