আজকেই ব্লগ পোস্টে মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বা দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং উপনিবেশ সমূহ অধ্যায় থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "ভারতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভূমিকা" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান আলোচনা করো
অথবা,
ভারতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভূমিকা
একনজরের | আজাদ হিন্দ ফৌজ |
---|---|
নাম | আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি |
প্রতিষ্ঠাতা | রাসবিহারী বসু |
স্থান | সিঙ্গাপুরে |
প্রতিষ্ঠার সময় | ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ লা সেপ্টেম্বর |
সেনাপতি | ক্যাপ্টেন মোহন সিং |
সুভাষচন্দ্র বসুর দায়িত্ব গ্রহণ | ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৪ জুলাই |
আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিভাগ | গান্ধী ব্রিগেড,আজাদ ব্রিগেড, নেহেরু ব্রিগেড,ঝাঁসির রানী ব্রিগেড এবং সুভাষ ব্রিগেড |
সেনাধ্যক্ষ | গুরুবক্স সিং ধিলন এবং প্রেম কুমার সেহগল |
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ সরকার গঠন | ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে অক্টোবর |
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত আক্রমণ | ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে, মার্চ |
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে শহীদ এবং স্বরাজ গঠন | ১৯৪৩ টি স্বাদের ৩১ ডিসেম্বর |
মণিপুরে কোকিমা শহর দখল | ১৯৪৪ সালের ৬ এপ্রিল |
আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রতিষ্ঠা
ভারতের স্বাধীনতার পেছনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতের প্রখ্যাত বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপানে থেকেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয় ছিলেন।তা সভাপতিতে ব্যাংককে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী দেশপ্রেমিক ভারতীয়রা এক সম্মেলনের মিলিত হয়ে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সভার সভাপতি ছিলেন রাজবিহারী বসু নিজেই। পরবর্তীকালে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ লা সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসুর আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গঠন করেছিলেন। তখন ক্যাপ্টেন মোহন সিং ছিলেন এর সেনাপতি।। আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়েছিল মালয়ে জাপানিদের হাতে বন্দি হওয়া ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে। জাপান ১৪ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এই বিশাল সংখ্যক সেনাদের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশদের দুর্বল করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ক্যাপ্টেন মোহন সিং এর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের যোগ দেয়। প্রথমে ২৫০০০ এবং পরে প্রায় ৪০,০০০ সেনা এই বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।।
সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ
রাসবিহারী বসুর কথায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৪ই জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর দায়িত্ব নিজের হাতে গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন। তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীকে মূলত পাঁচটি ব্রিগেডে ভাগ করেন। যেমন গান্ধি ব্রিগেড, নেহেরু ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, ঝাঁসি রানী ব্রিগেড এবং সব শেষের লক্ষ্মী স্বামীনাথানের কথায় সুভাষ ব্রিগেড গঠন করেন।।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত আক্রমণ
এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে অক্টোবর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার নামে একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এবং এই সরকার ২৩ অক্টোবর ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নেতাজির এই সরকারকে জাপান, জার্মানি, থাইল্যান্ড, ইতালিসহ মোট নয়টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়।। নেতাজি ৩১ ডিসেম্বর এই দুটি দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন যথাক্রমে 'শহিদ' ও 'স্বরাজ'।
দিল্লি যাত্রার উদ্যোগ : নেতাজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি রেঙ্গুন-এ যান। সেখানে তাঁর প্রধান সামরিক দপ্তর স্থাপিত হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনী এরপর ভারত অভিযানে অগ্রসর হয়। সেনাদলের সামনে নেতাজি ধ্বনি দেন “দিল্লি চলো", কারণ দিল্লি ভারতের রাজধানী।
কোহিমা দখল : জাপানি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায়, নেতাজির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং উজ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ চালায়। তারা মণিপুরের কোহিমা শহরটি দখল করে (৬ এপ্রিল, ১৯৪৪ খ্রি.) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং রাজধানী ইম্ফল দখলের জন্য অগ্রসর হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ভারতের সীমানা থেকে প্রায় ১৫০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করতে সক্ষম হয়।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর পরাজয়ঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান প্রথম দিকে শক্তিশালী হলেও অল্পদিনের মধ্যেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এর ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজের জাপানের থেকে সর্বপ্রকার সাহায্য পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য, অস্ত্র, দুর্ভিক্ষ, শীত, ম্যালেরিয়া পাহাড়ের বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় ইত্যাদি কারনে কয়েক হাজার সেনা মারা যায়। শেষ পর্যন্ত জাপান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করলে, এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।।