গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য লেখ | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
কিছুদিন আগেই আমরা একটি পোস্টের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2022 ( wb class 11 political science suggestion 2022 ) এ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শেয়ার করেছিলাম। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা সেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ( wb class 11 political science ) এর কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উওর শেয়ার করবো। আজকে একাদশ শ্রেণির পঞ্চম অধ্যায় " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র " থেকে যেই প্রশ্নটি তোমাদের সামনের পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার উওর তোমরা পেয়ে যাবে। প্রশ্নটি হলো " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য লেখ "। আজকে আমরা একাদশ শ্রেণির পঞ্চম অধ্যায় গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে শুধুমাত্র " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে,সেই সম্পর্কে একটি নোট শেয়ার করবো। পরবর্তীতে তোমরা একাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায় সহ অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবে।
Table Of Contents | আজকের বিষয়
• গনতন্ত্র কাকে বল?
• একনায়নতন্ত্র কাকে বলে?
• গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
• একনায়নতন্ত্র কাকে বলে?
• গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য লেখ | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
গণতন্ত্র বলতে বোঝায় জনগণের শাসন। গণতন্ত্র শব্দটির প্রথম প্রয়োগ দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। সর্বপ্রথম গ্রীকরা গণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
সাধারণ ভাবে প্রত্যেক্ষ গনতন্ত্র বলতে এমন এক শাষন ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে জনগণ নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে,নিজেদের ভোট অধিকারের মাধ্যমে সেই প্রতিনিধিকে নির্বাচনে জয়ী করে সরকার গঠন করে। এবং সেই সরকারের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং নিজেরাই নিজেদের মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে। গণতন্ত্রে সরকার জনগণের দ্বারা, জনগণের স্বার্থে জনগণে কল্যাণ করার কাজ করে থাকে।
Read More👇
What Is Car Insurance? Best Car Insurance Plan & Companies সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
What Is Car Insurance | Types Of Car Insurance | Best Car Insurance Plan For You
অন্যদিকে, একনায়কতন্ত্র বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে শুধুমাত্র একজন কোনো একটি রাষ্ট্র বা দেশের সমস্ত ক্ষমতা একা ভোগ করে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি,একটি শ্রেণি অথবা একটি দলের হাতে থাকে। একনায়কতন্ত্রে আইনসভার কোনো গুরুত্ব নেই বলে, শাষক এখানে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারা যায়, গণতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র হলো সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের শাসন ব্যবস্থা। গণতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রের মধ্যে উপরের একটি প্রধান পার্থক্য ছাড়াও, একনায়কতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
◆ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী : গণতন্ত্রে জনগণই হলো সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাই গণতন্ত্রকে জনমত পরিচালিত শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জনগণের কোনো মূল্যই নেই। জনগণ শাসনকার্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। একনায়কতন্ত্রে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির হাতেই সমস্ত সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে।
◆ জনগণের স্বাধীনতা:
গণতন্ত্রে জনগণের কিছু স্বাধীনতা থাকে. যেমন সামাজিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা। গণতন্ত্রে জনগণ স্বাধীন ভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এছাড়াও জনগণের হাতে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে। যেমন সে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান এবং বেরিয়ে আসতে পারে এবং নিজের পছন্দমত রাজনৈতিক দলকে ভোট প্রদান করতে পারে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জনগণের হাতে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে।
◆ জনগণের অধিকার : গণতন্ত্রে জনগণের মৌলিক অধিকার গুলি লিপিবদ্ধ করা থাকে। যার ফলে জনগণ বিভিন্ন রকম অধিকার বা স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। কিছু একনায়কতন্ত্রে জনগণের সেই সমস্ত মৌলিক অধিকার বা স্বাধীনতার কোনো গুরুত্ব নেই।
◆ সরকার পরিবর্তনের অধিকার :
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সরাসরিভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং পরোক্ষ গণতন্ত্রের জনগণ নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে ভোট দানের মাধ্যমে শাসনকার্যে পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে। সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করে তাহলে জনগণ ভোট অধিকারের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচনে সেই সরকারের জায়গায় নতুন কোনো সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পারে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তন করার সেরকম কোনো ক্ষমতাই থাকেনা। ফলে একনায়কতন্ত্রে শাসক যদি কোনো জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করেও থাকে, তাহলেও জনগণের কিছু করার থাকে না।
◆ সংবিধানের প্রাধান্য :
গণতন্ত্রে সংবিধান রক্ষা হলো সব্বোর্চ। সংবিধানের উপরে কেউ নেই তাই সবাইকেই সংবিধান মেনে চলতে হবে। কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তাহলে তাকে সেই আইন ভঙ্গ করার জন্য উপযুক্ত শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে সংবিধানের কোনো গুরুত্ব নেই। একনায়কতন্ত্রে শাসক নিজের ইচ্ছেমত যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। বিশেষত আইন পরিবর্তন, প্রণয়ন ইত্যাদি। এবং সেসব আইন ভঙ্গ করলেও শাষককে কোনো শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কারোর হাতেই থাকেনা।
◆ রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি :
গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি জনগণের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করা হয়। কারণ ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল যদি জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করে, তাহলে জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে ভোট দানের মাধ্যমে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতার অধিকারী করে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। তাই গণতন্ত্রে যত বেশি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেশি থাকে বলে, ক্ষমতায় থাকা সরকার নিজের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে ভয় পায়।
কিন্তু একনায়কতন্ত্রের একাধিক রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। শাসক নিজের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে, বিরোধী দলগুলোকে নিজের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য বিভিন্ন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। একনায়কতন্ত্রে শাসক নিজের বিরোধী দলগুলোকে সব সময়ই নিজের পথ থেকে সরিয়ে রাখে। যার ফলে একনায়কতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি কখনই দেখা যায় না।
◆ স্থায়িত্ব :
গণতন্ত্রে একটি সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই সরকার যদি জনস্বার্থের কল্যানের উদ্দেশ্যে অনেক কাজ করে থাকে,তাহলে সম্ভাবনা থাকে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সেই সরকারকেই পুনরায় ক্ষমতার অধিকারী করবে। কিন্তু সরকার জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করে থাকে,তাহলে সম্ভাবনা এটা হয় যে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ ভোট দানের মাধ্যমে অন্য কোনো সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। যার ফলে গণতন্ত্রে কোনো সরকারের স্থায়ীত্ব চিরস্থায়ী নয়। অন্যদিকে একনায়কতন্ত্রে জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা থাকেনা। তার চাইতেও বড় কথা হলো, একনায়কতন্ত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি দেখা যায় না। যার ফলে সরকার পরিবর্তনের করার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে একনায়কতন্ত্রের সরকারের স্থায়ীত্ব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
◆ জরুরী কালীন অবস্থা :
গণতন্ত্র হলো একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটাভুটি?বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সমর্থন, আলাপ-আলোচনা ইত্যাদি মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার ফলে বিভিন্ন জরুরি অবস্থা যেমন - বহিরাক্রমণ,যুদ্ধ অভ্যন্তরীণ ঝামেলার ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর সময়ের অপচয় হয়। যার ফলে জরুরিকালীন অবস্থার পক্ষে গণতন্ত্র একদম অনুপোযোগী। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একজনের সিদ্ধান্ত ই চূড়ান্ত এবং সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আলাপ আলোচনার প্রয়োজন হয়না। শাষক নিজের বিচার বুদ্ধির উপর ভিত্তি করেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এবং জরুরি কালীন অবস্থা যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সেই জরুরি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। যার ফলে জরুরি অবস্থায় একনায়কতন্ত্র বিশেষ উপযোগী।
◆ অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের সম্ভাবনা :
গণতন্ত্রে জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন করে বলে, সরকার নিজের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করতে পারে না। ফলে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের সম্ভাবনাও কম থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে শাসক নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা খুশি তাই করতে পারে। ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়।।
◆ উপসংহার :
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এটা বলতে পারা যায়,গণতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র হলো দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের শাসন ব্যবস্থা। আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারা যায়, একনায়কতন্ত্রের চেয়ে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই জনগণের পক্ষে বেশি কল্যাণকর। কিন্তু গণতন্ত্র যে সব সময়ই জনগণের পক্ষে কল্যাণকর হবে, তা কিন্তু নয়। সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। ঠিক তেমনিই গণতন্ত্রের যেমন নানা সুবিধা রয়েছে, ঠিক তেমনই নানা অসুবিধাও হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও, বতর্মানে বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত।
আশাকরি যে, আজকের এই একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী কী? তার সম্পর্কে " উওর পেয়ে গেছো। যদি এই পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ে দেখো।
Tags :