দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন ও সাজেশন |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ History MCQ Question Answer,Class 12 History Long Question Answer And History Notes তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের mcq প্রশ্ন উত্তর নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি পোস্ট করা হবে যেখানে এই অধ্যায়ের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোমাদের দেওয়া হবে।।
WB Class 12 History Question Answer And Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন ও সাজেশন
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো।
1. বাংলার স্বাধীন নবাবির সূচনা করেন—
• মুরশিদকুলি খাঁ
• সিরাজ-উদদৌলা
• আলিবর্দি খাঁ
• মিরকাশিম
• উওরঃ মুরশিদকুলি খাঁ
2. মাদ্রাজে ফোর্ট সেন্ট দুর্গ নির্মাণ করে • ফরাসিরা
• ডাচরা
• ইংরেজরা
• দিনেমাররা
• উওরঃ ইংরেজরা
3. ইংরেজ কোম্পানি ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ‘ফরমান’ লাভ করে-
• ১৬৯২ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে
• ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে
4. ইংরেজ কোম্পানি কলকাতায় আশ্রয় দিয়েছিল—
• নারায়ণ দাসকে
• রাজবল্লভকে
• কৃষ্ণদাসকে
• জগৎবল্লভকে
• উওরঃ- কৃষ্ণদাসকে
5. পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের -
• ২ জুলাই
• ২৩ জুন
• ১২ আগস্ট
• ১৭ সেপ্টেম্বর
• উওরঃ- ২৩ জুন
6. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে কোম্পানির কয়টি প্রেসিডেন্সি স্থাপিত হয়?
• ৩টি
• ৫টি
• ৪টি
• ৬টি
• উওরঃ ৩টি
7. রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়—
• ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে
8. সর্বশেষ চার্টার অ্যাক্টটি পাস হয়—
• ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
9. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় -
• ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
10. হেইলেবেরি কলেজ কোথায় অবস্থিত ছিল?
• কলকাতায়
• মাদ্রাজে
• বিলাতে
• বোম্বাইয়ে
• উওরঃ বিলাতে
11. ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইস্পাত কাঠামো বলা হত-
• পুলিশ বিভাগকে
• আমলাতন্ত্রকে
• সামরিক বিভাগকে
• মন্ত্রীসভাকে
• উওরঃ আমলাতন্ত্রকে
12. কার আমলে বাংলার প্রতিটি জেলায় ফৌজদারি থানা
• ক্লাইভের
• কর্নওয়ালিসের
• ওয়ারেন হেস্টিংসের
• ওয়েলেসলির
• উওরঃ ওয়ারেন হেস্টিংসের
13. ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিল-
• বাঙালি সেনারা
• আফগান সেনারা
• মহারাষ্ট্রের নিম্নবর্ণের সেনারা
• গোর্খা সেনারা
• উওরঃ গোর্খা সেনারা
14. পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেন-
• ক্লাইভ
• ভেরেস্টে
• কর্নওয়ালিস
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• উওরঃ ওয়ারেন হেস্টিংস
15. বাংলায় দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটান—
• ক্লাইভ
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• কার্টিয়ার
• ভেরেস্টে
• উওরঃ ওয়ারেন হেস্টিংস
16. একসালা বন্দোবস্ত চালু হয়-
• ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে
17. কোন্ প্রেসিডেন্সিতে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল?
• বাংলা
• মাদ্রাজ
• বোম্বাই
• উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ
• উওরঃ উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ
18. ব্রিটিশরা পাঞ্জাবে কোন্ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেছিল?
• চিরস্থায়ী
• রায়তওয়ারি
• মহলওয়ারি
• ভাইয়াচারি
• উওরঃ ভাইয়াচারি
19. কত খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের দ্বারা ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হয়?
• ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের
• ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের
• ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের
• ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের
• উওরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের
20. ভারতে প্রথম রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হয়—
• মহারাষ্ট্রে
• মাদ্রাজে
• পাঞ্জাবে
• বাংলায়
• উওরঃ মহারাষ্ট্রে
21. গ্যারান্টি ব্যবস্থা কোন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল?
• বিনাশুল্কে বাণিজ্য
• রেলপথের প্রসার
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
• শিল্প
• উওরঃ রেলপথের প্রসার
22. দ্য হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি রচনা করেন—
• মেকলে
• প্রিন্সেপ
• মিল
• বেন্থাম
• উওরঃ মিল
23. 'কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন'এর সভাপতি ছিলেন -
• মেকলে
• জন স্টুয়ার্ট মিল
• কোলব্রুক
• জেমস মিল
• উওরঃ মেকলে
24. নানকিং-এর সন্ধি হয়েছিল-
• ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে
25. ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে চিনের সঙ্গে যুদ্ধ হয়—
• ইংল্যান্ডের
• রাশিয়ার
• ফ্রান্সের
• জাপানের
• উওরঃ জাপানের
26. ফরাসিরা আলজেরিয়া আক্রমণ ও দখল করে -
• ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের
• উওরঃ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে
27. ভারতে মোট কয়টি চার্টার অ্যাক্ট পাস হয়েছিল?
• চারটি
• তিনটি
• দুটি
• ছয়টি
• উওরঃ চারটি
28- ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন?
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• লর্ড ডালহৌসি
• লর্ড ওয়েলেসলি
• লর্ড কর্নওয়ালিস
• উওরঃ লর্ড কর্নওয়ালিস
29- ভারতে কত খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল?
• 1793
• 1777
• 1820
• 1790
• উওরঃ 1793
29- কাকে ভারতের রেলপথের জনক বলা হয়?
• লর্ড ডালহৌসি
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• কর্নওয়ালিস
• বেন্টিং
• উওরঃ লর্ড ডালহৌসি
30- রিষড়ায় কত খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম পাটকল স্থাপন করা হয়েছিল?
• 1855
• 1814
• 1820
• 1854
• উওরঃ 1855
31- কত খ্রিস্টাব্দে একসালা বন্দোবস্ত চালু করা হয়েছিল?
• 1772
• 1777
• 1793
• 1820
• উওরঃ 1777
পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 |
পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || সিরাজদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার অথবা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ক্ষেত্রে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশীর যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিরাজ দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের বা পলাশীর যুদ্ধের পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন - আনুগত্য প্রদর্শন করতে বিলম্ব, সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সিরাজের শত্রু কৃষ্ণ দাসকে ইংরেজদের আশ্রয়দান,সিরাজের বিনা অনুমতিতে দুর্গ নির্মাণ,নারায়ণ দাস কে অপমান প্রভৃতি পলাশীর যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কারণ।
সিরাজের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বিলম্বঃ-
সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাবী সিংহাসনে বসার পর স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রতি সাধারণ শ্রদ্ধা জানাতে বা স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করতে হতো। কিন্তু নবাব সিরাজদৌলার প্রতি ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিগুলি উপঢৌকণ পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছে করে উপঢৌকণ পাঠাতে অনেক দেরি করে। এতে সিরাজ যথেষ্ট পরিমাণে অপমানিত এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর যথেষ্ট পরিমাণে ক্রোধিত হন।
সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রঃ-
সিরাজদৌলার বাংলার সিংহাসনে নবাব হিসেবে শাসন পরিচালনা করার বিষয়টি তার সভাসদদের মধ্যে কয়েকজন,যেমন -মীরজাফর, জগৎশেঠ,রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ এমনকি সিরাজের মাসি ঘষেটি বেগম পর্যন্ত মেনে নিতে পারেননি।সেই কারণে তারা সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার নবাবি সিংহাসন থেকে উৎখাত করার জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন।সিরাজদ্দৌলা যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারেন,তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতি তার ক্ষোভ জন্ম নেয়।।
সিরাজদৌলার বিনা অনুমতিতে ব্রিটিশদের দুর্গ নির্মাণঃ-
দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের অজুহাতে ফরাসিরা এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের উভয় পক্ষই বাংলায় নিজেদের দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই খবর পেয়ে সিরাজ উভয় পক্ষকেই দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।ফরাসিরা সিরাজের আদেশের মান রেখে নিজেদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ রাখেন। কিন্তু সিরাজের আদেশের পরেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেদিকে কোনো কর্ণপাত করে না। তারা মাঝে মধ্যে নিজেদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবার তা অমান্য করতে শুরু করে।।
কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দানঃ-
সিরাজের শাসনে থাকা ঢাকার দেওয়ান এবং ঘষেটি বেগমের প্রিয় পাত্র রাজবল্লভকে রাজস্বের সঠিক হিসাব এবং নবাবের প্রাপ্ত অর্থ সহ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সিরাজ তাকে মুর্শিদাবাদে সিরাজ ডেকে পাঠান।কিন্তু আর্থিক তোছরূপের দায়ে অভিযুক্ত রাজবল্লভ সেই হিসাব এবং প্রাপ্য অর্থ বুঝিয়ে না দিয়ে তার পুত্র কৃষ্ণবল্লভকে ধনরত্ন এবং আত্মীয়স্বজনসহ কলকাতায় ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেয়। ইংরেজরা সিরাজের নির্দেশ উপেক্ষা করে কৃষ্ণবল্লভকে নবাবের হাতে ফেরত না দিয়ে তাকে কলকাতায় আশ্রয় দিয়েছিল। সিরাজের আদেশ অপেক্ষা করার জন্য এই ঘটনা সিরাজকে যথেষ্ট পরিমাণে অপমানিত এবং ক্রোধিত করেছিল।।
দস্তকের অপব্যবহারঃ-
প্রথম থেকেই কোম্পানির কর্মচারীরা দস্তকের অপব্যবহারও করতে শুরু করেছিল।ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বাণিজ্য করার সুযোগ পেলেও কোম্পানির অন্যান্য কর্মচারীদের সেই অধিকার দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরাও বাংলার অভ্যন্তরে বাণিজ্যে অংশ নিতে থাকে। এমনকি সেই বিষয়ে সিরাজ এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করলেও ইংরেজরা তাতে কর্ণপাত করেনি।।
আলিনগরের সন্ধিরঃ-
ব্রিটিশদের বিভিন্ন কার্যকলাপে সিরাজদ্দৌলা তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে কলকাতা আক্রমণ করেন এবং কলকাতা আক্রমণ করে কলকাতা জয় করে সিরাজ কলকাতার নতুন নাম রাখেন আলিনগর। সেখানে তিনি মানিক চাঁদকে কলকাতার শাসনকর্তা রূপে নিযুক্ত করে মুর্শিদাবাদের ফিরে আসেন।কিন্তু কিছুদিন পরেই রবার্ট ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে একটি নৌবহর কলকাতা দখল করে। এ ঘটনার পর সিরাজ পুনরায় কলকাতা অভিযান করেন। কিন্তু সিরাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের কারণে সিরাজ পরাজিত হয়ে আলিনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হন। কিন্তু কিছুদিন পরেই রবার্ট ক্লাইভ বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার এবং বাংলাকে দখল করার জন্য আলিনগরের সন্ধি ভঙ্গের মিথ্যা অজুহাতে সিরাজের উপর বা মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করেন। এবং এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়েই 1775 খ্রিস্টাব্দে 23 শে জুন শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধ।।
পলাশীর যুদ্ধের কয়েকটি ফলাফলঃ-
1775 খ্রিস্টাব্দের বাংলা শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন-
বাংলার শাসনকার্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যঃ-
পলাশীর যুদ্ধের পর এই মূলত বাংলায় প্রকৃত নবাবী শাসনের অবসান ঘটে। সিরাজদৌলার পরে যে সমস্ত নবাব বাংলার সিংহাসনে বসে ছিলেন, তারা মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাতের পুতুল পরিণত হয়েছিলেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব বৃদ্ধিঃ-
পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যথেষ্ট আধিপত্য এবং প্রভাব বৃদ্ধি পায়। পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় শুধুমাত্র ব্রিটিশদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তারা বাংলা থেকে ফরাশি.ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিক শ্রেণীকে বিতাড়িত করে।
মিরজাফরের সিংহাসন লাভ এবং পলাশীর লুণ্ঠনঃ-
পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়েছিল। এই সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অবাধ অধিকার এবং 24 পরগনার জমিদারি লাভ করেছিল।। মীরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার এবং জমিদারি লাভের পর বাংলা থেকে যে পরিমাণ সম্পত্তি লুণ্ঠন করেছিল, তা ইতিহাসে পলাশীর লুণ্ঠন নামে পরিচিত।।
কিং মেকারঃ-
পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিত যে,বাংলার সিংহাসনে কে বসবে। ব্রিটিশ কোম্পানির দ্বারা মনোনিতে শাসক বাংলা সিংহাসনে বসার পরেই মূলত শাস্পক তাদের হাতের পুতুল হিসেবে পরিণত হতো।মূলত নবাবের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই বাংলাকে শাসন করতো। এভাবে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার কিং মেকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো || উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব |
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো
ভূমিকাঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় যথেষ্ট প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এরপর একে একে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমগ্র ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং নিজেদের অবাধ কাজকর্মের প্রসার ঘটায়। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থের আমলে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই অবাধ কাজকর্মের ওপর নিয়ন্ত্রন জারি করার উদ্দেশ্যে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ হয় যা রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ শাসন অথবা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আইন, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নামেও পরিচিত।।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইন অথবা রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে মূলত দুই দিক থেকে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ কর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। যথা কোম্পানির পরিচালক সভায় বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ জারি করে এবং কোম্পানির শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ জারি করে।।
কোম্পানির পরিচালক সভাঃ-
ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ কর্মের তদারকি করতো ইংল্যান্ডে অবস্থানকারী কোম্পানির পরিচালক সভা।। রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে এই পরিচালক সভায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেমন-
প্রথমতঃ পূর্বেকার ৫০০ পাউন্ড শেয়ারের পরিবর্তে বর্তমানে ১০০০ পাউন্ড শেয়ারের মালিকরা বণিক সভায় ভোটদানের অধিকার পাবে।
দ্বিতীয়তঃ পরিচালক সভার সদস্য সংখ্যা হবে ২৪ যারা ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। এই সদস্যদের ১/৪ অংশ (অর্থাৎ ৬ জন) প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে পদত্যাগ করবেন, আবার নতুন ৬ জন ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
তৃতীয়তঃ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালক সভা ভারত শাসনের জন্য গভর্নর-জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের সদস্যদের নিযুক্ত করবেন।
চতুর্থতঃ পরিচালক সভা প্রতি ৬ মাস অন্তর ভারত সম্পর্কিত সামরিক, বেসামরিক ও রাজস্ব-বিষয়ক তথ্যাদি সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।
কোম্পানির শাসনব্যবস্থাঃ-
রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এ ভারত শাসনের বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটানো হয়। যেমন –
প্রথমতঃ বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি নিয়ে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হয়। বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর-ই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান হন। তাঁর পদের নাম হয় গভর্নর জেনারেল।তিনি বোম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার পান। ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন।
দ্বিতীয়তঃ গভর্নর-জেনারেলের কাজে সহায়তা করার জন্য ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি "কাউন্সিল' গঠিত হয়। এই সদস্যদের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। ওয়ারেন হেস্টিংসের কাউন্সিলের প্রথম ৪ জন সদস্য ছিলেন ক্লেডারিং, মনসন, বারওয়েল ও ফিলিপ ফ্রান্সিস। কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে গভর্নর-জেনারেল কার্য পরিচালনা করতেন ও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহণ করতেন। বাংলার অনুরূপ বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে একজন করে গভর্নর ও ৪ সদস্যবিশিষ্ট 'কাউন্সিল' গঠিত হয়।
তৃতীয়তঃ ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে একজন প্রধান বিচারপতি ও ৩ জন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়। এর প্রধান বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে।
1793 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ শাসন আইন এর মূল্যায়ন-
1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থের আমলে পাস হওয়া রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের বেশ কিছু ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই ছিল। যেমন -
• রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ভারতের গভর্নর-জেনারেল এবং তার সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার কোনো সঠিক বন্টন না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে বিরোধের সৃষ্টি হতো।
• বোম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি শহরে বাংলার গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ঠিক কতটা,তা নির্ধারিত না হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত।
• কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দেশীয় আদালতের বিচার কার্যে হস্তক্ষেপ করতো।
• গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক না হওয়ার কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেখা যেত।
• 1793 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু গুরুত্ব-
বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থের আমলে পাস হওয়া রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইন এর কিছু গুরুত্ব ছিল। যেমন -
• সর্বপ্রথম এই মাধ্যমে ভারতে সঠিক শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং আইনের মাধ্যমে ভারতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
• দ্বিতীয়ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট ছিল ভারতের প্রথম লিখিত আইন যা পূর্বে কার এবং স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছিল।
• তৃতীয়ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ভারতে নিয়মতান্ত্রিক শাসনের সূত্রপাত ঘটেছিল এবং ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম রেগুলেটিং অ্যাক্টের মাধ্যমেই কোম্পানির কাজ কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল।।
ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে প্রবর্তিত চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনসমূহের শর্তাবলি উল্লেখ করো || উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
ভারতে প্রবর্তিত চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনসমূহের শর্তাবলি উল্লেখ করো |
ভূমিকাঃ-1793 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইন এবং 1784 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পর নতুনভাবে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করতে 1793 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1853 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোট চারটি চার্টার অ্যাক্ত অথবা সনদ আইন পাশ করা হয়। এবং এই চারটি চার্টার অ্যাক্ট অথবা সনদ আইনের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নতুন ভাবে বিভিন্ন নিয়ম কানুন আরোপ করা হয়।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টঃ-
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে একটি চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করে।১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে পাস হওয়া সেই চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের শর্তাবলি ছিল-
প্রথমতঃ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের দ্বারা- ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার আরও ২০ বছর বাড়ানো হয়।
দ্বিতীয়তঃ পিটের ভারত শাসন আইনের দ্বারা গঠিত বোর্ড অব কন্ট্রোলের সদস্যসংখ্যা ৬ থেকে কমিয়ে ৫ জন করা হয়।
তৃতীয়তঃ ভারতীয় রাজস্ব থেকে এই সদস্যদের বেতন ও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চতুর্থতঃ বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর গভর্নর-জেনারেলের কর্তৃত্ব আরও বাড়ানো হয়।
পঞ্চমতঃ কোম্পানির কর্মচারীদের শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতে অন্তত ৩ বছর বসবাসকারী অভিজ্ঞ ইংরেজদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্চার অ্যাক্টঃ-
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সনদের মেয়াদ শেষ হলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে নতুন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করে।১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে নতুন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের শর্তাবলি ছিল -
১- ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের দ্বারা ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লোপ করা হয় এবং যে-কোনো ইংরেজ বণিক ভারতে ব্যাবসা করার অধিকার পান।
২- কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে তার অংশীদারদের ১০.৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদানের গ্যারান্টি দেওয়া হয়।৩- ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর ব্রিটিশ রাজের সার্বভৌমত্ব ঘোষিত হয়। ৩- কোম্পানি আরও ২০ বছরের জন্য ভারতে শাসন পরিচালনার অধিকার পায়।
৪- রাজস্ব ও বাণিজ্য থেকে কোম্পানির আয়ের হিসেব পৃথকভাবে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫- কোম্পানির আদায় করা রাজস্ব থেকে বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ভারতীয়দের সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ব্যয় করার কথা বলা হয়।
৬- কোম্পানির সামরিক ও বেসামরিক পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যথাক্রমে এডিসকোম ও হেইলেবেরি কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টঃ-
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট অথবা অনলাইনের মাধ্যমে কোম্পানির সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করা হয়।১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন এর শর্তাবলি-
১- ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে বলা হয় যে, ভারতে কোম্পানি আরও ২০ বছর শাসন পরিচালনা করবে।
২- কোম্পানির যাবতীয় আর্থিক দায় ও ঋণ ভারতের রাজস্ব থেকে পরিশোধ করতে হবে।
৩- বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি ‘ভারত বিষয়ক মন্ত্রী' হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাবেন।
৪- বাংলার গভর্নর-জেনারেল এখন থেকে ভারতের গভর্নর-জেনারেল' বলে বিবেচিত হবেন।
৫- গভর্নর-জেনারেল সমগ্র ভারতের জন্য আইন তৈরির অধিকার পান।
৬- কোম্পানির কর্মচারীরা ভারতে জমি ক্রয়বিক্রয়ের অধিকার পান।
৭- জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে সকল ভারতীয় ও ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে চাকরি পাবেন।
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টঃ-
কোম্পানির সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করা হয়।১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট ছিল শেষ চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন।
১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের শর্তাবলি ছিল-
১- ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে ভারতে কোম্পানির শাসন পরিচালনার অধিকার বজায় রাখা হয়। তবে এবার কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি।
২- অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কোম্পানির আমলাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
৩- আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বড়োলাটের অধীনে ১২ জন সদস্যবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়
৪- যে-কোনো আইন প্রবর্তনে গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়।
৫-ভারতে আইনবিষয়ক পরামর্শদানের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে 'আইন কমিশন' গঠিত হয়।
৬- একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বাংলার শাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৭- বিলাতে কোম্পানির ডিরেক্টরদের সংখ্যা ২৪ থেকে কমিয়ে ১৮ জন করা হয়।
পিটের ভারত শাসন আইন সম্পর্কে আলোচনা করো || WB Class 12 History Question Answer And Suggestion
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023 |
ভূমিকাঃ- 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থের আমলে পাস হওয়া রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ২০ বছরের বাণিজ্যের অধিকার শেষ হলে এবং সেই আইনের কিছু ভুল ত্রুটি থাকায়, সেগুলো সংশোধন করতে 1784 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিটের উদ্যোগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নতুন কিছু নিয়মকানুন আরোপ করার জন্য 1784 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি অ্যাক্ট পাস করা হয় যা সাধারণভাবে পিটের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।।
ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি অ্যাক্ট অথবা পিটের ভারত শাসন আইনের কিছু শর্তাবলীঃ-
1773 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইনের ক্ষেত্রে যেমন বেশ কিছু শর্তাবলী ছিল,ঠিক সেরকমই পিটের ভারত শাসন আইনের ক্ষেত্রেও বেশকিছু শর্তাবলী ছিল। যেমন-
প্রথমতঃ পিটের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে অবাধ বাণিজ্যের জন্য বানানো হয়।
দ্বিতীয়তঃ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ কর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ অর্থসচিব, একজন রাষ্ট্রসচিব ও মনোনীত প্রিভি কাউন্সিলের 4 জন সদস্যকে নিয়ে বোর্ড অফ কন্ট্রোল গঠিত হয় এবং সেই বোর্ড অফ কন্ট্রোলের হাতেই ভারতের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমস্ত সামরিক এবং বেসামরিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
তৃতীয়তঃ ইংল্যান্ডের বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর যাবতীয় নির্দেশ ভারতে অবস্থিত কোম্পানির কাছে পাঠানোর জন্য তিনজন ডাইরেক্টরকে নিয়ে সিক্রেট কমিটি গঠিত হতো এবং সেই সিক্রেট কমিটির মাধ্যমে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত,তাদের নির্দেশ ভারতে অবস্থিত গভর্নর জেনারেলের হাতে পৌঁছতো।
চতুর্থতঃ ভারতে অবস্থিত গভর্নর জেনারেলের শাসনপরিচালনা কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিল গঠিত হতো,যারা গভর্নর জেনারেলকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন।
পঞ্চমতঃ যুদ্ধ ও শান্তি, রাজস্ব এবং দেশীয় রাজ্যগুলি সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে বোম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি গুলির ওপর বাংলার গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়।এছাড়া কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা কী পরিমাণ অর্থ নিয়ে ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরলেন, তার বাধ্যতামূলক হিসাব দেওয়ার কথা বলা হয়।।
মূল্যায়নঃ- পিটের ভারত শাসন আইনের ব্যর্থতা ও সাফল্য উভয়ই লক্ষ করা যায়।
পিটের ভারত শাসন আইনের ব্যর্থতাঃ-
• কোম্পানির শাসন পরিচালনার জন্য পূর্বেকার পরিচালক সভার অস্তিত্ব থাকলেও নতুন এই আইনের দ্বারা ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল' প্রতিষ্ঠিত হয়।
• বোর্ড অব কন্ট্রোলের নির্দেশগুলি ‘সিক্রেট কমিটি'র মাধ্যমে ভারতে আসতে প্রচুর সময় লাগত।ফলে গভর্নর-জেনারেল অধিকাংশ সময় নিজে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতেন।
• বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতির হাতে বিপুল ক্ষমতা প্রদান করার ফলে কোম্পানির পরিচালক সভা তাঁকে সন্তুষ্ট করে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করত।
পিটের ভারত শাসন আইনের সাফল্যঃ-
• রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলিকে পিটের ভারত শাসন আইনে দূর করার চেষ্টা করা হয়।
• পিটের আইনের দ্বারা গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়।
• সামরিক ও বেসামরিক সব বিষয়ে কোম্পানি ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ হয় এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যে ব্রিটিশ সরকারের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়।
ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে আমলাতন্ত্রের বিকাশের অগ্রগতি আলোচনা করো || WB Class 12 History Question Answer And Suggestion 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 |
ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে আমলাতন্ত্রের বিকাশের অগ্রগতি আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- ভারতের সর্বপ্রথম 1784 খ্রিস্টাব্দে পাশ হয় ভারত শাসন আইন এবং 1793 খ্রিস্টাব্দে প্রথম সনদ আইন অথবা চার্টার অ্যাক্ট এর মাধ্যমে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। লর্ড কর্নওয়ালিস প্রথম ভারতে আমলাতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের দুইভাগে ভাগ করতেন যথা রাজনৈতিক শাখা এবং বাণিজ্যিক শাখা। তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য এবং এবং সব ধরনের অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ করে দিয়ে তাদের উচ্চ বেতনের ব্যবস্থা করেছিলেন।কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন করা এবং তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি 1793 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন নীতি এবং কর্ম পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলেন যা কোড কর্নওয়ালিস নামে পরিচিত। কর্ণওয়ালিশ এভাবেই ভারতের সিভিল সার্ভিস এর প্রবর্তন করেছিলেন। প্রথম পর্বে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় ছিল না। কোম্পানির নির্দেশক সভা সদস্যদের মনোনয়নের মাধ্যমে ভারতে আমলাদের নিয়োগ করা হতো। কিন্তু পরে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে আমলাদের নিয়োগ করা হতো।।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং হেইলেবেরি কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ-
ভারতের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে চায়,তাদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি সামাজিক রীতিনীতি প্রভৃতির বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার আগে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে তিন বছর প্রশিক্ষণ নিতে হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বিভিন্ন কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পরিবর্তে লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা পরবর্তীতে হেইলেবেরি কলেজে পরিবর্তিত হয়। আমলা পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য সকল প্রার্থীকে এই কলেজে দুই বছরের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হতো এবং তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তারা নিজেদের কাজ করার সুযোগ পেতেন।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সূচনাঃ-
প্রথম পর্বে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন পরিচালনা কোম্পানির নির্দেশক সভার সদস্যরাই ভারতের সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়োগ করতেন।কিন্তু পরবর্তীকালে 1833 খ্রিস্টাব্দের তৃতীয় সনদ আইনে ভারতের সিভিল সার্ভিসের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ দেওয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং এক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সেই পরীক্ষায় 18 থেকে 23 বছর বয়সী সকলেই বসার সুযোগ পায়। ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে হেইলেবেরি কলেজ উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সিভিল সার্ভিস কমিশন ইংল্যান্ডে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতে সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়োগের প্রথা চালু হয়। অধ্যাপক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “এইভাবে কালে কালে কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রের ইস্পাত কাঠামোটি বেশ যথোপযুক্ত হয়ে উঠল, শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রয়োজন মেটাতে।
ভারতীয়দের নিয়োগে বঞ্চনাঃ-
আমলাতন্ত্রের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সযত্নে ভারতীয়দের দূরে সরিয়ে রাখা হত।ভারতের প্রতিটি মানুষকে 'দুর্নীতিপরায়ণ' মনে করে কর্নওয়ালিশ উচ্চ সরকারি পদে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করেন। প্রথমদিকে ৫০০ পাউন্ডবা তার বেশি বেতনের কোনো পদে ভারতীয়রা নিযুক্ত হতে পারত না। অবশ্য ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নিম্নস্তরের পদগুলিতে ভারতীয়দের নিয়োগ ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ শুরু হলে আমলাতন্ত্রের উচ্চপদগুলিতে ভারতীয়দের প্রবেশের সুযোগ আসে। তা সত্ত্বেও সেসব পদে ভারতীয়দের নিয়োগে বাধা অব্যাহত ছিল। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে নিযুক্ত পদাধিকারীদের মধ্যে ১৯১৪ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ ছিলেন ভারতীয়।
ভারতে পরীক্ষা গ্রহণের দাবিঃ-
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতের জাতীয়তাবাদীরা ইংল্যান্ডের সঙ্গে একযোগে ভারতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার দাবি জানায়। লর্ড রিপন (১৮৮০-৮৪ খ্রি.) ভারতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু ভারতীয়দের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির আশঙ্কায় ইংরেজ আমলারা রিপনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। অবশেষে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থায় সংস্কার করা হয়।
গুরুত্বঃধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস' বা আমলাতন্ত্র সমগ্র বিশ্বে একটি সুদক্ষ ও ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারতীয় আমলারা দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম প্রভৃতির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্য ও নজির সৃষ্টি করে। ভারতীয় আমলাতন্ত্রকে ব্রিটিশ শাসনের ইস্পাত কাঠামো' (Steel-frame) বলা হত। অবশ্য এই আমলাতন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা। ফলে ভারতীয়দের কোনো উপকার হয়নি। তাই ভারতীয় আমলারা ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে পুলিশি ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং প্রসার আলোচনা করো || WB Class 12 History Question Answer And Notes
wb class 12 history question answer and suggestion 2023 |
ভূমিকাঃ বাংলায় ব্রিটিশদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে মোগল আমলের ফৌজদারি ব্যবস্থা বাংলা-সহ সমগ্র ভারতে বলবৎ ছিল। তখন কোতোয়ালরা শহরগুলির এবং চৌকিদাররা গ্রামগুলির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করার সময় মোগল পুলিশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে বাংলায় ভয়াবহ দুর্যোগ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ কোম্পানি এদেশে এক সুসংবদ্ধ পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগঃ-
ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে এদেশে নিয়মিত পুলিশবাহিনী গড়ে ওঠে। হেস্টিংস বাংলা ও বিহারকে যথাক্রমে দশটি ও আটটি ফৌজদারি জেলায় বিভক্ত করেন।
• প্রতিটি জেলায় একটি করে ফৌজদারি থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই থানাগুলিতে একজন করে দেশীয় ফৌজদার নিযুক্ত হন। ও ফৌজদার ছিলেন জেলার প্রধান পুলিশ কর্মচারী। তাঁর হাতে জেলার শান্তি রক্ষার সকল দায়িত্ব দেওয়া হয়।
•প্রতিটি থানার সঙ্গে একটি করে জেলখানা স্থাপিত হয়। ফৌজদারকে সাহায্য করার জন্য ৩৪ জন কর্মচারী ছিল যার মধ্যে ২০ জন ছিল সিপাই।
• ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ফৌজদারের পদ বিলুপ্ত করা হয়। কোম্পানির দেওয়ানি আদালতের বিচারকরা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেয়ে পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোতোয়ালের হাতে শহরের শান্তি রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
• কর্নওয়ালিশের উদ্যোগ। লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় নতুন পুলিশি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
• কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জমিদারদের আরক্ষাবিষয়ক দায়িত্ব সম্পূর্ণ কেড়ে নেন এবং জেলাগুলিকে বিভিন্ন থানার অধীনে বিভক্ত করেন। এক একটি থানার অধীনে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা থাকত।
• একজন দারোগার হাতে থানার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। দারোগার অধীনে ২০ থেকে ৩০ জন কনস্টেবল থাকত।
• ম্যাজিস্ট্রেটরা দারোগাকে নিয়োগ ও তাঁর কাজের তদারকি করতেন।
• প্রতিটি গ্রামে একজন করে চৌকিদার থাকত। তিনি গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে দারোগাকে অবহিত করতেন। কলকাতা শহরে একজন সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ এর পদ সৃষ্টি করা হয়। অন্যান্য শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ‘কোতোয়াল' নিযুক্ত হন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে দারোগা ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থা ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যত্রও চালু করা হয়।।
কালেক্টরদের দায়িত্ব দানঃ
কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়ায় ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে তহশিলদারদের হাত থেকে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে দারোগা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।এরপর পুলিশি ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হয় কালেক্টরদের হাতে। ফলে কালেক্টরদের অধীনস্থ রাজস্ব বিভাগের অধস্তন কর্মচারীরা গ্রাম-গঞ্জে পুলিশি ব্যবস্থা দেখাশোনা করতে থাকে। তাদের উদ্যোগে পুলিশি জুলুমবাজি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
সিন্ধু অঞ্চলে পুলিশি ব্যবস্থাঃ
স্যার নাপিয়ের ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু অঞ্চল জয় করার পর সেখানে রাজকীয় আইরিশ পুলিশ বাহিনীর আদলে একটি পৃথক পুলিশি দফতর খোলেন। সমগ্র সিন্ধু অঞ্চলকে একজন ইনস্পেকটর জেনারেল-এর তত্ত্বাবধানে আনা হয়। প্রতিটি জেলায় একজন করে ডিস্ট্রিক্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ (ডি. এস. পি.) নিয়োগ করা হয়।
তিনি নিজের কাজের জন্য ইনস্পেকটর-জেনারেল ও জেলা কালেক্টরের কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন। সিন্ধু অঞ্চলের পুলিশি ব্যবস্থা ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে চালু করা হয়। পরবর্তীকালে এই ব্যবস্থা ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ে এবং ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে চালু করা হয়।
মহাবিদ্রোহের পরবর্তী পদক্ষেপঃ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কেঁপে ওঠে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার পুলিশি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ কমিশনার নিয়োগ করা হয়। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট পুলিশি প্রতিষ্ঠানের কাঠামো গড়ে তোলা হয়। অসামরিক কর্তাদের নিয়ন্ত্রণে ভারতের পুলিশ বাহিনীকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।এই কাঠামোয় গ্রাম ও শহরের পুলিশ বাহিনী ডিস্ট্রিক্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ (ডি.এস. পি.)-র কাছে, ডিস্ট্রিক্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ আবার ইনস্পেকটর-জেনারেল ও জেলা কালেক্টরের কাছে এবং জেলা কালেক্টররা প্রাদেশিক সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকত। ইনস্পেকটর-জেনারেলগণ সামান্য রদবদল ঘটালেও এই কাঠামোটি পরবর্তী এক শতাব্দীকাল মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে।
ভারতীয়দের প্রতি বদলাঃ-
ভারতে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগের সুযোগ ছিল না। তবে নিম্নপদগুলিতে ভারতীয়রা নিযুক্ত হত। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ কমিশন পুলিশ বাহিনীর আধিকারিক পদে শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগের ব্যবস্থা করলেও ‘পদমর্যাদায় ইওরোপীয়রা যেখানে শুরু করতেন, ভারতীয়দের চাকরি জীবন শেষ হত সেখানে।“যাই হোক, ডেভিড আর্নল্ড মনে করেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় পর্যন্ত ভারতে একটি 'পুলিশ রাজা ক্রমে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
গুরুত্বঃ ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ছিল পুলিশ বাহিনী।
• পুলিশ বাহিনী সেনাবাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করত।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা, খুন-রাহাজানি-ডাকাতি দমন করা প্রভৃতি দায়িত্ব পুলিশ বাহিনী পালন করত।
• বিভিন্ন কৃষক বিদ্রোহ ও অন্যান্য আন্দোলনে ভারতে ব্রিটিশ সরকার যখন সংকটের সম্মুখীন। হত তখনই পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় বিদ্রোহ দমন করে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্বকে সুনিশ্চিত করত।।
wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত |
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো || ওয়ারেন হেস্টিংস এর আমলে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার বিবরণ দাও
ভূমিকাঃ ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা তথা ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে আসেন। ভারতে আসার পর থেকেই ওয়ারেন হেস্টিংস ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ওয়ারেন হেস্টিংস শাসনকালে ভূমি রাজস্ব ক্ষেত্রে তিনি ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে শালা বন্দোবস্ত হয় এবং তারপর ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন। যেমন-
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তঃ
ওয়ারেন হেস্টিংস নবাব এবং দেওয়ান পদের অবলুপ্তি এবং ভারতের কোশাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করার পর তিনি প্রথমে পাঁচশালা বন্দোবস্ত এবং পরে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন।পাঁচশালা বন্দোবস্ত বলতে বোঝায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য 1772 খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি জেলায় জেলায় ঘুরে ইজারাদারদের গ্রামে জমি দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। যেই ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার কথায় রাজি হতো তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি দেওয়া হতো এবং 5 বছরে যদি সেই ইজারাদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হত, তাহলে সেই জমিদার তার জমিদারি হারাতো। এই ব্যবস্থাই ইজারাদারি ব্যবস্থা বা পাঁচশালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।।
• এরপর, সুপারভাইজার' নামে কর্মচারীরা ইতিপূর্বে কোম্পানির রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করত। হেস্টিংস সুপারভাইজারদের নতুন নামকরণ করেন 'কালেক্টর'। এই কালেক্টররা প্রতিটি জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।
• হেস্টিংস যে ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেছিলেন তা অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তিনি এই কমিটি বাতিল করে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে একটি 'রাজস্ব বোর্ড' বা 'Board of Revenue' গঠন করেন।
• হেস্টিংস বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ছ্যাটি অংশে বিভক্ত করে। প্রতিটি অংশে একটি করে 'প্রাদেশিক কাউন্সিল' গঠন (১৭৭৩ খ্রি.) করেন।প্রতিটি কাউন্সিলে একজন করে ভারতীয় দেওয়ান নিয়োগ করেন এবং কালেক্টর পদ তুলে দেন। হেস্টিংস রাজস্ব সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে 'আমিনি কমিশন' গঠন করেন। কালেক্টরপ্রথায় পুনঃপ্রবর্তন।
• আমিনি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে প্রাদেশিক কাউন্সিলগুলির অবসান ঘটিয়ে আবার কালেক্টর পদ চালু করা হয়। কালেক্টরদের হাতে জেলা প্রশাসনের যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটিঃ
হেস্টিংস প্রবর্তিত পাঁচসালা বন্দোবস্তের বেশ কয়েকটি ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। যেমন—
ইজারাদারদের উৎপীড়নঃ-
বিভিন্ন অসৎ ইজারাদার নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাদের ওপর উৎপীড়ন চালাত।
নতুন জমিদারদের উত্থানঃ-
নিলামের মাধ্যমে জমি ইজারা দেওয়ার ফলে আগেকার বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারান। তাদের জায়গায় একশ্রেণির নতুন ভূঁইফোড় জমিদার বা ইজারাদারের উত্থান ঘটে।
অনিশ্চিত আয়ঃ-
এইসব নতুন ইজারাদার বহু ক্ষেত্রেই কোম্পানিকে ঠিকমতো রাজস্ব প্রদান করত না। ফলে কোম্পানির আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
কৃষির উন্নয়নে গতিহীনতাঃ-
জমিতে স্থায়ীভাবে স্বত্ব না পাওয়ায় ইজারাদাররা জমি ও কৃষকের উন্নতির দিকে বিশেষ নজর দিত না। ফলে কৃষির উন্নতি ব্যাহত হতে থাকে।
ওয়ারেন হেস্টিংসের একসালা বন্দোবস্তঃ
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত পাঁচশালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটি যেমন-(ইজাড়াদের অত্যাচার, কৃষকদের ক্ষতি, সঠিক রাজস্ব আদায় না হওয়া ইত্যাদি) কারণে ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্তের পরিবর্তে নতুন কোনো বন্দোবস্ত প্রবর্তিত কথা ভাবতে থাকেন। এবং এই ভাবনা থেকেই ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে একসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। একসালা বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রতিবছর জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রথা চালু হয়। একসালা বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে ঠিক করা হয় যে-
প্রথমতঃ প্রতি বছর পুরনো জমিদারদের জমির বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়তঃ একসালা বন্দোবস্তে বিগত তিন বছরের রাজস্বের গড় হিসেবে নতুন নির্ধারিত হবে।
তৃতীয়তঃ জমিদার রাজস্ব বাকি রাখলে তার জমিদারির একাংশ বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে।
একসালা বন্দোবস্ত এর বিভিন্ন ত্রুটিঃ-
হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তের মত ঠিক একইভাবে একসালা বন্দোবস্তেও বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন-
• একসালা বন্দোবস্তে রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি ছিল। ফলে কৃষকরা খুবই শোষিত হত।
• জমিদারদের মাত্র এক বছরের জন্য জমি বন্দোবস্তু দেওয়ার ফলে তারা সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করতে পারতেন না।
• জমিদাররা নিজেদের আয়বৃদ্ধিতে খুব বেশি নজর দিলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে অবহেলা দেখাতেন।
উপসংহারঃ- পরিশেষে বলা যায়, ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস বিভিন্ন বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলেও তার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচশালা বন্দোবস্ত এবং একসালা বন্দোবস্ত ভারতীয় জমিদার এবং কৃষকদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। সেই সমস্ত বন্দোবস্তুগুলি যেমন কৃষকদের দুর্দশা ডেকে এনেছিল সেইসঙ্গে কৃষির অগ্রগতিতে বাধা এবং পুরনো জমিদারদের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল |
বিষয়ঃ-
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কেন চালু করা হয়েছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে চালু বা প্রবর্তন করেছিলেন?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবে চালু হয়েছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য কি ছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল এবং কুফল
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কেন চালু করা হয়েছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে চালু বা প্রবর্তন করেছিলেন?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবে চালু হয়েছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য কি ছিল?
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল এবং কুফল
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ ভারতের প্রথম গভর্নর ওয়ারেন হস্টিংস প্রবর্তিত পাঁচশালা বন্দোবস্ত এবং একসালা বন্দোবস্ত এর বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার ফলে সেগুলো বাতিল করা হয়েছিল। এরপর সতেরশো চুরাশি খ্রিস্টাব্দের পিটের ভারত শাসন আইনে জমিদারদের সঙ্গে স্থায়ী ভূমি বন্দোবস্ত কথা বলা হয় এই উদ্দেশ্যে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে আসেন এবং তিনি নতুনভাবে ভূমি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনঃ-
লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করলে স্যার জন শোর তাকে জমিদারদের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জমি বন্দোবস্ত করার কথা বলেন।তার কথার গুরুত্ব দিয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বাংলা এবং বিহার এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার জমিদারদের 10 বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এই ব্যবস্থা ইতিহাসে দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে বাংলা বিহার এবং উড়িষ্যার জমিদারদের ১০ বছরের জমিদারি প্রদান করা হয়। এরপর বলা হয় যে, পরিচালক সভা যদি অনুমোদন দেয়, তাহলে এই দশ বছরের ব্যবস্থা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রূপান্তরিত করা হবে। এরপর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে অনুমোদন পাওয়া গেলে লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে মার্চ দশসালা বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রুপান্তরিত করেন।।
১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে মার্চ প্রবর্তিত কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ঘোষনা করা হয় যে-
• জমিদারদের বংশানুক্রমিকভাবে স্থায়ীভাবে জমিদারি প্রদান করা হয়।
• চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারদের একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারকে রাজস্ব প্রদান নির্ধারণ করা হয়।
• জমিদারদের আদায় করা রাজস্বের 90% সরকার এবং 10% জমিদারদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
• এছাড়াও খরা, বন্যা,মহামারী এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক বিপর্যয়েও রাজস্ব মুকুট না করার কথা ঘোষণা করা হয়।।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল এবং কুফল বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফলঃ-
১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মূলত দুই ধরনের ফলাফল ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল এর মধ্যে এর সুফল থেকে কূফল ই বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন- মার্সম্যানের মতে, “এটি (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত) ছিল একটি দৃঢ়, সাহসিকতাপূর্ণ ও এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপ।
[I] সুনির্দিষ্ট আয়:-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয় এবং সরকারের প্রাপ্য রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়। এর ফলে সরকারের বার্ষিক বাজেটের অনেক সুবিধা হয়।
[ii] উৎখাতের আশঙ্কার অবসান:-রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকদেরও সুবিধা হয়। তারা ইজারাদারদের শোষণ এবং ঘনঘন জমি থেে উৎঘাতের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায়।
[iii] কৃষির উন্নতি:- জমির ওপর জমিদারের স্বত্ব বা অধিকার সুনিশ্চিত হওয়ায় তারা জমি ও কৃষির উন্নতিতে যত্নবান হন।
[iv] অনুগত জমিদার শ্রেণির উদ্ভব:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে সরকারের অনুগত একটি জমিদার শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। তাদের সমর্থনে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কুফলঃ-
ঐতিহাসিক হোমস্ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে একটি দুঃখজনক ভুল বলে অভিহিত করেছেন।
থর্নটন বলেন যে, চ্যাম অল্পতা থেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল অপেক্ষা কুফলই বেশি ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক এই বন্দোবস্তের বিভিন্ন কুফলগুলি উল্লেখ করেন। যেমন—
[i]কৃষকদের উচ্ছেদ:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারকে জমির স্থায়ী মালিকানা দেওয়া হলেও জমিতে কৃষকের কোনো অধিকার ছিল না। ফলে জমিদার বেশি রাজস্ব পাওয়ার আশায় চাষিকে ঘনঘন জমি থেকে উৎখাত করত। চাষির রাজস্ব বাকি পড়লে জমিদার সেই চাষির জিনিসপত্র নিলাম করত। এজন্য পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা কৃষকরা জমিদারের ভাড়াটে মজুরে পরিণত হয়।
[ii] জমির উন্নতি ব্যাহত:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা জমি ও কৃষির উন্নতি সম্ভব হয়েছিল বলে কেউ কেউ মনে করলেও অনেকে মনে করেন যে এই ব্যবস্থার দ্বারা চাষিরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তারা জমির উন্নতির জন্য বিশেষ চেষ্টা করত না। জমিদাররাও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, কৃষির প্রসার, সেচের প্রসার, পতিত জমি উদ্ধার প্রভৃতির জন্য অর্থ ব্যয় না করে নিজেদের বিলাসব্যসনেই অর্থ ব্যয় করত।
[iii] সরকারের লোকসান:- জমিদাররা সরকারকে যে পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ রাজস্ব তারা চাষিদের কাছ থেকে আদায় করত। সরকারের রাজস্ব নির্ধারণ সুনির্দিষ্ট হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে রাজস্ব থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়।তা ছাড়া জনসংখ্যাবৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পতিত জমি উদ্ধার প্রভৃতি থেকে জমিদারের আয় বহুগুণ বাড়লেও এই বাড়তি আয়ের কোনো অংশ সরকার পেত না)
[iv] কৃষকের দুরবস্থা:- জমিদাররা কৃষকদের ওপর প্রবল অত্যাচার চালিয়ে নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করার ফলে কৃষকদের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে ওঠে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জমিদাররা সরকারকে ৩৫ লক্ষ পাউন্ড রাজস্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ওই বছর জমিদাররা কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব বাবদ আদায় করেন ১ কোটি ৩৫ লক্ষ পাউন্ড। ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকেই রামমোহন রায়, লালবিহারী দে, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র দত্ত প্রমুখ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে রায়তের দুর্দশার কথা সবার সামনে তুলে ধরেন
[v] পুরোনো জমিদারদের উচ্ছেদ:-
এই ব্যবস্থায় 'সূর্যাস্ত আইন' অনুসারে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে সরকারি কোশাগারে রাজস্ব জমা দিতে না পারায় পুরোনো বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারান। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হওয়ার প্রথম কুড়ি বছরের মধ্যে বাংলার প্রায় অর্ধেক প্রাচীন জমিদার পরিবার তাঁদের জমিদারি হারান
[vi] নতুন জমিদারের উত্থান:- পুরোনো বহু জমিদার তাঁদের জমিদারি হারালে শহুরে ধনী বণিকরা নিলামে এই জমিদারিগুলি কিনে নেন। এসব ভূঁইফোঁড় নতুন জমিদাররা শহরে বসে তাঁদের নায়েব-গোমস্তাদের দিয়ে জমিদারি চালাতেন। তাঁদের গ্রামের কৃষক বা জমির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক বা প্রজাকল্যাণের কোনো ইচ্ছা ছিল না।প্রজাদের শোষণ করে প্রচুর অর্থ উপার্জনই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য।
[vii] কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষতি:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে দ্রুত বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় বহু শহুরে মানুষ ব্যাবসাবাণিজ্য ছেড়ে জমিদারি ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কুটিরশিল্পের কাজেও লোকের আগ্রহ কমে যায়। বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর হয়ে পড়ে। এভাবে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য – সবকিছূই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলার কৃষকদের দুরবস্থার জন্য রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁর বাংলার কৃষক' গ্রন্থে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তবেই দায়ী করেছেন।
উপসংহারঃ- সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ওয়ারেন হেস্টিংসের মত লর্ড কর্নওয়ালিসও কোম্পানি লাভের উদ্দেশ্যেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন। এবং ঠিক একইভাবে ওয়ারেন হেস্টিংসের এবং পাঁচশালা এবং একশালা বন্দোবস্তের মতো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও ভারতের কৃষক শ্রেণীর, কৃষি ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ভারতীয় পুরনো জমিদারদের থেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল আলোচনা || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ ওয়ারেন হেস্টিংসের পর লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য 1789 খ্রিস্টাব্দে এবং 90 খ্রিস্টাব্দে দশসালা বন্দোবস্ত এবং 1793 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত শুধুমাত্র বাংলা,বিহার এবং উড়িষ্যার উপর লাগু হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের দিকে সেরকম ভাবে কোনও ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয়নি। সেকারণেই দক্ষিণ ভারতে নতুন ভাবে ভূমি বন্দোবস্ত চালু করার জন্য রাওয়াতওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী?
উওরঃ ভারতের দক্ষিনে এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার রীড এবং স্যার টমাস মনরোর নেতৃত্বে এক ধরনের নতুন ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয় যেখানে সরকার সরাসরি কৃষকের থেকে খাজনা আদায় করার বা ট্যাক্স আদায় করার নিয়ম চালু করে। 1820 খ্রিস্টাব্দে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাজনা আদায় করার এই ভূমি বন্দোবস্তই রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। টমাস মনরোকে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত জনক বলা হয়।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ-
1820 খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত এই নতুন ভূমি বন্দোবস্ত বা রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন-
• রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে কোন মধ্যস্বত্বভোগীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত না। রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরকার এবং কৃষকের মাঝখানে কোনো জমিদার বা ইজারাদার থাকত না ফলে কৃষককে সরাসরি সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব দিতে হতো।
• রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে কৃষকের জমির উপর কোনো স্থায়ী মালিকানা থাকত না। কৃষক শুধুমাত্র সেই জমিতে কাজ করার অধিকার পেত এবং নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব না দিতে পারলে তাকে সেই জমি থেকে উৎখাত করা হতো।
• রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় জমির রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি হতো এবং সাধারণত কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর পর পর সেই রাজস্বের পরিমান পরিবর্তন করা হতো।যার ফলে কৃষককে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব দিতে গিয়ে চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হতো।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফলঃ-
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন কুফল লক্ষ্য করা গিয়েছিল যেমন-
ভারতীয় জমিদারদের জমিদারি হারানোঃ-
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটাই যে, সরকার যেহেতু কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল, সেই কারণে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করার অধিকার বিভিন্ন জমিদার এবং ইজারাদাররা হারিয়ে ফেলে।এভাবে ভারতের প্রাচীন জমিদার পরিবারগুলি তাদের জমিদারী সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়ে ফেলে। জমিদারি হারানোর ফলে জমিদার পরিবার গুলিকে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারঃ-
জমিদারি প্রথার অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু কালক্রমে কৃষকরা জমিদারদের পরিবর্তে সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারের শিকার হয়। তারা রায়তের অস্থাবর সম্পত্তি ক্লোক করে কৃষককে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত। ঐতিহাসিক ড. তারা চাঁদের মতে, রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় প্রজারা বহু জমিদারের' পরিবর্তে 'এক বিরাট জমিদার' বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাজস্বের বিপুল হারঃ-
এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি ছিল। উৎপন্ন ফসলের শতকরা ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধের সামর্থ্য কৃষকদের ছিল না।
কৃষকদের উচ্ছেদঃ-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো স্থায়ী রাজস্বের হার রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় ধার্য করা হয়নি। সরকার ইচ্ছা করলে কুড়ি বা ত্রিশ বছর পরপর রাজস্বের হার বৃদ্ধি করতে পারত। কৃষক এই বাড়তি রাজস্ব না দিলে তাকে জমি থেকে উৎখাত করা হত। এক কথায়, এই ব্যবস্থায় কৃষকরা ভাড়াটিয়ায় পরিণত হয়। সরকার প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে যে, সরকার রাজস্ব হিসেবে যা আদায় করে, তা খাজনা (tax) নয়, ভাড়া (rent) মাত্র।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্দশাঃ-
খরা, বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলহানি ঘটলেও রাজস্ব প্রদানের হাত থেকে কৃষকরা অব্যাহতি পেত না। তা ছাড়া কোম্পানি রায়তকে রূপোর মুদ্রায় রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ দেয়। ফলে সরকারি রাজস্ব মেটাতে গিয়ে কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত বলেছেন যে, “এই ব্যবস্থায় শোষণের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের চেয়ে তা অধিকতর ক্ষতিকর ছিল। জমির অস্থায়ী বন্দোবস্তই ছিল জনসাধারণের দারিদ্রা ও দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ।"
মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কি? মহলওয়ারি বন্দোবস্ত এর বৈশিষ্ট্য লেখো || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023 |
মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কি? মহলওয়ারি বন্দোবস্ত এর বৈশিষ্ট্য লেখো || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
ভূমিকাঃ বাংলা বিহার এবং উড়িষ্যায় লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে রায়েতওয়ারি বন্দোবস্তের পর, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ব্রিটিশ সরকার 1822 খ্রিস্টাব্দে কৃষকদের থেকে জমিদারদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের যে বন্দোবস্ত চালু করে, তাই মহলওয়ারি ব্যবস্থা বা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।।
সম্ভবত লর্ড হট ম্যাকেঞ্জির উদ্যোগে উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1822 খ্রিস্টাব্দের দিকে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন।
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যঃ-
মহলওয়ারি ভূমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
জমির ইজারাঃ-
মহলওয়ারি বন্দোবস্তে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাকা জমি থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য স্থানীয় জমিদারদের কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত দেয়া হতো।এই সময়ে জমিদার তার অধীনে থাকা জমি থেকে রাজস্ব আদায় করে সরকারের হাতে দিতো।
জমিদার বা ইজারাদারদের উপস্থিতিঃ-
মহলওয়ারি ব্যবস্থা কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি মহল অথবা তালুক গঠন করা হতো। সেখানে কোনো একজন গ্রাম প্রধান অথবা এজ গোষ্ঠীর হাতে সেই গ্রামের সমস্ত জমির মালিকানা কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের জন্য দেওয়া হতো। জমির মালিকানা পাওয়ার পর সেই গ্রামপ্রধান অথবা গোষ্ঠী তার অধীনে থাকা জমিতে কৃষকদের কাজ করার অধিকার দিত এবং তার বদলে কৃষকের কাছ থেকে তারা রাজস্ব আদায় করে সরকারের হাতে দিত।
উচ্চ রাজস্বঃ-
মহলওয়ারি বন্দোবস্তের সবচাইতে খারাপ দিক হলো এই যে,মহলওয়ারি বন্দোবস্ত রাজস্বের পরিমাণ খুবই বেশি হতো। মহলওয়ারি ব্যবস্থায় সাধারণত কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর অন্তর অন্তর রাজস্বের পরিমাণ পরিবর্তন করা হতো। এই বিশাল পরিমাণ রাজস্বশোধ করা কৃষকদের পক্ষে কখনো সম্ভব হতো না। কিন্তু রাজস্ব আদায় করার জন্য জমিদার বা ইজারাদাররা কৃষকদের উপর অত্যাচার করতো। আদায় করা রাজস্বের 80% সরকার এবং 20% জমিদারদের মধ্যে বিলি করা হতো।
মধ্যস্বত্বভোগী উপস্থিতিঃ-
মহলওয়ারি ব্যবস্থার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এই ব্যবস্থায় জমিতে চাষ করা কৃষকের রাজস্ব এবং সরকারের মাঝখানে একজন গ্রামপ্রধান বা ইজারাদারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। জমির রাজস্ব কৃষকের কাছ থেকে জমিদাররা নিয়ে সরকারের হাতে দিত। এভাবে মাঝখানে থেকে রাজস্ব আদায় করে সেই জমিদাররা বা ইজারাদাররা বিরাট পরিমাণ মুনাফা লাভ করতো।।
মহলওয়ারি ব্যবস্থার কয়েকটি ফলাফলঃ-
ভারতে যে সমস্ত ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই ভারতীয় কৃষকদের ক্ষতি করেছিল।ঠিক একইভাবে 1822 খ্রিস্টাব্দে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে প্রবর্তিত হওয়া মহলওয়ারি বন্দোবস্তেরও বেশ কিছু কুফল ছিল। যেমন-
কৃষকদের জমি থেকে উৎখাতঃ-
এই ব্যবস্থায় সরকার ছিল প্রকৃত জমির মালিক। জমিতে কৃষকের মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় তারা সর্বদা উৎখাত হওয়ার আতঙ্কে ভুগত।
সরকারি কর্মীদের শোষণঃ-
এই ব্যবস্থায় কৃষকরা জমিদারের পরিবর্তে সরকারের অধীনে আসে এবং প্রত্যক্ষভাবে সরকারি কর্মচারী ও গ্রামপ্রধানদের শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়।
রাজস্বের উচ্চ হারঃ-
কৃষকের রাজস্বের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকার ফলে তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে
অত্যধিক কঠোরতাঃ-
এই ব্যবস্থায় সরকার অত্যধিক কঠোর অবস্থান নিলে বহু কৃষক তাদের জমি হারায়। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, ১৮৩৯ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৯৫ হাজার জমির মালিকানা হস্তান্তরিত হয়। রমেশচন্দ্র দত্ত বলেন যে, “মহলওয়ারি ব্যবস্থায় ধনসঞ্চয় অথবা মানুষের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল না। অতিরিক্ত কঠোরতার ফলে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।”
wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023 |
অবশিল্পায়ন কাকে বলে? অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো
ভূমিকাঃ যখন কোনো স্থানে খুব দ্রুত শিল্পের অগ্রগতি বা উন্নতি ঘটে তখন তাকে শিল্পায়ন বলে। ঠিক একইভাবে যখন কোনো স্থানে শিল্পের অবনতি ঘটে অথবা শিল্পের অগ্রগতি রোধ হয় তখন তাকে অবশিল্পায়ন বলা হয়। ভারতের ব্রিটিশদের আগমনের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং সেইসঙ্গে কোম্পানির কর্মচারীদের বাণিজ্যের অগ্রগতি হলেও ভারতীয় বণিকদের সেরকম ভাবেও বাণিজ্যের কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। তার চেয়েও বড় কথা ভারতীয় বণিকদের বাণিজ্য একদমই থেমে গিয়েছিল। এই অবস্থাই ভারতের অবশিল্পায়ন নামে পরিচিত। ব্রিটিশদের আগমনের পর ভারতে অবশিল্পায়নের প্রধান কারণ ছিল -
ভারতীয় পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে বাধাঃ-
ভারতে অবশিল্পায়নের প্রধান কারণ ছিল পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। ব্রিটিশদের আগমনের আগে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই মজবুত ছিল। যখন ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে যায় তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কলকারখানায় মন্দা দেখা যায়, শ্রমিক ছাটাই শুরু হয়, তাঁতিরা বেকার হয়ে পড়ে। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের দেশের সরকারের কাছে বাণিজ্য সংরক্ষণের দাবি জানায় ফলে সরকার চাপে পড়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভারতের বস্ত্র আমদানি বন্ধ করে দেয়।
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবঃ-
ভারতের অবশিল্পায়নের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে বিভিন্ন কারখানায় অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণ শিল্পপণ্য উৎপাদন করা হতো। এর ফলে ইংল্যান্ডের বণিকরা কারখানায় উৎপাদিত সেই সমস্ত সস্তা শিল্পপন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইংল্যান্ড ভারতের বাজার দখল করে ফেলে। এরফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।।
প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবঃ-
ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপাদান হলো এদেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচামাল। কাঁচামালের উপর ভিত্তি করেই ভারতের বস্ত্র শিল্প দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের আগমনের পর ভারতীয় বণিকরা যথেষ্ট পরিমাণে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারত না।যার ফলে তাদের বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোম্পানির কর্মচারীরা এদেশের কৃষকদের অগ্রিম দাদন দিয়ে তাদের নিজেদের হয়ে কাঁচামাল উৎপাদনে বাধ্য করতো এবং অতি অল্প মূল্যে তাদের কাছেই সেই কাঁচামাল বিক্রি করতে হতো। এতে চাষির ক্ষতি হলেও তাদের কিছু করার ছিল না। কোম্পানি এবং কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে কাঁচামাল উৎপাদনের কাজ থেকে সরে আসে। একই ভাবে ভারতীয় বণিকরাও কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পেরে শিল্প ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে দেখা যায় চরম বেকারত্বের সমস্যা।।
অসম শুল্কনীতিঃ-
ইউরোপের বণিকদের এদেশে এবং অন্যান্য দেশে শিল্প পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে ঠিক যে পরিমাণ শুল্ক দিতে হতো,ভারতীয় বণিকদের তার থেকে দ্বিগুন পরিমান কত শুল্ক দিতে হতো। ভারতীর বণিকদের অনেক বেশি শুল্ক দিতে হতো বলে তাদের লাভের পরিমাণ খুবই কম ছিল।ঠিক একইভাবে ভারতীয় বণিকরা রেলের মাধ্যমে যখন শিল্পপণ্য ও কাঁচামাল একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত, তখন তাদের ওপর প্রচুর পরিমাণ শুল্ক ধার্য করা হতো। ফলে এত পরিমান শুল্ক দেওয়ার ফলে ভারতীয় বণিকদের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম আসতো। এছাড়াও ইংল্যান্ডের শিল্প পণ্য ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে ছেয়ে গেলে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারে লাভের অংশ খুঁজে পেত না। এছাড়া অত্যধিক রপ্তানি করের ফলে তারা বাইরের দেশেও বাণিজ্যে লাভ করতে পারতো না। মূলত এই সমস্ত কারণে ভারতে অবশিল্পায়ন দেখা দিয়েছিল।।
অবশিল্পায়ন বা দেশীয় শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের ফলাফলঃ-
ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলাফল ছিল গভীর ও ভয়ানক। যেমন -
কাঁচামাল রপ্তানিঃ-
ভারতীয় শিল্প ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ভারতের কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি হতে শুরু করে। ভারতে উৎপাদিত কাঁচা তুলো, কাঁচা রেশম, নীল, চা, প্রভৃতি কাঁচামাল নিয়মিত ইংল্যান্ডের কারাখানাগুলিতে চলে যেতে থাকে। এর ফলে ভারত শিল্পপ্রধান দেশ থেকে কৃষিপ্রধান দেশে পরিণত হয়।
বেকারত্ব বৃদ্ধিঃ-
শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে দেশে তীব্র বেকার সমস্যা দেখা দেয়। বেকার শিল্পী ও কারিগররা অন্য পেশায় মন দেয় এবং অধিকাংশই কৃষিকার্যে নিযুক্ত হয়। ফলে কৃষির ওপর চাপ বাড়ে। এভাবে দেশে কৃষিজীবী ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
নগরের অবক্ষয়ঃ-
অষ্টাদশ শতকে ঢাকা, মুরশিদাবাদ, সুরাট, মসুলিপট্টম, তাঞ্ঝোর প্রভৃতি ছিল শিল্পসমৃদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর।শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে এসব নগর ক্রমে জনবিরল হতে থাকে এবং নগরের অবক্ষয় শুরু হয়।
দারিদ্র্য বৃদ্ধিঃ-
শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ভারতীয় জনজীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। ড. বিপান চন্দ্রের মতে, ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যনীতি ব্রিটিশ শিল্প ও শিল্পপতিদের স্বার্থেই পরিচালিত হয়েছিল। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীকে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য ব্রিটেনের মুখাপেক্ষী করে রাখা এবং ভারত থেকে ব্রিটিশ পণ্যের জন্য কাঁচামাল আহরণ।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল? || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। যদি কেউ সেটি না পড়ে থাকো তাহলে নিচের লিংক থেকে সেই নোটটি পেতে পারো। 👇
ক্লিক করো👉- ভারতের রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য
ভূমিকাঃ 1853 খ্রিস্টাব্দের দিকে বাংলার বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আমলে ভারতে রেলপথ স্থাপন শুরু হয়। বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আমল থেকে শুরু করে ভারতে 1947 পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেলপথ স্থাপনের কাজ চলতে থাকে। এই দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে ব্রিটিশদের রেলপথ স্থাপনের মূলত দুই ধরনের প্রভাব পড়েছিল। যথা - ভারতে রেলপথ স্থাপনের সদর্থক প্রভাব বা ভালো প্রভাব এবং ভারতে রেলপথ স্থাপনের নঞর্থক প্রভাব অথবা খারাপ প্রভাব। নিম্নে ভারতে রেলপথ স্থাপনের এই দুই দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। -
ভারতে রেলপথ স্থাপনের সুফল-
1853 খ্রিস্টাব্দে থেকে শুরু করে 1947 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে যে রেলপথ স্থাপিত হয়েছিল, তার কিছু সুফল দেখা দিয়েছিল। যেমন-
প্রশাসনিক ঐক্য স্থাপনঃ-
ভারতে রেলপথ স্থাপিত হওয়ার ফলে ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলি ছাড়াও ভারতের দুর-দুরান্তে অবস্থিত বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গেও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠায় একটি প্রশাসনিক ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভীত আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ-
ভারতে রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে ভারতীয়দের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।রেলের মাধ্যমে ভারতীয়রা দ্রুত একস্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত সংবাদ প্রেরণ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন, মালপত্র পরিবহন, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলেন। ফলে রেলপথ স্থাপন ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
রেলপথ স্থাপনের ফলে মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য দুইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
যথা- রেলপথ স্থাপনের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে দ্রুত বন্দরে এবং বন্দর থেকে ইংল্যান্ডের কারখানায় প্রেরণ করতে পারতো।এবং দ্বিতীয়তো ইংল্যান্ড থেকে এদেশে আমদানি করা বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য রেলপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে সেখানে অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করতো। এর ফলে মূলত দুই ভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় বণিকদের বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
রেলপথ স্থাপনের ফলে শুধুমাত্র যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং তার কর্মচারীদের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় বণিকরাও এর সুবিধা লাভ করেছিলেন।রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতীয় বণিকরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তাদের বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে সেখানে বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর ফলে ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেইসঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় ভারতীয় বণিকরা শিল্পদ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও সুবিধা পেয়েছিলেন।
শিল্প স্থাপনঃ-
ভারতের রেলপথ স্থাপনের ফলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন শিল্পপতিরা ভারতের শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে এর ফলে ভারতে বিভিন্ন হালকা এবং ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে।ঠিক একই ভাবে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পপতিরা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ছাড়াও অন্যান্য শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে ওঠে।।
কর্মসংস্থানঃ-
ভারতে রেলপথ ব্যবস্থার সূচনা হলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে থাকা ভারতীয় রেলে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। যদিও সেখানে অধিকাংশ উচ্চপদে ইউরোপীয়রা সুযোগ পেত,কিন্তু তবুও নিম্ন পদগুলিতে ভারতীয়রা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছিল। ফলে বহু ভারতীয় সেখানে কাজ করে সংসার চালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন।
ভারতীয় রেলপথ বিস্তারের কুফলঃ-
ভারতের রেলপথ বিস্তারের ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন সুফল বা সদর্থক দিক দেখা গিয়েছিল, ঠিক একই ভাবে ভারতে রেলপথ বিস্তারের ফলে বিভিন্ন কুফলও দেখা গিয়েছিল। যেমন -
সম্পদের বহির্ণমনঃ-
রেলপথ নির্মাণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ হার সুদে গ্যারান্টিপ্রথার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মূলধন বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে সুদ ও মুনাফা হিসেবে প্রচুর পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর ইংল্যান্ডে চলে যেতে থাকে।
বর্ণবৈষম্যের বিভিন্ন প্রকাশঃ-
রেলে ভারতীয়দের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। মালপত্র পরিবহণে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ভারতীয়দের বেশি ভাড়া দিতে হত এবং শ্বেতাঙ্গ যাত্রীরা ভারতীয় যাত্রীদের লাঞ্ছনা করত।
এদেশে ভারীশিল্পের প্রসার না ঘটাঃ-
রেলের ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিগুলি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আমদানি করে এদেশে রেলপথ নির্মিত হয়। ফলে ভারতে রেলপথ নির্মিত হলেও এদেশে ভারীশিল্পের বিশেষ প্রসার ঘটেনি।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যঃ-
রেলপথের প্রসারের ফলে সরকারি উচ্চপদে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদে শ্বেতাঙ্গদেরই নিযুক্ত করা হত। রেলের উচ্চপদগুলিতে মাত্র ১০ শতাংশ ভারতীয় নিযুক্ত ছিল।
দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাবঃ-
রেল যোগাযোগের দ্বারা দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলে খাদ্য পাঠানো সহজতর হলেও পরোক্ষভাবে এই রেল ব্যবস্থাই আবার দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য দায়ী ছিল। কারণ, রেলের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য দেশের অন্যত্র, এমনকি বন্দরগুলিতে খুব দ্রুত পৌঁছানো যেত। এর ফলে বিদেশে নির্বিচারে রপ্তানির ফলে উৎপাদক অঞ্চলে খাদ্যের ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
জলপথ ও সেচের ক্ষতিঃ-
দেশের বিস্তীর্ণ অংশে রেলপথ এবং নদীনালার ওপর রেলের সেতু নির্মিত হলে নদীনালায় পলি সঞ্চিত হয়ে অলস্রোত কমে আসে এবং নদীর পরিবহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। ফলে জলপথে পরিবহণ এবং কৃষিজমিতে সেচের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশীয় শিল্প বাণিজ্যের সর্বনাশঃ-
রেলের মাধ্যমে ভারতের দূরদুরান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিলাতি পণ্যসামগ্ৰী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশীয় পণ্যগুলি অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় এবং দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য মার খায়।
শাসনের ফাঁস কঠিন হওয়াঃ-
সারা ভারত জুড়ে রেলপথের প্রসারের ফলে ভারতবাসীর ওপর ব্রিটিশ শাসকদের বজ্রমুষ্টি আরও শক্ত হয়। দেশের কোনো প্রান্তে কোনো বিদ্রোহ বা বিরোধিতার সামান্য সম্ভাবনা দেখা দিলে রেলপথের মাধ্যমে খুব শীঘ্র সেখানে পৌঁছে গিয়ে সরকারি বাহিনী তা দমন করতে সক্ষম হয়।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভারতে রেলপথ বিস্তার শুরু করেছিল,তা অনেকাংশেই সফল হয়েছিল। ভারতের রেলপথ স্থাপনে তৎকালীন সময়ের ভারতীয়দের তুলনায় ব্রিটিশরাই বেশি উপকৃত হয়েছিল। কিন্তু একথা অস্বীকার করা যায় না যে, ব্রিটিশদের রেলপথ পরবর্তীকালে ভারতীয়দের যথেষ্ট উপকার করেছিলো।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল? || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল? |
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল? || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023
ভূমিকাঃ- ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য আরও শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে ভারতে রেলপথ স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 1832 খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় সনদ আইনের আগেই ভারতের রেলপথ স্থাপনের কথা চলতে থাকে। কিন্তু ভারতে মূলত রেলপথ স্থাপনের প্রথম সূত্রপাত ঘটে লর্ড ডালহৌসির আমলে। ডালহৌসি সর্বপ্রথম ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় তাকে ভারতীয় রেলপথের জনক বলা হয়। গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে 1853 সালের 16 এপ্রিল বোম্বে থেকে থানে পর্যন্ত প্রথম স্থাপন করেন।এভাবেই 1853 থেকে 1947 পর্যন্ত তাদের রেলপথ স্থাপনের কাজ চলতে থাকে। ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেলপথ স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য গুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য ছিল-
ভারতীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করাঃ-
ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে বাণিজ্য করতো,সেই বাণিজ্যপণ্য মূলত ইংল্যান্ড থেকে আনাñ হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডে শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারত থেকে সংগ্রহ করা হতো।কিন্তু ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ছিল। এজন্য ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে দ্রুত বন্দরে পৌঁছানো এবং বন্দর থেকে ইংল্যান্ডের কারখানাগুলিতে প্রেরণ করার জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বাজারে ইংল্যান্ডের শিল্প পণ্য পৌঁছানোঃ-
ভারতে রেলপথ স্থাপনের আরো একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংল্যান্ড থেকে দেশে আমদানি করা বিভিন্ন শিল্প ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু রেলপথ ছাড়া ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইংল্যান্ডের শিল্প পণ্য পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত মুশকিল ছিল। এই মুশকিল আসান করার জন্যই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। রেলপথ স্থাপিত হলে রেলের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে তাদের শিল্প পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছিল এবং সেখানকার অভ্যন্তরীণ বাজারে তারা দখল করে মুনাফা অর্জন করতে পেরেছিল।।
সামরিক উদ্দেশ্যঃ-
বড়লাট লর্ড ডালহৌসি সামরিক প্রয়োজনে ভারতের রেলপথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। তার আগে লর্ড হার্ডিঞ্জ 1846 সামরিক প্রয়োজনে ভারতের রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তখন তা তেমনভাবেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক বিদ্রোহ দেখা দেয়। আঞ্চলিক বিদ্রোহ গুলি দমন করার ক্ষেত্রে সেখানে দ্রুত সেনা পাঠানো, সেনাদের কাছে খাদ্য, অস্ত্র প্রেরণ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ইত্যাদির জন্য দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজন থেকেই লর্ড ডালহৌসি তার এক প্রতিবেদনে ভারতের রেলপথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। সেই প্রতিবেদনের পরেই 1853 খ্রিস্টাব্দে থেকে সামরিক প্রয়োজনেও ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।।
আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলাঃ-
রেলপথ স্থাপনের আগে ভারতের বিভিন্ন প্রেসিডেন্সি শহর যেমনঃ বাংলা, বোম্বাই এবং মাদ্রাজ - এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের বড়লাট বা ছোটোলাট, প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের মধ্যে যোগসূত্র তেমনভাবে ছিল না। তাছাড়াও আপাদকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে রেলপথ স্থাপন করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রেসিডেন্সি শহর গুলির সঙ্গে দ্রুত যোগসুত্র স্থাপন করার উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রেসিডেন্সি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল গুলির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে সেখানকার আপৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মূলত তাদের নিজেদের স্বার্থেই ভারতের রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।ভারতের রেলপথ স্থাপনের ফলাফল গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,,ভারতে রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতীয়দের সুযোগ-সুবিধা তুলনায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং তার কর্মচারীদেরই অধিক সুবিধা হয়েছিল। তাই সবশেষে বলা যায়, ভারতে রেলপথ স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা।
ভারত ও চীনের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আধিপত্যের তুলনামূলক আলোচনা || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
ভারত ও চীনের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আধিপত্যের তুলনামূলক আলোচনা
ভূমিকাঃ 1498 খ্রিস্টাব্দে কলম্বাস ও আমেরিকা ভেসপুচির সমুদ্রযাত্রার পরে বিভিন্ন নতুন নতুন দেশ আবিষ্কারের পরেই ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলো নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলতে শুরু করেছিল। ইউরোপের শক্তিশালী দেশ গুলির মধ্যে ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেন, পোর্তুগাল, রাশিয়া প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ইউরোপের এই শক্তিগুলি চীন এবং ভারতবর্ষে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ইউরোপের শক্তিগুলির ভারত এবং চীনে উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।সেগুলো ভারত ও চীনে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আধিপত্যে বিস্তারের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে দেখতে পারি। যেমন -
বিদেশিদের আগমনকালঃ-
• ভারতে ব্রিটিশদের আগমন শুরু হয়েছিল 1498 খ্রিস্টাব্দে। এ সময় একজন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা সমুদ্র পথে যাত্রা করে সর্বপ্রথম ভারতের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান। এবং তার আসার পর থেকেই ইউরোপের অন্যান্য শক্তিশালী বণিক জাতি- ইংরেজরা, ফরাসিরা,ওলন্দাজ, দিনেমার প্রভৃতি ভারতে আসতে শুরু করে।
• চীনে মূলত বিদেশিদের আগমন হয়েছিল 1516 খ্রিস্টাব্দে রাফায়েল পেরস্ট্রোল নামে একজন পর্তুগিজ বণিকের হাত ধরে। সে পর্তুগিজ বণিকের চীনে আসা এবং তিনি বাণিজ্য করে অধিক মুনাফা লাভের পর থেকেই ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলো আসতে শুরু করে এবং সেখানে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।
বিদেশিদের আগমনের উদ্দেশ্যঃ-
• কলম্বাসের ভারত আবিষ্কারের পরে ইউরোপের অন্যান্য জাতিগুলো ভারতে এসেছিল মূলত বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে। ভারতে বাণিজ্য করে অথবা ভারত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তারা মূলত অধিক মুনাফা লাভের জন্যই ভারতে এসেছিল।
• ভারতের মতো চিনেও ঠিক একইভাবে বিদেশি শক্তি গুলি মূলত বাণিজ্য করে অধিক মুনাফা লাভের জন্য নিজেদের আগমন ঘটিয়েছিল।
আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধঃ-
• ভারতে ইউরোপীয় শক্তি গুলির মধ্যে ইংরেজরাই সবচেয়ে বেশি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছিল। ইংরেজরা বিভিন্ন কারণে 1757 খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজ পরাজিত হলে বাংলায় ইংরেজদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এরপর 1764 খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের দখল করলে সমস্ত ভারত ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়।
• অন্যদিকে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথাকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের সঙ্গে চীন সরকারের সংঘর্ষ বাঁধে। যার ফলে 1839 খ্রিস্টাব্দে প্রথম চীনের বিরুদ্ধে ইংরেজদের আফিমের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে 1842 খ্রিষ্টাব্দে প্রথম নানকিং এর সন্ধির মাধ্যমে ইংরেজরা চীনে নিজদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এরপর আরও বিভিন্ন যুদ্ধ এবং সন্ধির মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিগুলি ধীরে ধীরে চীনে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়।
বিদেশিদের বাণিজ্য স্থাপনঃ-
• শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের কল-কারখানাগুলোকে অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি করা উন্নত মানের শিল্পপণ্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিনাশুল্কে ভারতে নিয়ে আসে এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য দখল করে সেখানে বাণিজ্য করতে থাকে।
• ঠিক একইভাবে ভারতের মতো চীনেও বিদেশি শক্তিগুলি ক্যান্টন সহ আরও বিভিন্ন বন্দরে বাণিজ্য করার অধিকার পেলে, তারা সেখানে নিজেদের দেশের কলকারখানায় উৎপাদিত দ্রব্য চীনে আমদানি করে সেখানে বাণিজ্য করতে থাকে।।
কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশঃ-
• ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতকে তাদের কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিণত করেছিল।
• অন্যদিকে চীনকে ইউরোপীয় শক্তিগুলি,- রাশিয়া,স্পেন, পর্তুগিজ, ফ্রান্স,ব্রিটেন প্রভৃতি দেশগুলি নিজেদের কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিণত করে। চীন থেকে তারা মূলত সবুজ চা,বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ,দারুচিনি প্রভৃতি নিজেদের দেশে রপ্তানি করতে থাকে।
রেলপথের প্রসারঃ-
• 'ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের শিল্পোৎপাদনের প্রয়োজনে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির কাঁচামাল বন্দরে পৌঁছে দেওয়া, বিলাতি শিল্পপণ্য ভারতের দূরদূরান্তের বাজারগুলিতে পৌঁছে দেওয়া, দ্রুত সেনাবাহিনী প্রেরণ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ভারতে রেলপথ নির্মাণ শুরু করে।
• অন্যদিকে ইউরোপের শক্তিগুলি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কাঁচামাল গুলি নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেলপথের প্রসার ঘটিয়েছিল।
বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহঃ-
• ব্রিটিশ সরকার এবং ভারতের জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত প্রজারা বারংবার বিদ্রোহ ও আন্দোলনে শামিল হয়। এসব আন্দোলনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ফরাজি আন্দোলন, ওয়াহাবি আন্দোলন, রংপুর বিদ্রোহ, মহাবিদ্রোহ, অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রভৃতি।
• বিদেশি বণিকদের শোষণ এবং মাঞ্জু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে চিনের সাধারণ শোষিত ও নির্যাতিত মানুষ বিভিন্ন বিদ্রোহ ও আন্দোলনে শামিল হয়। এসব আন্দোলনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল। শ্বেতপদ্ম সমিতির আন্দোলন, তাইপিং বিদ্রোহ, বক্সার বিদ্রোহ, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে-র আন্দোলন, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রভৃতি।
ভারত এবং চীনে ঔপনিবেশিক শক্তি গুলির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যেমন কিছু সাদৃশ্য রয়েছে ঠিক তেমনই কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। যেমন -
• ভারতে প্রথম থেকে বিদেশী শক্তির আগমনকে নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কিন্তু চিনে বিদেশী বণিকদের আগমনকে নিয়ে চীন সরকার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
• ভারতের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করেছিল। অর্থাৎ ভারতেকে তারা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো শাসন করতো।কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে সেরকমটা দেখা যায়নি।
• ভারতের ক্ষেত্রে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিগুলি বাণিজ্য করতে আসে ও পরবর্তীকালে শুধুমাত্র ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অর্থাৎ ইংরেজরা ভারতে নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু অপরদিকে চীন সম্পূর্ণভাবে ইংরেজদের দখলে বা ইউরোপীয় শক্তির দখলে যায়নি। চীনে মূলত রাশিয়া,স্পেন,ইংল্যান্ড প্রভৃতি শক্তিগুলির আধিপত্য ছিল।
wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর |
ভূমিকাঃ- স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা জেমস মিল কখনো ভারতের না এসেও বিভিন্ন মহাফেজ খানার বিভিন্ন তথ্য ও নথিপত্রের সাহায্য ভারতের ইতিহাস রচনা শুরু করেছিলেন। জেমস মিলের লেখা হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থে ভারতে সম্পর্কে তার এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে। জেমস মিলের হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ভাবে ভারতের যুগ বিভাগ, ভারতকে সবথেকে নিকৃষ্ট হিসেবে তুলে ধরা,ব্রিটিশ-ভারতের যুক্তিকতা, ব্রিটিশ শাসনের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি ব্যাখ্যা করেছেন। জেমস মিলের সেই দৃষ্টিভঙ্গির নিম্নে আলোচনা করা হল।
সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিঃ-
জেমস মিলের হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থের তিনি ভারতকে সব দিক থেকেই নিকৃষ্ট বলে মনে করেছেন। তিনি ভারতের সরকারের প্রকৃতি,আইন ব্যবস্থা এবং কর ব্যবস্থাকে নিকৃষ্ট বলে মনে করেছেন। জেমস মনে করতেন এই তিনটি বিভাগের সংস্কার করলে ভারতীয় সমাজের উন্নয়ন সম্ভব।
সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতের যুগ বিভাগঃ-
জেমস মিল তার হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থে ভারতের যুগকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা -
প্রথমত হিন্দু যুগ, দ্বিতীয়ত মুসলিম যুগ এবং 1765 সালে এরপর থেকে তিনি ভারতকে ব্রিটিশ যুগ হিসেবে ভাগ করেছেন। তিনি এই তিনটি যুগকে হিন্দু সভ্যতা,মুসলিম সভ্যতা এবং ব্রিটিশ সভ্যতা বলে উল্লেখ করেছেন।
ভারতীয় সমাজকে নিকৃষ্ট হিসেবে তুলে ধরাঃ-
জেমস মিল তার হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থের ভারতের সমস্ত কিছুকেই নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি সবকিছুকেই পাশ্চাত্যের চেয়ে নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন। জেমস মনে করতেন, অষ্টাদশ শতকে ভারতীয় যে দূরাবস্থার মধ্যে বসবাস করতো, তা তাদের অতীত অবস্থার স্বাভাবিক পরিণতি।ব্রিটিশরা ভারতে আসার পূর্বে ভারতের সমাজ গতিহীন হয়ে পড়ে এবং সামাজিক অগ্রগতির পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশদের আগমনের ফলেই ভারতের উন্নতি হয়েছে বলে তিনি মনে করতেন।
ভারতের ব্রিটিশ শাসনের প্রয়োজনীয়তাঃ-
জেমস মিলের মতে ভারতীয়রা সমাজে নানা জাতি এবং প্রথায় বিভক্ত থাকায় এরূপ দেশের উন্নতি সাধিত হওয়া সম্ভব নয়। ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকলেই পাশ্চাত্যের জ্ঞান, বিজ্ঞান,শিল্প রীতি নীতি প্রযুক্তি ইত্যাদি ভারতীয়দের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং এর ফলে ভারত উন্নত হবে।জেমস মিলের মতে ব্রিটিশ শাসকদের কর্তব্য হলো ভারতীয়দের উন্নত আইন এবং শাসনের অধীনে এনে তাদের সামগ্রিক উন্নতি ঘটানো। এবং ভারতের স্বায়ত্তশাসন অথবা স্বাধীনতা না দেওয়া। এভাবে জেমস মিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছেন।।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যুক্তিকতা প্রমাণঃ-
জেমস মিলের মতে ভারতের সরকারের রুপ,আইন ব্যবস্থা,কর ব্যবস্থা সবই পাশ্চাত্যের তুলনায় নিকৃষ্ট ছিল। তার মতে ভারতের পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক অবস্থা কখনই ভারতীয়দের উন্নতি সাধন করতে পারেনা। ভারতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অধিক উন্নত আইন ব্যবস্থা এবং শাসন।ব্রিটিশরা উন্নত সভ্যতার অধিকারী বলে তাদের শাসনাধীনে ভারতীয় সভ্যতার উন্নতি ঘটবে।
উপসংহারঃ জেমস মিল ভার সম্পর্কে যে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবর্তন করেছিলেন, তা অনেক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক সমর্থন করলেও আধুনিক কালের ভারতীয় ঐতিহাসিকরা কখনোই সমর্থন করেন না। কারণ তিনি যেভাবে ভারতের ইতিহাস রচনা করেছেন তাতে অনেক ভুল ত্রুটি ছিল। এবং জাতিবিদ্বেষ অথবা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তার ইতিহাস রচনাকে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করা হয়।।
আশাকরি যে, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ History MCQ Question Answer,Class 12 History Long Question Answer And History Notes গুলো তোমাদের কাজে লাগবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের MCQ প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023