গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো। | একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের (Class 11 Political Science chapter 5 questions and answers) গণতন্ত্র ও একনায়ক তন্ত্র এর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো। " প্রশ্নটির উওর একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো। | একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা
উওর :
গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের মতে- গণতন্ত্র হলো এমন এক প্রকার শাসন ব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোনো শ্রেণীর বা শ্রেণীসমূহের উপর ন্যাস্ত না থেকে বরং সমাজের সদস্য গনের ওপর ন্যস্ত থাকে। বা, সহজভাবে বলতে গেলে গণতন্ত্র হলো সেই প্রকার শাসন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যক্ষ ভাবে নিজেরাই শাসনকার্যে যুক্ত হয়ে নিজেদের শাসনকার্য পরিচালনা করে বা পরোক্ষভাবে নিজেদের সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচন ও ভোটদানের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের পরিচালনা করে থাকে, তাকে গণতন্ত্র বলে।
প্রধানত গণতন্ত্র দুই প্রকার। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ গণতন্ত্র।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র সেই প্রকার গণতন্ত্র যেখানে দেশের নাগরিকরা বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে সমবেত হয়,সরাসরিভাবে দেশের শাসনকার্যে পরিচালনায় অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করতে পারে।
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে দেশের নাগরিকরা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ হয়ে দেশের শাসন,বিচার, নীতিনির্ধারণ, সরকারি আয়-ব্যয়, পররাষ্ট্রনীতির,যুদ্ধ বিচারকার্য ইত্যাদি সম্পাদন করে।
• সুইজারল্যান্ডে এরূপ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে।
• পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে : জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে পরোক্ষ গণতন্ত্র বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলতে এমন একটি শাসনব্যবস্থা কে,বোঝায় যেখানে সমগ্র জনসাধারণ বা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা বা শাসন ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে।
◆ গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা :
গণতন্ত্রের কিছু সুবিধা
◆ ভোটদানের অধিকার : গণতন্ত্রে নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করার এবং পরোক্ষ গণতন্ত্রে ভোট দানে অংশগ্রহণ করার অধিকার সবাইকে দেওয়া হয়। এবং এর মাধ্যমে জনগণ তাদের নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ভোটদানের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন।
◆ ব্যক্তি স্বাধীনতা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেক স্বাধীন নাগরিককে সরকারের সম্পর্কে তার নিজস্ব মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ সরকারের ভালো-মন্দ বা ভালো খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা এবং সেই বিষয়ে তার নিজস্ব মত প্রকাশ করতে করার অধিকার তার রয়েছে।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো
◆ গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনকল্যাণ : প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিকারী করে। ফলে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং এই দায়বদ্ধতার জন্য সরকার জনগণের ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দিক গুলি নিয়ে কাজ করে। এবং তারা জনগণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।
◆ সমান অধিকার : গণতন্ত্রের সরকার সবাইকে সমান অধিকার প্রদান করে থাকে। যে কোন জাতি,ধর্ম,বর্ণের মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ গণতন্ত্রের অংশগ্রহণ করতে পারে।
◆ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি থাকে বলে,সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অংশ নেন করার বা রাজনীতিতে আসার অনেক সুযোগ থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।
◆ মানুষের মর্যাদা : গণতন্ত্রে মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা রক্ষা করা হয় বা মানুষের মর্যাদাকে অসম্মান করা হয়না। রাজতন্ত্র,অভিজাততন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিগত মর্যাদাকে অসম্মান করা হয় না। কিন্তু গণতন্ত্রে এরুপ কিছু থাকে না।
◆ স্বৈরাচারীতা রোধ ; গণতন্ত্র হলো জনগণ দ্বারা গঠিত একটি শাসনব্যবস্থা। যেখানে জনগণের ভোট দানের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতার অধিকারী। এবং তারা পরবর্তী নির্বাচনে যদি চায়,তাহলে ভোট দানের মাধ্যমে সেই সরকারের কাছ থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে?অন্য সরকারের হাতে তুলেও দিতে। ফলে কোনো সরকার জনগণের হাতে থাকা এই ক্ষমতার ভয়ে কখনো স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না।
◆ জনগণের ক্ষমতা : গণতন্ত্রে জনগণের হাতে এক বিশেষ ক্ষমতা থাকে। ক্ষমতায় থাকা সরকার যদি কোনো জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করে থাকে,তাহলে জনগণ অতি সহজেই নির্বাচনের সময় ভোট দানের মাধ্যমে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করা সেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। এবং এভাবে জনগণ তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা রাখে।
◆ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ : গণতন্ত্রের স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা থাকে যা। সংবিধান এবং আইন অনুযায়ী নিজের কার্য সম্পাদন করে থাকে।
গণতন্ত্রের কিছু অসুবিধা -
গণতন্ত্রে যেমন বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে,ঠিক তেমনি এর পাশাপাশি গণতন্ত্রে বহু অসুবিধা রয়েছে। যেমন -
◆ অযোগ্য ব্যক্তিরা হাতে শাসন ক্ষমতা : পরোক্ষ গণতন্ত্রের জনগণ ভোট দানের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতার অধিকারী করে। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা দেখা হয়না,যে সেই নির্বাচিত ব্যক্তি আদতেও সেই ক্ষমতার পাওয়ার যোগ্য কিনা। এর ফলে অনেক সময় জনগণের ভুল ভোট দানের মাধ্যমে অযোগ্য নেতাদের হাতে শাসন ক্ষমতা চলে যায়। ফলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
◆ নিজস্বার্থ : গণতন্ত্রের আরো একটি খারাপ দিক হলো এটাই যে, রাজনৈতিক নেতারা শাসন ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর,দলের স্বার্থ বা নিজ স্বার্থের আগে দেখে। যার ফলে তারা জনকল্যাণ ভুলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
◆ সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির স্থান নেই : গণতন্ত্রে অনেক সময় সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তির কোনো স্থান থাকে না।।কারণ তারা হয়তো অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, নিজেদের প্রচার ও জনমত গঠন পারে না,যা তাকে নির্বাচনে জয়ী করতে সাহায্য করবে। এজন্য গণতন্ত্র থেকে অনেক সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিরা বেরিয়ে আসেন।
◆ ধীর কার্যাবলী : এরূপ শাসন ব্যবস্থায় কোন একটি সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয় বলে প্রচুর সময়ের অপচয় হয়। ফলে গণতন্ত্র যেকোনো ধরনের জরুরি অবস্থার পক্ষে অনুপোযোগী।
◆ সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষা :
গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় একটি অসুবিধা হলো গণতন্ত্রের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়। অনেকের মতে গণতন্ত্র সংখ্যা গরিষ্ঠদের শাসন হওয়ার জন্য,সংখ্যালঘিষ্ঠরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন সভায় প্রতিনিধি প্রেরণ করতে সমর্থ হয় না। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে যে,আইনসভা যাদের কোনো প্রতিনিধি থাকে না,তাদের অভাব-অভিযোগের কেউ কর্ণপাত করে না। তাদের স্বার্থ সব সময়ই উপেক্ষা করা হয়।
◆ উৎকর্ষের পরিবর্তে সংখ্যার প্রাধান্য :
গণতন্ত্র সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসন হওয়ায় এখানে গুণের তুলনায় সংখ্যার প্রাধান্য স্বীকৃত হয়।এখানে গুণগত উৎকর্ষ গুরুত্বহীন।
◆ ব্যয়বহুল শাসন ব্যবস্থা : রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রচার,জনমত গঠন এবং নির্বাচনের সময় প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। এছাড়াও গণতন্ত্রে আরো কিছু অসুবিধা বা খারাপ দিকগুলির মধ্যে আমলাতন্ত্রের প্রধান্য,নৈতিক অবনতি ও স্থায়িত্বের অভাব ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য।
Tags :