চৌরিচৌরার ঘটনা কি? || মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর || What is the Incident of chaurichaura?
চৌরিচৌরার ঘটনা কি এটা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার আগে আমাদের একটু অতীতে ফিরে যাওয়া দরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি রাউলাটের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ‘সিডিশন কমিশন’ [Sedition Commission] গঠন করেন। ভারতীয়দের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ সমূহের ওপর ভিত্তি করে ভারতে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার এক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এবং দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে যা কুখ্যাত ‘রাউলাট আইন’ বা সিডিশন আইন নামে পরিচিত।
রাওলাট আইন পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সারাদেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ রাওলাট আইন ছিল মূলত তীব্র দমনমূলক একটি আইন। এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের প্রায় সর্বপ্রকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যেমন কোন মিছিলে যোগ দেওয়া যাবে না, সংবাদপত্রে স্বাধীনভাবে লেখা যাবে না, ব্রিটিশ সরকার যে কাউকে বিনা কোন অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টের বিনাই কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে এবং তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের কোনো আপিলও করা যাবে না ইত্যাদি। মহাত্মা গান্ধী ১৯১৯ এর এই রাওলাট আইন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিলের রবিবারে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পরেই তিনি দেশজুড়ে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দেশ জুড়ে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এবং এই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৯৯২২ সালে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানের স্থানীয় বাজারে হঠাৎ করে মাংসের দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। এই কারণে সেখানে স্থানীয় কয়েকজন নেতা বা স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ১৯২২ এর ৪ ই ফেব্রুয়ারি এই বিক্ষোভের কারণে সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এর ফলে সেখানে পরিস্থিতি একটু অন্যরকম হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। স্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হলে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ স্টেশনের সামনে গিয়ে সেখানে ঘেরাও করে এবং তাদের নেতাদের ছেড়ে দেওয়া দাবি জানাতে শুরু করে। ১৯২২ খ্রি সালের ৪ ঠা জানুয়ারি পুলিশ স্টেশনের সামনে প্রায় দুই থেকে আড়াইশো জন স্থানীয় বাসিন্দারা লাগাতার এই দাবি জানাতে শুরু করলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খোলা আকাশে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত হয়ে পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁতে শুরু করে এতে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। শেষমেষ পুলিশ নিজেদের আত্মরক্ষার্থে বা পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জনগণের দিকে গুলি চালালে তিনজন স্থানীয় লোক বা বাসিন্দা সেখানেই মারা যায়। এতে স্থানীয় জনগণ রেগে গিয়ে, পুলিশ স্টেশনে উপস্থিত সমস্ত পুলিশকর্মীকেই আটকে রেখে বাইরে থেকে আগুন লাগিয়ে দেয় ম এভাবে হঠাৎ করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরে পুলিশ স্টেশনের মধ্যে থাকা ২২ জন মতান্তরে ২৩ জন পুলিশ কর্মী সেখানেই পুড়ে মারা যান। ইতিহাসে এই ঘটনাই চৌরিচৌরার ঘটনা নামে পরিচিত।।
মহাত্মা গান্ধী সম্পূর্ণ অহিংস ভাবে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু চৌরিচৌরার ঘটনার মতো একটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার ফলে মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালে ১২ই ফেব্রুয়ারি সম্পূর্ণভাবে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।।