মার্কসবাদীদের শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বটি আলোচনা করো |
মার্কসবাদীদের শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বটি আলোচনা করো || HS Political Science Question Answer 2023
উওরঃ মার্কসের মতবাদের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্ব। লেনিনের মতে উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন উপকরণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দুটি গোষ্ঠীকে শ্রেণি বলা হয়। মার্কসবাদীদের মতে সমাজে দুই প্রকারের শ্রেণী রয়েছে। এগুলো হলো মুখ্য শ্রেণী এবং গৌণ শ্রেণী।
সমাজের মুখ্য শ্রেণী কাকে বলে?
মার্কসবাদীদের মতে সমাজের মুখ্য শ্রেণী বলতে সেই শ্রেণীকে বোঝায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। সমাজের মুখ্য শ্রেণীর উদাহরণ হল পুঁজিপতি মালিক শ্রেণী এবং শ্রমিক শ্রেণী।
সমাজের গৌণ শ্রেণী কাকে বলে?
মার্কসবাদীদের মতে সমাজের গৌণ শ্রেণী বলতে সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত নয় অথবা সমাজের মুখ্য শ্রেণি বাদ দিয়ে যে সমস্ত শ্রেণি রয়েছে তাদের সকলকেই একত্রে গৌণ শ্রেণী বলা হয়। যেমন- রাজমিস্ত্রি,কৃষক, মধ্যবিত্ত জমিদার প্রভৃতি।
শ্রেণীর বৈশিষ্ট্যঃ
লেনিন সমাজের এই শ্রেণী সম্পর্কে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল -
• প্রথমত শ্রেণি সর্বদা উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকবে।
• দ্বিতীয়ত শ্রেণীর গোষ্ঠীগত উৎপাদন ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত।
• তৃতীয়ত সামাজিক শ্রম গঠনে শ্রেণির একটি বড় ভূমিকা থাকে।
• চতুর্থত শ্রেণির সামাজিক সম্পত্তি লাভের পদ্ধতি এবং পরিমাণ সর্বদা নির্দিষ্ট।
শ্রেণী সংগ্রামঃ মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলাস তাদের ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো গ্রন্থে বলেছিলেন, আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে তাদের প্রত্যেকের ইতিহাস হল শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রেণী সংগ্রাম বলতে বোঝায় পরস্পর বিরোধী দুটি শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন শ্রেণীর স্বার্থের বিরোধের জন্যই এই দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এই দ্বন্দ্ব ও সার্থের সংঘাতের থেকে শুরু হয় লড়াই বা সংগ্রাম। মার্কসবাদীরা বলেছেন, শ্রেণীবিভক্ত সমাজের এই দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী। কারণ যারা প্রকৃত উপকরণের মালিক তারা প্রকৃত উৎপাদনের মালিক নয়। অথচ যারা প্রকৃত উৎপাদক যাদের শ্রম পুঁজি ও মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে, তারা তাদের মুনাফার ভাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই মালিক শ্রেণীর সঙ্গে তাদের সংগ্রাম অনিবার্য।।
শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাসঃ
এটা বিশ্বাস করেন আদিম সাম্যবাদী সমাজ ছাড়া আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে তাদের প্রত্যেকের ইতিহাস হলো শ্রী সংগ্রামের ইতিহাস এবং এই সংগ্রামের ফলেই সমাজের রূপান্তর ঘটেছে।
▪ দাস সমাজঃ প্রাচীন দাস সমাজ ছিল দাস ও মালিক শ্রেণীতে বিভক্ত। এই সমাজের দাস মালিকেরা অকল্পনীয় শোষণ, শাসন এবং অত্যাচার চালাতো। এখানে দাসদের জীবন ছিল গরু ছাগলের মতো। এই শোষণের বিরুদ্ধে তারা দাশ মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রাম করে। এক্ষেত্রে স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। দাস বিদ্রোহের মাধ্যমে তারা দাস সমাজের পরিবর্তন ঘটায় এবং শুরু হয় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ।
▪ সামন্ততান্ত্রিক সমাজঃ দাস সমাজের পর শুরু হয় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ। এই সমাজেও সমাজব্যবস্থা দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিল সম্পত্তির মালিক সামন্ত প্রভু অপরদিকে ছিল সম্পত্তিহীন ক্রীতদাস বা ভূমিদাস। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সামন্ত প্রভুরা ভূমিদাসদের ওপর তীব্র শোষণ, অত্যাচার চালাত। যার ফলে সেই শোষণ এবং অত্যাচার থ্বকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুরু হয় শ্রেণি সংগ্রাম।
▪ পুঁজিপতি সমাজঃ সামন্ততান্ত্রিক সমাজের পতনের ফলে পুঁজিপতি সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। পুঁজিপতি সমাজ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিল সম্পত্তির মালিক বা পুঁজিপতি শ্রেণী অপরদিকে ছিল শ্রমিক শ্রেণী। অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থার তুলনায় পুঁজিপতি সমাজ অবস্থা আরও উন্নত এবং আধুনিক। এই সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেণী অনেকটাই শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। অপরদিকে পুঁজিপতি মালিকরাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী এবং অস্ত্রশস্ত্রের মালিক। তাই পুঁজিপতি সমাজ ব্যবস্থার শ্রেণি সংগ্রাম অনেকটাই আলাদা। পুঁজিপতি সমাজের এই শ্রেণি সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটে বিপ্লবের মাধ্যমে। এই ভাবে পুঁজিপতি সমাজের পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ তান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব ঘটে এবং শ্রেণি সংগ্রাম শেষ হয়।।