কার্ল মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো || WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes

0

 

কার্ল মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো|| WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শের (WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali )  একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় "কার্ল মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো || WBCHSE Class 12 Political Science Question Answer & Notes" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

কার্ল মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো 

মার্কসীয় তত্ত্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। গ্রিক শব্দ Dailego থেকে দ্বন্দ্ববাদ (Dialectic) শব্দটি এসেছে। প্রাচীনকালের গ্রিক দার্শনিকদের মতে সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তির পরস্পর বিরোধী মতামতকে খন্ডন করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সত্যে পৌঁছানো যায়। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে জার্মান দার্শনিক হেগেল তার দ্বন্দ্বমূলক ভাববাদ রচনা করেছিলেন। জার্মান দার্শনিক এলেন ভাববাদের মূল কথা হলো এই বস্তু জগত আমাদের মনোজগতের ওপর নির্ভর করে। আমাদের মন, চেতনা এবং আত্মাই হলো আদিম স্বত্তা।  এসব কিছুর উপরই বস্তু একান্তভাবে নির্ভরশীল। 

জার্মান দার্শনিক হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ভাববার থেকে উপাদান সংগ্রহ করলেও মার্কসীয় তত্ত্বের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সম্পূর্ণ আলাদা। হেগেলের ভাববাদী বস্তুবাদের অবাস্তব এবং কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে মার্কসীয় মতবাদের স্বীকার করা হয় না।  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে মূল বক্তব্যঃ- 

• মার্কসীয় তত্ত্বের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখছি, তাহলো বস্তু বা বস্তু জগত  এবং এই বস্তু জগত আমাদের কোন কল্পনা, ভ্রম বা অলৌকিক শক্তির দ্বারা সৃষ্টি নয়। এই বস্তুজগতের নিজস্ব অস্তিত্ব রয়েছে এবং এই  জগৎ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয় না। সে তার নিজস্ব নিয়মে চালিত হয়। 

• মানুষের জ্ঞান, চেতনা এবং যা কিছু রয়েছে সেই সমস্ত কিছুই বস্তুজগৎকে ঘিরে থাকে। 

• এই বস্তু জগতের প্রতিটি বস্তুই সদা পরিবর্তনশীল। প্রত্যেক বস্তু এবং ঘটনার মধ্যে পরস্পর বিরোধী ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে তার গতিশীলতা বা পরিবর্তনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এবং এই পরস্পর বিরোধী ঘাত-প্রতিঘাতের ফলেই বস্তুর পরিমানগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ঘটে। 

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূলসূত্রঃ-

মার্কসবাদীদের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ মূলত জার্মান দার্শনিক হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ভাববাদ বা আদর্শবাদ বিরোধী দর্শন। এই মার্কসীয় দর্শনের কয়েকটি মূলসূত্র পাওয়া যায়। যেমন- পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন, পরস্পর বিরোধী শক্তির সমাবেশ এবং নৈতির নেতিকরন। 

পরিমাণ মতো পরিবর্তন থেকে গুনগত পরিবর্তনঃ-  

মার্কসবাদীদের দ্বন্দ্বমূলক বস্তবাদ অনুসারে এই বস্তু জগতের প্রতিটি বস্তুই সদা পরিবর্তনশীল। যেমন- ক্রমাগত তাপ প্রয়োগের ফলে জল একসময় বাষ্পে পরিণত হয়। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বিশ্বাস করে, যে প্রতিটি বস্তু এবং ঘটনার মধ্যে পরস্পর বিরোধী ধর্ম একসঙ্গে অবস্থান করে। তারফলে দেখা যায় তাদের মধ্যে অন্তর দ্বন্দ্ব বা বিরোধ। এই অন্তর দ্বন্দ্বের ফলেই প্রতিটি বস্তুর পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ঘটে। কাজেই বস্তু জগতের পরিবর্তনের মূলে রয়েছে তাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব বা বিরোধ। 

পরস্পর বিরোধী বস্তু সমাবেশঃ- 

মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হলো বস্তুর পরস্পর বিরোধী বা বিপরীতধর্মী শক্তির সমাবেশ। অর্থাৎ প্রতিটি বস্তু এবং ঘটনার মধ্যেই পরস্পরবিরোধী শক্তি বা ধর্ম আছে। তাই মনে রাখতে হবে,আমরা যে বস্তু জগৎ দেখছি,তা মূলত দুটি বিপরীত বস পরস্পর বিরোধী শক্তির রূপ মাত্র। বস্তুর পরস্পর বিরোধ ধর্ম ছাড়া সব অচল।

নৈতির নেতীকরণঃ- 

মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে এটা মনে করা হয় যে,পুরোনোকে সরাতে না পারলে অথবা পুরোনোকে অস্বীকার না করলে নতুনকে গ্রহণ করা যায় না বা নতুনের আবির্ভাব ঘটবে না। আবার সেই নতুন যখন নিজেই পুরোনো হয়ে যাবে,  তখন আরো উন্নত নতুনের খোঁজে তাকেও একসময় বাতিল করতে হবে। এই নিয়ম ব্যবস্থাকে নৈতির নেতিকরণ বা অস্বীকৃতের অস্বীকৃতির বলা হয়।।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top