একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ( WBBSE Class 11 history chapter 5 questions and answers in bengali ) অর্থনীতির বিভিন্ন দিক এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় "প্রাচীন ভারতের বাণিজ্য বিকাশের কারণ গুলি আলোচনা করো।" বিষয়টি বিস্তারে আলোচনা করবো এবং এই প্রশ্নের একটি সুন্দর ইতিহাস নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
প্রাচীন ভারতের বাণিজ্য বিকাশের কারণ গুলি আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ ভারতে মূলত সুদূর অতীতকাল থেকেই কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল। সেই সময় মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। ভারতের বৈদিক যুগে যখন লোহার ব্যবহার শুরু হয় তখন কৃষিকাজের লাঙ্গলের ব্যবহার শুরু হলে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময় অবশ্য কৃষির পাশাপাশি বিভিন্ন কুটির শিল্প, কারিগরি শিল্প ইত্যাদির বিকাশ ঘটেছিল। হরপ্পা সভ্যতার যুগে মানুষ পাথর, তামা, সিসা প্রভৃতি দিয়ে বিভিন্ন শিল্প গড়ে তুলেছিল। কৃষকের প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদবৃও কৃষিপণ্য ও বিভিন্ন শিল্পসামগ্রীর ওপর নির্ভর করেই প্রাচীনকালে ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছিল।।
ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের কারণঃ
সুদূর অতীতকাল থেকেই ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল। ভারতের মূলত সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উভয় প্রকারের বাণিজ্যেই প্রচলিত ছিল। এবং সেই সময়ে এই দুই ধরনের বাণিজ্যেরই যথেষ্ট পরিমাণে বিকাশ ঘটেছিল। এর পিছনের যেই কারণগুলো প্রধান ছিল তা হলো -
বাণিজ্যের বিকাশে উদবৃত্ত কৃষিপণ্যঃ
সুদূর অতীতকাল থেকেই ভারতের বাণিজ্যের বিকাশের পেছনে উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন যুগে ভারতে কৃষির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। সিন্ধু সভ্যতার সময়কালেও ভারতের উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য বাইরে রপ্তানির প্রমাণ পাওয়া যায়। এসময় ভারতের সঙ্গে মিশর, সুমের, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি বৈদেশিক সভ্যতার যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল।
বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে নগরজীবনের বিকাশঃ
প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বিকাশের পেছনে সেই দেশ বা রাষ্ট্রের নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কারণ নগর জীবনের বিকাশ ঘটা মানেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। এবং যেখানে জনসংখ্যা যত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে সেখানে ততবেশি বাণিজ্যের বিকাশ ঘটবে। অধ্যাপক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায়, ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ দেখিয়েছেন যে, প্রাচীন ও আদি-মধ্যযুগে ভারতে নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল যা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করেছিল। দক্ষিণ ভারতে ‘নগরম'গুলি অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
ভারতের বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে রাজা বা সম্রাটদের ভূমিকাঃ
ভারতে বানিজ্য বিকাশের পেছনে সে সময়কার বিভিন্ন সাম্রাজ্যের সম্রাটদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বাণিজ্য থেকে রাজকোঁশে যথেষ্ট পরিমাণে শুল্ক আসত। বাণিজ্য থেকে যে পরিমাণ শুল্ক আদায় হতো, সেই পরিমান শুল্ক বা খাজনায় রাজকোষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো। এজন্য প্রাচীনকালের রাজারা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করতেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতেন এবং পথে বাণিজ্য চৌকি স্থাপন করে পণ্য চলাচলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতেন।
বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে হাট ও বাণিজ্য মেলার ভূমিকাঃ
প্রাচীন-ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রামীণ হাট বাজার এবং বাণিজ্য মেলা গুলিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বছরে নির্দিষ্ট একটি সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্য মেলা বসতো।। প্রাচীন যুগে গ্রামেগঞ্জে অনুষ্ঠিত হাট ও মেলাগুলিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা হত। এসব পণ্য আবার ব্যবসায়ীরা বাইরে রপ্তানি করতেন। এরকমভাবে ভারতে বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি এবং রপ্তানি করার হলে তা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়ক হয়ে উঠেছিল।
ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে গিল্ডের ভূমিকা গিল্ড গঠনঃ
গিল্ড বলতে বিভিন্ন সংঘকে বোঝানো হতো। প্রাচীন ইউরোপের বিভিন্ন ধরনের গিল্ড ছিল কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বণিকদের বিভিন্ন গিল্ড গড়ে উঠেছিল। বণিকরা মূলত নিজেদের স্বার্থে এবং বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গিল্ড গঠন করেছিল। গিল্ডের প্রতিষ্ঠার ফলে শিল্পোৎপাদন, কারখানায় পণ্য ও শ্রমিকের নিয়মিত জোগান, বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অসুবিধা দূরীকরণ প্রভৃতি সম্ভব হয় এবং তা বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়।
আরও পড়ে দেখো👇👇
ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে গিল্ডের ভূমিকা গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো
উপসংহার, সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা বোঝা যায় যে, ভারতে সুদূর অতীতকাল বা হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল থেকে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত যে বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছিল, তার পেছনে একাধিক উপাদান ছিল। এবং সেই সমস্ত উপাদান গুলি বিভিন্ন সময়ে ভারতে বাণিজ্যের বিকাশে সহায়ক হয়ে উঠেছিল।।