|
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'সাম্প্রদায়িক বাটোয়ার নীতি কি? এর প্রেক্ষাপট এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো।' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
সাম্প্রদায়িক বাটোয়ার নীতি কি? এর প্রেক্ষাপট এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো।
উওরঃ- 1909 খ্রিস্টাব্দে মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইনের সময় থেকেই বা তার আগে থেকেই ভারতে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভাবধারা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এরপর 1930 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর আইন অমান্য আন্দোলনের সময়কালে ভারতে হিন্দু-মুসলিম এবং বিশেষ করে ভারতের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রেষারেষি বৃদ্ধি পায়। এরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন ধর্ম,জাতির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতিগত রেষারেষি টিকিয়ে রেখে ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে দমন করার জন্য 1932 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন।
এই নীতি অনুযায়ী ভারতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যেমন হিন্দু, মুসলিম, উচ্চবর্ণের হিন্দু এবং নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এবং পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের আইনসভায় তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 1932 খ্রিস্টাব্দে পাশ হওয়া এই নীতি সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির নামে পরিচিত।
সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি প্রণয়নেরঃ-
ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি প্রণয়নের পেছনে বেশকিছু কারণ ছিল। যেমন- 1930 খ্রিস্টাব্দের গান্ধীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। এতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য ইংল্যান্ডে পরপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
কংগ্রেস এই ধরনের গোলটেবিল বৈঠকে আপত্তি করলেও সে সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু বিশিষ্ট মাথা যেমন- মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ,আলী ভাতৃদ্বয়, আব্দুল কাদির, মোহাম্মদ শাফি প্রমুখ সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন করে।
প্রথম গোলটেবিল বৈঠকঃ-
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল যোগদান করে। বৈঠকে উপস্থিত জিন্না, আগা খাঁ, মহম্মদ শফি, মহম্মদ আলি, ফজলুল হক প্রমুখ মুসলিম লিগ নেতা সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের দাবি জানান এবং জানিয়ে দেন যে, যথার্থভাবে মুসলিমদের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে তাঁরা কোনো সংবিধানই মানবেন না।
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকঃ-
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেস যোগ দিলেও সরকারি প্ররোচনায় মুসলিম লিগ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের সাম্প্রদায়িক স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে অযৌক্তিক সীমাহীন দাবি জানায়। ফলে এই বৈঠকও শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং গান্ধিজি শূন্য হাতে ফিরে আসেন।
তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকঃ-
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে কংগ্রেস ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ না দিয়ে আইন অমান্য আন্দোলনে তীব্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা' নীতি ঘোষণা করে।
সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির প্রতিক্রিয়াঃ-
ব্রিটিশ সরকার মূলত ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে দমন করার জন্য এবং ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য এই সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেছিল।
সেইসঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয়দের কিছু আশা আকাঙ্ক্ষা পুরণেরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা পরেই এই আইন ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যেমনঃ-
মুসলিমদের স্বার্থরক্ষাঃ-
প্রথম গোল টেবিল বৈঠক থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু বিশিষ্ট মাথা তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা সরকারের ওপর বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে তাদের দাবি আদায় করার চেষ্টা করেছিল। সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কথা মেনে নিয়েই ভারতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের যাবতীয় দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়। ফলে এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি ইতিবাচক দিক ছিল।
দলিত শ্রেণীর দাবি পূরণঃ-
তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকে দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ডঃ বি.আর.আম্বেদকর দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর দাবি মেনে পৃথক ভারতে উচ্চবর্ণের হিন্দু এবং নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
গান্ধীজীর প্রতিক্রিয়াঃ-
তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকের পর ভারতে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে গান্ধীজী এই সিদ্ধান্তে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হন। তিনি এই নীতির বিরোধিতা করে 1932 খ্রিস্টাব্দে এর জাবেদা জেলে 20 সেপ্টেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে গান্ধীজীর জীবন সংশয় দেখা যায় তাই এই বিষয়টি ভারতে অত্যন্ত চাপের হয়ে ওঠে।
গান্ধীজির সঙ্গে ডঃ বি আর আম্বেদকরের পুনা চুক্তিঃ-
জারবেরা জেলে আমরণ অনশন শুরু করার ফলে বিষয়টি যেহেতু ভয়ানক দিকে মোড় নিতে শুরু করে, সেকারণেই দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ডঃ বি.আর.আম্বেদকর গান্ধীজির সঙ্গে 1932 খ্রিস্টাব্দে পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এই চুক্তির তিনি মাধ্যমে ভারতে দলিত শ্রেণীর বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন। অন্যদিকে গান্ধীজিও দলিত সম্প্রদায়ের কথা ভেবে আইন সভায় তপশিলি জাতির জন্য অধিক সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করার কথা বলেন।
পৃথক পাকিস্তান গঠনের দাবিঃ-
সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার পর থেকেই ভারতে মুসলিম লীগ মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক পাকিস্তান গঠনের দাবি জানাতে শুরু করে। 1933 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী এবং তার অনুগামীরা "এখনো অথবা কখন না" শীর্ষ চার পাতার এক পুস্তিকায় ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত পাঁচটি প্রদেশ - পাঞ্জাব,আফগান প্রদেশ,কাশ্মীর, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান নিয়ে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানাতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই এই দাবি জোরালো হয়ে ওঠে এবং মূলত এখান থেকেই পৃথক পাকিস্তানের গঠনের দাবি চলতে থাকে।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে সাম্প্রদায়িক বাটোয়ার নীতি কি? এর প্রেক্ষাপট এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো।' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | wb class 12 History question answer | hs History question answer