পদের ব্যাপ্যতা কাকে বলে? ব্যাপ্য এবং অব্যাপ্য পদের তালিকা || HS Philosophy Question Answer 2023

0

  

পদের ব্যাপ্যতা কাকে বলে? ব্যাপ্য এবং অব্যাপ্য পদের তালিকা || HS Philosophy Question Answer 2023
পদের ব্যাপ্যতা কাকে বলে? ব্যাপ্য এবং অব্যাপ্য পদের তালিকা


উওরঃ তর্ক বিজ্ঞানে ব্যাপ্যতা বলতে পদের ব্যাপ্যতাকেই বোঝায়। নিরপেক্ষ বচনে দুটি পদ থাকে। এরমধ্যে একটি হয় উদ্দেশ্য পদ এবং অপরটি হয় বিধেয় পদ। 

• যখন কোনো পদের মাধ্যমে তার সম্পূর্ণ ব্যক্তর্থ বা পরিমাণে নির্দেশ বা উল্লেখ করা হয়, তখন তাকে ব্যাপ্য পদ বলে। 

• এবং যখন কোনো পদের মাধ্যমে যদি তার পরিপূর্ণ ব্যক্তর্থ অথবা পরিমাণকে নির্দেশ না করে তারা কোনো একটি বিশেষ অংশকে উল্লেখ বা নির্দেশ করা হয়, তখন সেই পদকে অব্যাপ্য পদ বলে।।

আমরা সকলেই জানি যে নিরপেক্ষ বচন হলো চার প্রকার। যথা- A বচন, E বচন, I বচন এবং O বচন। 

এখন এই চারটি নিরপেক্ষ বচনের মধ্যে কোন বচনের উদ্দেশ্য পদ হবে এবং বিধেয় পদ ব্যাপ্য না অব্যাপ্য তা নিচে আলোচনা করা হলো। 

চারটি নিরপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রে কোন বচনের ক্ষেত্রে কোন পদ ব্যাপ্য এবং কোন পদ অব্যাপ্য তা নিজের তালিকায় উল্লেখ করা হলো


বচন উদ্দেশ্য পদ বিধেয় পদ
A বচন বা সামান্য সদর্থক বচন ব্যাপ্য অব্যাপ্য
E বচন বা সামান্য নঞর্থক বচন ব্যাপ্য ব্যাপ্য
I বচন বা বিশেষ সদর্থক বচন অব্যাপ্য অব্যাপ্য
O বচন বা বিশেষ নঞর্থক বচন অব্যাপ্য ব্যাপ্য


• A-বচনের ব্যাপ্যতা : 

• A-বচনে শুধুমাত্র উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্য, বিধেয় পদটি অব্যাপ্য।

উদাহরণ-

• সকল মানুষ হয় মরণশীল (A)।

এই সামান্য-সদর্থক বচনটির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মানুষ নামক উদ্দেশ্য পদটি তার পরিপূর্ণ ব্যক্তর্থ,অর্থাৎ সমস্ত মানুষ জাতিকে উল্লেখ করেছে বলেই তা ব্যাপ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে বিধেয় পদটি সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্য।

কিন্তু বিষেয় তথা মরণশীল পদটি তার সম্পূর্ণ ব্যস্তর্ণ বা পরিমাণকে নির্দেশ করতে সমর্থ হয়নি, তাই অব্যাপ্য হয়েছে। কারণ, মরণশীলতা শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, তা অন্য জীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সে-কারণেই এই পদটির দ্বারা তার আংশিক পরিমাণ তথা আংশিক ব্যত্তর্থকেই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, A-বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্যকেই ব্যাপ্য করে, বিধেয়কে নয়।।

A-বচনে ব্যাপ্যতার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তঃ

কিছু ব্যতিক্রমী A-গুনের দৃষ্টান্ত আছে, সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়— উভয়পদই ব্যাপ্য হতে পারে।

i. সংজ্ঞাবাচক পদের ক্ষেত্রে A বচনের উভয়পদই ব্যাপ্য।

• সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব (A)।

এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য তথা মানুষ বলতে আমরা যা বুঝি, বিধেয় তথা বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব বলতেও তাই বুঝি। তাই এই দুটি পদের ব্যত্তর্থ বা পরিমাণ একই। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য পদটির সংজ্ঞা থেকেই বিধেয় পদটি নিঃসৃত হয়েছে, তাই উদ্দেশ্য তথা মানুষ এবং বিধেয় তথা বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব উভয়পদই ব্যাপ্য।

বিশিষ্ট নামবাচক পদের ক্ষেত্রে A-বচনের উভ্যাপদই ব্যাপ্যঃ

• কলকাতা হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী (A)

এরূপ বচনটিতে উদ্দেশ্যপদ তথা কলকাতা বলতে আমরা যা বুঝি, বিষেয় পদ তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী বলতেও আমরা সেই একই বিষয়কেই বুঝি। এই দুটি পদই তাই বিশিষ্ট নামবাচক সমার্থক পদরূপে গণ্য। তাই এই দুটি পদই ব্যাপ্যরূপে গণ্য। 

পুনরুত্তির ক্ষেত্রে A-বচনের উভয়পদই ব্যাপ্যঃ

• সকল বিড়াল হয় মার্জার (A)।

এক্ষেত্রে, উদ্দেশ্য তথা বিড়াল পদটি তার সম্পূর্ণ ব্যক্তর্থ (পরিমাণ)-কে উল্লেখ করতে পেরেছে। বলেই এই পদটি ব্যাপ্য হয়েছে। অন্যদিকে, উদ্দেশ্য তথা বিড়াল এবং বিধেয় তথা মার্জার পুনরুক্তিমূলক সমার্থক পদ এই দুটি পদের ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ ব্যর্থ উল্লেখ করা সম্ভব হয়েছে। সেকারণেই এক্ষেত্রে উভয়পদই ব্যাপ্যরূপে গণ্য।

E-বচনের ব্যাপ্যতাঃ 

E বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয়পদই ব্যাপ্য।

• কোনো মানুষ নয় সুখী (E)।

এই সামান্য নঞর্থক বচনটির উদ্দেশ্য পদ তথা মানুষ পদটি ব্যাপ্য। কারণ এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে মানুষ পদের পরিপূর্ণ ব্যস্তার্থ তথ্য পরিমাণের উল্লেখ করা হয়েছে বলেই উদ্দেশ্য তথা মানুষ পদটি ব্যাপা হয়েছে। আবার, বিষেয় তথা সুখী পদটির দ্বারাও সমগ্র ব্যক্তথাকে উল্লেখ করা যায়। কারণ, এই পদটি না বাচকরূপে গণ্য হওয়ায় বিধেয় তথা সুখী পদটি সামগ্রিকভাবে মানুষ জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলত সুখী শ্রেণির কোনো অংশের সাথে মানুষ জাতির কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব, এই বিধেয় পদ তথা সুখী পদটিও ব্যাপ্য। অর্থাৎ, মানুষ (উদ্দেশ্য) এবং সুখী (বিধেয়) উভয়পদই ব্যাপ্য হয়েছে। সুতরাং দাবি করা যায় যে, E বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয়পদই ব্যাপ্য।

I বচনের ব্যাপ্যতাঃ 

I বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় কোনো পদই ব্যাপ্য নয়।

• কোনো কোনো ছাত্র হয় সৎ (I)।

এই বিশেষ সদর্থক বচনটির উদ্দেশ্য পদ তথ্য ছাত্র পদটি পরিপূর্ণ ব্যর্থ বা পরিমাণের বিষয়টি উল্লেখ না করে তার একটি অংশকে নির্দেশ করে। সেকারণেই উদ্দেশ্য পদ তথা ছাত্র পদটি অব্যাপ্য।

আবার, বিধেয় পদ তথা সৎ পদটি তার সমগ্র ব্যক্তর্থকে উল্লেখ না করে সৎ-জাতির একটি অংশের সঙ্গে কিছু ছাত্রের সম্পর্ককে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, এই বিধেয় পদটিও অব্যাপ্য। সুতরাং দাবি করা যায় যে, I-বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় উভয়পদই অব্যাপ্য।

• O-বচনের ব্যাপ্যতাঃ 

• O-বচনে উদ্দেশ্য পদটি অব্যাপ্য কিন্তু বিধেয় পদটি ব্যাপ্য।

• কোনো কোনো ছাত্র নয় পরিশ্রমী (0)।

এই বিশেষ-নঞর্থক বচনটির উদ্দেশ্য পদ তথা ছাত্র পদটি তার পরিপূর্ণ ব্যক্তর্থ বা পরিমাণকে উল্লেখ না করে, আংশিক পরিমাণকে উল্লেখ করেছে মাত্র। সেকারণেই এই পদটি অব্যাপ্য হয়েছে।

কিন্তু বিধেয় পদ তথা পরিশ্রমী পদটি সামগ্রিকভাবে ছাত্র পদ থেকে বিচ্ছিন্ন। এর কোনো অংশের সঙ্গে ছাত্র জাতির কোনো অংশের সম্পর্ক নেই। সেকারণেই এখানে বিধেয় পদ তথা পরিশ্রমী পদটি ব্যাপ্য হয়েছে। সুতরাং দাবি করা যায় যে, O-বচন শুধুমাত্র বিধেয়কেই ব্যাপ্য করে, উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে না। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top