আজকের এই ব্লগ একাদশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান শ্রেণির সপ্তম অধ্যায় সংবিধান ( Constitution ) " থেকে যেই প্রশ্নটি তোমাদের সামনের পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার উওর তোমরা পেয়ে যাবে। প্রশ্নটি হলো " সংবিধান কাকে বলে? সংবিধান কত প্রকার ও কী কী? ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী?। আজকে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সপ্তম অধ্যায় সংবিধান ( wb class 11 political science chapter 7 ) থেকে " সংবিধান কাকে বলে? ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য " গুলির সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট শেয়ার করবো। পরবর্তীতে তোমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সপ্তম অধ্যায় সহ অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবে।
আজকের বিষয় | Table Of Contents
- • সংবিধান কাকে বলে?
- • লিখিত সংবিধান কাকে বলে?
- • অলিখিত সংবিধান কাকে বলে?
- • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে?
- • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে বলে?
- • ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
- • সংবিধান কাকে বলে?
- • লিখিত সংবিধান কাকে বলে?
- • অলিখিত সংবিধান কাকে বলে?
- • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে?
- • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে বলে?
- • ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
সংবিধান কাকে বলে? ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
◆ সংবিধান কাকে বলে?
কোনো রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় মৌলিক নিয়ম-কানুনের সমষ্টিকে সংবিধান অথবা শাসনতন্ত্র বলা হয়। সংবিধানকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা - ১- লিখিত ও অলিখিত সংবিধান এবং ২- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।
◆ লিখিত সংবিধানের সংজ্ঞা : কোনো দেশের শাষন ব্যবস্থা সম্পর্কিত মৌলিক নীতিগুলির অধিকাংশ বা সবগুলোই যখন একটি বা কয়েকটি দলিলে লিপিবদ্ধ করা থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুজারল্যান্ড,ভারত প্রভৃতি দেশে লিখিত সংবিধান রয়েছে।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো👇
এখানে ক্লিক করো
◆ অলিখিত সংবিধান : কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কিত মৌলিক নীতিগুলি যখন লিখিত না হয়ে সেই দেশের প্রথা, আচার - আচরণ, বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে,তখন তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত।
◆ সুপরিবর্তনীয় সংবিধান : সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে সেইসব সংবিধানকে বোঝায়,যেসব সংবিধানকে আইনসভা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে।
সুতরাং, আইনসভা যেসব সংবিধানে সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংশোধন করতে পারে,তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে।
◆ দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে সেই সমস্ত সংবিধানকে বোঝায়,যে সংবিধান কোনো পদ্ধতি অনুসারে সংশোধন অথবা পরিবর্তন করা যায় না, সংবিধানের কোনো অংশের পরিবর্তনের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উওর
ভারতীয় সংবিধান 1949 সালের 26 শে নভেম্বর গৃহীত হয়েছিল। এবং 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া ভারতীয় সংবিধানের রয়েছে একাধিক বৈশিষ্ট্য। যেমন -
◆ বিশ্বের বৃহত্তম সংবিধান : ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভারতের সংবিধান হলো বিশ্বের বৃহত্তম সংবিধান। ভারতীয় সংবিধান যখন রচনা করা হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র ৩৯৫ টি ধারা এবং ধারাগুলি ২২টি পার্টে ও ৮ টি তপশীল এ বিভক্ত ছিল । কিন্তু বর্তমানে এই সংবিধানে মোট ৪৬০ টি ধারা আছে এবং ধারাগুলি ২২ টি পার্টে ও ১২ টি তপশীল এ বিভক্ত। ভারতীয় সংবিধানে এত পরিমান ধারা-উপধারা থাকার কারণে ভারতীয় সংবিধান অত্যন্ত বৃহৎ এবং জটিল হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সংবিধানের মতো অন্য কোনো দেশের সংবিধানেই এত পরিমান ধারা-উপধারা নেই।
◆ সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের উপস্থিতি : ভারতীয় সংবিধানে এমন কতগুলি ধারা রয়েছে যেগুলো পরিবর্তনযোগ্য। সেই ধারা গুলি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সেগুলো পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু সংবিধানে এমনও কিছু তারা রয়েছে যেগুলোকে পরিবর্তন করা যায় না। অর্থাৎ সেগুলো দুষ্পরিবর্তনীয়। সংবিধানের কোনো অংশকে পরিবর্তন করতে হলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্য অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভো্যদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। এইভাবে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সমর্থন লাভের পর প্রস্তাবটিকে রাজ্যগুলির আইনসভার সমর্থনের জন্য প্রেরণ করা হয়। অঙ্গরাজ্য গুলির অন্তত অর্ধেক সমর্থন লাভ করলেই সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হতে পারে।। উপরিক্ত তিন প্রকার সংশোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা স্বাক্ষর প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর ছাড়া সংশোধনী প্রস্তাব কার্যকর হতে পারে না। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, 1971 সালের সংবিধানের 24 তম সংশোধনে বলা হয়েছে যে,পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত হলে যে কোন সংশোধনী বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর প্রদান করতে বাধ্য।
আরও পড়ুন👇
◆ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত : ভারতীয় সংবিধানের আরও একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সেসব মৌলিক অধিকারের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকরা স্বাধীনভাবে নিজের মতপ্রকাশ, ব্যক্তি স্বাধীনতা, গনতান্ত্রিক স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি লাভ করেছে। বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের ছয়টি মৌলিক অধিকার স্বীকার করা হয়েছে।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো👇
এখানে ক্লিক করো
1976 সালের সংবিধানের 42 তম সংবিধানে নাগরিকের 10 টি মৌলিক কর্তব্য স্বীকার করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকার বা রাজ্য সরকার যদি আইন প্রনয়ন করে নাগরিকের মৌলিক অধিকার গুলি খর্ব করার চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আদালতের শরনাপন্ন হতে পারে।
◆ সাংবিধানের প্রাধান্য :
ভারতীয় সংবিধানে সাংবিধানিক আইন ও সাধারণ আইনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভারতে সংবিধান হলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আইনসভা যদি সংবিধান অনুযায়ী কোনো আইন প্রনয়ন করে থাকে, তাহলে সেই আইন বাতিল করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।
◆ এক নাগরিকত্ব : ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের দ্বিনাগরিকত্ব স্বীকার করা হয়নি। ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়নি। ভারতের অঙ্গরাজ্য গুলি কেন্দ্র সরকারের অধীনে বলে নাগরিকদের কোনো অঙ্গরাজ্যেরনাগরিকত্ব থাকে না। যার ফলে ভারতে এক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা রয়েছে।
◆ রাষ্ট্রপতি শাসিত ও মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন ; ব্রিটেনের অনুকরনে ভারতে মন্ত্রিসভা পরিচালিত প্রথম সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘোষণা করেছে। মন্ত্রিসভা পরিচালিত বা সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য হলো একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকলেও দেশের শাসন কার্য প্রকৃতপক্ষে পরিচালনা করবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা। সম্পাদিত কাজের জন্য মন্ত্রিসভা শুধুমাত্র আইনসভার কাছে দায়ি হবে। ভারতে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তত্ত্বগতভাবে দেশের সর্বময় কর্তা হলেও বাস্তবে তিনি নামমাত্র শাসক। রাষ্ট্রপতির নামে যাবতীয় কার্য ক্যাবিনেঘ সম্পাদন করে। এইভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি শাসিত ও মন্ত্রিসভাপরিচালিত সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ভারতীয় সংবিধানে এক নতুন ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
◆ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আদর্শ গ্রহণ ; ভারতীয় সংবিধানে ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেকে নিজের পছন্দ মত যেকোন ধর্ম গ্রহণ করে তা পালন করতে পারে। ভারতীয় সংবিধানে সেই অধিকার প্রত্যেক নাগরিককে দেওয়া হয়েছে।
◆ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত : ভারতীয় সংবিধানে বিচারপতিদের সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বিচারপতিরা নির্ভীক ভাবে এবং সম্পূর্ণ অন্য কোনো শক্তির প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে নিজের বিচার কার্য সম্পাদন করতে পারে।
◆ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার : ভারতীয় সংবিধানের 325 ও 326 নং ধারায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্পত্তি ও স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে 18 বছর বয়স্ক প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককে ভোট অধিকারের প্রদান করা হয়।
◆ বিচারালয়ের প্রাধান্য পার্লামেন্টের সার্বভৌমিকতার সংমিশ্রণ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপ্রিম কোর্টের সংবিধানের ব্যাখ্যা দিতে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কেবল সংবিধান বিরোধী আইন বাতিল করে না মকংগ্রেস প্রণীত আইন এর গুনাগুন বিচার করতে এবং অযৌক্তিক আইন বাতিল করে দিতে পারে। অপরদিকে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের নেই। কিন্তু ভারতে, সংবিধান বিরোধী না হলে পার্লামেন্ট যদি কোনো আইন প্রণয়ন করতে চায়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করতে পারে না। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট কোনো আইনকে বাতিল বলে ঘোষণা করলেও পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করেছে আইন কার্যকর করতে পারে। সাধারণভাবে আইনের গুনাগুন বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের নেই। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট অপেক্ষা পার্লামেন্টের প্রাধান্য বেশি থাকে।
আশাকরি যে, আজকের এই একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সপ্তম অধ্যায় সংবিধান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " সংবিধান কাকে বলে? ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী " তার উওর পেয়ে গেছো। যদি এই পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ে দেখো।
Tags :