বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion Chapter 5

0

 

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion Chapter 5
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


আজের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের' (wbbse class 10 history question answer chapter 5 in Bengali ) অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ), গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ) এবং গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer and notes ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আশাকরি যে, বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion Chapter 5  এর বাইরে পরিক্ষায় এর বাইরে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion Chapter 5 


দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর || বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের দু'নম্বর এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর


আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের' (wbbse class 10 history question answer chapter 5 in Bengali ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি দু'নম্বর এর প্রশ্ন উত্তর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং ক্লাস টেনের ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের' বাকি গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্ন উত্তর গুলো তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে।

দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর || বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের দু'নম্বর এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ শ্রীরামপুর ত্রয়ী কারা? 


উওরঃ ছাপাখানার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত শ্রীরামপুর ত্রয়ী হলেন তিনজন খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম ওয়ার্ড, উয়িলিয়াম কেরি এবং জোশুয়া মার্শম্যান। এই তিনজন খ্রিস্টান মিশনারীকে একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হতো। মূলত শ্রীরামপুর ত্রয়ীর উদ্যোগেই ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মিশন প্রেস নামক একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।।

প্রশ্নঃ বাংলা ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকার এর ভূমিকা কি ছিল?


উওরঃ বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে পঞ্চানন কর্মকারের নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। কারণ-

• পঞ্চানন কর্মকারের বিশেষভাবে সহযোগিতায় চার্লস উইলকিন্স বাংলা হরফ নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। 

• পঞ্চানন কর্মকার এর তৈরি মুদ্রা অক্ষর গুলি ব্রাসি হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে এবং পরবর্তীকালে 1793 খ্রিস্টাব্দে কর্নওয়ালিস কোডের বাংলা সংস্করণে ব্যবহার করা হয়েছিল।।

• পঞ্চানন কর্মকার এর চেষ্টার কারণেই বাংলা হরফ নির্মানের কাজটি একটি স্থায়ী শিল্পে পরিণত হয়েছিল। 

প্রশ্নঃ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?


উওরঃ বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তার বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। যেমম- 

• প্রথমত এর উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চা করা। 

• দ্বিতীয়তো বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন।

• তৃতীয় বিজ্ঞানর আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক বিজ্ঞান চর্চার জন্য একটি সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তাদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানো ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ বসু বিজ্ঞান মন্দিরর কোন্ কোন্ বিষয়ে গবেষণা করা হতো?


উওরঃ ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দিরে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মৌলিক গবেষণা গুলি করা হত। যেমন- মাইক্রোবায়োলিজ, বায়োফিজিক্স, বায়োকেম্রিস্ট্রি ইত্যাদি।।

প্রশ্নঃ ছাপা বই শিক্ষার প্রসারে কি ভূমিকা নিয়েছিল?


উওরঃ বাংলায় খ্রিস্টান মিশনারি এবং বেশ কয়েকজন বাঙ্গালীদের উদ্যোগে ছাপাখানা প্রসার শিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। 

কারণ-

• প্রথমতঃ ছাপা বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞানীগুণী পন্ডিত ব্যক্তিদের অল্পসংখ্যক হাতে লেখা ছিল ছাপাখানায় প্রকাশিত হলে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 

• দ্বিতীয়তঃ ছাপাখানায় প্রকাশিত বইগুলো খুবই সস্তা হতল বলে তা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে সক্ষম হয়। 

• ছাপাখানার বিকাশের পর, শিক্ষামূলক পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও আরও নানা ধরনের ধর্মগ্রন্থ, পত্রপত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশিত হলে তার সবার মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটায়।

প্রশ্নঃ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কবে এবং কাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল?


উওরঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জমিদার সভার কয়েকজন বিশিষ্ট সদস্যদের উদ্যোগে পার্কস্ট্রিটে ব্রিটিশদের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে একটি সভা আহ্বান করা হয় এই সভায় রবীনাথ ঠাকুর,সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ ব্যক্তিরা বক্তব্যে রেখে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বা জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাখেন। এরপর ব্রজেন্দ্র কৃষ্ণ চৌধুরী, সূর্য কান্ত আচার্য্য চৌধুরী,রাজা সুবোধ মল্লিক প্রমুখ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় 1 906 খ্রিস্টাব্দে 11 ই মার্চ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়।।

প্রশ্নঃ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য কি ছিল?


উওরঃ ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ই মার্চ যখন জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তখন জাতীয় পরিষদের একাধিক লক্ষ্য ছিল। এই লক্ষ্য গুলির মধ্যে কয়টি প্রধান লক্ষ্য হল- 

• দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করা। 

• এদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কলাবিদ্যা, বিজ্ঞান চর্চা এবং কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানো বা প্রসার ঘটানো।

• বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রদান করে এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেকারত্ব দূর করা ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ সংস্কৃত যন্ত্র বিখ্যাত কেন?


উওরঃ বাংলার দুজন বিখ্যাত পন্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের যৌথ উদ্যোগে কলকাতায় আমহাস্র্ট স্ট্রিটে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা টি সংস্কৃত যন্ত্র নামে বিখ্যাত। প্রথমদিকে সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানার মালিক দুজন হলেও পরবর্তীকালে কোন এক কারণে মদনমোহন তর্কালঙ্কার সংস্কৃত যন্ত্র ত্যাগ করেন। 


তাই বিদ্যাসাগরের একার হাতেই সংস্কৃত যন্ত্রের মালিকানন এসে পড়ে। এরপর এখান থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন এবং প্রকাশিত করেন। সংস্কৃত যন্ত্র থেকেই ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল এবং বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল। তাই সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানা জগতে বিখ্যাত হয়ে আছে।।

প্রশ্নঃ বাংলার মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনী গুরুত্ব কী?


উওরঃ উনিশ শতকে কলকাতা এবং তার আশেপাশে চোরবাগান, শোভাবাজার,দর্জিপারা,জোড়াসাঁকো প্রভৃতি স্থানে যে সমস্ত ছাপাখানা গড়ে উঠেছিল, তা মূলত বটতলার প্রকাশনা নামে পরিচিত। বাংলায় মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব ছিল অনেকটা। কারণ - 

• বটতলা প্রকাশনা থেকে যে সমস্ত বইপত্র ছাপা হতো, তা তৎকালীন সময়ের জ্ঞান পিপাসু লোকেদের পিপাসা মেটাতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ বটতলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইগুলো ছিল অত্যন্ত সস্তা। তাই সবার পক্ষে সেই বইগুলি কেনা সম্ভব ছিল। 

প্রশ্নঃ ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার বিখ্যাত কেন?


উওরঃ ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারের বিখ্যাত অথবা স্মরণীয় হয়ে থাকার মূলত দুটি কারণ রয়েছে। 

প্রথমত- ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় এমডি এবং প্রথম হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক। প্রথমে তিনি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হলেও পরে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছিলেন। 


এবং এজন্য তার খ্যাতি সেসময় অনেকটাই ছিল। দ্বিতীয়ত- তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিজ্ঞান চর্চার জন্য এবং বিজ্ঞানের প্রসারের উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স নামক একটি বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এবং তার এই উদ্যোগ বিজ্ঞানে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের জন্য ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারের এই উদ্যোগের জন্যেউ তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।।


দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর || WBBSE Class 10 History Chapter 5 Questions And Answers in Bengali


দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর || WBBSE Class 10 History Chapter 5 Questions And Answers in Bengali
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর 


প্রশ্নঃ ইউ এন রায় এন্ড সন্স কি?


উত্তরঃ ইউ এন রায় এন্ড সন্স হলো একটি বাংলার বিখ্যাত ছাপাখানা যেটি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী নিজ উদ্যোগে কলকাতার শিবনারায়ন দাস লেনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে ইউ এন রায় এন্ড সন্স বিখ্যাত হওয়ার কারণ হলো -

• প্রথম দিকে যখন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর এর মালিক ছিলেন, তখন তিনি এই ছাপাখানায় বিভিন্ন বিদেশী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে হাফটোন ব্লকে ছাপানো শুরু করেন।


• দ্বিতীয়ত এই ছাপাখানা থেকে বিভিন্ন ধরনের রং ব্যবহার করে ছোটদের জন্য এবং বড়দের জন্য বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন বইপত্র প্রকাশ করা হতো। 

• তৃতীয়ত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ইউ এন রায় থেকেই ছোটদের বিখ্যাত সন্দেশ পত্রিকাটি প্রকাশ করতেন।।

প্রশ্নঃ উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর ভূমিকা কি ছিল?


উওরঃ বাংলার প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার 1876 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স নামল বিজ্ঞান গবেষণাগারটি তৈরি করেছিলেন। ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারের তৈরি এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন-

• প্রথমতঃ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স ই ছিল ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান যেখানে বিজ্ঞানে আগ্রহী ছাত্ররা স্বাধীনভাবে তাদের বিজ্ঞান চর্চা এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধরনের গবেষণা গুলি করতে পারতেন। 


• দ্বিতীয়তঃ বিজ্ঞান গবেষণা এবং বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি এই বিজ্ঞান গবেষণাগারটি পদার্থবিদ্যা,রসায়ন বিদ্যা,প্রাণিবিদ্যা ইত্যাদি আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন  গবেষণার কাজ কর্ম নিজেদের জার্নাল এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে প্রকাশ করে সবাইকে বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করতো।

• তৃতীয়তঃ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর অনেক মেধাবী এবং বিশিষ্ট ছাত্ররা শিক্ষা লাভ করে পরবর্তীতে বাংলা এবং সারা ভারতে বিজ্ঞানের শাখায় নিজেদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে পেরেছিলেন। 


ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এ গবেষণা করে ডক্টর সিভি রমন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের টিকা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন এবং মেঘনাথ সাহা তার সূত্র আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও আরও অনেকে এই বিজ্ঞান গবেষণাগার থেকেই বিজ্ঞানের জগতে নিজেদের নাম তৈরি করতে পেরেছিলেন।

প্রশ্নঃ কে, কেন এবং কবে বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?


উওরঃ বাংলা তথা ভারতের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রাসায়নিক দ্রব্য এবং ঔষুধ প্রস্তুত করা জন্য বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যাল স্থাপন করার পরোক্ষ উদ্দেশ্য ছিল, বাংলায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করা।

প্রশ্নঃ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ব্যর্থতার কারণগুলি কি কি ছিল?


উওরঃ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে বাংলায় বিজ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কিছুটা ক্ষেত্রে সফল হলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা দেখা গিয়েছিল। এর কারণ ছিল - 

প্রথমতঃ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে কিছুদিন যাওয়ার পর জাতীয় শিক্ষা পরিষদ অর্থ সংকটের সম্মুখীন হয় এবং সেই অর্থ সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা জাতীয় শিক্ষা পরিষদের হাতে তখন ছিল না।


দ্বিতীয়তঃ প্রথমদিকে অনেক শিক্ষক জাতীয় শিক্ষা পরিষদে শিক্ষকতার জন্য এগিয়ে এলেও পরবর্তীতে যখন তাদের আর সেই পরিমাণ বেতন দেওয়া সম্ভব ছিলনা,তখন অনেক শিক্ষকই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন।

তৃতীয়তঃ চাকরির বাজারে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাই জাতীয় শিক্ষা পরিষদে অনেকেই শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসেনি।

এবং সবশেষে সেই সময়ের চরমপন্থী নেতারা জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি প্রদান না করায় এই প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যায়।।

প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করো। বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাণহীন এবং যান্ত্রিক বলেছেন কেন?


উওরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে কখনোই সমর্থন করেননি। তিনি  উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্নভাবে সমালোচনা করে বলেছেন যে,

• উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে  শিক্ষার দিবার কল ও মাস্টারকে এই কলের অংশ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্ব প্রকৃতি এবং মনুষ্যত্ব বিশ্বমানবতার কোনো সম্পর্ক ছিল না। 


• দ্বিতীয়তঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  শিক্ষাব্যবস্থায় যে ভারতীয় জীবনাদর্শ ও রীতিনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন,  সেই ভাবাদর্শের কোনো লক্ষন উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। 

• তৃতীয়তঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত শিক্ষা কখনোই শুধু মাত্র চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারে না। তাই তিনি প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দান করে প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের শিক্ষার আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন। 

প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রীনিকেতন এবং বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?


প্রথমতঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রামের সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যেই শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রামোন্নয়নের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীনিকেতনে পশুপালন, কৃষি,শিল্প, সমবা,য় স্বাস্থ্য গণশিক্ষা প্রভৃতি কর্মসূচি চালু করেছিলেন যেখানে গ্রামের জনসাধারণ সমস্ত শিক্ষা গ্রহণ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারবে। দ্বিতীয়তঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক উদ্দেশ্য নিয়ে। যেমন -


• প্রথমত তিনি সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তরের মানুষটিকে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা গড়ে তুলে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন।

• শিক্ষার্থীদের অর্থশাস্ত্র, কৃষিততত্ত প্রভৃতি বিষয়ের ব্যবহারিক শিক্ষা দান করে বিশ্বভারতীর চারপাশে তার প্রয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন।

• তৃতীয়তঃ ভারত সহ প্রাচ্যের আদর্শ বাণীকে বিশ্বে তুলে ধরে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিলন ঘটানো, এবং  শ্রীনিকেতনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই ছিল বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার কিছু প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রশ্নঃ ভারতের শিক্ষার প্রসারে রাজবিহারী ঘোষ এর অবদান কি ছিল?


উওরঃ  ভারত ভারতে কোথায় বাংলার প্রখ্যাত আইনজীবী এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস নেতা রাজবিহারী ঘোষ বাংলার বেসরকারি উদ্যোগে বিজ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অন্যতম সদস্য প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি ছিলেন। রাজবিহারী ঘোষকে মূলত তার উদারতা এবং শিক্ষার প্রসারের জন্য তার নিঃস্বার্থ আর্থিক সাহায্য এবং বিভিন্ন উদ্যোগের জন্যেই হয়ে থাকে মনে রাখা হয়। 


তিনি বাংলার কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ লক্ষ টাকা এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমে ১০ এবং পরে ১৪ লক্ষ অর্থাৎ মোট 24 লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। রাজবিহারী ঘোষের এই মহৎ কাজের জন্যই তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল।।

প্রশ্নঃ শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন কী?


উওরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সামরিক বাহিনীর অফিসার কর্নেল রবার্ট কিড 1787 খ্রিস্টাব্দে 2 নভেম্বর শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করেছিলেন। শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করার পেছনে তার অনেক উদ্দেশ্য ছিল। যেমন-

• প্রথমত তিনি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেগুন কাঠ এবং মশলার জন্য নতুন চারা গাছ রোপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। 


• দ্বিতীয়ত, বোটানিক্যাল গার্ডেনের নতুন সুপারিনটেন্ডেন্ট উইলিয়াম রক্সবার্গ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ চারা গাছ রোপন করে বোটানিক্যাল গার্ডেনকে একটি ভেষজ গার্ডেনে পরিণত করেছিলেন।

• তৃতীয় ভারতের বিখ্যাত উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর নাম অনুসারে ভারত সরকার বর্তমানে এর নামকরণ করেছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন।।

প্রশ্নঃ ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে কেন?


উওরঃ ভারতের বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত সাহিত্যিক এবং মুদ্রণ এবং প্রকাশনা জগতের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকার কারণ হলো-

• প্রথমতঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে 1847 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 


• দ্বিতীয়তঃ  মদনমোহন তর্কালঙ্কার যখন সংস্কৃত যন্ত্র কোনো কারণে ছেড়ে দেন, তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতেই সংস্কৃত যন্ত্রের সমস্ত মালিকানা এসে পড়ে। এরপর বিদ্যাসাগর তার এই ছাপাখানা থেকেই তাঁর রচিত বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশ করেন। 

• তৃতীয়তঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার এই সংস্কৃত যন্ত্র থেকেই  ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল সহ একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। এবং এই সমস্ত কারণেই ছাপাখানার ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

প্রশ্নঃ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কেন? 


উওরঃ ভারতের ছাপাখানার জগতে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। এর পেছনের কারণ হলো প্রথমতঃ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রথম জীবনে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রেসেরএকজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। দ্বিতীয়তঃ শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কোনো এক বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় তিনি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ত্যাগ করে কলকাতায় এসে ছাপাখানা থেকে বেশ কিছু বই প্রকাশ করেন।

দ্বিতীয়তঃ গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য ই ছিলেন প্রথম বাঙ্গালী পুস্তক প্রকাশক এবং বই বিক্রেতা।। 


তৃতীয়তঃ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য হরোচন্দ্র রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতায় চোরবাগান স্ট্রিটে বাঙ্গাল গেজেট প্রস নামক একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এখান থেকেই তিনি বাঙ্গাল গেজেট নামক সংবাদপত্রটি প্রকাশ করেছিলেন যার জনপ্রিয়তা সেই সময়  অনেকটাই ছিল। মূলত এই সমস্ত কারণেই গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন।।


ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা আলোচনা করো | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা আলোচনা করো |  বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


ভূমিকা : ছাখাপাখা অথবা ছাপাখানার বিকাশের প্রসঙ্গে যে সমস্ত ব্যক্তিদের কথা সবার আগে আসে, তাদের মধ্যে ভারতীয় তথা বাঙালি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার জগতে এমন কিছু কাজ করে গেছেন, যার জন্য ছাপাখানা জগত ছাড়াও, তার অন্যান্য কিছু কার্যকলাপের জন্য তাকে সবসময়ই মনে রাখা হয়। 

ক্লাস টেনের ইতিহাস মকটেস্ট দিতে নিচের লিঙ্কের ওপর ক্লিক করো👇


◆ নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে তিনি " ছেলেদের রামায়ণ " নামক একটি বই লেখেন। ছেলেদের রামায়ন নামক সেই বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের " সিটি বুক সোসাইটি " নামক একটি ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।  কিন্তু ছেলেদের রামায়ণ নামক সেই বইটি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, তাদ প্রকাশনা থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সেরকমভাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ছেলেদের রামায়ণ বইটির প্রকাশনা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে খুবই হতাশ করেছিল। এবং এই হতাশার পরেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজস্ব একটি আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেছিলেন বা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।


◆ ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স প্রতিষ্ঠা :  ছেলেদের রামায়ণ বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটির  প্রকাশনার হতাশা থেকে,উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার নিজস্ব একটি আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগ অনুযায়ী তিনি 1885 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শিবনারায়ন লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে,অর্থাৎ 1895 খ্রিস্টাব্দে সেই ছাপাখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স। 

◆ হাফ টোন ব্লকের প্রবর্তন : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স - এ হাফ টোন ব্লকের প্রবর্তন করেছিলেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কাঠের পাতে খোদাই করা অক্ষর ব্যবহার করার বদলে, তিনি তামা ও দস্তার পাতে খোদাই করা অক্ষর ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। 

 রঙ্গিন ছবির ব্যবহার :

 উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর আগে, কোনো ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বইপত্র বা সংবাদপত্রে শুধুমাত্র সাদাকালোর ছবির ব্যবহার করা হতো। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছাপাখানার জগতে এমন এক পরিবর্তন এনেছিলেন,যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ছাপাখানার জগতে খুব উচু পরিচিতি লাভ করেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ইউ.এন.রায় এন্ড সন্সে প্রথম রঙিন ছবির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তাঁর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন গ্রন্থে রঙিন ছবি ব্যবহার করা হতো। যার ফলে বিভিন্ন বয়সের পাঠকদের কাছে সেই সমস্ত পত্র-পত্রিকা ও বইগুলি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো। 

◆ বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভাবন : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং তিনি ছাপাখানার বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজকর্ম করেছিলেন। তিনি ছাপাখানার প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম মুদ্রণ যন্ত্র যেমন- ডায়াফর্ম যন্ত্র,স্ক্রিন অ্যাজাস্টার, ডুয়োটাই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলেন।। 


◆ পথ প্রদর্শক হিসেবে : অনেকে মনে করেন যে, উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর পরিকল্পনা অনুসরণ করে ইংল‍্যান্ডে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রন যন্ত্র বানানো শুরু হয়েছিল। যেমন - স্ক্রিন অ্যাডজাস্টিং মেশিন বানানোর ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোরের পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছিল। তাই অনেকে তাকে এ বিষয়ে পথ প্রদর্শক হিসেবে মনে করেন

◆ সুকুমার রায়ের ভূমিকা : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার  সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি তার পুত্র সুকুমার রায়কে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন। সুকুমারায় লন্ডন থেকে ছাপাখানা সংক্রান্ত বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করেন। এবং তিনি ফিরে এসে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন.রায় এন্ড সন্সকে নিজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার মাধ্যমে আরো উন্নত একটি ছাপাখানায় পরিণত করেন।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ছেলেদের রামায়ণ গ্রন্থটির প্রকাশনা থেকে হতাশ হয়েই তিনি তা নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এবং তারপর থেকেই তিনি ছাপাখানার বিকাশ অথবা ছাপার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নানা রকমের চেষ্টা করে গেছেন । উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং সুকুমার রায় ছাপাখানা থেকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করেননি। বরং সেই সঙ্গে  তারা ছাপাখানার বিকাশের জন্যেও অনেক কাজ-কর্ম করে গেছেন।


ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক আলোচনা করো | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উত্তর


ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক আলোচনা করো | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

ভূমিকা : ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পর্তুগীজদের মাধ্যমে। 1556 খ্রিষ্টাব্দে গোয়ায় সর্বপ্রথম ভারতের প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সেরকম ভাবেও ছাপাখানার বিকাশ ঘটেনি। ভারত তথা বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ ঘটেছিল মূলত আঠারো শতকের শেষের দিকে এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে। সেসময় বিভিন্ন পর্তুগিজ যেমন জেমস অগাস্টাস হিকি 1777 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এবং 1778 খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স চুচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারীরা 1800 খ্রিস্টাব্দের আরো একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমস্ত ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারে সাহায্য করেছিল, তা আমরা সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারি। যেমন - 

◆ শিশুশিক্ষার প্রসার : মদনমোহন তর্কালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ সেই সময় শিশুশিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন, শিশুরা যদি প্রথমেই সঠিক ভাবে শিক্ষা না লাভ করে, তাহলে পরবর্তীকালে শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে তাদের নানা সমস্যা হবে। তাই মদনমোহন তর্কালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামসুন্দর বসাক প্রমুখ শিশুশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে সেই সময় শিশুশিক্ষা ( মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচিত) বর্ণপরিচয় ( ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ), বাল্যশিক্ষা ( রামসুন্দর বসাক রচিত ) ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বর্ণপরিচয় হলো এমন একটি গ্রন্থ, যেখানে তিনি শিশুদের বাংলা হরফ অথবা বর্ণ পরিচয় করিয়েছেন। এবং এই গ্রন্থটি ছিল শিশুদের বাংলা হরফ চেনা, বাংলা লিখতে শেখা, পড়তে শেখা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম পাঠ্যপুস্তক।


◆ বিভিন্ন বইপত্রের সহজপ্রাপ্তি : বিভিন্ন ছাপাখানা গুলি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বিভিন্ন শিক্ষামূলক গ্রন্থ অথবা ধর্মগ্রন্থ গুলি প্রাচীনকালের বিভিন্ন মুনি-ঋষিরা বা বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তিরা হাতে লিখতেন। যে সমস্ত শিক্ষামূলক গ্রন্থ নিজেরা তারা হাতে লিখতেন,তাতে তাদের প্রচুর সময় ব্যয় হতো এবং পরিশ্রম করতে হতো। যার ফলে সেই সময় খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বই পত্র লেখা সম্ভব ছিল না। যার ফলে বইপত্রের সংখ্যা ছিল খুবই কম। কিন্তু ছাপাখানা প্রসারের ফলে  ছাপাখানায় খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক বইপত্র বা পাঠ্যবই পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি ছাপানো যেত বা লেখা যেত। যার ফলে প্রাচীনকালে যে সমস্ত খুব অল্পসংখ্যক বই হাতে লেখা ছিল, পরবর্তীকালে ছাপাখানা বিকাশের মাধ্যমে সে বইগুলির বিভিন্ন কপি বের করা হয়। ফলে আগেকার দিনের সেই সমস্ত হাতে লেখা পুথির মধ্যে বা অল্প অল্প সংখ্যক বইয়ের মধ্যে যে সমস্ত জ্ঞান আটকে ছিল, তা ছাপাখানার ছাপার কালিতে বেরোনো অসংখ্য বই পত্রের মাধ্যমে সবার কাছে খুবই সহজ ভাবে অর্জন করার সুযোগ আসে। এবং সবার কাছে সেই সমস্ত বই সহ অন্যান্য আরও নানা ধরনের সহজলভ্য হয়ে ওঠে। এবং সবাই বইয়ের দোকান বা বাজার থেকে সেগুলো কিনে জ্ঞান লাভের সুযোগ পায়।


◆ সস্তায় বই পত্র প্রাপ্তি : প্রাচীনকালে বিভিন্ন বইপত্র অথবা পুঁথিগুলো হাতে লেখা হতো বলে তার মূল্য ছিল খুবই বেশি। তাছাড়া সেই সমস্ত বইপত্রের সংখ্যাও ছিল খুবই কম। কারণ বর্তমান যুগের মতো সেই সময় একটি বইয়ের একাধিক কপি খুবই কম ছিল অথবা ছিল না বললেই চলে। সেই সমস্ত বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় তখনকার সাধারণ অথবা নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়েরা সেই সমস্ত বই থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত না। যার ফলে তাদের জ্ঞান লাভের দরজা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ থাকতো। কিন্তু ছাপাখানার প্রসারের ফলে একটি বইয়ের একাধিক কপি বের হওয়াও, সেই হাতে লেখা পুথিগুলির অনেক কপি অনেকের কাছে সহজলভ্য এবং সস্তা হয়ে ওঠে। ফলে সেই সমস্ত বইগুলো সাধারণত অথবা নিম্নোবিও ঘরের ছেলেমেয়েরাও  সেগুলো কিনে জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পায়। এবং এভাবে ধীরে ধীরে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে থাকে।

◆ গন শিক্ষার প্রসার : সেই সময়ে ছাপাখানায় শুধুমাত্র যে বিভিন্ন স্কুল কলেজের পাঠ্য বা অপাঠ্য বই ছাপানো হতো তাই নয়। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী ছাড়াও সেসময় যারা স্কুল-কলেজে পাঠরত ছিল না?অর্থাৎ মাঝবয়সী বা বৃদ্ধ বয়সী মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছাপা হতো। সেই সময় ছাপাখানায় বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ, ধর্মকথা মূলক কাহিনীর বই ইত্যাদিও ছাপানো শুরু হয়। যার ফলে মানুষ নিজেদের এবং অন্যের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার সুযোগ পায়। 

◆ পত্র পত্রিকার প্রকাশ : ছাপাখানার বিকাশে পরেই বিভিন্ন ধরনের পত্র-পত্রিকা বা সংবাদপত্র প্রকাশনা শুরু হয়। যার ফলে মানুষ দেশ-বিদেশের নানা খবরাখবর সম্পর্কে জানতে পারতো। এবং বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে পারতো। ফলে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের বা শিক্ষার প্রসার ঘটে।


◆ বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সহজলভ্যতা : ছাপাখানার প্রসারের ফলে সে সময় বাজারে বিভিন্ন ধরনের বই প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়।।যেমন ইতিহাস-ভূগোল,গণিত,জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা,বাংলা ব্যাকরণ,ইংরেজি ব্যাকরণ এবং অন্যান্য নানা ধরনের নানা বই বাজারে আসতে শুরু করে। যার ফলে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দমতো বই কিনে নিজের মতো করে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পায়। ফলে ছাত্রছাত্রীদের একটি বৃহৎ অংশের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটে।

◆ বিভিন্ন উদ্যোগ : ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি , শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ - সে সময় বাংলায় বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যপুস্তক রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক রচনায় ভূমিকা পালন করেনি,তারা বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের খুবই অল্প দামে এবং অনেক সময় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করার ব্যবস্থাও করেছিল। যাতে শিক্ষার্থীরা সেই পাঠ্য বই গুলি হাতে পেয়ে সহজে তাদের শিক্ষা অর্জন করতে পারে।।

উপসংহার, পরিশেষে বলা যায়, ছাপাখানার প্রসারের ফলে আগেকার দিনে বিভিন্ন পন্ডিত অথবা জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের হাতে লেখা পুথির যে সমস্ত জ্ঞান অল্পসংখ্যক কিছু বইয়ের মধ্যে আটকে ছিল, তা ছাপাখানা প্রসারের ফলে সেই সমস্ত বইয়ের মধ্যে অথবা হাতে লেখা পুথিত মধ্যে আটকে থাকা জ্ঞান অসংখ্য ছাপা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বা সমাজের সবার কাছে খুব সহজ ভাবে উঠে আসে। 

উনিশ শতকের বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে লেখ | বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও


বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


উনিশ শতকের বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে লেখ | বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

◆ ভূমিকা : উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ শুরু হয়ে ছিল। কিন্তু যদিও এই কারিগরি শিক্ষার বিকাশের পেছনে ব্রিটিশ সরকারের নিজেদের স্বার্থ লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তবুও তাদের হাত ধরেই মূলত কারিগরি শিক্ষার প্রসার শুরু হয়েছিল।

◆ কোম্পানির উদ্যোগ : ব্রিটিশ সরকার প্রথমদিকে এদেশের যেকোনো ধরনের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজেদের বিভিন্ন বিভাগে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য তারা সাধারণ শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সড়ক পথ,রেল নির্মাণ শিল্প, বিভিন্ন শিল্প,কারখানার কাজ কর্মের ক্ষেত্রে প্রচুর সুদক্ষ কারিগর এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ফলে ব্রিটিশ সরকার এই প্রয়োজনীয়তা মেটাতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে নামমাত্র উদ্যোগ নিয়েছিল। কোম্পানির শাসন কালে তৎকালীন সময়ে মাত্র ছয়টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। তার মধ্যে রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সেইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করা শিক্ষার্থীরা মূলত কোম্পানীর কেরানি হয়ে উঠতো। এবং ভারতীয়দের গোলাম করেই রাখা হতো।


◆ দেশীয় উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এর উদ্যোগ : উনিশ শতকের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কোম্পানির কেরারি তৈরির জিনিসটা বুঝতে পারায়,সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে এবং ব্রিটিশ শাসনমুক্ত এমন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতভাবে নিজেদের দেশের স্বার্থে কারিগরি শিক্ষা লাভ করতে পারবে। তৎকালীন সময়ে যারা বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বা উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন,তাদের মধ্যে তৎকালীন আইনজীবী তারকনাথ পালিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য। 

◆ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ  : ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা এবং সম্পূর্ণ দেশীয় ধাঁচে একটি বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে 1905 খ্রিষ্টাব্দে 13 ই মার্চ 92 জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে।।  জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত সাহিত্য,বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানো।

◆ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা : স্বদেশী আন্দোলনের সময় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি উদ্যোগের যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তারকানাথ পালিতের  প্রচেষ্টা 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 শে জুলাই কলকাতায় " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " নামক একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। যা কারিগরি শিক্ষার বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।


◆ উপসংহার, সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে উনিশ শতকে ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের স্বার্থে ভারত তথা বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সামান্য উদ্যোগ নিলেও,পরবর্তীকালে বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে যে সমস্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল, মূলত তার মাধ্যমেই কারিগরি শিক্ষার প্রকৃত বিকাশ ঘটেছিল।



কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? | বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা

কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? | বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা

উওর : উনিশ শতকে কোম্পানি কারিগরি শিক্ষা লাভ করা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এবং এই প্রয়োজনীতা মেটাতে মূলত তারা কারিগরি শিক্ষার বিকাশে সামান্যতম উদ্যোগ নিয়েছিল। কোম্পানির শাসন কালে এদেশে মাত্র 6 টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তার মধ্যে রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করা শিক্ষার্থীরা মূলত ব্রিটিশ  কোম্পানির কেরানি বা গোলাম হিসেবে হিসেবে কাজ করতো।এবং এই ব্যাপারটা সে সময়ের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাঁরা ব্রিটিশদের এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে একটি বিকল্প শিক্ষা কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।।স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন,তাদের মধ্যে তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য। যিনি 1906 খ্রিস্টাব্দে 25 জুলাই " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন "। " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " 1955 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে " যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় " নামে পরিচিত।


◆ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন সময় বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত সম্পূর্ণ দেশীয়  উদ্যোগ এবং দেশীয় ধাঁচে তৈরি একটি বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগে নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগের হাত ধরেই 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই কলকাতায় " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " নামক এই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। 

◆  পাঠ্যক্রম :  

• বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে দুই ধরনের পাঠ্যক্রম প্রচলিত ছিল।

•একটি ইন্টারমিডিয়েট কোর্স ছিল তিন বছরের জন্য এবং অন্যটি ছিল চার বছরের জন্য মাধ্যমিক কোর্স।

• প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ইন্টারমিডিয়েট কোর্সে পড়ার সুযোগ দেওয়া হতো । পাঠ্যক্রমের মধ্যে ছিল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং ইংরেজি শিক্ষা। 

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ ছিল- প্রিন্টিং, পেইন্টিং, ছুতার, সাবান তৈরি, খোদাই, চামড়া পাকা ইত্যাদি।

• অন্যদিকে, মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের মূল পাঠ্যক্রমের শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়া হতো। তাদের জন্য মূলত তিনটি জিনিস ছিল-

• মেকানিক্স এবং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্স, 

• ফলিত রসায়ন

• ভূতত্ত্ব

মূলত এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই বিভিন্ন শিক্ষার্থীরার বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কারিগরি শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার লাভের সুযোগ পেত।


◆ কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি : দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো উন্নতি সাধনের জন্য 191প খ্রিস্টাব্দে " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট "  " বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ " এর সঙ্গে মিলে যায়। এবং এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে গিয়ে " বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুল " নাম গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে 1928 খ্রিস্টাব্দের বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় " কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি "

◆ শিক্ষাদান : বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ,কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি তে মিলে যাওয়ার পর সেখানে পদার্থবিদ্যা,রসায়ন প্রযুক্তি,শিল্প প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করেছিল। যেখানে বহু ছাত্র-ছাত্রী কারিগরি শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিল।

◆ জার্নাল প্রকাশ : কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীরা " টেক " নামক একটি জার্নাল প্রকাশ করেছিল। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তারা স্বদেশী আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন, যারা সেই সময় জাতীয় শিক্ষা প্রসারের স্বপ্ন দেখেছিলেন।


◆ উপসংহার : সুতরাং 1906 খ্রিস্টাব্দে তারকানাথ পালিতের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মূলত বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সময়ে গ্রহন করা বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। ফলে কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় এই বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। এখান থেকে বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা লাভ করে, তারা স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। 


বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে একটি টীকা লেখ | বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে বসু বিজ্ঞান মন্দির এর ভূমিকা


বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে একটি টীকা লেখ | বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে বসু বিজ্ঞান মন্দির এর ভূমিকা
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


Table Of Contents 

• বসু বিজ্ঞান মন্দির কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
• বসু বিজ্ঞান মন্দির কোথায় অবস্থিত?
• বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতীক কি?
• বসু বিজ্ঞান মন্দির কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
• বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
• বসু বিজ্ঞান মন্দিরের জার্নাল 
• বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কী কী বিষয়ে গবেষণা করা হতো?
• বসু বিজ্ঞান মন্দিরের কিছু সাফল্য।
• বিজ্ঞান গবেষণায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ভূমিকা

বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে একটি টীকা লেখ | বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে বসু বিজ্ঞান মন্দির এর ভূমিকা

◆ ভূমিকা : উনিশ শতক ও বিশ শতকে সূচনায় ভারতীয়দের উদ্যোগে যে সমস্ত বিজ্ঞানচর্চার জন্য বা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুড়ে উঠেছিল,তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ছিল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত " বসু বিজ্ঞান মন্দির " বা " বোস ইনস্টিটিউট "।

◆ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা : ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর,তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের কথা ভাবেন। জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যে সমস্ত তিনি বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন, তিনি তা দূর করে এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন,যেখানে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চা করা যাবে। এই উদ্দেশ্যেই তিনি নিজস্ব অর্থ ও সংগৃহীত 11 লক্ষ টাকা অনুদানের অর্থে 1917 খ্রিস্টাব্দের 23 নভেম্বর কলকাতায় তিনি তার বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতীক ছিল বজ্র্য। 


বসু বিজ্ঞান মন্দির কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?|বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য

 বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য  : 1917 খ্রিস্টাব্দে 23 শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল একাধিক। যেমন - 

• প্রথমত,জগদীশচন্দ্র বসুর তার বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠারপ্রধান উদ্দেশ্য ছিল - বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানো। 

• দ্বিতীয়ত,তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময়ে বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে যে সমস্ত সরকারি বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন, তিনি সে সমস্ত বাধা বিপত্তি বিহীন একটি এমন একটি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে বিজ্ঞানে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে পারবে।

◆ বসু বিজ্ঞান মন্দির পরিচালনা : বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পর জগদীশচন্দ্র বসু " বসু বিজ্ঞান মন্দির " পরিচালনার জন্য এর দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন ট্রাস্টির হাতে। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন সময়ের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। যেমন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিংহ, নীলরতন সরকার, সতীশ চন্দ্র দাস,অবলা বসু প্রমুখ।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কী কী বিষয়ে গবেষণা করা হতো?

◆ গবেষণার বিষয় : বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ে গবেষণা করা হতো। সেগুলি ছিল - পদার্থবিদ্যা,উদ্ভিদবিদ্যা এবং রসায়নবিদ্যা। কিন্তু পরবর্তীকালে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গবেষণার বিষয় হিসাবে আর 4 টি বিষয় যুক্ত করা হয়।  সেগুলি ছিল - প্ল্যান্ট বায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং বায়োফিজিক্স। 


◆ জার্নাল প্রকাশ : বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ে এবং সেই সঙ্গে আরও নানা বিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য বা কথা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, বসু বিজ্ঞান মন্দির থেকে " ট্রানজ্যাকশনস " নামক একটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়।।

◆ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা কিছু সফলতা : জগদীশচন্দ্র বসুর " বসু বিজ্ঞান মন্দির " প্রতিষ্ঠার বেশকিছু সফলতা রয়েছে। যেমন - 

• জগদীশচন্দ্র বসু তার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে গবেষণা করেই প্রমাণ করেছিলেন যে, প্রাণীদের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ রয়েছে। 

• জড় ও জীবের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা করার জন্য বসু বিজ্ঞান মন্দির গবেষণা করেই সতেরোটি বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়। তার মধ্যে কেস্কোগ্রাফ ছিল একটি অন্যতম যন্ত্র। 

• জগদীশচন্দ্র বসুর - বসু বিজ্ঞান মন্দির গবেষণা করেই শম্ভুনাথ দে কলেরা রোগের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন। 


সংস্কৃত যন্ত্র বিখ্যাত কেন? অথবা সংস্কৃত যন্ত্র কি? | ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় কেন

সংস্কৃত যন্ত্র বিখ্যাত কেন? অথবা সংস্কৃত যন্ত্র কি? | ছাপাখানার ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণীয় কেন
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

উওর : উনিশ শতকে বাংলায় যে সমস্ত ছাপাখানা গড়ে উঠেছিল,তার মধ্যে একটি অন্যতম ছাপাখানা ছিল সংস্কৃত যন্ত্র। সংস্কৃত যন্ত্র নামক ছাপাখানা, তৎকালীন সময়ের দুজন বিখ্যাত পন্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। 

সংস্কৃত যন্ত্র নামক ছাপাখানাটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মদনমোহন তর্কালঙ্কার 1847 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা 62 নং আমহাস্র্ট স্ট্রীটে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 1847 খ্রিস্টাব্দে যখন সংস্কৃত যন্ত্র  শুরু হয়েছিল, তখন সংস্কৃত যন্ত্রের  মালিকানা ছিল দুজনের অর্থাৎ বিদ্যাসাগর এবং মদনমোহন তর্কালঙ্কারের। কিন্তু পরবর্তীকালে কোনো এক কারণে মদনমোহন তর্কালঙ্কার সংস্কৃত ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। 


এরপর সংস্কৃত যন্ত্রের সমস্ত মালিকানা ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একার এর হাতে চলে যায়। সংস্কৃত যন্ত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একাএ দায়িত্বে থাকার সময়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত যন্ত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা শুরু করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিখ্যাত রচনা বর্ণপরিচয় এর প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ সংস্কৃত যন্ত্র থেকেই তিনি প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া উনিশ শতকে ছাপাখানার ইতিহাসে প্রকাশিত বিখ্যাত এক গ্রন্থ ভারতচন্দ্রের " অন্নদামঙ্গল "  বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত যন্ত্র থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। এবং এভাবেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার সংস্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে এক বা একাধিক পুস্তক পুস্তিকা প্রকাশনার মাধ্যমে তিনি সংস্কৃত যন্ত্রকে কেন্দ্র করেই বিদ্যাবণিক এ পরিনত হয়েছিলেন। 


বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনীর গুরুত্ব লেখ । 
বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনীর গুরুত্ব লেখ || বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
দশম শ্রেণির বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


উঃ-উনিশ শতকে কলকাতার চোরবাগান,শোভাবাজার,  দর্জিপাড়া ,জোড়াসাঁকো প্রভৃতি স্থানে যেসব প্রকাশনা চলত তা বটতলা প্রকাশনা নামে পরিচিত। এখানে সস্তায় বিশ্ব বিচিত্র রকমের কর্মকথা ও অশ্লীল কথা যুক্ত বাংলা বই, সমসাময়িক বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক,রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনা তুলে ধরা হতো। বিভিন্ন রসাত্মক কথ যুক্ত বই ছাপা ছিল এখানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বটতলা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত পৌরাণিক ঐতিহাসিক গ্রন্থে সমকালীন বাবু সমাজসহ শিক্ষিত মানুষের জ্ঞান ও জ্ঞান পিপাসা মেটাতে সাহায্য করেছিল।


বটতলা প্রকাশনী থেকে যে সমস্ত বইপত্র ছাপা হতো, সেই সমস্ত বইপত্র খুবই সস্তায় প্রকাশিত হতো। এর কারণ ছিল স্বদেশী পেপারের ব্যবহার এবং স্বদেশী কারিগরির মুন্সিয়ানা ইত্যাদি। সেইকারণে বটতলা প্রকাশনা অল্প সময়ের মধ্যে খুব উন্নতি করতে পেরেছিল এবং বিপুল পরিমাণ পাঠক সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। বটতলা প্রকাশনী থেকে যে সমস্ত বই প্রকাশিত হতো তার চাহিদা ছিল প্রচুর পরিমাণে।


 

বাংলার মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের অবদান ছিল ? ||  দশম শ্রেণির ইতিহাস বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ক্লাস 10 বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর



উঃ-

পরিচয়ঃ বর্ধমানের বহড়া গ্রামের নিবাসী গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম বাঙালি পুস্তক বিক্রেতা, পুস্তক ব্যবসায়ী এবং মুদ্রাকার। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য একসময় কাজের খোঁজে তিনি শ্রীরামপুর মিশনারিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। শ্রীরামপুর মিশনারীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার পর, তিনি সেখানে মুদ্রণ সম্পর্কে অনেক কিছু শেখেন এবং প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এভাবেই গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের শ্রীরামপুর মিশনারীদের সঙ্গে মুদ্রণ শিল্প এবং প্রকাশনার দুনিয়ায় প্রথম জীবন শুরু হয়। 


বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ভূমিকাঃ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য শ্রীরামপুর মিশনারীদের সঙ্গে কাজ করে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা হয়েছিল শ্রীরামপুর মিশনারীদের ছাপাখানার বিকাশের জন্য। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি নিজ উদ্যোগে ছাপাখানার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।

বিভিন্ন পুস্তক এবং পত্রিকা প্রকাশঃ  শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রেসের একজন কর্মীর সঙ্গে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের মতভেদের কারণে তিনি শ্রীরামপুর প্রেস ত্যাগ করেন। তিনি শ্রীরামপুর প্রেস ত্যাগ করেন। কলকাতা থেকে প্রেস নিয়ে নিজের গ্রাম বহড়ায় চলে আসেন । তাঁর প্রেসের নাম ছিল 'বাঙলা গেজেটি যন্ত্রালয়'।।  থেকেই তিনি সাপ্তাহিক 'বাঙলা গেজেটি' পত্রিকা প্রকাশ করতেন।


অবদানঃ 1816 সালে ফেরিস এন্ড কোম্পানি প্রেস থেকে গঙ্গো কিশোর কবি ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যটি সচিত্র ছাপেন। এটি ছিল বাঙ্গালীদের সম্পাদনায় ছাপা প্রথম সচিত্র বই।  অন্নদামঙ্গল ছাড়াও পরবর্তী সময়ে তিনি "দ্রব্যগুন","চিকিৎসার্ণব "শ্রীমদভাগবতগীতা "ইত্যাদি বইও প্রকাশ করেন। তার উদ্যোগে উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে বহু বাঙালি বই ছাপার সাহস পায় এবং মুদ্রণ শিল্পের সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে।

গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত বাঙ্গাল গেজেট নামের বাংলা ভাষায় মুদ্রিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রথম বাংলা সংবাদপত্র বলে অনুমিত হয়। পত্রিকাটি ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।[২] এই কাজে হরচন্দ্র রায় নামে আর এক ব্যক্তি তার সহযোগী ছিলেন। 'বাঙ্গালা গেজেট' অধিককাল প্রকাশিত হয়নি। পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেলে গঙ্গাকিশোর তার মুদ্রণযন্ত্রটি নিজের গ্রামে নিয়ে যান। তার মৃত্যুর পরেও এটি বর্তমান ছিল এবং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির বই এতে মুদ্রিত হয়েছিল।


আশাকরি যে, দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের' (wbbse class 10 history question answer chapter 5 in Bengali )  অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্নের উওর (WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ), গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ) এবং গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer and notes ) বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion Chapter 5 শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের উপকারে আসবে।।

Tags : 

ক্লাস টেনের বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | দশম শ্রেণির বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | মাধ্যমিকের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | wb class 10 history question answer  | wb class 10 history short question answer | wb class 10 history saq question answer | wb class 10 history mcq question answer | Madhyamik History question and answer | Madhyamik History question and answer Bengali | history question answer | history saq | history question answer | class 10 history short question answer | class 10 history question answer | history question answer | class 10 history question answer | class 10 history notes | wb class 10 history notes in Bengali | wb class 10 history question answer chapter 5 | wb class 10 history chapter 5 question answer in Bengali | history notes | class 10 history suggestion | class 10 history question answer | class 10 history notes | Madhyamik history suggestion | history test

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top