মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো|| WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes

0

    

গান্ধীবাদ এবং মার্কসবাদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো || WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes
গান্ধীবাদ এবং মার্কসবাদের মধ্যে পার্থক্য

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শের (WBCHE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali )  একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় "মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো|| WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 


মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো|| WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes


ভূমিকাঃ- মানবসমাজের বিকাশের প্রকৃতি ও ইতিহাস বিশ্লেষপে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী তত্ত্বের প্রয়োগ ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলে পরিচিত। কার্ল মার্কস দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে ইতিহাসের জড়বাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপিত করেন। ডারউইন যেমনভাবে জীবজগতের বিবর্তনের নীতি আবিষ্কার করেছিলেন, মার্কসও তেমনি মানব ইতিহাসের বিবর্তনের মূল সূত্র বিজ্ঞানসম্মতভাবে আবিষ্কার করেছিলেন। মার্কসের কাছে ইতিহাস কয়েকটি ঘটনার সংকলন অথবা কাহিনির বিবরণ নয়। মানবসমাজের ইতিহাস আবশ্যিকভাবেই শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস, শ্রেণিশোষণ ও দমনের ইতিহাস। 

              মরিস কর্নফোর্থের মতে, ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তিনটি মূল সূত্র রয়েছে। সেগুলি হল- 
• সমাজের পরিবর্তন ও বিকাশ প্রকৃতির মতো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। 
• সমাজের বৈষয়িক জীবনের বিকাশের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক তত্ত্ব, মতাদর্শ, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। 
• বৈষয়িক জীবন থেকে যেসব মতাদর্শ ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, বাস্তবে সেগুলি বৈষয়িক জীবনের বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

মূল বক্তব্য- 

[1] মানবসমাজের মৌলিক পরিবর্তন ও উৎপাদন পদ্ধতিঃ- 

মার্কস ও এঙ্গেলস তাঁদের German Ideology শীর্ষক রচনায় লিখেছেন, মানুষের অস্তিত্বের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন হল খাদ্য, পানীয়, পরিধেয় ও বাসস্থান। জীবনযাপনের এই বাস্তব প্রয়োজনগুলি পূরণের জন্য মানুষ প্রথমে উৎপাদনের কাজে অংশগ্রহণ করে। মার্কসের মতে, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, প্রভৃতি চিন্তাধারা নয়, মানুষের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির উৎপাদন পদ্ধতি রয়েছে মানবসমাজের পরিবর্তনের মূলে। 

[2] ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণাঃ-

মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মূলে রয়েছে ভিত্তি (Basis) ও উপরিকাঠামোর (Super structure) ধারণা। উৎপাদন পদ্ধতি এবং উৎপাদন সম্পর্ককে নিয়ে যে অর্থনৈতিক কাঠামো তাই হল সমাজের মূল ভিত্তি বা বুনিয়াদ (Basis)। এই ভিত্তি বা বুনিয়াদের ওপরে গড়ে ওঠা সামাজিক সম্পর্ক, মতাদর্শ ও প্রতিষ্ঠান হল উপরিকাঠামো,(Super structure) 

[3] উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বঃ-


ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুসারে, মানবসমাজের বিকাশের ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে উৎপাদন পদ্ধতি। এই উৎপাদন পদ্ধতি সবকিছুর মূল। তাই ইতিহাসকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে উৎপাদন পদ্ধতির বিশ্লেষণ প্রয়োজন। প্রসঙ্গত বলা যায়, মার্কসীয় তত্ত্বে উৎপাদন বলতে সবসময় সামাজিক উৎপাদনকে বোঝানো হয়েছে। সমাজবিকাশের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে উৎপাদন পদ্ধতি। সমাজের কাঠামো এই উৎপাদন পদ্ধতির প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তনের ফলে সমাজব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়।

[4] উৎপাদন পদ্ধতির দুটি দিকঃ-


মার্কসের মতে, উৎপাদন পদ্ধতির দুটি দিক রয়েছে। সেগুলি হল- উৎপাদন শক্তি, উৎপাদন সম্পর্ক | শ্রমিক ও তার ভ্রমণত্তি, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, প্রাকৃতিক সম্পদ প্রভৃতি হল উৎপাদন শক্তি। অন্যদিকে উৎপাদন সম্পর্ক বলতে মানুষে-মানুষে ও শ্রেণিতে -- শ্রেণিতে উৎপাদনভিত্তিক পারস্পরিক সম্পর্ককে বোঝায়। মার্কস ও এঙ্গেলসের মতে, উৎপাদন সম্পর্ক আবার দু-ধরনের হতে পারে। এদের মধ্যে একটি হল বৈর উৎপাদন সম্পর্ক ( antagonistic pro ductive relations) এবং অপরটি হল অকৈর উৎপাদন সম্পর্ক (non antagonistic productive relations) | উৎপাদনের উপকরণসমূহের মালিকানা যে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির কুক্ষিগত থাকে, সেই সমাজের উৎপাদন সম্পর্ক হল বৈর। যেমন— দাসসমাজ, সামন্তসমাজ ও পুঁজিবাদী সমাজের উৎপাদন সম্পর্ক। অন্যদিকে, যে সমাজে উৎপাদনের উপকরণের মালিক হল উৎপাদনকারী শ্রমজীবী শ্রেণি সেই সমাজের উৎপাদন সম্পর্ক অব্রৈ প্রকৃতির। দৃষ্টান্তরূপ, এক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক সমাজের উৎপাদন সম্পর্কের কথা বলা যায়।

[5] উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের ইতিহাসঃ- 


মার্কসীয় মতবাদ অনুসারে, মানবসমাজের বিকাশের ইতিহাস হল উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের ইতিহাস। মানবসমাজের পরিবর্তনের মুখ্য কারণ হল উৎপাদন শক্তি ও উপাদন সম্পর্কের জন্ম। মার্কসের বক্তব্য হল, নতুন উৎপাদন শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্ক পুরোনো ব্যবস্থার ধ্বংসের ফলে আলাদাভাবে সৃষ্টি হয় না। পুরোনো ব্যবস্থার মধ্যেই নুন উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্ক স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ধৃত হয়। Capital গ্রন্থে মার্কস বলেন, প্রত্যেক সমাজব্যবস্থার গর্ভে যখন নতুন সমাজের উদ্ভব হয়, শক্তি তখন ধাত্রী হিসেবে কাজ করে ("Force is the midwife of every old society pregnant with new one)। মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী, উৎপাদন শক্তির বিকাশ একটা নির্দিষ্ট পর্যন্ত উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে স্বতঃফুর্তভাবে সামঞ্জস্য রঙা করে চলে। কিন্তু সেই স্তরের পরে প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্কের ধারকশ্রেণি নতুন উৎপাদন শক্তির বিকাশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্তন বিনা বাধায় সাধিত হয় না। পুরোনো উৎপাদন সম্পর্ককে বাতিল করার জন্য প্রয়োজন হয় নতুন প্রগতিশীল মতাদর্শ। সেই সময় মানুষের সচেতন কর্মকান্ড, অগ্রগতির স্বতাপুর্ত কারণ হিসেবে কাজ করে। ধীরগতি বিবর্তনের বদলে দেখা দেয়। বিপ্লব।


[6] সামাজিক বিবর্তনের বিজ্ঞানসঙ্গত ধারাঃ-


মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে, আদিম যৌথ সমাজজীবনে উৎপাদনের উপাদানের মালিক সমগ্র মানবসমাজ। উৎপাদনের উপাদানের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকায় সে সময় শ্রেণিশোষণ ছিল না। দাস সমাজব্যবস্থায় দাসমালিকরা ব্যক্তিগত মালিকানা কায়েম করে। রুমে সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিক হল সামন্তপ্রভুরা। এসময় উৎপাদনে নিযুক্ত শ্রমিকরা ছিল ভূমিদাস। তখনকার সমাজব্যবস্থার সঙ্গে উৎপাদন ব্যবস্থার সম্পর্ক যথেষ্ট সংগতিপূর্ণ ছিল। পরে কৃষির উন্নতির পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পের উদ্ভব ঘটলে সামন্তসমাজের শোষণমূলক উৎপাদন সম্পর্ক যন্ত্রশিল্পের বিকাশে বাধা দেয়। এর ফলে সামন্তসমাজের অবসান ঘটে এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। পুঁজিবাদী সমাজের ধনিকশ্রেণি উৎপাদনের উপাদানের মালিকানা দখল করে। শ্রমিকরা জীবনধারণের জন্য পুঁজিপতিদের কাছে শ্রমশক্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কলকারখানায় একসঙ্গে কাজ করায় উৎপাদনে সামাজিক বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু উৎপাদনের উপকরণগুলির মালিকানা পুঁজিপতি মালিক শ্রেণির কুক্ষিগত থাকার ফলে তা ব্যক্তিগত থেকে যায়। এই অবস্থায় সামাজিক উৎপাদনের সঙ্গে ব্যক্তিগত মালিকানার উৎপাদন সম্পর্ক সামন্তসাহীন হয়ে পড়ে। তখন বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কের অবসান এবং উৎপাদনের উপকরণের ওপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে ওঠে। এভাবে উৎপাদন শক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন সম্পর্কের বদল হয়। এই বদলের ফলে আবির্ভাব ঘটে সমাজতান্ত্রিক সমাজের।

আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসাবে যে "মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো|| WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes" উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে তা তোমাদের কাজে লাগবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শের বড় প্রশ্ন উত্তর | pol science notes | pol science suggestion | pol science question answer | pol science saq | pol science pdf | pol science question answer 2023 |wb class 12 political science question answer  | wb class xii political science question answer | hs political science  question answer & notes in Bengali | wbbse class 12 political science chapter 1 question answer in Bengali 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top