রাজাজি সুত্র কী? এর প্রস্তাব সমূহ এবং ব্যর্থতার কারণ || উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
রাজাজি সূত্র বা সিআর ফর্মুলা কি?
১৯৪০ সালে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা স্বাধীনতা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে স্যার লিনলিথগো ভারতবর্ষের জাতীয় নেতাদের সামনে লিনলিথগো প্রস্তাব এবং ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের দিকে স্যার ক্রিপস তার ক্রিপস প্রস্তাব নিয়ে ভারতে আসেন। কিন্তু এই দুটোই ব্যর্থ হয়। এর পরবর্তী সময়ে মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ১৯৪৬ আজাদ হিন্দ বাহিনীর লড়াই এবং এর পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌবাহিনীতে নৌ বিদ্রোহের ঘটনার পর, গান্ধী অনুগামী চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য তার একটি প্রস্তাব পেশ করেন যা রাজাজি সূত্র বা সি.আর.ফর্মুলা নামে পরিচিত।।রাজাজি সুত্র বা সি.আর.ফর্মুলার প্রস্তাবসমূহঃ
চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী তার এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ- উভয় প্রকারের দাবী দাওয়া মেটানোর চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে ভারতের অখণ্ডতাকেও তিনি রক্ষা করার চেষ্টা করেন। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর সি আর ফর্মুলা বা রাজাজি সূত্রে তিনি যে কয়েকটি প্রস্তাব মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেসের সামনে রাখেন, সেগুলো হল-
1 কংগ্রেসের স্বাধীনতার দাবিকে মুসলিম লিগ পূর্ণভাবে সমর্থন করবে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তবর্তী সরকার গঠন করবে।
2- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করে দেখা হবে যে তারা পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষপাতী কি না।
3- গণভোট গ্রহণের আগে সব দলকে তাদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে।
4- মুসলিম-প্রধান অঞ্চলগুলি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিলে দুটি "পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হবে। দেশভাগ হলেও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য যেসব বিষয়ে উভয় অংশই সমানভাবে জড়িত, সেসব বিষয় যৌথভাবে পরিচালিত হবে।
5- ব্রিটিশ সরকার ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে তবেই এইসব প্রস্তাব কার্যকরী হবে।
রাজাজি সূত্র বা সি.আর.ফর্মুলার ব্যর্থতাঃ
চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী তার রাজারী সূত্র বা সি.আর.ফর্মুলার মাধ্যমে মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেস উভয়ের ই দাবি মেটানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তার এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল-
গান্ধিজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে জেল থেকে ছাড়া পান। এরপর তিনি রাজাজির প্রস্তাব অনুসারে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোম্বাইয়ে জিন্নার বাসগৃহে একুশবার বৈঠক করেন। কিন্তু এসব বৈঠক ব্যর্থ হয় এবং জিন্না রাজাজি সূত্র প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ জিন্নার মতে, রাজাজি প্রস্তাবিত পাকিস্তান ছিল 'পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ'। জিন্না অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে গণভোট মানতে রাজি ছিলেন না, কারণ তাঁর কাছে গণভোটের অর্থ ছিল অমুসলিমদের হাতে মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সমর্পণ করা। মুসলিম লীগ অর্থাৎ মোহাম্মদ আলী জিন্নার কোন সমর্থন না পাওয়ায় চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর এই রাজাজি সুত্র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল।