দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু WB Class 12 Modern Indian History MCQ Question Answer & Class 12 History LA Question Answer, Class 12 History Notes তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের MCQ প্রশ্ন উওর || West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো।
1. ইউরোপের সর্বাধিক শক্তিশালী ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল—
• পোর্তুগাল
• ব্রিটেন
• জার্মানি
• ফ্রান্স
• উওরঃ-
2-ভাস্কো-দা-গামা প্রথম ভারতের কোন্ বন্দরে পদার্পণ করেন?
• দমন
• গোয়া
• কালিকট
• কোচিন
• উওরঃ কালিকট
3-ইয়ান্দাবুর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ইংরেজদের সঙ্গে-
• ব্রহ্মদেশের
• ভারতের
• আফগানিস্তানের
• নেপালের
• উওরঃ ব্রহ্মদেশের
4- ইন্দোনেশিয়ায় উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল—
• ফরাসিরা
• পোর্তুগিজরা
• ইংরেজরা
• ডাচরা
• উওরঃ ডাচরা
5-মার্কিন সেনাপতি পেরি আগমন করেন—
• সিংহলে
• ভারতে
• জাপানে
• চিনে
• উওরঃ জাপানে
6.কোর্টেস যে দেশের অভিযাত্রী ছিলেন—
• স্পেন
• পোর্তুগাল
• হল্যান্ড
• ইংল্যান্ড
• উওরঃ স্পেন
7. 'নতুন বিশ্ব'-এর নামকরণ করেন— • ভাস্কো-দা-গামা
• কলম্বাস
• আমেরিগো ভেসপুচি
• জন ক্যাবট
• উওরঃ আমেরিগো ভেসপুচি
8. কানাডায় উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল—
• স্পেনের
• ফ্রান্সের
• ডেনমার্কের
• ইংল্যান্ডের
• উওরঃ ফ্রান্সের
9. আমেরিকায় ফরাসিদের উপনিবেশগুলি হাতছাড়া হয় -
• ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে
• ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে
10. 'মার্কেন্টাইলবাদ' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন -
• লর্ড অ্যাক্টন
• অ্যাডাম স্মিথ
• লর্ড মার্কেন্টাইল
• ডেভিড টমসন
• উওরঃ অ্যাডাম স্মিথ
11. 'Imperialism: A Study' গ্রন্থটি রচনা করেন—
• লেনিন
• অ্যাডাম স্মিথ
• জন অ্যাটকিনসন হবসন
• ডেভিড টমসন
• উওরঃ জন অ্যাটকিনসন হবসন
12. 'সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর' গ্রন্থটি রচনা করেন-
• লেনিন
• অ্যাডাম স্মিথ
• জন অ্যাটকিনসন হবসন
• ডেভিড টমসন
• উওরঃ লেনিন
13. “সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ সম্প্রসারিত রূপ"—একথা বলেছেন
• লেনিন
• অ্যাডাম স্মিথ
• জন অ্যাটকিনসন হবসন
• ডেভিড টমসন
• উওরঃ জন অ্যাটকিনসন হবসন
14. 'শ্বেতাঙ্গ জাতির দায়বদ্ধতা' ধারণার অন্যতম প্রবন্ধা হলেন-
• কিপলিং
• হবসন
• লেনিন
• চার্লস ডারউইন
• উওরঃ কিপলিং
15. মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন যে দেশে সমাজসেবার কাজে প্রবেশ করেন সেটি হল -
• আমেরিকা
• আফ্রিকা
• চিন
• ভারত
16. "হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি রচনা করেন—
• সুমিত সরকার
• জন স্টুয়ার্ট মিল
• মেকলে
• জেমস মিল
• উওরঃ জেমস মিল
17. হোয়াইট মেনস বার্ডেন' কবিতাটি রচনা করেন -
• জুলে ফেরি
• রুডইয়ার্ড কিপলিং
• হবসন
• লর্ড ক্রোমার
• উওরঃ রুডইয়ার্ড কিপলিং
18. পাবলো পিকাসো যে দেশের চিত্রশিল্পের দ্বারা প্রভাবিত হত তা হল
• গ্রিস
• আফ্রিকা
• ভারত
• চিন
• উওরঃ আফ্রিকা
19- কাদের মধ্যে নানকিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
• ফরাসি এবং চীনের মধ্যে
• ইংরেজদের ও চীনের মধ্যে
• ওলন্দাজদের এবং চীনের মধ্যে
• ইংরেজদের ও ফরাসিদের মধ্যে
• উওরঃ ইংরেজদের ও চীনের মধ্যে
20- কত খ্রিস্টাব্দে নানকিং এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
• ১৮৪২
• ১৮৩৯
• ১৮৪৫
• ১৮৪২
• উওরঃ ১৮৪২
21- আমেরিকা কত সালে স্বাধীনতা লাভ করেছিল?
• ১৭৮৩
• ১৭৮৪
• ১৭৮৫
• ১৮৮৩
• উওরঃ ১৭৮৩
22- ওয়েলথ অফ নেশনস গ্রন্থটি কার লেখা?
• ম্যাকিয়াভেলি
• অ্যাডাম স্মিথ
• লেলিন
• অ্যাটকিনসন হবসন
• উওরঃ অ্যাডাম স্মিথ
23- '-পুঁজিবাদী অর্থনীতি হলো যুদ্ধের জন্মদাতা'- এটি যার মত তিনি হলেন-
• ম্যাকিয়াভেলি
• অ্যাডাম স্মিথ
• লেলিন
• অ্যাটকিনসন হবসন
• উওরঃ লেলিন
24- কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম অহিফেনের যুদ্ধ হয়েছিল?
• ১৮৪২
• ১৮৩৯
• ১৮৫৬
• ১৮৩৯
• উওরঃ ১৮৩৯
25- ত্রয়োদশ উপনিবেশ কথাটি যে দেশের সঙ্গে যুক্ত, তা হল -
• ইংল্যান্ড
• ফ্রান্স
• স্পেন
• ইতালি
• উওরঃ ইংল্যান্ড
এশিয়া মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো || ভারত ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের বিবরণ দাও
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
ভূমিকাঃ পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা 1498 খ্রিস্টাব্দের 8 ই জুন সামুদ্রিক অভিযান শুরু করেছিলেন। তিনি সামুদ্রিক অভিযানের মাধ্যমে 1498 খ্রিস্টাব্দের ভারতের কালিকটে পৌঁছেছিলেন। ভাস্কো-দা-গামা ভারতে আসার পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিগুলি যেমন পর্তুগিজ,ওলন্দাজ ইংরেজি প্রভৃতি দেশের বণিক জাতি ভারতে আসা শুরু করে এবং এই বিভিন্ন জাতির বণিকদের ভারতে আসার পর থেকেই আস্তে আস্তে ভারত সহ এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিনে পরিণত হতে শুরু করে।।
ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠাঃ-
1498 খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-দা-গামা ভারতে এসে বাণিজ্য শুরু করার পর ইউরোপের ওলন্দাজ,ইংরেজ, ফরাসি, দিনেমার প্রভৃতি বণিক জাতিরা ভারতে আসতে শুরু করে। প্রথমদিকে তাদের ভারতে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে এসে বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করে ভারত থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য নিজের দেশে এবং অন্যান্য দেশে নিয়ে গিয়ে মুনাফা অর্জন করা।। কিন্তু ধীরে ধীরে ভারতে ব্যবসা করতে আসা এই সমস্ত বণিক জাতিরাই ভারতে নিজরদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ইউরোপীয় বণিকরা ভারতে বানিজ্য করার উদ্দেশ্য প্রবেশ করলেও ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী শাষকদের দুর্বলতা,ভারতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্যোগী হয়ে ওঠে। এবং এরপরেই ইংরেজরা 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাবকে,1764 সালে মীর কাসেমকে, 1756 খ্রিস্টাব্দের ফরাসিদের এবং 1759 খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজদের, এবং একে একে মারাঠা, শিখদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইংরেজরা ভারতকে তাদের একটি ঔপনিবেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়।। এবং 1857 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়।
নেপালে ব্রিটিশদের আধিপত্য বিস্তারঃ-
ব্রিটিশরা যে শুধুমাত্র ভারতের আধিপত্য বিস্তার করার সময় ভারতের উপরেই নজর দিয়েছে তা নয়। ব্রিটিশরা ভারতের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যোগী হয়েছিল।। গোরখা জাতি অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে নেপাল জয় করে সেখানে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। শীঘ্রই রাজা পৃথ্বীনারায়ণের নেতৃত্বে নেপাল রাজ্যবিস্তারের চেষ্টা চালাতে থাকে। লর্ড কর্নওয়ালিশ (১৭৮৬-৯৩ খ্রি.) কার্কপ্যাট্রিক নামে জনৈক ব্রিটিশ প্রতিনিধিকে নেপালে পাঠিয়ে নেপালের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু দীর্ঘকাল নেপালের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানির শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপন সম্ভব হয়নি। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা ইংরেজ অধ্যুষিত বাটওয়াল (Butwal) ও শেওরাজ (Sheoraj) দখল করলে ইংরেজরা তাদের যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয় এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ (১৮১৪-১৬ খ্রি.) শুরু হয়। যুদ্ধে গোরখা বাহিনী পরাজিত হলে নেপাল ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সগৌলির সন্ধি (১৮১৬ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির দ্বারা সিকিম, সিমলা, মুসৌরি, নৈনিতাল, আলমোড়া প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল-সহ বর্তমান কুমায়ুন ও গাড়োয়াল জেলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
মায়ানমারে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-
ভারতের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত মায়ানমারের আলমপোয়া দক্ষিণব্রহ্ম এবং ইরাবতী অঞ্চল জয় করে সেখানে তাদের একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।পরবর্তীকালে এই সমাজের আরো প্রসার ঘটে। কিন্তু এর মধ্যেই ইংরেজরা মায়ানমারে তাদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ নেয়। মায়ানমারকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ইংরেজরা সর্বপ্রথম 1824 খ্রিস্টাব্দে রাজা পাগিডোয়াকে পরাজিত করে। প্রথম যুদ্ধ জয়ের পর ইন্দারা সন্ধির মাধ্যমে ইংরেজরা মায়ানমারের বেশ কিছু অংশ দখল করে এবং সেইসঙ্গে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পায়। দ্বিতীয় বার অর্থাৎ 1852 খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ ব্রহ্ম' যুদ্ধ ব্রহ্মদেশের রাজা আবারো ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয় এবং এর ফলে ইংরেজরা মায়ানমারের পেগু দক্ষিণব্রহ্ম এবং সবশেষে তৃতীয়বারের যুদ্ধে 1885 খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধে ব্রিটিশরা মায়ানমারের রাজাকে আবার পরাজিত করে সমস্ত ব্রহ্মদেশ ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত করে।
আফগানিস্থানে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-
ব্রিটিশরা নেপাল এবং মায়ানমারকে দখল করার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানকে দখল করার ক্ষেত্র বিশেষ নজর রেখেছিল। কারণ আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান, ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে মোটেও সুবিধার ছিল না। কারণ ব্রিটিশদের মনে সবসময় এই ভয় ছিল যে,রাশিয়া যদি আফগানিস্তানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তাহলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সেকারণেই ইংরেজরা আবগানিস্থানকে দখল করার জন্য মেয়েদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল।।
ইংরেজদের আফগানিস্তানকে দখল প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু 1878 খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটনের আমলে ইংরেজরা দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানকে আক্রমণ করলে সে যুদ্ধেই আফগানিস্থান হেরে যায়। এর ফলে আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।।
সিংহল বা শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ আধিপত্যঃ-
সিংহল বা শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশদের আগেই ওলন্দাজদের আধিপত্য ছিল।কিন্তু 1796 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন কারণে ওলন্দাজরা সিংহল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে 1802 অ্যামিয়েন্সের সন্ধির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় ইংল্যান্ডের অধিকার চলে আসে এবং শ্রীলংকাও ব্রিটিশদের ঔপনিবেশে পরিণত হয়।।
নতুন বিশ্ব কাকে বলে বা নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝায়? || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
নতুন বিশ্ব কাকে বলে বা নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝায়?
উওরঃ- পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্র সম্পর্কে মানুষের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিন্তু ইটালিতে নবজাগরণের থেকে ইউরোপের মানুষের মধ্যে পৃথিবী কে জানার এবং নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার করার উৎসাহ জেগে ওঠে। এবং এই উৎসাহের জেরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিক জাতিরা সামুদ্রিক যাত্রার মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন দেশ আবিষ্কার করে সেখানে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একারণেই ইউরোপের বিভিন্ন বণিক জাতিরা পৃথিবীকে আবিষ্কার করতে সামুদ্রিক যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে।
এই উদ্দেশ্য কেন্দ্র করে এক ইতালীয় নাবিক কলম্বাস স্পেন সরকারের সহযোগিতায় ভারতে আসার জন্য যাত্রা শুরু করেন এবং তিনি 1492 খ্রিস্টাব্দের 12 ই মার্চ তিনি আমেরিকায় পৌঁছান। কিন্তু তখন তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি ভারতে এসেছেন। কিন্তু 1407 সালের আরও এক ইতালির এক নাবিক আমেরিকা ভেসপুচি তিনি 1407 সালের আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পা রাখেন। এবং তিনিই সর্বপ্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে,তিনি ভারতে আসেননি বরং তিনি অন্য কোনো ভূখণ্ড এসেছেন। আমেরিগো ভেসপুচির আমেরিকায় আসার পর, তিনি লরঞ্জেয় দ্য মেডিচিকে একটি চিঠির মাধ্যমে আমেরিকাকে ' Mundus Novus বা New World বা নতুন বিশ্ব বলে উল্লেখ করেছিলেন। কলম্বাস সর্বপ্রথম আমেরিকায় পৌছালেও ইতালীয় নাবিক এবং স্পেনীয় অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি সর্বপ্রথম নতুন বিশ্ব বা New World কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
নতুন বিশ্বে উপনিবেশিক অভিযানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বা কারণঃ-
আমেরিগো ভেসপুচি, কলম্বাস প্রমুখের আমেরিকায় পদার্পণের পর থেকেই ইউরোপের অন্যান্য শক্তিশালী দেশের নাবিকগন আমেরিকায় আসতে শুরু করে এবং তাদের অভিযানের ফলেই নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।। নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় ফরাসি,ইংরেজ, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ ইত্যাদি শক্তির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার যে প্রধান কারণ বা উদ্দেশ্য ছিল, তা হল-
নতুন বিশ্বের বা আমেরিকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠনঃ-
নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় ইউরোপীয় শক্তি গুলির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রধান আমেরিকার বিভিন্ন সম্পদ লুণ্ঠন করা। ইউরোপীয় শক্তিগুলিত আমেরিকায় প্রদানের পূর্বে আমেরিকায় রেড ইন্ডিয়ান নামক স্থানীয় অধিবাসীরা বসবাস করতো। এবং সেই সময় আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ,জমি জায়গা,বিপুল পরিমাণ সোনা-রুপা ইত্যাদির সম্ভার ছিল। এবং আমেরিকা থেকে এই সমস্ত মূল্যবান সম্পদ নিজেদের দেশে নিউএ বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভ করাই ছিল ইউরোপীয় শক্তি গুলির প্রধান উদ্দেশ্য।।
বাণিজ্যের প্রসারঃ-
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে কানাডার ফার,ভার্জিনিয়ার তামাক এবং তুলো এবং অন্যদিকে ব্রাজিলের চিনিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী ফসলের প্রচুর চাহিদা ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন বণিকজাতি এই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্যই নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী হয়েছিল। স্পেন, পর্তুগাল,ফরাসি, ব্রিটেনের বণিকজাতিরা আমেরিকার নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে এই সমস্ত উৎপাদিত পণ্য ইউরোপে নিয়ে গিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ লাভ করতো। এবং এভাবে ইউরোপের বিভিন্ন বণিকজাতিদের মাধ্যমে নতুন বিশ্ব বা আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।।
আন্তর্জাতিক বাজার দখলঃ-
ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের পরে পণ্যের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী পরিমাণে পণ্য উৎপাদন হতে থাকে। এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত পণ্য অন্যান্য দেশে বিক্রির জন্য বা রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাজার দখল করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই কারণেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলি নতুন বিশ্বে বা আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।।
খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারঃ-
ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলির নতুন বিশ্বে বা আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল সেখানে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করা। আমেরিকা কলম্বাস এবং আমেরিগো ভেসপুচির পদার্পণের পর, জানতে পারা যায় যে, সেখানে রেড ইন্ডিয়ান নামক আদিবাসীরা বসবাস করে। এটা জানার পরেই ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের ধর্ম প্রচারকদের রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার জন্য, নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা সরকারকে জানায়। এবং তাদের কথা ধরেই বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলির আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগ নেয়।।
বর্ধিত জনসংখ্যার বাসস্থান তৈরি করাঃ-
ইউরোপের নবজাগরণের পর ইউরোপে খুব দ্রুত হারে জনগণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই দ্রুত বাড়তে থাকা জনগণের সঠিক বাসস্থান তৈরি করার জন্য নতুন কোনো ভূখণ্ডের প্রয়োজন ছিল। এই কারণে নতুন বিশ্বের ( New World ) এর আবিষ্কারের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি সেখানে নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে এই বাড়তি জনসংখ্যার বাসস্থান তৈরি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।।
উপসংহারঃ-
সুতরাং পরিশেষে বলা যায়,কলম্বাস এবং আমেরিগো ভেসপুচির নতুন বিশ্ব বা আমেরিকা আবিষ্কার পরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলো যেমন স্পেন, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন,পর্তুগাল ওলন্দাজ আমেরিকার বিপুল পরিমাণ সোনা-রুপা, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ, সেখানকার কৃষিজমি, সেখানে ধর্মের প্রসার এখান থেকে বিভিন্ন পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভ করার উদ্দেশ্যেই তারা নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।।
নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার কিছু ফলাফলঃ-
নতুন বিশ্ব বা আমেরিকায় ইউরোপীয় শক্তিগুলিত উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ফলাফল মূলত দুই ধরনের ছিল। একটি ছিল কটি ইতিবাচক ফলাফল এবং অপরটি ছিল নেতিবাচক ফলাফল। ইতিবাচক ফলাফল বলতে ইউরোপীয় শক্তি গুলির মুনাফার দিকটি এবং নেতিতিবাচক বলতএ আমেরিকার বসবাসকারী রেড ইন্ডিয়ান এবং আমেরিকান সম্পদের অবাধ লুন্ঠনের দিকটির কথা বলা যায়। যেমন-
সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ,আমেরিকার তাদের উপনিবেশ গড়ে তুললে,আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের এই সমস্ত দেশের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্য বিকাশ গটেছিল।
ক্রীতদাসদের উপর অত্যাচারঃ-
স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ,আমেরিকার তাদের উপনিবেশ গড়ে তুললে,আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের জমিতে কৃষিকাজ করার জন্য সেখানে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই শ্রমিকের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিগুলি আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড় করে ক্রীতদাসদের আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশে নিয়ে আসতো। এর ফলে সেখানে তাদের সঙ্গে সঙ্গে রেড ইন্ডিয়ানদেরও শোষণের শিকার হতে হতো।
আমেরিকার সম্পদ লুণ্ঠনঃ-
ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলির আমেরিকায় নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল,আমেরিকার সম্পদ লুট করা।স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ আমেরিকার প্রচুর সোনা-রুপা নিয়ে আসতো। এবং আমেরিকার জমিতে যে সমস্ত কৃষি পণ্য উৎপাদিত হতো তা থেকে প্রচুর পরিমাণে তারা মুনাফা কামিয়ে নিতো।।
দারিদ্র্য বৃদ্ধিঃ-
মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউরোপের দরিদ্র মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় মজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ফলে ইউরোপের একশ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ সঞ্চিত হলেও দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়।
পুঁজিপতি শ্রেণির উত্থানঃ-
দক্ষিণ আমেরিকার সোনা ও রুপা-সহ বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে সম্পদ আমদানির ফলে ইউরোপের একশ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয়। তারা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে ধার দিত এবং শিল্পে বিনিয়োগ করত। এভাবে পুঁজিপতি বা ক্যাপিটালিস্ট (Capitalist) শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
শিল্পে অগ্রগতিঃ-
মূলধনের জোগান, উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, উপনিবেশে পণ্য বিক্রির বাজারের প্রসার প্রভৃতির ফলে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন ক্রমে বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। এই বিপ্লব ক্রমে ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও প্রসারিত হয়। সর্বাধিক অগ্রগতি লক্ষ করা যায় বস্ত্রশিল্পে।
বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভবঃ-
এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠলে এইসব অঞ্চলে তাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটে। এভাবে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে।
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা,
সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বােঝায়? সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল লেখাে।
অথবা,
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? ইউরোপের দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল গুলি আলোচনা করো।
অথবা,
সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বােঝায়? সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল লেখাে।
অথবা,
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? ইউরোপের দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল গুলি আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ- যে নীতির মাধ্যমে কোনো একটি দেশ নিজের ভূখণ্ডের বাইরে অন্য কোনো দেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করএ সেখানকার দখল নেয়, সেই ক্ষমতা দখলের নীতিকে সাম্রাজ্যবাদী নীতি বলে। ইটালিতে নবজাগরণের পর এবং ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পর ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলি উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের দেশগুলো এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন স্থাপন করতে পেরেছিল।। ইউরোপের দেশগুলো এরূপ উপনিবেশ স্থাপনের পেছনে মূলত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক,সামাজিক ধর্মীয় ইত্যাদির মতো আরও একাধিক কারণ ছিল। ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং ইউরোপের দেশগুলোর সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যে একাধিক কারণগুলো ছিল, তা হলো-
অর্থনৈতিক কারণঃ-
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ইউরোপের দেশগুলোর আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণগুলোর উল্লেখ করেছেন। ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে প্রধান অর্থনৈতিক কারণগুলো ছিল, তাহলো-
পণ্য বিক্রির বাজার প্রতিষ্ঠাঃ-
অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল এবং তার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হতো তা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরেও অনেক বেশি হতো। তাই সেই অতিরিক্ত পণ্যগুলি অন্যান্য দেশে গিয়ে বিক্রি করার জন্য ইউরোপের দেশগুলোর উপনিবেশ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেজন্যই ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি অতিরক্ত পণ্যগুলি বিক্রির জন্যই এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে বাজার দখলের চেষ্টা করে।।
কাঁচামাল সংগ্রহঃ-
শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কলকারখানা গুলিতে কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো সেই কাঁচামালের জোগান দিতে পারত না।তাই কলকারখানাগুলোতে কাঁচামালের যোগান অব্যাহত রাখার জন্য এবং সস্তায় কাঁচামাল জোগাড় করার জন্য ইউরোপের দেশ গুলি বিভিন্ন দেশের উপনিবেশ স্থাপন করে সেখান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।
পুঁজির বিনিয়োগঃ-
শিল্প অগ্রগতির ফলে ইংল্যান্ড একসময় পুঁজিবাদী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। পুঁজিবাদী শ্রেণী নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা তারা করেনি। তাই তারা নতুন উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। এবং সেই চাপে পড়েই বিভিন্ন দেশের সরকার উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।।
রাজনৈতিক কারণঃ-
ইউরোপে দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসার এবং নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।1970 খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে উগ্রজাতীয়তাবাদ দেখা যায়। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতা, নিরাপত্তা জনিত সমস্যা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এই কারণে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে তোলে নিজেদের আরো শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল।।
ধর্মীয় কারণঃ-
ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রসারের দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচলিত ছিল এবং সেই দেশের বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকরা, নিজেদের ধর্মের প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারকরা মূলত খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করে বিভিন্ন অনুন্নত দেশগুলিতে জ্ঞানের আলো নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করে।তারা মূলত ধর্ম প্রচার করে বিভিন্ন অনুন্নত জাতি বা মানুষের মধ্যে ধর্মের আলো নিয়ে এসে মানবকল্যাণ করায় বিষয়ে আগ্রহী ছিল। এবং এই ভাবে তারা ধর্মের আলোর মাধ্যমে মানবকল্যাণের নামে সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশ স্থাপনকে সমর্থন করে।।
সামাজিক কারণঃ-
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরে সেখানে জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। এই দ্রুত হারে বাড়তে থাকা জনগণের সঠিক কর্মসংস্থান এবং বাসস্থান তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। এই কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলি নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে নিজেদের দেশের বাড়তি জনসংখ্যার সঠিক ব্যবস্থা নির্মাণ এবং সেখানে তাদের কর্ম সংস্থান করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এবং এভাবে তারা সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।।
সামরিক কারণঃ-
সাম্রাজ্যবাদের যুগ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং অন্যান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয় এবং প্রত্যেকটি দেশের ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকা মহাদেশের উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে সামরিক এবং নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে। এ8 স্থানগুলো আবার তারা বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহার করতো। যেমন- ইংল্যান্ড সাইপ্রাস এবং ক্রপের মতো জায়গা শুধুমাত্র নিজেদের নৌঘাঁটি তৈরি করার জন্যেই দখল করেছিল।।
সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের ফলাফলঃ-
ইউরোপের দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফলাফল দেখা গিয়েছিল। যেমন-
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সংঘর্ষঃ-
ইউরোপের দেশ গুলির দিনের পর দিন বিভিন্ন উপনিবেশ দখল করার ফলে ইউরোপের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেই তীব্র সংঘর্ষের সৃষ্টি হতো।
সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ,আমেরিকার তাদের উপনিবেশ গড়ে তুললে,আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের এই সমস্ত দেশের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্য বিকাশ গটেছিল।
ক্রীতদাসদের উপর অত্যাচারঃ-
স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ এশিয়া আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানকার বিভিন্ন বাণিজ্যকুঠি অথবা বিভিন্ন শিল্পকর্মের স্থানীয় শ্রমিকদের উপর বিপুল পরিমাণ শোষণ চালানো হতো।।
দারিদ্র্য বৃদ্ধিঃ-
মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউরোপের দরিদ্র মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় মজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ফলে ইউরোপের একশ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ সঞ্চিত হলেও দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়।
পুঁজিপতি শ্রেণির উত্থানঃ-
উপনিবেশ থেকে সম্পদ আমদানির ফলে ইউরোপে একশ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয়। তারা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে ধার দিত এবং শিল্পে বিনিয়োগ করত। এভাবে পুঁজিপতি বা ক্যাপিটালিস্ট (Capitalist) শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
শিল্পে অগ্রগতিঃ-
মূলধনের জোগান, উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, উপনিবেশে পণ্য বিক্রির বাজারের প্রসার প্রভৃতির ফলে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন ক্রমে বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। এই বিপ্লব ক্রমে ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও প্রসারিত হয়। সর্বাধিক অগ্রগতি লক্ষ করা যায় বস্ত্রশিল্পে।
বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভবঃ-
এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠলে এইসব অঞ্চলে তাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটে। এভাবে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে।
হবসন-লেনিন তত্ত্ব বা থিসিস কী? হবসনের সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব এবং লেনিনের সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
উওরঃ- ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলি বিভিন্ন সময়ে তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির গ্রহন এবং উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ইউরোপের দেশগুলো কী কারণে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন বিভিন্ন উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, সে সম্পর্কে জন অ্যাটকিনসন হবসন ( John Atkinson Hobson ) এবং ভি.আই.লেনিন ( V.I.Lenin ) আলোচনার মাধ্যমে যে তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন, তাই হবসন লেনিন থিসিস ( Hobson-Lenin Thesis ) অথবা হবসন লেনিন তত্ত্ব নামে পরিচিত।।
ইউরোপের শক্তিশালী দেশ গুলি সম্পর্কে হবসনের সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্বঃ-
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন অ্যাটকিনসন হবসন ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলির সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ এবং উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কারণগুলি 1902 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সাম্রাজ্যবাদ একটি সমীক্ষা ( Imperialism A Study ) গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে জন অ্যাটকিনসম হবসনের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি হল -
পুঁজির সৃষ্টিঃ-
জন অ্যাটকিনসন হবসনের মতে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় একসময় সমাজের এক শ্রেণির হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি সঞ্চার হয়। শিল্পের অগ্রগতি,সমাজে ধন সম্পদের বন্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য, বিভিন্ন বাণিজ্যের মাধ্যমে মাধ্যমে সেই পুঁজিপতি শ্রেণীর হাতে দিনের পর দিন পাহাড় পরিমাণ পুঁজির সঞ্চার ঘটে। পুঁজিপতি শ্রেণীর হাতে এই পাহাড় পরিমাণ পুঁজি সঞ্চার ঘটায়,সেই পুঁজিকে অন্যত্র কাজে লাগিয়ে অথবা অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করে তারা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করতো।
পুঁজিপতি শ্রেণীর সরকারের ওপর চাপঃ-
ধনতান্ত্রিক অথবা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের হাতে পাহাড় পরিমান পুঁজি হওয়ায় তারা সেই পুঁজি অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করে আরও বেশি মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা করে।ইউরোপের পুঁজিপতি শ্রেণি এটা বুঝতে পেরেছিল যে, ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে সেই পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক পরিমাণে মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। সেজন্য তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে অত্যধিক হারে মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনাও করে। এবং পুঁজিপতি শ্রেণীর চাপের ফলে বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল।।
কাঁচামাল সংগ্রহ এবং বাজার দখলঃ-
জন অ্যাটকিনসন হবসন মনে করতেন যে পুঁজিপতি শ্রেণীর প্রধান লক্ষ্য ছিল নিজেদের হাতে থাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে আরো বেশি মুনাফা অর্জন করা। এজন্য পুঁজিপতি শ্রেণী উপনিবেশ স্থাপন করে সেখান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা নিজেদের দেশে শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল সংগ্রহ করে উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎপন্ন শিল্পপণ্য অন্যান্য দেশে বিক্রির জন্য বাজার দখল করে, আরো বেশি মুনাফা অর্জন করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।
ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায়ঃ-
জন অ্যাটকিনসন হবসন যেমন ঔপনিবেশিকতাবাদের বিভিন্ন কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, ঠিক তেমনি তিনি সাম্রাজ্যবাদ বা ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের বিভিন্ন উপায় গুলি সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।যেমন -
সামাজিক সংস্কারঃ-
হবসন মনে করেন যে, পুঁজিপতি শ্রেণির বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগের জন্য নতুন উপনিবেশ দখলের ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব। তিনি বলেন যে, সম্পদের সুষম বণ্টন ও অভ্যন্তরীণ সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে।
দরিদ্রদের মধ্যে পুঁজিপতিদের অতিরিক্ত অর্থ বন্টন করাঃ-
তিনি পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যে তা ব্যবহারের কথা বলেন তাঁর মতে, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে তারা কলকারখানায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত শিল্পসামগ্রী কিনে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে উবৃত্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য আর উপনিবেশ দখলের প্রয়োজন হবে না।
সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাবাদ সম্পর্কে লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ তত্ত্বের ব্যাখ্যা-
জন অ্যাটকিনসন হবসনের মতো বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি.আই. লেনিন ঔপনিবেশিকতা এবং সাম্রাজ্যের বিস্তার সম্পর্কে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি যে সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতা বাদ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অথবা সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ তত্ত্ব (Imperialism The Highest Stage Of Capitalism) পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর গ্রন্থে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে লেনিনের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি হল-
পুঁজিপতি শ্রেণীর উদ্ভবঃ-
লেলিন তার ( Imperialism The Highest Stage Of Capitalism ) পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর গ্রন্থে পুঁজিপতি শ্রেণীর উদ্ভব অথবা উপনিবেশ দখলের প্রধান কারণ আলোচনা করেছেন। লেনিনের মতে শিল্পের অগ্রগতির ফলে ইউরোপের কয়েকটি শক্তিশালী দেশের পুঁজিপতি শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। এবং সেই পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে এক সময় প্রচুর পরিমান পুঁজির জমা হয়। পুঁজিপতি শ্রেণি সেই পুঁজি অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করে আরও বেশি মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা করে।কিন্তু পুঁজিপতি শ্রেণী এটা জানত যে, ইউরোপে শিল্পোন্নত দেশ গুলিতে পুঁজি বিনিয়োগ করে খুব বেশি মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। সেই কারণে তারা পুঁজি বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র চাইছিল যেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করা যাবে। এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই ইউরোপের দেশগুলো এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ দখল করে সেখানে নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জনের উদ্যোগ নিয়েছিল।।
বাজার দখল এবং কাঁচামাল সংগ্রহঃ-
ইউরোপে শিল্পোন্নত দেশগুলির পুঁজিপতি শ্রেণির প্রধান লক্ষ্য ছিল মুনাফা অর্জন। পুঁজিপতি শ্রেণি নিজেদের দেশে শিল্প পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্ তারা সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহের পরিকল্পনাও করে।তারা সস্তায় বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ করে করে নিজেদের দেশে তার মাধ্যমে অত্যধিক পরিমাণে শিল্পপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতো । এরপর নিজেদের দেশের চাহিদা মেটানোর পর এবং সেই অতিরিক্ত শিল্পপণ্য অন্যান্য দেশে বাজার দখল করে, সেই বাজারে নিজেদের দেশের পণ্য বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল।।
উপনিবেশে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগঃ-
লেলিনের মতে ইউরোপে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির পুঁজিপতি শ্রেণীরা নিজেদের দখল করা উপনিবেশে পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী ছিল। তারা নিজেদের দখল করা উপনিবেশে নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে, সেখানকার কাচামালের সাহায্য সেখানেই বিভিন্ন শিল্প পণ্য উৎপন্ন করে সেখানকার বাজার দখল করে সেখানেই বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়। লেনিনের মতে সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ সম্প্রসারিত রূপ।।
ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলির মধ্যে প্রতিন্দ্বিতাঃ-
বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উপনিবেশ দখলের উদ্যোগ নিলেও উপনিবেশের সংখ্যা ছিল সীমিত। ফলে উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে কাড়াকাড়ি অর্থাৎ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিযোগিতার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল যুদ্ধ। যেসব ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র আগে থেকে বিভিন্ন উপনিবেশ দখল করে রেখেছে তারা তাদের উপনিবেশগুলি ধরে রাখার চেষ্টা করে। আবার পরবর্তীকালে উপনিবেশ দখলে এগিয়ে আসা রাষ্ট্রগুলি নতুন উপনিবেশ স্থাপনে ব্যর্থ হয়ে পুরোনো উপনিবেশ দখল করতে এগিয়ে এলে লড়াই শুরু হয়। লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা। তিনি মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল পুঁজিবাদী শক্তিগুলি কর্তৃক উপনিবেশ দখলের লড়াই।
অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠাঃ-
লেনিন মনে করেন যে, ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকেও, পুঁজিপতি শ্রেণির নজর ছিল। তারা এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত অঞ্চলগুলিকে বেছে নিয়ে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর সীমাহীন শোষণ চালায়। এর ফলে পুঁজিপতিরা যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভ করে তার একটি ক্ষুদ্র অংশ নিজ দেশের শ্রমিকদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অনুগত একধরনের 'অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি' তৈরি করে। এই শ্রমিক শ্রেণি শ্রমিক বিপ্লবের কথা ভুলে গিয়ে বুর্জোয়াদের সমর্থন করে।
মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় বা কাকে বলে? মার্কেনটাইলবাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023
অথবা,
মার্কেনটাইল বাদ কাকে বলে বা মার্কেন্টাইল বাদ বলতে কী বোঝায়? অথবা মার্কেনটাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় ব কাকে বলে? মার্কেন্টাইল মূলধনের উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
উওরঃ- খ্রিষ্টীয় ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশ গঠনকারী দেশের মধ্যে যে এ নতুন ধরনের অর্থনৈতিক নীতির প্রসার ঘটেছিল,তাই মূলত মার্কেনটাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত। মার্কেনটাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধন কোনো রাষ্ট্র বা অর্থনীতিবিদ প্রবর্তিত কোনো অর্থব্যবস্থা নয়। মার্কেনটাইল বাদ মূলত ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক ধরনের বিশেষ অর্থনীতি, যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য মূলত সঞ্চিত অর্থের পরিমাণকে বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে, দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করে আমদানি কমিয়ে আনা এবং দেশের সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি ক্ষেত্রে সোনা-রুপা সংগ্রহের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তার ওয়েলথ অফ নেশনস গ্রন্থের সর্বপ্রথম 1776 হিসেবে মার্কেন্টাইলবাদ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। মার্কেন্টাইলবাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশগুলোর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এবং মার্কেন্টাইলবাদ বিভিন্ন দেশকে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উত্সাহ জুগিয়েছিল।।
মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনীতি বা মার্কেনটাইল মূলধনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বা উদ্দেশ্যঃ-
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতির ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা এর বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। মার্কেন্টাইলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এই নতুন অর্থনীতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।।
রাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণঃ-
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিকে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসা হয়। মার্কেনটাইলবাদ অনুসারে যেহেতু রাষ্টের স্বার্থ এবং বণিকদের স্বার্থ অভিন্ন করে রাখা হয়,সেই কারণে দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডদের বা বনিক সংগঠনেরর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা রাষ্ট্রের বা জাতীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হয়। এভাবে মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতিক জাতীয়তাবাদের রূপ নেয়।।
মার্কেনটাইলবাদ অনুসারে কৃষিনীতিঃ-
মার্কেনটাইল বাদ অনুসারে এটা মনে করা হয় যে, কোন দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যদি বাইরের দেশে রপ্তানি করা হয়, তাহলে সেই দেশের খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এজন্য সরকার দেশের কোনো খাদ্য শস্য বাইরের দেশে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এবং কৃষির উন্নতির জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার কাজ সরকার বন্ধ করে। এর ফলে যে সমস্ত দেশ মার্কেন্টাইল অর্থনীতির গ্রহণ করে, সেই দেশের কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। কারণ ফসলের অবাধ বিক্রয় এবং বাইরে দেশে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম কখনোই পেতনা। এই কারণে যে সমস্ত দেশ গুলোতে মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনীতি গ্রহণ করতত, সে দেশের কৃষকরা মূলত নিজেদের পরিবারের চাহিদা এবং সরকারি খাজনা পরিশোধ করার জন্যই কৃষিকাজ করে থাকতো। এর ফলে দেশে কখনোই কৃষি কাজের উন্নতি ঘটতো না।।
সোনা এবং রুপার গুরুত্ব বৃদ্ধিঃ-
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যবা উদ্দেশ্য হলো মার্কেনটাইলবাদ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সব সময় সোনা এবং রুপা ইত্যাদি মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে বলে। মার্কেনটাইল বাদ অনুসারে একটি দেশের সোনা এবং রুপার সঞ্চয় যত বেশি হবে, সেই দেশের জাতীয় সম্পদ তত বেশি হবে।। এখানে যে সমস্ত দেশে মার্কেনটাইল বাদ অর্থনীতি গ্রহন করা হয়,দেশ গুলো সব সময়ই নিজের দেশে সোনা এবং রুপা ইত্যাদি মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ ও সঞ্চয় করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
দেশে আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করাঃ-
মার্কেনটাইলবাদ যেই সমস্ত দেশে সোনা, রুপা ইত্যাদি মূল্যবান সম্পদের সঞ্চয় কম, সেই দেশ গুলিকে দেশে বিভিন্ন জিনিসপত্র আমদানি বন্ধ করে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে বলে। কারণ কোনো দেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করার ফলে সেই দেশে বিদেশী মূল্যবান ধাতুর আগমন ঘটে যার।ফলে তাদের জাতীয় সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদক ও বণিকরা নতুন নতুন বাণিজ্য উৎপাদনে উৎসাহ দেখায়। অধিক পণ্য রপ্তানি করা গেলে পণ্য উৎপাদক ও বিক্রেতাদের মুনাফা বাড়ে। অতিরিক্ত মুনাফা জমতে জমতে পুঁজির পরিমাণও বাড়ে। ফলে অতিরিক্ত পুঁজি বা মূলধন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগানাে যায়।
সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিকাশঃ-
মার্কেনটাইল মতবাদ অনুসারে দেশের নতুন মুদ্রা তৈরি, সুদক্ষ সেনাবাহিনীর গঠন এবং নৌবাহিনী গঠন করা এবং জাতীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সোনা-রুপা ইত্যাদি সঞ্চয় বানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই সমস্ত কাজ গুলি করার জন্য মূলত প্রথম সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রসার ঘটানো প্রয়োজন হতো। কারণ সামরিক বাণিজ্যের মাধ্যমে একটি দেশ নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখান থেকে মূল্যবান ধাতু বা সোনা এবং রুপা সংগ্রহ করতে পারতো এবং সোনা-রুপার মাধ্যমে তারা নিজেদের জাতীয় সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারতো।মার্কেনটাইল বাদের এই নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তি গুলি নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলতে এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিল।।
মার্কেনটাইলবাদ অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতাঃ-
মার্কেনটাইলবাদীরা অবাধ বাণিজ্যের বিরোধী ছিলেন। তারা মূলত অন্যান্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে নিজের দেশের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াফ পক্ষপাতী ছিলেন। তাদের মতে অন্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে স্বদেশী সমৃদ্ধি সাধন সম্ভব। এজন্য মার্কেনটাইলবাদীরা অন্যান্য দেশের বাণিজ্যে পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক চাপিয়ে দিয়এ এবং নিজের দেশের বাণিজ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে শুল্কমুক্ত বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগে ভর্তুকি ও প্রিভিলেজ দিয়ে বাণিজ্যের বিকাশ ঘটানোর পক্ষপাতী ছিলেন।।
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতির ফলাফলঃ-
মার্কেন্টাইল মূলধনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলি নিজেদের জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। এবং উপনিবেশ থেকে তারা বিভিন্ন কাঁচামাল,বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ সংগ্রহ করে কিছু ক্ষেত্রে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ ও পণ্য বিক্রির বাজার দখলের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে, উপনিবেশগুলিতে একাধিপত্য বজায় রাখতে নৌসেনা, শক্তিশালী নৌবহর গঠন, অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সংঘাত তীব্র করে।
মার্কেন্টাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধনের সমালোচনাঃ-
ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে প্রসারিত এই মার্কেন্টাইল মূলধন অথবা মার্কেন্টাইলবাদ কিছু ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও এর বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি রয়েছে। যার কারণে একে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হয়। যেমন-
সম্পদের পুনর্নির্নিয়োনঃ-
অ্যাডাম স্মিথের বন্ধু ডেভিড হিউম মার্কেন্টাইলবাদের সমালোচনা করে বলেন যে, সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করে নয়, তা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারে।
সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতাঃ-
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ বলেন যে, বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি বা অযথা সরকারি হস্তক্ষেপের দ্বারা নয়, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের
অর্থনীতি মজবুত হতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতিঃ-
মার্কেন্টাইলবাদের ফলে দেশীয় শিল্প বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাত থেকে রক্ষা পায়, কিন্তু শিল্প সংরক্ষণ নীতির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ প্রতিটি দেশই নিজের দেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চালায়।
সুস্পষ্ট ধারণীর অভাবঃ-
মার্কেন্টাইলবাদে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা, বাস্তবতাবোধ, উৎপাদন, বাণিজ্যিক লাভলোকসান প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল। এসব কারণে মার্কেন্টাইলবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুকালের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
Tags :
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023