West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023

0

  


West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023

West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু History MCQ Question Answer, class 12 history LA Question Answer & WB Class 12 History Suggestion And History Notes (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণের সমস্ত বড় প্রশ্ন উওর আমি আগেই শেয়ার করেছি। তোমাদের আমাদের ওয়েবসাইটের Search Option এ দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর  wb class 12 modern indian history question answer and suggestion লিখে সার্চ করলেই সমস্ত প্রশ্ন উওর পেয়ে যাবে।।



উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের 30+ MCQ Question Answer || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের MCQ প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় MCQ প্রশ্ন উত্তর


উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের 30+ MCQ Question Answer || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের MCQ প্রশ্ন উত্তর

1- জনশ্রুতি কত প্রকার? 

• চার প্রকার 

• ছয় প্রকার 

• পাঁচ প্রকার 

• তিন প্রকার

• উওর : পাঁচ প্রকার 

2- মৌখিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল- 

• শ্রুতিনাটক

• বক্তৃতা

• কথোপকথন

• জনশ্রুতি

• উওর : জনশ্রুতি

3- নোয়ার নৌকার কাহিনি যে ধর্মের পুরাণে আছে সেটি হলো -

• হিন্দু 

• বৌদ্ধ 

• খ্রিস্টান

• ইসলাম 

• উওর : খ্রিস্টান

4- মহাকবি কালিদাসের কাহিনি উল্লিখিত আছে- 

• হিন্দু পুরাণে

• রোমান পুরাণে

• গ্রিক পুরাণে

• বাইবেলে

• উওর : হিন্দু পুরাণে

5- হিন্দুধর্মে দেবী দুর্গা হলেন একজন—

• পৌরাণিক চরিত্র

• রূপকথার চরিত্র

• কিংবদন্তি চরিত্র 

• লোককথার চরিত্র

• উওর : পৌরাণিক চরিত্র

6- জ্যাকব ও উইলহেম গ্রিম যে ধরনের গল্পকার সেটি হল— 

• কিংবদন্তির

• লোককথার 

• পৌরাণিক কাহিনির 

• রূপকথার

• উওর : লোককথার

7- আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের কাহিনি কীসের উদাহরণ? 

• স্মৃতিকথা

• পৌরাণিক কাহিনি

• রুপকথা 

• লোককথা

• উওর : লোককথা

8- দক্ষিণারঞ্জন বসুর 'ছেড়ে আসা গ্রাম' হল একটি—

• লোককথা

• কিংবদন্তি 

• স্মৃতিকথা 

• পৌরাণিক কাহিনী 

• উওর : স্মৃতিকথা

9- জীবনের জলসাঘরে' কী ধরনের রচনা?

• স্মৃতিকথামূলক

• কিংবদন্তিমূলক 

• পৌরাণিক কাহিনি

• লোককথা 

• উওর : স্মৃতিকথামূলক

10- হেরোডোটাস যে তথ্যের ওপর নির্ভর করে ম্যারাথনের যুদ্ধের ইতিহাস রচনা করেন, সেটি হল -

• কিংবদন্তি

• স্মৃতিকথা 

• পৌরাণিক কাহিনি

• মৌখিক ঐতিহ্যে

• উওর : মৌখিক ঐতিহ্যে

11- হিস্ট্রি অব হিন্দুস্থান' রচনা

করেন - 

• প্রিন্সেপ

• ভিনসেন্ট স্মিথ 

• ম্যাকমিলান

• আলেকজান্ডার ডাও

• উওর : আলেকজান্ডার ডাও

12- 'ইতিহাসমালা' রচনা করেন—

• উইলিয়াম কেরি 

• অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

• মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালকোর 

• মার্শম্যান

• উওর : উইলিয়াম কেরি 

13- “অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি রচনা করেন—

• ডডওয়েল 

• ভিনসেন্ট স্মিথ 

• পি.ই. রবার্টস

• কীথ

• উওর : ভিনসেন্ট স্মিথ 

14- "ফল অব দ্য মুঘল এম্পায়ার গ্রুথটি রচনা করেন- 

• রমেশচন্দ্র মজুমদার 

• দাদাভাই নৌরোজি

• রমেশচন্দ্র দত্ত 

• যদুনাথ সরকার

• উওর : যদুনাথ সরকার

15- সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাদুঘর রয়েছে

• নিউ ইয়র্কে 

• মেক্সিকো সিটিতে

• লন্ডনে 

• কলকাতাতে

• উওর : লন্ডনে

16- প্লেটো জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন-

• এথেন্সে 

• রোমে

• স্পার্টায়

• মিলানে

• উওর : এথেন্সে

17- ব্রিটিশ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল - 

• ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে

• ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে

• ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে 

• ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে

• উওর : ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে

18- লুভর মিউজিয়াম অবস্থিত -

• নিউ ইয়র্কে 

• লন্ডনে 

• বার্লিনে 

• প্যারিসে

• উওর : প্যারিসে

19- হাজারদুয়ারি জাদুঘর হল একটি—

• ঐতিহাসিক জাদুঘর 

• প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর

• শিল্প জাদুঘর

• বিশ্বকোশ জাদুঘর

• উওর : ঐতিহাসিক জাদুঘর 

20- ইতিহাসের জনক বলা হয় -

• থুকিডিডিসকে 

• ইবন খালদুনকে 

• হেরোডোটাসকে

• সেন্ট অগাস্টিনকে

• উওর : হেরোডোটাসকে

21- বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক বলা হয় -

• থুকিডিডিসকে 

• ইবন খালদুনকে 

• হেরোডোটাসকে

• সেন্ট অগাস্টিনকে

• উওর : থুকিডিডিসকে

22- আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক বলা- 

• থুকিডিডিসকে 

• ইবন খালদুনকে 

• হেরোডোটাসকে

• সেন্ট অগাস্টিনকে

• উওর : ইবন খালদুনকে 

23- আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক প্রকাশ ঘটেছিল - 

• উনবিংশ শতকে

• অষ্টাদশ শতকে 

• নবম শতকে 

• ষষ্ঠ শতকে

• উওর : উনবিংশ শতকে

24- পৃথিবীর প্রাচীনতম জাদুঘর হলো- 

• এননিগালডি নান্না-র জাদুঘর

• আলেকজান্দ্রিয়া জাদুঘর

• লুভর মিউজিয়াম 

• ব্রিটিশ মিউজিয়াম

• উওর : এননিগালডি নান্না-র জাদুঘর

25- ঠাকুমার ঝুলির রচনা করেন- 

• দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার

• মুকুন্দরাম চক্রবর্তী 

• কালীপ্রসন্ন সিংহ 

• গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর

• উওর : দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার

26- হিতোপদেশের রচয়িতা কে?

• নারায়ণ পন্ডিত

• বিষ্ণু শর্মা 

• দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার 

• মহাকবি কালিদাস

• উওর : নারায়ণ পন্ডিত

27- পঞ্চতন্ত্রের রচয়িতা কে?

• নারায়ণ পন্ডিত

• বিষ্ণু শর্মা 

• দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার 

• মহাকবি কালিদাস

• উওর : বিষ্ণু শর্মা 

28- টম থাম্বের অনুকরণে বাংলায় রচিত হয়েছিল -

• হুতকম প্যাঁচার নকশা 

• বুড়ো আংলা 

• ছেলেদের রামায়ণ

• আলালের ঘরে দুলাল

• উওর : বুড়ো আংলা 

29- একাত্তরের ডায়েরী স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

• সরলা দেবী চৌধুরানী 

• মণিকুন্তলা সেন 

• সুফিয়া কামাল 

• আশালতা সরকার

• উওর : সুফিয়া কামাল 

30- ছেড়ে আসা গ্রাম গ্রন্থটি কার রচনা?

• বিপিনচন্দ্র পাল 

• মান্না দে 

• দক্ষিণারঞ্জন বসু 

• হিরণময় বন্দোপাধ্যায়

• উওর : দক্ষিণারঞ্জন বসু 

31- উদ্বাস্তু বইটির লেখক কে?

• বিপিনচন্দ্র পাল 

• মান্না দে 

• দক্ষিণারঞ্জন বসু 

• হিরণময় বন্দোপাধ্যায়

• উওর : হিরণময় বন্দোপাধ্যায়


পৌরাণিক কাহিনী কাকে বলে?পৌরাণিক কাহিনী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


পৌরাণিক কাহিনী কাকে বলে?পৌরাণিক কাহিনী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


উওরঃ- যে যুগের কোনো লিখিত উপাদান নেই বা পাওয়া যায় না,তাকে বলে প্রাগৈতিহাসিক যুগ। এবং মূলত প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনী বা ঘটনা সাহিত্য আকারে প্রকাশিত হয়, তাই হল পৌরাণিক কাহিনী। পৌরাণিক কাহিনী সম্পূর্ণরূপে একটি মৌখিক ইতিহাস এবং এটিই হলো সাহিত্যের প্রথম রুপ। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত থাকে। তেমনই ভারতের একটি প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী বিষ্ণু পুরাণের কাহিনী।।

পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ- 

জে.এফ.বিয়ারলেইন পৃথিবীর বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে সাধারণ ছয়টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। এবং এই কয়েকটি বৈশিষ্ট্য প্রায় সকল পৌরাণিক কাহিনী গুলোর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। যেমন- 

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তঃ- 

পৌরাণিক কাহিনী গুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এই যে,পৌরাণিক কাহিনী গুলি মূলত বংশ-পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। পৌরাণিক কাহিনীগুলি অতীতের সময় থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে বর্তমান মানবসমাজে প্রচলিত হয়। এবং এই ধারা চলতে থাকে।। 

প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিবরণঃ- 

পৌরাণিক কাহিনী গুলির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো,পৌরাণিক কাহিনীর গুলি হল গুলোতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত উপাদান না থাকায় পৌরাণিক কাহিনী গুলিতে সত্য, মিথ্যা, অনুমান ইত্যাদি নির্ভর হয়ে পড়ে। পৌরাণিক কাহিনী গুলিকে মানব সভ্যতার উন্মেষের আগে মানুষ কেমন ছিল তার বিভিন্ন খন্ড চিত্র লক্ষ্য করা যায়।।

পৌরাণিক কাহিনীর বিষয়বস্তুঃ- 

পৌরাণিক কাহিনীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো পৌরাণিক কাহিনী গুলি এমন কিছু ঘটনা বা বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়, যে ঘটনাগুলি সাধারণ মানুষের চিন্তা বা বোঝার বাইরে। অর্থাৎ পৌরাণিক কাহিনী গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক জগতের বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। অলৌকিক বিষয়গুলি মানুষের জানার বাইরে হলেও পৌরাণিক কাহিনী গুলি যে ভাষায় রচিত হয় তার মাধ্যমে আমরা সেই অতীন্দ্রিয় বিষয়গুলোও বুঝতে পারি।।

পরিচয়ের ভিত্তিঃ- 

পৌরাণিক কাহিনিগুলি হল কোনো সমাজ এবং সম্প্রদায়ের পরিচয়ের মূলভিত্তি। কোনো সমাজ বা সম্প্রদায়ের অতীত পরিচয় কী ছিল তা পৌরাণিক কাহিনিগুলি থেকে অনেকটা জানা সম্ভব। পৌরাণিক কাহিনী গুলি তৈরি হয় অতীতের কোনো অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং সেই ঘটনাগুলি বংশ-পরম্পরা বা উত্তরাধিকারসূত্রে পরবর্তী মানব সমাজে প্রচলিত হয় বলে তার মাধ্যমে আমরা বর্তমান সময় থেকে পৌরাণিক গুলির মাধ্যমে অতীতের সমাজ বা সম্প্রদায়ের কথা জানতে পারি।।

বিধিনিয়মের স্বীকৃতিঃ- 

পৌরাণিক কাহিনি সমাজের প্রচলিত ধর্ম ও বিধিনিয়মগুলিকে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে সামাজিক বিধিনিয়মগুলি সুদৃঢ় হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।

জীবনের অর্থবহতাঃ- 

পৌরাণিক কাহিনীগুলি প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস হওয়ার কারণে পৌরাণিক কাহিনীর সবটাই মানুষের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না এবং পৌরাণিক অতীত থেকে শুরু করে উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান সমাজে প্রচলিত হয়েছে। অতীত থেকে বর্তমান সমাজে আসার পথে পৌরাণিক কাহিনী গুলির মধ্যে অনেক সময়ই অনুমান, ধারণা, মিথ্যা ইত্যাদি যুক্ত হয়েছে কিন্তু তারপরও পৌরাণিক কাহিনী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৌরাণিক কাহিনি হল এক ধরনের বিশ্বাস যা জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।


কিংবদন্তি কাকে বলে? কিংবদন্তি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

 

কিংবদন্তি কাকে বলে? কিংবদন্তি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর


উওরঃ- কিংবদন্তি হল এমন এক ধরনের সাহিত্য যার মাধ্যমে অতীতের কোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে বিশেষ ভাবে সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।। আসলে কিংবদন্তি হল এমন এক ধরনের সাহিত্য যার মাধ্যমে অতীতের কোনো ঘটনাকে বিশেষ ভাবে বা অতীতে অস্তিত্বশীল কোনো ব্যক্তিকে অতি মানব রূপে প্রকাশ করা হয়। সাধারণত কিংবদন্তি সাহিত্যগুলোতে যাকে নিয়ে কাহিনী রচিত হয় তার কাছে বিশেষ কিছু ক্ষমতা বা শক্তি থাকে এবং সেই সমস্ত শক্তি বা ক্ষমতা কিংবদন্তি চরিত্রের কাহিনী সম্পূর্ণ ভাবেই মানুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।।

কিংবদন্তির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ- 

জনশ্রুতির অন্যান্য বিভাগের মতো কিংবদন্তি বিভাগটিরও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন- 

কিংবদন্তি চরিত্রঃ- 

প্রতিটি কিংবদন্তিতে একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকেন এবং তাকে ঘিরেই সম্পূর্ণ কাহিনী রচিত হয়। কিংবদন্তির মূল চরিত্রের সঙ্গে কিংবদন্তির বিষয়বস্তু, যেমন -প্রেম কাহিনী, বিরহের কাহিনী, ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন অলৌকিক, ভূত-প্রেতের ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কিত থাকে।। কিংবদন্তির মূল চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল - কিংবদন্তি চরিত্রটি সবসময়ই সাধারণ মানুষের থেকে একটু আলাদা হয়। অর্থাৎ তাদের কাছে সবসময় বিশেষ কিছু ক্ষমতা বা শক্তি থাকে যা তাদের সাধারণের তুলনায় আলাদা করে। কিংবদন্তি চরিত্র সম্পর্কে এটা মেনে নেওয়া হয়ে যে তাদের অস্তিত্ব একসময় ছিল। যদিও তাদের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকরাই তাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন।।

কিংবদন্তির বিষয়বস্তুঃ- 

কিংবদন্তি কাহিনীগুলি বিষয়বস্তুর বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিংবদন্তি গুলি মূলত ইতিহাসের কাহিনী,প্রেম, বিরহের কাহিনী, ভুত-প্রেত,আধ্যাত্মিক ঘটনা, সন্ন্যাসী ফকির দরবেশ বা তাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনা নিয়ে হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিংবদন্তি কাহিনী এর বাইরেও হতে পারে।।

কিংবদন্তি চরিত্রের বাস্তব অস্তিত্বঃ- 

কিংবদন্তি ঘটনাগুলি কাহিনীগুলি যে সমস্ত ঘটনা বা চরিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় তার সম্পূর্ণ বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে কিংবদন্তি চরিত্র গুলি অতীতকালে একসময় জীবিত ছিলেন। যেমন রামচন্দ্র,হারকিউলিস, প্রমিথিউস প্রমুখ কিংবদন্তি চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন স্বীকার করেছেন যে, তারা যে সাধারণ মানুষের চেয়েও অনেকবেশী ক্ষমতাবান ছিলেন, সে কথা বলতে কোনো বাধা নেই। কিংবদন্তি চরিত্র গুলি একসময় সাধারণের থেকে একটু আলাদা হলেও সময় যত পেরিয়েছে সেই সব চরিত্রের সঙ্গে বিভিন্ন অতি মানবীয় বা অলৌকিক কথা-কাহিনি যুক্ত হয়ে গেছে যার ফলে কিংবদন্তি চরিত্র গুলি সাধারণ থেকে অসাধারণ চরিত্রে পরিনত হয়েছে। যার ফলে অনেক সময় এসব কাহিনীর চরিত্র সম্পর্কে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু সন্দেহ থাকার পরেও এটা মেনে নিতে হয় যে সেসব কিংবদন্তি চরিত্র একসময় ছিল।

কিংবদন্তির অতিরঞ্জনঃ- 

কিংবদন্তি ঘটনার বিবরণে সর্বদাই অতিরঞ্জন বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। কিংবদন্তি হল এমন কিছু চরিত্র বা ঘটনার কাহিনী যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতীত থেকে বর্তমানে প্রবেশ করে এবং এই অতীত থেকে বর্তমান সময়ে প্রবেশ করার যাত্রাপথে কিংবদন্তি চরিত্র গুলির সঙ্গে বিভিন্ন সত্য-মিথ্যা মিশে গিয়ে কিংবদন্তি কাহিনীগুলি একসময় এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যা মানুষের বিশ্বাসের বাইরে চলে যায়। কিংবদন্তি চরিত্রর অতিমানবীয়, অবিশ্বাস্য ও অতিরঞ্জিত ঘটনা যুক্ত হয়ে পড়ে। সেই কারণেই কিংবদন্তি কাহিনীগুলি অনেক সময়ই ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে।।

বিস্ময় এবং কল্পনার আধিক্যঃ-

কিংবদন্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিস্ময় এবং কল্পনার আধিক্য। প্রাথমিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কিংবদন্তীতে ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্র নীহিত থাকলেও তার মধ্যে এত পরিমান বিস্ময় এবং কল্পনার আধিক্য দেখা যায় যে, তার মধ্যে প্রকৃত ইতিহাসের উপাদান গুলি লোপ পেতে থাকে। এজন্য কিংবদন্তিকে ইতিহাসের অপক্ক ফসল বলা হয়।।

বিভিন্ন কিংবদন্তির উদাহরণগুলো লক্ষ্য করলে আমরা কিংবদন্তি সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারি। যেমন -

ভারতীয় কিংবদন্তি রামচন্দ্রঃ- 

প্রাচীন ভারতের অন্যতম মহাকাব্য রামায়ণের উল্লেখিত একটি অন্যতম কিংবদন্তি চরিত্র হলো রামচন্দ্র। রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র সম্পর্কে যে কাহিনীগুলি প্রচলিত রয়েছে সেগুলি তাকে একটি কিংবদন্তি চরিত্র পরিনিত করে। রামচন্দ্রের কাছে এমন কিছু অতি মানবীয় শক্তি বা ক্ষমতা ছিল যা কখনোই কোনো সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকতে পারে না। এবং সে সমস্ত শক্তি গুলিই রামচন্দ্রকে একটি কিংবদন্তি চরিত্র করে। রামচন্দ্রের সেই সমস্ত অতি মানবীয় কাহিনীর জন্য অনেকেই তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলেও অনেকেই এটা মেনে নেয় যে, অযোধ্যায় সত্যিই একসময় রামচন্দ্র নামে কোনো এক রাজা ছিলেন।

প্রাচীন গ্রিসের কিংবদন্তি হারকিউলিসঃ-

হারকিউলিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন উল্লেখযোগ্য কিংবদন্তী। হারকিউলিস এতোটাই শক্তিশালী ছিলেন যে, তিনি ছোটবেলাতেই দুটো দানবীয় সাপকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তিনি যত বড় হতে থাকেন তার বীরত্বের কথা ততোই শোনা যেতে থাকে।। 

প্রাচীন গ্রিসের কিংবদন্তি প্রমিথিটসঃ- 

প্রমিথিউস হলেন প্রাচীন গ্রিসের অপর উল্লেখযোগ্য কিংবদন্তি চরিত্র। কথিত আছে যে, অন্যান্য জীবদের তুলনায় মানুষকে শ্রেষ্ঠতর করে তোলার জন্য প্রমিথিউস মানুষকে সোজা হয়ে হাঁটতে শেখালেন এবং অন্যান্য জীবের চেয়ে মানুষকে মহত্তর বলে ঘোষণা করলেন। তিনি স্বর্গে গিয়ে সূর্যের কাছ থেকে আগুন এনে মানুষকে উপহার দিলেন। এই উপহার দানে ক্ষুদ্ধ হয়ে গ্রিক দেবতা জিউস প্রমিথিউসকে পাহাড়ের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে তাঁর ওপর বর্বর অত্যাচার চালান। প্রতিদিন একটি ইগল এসে প্রমিথিউসের কলিজা খেয়ে যেত এবং নতুন আর একটি কলিজার জন্ম হত। এভাবে প্রমিথিউসকে জিউস শাস্তি দেন। 

গোপাল ভাঁড়ের কাহিনিঃ- 

বাংলায় কৃচন্দ্র রাজার রাজসভার হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড় সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনি বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন কাহিনিতে গোপাল ভাঁড়ের অসামান্য বুদ্ধিমত্তা, রাজা এবং রাজপরিবারের সভাসদদের বারংবার বুদ্ধিতে পরাজিত করা, হাস্যরস সৃষ্টি প্রভৃতি ফুটে উঠেছে। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণীর বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত গোপাল ভাঁড়ের বিভিন্ন কাহিনিতে কিছু কিছু যথার্থ ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। নদীয়া জেলার একজন বাসিন্দা হিসেবে গোপাল ভাঁড় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় কাজ করতেন। দীর্ঘকাল ধরে কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় কাজ করার পর শেষ জীবনে গোপাল ভাঁড়ের কি পরিণতি হয়েছিল সেই সম্পর্কের কোনো সঠিক তথ্য নেই। এজন্য অনেকেই গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে থাকেন।।


পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তি কাকে বলে? পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে পার্থক্য লেখ। || উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস অতীত স্মরণ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তি কাকে বলে? পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে পার্থক্য লেখ || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে পার্থক্য


ভূমিকাঃ- পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তি হলো উভয়ই হলো জনশ্রুতির দুটি আলাদা আলাদা ভাগ। তাই অনেক সময়ই পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সাধারণভাবে কিংবদন্তি এবং পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন- 

• সংজ্ঞাগত ক্ষেত্রে পার্থক্য- 

• পৌরাণিক কাহিনী বলতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন অলৌকিক, অতি মানবীয় এবং অতীন্দ্রিয় জগতের বিভিন্ন ঘটনাবলিকে বোঝায় যা সাহিত্য আকারে প্রকাশ হয়। পৌরাণিক কাহিনী গুলি হল সাহিত্যের প্রথমরুপ।

• অপরদিকে কিংবদন্তী হল অতীতের কোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমন কিছু কাহিনী, যা সাধারণের থেকে আলাদা। কিংবদন্তি কাহিনীগুলি এমন কিছু চরিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় যারা সবসময় সাধারণের থেকে অনেকটাই আলাদা হয়। 

• প্রধান চরিত্রগত ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ-

• পৌরাণিক কাহিনী গুলির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঈশ্বর এবং ঈশ্বর এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড,তাদের শক্তি ইত্যাদি প্রধান চরিত্র হিসেবে গুরুত্ব লাভ করে। পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে অলৌকিক জগতে ঈশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, তাদের শক্তি এবং তাদের বিভিন্ন রুপ ই হলো প্রধান নায়ক নায়িকা। 

• অন্যদিকে কিংবদন্তির ক্ষেত্রে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মানুষের শক্তি তাদের বিভিন্ন ঘটনাবলীগুলি বেশি প্রাধান্য লাভ করে।মূলত মানুষ ই হলো কিংবদন্তি কাহিনীর মূল চরিত্র এবং তাদের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে কিংবদন্তি কাহিনি গড়ে ওঠে। কিংবদন্তি কাহিনী গুলোর ক্ষেত্রে যদিও অনেক সময় বিভিন্ন অতীন্দ্রিয়, অলৌকিক, ভূত-প্রেতের কথা যুক্ত থাকে তবুও সেক্ষেত্রে সেই সমস্ত অতীন্দ্রিয়, অলৌকিক, ভূত-প্রেতের কথা প্রাধান্য না পেয়ে ব্যক্তি চরিত্রই বেশি প্রাধান্য লাভ করে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে,কিংবদন্তি চরিত্র গুলি এমন হবে যারা সবসময়ই সাধারণের থেকে একটু আলাদা হবে। অর্থাৎ কিংবদন্তি চরিত্র গুলির মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা তাকে অসাধারণ করে তুলে।

• প্রধান চরিত্রের বাস্তব অস্তিত্বগত পার্থক্যঃ- 

• পৌরাণিক কাহিনী গুলির ক্ষেত্রে সমস্ত প্রধান চরিত্র বা ঘটনা থাকে তাদের বাস্তব অস্তিত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে সন্দেহ রয়েছে। কারণ পৌরাণিক কাহিনী গুলি যে সমস্ত চরিত্র বা ঘটনাকর কেন্দ্র করে তৈরি হয় তার বাস্তব অস্তিত্বের ভীত অত্যন্ত দুর্বল। কারণ পৌরাণিক কাহিনী গুলির কাহিনীতে সাধারণ ঘটনার তুলনায় অতীন্দ্রিয়,অলৌকিক ইত্যাদি ঘটনাগুলি বেশি থাকে। 

• অপরদিকে কিংবদন্তি ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্র বা ঘটনা গুলির অস্তিত্বের ভীত অত্যন্ত মজবুত।কিংবদন্তি কাহিনি গুলির ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্র সাধারণের থেকে একটু আলাদা হলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই শক্ত প্রমাণ থাকে এবং অনেক ঐতিহাসিকরাই কিংবদন্তি চরিত্রগুলিত বাস্তব অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন।। কিংবদন্তি কাহিনীগুলির ক্ষেত্রে অনেক সময় অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক ঘটনা যুক্ত থাকলেও তার সাধারণ ঘটনা বা মানুষের বিশ্বাসযোগ্য ঘটনাগুলোও অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। ফলে তা মানুষের বিশ্বাস যোগ্য।।

• ভিত্তিগত পার্থক্যঃ- 

• অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৌরাণিক কাহিনী গুলি সাধারণত ধর্মভিত্তিক হয়ে থাকে পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল বা কিভাবে কোনো পৌরাণিক কথার সৃষ্টি হয়েছিল সেই ধরনের বিষয়গুলি পৌরাণিক কাহিনীতে আলোচিত হয়ে থাকে।

• অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিংবদন্তি চরিত্র গুলো কোনো সমাজ, সংস্কৃতি ব ধর্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো একটি সমাজ,সংস্কৃতি ও সভ্যতা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেই কিংবদন্তি চরিত্র গুলি গড়ে করতে দেখা যায়।।

• কালপঞ্জিগত পার্থক্যঃ -

• পৌরাণিক কাহিনী গুলি প্রাগৈতিহাসিক যুগের সাহিত্যিক উপাদান হওয়ায় পৌরাণিক কাহিনীগুলির ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিক কালপঞ্জি থাকে না। তবে পৌরাণিক কাহিনী গুলির একটি নিজস্ব কালপঞ্জি থাকে।

• কিন্তু অপরদিকে কিংবদন্তি কাহিনীগুলির সম্পূর্ণ যথার্থ কালপঞ্জি না থাকলেও বর্তমান সময়ের ভিত্তিতে কিংবদন্তি ঘটনাগুলির একটি আনুমানিক কালপঞ্জি ধরা হয়ে থাকে।।

• বিষয়বস্তুগত পার্থক্যঃ- 

• প্রাকৃতিক জগতের বিবরণ দিতে গিয়ে উপমার ব্যবহারের ভিত্তিতে অতীতের বর্ণনা করা হয়। গল্পের প্রয়োজনের তাগিদে অতীতের সংস্কৃতির সঙ্গে ঈশ্বরকে যুক্ত করা হয়।

• কিংবদন্তিতে কোনো অতীত সংস্কৃতির এক অসামান্য ব্যক্তি চরিত্র থাকেন। তবে তার ঘটনার ভিত্তিকে বাস্তবতা দানের উদ্দেশ্যে নানা গল্পে কাল্পনিক চরিত্রের আগমন ঘটানো হয়।

লোককথা কাকে বলে? লোককথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো। || wb class 12 history question answer and suggestion 

লোককথা কাকে বলে? লোককথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
hs History  question answer & suggestion 2023


উওরঃ- লোককথা হলো এক ধরনের কাল্পনিক গল্প কথা এবং এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী লৌকিক সাহিত্যে যার সাহায্যে প্রাকৃতিক এবং আধ্যাত্মিক কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা বা উপলব্ধির চেষ্টা করা হয়।। কার্ল টমলিনসন এবং ক্যারল লিঞ্চ-ব্রাউনের মতে মানুষের জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণে যে গল্পকথা গড়ে  উঠেছে তাই হল গল্পকথা।। অন্যভাবে বলা যায় লোককথা হল এমন এক ধরনের কাল্পনিক গল্প কথা যা শ্রোতাদের এমন এক জগতে নিয়ে যায় যেখানে না প্রাকৃতিক বা সাধারণ নিয়মকানুন গুলি কার্যকর হতে দেখা যায় না।।

লোককথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ- 

জনশ্রুতির একটি অংশ হিসেবে লোককথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন - 

শিশুদের জন্য রসদঃ- 

জনশ্রুতির অন্যান্য ভাগগুলি যেমন- পৌরাণিক কাহিনী,কিংবদন্তি প্রভৃতির মধ্যে শিশু,কিশোর, যুবক বয়স্ক সকলের জন্য রসদ থাকে। কিন্তু লোককথায় অন্যান্য বয়স্কদের তুলনায় প্রধানত শিশু-কিশোর, কিশোরীদের জন্যই বেশি পরিমাণে রসদ থাকে।।

অজ্ঞাত পরিচয় লেখকঃ- 

সাধারণভাবে লোককথার প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। কিন্তু পরবর্তীকালে আসল লোককথা গুলিকে যখন পরিমার্জন করে অন্য কোনো লেখক প্রকাশ করেন, তখন সেই লেখক সম্পর্কে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার নাম বা পরিচয় সম্পর্কে সামান্য জানা যায়।।

লোককথার বিষয়বস্তুঃ-

লোককথার মূল বিষয়বস্তু হলো মানুষের জীবন। লোককথা মূলত রচিত হয় মানুষের সাধারণ জীবন কাহিনী নিয়ে। তবে লোককথায় যেসব মানুষের জীবন কাহিনী দেখা যায় সেই সমস্ত জীবন কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকে বিভিন্ন কল্পনা, আধ্যাত্বিক, অলৌকিক এবং অতিমানবিক বিষয়বস্তু।।

অতিপ্রাকৃতিক বিষয়বস্তুঃ -

লোককথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লোককথায় মানুষের সাধারণ জীবন কাহিনী থাকলেও সেই জীবন কাহিনীর সঙ্গে কিছু অ-সাধারন বিষয় বস্তু যুক্ত হয়। লোককথায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক বা ভৌতিক চরিত্রগুলি যেমন ভুত-প্রেত ডাইনি, দৈত্য, ড্রাগন ইত্যাদি যুক্ত থাকে। এছাড়াও এসব কাহিনীগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কালো যাদু, বশীকরন, সাদা যাদু ইত্যাদির উল্লেখ দেখা যায়।।

ধর্মীয় বিষয়ের গুরুত্বহীনতাঃ- 

লোককথার কাহিনীগুলোতে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ লোককথার কাহিনির আলোচনা তা প্রকাশিত হলেও তা পরোক্ষ।। লোককোথায় যে ব্যক্তি ও ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, সেই ব্যক্তি বা ঘটনা কোনো ধর্মের অংশ হলেও তা ধর্ম নিয়ে নয় বরং সেই ব্যক্তির কাজকর্মই লোককথার মূল কথা।।

অলিখিত কাহিনীঃ- 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের লোককথা প্রচলিত রয়েছে। আর সেই সমস্ত লোককথার বেশিরভাগই অলিখিত। লোক কথাগুলো অতীতের কোথাও শুরু হয়ে এগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সমাজে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারপরও সেই সমস্ত লোককথার বেশিরভাগই অলিখিতভাবে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের চেষ্টায় বিভিন্ন অলিখিত কাহিনীগুলি বর্তমানে লিখিত আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে।।

অনির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্রঃ- 

লোককথা কাহিনীগুলির ক্ষেত্রে কখনো কোনো নির্দিষ্ট সময় স্থান-চরিত্র থাকে না। পৌরাণিক কাহিনী গুলোর ক্ষেত্রে যেমন তার নিজস্ব কালপঞ্জি এবং কিংবদন্তির ক্ষেত্রে যেমন মোটামুটি নির্দিষ্ট বা আনুমানিক সময়সীমা বা স্থান-কাল থাকে,লোকগাথার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু থাকে না। যেমন 'একদা একদেশে এক রাজা বাস করত'। লোককথার ক্ষেত্রে এই ধরনের স্থান-কাল-পাত্র ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।।

লোককথার গুরুত্বঃ 

লোককথার কাহিনিগুলি ইতিহাস- নির্ভর না হলেও ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, যেমন—

সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয়ঃ- 

কোনো সমাজে সৃষ্ট লোককথাগুলিতে সেই সমাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়ের যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। ফলে অতীতকালে সেই সমাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ঐতিহ্য কেমন ছিল তার মোটামুটি আভাস সেই সমাজে সৃষ্ট লোককথার কাহিনিগুলি থেকে জানা যায়।

ঐতিহাসিক ধাঁচের আভাসঃ- 

বিভিন্ন সমাজের ঐতিহাসিক কাহিনির অনুকরণে বিভিন্ন লোককথার প্রচলন ঘটতে দেখা যায়। এরূপ লোককথার কাহিনিগুলি থেকে সেই সমাজের ঐতিহাসিক ধাঁচ সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়, যেমন মধ্যযুগের বাংলার চাঁদ সদাগরের কাহিনিতে সপ্তডিঙ্গা মধুকর ভাসিয়ে দূরদেশে চাঁদের বাণিজ্য করতে যাওয়ার যে ঘটনা বাংলার লোককথায় পাওয়া যায় তা থেকে এই ঐতিহাসিক সত্যটুকু অবশ্যই উপলব্ধি করা যায় যে, বাংলার বণিকরা দূরদেশে বাণিজ্য করতে যেত। 

মনোরঞ্জনঃ- 

লোককথার গল্পগুলি মানুষকে যুগের পর যুগ ধরে আনন্দদান করেছে। যে যুগে বিজ্ঞানের বিশেষ উন্নতি ঘটেনি বা শিক্ষার প্রসার ঘটেনি সে যুগে লোককথার গল্পগুলি ছিল মানুষের মনোরঞ্জনের অন্যতম মাধ্যম।

শিক্ষাদানঃ-

লোককথার গল্পগুলি মানুষকে জীবনে চলার পথে যথার্থ শিক্ষা দান করে। এজন্য বিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন যে, “যদি তোমার সন্তানকে বুদ্ধিমান করে তুলতে চাও তবে তাদের লোককথার গল্প, পড়তে দাও। যদি তাদের আরও বুদ্ধিমান করে তুলতে চাও তবে তাদের আরও বেশি লোককথার গল্প পড়তে দাও।”

সমালোচনাঃ- 

লোককথার গল্পগুলির অধিকাংশই হয় সম্পূর্ণ কাল্পনিক। অধিকাংশ কাল্পনিক লোককথার গল্পেরই কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকে না, যেমন—বেহুলার প্রার্থনায় লখিন্দরের প্রাণ ফিরে পাওয়ার ঘটনাটির কোনো ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এরূপ লোককথার আজব কাহিনির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ইতিহাস ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


পেশাদারী শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো। || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


পেশাদারী শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর 


পেশাদারী শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ- সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ইতিহাস। সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা গুলির যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি সমাজবিজ্ঞানের প্রাচীনতম এবং অন্যতম শাখা হিসেবে ইতিহাসও অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ।। ইতিহাস হল মূলত মানবজাতির অতীতের কর্মকাণ্ডের কালানুক্রমিক এবং ধারাবাহিক বিবরণ।। ইতিহাস পাঠের ফলে যে আমরা শুধুমাত্র অতীতের ঘটনাবলী জানতে পারি তাই নয়, ইতিহাস পাঠের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্ব রয়েছে। যেমন -


• অতীতের আয়না হিসেবে ইতিহাসঃ-

সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা ইতিহাস হল এমন একটি শাস্ত্র বা বিষয় যেখানে অতীতে বিভিন্ন ঘটনাবলী সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।  অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের কাহিনীগুলি, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ঐতিহাসিকগন বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করার পর সেগুলিকে যথাযথভাবে লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। অতীতকালে বিভিন্ন সভ্যতার ক্রমবিকাশ, বিভিন্ন জাতির উত্থান,বিভিন্ন রাষ্ট্র বা রাজা বাদশার কর্মকাণ্ড, মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ ইতিহাসে যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়। সুদূর অতীতকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে মানবসভ্যতার কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে,মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক, অ-প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে এবং আমরা ইতিহাস পাঠ করার ফলেই সেই সমস্ত ঘটনাবলি জানতে পারি।।


জ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে পেশাদারী ইতিহাসের গুরুত্বঃ-

সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হিসেবে ইতিহাস এমন একটি বিষয় যা মূলত এই জগতের প্রায় সব দিকেই নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করার পরে সেগুলি এমন ভাবে তুলে ধরেন যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। ইতিহাসে একাধিক বিষয়ে স্থান পাওয়ার ফলে ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে পারি।
যেমন ইতিহাস মানব সমাজের বিবর্তন, পৃথিবীর সৃষ্টি,পৃথিবীর বিবর্তন, বিভিন্ন প্রাণীর উৎপত্তি,তাদের ধ্বংস বি,ভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন,বিভিন্ন রাজা মহারাজার কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন যুদ্ধ,যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল,সমাজ,ধর্ম, রাজনীতি,অর্থনীতি,সমাজ-সংস্কৃতি, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিভিন্ন আবিষ্কার বিজ্ঞানের গবেষণা,বিভিন্ন আন্দোলন? বিপ্লব বিদ্রোহ ইত্যাদি সম্পর্কে ইতিহাস সঠিক তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরে। এবং সেই সমস্ত বিষয়গুলি পাঠ করলে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দমতো জ্ঞানলাভ করতে পারি।।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিহাসঃ-

ইতিহাসের আলোচনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাচীন যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা। ইতিহাস যে শুধুমাত্র বিভিন্ন যুদ্ধের কারণ তুলে ধরে তাই নয়,সেই সঙ্গে যুদ্ধ ঘটার পর তার ফলাফল সমাজ,রাষ্ট্র বা বিশ্বের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলেছিল সেই সম্পর্কেও তথ্য গুলো তুলে ধরে। যেমন , ইতিহাস পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া 1914 সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং 1939 খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে ভয়াবহ এবং ধবংস্মাত্নক ফলাফল দেখা দিয়েছিল, তা বর্তমান সমাজের সামনে তুলে ধরে। বর্তমান সমাজের পাঠকরা সে সমস্ত ভয়াবহ যুদ্ধের ফলাফল গুলি সম্পর্কে জানার ফলেই তারা বর্তমানে আর কোনো যুদ্ধ চায় না। এবং এভাবে ইতিহাসি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেঃ-


ইতিহাস বিভিন্ন যুগের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে। কারণ ইতিহাস সুদূর অতীত থেকে বর্তমান সমাজ পর্যন্ত যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে সেই সমস্ত ঘটনাগুলিকে ধারাবাহিকভাবে কালানুক্রমে তুলে ধরে। যেমন ইতিহাস প্রাচীন যুগের সভ্যতা গুলির নিদর্শন মধ্যযুগের মানুষের কাছে তুলে ধরে এবং ঠিক একইভাবে মধ্যযুগের নিদর্শন গুলি আবার আধুনিক যুগের মানুষের কাছে উপস্থাপন করে। এভাবে ইতিহাস প্রাচীন,মধ্য এবং আধুনিক যুগের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে বিভিন্ন যুগ ও ঘটনাকে ধারাবাহিক করে তোলে। বর্তমান প্রজন্ম এই ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে শুধুমাত্র ইতিহাস থেকেই। যেমন প্রাচীন ভারতের মানুষ কবে এবং কিভাবে মেহেরগড় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা এবং বৈদিক প্রভৃতি সভ্যতার প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ভারতের ইতিহাসে কিভাবে প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক যুগের উদ্ভব ঘটেছিল তার ধারাবাহিক কাহিনী ইতিহাস থেকেই জানতে পারা যায়।।

জাতীয়তাবাদের বিকাশ এর ক্ষেত্রেঃ-

নিজের দেশ এবং জাতির প্রতি কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর যে ভালোবাসার প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জাতীয়তাবাদ। ইতিহাস কোনো একটি দেশের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতিহাস অতীতে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরে যা সেই দেশের জনগণের মনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার করতে পারে। আবার এরূপভাবে যে সমস্ত জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে তাও পরবর্তীকালে ইতিহাসেই লিপিবদ্ধ করা হয়। জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ কোনো জাতি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ভালোবাসে। এর ফলে তারা বহিরাগত ঔপনিবেশিক শক্তির শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উন্নয়নঃ-

ইতিহাস কোনো একটি দেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা অতীতের বিভিন্ন রাজা-মহারাজারা বা শাসকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিভিন্ন লিখিত তথ্যের মাধ্যমে আমরা সেগুলিকে নিজেদের মতো করে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি। অতীতের সেই রাজা বা শাসকের সেই সমস্ত রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপের ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে সেই সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। যেমন অতীতে কোন শাসকের গ্রহণ করা কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক পদক্ষেপর কী ভুল ছিলব  কোন ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিরতা ও উন্নতি ঘটেছিল এবং কোন  প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য জাতীয় জীবনে বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল তার ব্যাখ্যা ইতিহাসে পাওয়া যায়। বর্তমানে সে সমস্ত ঐতিহাসিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অগ্রবর্তী ঘটানো সম্ভব।।

অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রেঃ

মানব সমাজের উন্নতির জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের একটি অন্যতম আলোচনার বিষয় হলো অর্থনীতি। ইতিহাস অতীতের বিভিন্ন ঘটনা গুলি তুলে ধরে যে সমস্ত ঘটনাগুলি কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং অর্থনৈতিক উন্নতির অবনতি ঘটিয়েছিল। ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে সেই কথাগুলি কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে পারে।।

দুৰ্যোগ সম্পর্কে সতর্কতাঃ-

বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে অতীতকালে বহু জনজাতির সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে—ইতিহাস সেসব ঘটনার সাক্ষী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের ত্রুটিপূর্ণ ও শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০ খ্রি.) এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর (১৯৪৩ খ্রি.) নামে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়। এতে অনাহারে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাঁদের গবেষণায় উক্ত দুর্যোগের কারণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যেত, তার উপায়গুলি উল্লেখ করেন। পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ ইতিহাসের সেসব আলোচনা থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্ভাব্য ভয়াবহ ধ্বংস ও মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে।

পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে জ্ঞানলাভঃ-

ইতিহাস একটি অন্যতম আলোচনার বিষয় হলো পররাষ্ট্র নীতি।  ইতিহাস অনেক সময় বিভিন্ন দেশ
বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আলোচনা করে সেই আলোচনা সমস্ত পররাষ্ট্র নীতি বা বিদেশনীতির ভালো এবং খারাপ দিক গুলি তুলে ধরে এবং এটা প্রকাশ করে যে,কোন বিদেশ নীতি গুলি রাষ্ট্রের পক্ষে ভালো প্রমাণিত হয়েছিল এবং কোন বিদেশী নীতি গুলি রাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই সমস্ত ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ করেই অনেক সময় অনেক রাষ্ট্র তাদের পররাষ্ট্রনীতির বিদেশ নীতি গ্রহণ করতে পারে যা তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।

মূল্যায়নঃ-

বর্তমানকালে ইতিহাস শুধু রাজা-বাদশা বা সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের কাহিনি নয়। মানবসমাজের ধারাবাহিক বিবর্তন, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। এসব বিষয় সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞানলাভের জন্য ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। এজন্য উইনস্টন চার্চিল বলেছেন যে, “তুমি সুদূর অতীতে ফিরে তাকাতে পারলে সুদূর ভবিষ্যতেও তাকাতে পারবে।”ইতিহাসের গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে জে. ই. সোয়েইন (J. E.Swain) বলেছেন যে, “বর্তমানের শেকড় অতীতের কতটা গভীরে প্রোথিত আছে তা একজন সচেতন পর্যবেক্ষক নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন। যদি আমাদের সমস্ত অতীত অভিজ্ঞতার জ্ঞান হারিয়ে যায়, তবে সম্ভবত বড়ো শহরগুলির ৯/১০ অংশ বাসিন্দা এক মাসের মধ্যেই মারা যাবে, এবং যারা বেঁচে থাকবে তারা শীঘ্রই আদিম জীবনে ফিরে যাবে।” ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্ব হল এই যে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে মানবসমাজ আরও সুন্দর ও নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। তাই হেগেল (১৭৭০-১৮৩১ খ্রি.) আক্ষেপ করে বলেছেন, “ইতিহাসের দুর্ভাগ্য যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।


আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো || ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

 

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো || ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


ভূমিকাঃ- ইতিহাস হল সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইতিহাস রচিত হয় মূলত অতীতকালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সত্য ঘটনার যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের ঘটনা যেগুলো মানব সমাজ এবং এই পৃথিবীর সঙ্গে জড়িত, সেই ঘটনাগুলোকে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করার মাধ্যমে তা লিখিত আকারে প্রকাশ বা ইতিহাস হিসেবে প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রিসের হেরোডোটাশ সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনা শুরু করেছিলেন। এজন্য হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। পরবর্তীতে প্রাচীন গ্রিসের আরেকজন ঐতিহাসিক থুকিডিডিস প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ইতিহাসের রচনা শুরু করেন এজন্য থুকিডিডিসকে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার জনক বলা হয়। এরপর আধুনিককালে আরবের ইমন খালদুন ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এজন্য ইমন খালদুনকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উনবিংশ শতকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার বিকাশ ঘটান এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের প্রয়াসে আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে।। যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আধুনিক ইতিহাস লেখা হয় তাই হল আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি।

যথার্থ এবং সুসংবদ্ধ ইতিহাস লেখার জন্য ঐতিহাসিকদের যে আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়,তা হল - 

উৎস অনুসন্ধানঃ- 

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো ঐতিহাসিকদের উৎস অনুসন্ধান করা। উৎস বলতে কোনো কিছুর শুরুকে বোঝায়। কিন্তু ইতিহাসের ক্ষেত্রে উৎস বলতে কোনো ঐতিহাসিক উপাদানকে বোঝায় যথাযথ এবং সুসংবদ্ধ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন ধরনের উৎস অনুসন্ধান করতে হয়।যেমন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, পত্র, লেখ মুদ্রা,বিভিন্ন গুহাচিত্র,নকশা, মানচিত্র?বিভিন্ন পত্র, আবেদন পত্র,সরকারি নথিপত্র, সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ ইত্যাদি। এ সমস্ত ঐতিহাসিক উৎস বা ঐতিহাসিক উপাদানের মাধ্যমে ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনা করেন।

ঐতিহাসিক উৎসের শ্রেণীবিভাগঃ- 

আধুনিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা সর্বপ্রথম বিভিন্ন ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান করে থাকেন।  বিভিন্ন ঐতিহাসিকের উৎস অনুসন্ধান করার পরবর্তী ধাপ হলো ঐতিহাসিক উপাদান গুলির শ্রেণীবিভাগ করা। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক উপাদান গুলির বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সেই সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদান গুলি সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই কারণে ঐতিহাসিকরা, উপাদান গুলি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রয়োজন অনুসারে অতিপ্রয়োজনীয়, মোটামুটি প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় হিসেবে শ্রেণীবিভাগ করে থাকেন।। এভাবে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান এবং তার শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে তারা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।।

উৎস সম্পর্কে গবেষণাঃ

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির তৃতীয় ধাপ হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের উৎস সম্পর্কে গবেষণা করা। ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান করার পরবর্তীতে সেগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করে থাকেন  উৎস থেকে তথ্য উদঘাটন করার জন্য ঐতিহাসিককে গভীর এবং নিরপেক্ষ গবেষণা করতে হয়। গবেষণার মাধ্যমে ঐতিহাসিক নিজেকে সেই যুগে নিয়ে যান, যেই যুগ থেকে সেই ঐতিহাসিক উপাদানটি এসেছে। ঐতিহাসিক সেই যুগের নিজেকে নিয়ে গিয়ে এটা জানার চেষ্টা করেন যে, সেই উৎসটি ঠিক কেন এবং কী পরিস্থিতিতে বা কোন পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন পলাশীর যুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস লিখতে গিয়ে একজন ঐতিহাসিক যে সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ ও চিঠিপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন, তা সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি এটা জানার চেষ্টা করেন যে, সেই চিঠিটা আসলে কোন প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল এবং এটা জানার পরেই ঐতিহাসিক তার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

কার্যকরণ পদ্ধতি এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতির ব্যবহারঃ-

উৎস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণা করার পর ঐতিহাসিক উৎস সম্পর্কে কার্যকারণ এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকেন। ঐতিহাসিকদের মতে কোনো প্রতিটি ঘটনার পেছনেই কারণ লুকিয়ে থাকে।কারণ ছাড়া কোনো কার্য হতে পারে না। একজন ঐতিহাসিক যে ঘটনাটি নিয়ে ইতিহাস লিখবেন, অতীতে সেই ঘটনাটি ঘটার পেছনে কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয়ই থাকবে। ঐতিহাসিক সেই কারণটা জানার জন্যই কার্যকারণ পদ্ধতি এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। উৎসগুলি সংগ্রহ, শ্রেণীবিভাগ এবং উৎস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণা করার পর ঐতিহাসিক নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে এটা জানার চেষ্টা করবেন যে,অতীতে সেই ঘটনাটি কেন, কিভাবে ঘটেছিল ইত্যাদি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেন। এরূপ প্রশ্নের মাধ্যমে যে উত্তরটি সামনে আসবে তা নিয়েই ইতিহাস রচিত হবে।।

তথ্য সংগ্রহ করে রাখাঃ-

বিভিন্ন প্রাপ্ত উৎস সম্পর্কে দীর্ঘ গবেষণার পর যে সমস্ত তথ্য গুলি পাওয়া যায় সে সমস্ত তথ্য গুলি একজন ঐতিহাসিকের সাহায্যে লিপিবদ্ধ করে রাখেন পরবর্তীকালে যখন তার ইতিহাস রচনা শুরু হয় তখন ঐতিহাসিক তথ্য গবেষণা এবং বিশ্লেষণ করে সেগুলি মাধ্যমে ইতিহাস লিখে থাকেন।।

যেমন- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তাঁর গবেষণা থেকে সিদ্ধান্ত লাভ করলেন যে, নবাবের অনুমতি ছাড়া কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গনির্মাণ, ঢাকার দেওয়ান কুয়দাসকে কলকাতায় আশ্রয়দান, নবাবের দ্রুত নারায়ণ দাসকে কলকাতায় অপমান প্রভৃতি ঘটনাগুলি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাবকে কুদ্ধ করেছিল। প্রাপ্ত এই সিদ্ধান্তগুলি তিনি একটি নোটবুকে লিখে রাখবেন। এই নোটবুকের তথ্যগুলির ভিত্তিতে তিনি পলাশির যুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখার কাজ শুরু করবেন। 

ধারাবাহিকতা এবং কালানুক্রমঃ-  

ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা গুলি সময়ের পথ বেয়ে ধারাবাহিকভাবে সামনে দিকে এগিয়ে চলে। কালানুক্রম যথার্থ ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঐতিহাসিক যখন ইতিহাস রচনার করবেন তখন তাকে সেই ঘটনার তিনটি দিক অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। যথা ঘটনার সূচনাপর্ব বা প্রাথমিক অবস্থায়, ঘটনার গতিপ্রকৃতি বা মধ্যে অবস্থা এবং ঘটনার পরিনতি বা  শেষ অবস্থা।।

ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখঃ

ইতিহাসের সব ঘটনা কোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ ভৌগোলিক স্থানে সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই যথার্থ ইতিহাস রচনা করার জন্য যথার্থ ঐতিহাসিক উৎসগুলি সম্পর্কে গভীর গবেষণার পাশাপাশি উৎস ও ঘটনার ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করার বিষয়টিও একজন ঐতিহাসিকের পক্ষে ভীষণ জরুরি। কোনো ঘটনার ঐতিহাসিক বিবরণ দিলেও তাতে ঘটনার স্থানের উল্লেখ না থাকলে সেই ইতিহাস মূল্যহীন হয়ে পড়বে। যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কোনো ঐতিহাসিক যদি লেখেন, “নবাব সিরাজদৌলা ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তা কখনও যথার্থ ঐতিহাসিক বর্ণনা হতে পারে না। কেননা, যথার্থ ইতিহাস রচনা করার জন্য সিরাজদৌলা যে, 'বাংলার নবাব, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে, 'কলিকাতার কর্তৃপক্ষ এবং যুদ্ধের স্থানটি যে পলাশীর মাঠ' তা উল্লেখ করা অত্যন্ত জরুরি।

মূল্যায়ন ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান, তথ্য উদ্ঘাটন, কালানুক্রমের ব্যবহার, ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ প্রভৃতি বিষয়গুলির মাধ্যমে একজন ঐতিহাসিক যথার্থ ইতিহাস রচনা করতে পারেন। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু সংবন্ধ লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করলেই চলবে না, ইতিহাসের পাঠকে সকল স্তরের মানুষের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য ঐতিহাসিক অবশ্যই তাতে ‘আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাস রচনা করবেন। রচনার ভাষা যাতে মধুর ও সহজ রল হয়, সে বিষয়েও ঐতিহাসিকের নজর থাকা দরকার। কেননা, ভাষা সহজ সরল এবং মধুর না হলে ইতিহাস অনেক পাঠকের কাছে মরুভূমির তপ্ত বালিতে পড়ে থাকা শুষ্ক নুড়ি-পাথরের মতো মনে হবে।


জাদুঘর কাকে বলে? জাদুঘরের উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো || অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলােচনা করাে।


জাদুঘর কাকে বলে? জাদুঘরের উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো || অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলােচনা করাে।
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

 

উওরঃ- বাংলা জাদুঘর শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো মিউজিয়াম মিউজিয়াম শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ মুসকান থেকে যার অর্থ হলো শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকদের বসার স্থান অথবা শিক্ষাদানের গৃহ। 

খুব সাধারণভাবে বাংলায় জাদুঘর বলতে এমন এক প্রকার সংগ্রহশালাকে বোঝায় যেখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান যেমন প্রাচীনকালের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক-, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ছাড়াও আরো অসংখ্য ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এবং পরবর্তীতে সেগুলোকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, সাধারণ অর্থে সেই প্রকার সংগ্রহশালাকেই জাদুঘর বলা হয়।। 

জাদুঘর এর উদ্দেশ্য কার্যাবলী এবং গুরুত্ব অথবা অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের গুরুত্বঃ

প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাদুঘর বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হতো।প্রাচীনকালে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ভাবেই জাদুঘর গঠিত হতো। ফলে তাদের উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং গুরুত্ব আলাদা আলাদা হতল। প্রাচীনকালের মতো বর্তমানকালেও যে সমস্ত জাদুঘর গড়ে ওঠে তাদের উদ্দেশ্য কার্যাবলী এবং গুরুত্ব বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। কিন্তু সব জাদুঘরেরই কিছু উদ্দেশ্য কার্যাবলী এবং গুরুত্ব এক থাকে। যেমন - 

বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহঃ- 

প্রত্যেকটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার  প্রাথমিক কাজ ও উদ্দেশ্য হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে খুজে বের করে সেই অতি মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে যথাযথভাবে সংগ্রহ করে রাখা।  এই সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে যথাযথভাবে সংগ্রহ করে রাখার ফলে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের পরবর্তীকালে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সেই সমস্ত উপাদানগুলি যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করতে পারে।। 

বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান সংরক্ষণঃ- 

প্রত্যেকটি জাদুঘরের একটি অন্যতম কাজ হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান গুলি সংগ্রহ করার পর সেগুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখা। জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান সংরক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন বিভিন্ন প্রাচীন লিপি,প্রাচীন গ্রন্থ, দুষ্প্রাপ্য ও পুরাতাত্ত্বিক বস্ত্র, আশ্চর্যজনক বিভিন্ন বস্তু,বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার, অলংকার, প্রাচীনকালে ব্যবহৃত মানুষের বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ইত্যাদি।জিনিসগুলি বিভিন্ন জাদুঘরে দিনের-পর-দিন সংরক্ষিত রয়েছে। সেই সমস্ত উপাদানগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য জাদুঘরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।।

প্রদর্শনঃ- 

প্রতিটি জাদুঘরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে প্রাচীন ইতিহাসকে আবারো মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। প্রতিটি জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক উপাদান সংরক্ষণ করে রাখার পর সেগুলিকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য সেগুলোকে বিশেষভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।জনসাধারণ জাদুঘরের নিয়ম-নীতি মেনে সেই সমস্ত প্রাচীন মানব সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান গুলিকে দেখার সুযোগ পায়। এরপরে মূলত একভাবে বর্তমান সমাজের সামনে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রূপ ফুটে ওঠে।।

প্রতিকৃতি বা মডেল তৈরি করাঃ- 

জাদুঘর গুলির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিভিন্ন প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন এর প্রতিকৃতি বা মডেল তৈরি করে যে সেই সমস্ত নিদর্শনগুলির প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা, যেই সমস্ত নিদর্শনগুলির সংগ্রহ জাদুঘরে নেই।। তাছাড়াও জাদুঘরে এমন কিছু দুষ্প্রাপ্য এবং অতি মূল্যবান জিনিস থাকে যেগুলো জনসাধারণের সামনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলে সেগুলির চুরি হয়ে যাওয়া বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সেকারনেই জাদুঘরসে সমস্ত নিদর্শনগুলি প্রতিকৃতি বা মডেল তৈরি করে সেগুলো দর্শকদের প্রদর্শন করে দর্শকদের কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করে।।

ঐতিহাসিক গবেষণাঃ-  

জাদুঘরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল,জাদুকর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং উপাদানগুলিকে খুঁজে বের করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখে। পরবর্তীকালে সেই সমস্ত প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন উপাদানগুলি সাহায্যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ইতিহাস চর্চার বিভিন্ন উপাদান খুঁজে বের করতে পারেন। অথবা সে সমস্ত প্রাচীন নিদর্শন গুলি বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।।

জনসাধারণকে আনন্দদানঃ- 

জাদুঘর গুলির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন নিদর্শনগুলি এবং দুষ্প্রাপ্য জিনিসগুলি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে আনন্দ প্রদান করা। জাদুঘরে বেশির ভাগ জনগণই সেই সমস্ত প্রাচীন ঐতিহাসিক উপাদান গুলিকে দেখে উপভোগ করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রবেশ করে। এবং এরুপ সাধারণ দর্শকদের কাছে জাদুঘর হলো হালকা জ্ঞান সংগ্রহের মাধ্যমে কিছু জ্ঞান অর্জনের স্থান।। তাই তাদের কাছে জাদুঘর হলো প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দান করার একটি মাধ্যম।।

প্রকাশনাঃ- 

জাদুঘরে সংরক্ষিত নানান ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে গবেষণালব্ধ নতুন তথ্য এবং সমসাময়িককালে আবিষ্কৃত বহুল আলােচিত বিষয় গুলি পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা জাদুঘরের একটি অন্যতম কাজ।।নতুন কোন নিদর্শন জাদুঘরের সংগ্রহে যুক্ত হলে তাও সাধারণ দর্শকদের জন্য লিপিবদ্ধ করা উচিত। মূলত এভাবেই জাদুঘর অতীতের ঘটনা বা স্বৃতিকে নানাভাবে তুলে ধরে অতীত পুনর্গঠনে সাহায্য করে থাকে।।

 

মৌখিক ইতিহাস কাকে বলে? মৌখিক ইতিহাসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো || WB Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ মৌখিক ইতিহাস কাকে বলে? মৌখিক ইতিহাসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো

উওরঃ- মৌখিক ইতিহাস বা মৌখিক ঐতিহ্য হল এমন এক ধরনের ইতিহাস যা মূলত লোকমুখে অথবা মানুষের মুখে মুখে বিভিন্ন গল্পকথা, গান প্রভৃতির মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হতে থাকে।।
মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের উদাহরণঃ-
মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ হলো - ১৮৫৬০ খ্রিষ্টাব্দের আগে বাংলায় যে নীল চাষ হতো, তখন নীলকর সাহেবরা নিজেদের উপর যে চরম অমানুষিক নির্মম অত্যাচার করতো তা ধীরে ধীরর মা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। এবং পরবর্তীতে সেই সমস্ত মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছিল বা গ্রন্থ রচনা করা হয়েছিল। নীলদর্পণ নাটক হলো তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

মৌখিক ঐতিহ্য বা ইতিহাসের ধারণা বিকাশ এবং এর অগ্রগতিঃ-

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালাভ নেভিনস  এবং তার সহযোগীদের উদ্যোগে 1940 দশকে মূলত মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের আধুনিক ধারণার বিকাশ ঘটেছিল। 1960 এবং 70 দশকে কথাবার্তা রেকর্ড করার জন্য টেপ রেকর্ডার সহজলভ্য হয়ে উঠল তখন থেকে মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাস বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এবং বিভিন্ন সময়ে ওরাল হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ওরাল হিস্ট্রি সোসাইটি ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছিল মৌখিক ইতিহাস বা মৌখিক ঐতিহ্য চর্চা করার জন্য।
এরপর বিংশ শতকের শেষদিকে ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে মৌখিক ইতিহাসচর্চা বিভিন্ন দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদা পেতে শুরু করে। ১৯৯৮-৯৯ খ্রি. নাগাদ ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র বিভিন্ন দেশ ও স্থানের বহু ব্যক্তির কাছ থেকে মৌখিক ইতিহাস রেকর্ড করে এবং রেকর্ড করা এই মৌখিক ইতিহাস The Century Speaks শিরোনামে ৬৪০টি পর্বে সম্প্রচার করে। এভাবে সাক্ষাৎকারভিত্তিক স্মৃতিকথা বা মৌখিক ইতিহাস বর্তমানকালে ঐতিহাসিকদের কাছে মূল্যবান হয়ে ওঠে।

মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ-

জনশ্রুতির অন্যান্য চারটি ভাগের মতো এর একটি প্রধান ভাগ,মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসেরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

মৌখিক ঐতিহ্য এর উপাদান সংগ্রহঃ- 

মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো,মৌখিক ইতিহাসের সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এই ধরনের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিকরা তাদের ইতিহাস চর্চার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের সঙ্গে। তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐতিহাসিকরা যে ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তার কাছ থেকে সে মৌখিক ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করার জন্য অডিও বস ভিডিও রেকর্ডার বা অন্য কোন যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। এবং তার মাধ্যমে সেই মৌখিক ঐতিহাসিক তার ইতিহাস রচনার উপাদান সংগ্রহ করে তার মাধ্যমে তারা ইতিহাস রচনা করেন।।

অলিখিত ইতিহাসঃ-

মৌখিক ইতিহাসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো,এই ধরনের ইতিহাস লিখিত আকারে পাওয়া যায়না। এই ধরনের ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে বিভিন্ন গল্পকথা বা গান ইত্যাদির মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। যার ফলে এগুলো কখনোই লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের প্রচেষ্টার ফলে বিভিন্ন মৌখিক ইতিহাসের উপাদান গুলির করে সংগ্রহ করে সেগুলো বর্তমানে লিখিত আকারে প্রকাশ হচ্ছে বা প্রকাশিত হতে পারে।।

মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের প্রধান উৎসঃ-

অন্যান্য ইতিহাসের ক্ষেত্রে, ইতিহাস রচনার উৎস বা উপাদান বিভিন্ন ধরনের হয়। অন্যান্য ইতিহাসের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক তথ্য বা উপাদান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জড়িত হয়ে থাকে যেমন বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ,পুথি,মুদ্রা, বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি। কিন্তু মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রধান উৎস হয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো জীবিত ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকে এবং তার কাছ থেকে পরবর্তীতে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঐতিহাসিকগণ ঐতিহাসিক উপাদান বা তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার উপর ভিত্তি করে ইতিহাস রচিত হয়।।

মৌখিক ঐতিহ্যের তথ্য সংরক্ষণঃ-

অতীতের কোনো ঘটনার বিবরণ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন রেকর্ডারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখেন। এবং পরবর্তীতে সেই সমস্ত তথ্য বা উপাদান থেকে যথার্থ ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিকগণ সেই উপাদানগুলিকে মহাফেজ খানা,গ্রন্থাগার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্থানে সংরক্ষণ করে রাখেন।।

ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের গুরুত্বঃ-

জনশ্রুতির পাঁচটি ভাগের মধ্যে মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাস হলো একটি অন্যতম ভাগ। অন্যান্য ভাগ গুলির মতো মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
 

আদিম সমাজের কাহিনীর রক্ষাকর্তাঃ-

যখন মূলত ইতিহাস লেখা শুরু হয়নি  তখন যে সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে গিয়েছিল, সে সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল সাধারণ মানুষ। তখন তাদের মুখে মুখেই মূলত বিভিন্ন ইতিহাসের ঘটনাগুলি মৌখিক ইতিহাসের মাধ্যমে ঘোরাফেরা করতো। এবং সে সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার কাহিনী গুলি গান বা গল্পকথা মাধ্যমে তারা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দিয়েছে। এবং এর ফলে সেই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি অতীত থেকে বর্তমান সমাজে প্রবেশ করায়, আমরা অতীতকালের সেই সমস্ত দিনের কথাও জানতে পারছি, যেই সময়ের কোনো লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় না।
 

ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য প্রদানঃ-

মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যুক্ত ঐতিহাসিকরা যে ঘটনার ইতিহাস রচনা করতে চান, তারা সেই সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্য বা উপাদান বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে সংগ্রহ করে থাকেন।।এবং তারা যে ব্যক্তির কাছ থেকে সেই সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করেন, সেই ব্যক্তি অতীতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যার ফলে সেই সমস্ত ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সবসময়ই মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের সংগ্রহ করা উপাদান বা তথ্য যে নির্ভূল হবে তা নয়। কারন এমনও কিছু মৌখিক ঐতিহ্যের তথ্য বা কাহিনী রয়েছে যেগুলো বহুকাল আগে থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচুর ঘুরেফিরে বর্তমান সমাজে প্রবেশ করেছে।যার ফলে এই দীর্ঘ যাত্রাপথে সেই সমস্ত মৌখিক ঐতিহ্যের কাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন ভুল বা মিথ্যা কাহিনী ঢুকে যেতে পারে।।

প্রাথমিক উপাদানঃ-

কোনো ঘটনার ইতিহাস যখন প্রথম লেখা হয়, তখন সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রাথমিক উপাদান (Primary Sources) বিশেষ পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ঘটনাটির বিষয়ে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপাদান হিসেবে মৌখিক ঐহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

নিম্নবর্গের ইতিহাসঃ-

অনেক সময় সমাজের অবহেলিত নিম্নবর্গের মানুষদের কোনো লিখিত নথিপত্র বা দলিল দস্তাবেজ থাকে না। এসব মানুষের ইতিহাস জানতে গেলে মুখের কথা, কিংবদন্তি, প্রবাদ, স্মৃতিচারণ প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতেই হয়।

যথার্থ তথ্য সরবরাহঃ-

বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক যথার্থ ইতিহাসকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে উপনিবেশের ইতিহাস রচনা করে থাকেন। দেশীয় পণ্ডিতদের ইতিহাস রচনার কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। কিন্তু উপনিবেশের যথার্থ ইতিহাস মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে সেদেশের জনসমাজে প্রচলিত থাকে। ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পরবর্তীকালে সে দেশের যথার্থ ইতিহাস রচনার কাজে মৌখিক ঐতিহ্য যথার্থ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

উপসংহারঃ-

আপাতদৃষ্টিতে মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হলেও মৌখিক ইতিহাস  সমালোচনার উর্ধে নয়। মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিকরা যে সমস্ত তথ্য বা উপাদান সংগ্রহ করে থাকেন,তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা মৌখিক ঐতিহ্য বা মৌখিক ইতিহাসের কাহিনী গুলি সুদূর অতীত থেকে মুখে মুখে বর্তমান সমাজে প্রবেশ করে। যার ফলে সেই সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদানের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুলভাল তথ্য মিশে গিয়ে থাকে এবং সে সমস্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে যথার্থ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।।

আশাকরি যে, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু History MCQ Question Answer, class 12 history LA Question Answer & WB Class 12 History Suggestion And History Notes  (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023) গুলো তোমাদের কাজে আসবে।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস MCQ প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ অধ্যায়ের MCQ প্রশ্ন উত্তর | উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর | অতীত স্বরণ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস অতীত স্মরণ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ বড় প্রশ্ন উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস অতীত স্মরণ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History mcq question answer  | West Bengal Class 12 History Question Answer | West Bengal Class 12 History Question Answer And Suggestion | West Bengal Class 12 History Suggestion |wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top