WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion 2023 || মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023

0

  

WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion 2023 || মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023
 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের  প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023

আজের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (WBBSE Class 10 History Question Answer & Notes in Bengali) অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ), গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ) এবং গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer and notes ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আশাকরি যে, WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion 2023 || মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 এর বাইরে পরিক্ষায় এর বাইরে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion 2023 || মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023

প্রশ্নঃ বিপ্লব বলতে কী বোঝায়???


উওরঃ বিপ্লব বলতে কী বোঝায় এমন একটি প্রকিয়া, যার মাধ্যমে কোনো প্রচলিত ব্যবস্থা, বা সমাজের কোনো একটি জিনিস, যেমন - রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা যেকোনো সামাজিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটে যাওয়াই হলো বিপ্লব।। যেমন - ফরাসি বিপ্লব।।

প্রশ্নঃ বিদ্রোহ কাকে বলে?

উওরঃ যখন কোনো অঞ্চল বা দেশে কোনো অন্যায় আদেশ, শাসন বা যেকোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সেই অঞ্চলের জনগণ সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বা সেই জনস্বার্থবিরোধী বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সেই বিষয়টির বিরোধিতা করে,তখন তাকে বলা হয় বিদ্রোহ। যেমন চুয়ার বিদ্রোহ।

প্রশ্নঃ অভ্যুত্থান কাকে বলে?


উওরঃ যখন কোনো অঞ্চল বা দেশের সাধারণ জনগণ বা অত্যাচারিত জনগণ সমষ্টিগত ভাবে বা সামাজিক ভাবে কোনো অন্যায় বিষয়কে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তার অবসান ঘটানোর জন্য বিদ্রোহের প্রধান বাড়ায়, এবং অবস্থা অসহনীয় হলে দলবদ্ধভাবে সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন সেই বিষয়টিকে বলা হয় অভ্যুত্থান। যেমন নীলচাষীদের গণ অভ্যুত্থান।। 

প্রশ্নঃ চুয়ার কারা বা কাদের চুয়ার বলা হতো?

উত্তরঃ মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল অঞ্চলে বসবাসকারী কৃষিজীবি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল অতি সহজ সরল আদিবাসীদের ইংরেজরা,উচ্চবর্ণের জমিদার, মহাজনেরা এবং বহিরাগত সুদখোরেরা ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে চুয়ার বলে ডাকতো।। 


চুয়ার সম্প্রদায় বেশিরভাগ মানুষই বনজঙ্গলে উপর নির্ভর করে থাকতেন। কখনো কখনো তারা পাইকান বাহিরে লেঠেল হিসাবে এবং কিছু চুয়ার পাইকান জমিতে চাষ বাস করে নিজেদের জীবন চালাতো। জঙ্গলমহল অঞ্চলে বসবাসকারী এই সাধারণ মানুষগুলো নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ হওয়ার উচ্চবর্ণের লোকেরা তাচ্ছিল্যে এবং ঘৃণার সঙ্গে এদের চুয়ার বলে ডাকতো।।

প্রশ্নঃ পাইকান জমি কাকে বলে??
অথবা,
প্রশ্নঃ পাইকান জমি বলতে কী বোঝায়??


উওরঃ পাইকান জমি বলতে জমিদারদের দান করা নিষ্কর জমিকে বোঝানো হতো। বাঁকুড়া জেলা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ও মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী চুয়ারদের মধ্যে কিছু চুয়ার জমিদারদের অধীনে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করতো।
জমিদাররা অধীনে কাজ করা সেই চুয়ার বা নিরাপত্তারক্ষীদের নগদ অর্থ দেওয়ার বদলে জমিদার কিছু খাস জমি বা নিষ্কর জমি ভোগ করতে দিত।
জমিদারদের দান করা সেই নিষ্কর জমিকেই পাইকান জমি বলা হতো।

প্রশ্নঃ অরণ্য আইন কী??

উওরঃ ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনজ সম্পদ সরকারি ভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য এবং ভারতীয় অরণ্যের উপর ব্রিটিশ সরকারের অধিকার খাটানোর উদ্দেশ্য, এবং ভারতীয় অরণ্যকে সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এবং ১৮৭৮  খ্রিষ্টাব্দে যে দুটি আইন প্রনয়ন করেছিল, সেই আইন দুটিকেই - "অরণ্য আইন বলা " হয়।।

প্রশ্নঃ জঙ্গলমহল কাকে বলা হয়??


উওরঃ  বর্তমান মেদিনীপুর জেলার চুয়ার অধ্যুষিত অঞ্চল একসময় ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। মেদিনীপুর জেলার চুয়ার অধ্যুষিত অঞ্চল জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থা থাকার জন্য, মেদিনীপুরের  চুয়ার অধ্যুষিত সেই অঞ্চলকে জঙ্গলমহল  নাম দেওয়া হয়েছিল।।

প্রশ্নঃ কোল বিদ্রোহের দুটি কারন লেখো।।

উওরঃ ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের কোল বিদ্রোহ হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো -
প্রথমতঃ ছোটনাটনাগপুর অঞ্চলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উচ্চহারে রাজস্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে কোলদের সেই বিঢ়াট অংকের রাজস্ব শোধ করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

দ্বিতীয়তঃ কোলরা মনে করতো যে অরণ্যের উপর তাদের জন্মগত অধিকার। তাই কোলদের অরণ্যে বা তাদের জীবনে ব্রিটিশ সরকারের কোনো প্রভাব না নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কোলদের সেই জন্মগত অরণ্যের অধিকারে এবং কোলদের সামাজিক ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করেছিল। এবং ব্রিটিশদের এই কাজ কোলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। এবং এরকম আরও অনেক কারণে কোলরা ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়ে দেয়।।।

প্রশ্নঃ দিকু কী?? -
অথবা,
কাদের দিকু বলা হতো??


উওরঃ আদিবাসীদের অধ্যুষিত অঞ্চলে দিকু বলতে বহিরাগত সুদখোর, ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের বোঝানো হয়। প্রধানত আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল যেমন চুয়ার, সাঁওতাল বা কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে কোনো বহিরাগত সুদখোর, ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের আদিবাসীদের লোকেরা দিকু বলে ডাকতো হতো।

প্রশ্নঃ ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল গুলি কি কি??

উওরঃ ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে সাঁওতালরা ব্যর্থ হলেও, এই বিদ্রোহের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল। যেমন-
প্রথমতঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে সরকার সাঁওতাল জন্য সাঁওতাল পরগণা নামের একটি পৃথক স্বতন্ত্র সংরক্ষিত এলাকা গঠন করেছিল।
দ্বিতীয়তঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের পর সরকার সাঁওতাল পরগনায় সাঁওতাল এলাকায় সুদের হার নির্দিষ্ট করে দেয় এবং সেইসঙ্গে সাঁওতাল পরগনায় বহিরাগত সুদখোর, ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।।

প্রশ্নঃ উলগুলান বলতে কী বোঝায়??
অথবা,
মুন্ডা উলগুলান কী??


উওরঃ উলগুলান শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা বা প্রবল বিক্ষোভ।।
সুগান মুন্ডার পূত্র এবং ধরতি আবা নামে পরিচিত বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৮-৯০ খ্রিষ্টাব্দে হাজার হাজার মুন্ডারা ইংরেজ ও জমিদার শাষন ও শোষণের বিরুদ্ধে যে ভয়ংকর বিদ্রোহ শুরু করেছিল, জমিদার এবং ইংরেজদের বিদ্রোহে মুন্ডাদের সেই বিদ্রোহই উলগুলান নামে পরিচিত।। 

প্রশ্নঃ মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল??


উওরঃ ১৮৯৯-৯০ খ্রিষ্টাব্দে বীরসা মুন্ডার কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুন্ডা বিদ্রোহের শুরু করেছিলেন। মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ছিল -
প্রথমতঃ যেহুতু  ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা সমাজের নিয়ম কানুন এবং তাদের সাধারণ জীবনে হস্তক্ষেপ করে তাদের স্বাভাবিক জীবন- যাপনে বাধা সৃষ্টি করেছিল, তাই মুন্ডারা সেই বিদ্রোহের মাধ্যমে একটি স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
দ্বিতীয়তঃ মুন্ডাদের জন্য এমন একটি স্বাধীন মুন্ডা সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে ব্রিটিশ সরকারের কোনো অধিকার থাকবে না।। অর্থাৎ মুন্ডা সমাজে ব্রিটিশদের শাসনের অবসান ঘটানো।

তৃতীয়তঃ ইংরেজ সরকার মুন্ডাদের খুৎকাঠি প্রথার অবসাদ ঘটিয়েছিল। তাই মুন্ডারা তাদের বিদ্রোহের মাধ্যমে নিজস্ব খুৎকাঠি প্রথা ফিরে পেতে চেয়েছিল।

প্রশ্নঃ খুৎকাঠি প্রথা কী বা খুৎকাঠি প্রথা বলতে কী বোঝায়??

উওরঃ খুৎকাঠি প্রথা হলো
মুন্ডা সমাজে সাধারণত কোনো একটি জমির মালিক একজন না হয়ে হতো অনেক জন। অর্থাৎ একটি জমির যৌথ মালিকানা। জমির মালিকানা সংক্রান্ত ব্যবস্থা মুন্ডা সমাজে প্রচলিত সেই ব্যবস্থাই খুৎকাঠি প্রথা নামে পরিচিত।


প্রশ্নঃ ফরাজি আন্দোলন কি??
অথবা,
ফরাজি আন্দোলন কাকে বলে??

উত্তরঃ হাজি শরিয়ৎউল্লাহ মুসলিম ধর্মের শুদ্ধিকরণ এবং ধর্মকে পবিত্র করে দার উল হাবর কে দার উল ইসলামে পরিণত করার জন্য যে আন্দোলনকে শুরু করেছিলেন, তাই ফরাজি আন্দোলন নামে পরিচিত। ফরাজি শব্দের অর্থ হলো ইসলাম নির্ধারিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য।। হাজী শরীয়ত উল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি ভারতবর্ষে ইসলামের শুদ্ধিকরণ করে ভারতবর্ষকে দার উল হাবর অর্থাৎ বিধর্মীর দেশ থেকে দার উর ইসলাম বা ইসলামের দেশে পরিণত করার জন্য  ধর্মীয় আন্দোলনকেই ফরাজি নামক ধর্মীয় আন্দোলনের শুরু করেছিলেন।।

প্রশ্নঃ দুদুমিঞা স্বরনীয় কেন??


উওরঃ দুদুমিঞা ব মহম্মদ মহসিনের স্বরনীয় হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন-
• দুদুমিঞা ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রানপুরুষ হাজি শরিয়ৎ উল্লাহের পুএ, যিনি পিতার পর ফরাজি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন।।
• যখন দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে শুরু করেছিলেন, তখন ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলনের বদলে, একটি কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।। এবং এজন্যই ফরাজি আন্দোলন এক নতুন রুপ পেয়েছিল।। যার জন্য দুদুমিঞা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে এবং, ফরাজি আন্দোলনের বাকি সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।।

প্রশ্নঃ তরিকা ই মহম্মদীয়া বলতে কী বোঝা বা তরিকা ই মহম্মদীয়া কী??


উওরঃ ফরাজি আন্দোলনের মতো তরিকা ই মহম্মদীয়াও ছিল একটি মুসলিমদের ধর্মীয় আন্দোলন। তরিকা ই মহম্মদীয় আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের শুদ্ধিকরন ঘটিয়ে ইসলামের নির্দেশনমতো পবিত্র সমাজ গড়ে তোলা।। অষ্টাদশ শতকে আরব দেশে আবদুল ওয়াহাব এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে, তরিকা ই মহম্মদীয়ার উদ্দেশ্যে কোনো হিংসা বা রাজনৈতিক দিক না থাকলেও, এই আন্দোলনের আরেকটি রুপ হলো ওয়াহাবি আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক বা হিংসার দিকটি জড়িত ছিল।।

প্রশ্নঃ নীলকররা নীলচাষিদের ওপর কীভাবে অত্যাচার করতো? তা সংক্ষেপে লেখো।।


উওরঃ নীলকর সাহেবদের নীলচাষিদের দ্বারা নীলচাষ করানোটাই ছিল একপ্রকার কড়া অত্যাচার। কিন্তু সেই অত্যাচার ছাড়াও নীলকর সাহেবরা নীলচাষিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করতো। যেমন-
• কোনো চাষি নীলচাষ করতে চাইতো না, তখন ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া।
• চাষিকে গরু বাধা খুটির সঙ্গে বেধে চাবুক মারা,গবাদি পশু ছিনিয়ে নেওয়া।
• চাষির পরিশ্রম অনুযায়ী তাকে তার নায্য মূল্য না দেওয়া।
• চাষির ঘরে স্ত্রীকন্যাকেও নির্যাতন করা ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে লেখ।।


উত্তরঃ বাংলায় অর্থাৎ বারাসাতে তিতুমীর বা মির নিসার আলি কিছু অত্যাচারিত এবং নির্যাতিত মুসলিম কৃষক এবং সাধারণ জনগণদের নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।  মক্কায় হজ করতে গিয়ে বাংলার তিতুমীর বা মীর নিশার আলী সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে আসেন।। এবং সেখানে তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।এরপর তিতুমীরের বাংলায় ফিরে এসে,তার অনুগামীদের নিয়ে ওয়াহাবী আন্দোলন শুরু করেন যা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।

প্রশ্নঃ বারাসাত বিদ্রোহ কী??


উওরঃ ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রানপুরুষ ছিলেন সৈয়দ আহন্মেদের ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিতুমীর বাংলায় ফিরে এসে দরিদ্র কৃষক ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন, তা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।

প্রশ্নঃ রংপুর বিদ্রোহ কী?রংপুর বিদ্রোহের কারন কী ছিল??


উত্তরঃ রংপুর ছিল কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহ। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি দেবী সিংহের নেতৃত্বে রংপুরের কাজিরহাট,কাকিনা,ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি জায়গার কৃষকরা একত্রে মিলিত হয়ে দেবীসিংহ নামে এক অত্যাচারী ব্যক্তির শোষণের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক বিদ্রোহ ঘোষণা করে,তা রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত।। রংপুর বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল দেবীসিংহ নামে জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন অত্যাচার।  

প্রশ্নঃ পাগলপন্থী বিদ্রোহ কী??
অথবা,
পাগলপন্থী বিদ্রোহ বলতে কী বোঝায়??


উত্তরঃ পাগলপন্থী বিদ্রোহ হলো ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য উপজাতি বিদ্রোহ। উনিশ শতকে ফকির করিমশাহ নামে একজন ব্যক্তি ময়মনসিংহ জেলার সুসঙ্গ, শেরপুর  অঞ্চলে বসবাসকারী গারো উপজাতির মধ্যে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেছিলেন। গারো উপজাতি সেই  ধর্মমত গ্রহন করে পাগলপন্থী নামে পরিচিত হয়।। পরবর্তীতে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ফকির করিমশাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপুশাহের নেতৃত্বে পাগলপন্থীরা অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে শামিল হয়।। এবং পাগলপন্থীদের আন্দোলনই পাগলপন্থী বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।

প্রশ্নঃ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন?? বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ


ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1763 খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলার পর 1800 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে গিয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতা একাধিক কারণ ছিল একাধিক। যেমন -

◆ আধুনিক অস্ত্রের অভাব : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর কাছে ছিল সমস্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের কাছে সেরকম ভাবেও কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। যার সাহায্য তারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারতো।

◆ বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক পরিকল্পনার অভাব : 


একটি বিদ্রোহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্রোহের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের সেরকম কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না,যে তারা কিভাবে এই বিদ্রোহকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

◆ সঠিক নেতৃত্বের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের শুরুর দিকে ভবানী পাঠক, মজনুশাহ,দেবী চৌধুরানী প্রমুখ নেতারা থাকলেও,পরবর্তীকালে বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক নেতার অভাব হয়ে পড়ে। যার ফলে অযোগ্য নেতাদের হাতে পড়ে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।।

◆ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের জন্য। তাই প্রথম দিকে হয়তো তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের সেসব শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া। কিন্তু মনে করা হয় যে,বিদ্রোহীদের অনেকের মধ্যেই এই বিদ্রোহের লক্ষ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিলনা। 


কিন্তু অনেক সময় এটা দেখা গেছে যে, বিদ্রোহীরা ইংরেজদের বিভিন্ন কুটির আক্রমণ করে সেখানে ডাকাতি করেছে। তাই উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ডাকাত  বা দস্যু বলে অভিহিত করেছিলেন। সুতরাং সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের লক্ষ্য যদি ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করে তাদের শোষণ অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া হতো,তাহলে তারা ডাকাতি করার পরিকল্পনা কেন করতেন। তাই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের সঠিক লক্ষ্য কী ছিল তা, বলা মুশকিল।

◆ আর্থিক সমস্যা : একটি বিদ্রোহকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়।  বিদ্রোহীদের থাকা-খাওয়া,  অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সন্ন্যাসী ও ফকিরদের প্রচুর পরিমানে অর্থের ক্ষয় হয়। এবং শেষ দিকে তাদের কাছে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক অর্থ ছিলনা বলে মনে করা হয়।


◆ অন্যান্য কারণ : বিদ্রোহের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের মধ্যে নেতৃত্ব দান এবং অন্যান্য কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে আদর্শগত আত্মকলহ এবং বারংবার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে যাওয়ার পথে এসে দাড়ায়।

প্রশ্নঃ নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভূমিকা কিরূপ ছিল??

উওরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার
হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নির্ভীকভাবে নীলচাষিদের পক্ষে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নীল বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় যেভাবে নীল বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা হলো -

  
• হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও অন্যান্য খারাপ কাজ কর্মের ব্যপারগুলোও তার প্রতিকার পত্রিকায় নিয়মিতভাবে  প্রকাশ করতেন।।
• হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের করা অত্যাচারের ফলে নীলচাষীদের দুরাবস্থা তার পত্রিকার মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন।।
• হরিশচন্দর মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশ করেননি। তিনি সেই সঙ্গে নীলচাষিরা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল,সেই মামলা গুলো চালানোর জন্য হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় চাষীদের সব সময় আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছিলেন।।

প্রশ্নঃ এলাকা চাষ ও বে এলাকা চাষ কি??


উত্তরঃ এলাকা চাষ ও বেলাকা চাষ হলো নীল চাষের দুটি আলাদা আলাদা পদ্ধতি।
এলাকা চাষঃ নীলকর সাহেবরা যখন কোনো জমিদারের কাছ থেকে জমি নিয়ে সেই জমিদারের জমিতে নীল চাষ করতো, তখন নীল চাষের সেই পদ্ধতিকে বলা হতো এলাকা চাষ বা নিজ- আবাদি চাষ।
বে-এলাকা চাষঃ এলাকা চাষে নীলকর সাহেবদের বেশি মুনাফা না হওয়ায় নীলকর সাহেবরা নীল চাষের অন্য একটি পদ্ধতি বের করে বে-এলাকা চাষ নামে পরিচিত।
যখন কোনো নীলকর সাহেব কোনো  চাষীকে কিছুটা অগ্রিম অর্থ দিয়ে বা  দাদন দিয়ে তার নিজস্ব জমিতে নীল চাষ করাতো, তখন সেই নীল চাষ পদ্ধতিকে বে-এলাকা চাষ বা রায়তি বলা হত।।।

প্রশ্নঃ দাদন প্রথা কী??


উওরঃ দাদন হলো নীলকর সাহেবদের প্রদান করা অগ্রিম অর্থ। যখন কোনো নীলকর সাহেব বে-এলাকা চাষ পদ্ধতিতে কোনো চাষিকে তার নিজের জমিতে নীল চাষ করার জন্য কিছু অর্থ প্রদান করতো, তখন সেই অগ্রিম প্রদান করা অর্থকে বলা হতো দাদন। সেই দাদন প্রদানের পদ্ধতিকেই বলা হতো দাদন প্রথা।
• এই প্রথায় নীলকর সাহেব একজন কৃষককে খুবই কম টাকা অগ্রিম অর্থ দিয়ে অর্থ দিয়ে তার জমিতে নীলচাষে বাধ্য করতো।। ফলে দাদন গ্রহন করে নীলচাষ করলে নীল চাষির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যেত।।

প্রশ্নঃ নীলদর্পণ নাটকটি বিখ্যাত কেন??
অথবা
নীলদর্পণ নাটকটি থেকে কী জানা যায়??


উত্তরঃ ভারতের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস নীল বিদ্রোহের কথা সবসময়ই লেখা থাকবে। কারণ নীল বিদ্রোহ ছিল এক ব্যাপক সফল বিদ্রোহ। ১৮৫৯-৬০ খ্রিষ্টাব্দের সেই নীল বিদ্রোহকে নিয়েই রচিত হয় নীলদর্পণ নাটক। যেটি লিখেছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র।। এই নাটকটি 1860 খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।। • নীলদর্পণ নাটকটি হলো এমন একটি নাটক যেটা নীল চাষ এবং নীল চাষীদের উপর, নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে লেখা।।


• নাটক থেকে জানা যায় যে নীলকর সাহেবরা কিভাবে,নীলচাষিদের ওপর অত্যাচার করতো।।
• এই নাটক থেকে জানা যায়,নীল চাষ করার ফলে চাষিদের আর্থিক অবস্থা , মানসিক অথস্থা এবং তাদের পারিবারিক অবস্থা কতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।।
• নীলদর্পণ নাটকে সেই সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে যে কিভাবে একজন নীলকর সাহেব, একজন নীলচাষীকে নীল চাষ করতে বাধ্য করতো।। এবং সে যদি চাষ না করতো, তাহলে তাকে কতটা খারাপ ভাবে নির্যাতন করা হতো।।
মূলত এই সমস্ত বিষয়গুলি ই নীলদর্পন নাটকটি বিখ্যাত হয়ে আছে।।

প্রশ্নঃ নীল কমিশন ইন্ডিগো কমিশন কী??


উওরঃ নীল বিদ্রোহ সফল হওয়ার পর এবং নীলচাষ মোটামুটিভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে নীলচাষিদের করা বিভিন্ন অভিযোগগুলো সত্য নাকি মিথ্যা এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য এবং নীলচাষিদের নৈতিক দাবিগুলো পূরণের জন্য ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে মার্চ সরকার চাএকটি কমিশন গঠন করে যা নীল কমিশন বা ইন্ডিগো কমিশন নামে পরিচিত।। নীল কমিশনের প্রধান সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সেটন কার, আর.টেম্পেল, রেভারেন্ড সেল,  ফার্গুসন এবং চন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়।।


চুয়াড় বিদ্রোহ কী | চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য | চুয়ার বিদ্রোহের কারণ এবং ফলাফল লেখ

চুয়াড় বিদ্রোহ কী | চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য


Table Of Contents

• চুয়াড় বিদ্রোহ কি?
• চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বা প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
• দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• দ্বিতীয় পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
• চুয়াড় বিদ্রোহ কেন হয়েছিল অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?
• চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল

 

চুয়াড় বিদ্রোহ কী | চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতে যে সমস্ত উপজাতী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে 1768 থেকে 1832 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটে চলা চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম উপজাতি বিদ্রোহ।

চুয়াড় বিদ্রোহ : বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল,মানভূম জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোকেরা তাদের ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে চূয়ার বলে ডাকতো। এই চূয়াররা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু করেছিল। চুয়াড় বিদ্রোহ হয়েছিল মূলত দুটি পর্বে। একটি ছিল প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ এবং অপরটি ছিল দ্বিতীয় পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহ।

▪ প্রথম পর্বের চুয়ার বিদ্রোহ বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ নেতৃত্বে। ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ধলভুমের রাজা জগন্নাথ সিং প্রথম চুয়ার বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
▪ দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ জঙ্গলমহল সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।  দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিংহ, মেদিনীপুরের রানী শিরোমণি প্রমুখ। চুয়াড় বিদ্রোহের রানী শিরোমণি তার অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছিলেন। এজন্য তিনি মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ নামে পরিচিত ছিলেন।


চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়ার বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?

ভূমিকা : প্রত্যেকটি বিদ্রোহের পেছনে এক বা একাধিক কারণ লুকিয়ে থাকে। ঠিক সেরকমই চুয়াড় বিদ্রোহের পেছনেও একাধিক কারণ ছিল। যেমন -
◆রাজস্ব বৃদ্ধি : চুয়ারদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি কাজ এবং পশু পালন করা। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর,ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ায়দের অধীনে থাকা জমির ওপর নতুন করে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যে পরিমান ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করেছিল, জমিদার'দের পক্ষে এবং চুয়ারদের পক্ষে সেই পরিমাণ খাজনা দেওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য ছিল। এই কারণে জমিদাররা এবং তাদের পাইক চুয়াররা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা জঙ্গলমহল জুড়ে বিদ্রোহ শুরু করে।

◆জমি দখল : চুয়াড় বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ছিল পাইকদের জমি দখল করা। আদিবাসী চুয়ারা স্থানীয় জমিদারদের লেঠেল বাহিনীতে পাইক হিসেবে কাজ করতো।। তার বদলে তারা জমিদারদের কাছ থেকে কিছু নিষ্কর জমি ভোগ করতে,যাকে বলা হতো পাইকান জমি। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পাইকদের সেই জমি ওপর থেকে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং সেই জমির উপর নতুন করে ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করতে শুরু করা হয়।


অত্যাচার : চুয়ারদের অধীনে থাকা জমি গুলির উপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন করে যে ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করেছিল.সেই ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা চুয়ারদের উপর সীমাহীন অত্যাচার চালাতো। যার ফলে সেসব অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করেছিল।

◆ জীবিকার সমস্যা : চুয়াড় বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ছিল তাদের বেকারত্ব। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ারদের নিষ্ক্র জমি দখল করে নিলে এবং পাইক বাহিনী থেকে তাদের ছাড়িয়ে দিলে, অনেক চুয়ারা নিজের কর্ম হারিয়ে বেকারত্বের সম্মুখীন হয়। যার ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মূলত এসব কারণেই তারা ব্রিটিশদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। এবং একাধিক কারণে শেষ পর্যন্ত চুয়াররা বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।

চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান : দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই খুব তীব্র আকার ধারণ করলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তীব্র দমন নীতি গ্রহণ করে।। রানী শিরোমণির মৃত্যু, দুর্জন সিংহ সহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার সহ আরও নানা ধরনের তীব্র দমননীতি চালানোর ফলে এই বিদ্রোহ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই সমাপ্ত হয়।


চুয়াড় বিদ্রোহের ফলাফল -

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগঠিত চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও, চুয়াড় বিদ্রোহের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন -
▪ চুয়াড় বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ারদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সরকার সেখানকার শাসন ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন ঘটায়।  ব্রিটিশ সরকার বিষ্ণুপুর শহরটাকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করে।
▪ চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিরক্ষর আদিবাসী চুয়ারদের করা প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত উপজাতি বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালের অন্যান্য উপজাতি বিদ্রোহের গুলির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
▪ চুয়াড় বিদ্রোহে জমিদার ও কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হয়েছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়,ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে 1768 খ্রিস্টাব্দে প্রথম পর্বের এবং 1798-99 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ভারতীয় উপজাতি বিদ্রোহের মধ্যে একটি অন্যতম কৃষক বিদ্রোহ।


রংপুর বিদ্রোহ কাকে বলে | রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল | রংপুর বিদ্রোহের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য 

রংপুর বিদ্রোহ কাকে বলে | রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল | রংপুর বিদ্রোহের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য
প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর


বিষয় : 

• রংপুর বিদ্রোহ কী? অথবা রংপুর বিদ্রোহ কাকে বলে? 
• রংপুর বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল? বা রংপুর বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?
• রংপুর বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?
• রংপুর বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন? বা রংপুর বিদ্রোহ কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
• রংপুর বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য
• রংপুর বিদ্রোহের এলাকা
• রংপুর বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল
• রংপুর বিদ্রোহের কথা কোন পত্রিকা থেকে জানা যায়? 

 

রংপুর বিদ্রোহ কাকে বলে | রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল | রংপুর বিদ্রোহের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য 

ভূমিকা : গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন্ট হেস্টিংসের আমলে দেবীসিংহ নামে একজন ব্যক্তি 1781 খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস এর কাছ  থেকে বা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে এদ্রাকপুর,দিনাজপুর এবং রংপুর সহ আরো কিছু কিছু অঞ্চলে খাজনা আদায়ের অধিকার লাভ করে। খাজনা আদায়ের অধিকার লাভের পর‍, দেবী সিংহ খুব উচ্চহারে খাজনা আদায় করার জন্য কৃষক ও জমিদারদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার করতো। দেবী সিংহের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্য দেবী সিংহের বিরুদ্ধে কৃষকরা 1783 খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ শুরু করেছিল,তাই রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত। 

রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল? বা রংপুর বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?

দেবী সিংহের বিরুদ্ধে  রংপুর বিদ্রোহের কারণ ছিল একাধিক। যেমন - 

• প্রথমতঃদেবীসিংহ কৃষকদের ওপর নানা ধরনের কর আরোপ করতো। যেই  কর বা খাজনা শোধকরা কৃষকদের পক্ষে সম্ভব হতো না। 

• দ্বিতীয়তঃ দেবী সিংহ কৃষকদের ওপর যে পরিমাণ কর ধার্য করতো,সেই পরিমাণ কর না শোধ করতে পারলে, কৃষকদের ওপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার চালানো হতো।

• তৃতীয়তঃ দেবীসিংহ অনেক সময়ই কৃষকদের জমি বেআইনিভাবে বাজেয়াপ্ত করে নিত। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ কৃষকদের হাতে ছিল না।

• এছাড়াও বলা হয়  যে, দেবী সিংহের ঋণের বোঝা এতোই বেশি হতো যে, অনেক সময় কৃষকরা নিজের গরু-বাছুর, সব সম্পত্তি এমনকি নিজ সন্তানদের বিক্রি করেও তাদের ঋণ শোধ করতে পারত না। 

• মূলত উপরিক্ত কারণগুলোর জন্যই কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে 1783 খ্রিস্টাব্দের 18 জানুয়ারি তেপা নামক গ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেবী সিংহের বিরুদ্ধে রংপুর বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। 


◆ বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্য : রংপুর বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেবীর সিংহের অমানসিক শোষণ এবং অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া। 

◆ বিদ্রোহের সূচনা ও এলাকা :  1783 খ্রিস্টাব্দে 18 জানুয়ারি তেপা নামক গ্রামে রংপুর, এদ্রাককপুর, দিনাজপুরের জমিদার ও কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে রংপুর বিদ্রোহের সূচনা করে। এই বিদ্রোহের প্রধান এলাকার মধ্যে ছিল দিনাজপুর ও এদ্রাকপুর সহ ছিল রংপুরের - কাজিরহাট,কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থান।

◆ রংপুর বিদ্রোহের প্রধান নেতা : রংপুর বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা নুরুলউদ্দিন ও দয়ারাম শীলকে রংপুর বিদ্রোহের প্রধান নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। মূলত তাদের নেতৃত্বেই রংপুর বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা একটি স্থানীয় স্বাধীন সরকার গঠন করেছিল।

◆ বিদ্রোহের অবসান : রংপুর বিদ্রোহের সূচনার পর ব্রিটিশ বাহিনী এই বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে রংপুর বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা খুব সহজেই পরাজিত হয়। এবং নুরুলউদ্দিন এবং দয়ারাম শীলের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।


◆ রংপুর বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল : 1783 খ্রিস্টাব্দে দেবী সিংহের বিরুদ্ধে হওয়া রংপুর বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও,রংপুর বিদ্রোহের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। যেমন - 

▪ রংপুর বিদ্রোহের পর দেবীসিংহকে তার ক্ষমতা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

▪ রংপুর বিদ্রোহের পর লর্ড কর্নওয়ালিস ইজারাদারি বন্দোবস্তের অবসান ঘটিয়ে দশসালা বন্দোবস্তের চালু করেছিলেন। 

▪ রংপুর বিদ্রোহ মূলত ভারতের পরবর্তী কৃষক বিদ্রোহ গুলির ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ইত্যাদি। 

◆ রংপুর বিদ্রোহের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য : 

▪ রংপুর বিদ্রোহ ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ। 

▪ রংপুর বিদ্রোহ হিন্দু-মুসলিম কৃষকরা জাতি-ধর্ম ভুলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিল।।

▪ বিদ্রোহে কৃষকদের পাশাপাশি কিছু জমিদাররাও বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল। 

রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কিত কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : 

1- রংপুর বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

উওর : 1783 খ্রিষ্টাব্দে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।

• রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?

• উওর : ওপরে দেখো

• রংপুর বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?

• উওর : রংপুর বিদ্রোহ হয়েছিল মূলত দিনাজপুর, এদ্রাকপুর ও রংপুরের বেশকিছু অঞ্চলে।

• রংপুর বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?

• উওর : রংপুর বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন নুরুলউদ্দিন এবং দয়ারাম শীল

• রংপুর বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য।

• রংপুর বিদ্রোহের কথা কোন পত্রিকা থেকে জানা যায়

• উওর : সমাচার চন্দ্রিকা নামক পত্রিকা থেকে রংপুর বিদ্রোহের কথা জানা যায়।


কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 


কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 

উওর : ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সরকারের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতীয় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে কোন বিদ্রোহ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য উপজাতি বিদ্রোহ। কোলরা ছোটনাগপুর মালভূমি, সিংভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস করতো। কোলরা আবার হো, মুন্ডা, ওরাও  প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। 1831 খ্রিস্টাব্দের রাচি জেলায় ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের মাত্রা অনেক গুন বেড়ে যায়। যার ফলে কোলদের ওপর হওয়া হওয়া,ব্রিটিশ সরকারের নানা ধরনের শোষন,অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে 1831 খ্রিস্টাব্দে তারা " কোল বিদ্রোহ " শুরু করেছিল। এই বিদ্রোহের পেছনে তাদের নানা কারণ ছিল। যেমন -

কোল বিদ্রোহের কারণ -

◆ অন্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত : অন্যান্য উপজাতিদের মতো কোলরাও এটা মনে করতো যে,অরন্যের উপর তাদের চিরাচরিত অধিকার রয়েছে। আর তারা সেই চিরাচরিত অধিকার অনুযায়ী কোলরা অরণ্যেকে নিজেদের মতো করেই ব্যবহার করতো। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর কোলদের কাছ থেকে তাদের চিরাচরিত অরন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ফলে কোলরা আগে যেভাবে অরণ্যেক নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতো, ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর কোলতা আর নিজেদের মতো করে অরণ্যেকে ব্যবহার করতে পারত না। যার ফলে কোলরা ব্রিটিশ শাষনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।


◆ রাজস্ব বৃদ্ধি : ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার আগে কোলদের মধ্যে এমন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল যে, কোলরা অরণ্য থেকে জঙ্গল সাফ করে যেকোনো জমি উদ্ধার করে সেখানে তারা নিজেদের মতো করে চাষবাস বা কৃষি মকাজ করতে পারবে। এবং তার জন্য তাদের কোনো রকম খাজনা বা ট্যাক্স কাউকে দিতে হবে না।কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর এবং নতুন ভূমি রাজস্ব নীতির ফলে তাদের উদ্ধার করা জমির উপর সরকার ট্যাক্স বসায়। যার ফলে তাদের উদ্ধার করা জমিতে চাষ করার জন্য প্রতিবছর সরকারকে নগদ অর্থে খাজনা দিতে হতো। কিন্তু এই খাজনার পরিমাণ অনেক সময় এমন হয়ে যেত যে, কোলরা কিছুতেই সেউ খাজনার পরিমাণ মেটাতে পারতো না। যার ফলে কোলদের বিভিন্ন আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

◆ জমি হারানো : জমিতে চাষ করার জন্য কোলদের উপর যে খাজনা ধার্য করা হতো, কোলরা যদি কোনো কারণে সেই পরিমাণ খাজনা সরকারকে অথবা জমিদারদের দিতে না পারতো, তাহলে কোলদের কাছ থেকে তাদের নিজস্ব জমি অনেক সময় কেড়ে নেওয়া হতো। এবং এর তাদের বিরুদ্ধে তারা কোনো প্রতিবাদও করতে পারতো  না। অথবা প্রতিবাদ করলেও তারা তাদের জমি ফিরে পেত না। 

◆ ব্যবসায়ীদের শোষণ : ব্রিটিশ সরকার যখন নগদ অর্থের খাজনা প্রদানের নিয়ম চালু করায়, কোলরা সেই পরিমাণ খাজনা মেটানোর জন্য নিজেদের ফসল যখজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে নগদ অর্থ আদায় করতে যেত,,তখন ব্যবসায়ীরা তাদের নানা ভাবে প্রতারিত করতো। ফলে কোলরা নিজেদের অনেক পরিমাণ ফল দিয়েও সেই পরিমাণ অর্থ লাভ করতে পারত না,,যে পরিমাণ অর্থ তাদের দরকার। সেই সময়কার বেশিরভাগ কোলরাই নিরক্ষর হওয়ার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের প্রাপ্ত অর্থের অনেক টাকাই কম দিত।  কিন্তু তারা এই জিনিস গুলো বুঝতেই পারতো না।


◆ মহাজনদের শোষণ : আর্থিকভাবে শোষণ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সেই সময়ে মহাজনরাও অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। মহাজনরা কোলদের নগদ ঋণ প্রদান করতো। কিন্তু সেই ঋনের বার্ষিক সুদের হার হতো খুবই বেশি। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ঋনের পরিমাণ মতো কয়েক গুণ বেড়ে যেত। আর যখন সেই ঋণ শোধ করার সময় আসতো, তখন কোলরা কিছুতেই সেই ঋণের বোঝা কাটিয়ে উঠতে পারতোনা। যার ফলে কোলদের চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। তখন এই আর্থিক অবস্থা কাটাতে কোলরা নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করে দিলেও,তারা কিছুতেই সেই ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না। 

◆ আফিম চাষে বাধ্য করা : কোল বিদ্রোহের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো কোলদের আফিম চাষে বাধ্য করা। কোলদের একটি ঐতিহ্য বিরোধী কাজ হলো আফিম চাষ। যা তারা কিছুতেই করতে চাইত না।  কিন্তু সেই সময় তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আফিম চাষে বাধ্য করা হয়। যার ফলে কোলদের ঐতিহ্য আঘাত করা হয়।  এবং এর ফলে কোলরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।

◆ শারীরিক অত্যাচার : উপরিক্ত নানা কারণ ছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্মাণ কারণ হলো কোলদের ওপর করা নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার। জমিদার, ইংরেজ কর্মচারী এবং বহিরাগত ব্যবসায়ী, মহাজনরা কোলদের ওপর নানা কারণে শারীরিক অত্যাচার করতো। কোন উপজাতির পুরুষের পাশাপাশি কোল রমনী বা মেয়েদের ওপরেও নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করা হতো।


উপসংহার : উপরিক্ত নানা কারণ ছাড়াও আরো অন্য কিছু কারন যেমন- বিভিন্ন ধরনের কর, উপকর, সরকারের করের উপর আরও অতিরিক্ত কিছু কর এবং অন্যান্য নানা অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোলরা 1831 খ্রিস্টাব্দের বুদ্ধ ভগত,জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে জমিদার,ব্রিটিশ সরকার ও মহাজনদের নানা শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে " কোল বিদ্রোহ " শুরু করেছিল। 

কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল 

ভূমিকা ; 1831 খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধ ভগত,জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে কোল বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করলেও, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে কোলরা হার মানতে বাধ্য হয়।  বিদ্রোহের প্রধান নেতাদের মৃত্যুর মাধ্যমে কোল বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়ে গেলেও,কোল বিদ্রোহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখা গিয়েছিল। যেমন-

◆ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি গঠন : কোল বিদ্রোহের পর সরকার কোলদের পৃথক একটি ভূখণ্ড গঠনের ব্যাপারটি বুঝতে পারে। এবং সেই কারণে 1834 খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কোলদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামক একটি পৃথক ভূখণ্ড গঠন করে। 

◆ জমি ফেরত  : কোল বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ছিল কোলদের নিজস্ব জমি কেড়ে নেওয়া।  কিন্তু কোল বিদ্রোহের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোলদের কাছে থেকে যে সমস্ত জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলো তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।। 

এবং এই সিদ্ধান্তের হাত ধরেই ব্রিটিশ সরকার সরকারিভাবে কোলদের কিছু জমি ফিরিয়ে দেয়।।


◆ অসাধু ব্যবসায়ী ও মহাজনদের বিতাড়ন : ব্রিটিশ সরকার কোল বিদ্রোহের পর কোলঅধ্যুষিত এলাকায় বহিরাগত ব্যবসায়ী ও মহাজনদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে কোলরা বহিরাগত ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের নানা ধরনের শোষণ এবং অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়।

◆ কোলদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা : ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর কোলদের সমাজ জটিল ব্রিটিশ নিয়মকানুন প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু কোল বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার কোল সমাজ থেকে জটিল ব্রিটিশ নিয়মকানুন সরিয়ে নেয় এবং সেখানে কোলদের নিজস্ব ধর্মীয় বা সামাজিক নিয়মকানুন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।

আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে তোমরা কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছো। এবং 1831 খ্রিস্টাব্দের কোল বিদ্রোহের কারণ কি ছিল এবং কোন বিদ্রোহের ফলাফল অথবা কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে তোমরা অনেকটা জেনে গেছো। যদি আজকের এই ব্লগ পোস্টটি তোমাদের ভালো লাগে,তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ পোষ্ট পড়ে দেখতে পারো।।


সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো | 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল কেন?  


সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো | 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল কেন?



সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো | 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল কেন

উওর : ভারতে ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন, ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতীয় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া 1855 খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম উপজাতি বিদ্রোহ।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ : 1885 খ্রিস্টাব্দে সিধু এবং কানহুর নেতৃত্বে  সাঁওতালরা ভাগনা ডিহির মাঠে জড়ো হয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা করেছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের করার পেছনে সাঁওতালদের একাধিক কারণ ছিল। যেমন - 


◆ মহাজন' ও ব্যবসায়ীদের কারচুপি : সাঁওতালদের বিদ্রোহ করার পেছনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং মহাজনদেরও হাত ছিল। নিরক্ষর বা অল্প শিক্ষিত সাঁওতালদের কিছু কিছু অসাধুরা মহাজনরা খুব বেশি বার্ষিক সুদের হারে ঋণ প্রদান করতো এবং সুদ গ্রহণ করে দেখা যেত,সেই অর্থ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। এভাবে সাঁওতালদের উপর ঋণের বোঝা প্রচুর পরিমাণ বেড়ে যেত। এছাড়াও সাঁওতালরা যখন কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনো কিছু কিনতে যেত অথবা তাদের নিজেদের জমিতে উৎপন্ন কোনো ফসল বিক্রি করতে যেত, তখন ব্যবসায়ীরা ভূল বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের সেখানেও ঠকাতে। সাঁওতালের আস্তে আস্তে এই জিনিসগুলো বুঝতে পারায় তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

◆ জমির উপর খাজনা বৃদ্ধি :ব্রিটিশ শাসন চালু হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেছিল। বাংলা,বিহার, উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পর, সাওতাতদের উদ্ধার করা জমিতেও খাজনা ধার্য করা হয়। এই ব্যবস্থার আগে সাঁওতালরা, তাদের উদ্ধার করা জমিতে চাষ করার জন্য সরকারকে কোনরকম খাজনা দিতো না।  কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ার পর তাদের উদ্ধার করা জমিতে চাষ করার জন্য অনেক খাজনা দিতে হতো। ফলে তাদের নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়।

◆ অরণ্যের ওপর থেকে অধিকার হারানো :নতুন ভূমি রাজস্ব নীতির ফলে সাঁওতালরা অন্যের উপর থেকে তাদের চিরাচরিত অধিকার হারিয়ে ফেলেছিল। সাঁওতালরা অনেক ক্ষেত্রেই অরণ্যের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। যেমন অরণ্য থেকে ফল,সংগ্রহ পশুপাখি শিকার,জমি উদ্ধার করে সেখানে বিনা খাজনায় চাষ বাস করে জীবিকা নির্বাহ করা ইত্যাদি। কিন্তু নতুন ভূমি রাজস্ব নীতির পরে সাঁওতালরা তাদের এই অধিকার হারিয়ে ফেলে। ফলে সাঁওতালরা ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।


◆ বেগার শ্রম : বেগার শ্রম বলতে বোঝায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা। অনেক ক্ষেত্রেই সাঁওতালদের বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করতে বাধ্য করা হতো। যদি তারা বেগার শ্রম দিতে রাজি না হতো,তাহলে তাদের ওপর নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করা হতো। 

◆ প্রশাসনের অসহযোগিতা :সাঁওতালদের উপর হওয়া নানা শোষণ অত্যাচার এবং অন্যায় কাজ গুলোর বিরুদ্ধে যখন তারা আইন-আদালত পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করতো বা সেসব অত্যাচারের জন্য সঠিক বিচার চাইতো, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসন নিজেদের সাথে স্বজাতি ইংরেজদের অথবা উচ্চবিত্ত জমিদার ও মহাজনদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য,উপজাতি সাঁওতালদের কোনো রকম সাহায্য করতো না। 

◆ সাঁওতালদের নিজস্ব নীতি-নিয়ম পরিবর্তন ; বিভিন্ন উপজাতি সমাজে  তাদের নিজেদের কিছু সামাজিক নিয়ম- নীতি অথবা ধর্মীয় রীতি-নীতি প্রচলিত থাকে। ব্রিটিশ শাসনের আগে সাঁওতাল দের ক্ষেত্রেও তা-ই ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের পরে সাঁওতালদের এই সামাজিক নিয়মকানুন পরিবর্তন করে সেখানে জটিল ব্রিটিশ নিয়মকানুন প্রচলন করা।। যার ফলে এখানে সাঁওতালদের আবেগে অথবা মানসিক দিক দিয়ে আঘাত করা হয়।


◆ উপসংহার : উপরোক্ত নানা কারণ ছাড়াও আরও এক বা একাধিক কারণে সাঁওতালরা এসব শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে বিদ্রোহের দিকে পা বাড়ানো কথা ভাবতে শুরু করে।। এবং শেষ পর্যন্ত যখন তাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তখন তারা সিঁদুর ও কানহু নামের দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে 1855 খ্রিষ্টাব্দের 30 শে জুন ভাগনা ডিহির মাঠে প্রায় 10,000 সাঁওতাল মিলে তাদের সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এবং এভাবেই শুরু হয় 1855 খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ।


 

মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি ছিল?



উওর : ভারতে ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন, ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে সুগার মুন্ডার পত্র বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া 1899-90 খ্রিস্টাব্দের মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম উপজাতি বিদ্রোহ।

◆ মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ : বিরসা মুন্ডা 1899 খ্রিস্টাব্দে মুন্ডাদের উপর হওয়া জমিদার,মহজন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন অত্যাচার এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য তিনি মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্য, বিরসা মুন্ডা মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা হিসেবে উঠে আসেন। বিরসা মুন্ডা এবং মুন্ডা উপজাতির এই বিদ্রোহ করার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন -


◆ খুৎকাঠি বা খুৎকঠন্তি প্রথার অবসান :খুৎকাঠি প্রথা হলো এমন একটি প্রথা যেটি প্রধানত মুন্ডা সমাজে প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী মুন্ডা সমাজে কোনো একটি জমির উপর একাধিক মুন্ডার মালিকানা প্রচলিত ছিল। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে জমির যৌথ মালিকানা। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর মুন্ডা সমাজের প্রচলিত এই খুৎকাঠি প্রথা বা জমির যৌথ মালিকানার অবসান ঘটানো হয়। এবং ব্যক্তিগত মালিকানা যাকে মাঝিহাম বলা হতো,তার প্রতিষ্ঠা করা হয়।ব্যক্তিগত মালিকানা সৃষ্টি হওয়ায়, মুন্ডাদের প্রত্যেককে নিজের জমির জন্য অধিক পরিমাণে খাজনা দিতে হতো। ফলে মুন্ডাদের রকম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

◆ বেগার শ্রম : বেগার শ্রম বলতে সংক্ষেপে বোঝায় বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করা। নিরক্ষর অথবা অল্পশিক্ষিত মুন্ডাদের নানারকম কর অথবা ঋণের বোঝা চাপিয়ে বিভিন্ন সময়ে জমিদাররা এবং অনেক সময় ইংরেজ কর্মচারীরাও, নিজেদের হয়ে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করতো। যদি মুন্ডারা কোনো কারণে বেগার শ্রম দিতে না চাইতো, তাহলে তাদের কপালে থাকতো বিভিন্ন রকম শারীরিক অত্যাচার।

◆ জমির দখল : ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর অনেক সময় এমনও হয়েছে যে,নিরীহ বা অল্পশিক্ষিত কৃষিজীবী মুন্ডাদের তাদের নিজস্ব জমি অর্থাৎ যে জমিগুলো তারা জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিল,সেই জমিগুলো বাইরের লোকেরা এসে দখল করে নিচ্ছে। এবং তার বিরুদ্ধে মুন্ডারা কোনো প্রতিবাদ ই করতে পারছে না।


◆ ধর্ম রূপান্তর : মুন্ডা বিদ্রোহের পেছনে খ্রিস্টান মিশনারীদেরও ভূমিকা ছিল। খ্রিস্টান মিশনারীরা নানারকম প্রলোভন বা ধর্মের ভয় ইত্যাদি দেখিয়ে সহজ সরল মুন্ডা সমাজের মানুষদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকে।

◆ মুন্ডা সমাজের আইন-কানুন পরিবর্তন : অন্যান্য উপজাতি গুলির মতো মুন্ডা সমাজেও তাদের কিছু নিজস্ব ধর্মীয় আইন কানুন অথবা সামাজিক নিয়ম নীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর, ইংরেজরা মুন্ডা সমাজেরতাদের নিজস্ব আইন কানুন সরিয়ে সেখানে জটিল ব্রিটিশ শাসনের আইন কানুন প্রবর্তন করে। যার ফলে এভাব্ব মুন্ডাদের মানসিক দিক থেকে আঘাত করা হয়।

◆ মুন্ডাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা :অন্যান্য নানা অত্যাচার ছাড়াও, মুন্ডাদের  সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও করা হয়েছিল। ইউরোপীয়রা মুন্ডাদের নানা রকম ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে এবং ভালো মজুরির বিনিময়এ আসামের চা বাগানে নিয়ে যায়। এবং এরপর সেখানে তাদের কাজ করানো শুরু হয়।  কিন্তু আসামের চা বাগানে আসার পর সেখানে তাঁদের অমানবিক খাঁটনি করানো হতো। এবং তার পরেও চলছতো তাদের ওপর নানা রকম শারীরিক অত্যাচার।

উপসংহার : উপরিক্ত নানা শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে বিরসা মুন্ডা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। বিরসা একাই মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা হিসেবে এগিয়ে আসে। এবং তার নেতৃত্বেই মুন্ডারা ব্রিটিশ শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা বা প্রবল বিক্ষোভ নামের উলগুলান শুরু করে।


মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কি ছিল? | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কি ছিল? | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?

উওর : মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কি ছিল অথবা মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল,তা আমরা মুন্ডা বিদ্রোহের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করলেই বুঝতে পারি। বিরসা মুন্ডার " মুন্ডা " বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য গুলির মধ্যে ছিল -
• মুন্ডাদের জন্য একটি স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করা।
• মুন্ডা সমাজে ব্রিটিশ নিয়মকানুন সরিয়ে তাদের প্রচলিত নিয়ম কানুন পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা।
• মুন্ডাদের উপর থেকে জমিদার এবং মহাজনদের অত্যাচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
• মুন্ডা সমাজের প্রচলিত জমির যৌথ মালিকানা অথবা খুৎকাঠি প্রথা পুনরায় ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।

মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল গুলি লেখো।


মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল গুলি লেখো

ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রায় 6000 মুন্ডারা বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 1899 খ্রিষ্টাব্দের 24 শে জানুয়ারি মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। কিন্তু 1900 খ্রিষ্টাব্দের 9 ই জানুয়ারি, তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করা মুন্ডারা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ সেনাবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত হয়। বিদ্রোহের শেষে এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা বিরসা মুন্ডা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং রাচি জেলে তিনি তার প্রাণ ত্যাগ করেন। এবং বিরসা মুন্ডার মৃত্যুর পর সম্পূর্ণভাবেই মুন্ডা বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু মুন্ডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও মুন্ডা বিদ্রোহের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল। যেমন -

  
◆ বেগার শ্রম বন্ধ : মুন্ডা বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের বেগার শ্রমের দিকটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। এবং এই বিদ্রোহের পর মুন্ডাদের বেগার শ্রমকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
◆ ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট : মুন্ডা বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার 1908 খ্রিস্টাব্দে ছোটনাগপুর টেন্যান্সি অ্যাক্টের দ্বারা মুন্ডা সমাজে প্রচলিত খুৎকাঠি প্রথা ফিরিয়ে দেয়।  অর্থাৎ তাদের জমি যৌথ মালিকানা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
◆ প্রশাসনের সহযোগিতা : মুন্ডা বিদ্রোহের পর সরকার মুন্ডাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের দিকে গুরুত্ব দেয় এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করে।  এবং এভাবে আদিবাসী মুন্ডারা কিছুটা হলেও আইনি অধিকার বা সহযোগিতা লাভ করে।
◆ বিরসা সম্প্রদায় : মুন্ডা সমাজে বিরসা মুন্ডাই ছিল মুন্ডাদের ধরতি আবা অর্থাৎ পৃথিবীর পিতা। মুন্ডা সমাজের বিরসা এতটাই সম্মানীয় ছিলেন যে,মুন্ডা বিদ্রোহের পর মুন্ডা সমাজে " বিরসা " নামক একটি পৃথক উপজাতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আশাকরি উপযুক্ত আলোচনা থেকে তোমরা " মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ, মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল এবং  মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি ছিল? কী ছিল - সেই সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ clear-cut ধারণা এবং প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পেয়ে গেছো।  যদি আজকের এই ব্লগ পোস্ট থেকে তোমাদের একটুও হেল্প হয়ে থাকে,তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ে দেখতে পারো।



তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো? | ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন |প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর 

তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো? | ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর


তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো? | ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন |প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর 

তরিকা ই মুহাম্মদিয়া :  তরিকা ই মুহাম্মদিয়া বা তারিখ ই মোহাম্মদিয়া কথার অর্থ হল মোহাম্মদ নির্দেশিত পথ। এই তরিকা ই মোহম্মদিয়া ছিল মুসলিম পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। খুব সংক্ষেপে বলা যায় তরিকা ই মুহাম্মদিয়া ছিল মুসলিম ধর্মের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে, মুসলিম ধর্মের শুদ্ধকিরণ করা এবং মুসলিম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করার আন্দোলন। 

আরবে ওয়াহাবি আন্দোলন : ওয়াহাবি আন্দোলন সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন আব্দুল ওয়াহাব নামে একজন জনৈক ব্যক্তি।। তিনি তাঁর আন্দোলন শুরু করেছিলেন মূলত অষ্টাদশ শতকে। এবং তার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত আরবদেশে।  আব্দুল ওয়াহাব সর্বপ্রথম তরিকা ই মোহাম্মদিয়া শুরু করার জন্য তার নাম অনুসারেই তরিকা ই মোহাম্মদিয়া " ওয়াহাবি আন্দোলন " নামেই বেশি পরিচিত লাভ করেছে।

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত দিল্লির মুসলিম শন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিজের মাধ্যমে। ওয়ালীউল্লাহ এবং তার পত্র আজিজ যে উদ্দেশ্যে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেছিলেন,তা ছিল মূলত ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে সমাজকে, ইসলামদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র " কোরানের " নির্দেশ অনুসারে অর্থাৎ তরিকা ই মোহাম্মদিয়ার বা মোহাম্মদ নির্দেশিত পথ অনুসারে ধর্ম এবং সমাজকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলা। এই ছিল ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য বা কথা। কিন্তু 18 শতকের দিকে ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিন ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তাদের ওয়াহাবী আন্দোলনকে সবার মধ্যে সেরকম ভাবেও ছড়িয়ে দিতে পারেননি।। ফলে আঠারো শতকে ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলন সেরকম ভাবেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।


সৈয়দ আহমেদের সময় ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন : প্রকৃতভাবে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেছিল মুসলিম শন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিজ। কিন্তু তারা তাদের সময়এ সেরকমভাবে ওয়াহাবি আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেননি। কিন্তু ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনকে সর্বাধিক জনপ্রিয় করেছিলেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলির বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ।  সৈয়দ আহমেদ ই ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনকে সর্বাধিক জনপ্রিয় করেছিল। যার ফলে সৈয়দ আহমেদকে ভারতের ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল কথা হলো ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে সমাজকে পবিত্র করা এবং কোরানের নির্দেশ অনুসারে ধর্ম ও সমাজকে গড়ে তোলা। কিন্তু সৈয়দ আহমেদের ওয়াহাবি আন্দোলন এরকম ছিল না। তাঁর আন্দোলন ছিল মূলত পাঞ্জাবের শিখ জাতির বিরুদ্ধে।। যাকে মোটেই আন্দোলন বলা চলে না। শিখ জাতির বিরুদ্ধে  সৈয়দ আহমেদের যে বিদ্রোহ ছিল, তার সমাপ্তি ঘটে বালাকোটের যুদ্ধে।।  1831 খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহমেদের সঙ্গে শিখ জাতির বালাকোটের যুদ্ধে, সৈয়দ আহমেদ খুব বাজেভাবে পরাজিত এবং নিহত হন। এবং সৈয়দ আহমেদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার ওয়াহাবি আন্দোলনেরও সমাপ্তি ঘটে।


তিতুমীরের বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন : ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে এসে,বাংলার তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। মক্কায় হজ করতে গিয়ে তিতুমীর অর্থাৎ মীর নিসার আলী সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে আসেন এবং তার ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বাংলায় ফিরে এসে ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শ নিয়ে তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন। তার তিতুমীরের ওয়াহাবি বিদ্রোহ মূলত বারাসাত বিদ্রোহ নামেই অধিক পরিচিত ছিল। কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে যে,তিতুমীর তার বিদ্রোহ  ওয়াহাবি আন্দোলনের মোড়কে শুরু করলেও, তার এই বিদ্রোহ ছিল মূলত দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার মমহাজন' এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে। সুতরাং, যদি আমরা সেরকম ভাবে বিচার করতে চাই, তাহলে বলতে পারি যে,তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ মোটেও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল না।

 

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর


Table Of Contents :

• পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কি অথবা পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কাকে বলে?
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কবে শুরু হয়েছিল?
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কয়েকজন নেতা
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্র
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হয়
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ
• পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ কি ছিল
• কে বিদ্রোহীরাজা নামে পরিচিত?

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর

ভূমিকা : 1859 - 60 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের পর চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার বন্ধ হলেও,সেইসময় মূলত জমিদার অত্যাচারদের সেরকম ভাবেও কমেনি। 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের পর বর্তমান বাংলাদেশে বা পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলায় সাধারণ কৃষকদের উপর জমিদারদের উপর অত্যাচার নতুন করে শুরু করে। জমিদারদের শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় পাবনা জেলার কৃষকরা ১৮৭০ এর দিকে যে ভয়ংকর বিদ্রোহ শুরু করেছিল,তাই পাবনার কৃষক বিদ্রোহ নামে পরিচিত।


পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?

1870 খ্রিস্টাব্দে এই পাবনা বিদ্রোহের কারণ ছিল একাধিক। পাবনা জেলার জমিদাররা কৃষকদের উপর যে সমস্ত অত্যাচার করতো,সেই শোষন - অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়াই ছিল পাবনা কৃষক বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। মূলত যে সমস্ত কারণে পাবনা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল -

প্রথমতঃ 1859 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সরকার " দশম আইন " পাশ করেছিল। দশম আইনে হয়েছিল যে কৃষককে তার নিজের জমির মালিকানা ও পাট্টা দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারের এই আইন ঘোষণা হওয়ার পরেও,সেখানকার জমিদাররা সরকারের আইন ফাকি দিয়ে কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করায় পাবনার কৃষকরা জমিদারদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এছাড়াও কৃষকের উপর যে উচ্চহারে খাজনা বসানো হতো,সেই খাজনা না দিতে পারলেই খাজনা না দেওয়ার অজুহাতে কৃষকের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হতো।

দ্বিতীয়তঃ পাবনায় যে সমস্ত জমি গুলো  কৃষকদের অধিকারে ছিল,সেই জমিতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় জমিদাররা সেসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন কর এবং উপকর বসাতে শুরু করে। যার বলে খাজনার পরিমাণ বেড়ে যেত অনেক। সেই খাজনা মেটাতে গিয়ে কৃষকদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।


তৃতীয়তঃ এছাড়া কৃষকদের কম পরিমাণ জমি থেকে অধিক পরিমাণ খাজনা আদায় করার উদ্দেশ্যে জমির মাপেও কারচুপি করা হতো। জমিদাররা কম পরিমাণ জমিকে ভুল মাপের সাহায্যে বেশি পরিমাণ জমি হিসেবে দেখাতো। যার ফলে কম পরিমাণ জমিতেই কৃষককে অধিক পরিমাণ খাজনা দিতে হতো।

চতুর্থতঃ পাবনা কৃষকদের অর্থনীতিতে পাঠ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 1873 খ্রিস্টাব্দের আগে বাজারের পাটের মূল্য ছিল অনেকটাই ভালো। ফলে পাট বিক্রি করে পাবনার কৃষকরা অনেকটাই মুনাফা করতে পারতো। কিন্তু 1873 খ্রিস্টাব্দের পরে বাজারে পাটের মূল্য খুব বাজে ভাবে কমে যায়। যার ফলে কৃষকদের আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। এই পরিস্থিতিতে পাবনার কৃষকদের উপর যে পরিমাণ করের বোঝা ছিল,সেই কর মুকুব করার দাবি তারা জমিদারদের কাছে করে। কিন্তু জমিদাররা তাদের  খাজনা মুকুব করতে রাজি হয় না এবং তাতেই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের সূচনা হয়।

পাবনা কৃষক বিদ্রোহের নেতা : 1870 খ্রিস্টাব্দে পাবনা বিদ্রোহের দিকে কৃষকরা প্রথম পা বাড়িয়েছিল এবং 1873 খ্রিস্টাব্দে পাবনা কৃষক বিদ্রোহ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাবনার কৃষকরা জমিদারদের বেআইনি কোনো খাজনা দেবে না বলে ঘোষণা করে,তারা 1873 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে " দি পাবনা " রায়ত লিগ গঠন করে। যার প্রধান ছিলেন ঈশান চন্দ্র রায় যিনি বিদ্রোহী রাজা নামে পরিচিত ছিলেন।তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন কুদির মোল্লা ও শম্ভুনাথ পাল। ঈশান চন্দ্র রায়, কুদির মোল্লা ও শম্ভুনাথ পালের মতো নেতারা নিজেদের এলাকায় নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে সেখানে জমিদারদের শোষণ অত্যাচার থামাতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে জমিদারি নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে তারা নিজস্ব একটি পৃথক স্থানীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। বিদ্রোহীরা জমিদারদের লেঠেল বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য তারা একটি সেনাবাহিনী অথবা বিদ্রোহী বাহিনীও গঠন করেন।


পাবনা বিদ্রোহের অঞ্চল : পাবনা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সর্বপ্রথম পাবনার ইউসুফশাহী পরগনায়। পাবনা কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্র ছিল ইউসুফশাহী ইউসুফশাসী। ইউসুফশাহী
পরগনা থেকে শুরু হওয়ার পর সমগ্র পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ঢাকা,ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ, রাজশাহী প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। পাবনা কৃষক বিদ্রোহ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খুব তীব্র হয়ে উঠেছিল। পাবনা কৃষক বিদ্রোহের নানা ঘটনার কথা, সেই সময়ের নামকরা কিছু পত্রিকা বা সংবাদপত্র যেমন.- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, হিন্দু হিতৈষণী, সহচর প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত। মূলত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, হিন্দু হিতৈষণী, সহচর প্রভৃতি পত্রিকাতেই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হয়।

◆ বিদ্রোহের ফলাফল : পাবনা বিদ্রোহ সেরকম শেষপর্যন্ত পুলিশের তীব্র দমন নীতির চাপে পরে শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তাই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের সেরকম ভাবেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে একেবারেই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখা যায়নি সেটা নয়। পাবনা কৃষক বিদ্রোহীদের অন্যতম দাবী ছিল 1859 খ্রিস্টানদের প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রজাস্বত্ব অক্ষুন্ন রাখা। তাই প্রজাস্বত্ব রক্ষার জন্য 1885 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়।


তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো | বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনে তিতুমীরের ভূমিকা


তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো | বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনে তিতুমীরের ভূমিকা


তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো | বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনে তিতুমীরের ভূমিকা

Table Of Contents | আজকের বিষয়

• বারাসাত বিদ্রোহ কি বা বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কি বোঝো বা বারাসাত বিদ্রোহ কাকে বলে? বা বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন 
• বারাসাত বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন? অথবা বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?
• বারাসাত বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?
• বারাসাত বিদ্রোহ হয়েছিল কত সালে?
• তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?
• বারাসাত বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল? 
• বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কি ছিল?
• বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের তিতুমীরের ভূমিকা

বারাসাত বিদ্রোহ কি বা বারাসাত বিদ্রোহ বলতে কি বোঝো বা বারাসাত বিদ্রোহ কাকে বলে? বা বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন 

ভূমিকা : ভারতের ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত ওয়ালীউল্লাহ এবং তার পত্র আজিজ এর মাধ্যমে। কিন্তু ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় সৈয়দ আহমেদকে। মক্কায় হজ করতে গিয়ে সৈয়দ আহমেদের স্বাধীন্নে আসেন বাংলার তিতুমীর বা মীর নিসার আলী  সৈয়দ আহমেদের কাছে ওয়াহাবী আন্দোলন সম্পর্কে শুনে তিনি তাঁর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। এবং এরপর তিতুমীর বাংলায় ফিরে এসে দরিদ্র ও নির্যাতিত সাধারণ মুসলিম কৃষকদের নিয়ে তিনি তাঁল ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেন।


বারাসাত বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল? 

বারাসাত বিদ্রোহের বিস্তার : তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ছিল মূলত যশোহর, 24 পরগনা,মালদহ,রাজশাহী-ঢাকা এবং পাবনার সহ আরো বেশ কিছু অঞ্চলে। 

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের তিতুমীরের ভূমিকা | তিতুমীরের বারাসার বিদ্রোহ 

বিদ্রোহের সূচনা :তিতুমীর কৃষকদের অত্যাচারী জমিদার মহাজন' এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে তার বারাসাত বিদ্রোহ শুরু করে।  তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা বলা মুশকিল। তবে ধরা হয় যে বারাসাত বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1825 খ্রিষ্টাব্দের দিকে। তবে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ এর পরেই মূলত তার এই বিদ্রোহ মোটামুটি ভাবে তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করার পর সেখানে তার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।এরপর  মৈনুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং গোলাম মাসুমকে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করার পর, বাশের কেল্লা থেকে তিনি বাদশাহ হিসেবে নিজের কাজ করতে শুরু করেন। তিতুমীরের অনুগামীরা হেদায়াতি নামে পরিচিত ছিল। তিতুমীর যে সমস্ত অঞ্চল গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন,,সেখানে না তার অনুগামীরা ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা দেবেনা বলে ঘোষণা করে। এবং তিতুমীরকে নিজেদের পালনকর্তা হিসেবে খাজনা দিতে শুরু করে। এবং এভাবেই মূলত ধীরে ধীরে তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ শুরু হয় । 


কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে বিরোধ : বারাসাত অঞ্চলে ওয়াহাবীদের প্রভাব কম করার জন্য সেখানকার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় মুসলিমদের উপর অথবা ওহাবীদের ওপর এক ধরনের ধর্মীয় করা আরোপ করে। সেটা ছিল তাদের দাড়ির উপর আড়াই টাকা কর বৃদ্ধি করা। এই ঘটনার পর তিতুমীর ও তার অনুগামীরা কৃষ্ণদেব রায়ের প্রতি খুব বাজেভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। এবং তার ফলেই তিতুমীরের সঙ্গে কৃষ্ণদেব রায়ের সংঘর্ষ বাঁধে। 

বাঁশের কেল্লা নির্মাণ : বিদ্রোহ তিতুমীরের বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর বারাসাত,,বসিরহাটের বিভিন্ন অঞ্চলে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করেন।তিনি সেখানে নিজেকে বাদশাহ এবং  মুৈনুদ্দীনকে প্রধানমন্ত্রী এবং গোলাম মাসুদকে নিজের সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর তিতুমীর নারকেলবেরিয়া গ্রামে তিনি তার বাঁশেরকেল্লা বাসেখানে তিনি নিজের প্রাসাদ গড়ে তোলেন। এবং সেটাই হয় তার প্রধান দপ্তর। 

তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল? | তিতুমীরের বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য

তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল একাধিক. যেমন - 

◆ প্রথমত : বারাসাত বিদ্রোহ ছিল অত্যাচারিত এবং নির্যাতিত মুসলিম কৃষকদের নিয়ে। তাদের বিদ্রোহ ছিল মূলত অত্যাচারী জমিদার, মহাজনদ এবং নীলকরদের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সুতরাং তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল জমিদার, মহাজন এবং নীলকর সাহেবদের শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তিলাভ। 

◆ দ্বিতীয়তঃ অত্যাকারী জমিদার,মহাজন এবং নীলকর সাহেবদের শোষণ ও শাষন থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের বিতাড়িত করা। 


◆ তৃতীয়ত : তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ যে সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, তিতুমীর চেয়েছিল যে,সেখানে যেন শুধুমাত্র তাঁরই শাসন থাকে। অর্থাৎ তিতুমীর সেসব অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে নিজস্ব শাষন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। সেখান সেকারণেই তিতুমীর নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ সেখানে শুধুমাত্র তিতুমীরের শাসন চলবে। 

◆ চতুর্থত :জমিদার,মহাজন এবং নীলকরদের দ্বারা অত্যাচারিত ও শোষিত কৃষকদের নিয়ে তিতুমীর এমন একটি স্বাধীনরাজ গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন, যেখানে ব্রিটিশদের কোনো প্রকার শাষন অত্যাচার থাকবে না। অর্থাৎ সেটা হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন যেখানে শুধুমাত্র তিতুমীর এবং তিতুমীরের অনুগামীদের কথা চলবে।

বারাসাত বিদ্রোহের অবসান 

 তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ঠিক কবে শুরু হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে না জানা গেলেও মনে করা যে বারাসাত বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1825 খ্রিষ্টাব্দে। এবং খ্রিস্টাব্দে 1831 খ্রিস্টাব্দের 14 নভেম্বর তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের সম্পূর্ণ অবসান ঘটেছিল।জমিদার এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে বিদ্রোহ করার ফলে জমিদার এবং নীলকররা তিতুমীরের এই বারবারন্ত সহ্য করতে পারেনি। ফলে তারা যৌথভাবে সরকারের কাছে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য আবেদন জানায়।। জমিদার, মহাজন এবং  নীলকরদের কথা মেনে কথা,, লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সেনাবাহিনীকে তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ দমন করার জন্য পাঠায়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কামানের গোলায়, নারকেলবেড়িয়া গ্রামে অবস্থিত তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয় এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই তিতুমীরের মৃত্যু ঘটে । এই যুদ্ধের তিতুমীরের প্রায় 800 জনেরও বেশি অনুগামীরা বন্দি হন। এবং গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। যার ফলে তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়।


তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কি ছিল? | বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন?

ভূমিকা : অত্যাচারী জমিদার,মহাজন? এবং ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে, তিতুমীর অত্যাচারিত এবং শোষিত মুসলিম কৃষকদের নিয়ে যে বারাসাত বিদ্রোহ শুরু করেছিল তার শেষপর্যন্ত সফল হতে পারেনি। তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন -

◆ নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব :তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার এটি অন্যতম কারণ ছিল, বিদ্রোহকে কিভাবে সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বিদ্রোহীদের হাতে ছিল না। 

◆ অসহযোগিতা : তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে থেকে কোনো সাহায্য সে পায়নি। তার বিদ্রোহ ধর্মীয় মোড়কে মোড়া হলেও উচ্চবর্ণের মুসলিমরাও সেই বিদ্রোহে যোগদান করে তাকে সহযোগিতা করেনি। 

◆ জনসমর্থনের অভাব : যেকোনো একটি বিদ্রোহ শক্তিশালী হওয়ার জন্য তার চাই জনসমর্থন। কারণ জনগণের সমর্থনের মাধ্যমেই যে কোনো বিদ্রোহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।ঠিক সেরকমই তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহেরও জন সমর্থন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যেই যে পরিমাণ জনসমর্থন বারাসাত বিদ্রোহের প্রয়োজন ছিল, সেই পরিমাণ জনসমর্থন বারাসাত বিদ্রোহ লাভ করতে পারেনি।। নিম্নমানের মুসলমান সমাজের মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সমাজের মানুষই সেরকম ভাবেও অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি উচ্চবিত্ত মুসলমান সমাজও তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহে থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল। 


◆ দুর্বল বিদ্রোহ : তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এই বিদ্রোহে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সেরকম ভাবেও অংশগ্রহণ করেনি।  বিশেষ করে হিন্দু সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষজন। হিন্দু কৃষিজীবী মানুষরা এবং অন্যান্য নিম্নস্তরের মানুষরা বারাসাত বিদ্রোহ থেকে দূরে থাকায়, বারাসাত বিদ্রোহ সেরকমভাবে জোরালো হয়ে উঠতে পারেনি।

◆ আধুনিক অস্ত্রের অভাব :বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার সবচাইতে বড় কারণ ছিল তিতুমীরের কাছে সেই পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র ছিল না, যেটা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে ছিল। 1831 খ্রিস্টাব্দের 14 ই নভেম্বর যখন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার সামনে আসে এবং গোলার আঘাতে বাশেরকেলা ধ্বংস করতে শুরু করে, তখন তাদের আটকানোর জন্য তিতুমীরের কাছে সেরকম কোনো অস্ত্র ছিল না যার মাধ্যমে তিতুমীর তাদের আটকাতে পারতো। এবং আধুনিক অস্ত্রের অভাবের জন্যই তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়।


ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো | টীকা লেখ - ফরাজি আন্দোলন

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো



Table Of Contents | আজকের বিষয় 

• ফরাজি বিদ্রোহের সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা 
• ফরাজি আন্দোলন 
• ফরাজি আন্দোলনের অপর নাম কি?
• ফরাজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য 
• ফরাজি আন্দোলনের ব‍্যর্থতার কারণ বা ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন
• ফরাজি আন্দোলনের চরিত্র ও প্রকৃতি 
• ফরাজি আন্দোলনের প্রধান নেতা 
• ফরাজি আন্দোলনের অঞ্চল 
• ফরায়েজী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল কোথায়? 
• ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয়
পুনর্জাগরণের আন্দোলন ছিল? 
• ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় আন্দোলন ছিল? 
• ফরাজি আন্দোলনের কারণ কি ছিল
• ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃতি
• ফরাজি আন্দোলনের প্রবক্তা কে ছিলেন বা ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক কে


ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো | টীকা লেখ - ফরাজি আন্দোলন

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

◆ ভূমিকা :উনিশ শতকে যে সমস্ত ধর্মীয় আন্দোলন বা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, বিদ্রোহ ছিল ফরাজী বিদ্রোহ। আরবি ভাষায় ফরাজী শব্দের অর্থ হলো ইসলাম নির্ধারিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য। উনিশ শতকে ইসলাম ধর্মের সংস্কারের উদ্দেশ্যে ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুরের মৌলবী হাজী শরীয়ত উল্লাহ ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক। ফরাজি আন্দোলনের অপর নাম হলো মিঞা আন্দোলন।

• ফরাজি আন্দোলন সময়কাল হিসেবে 1820 থেকে দুদুমিয়ার মৃত্যু পর্যন্ত অর্থাৎ 1862 খ্রিষ্টাব্দ পযর্ন্ত  সময়কালকে বিদ্রোহের সময়কাল ধরা হয়। দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর নোয়া মিয়ার সময় এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে যায়।

◆ ফরাজি বিদ্রোহের সূচনা : হাজী শরীয়তুল্লাহ তাঁর ফরাজী বিদ্রোহ চালিয়ে নেওয়ার জন্য 1820 খ্রিস্টাব্দে ফরাজী নামক একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।। এবং তিনি তার নেতৃত্বের মাধ্যমে দরিদ্র, কৃষক, কারিগর ও অন্যান্য শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।


◆ ফরাজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য : হাজী শরীয়ত উল্লাহ ফরাজী নামক ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তার ফরাজি আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার এই ফরাজি আন্দোলন শুরু করার পেছনে মূল কারণ ছিল ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরন ঘটিয়ে তিনি ভারতবর্ষকে দার-উল-ইসলাম থেকে ভারতবর্ষকে দার - উল - ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। হাজী শরীয়ৎউল্লাজের মতে ভারত বর্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বাসযোগ্য নয়। তাই তিনি দরিদ্র জনগণকে নিয়ে অত্যাচারী জমিদার, নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং তাদের উৎখাত করে ভারতবর্ষকে মুসলিমদের বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

◆ ফরাজী বিদ্রোহের বিস্তার : হাজী শরীয়ত উল্লাহের নেতৃত্বে প্রথম পর্বে ফরাজী বিদ্রোহ মূলত ফরিদপুর, ঢাকা, বাখরগঞ্জ,কুমিল্লা,ময়মনসিংহ,খুলনা যশোহর,দক্ষিণ 24 পরগনা প্রভৃতি জেলায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফরায়েজী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল ফরিদপুরের বাহাদূরপুর।

ফরাজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য 

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

হাজী শরীয়তউল্লাহ নেতৃত্বে শুরু হওয়া ফরাজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য মোটামুটি ভাবে ছিল তিনটি । যথা - 

• ইসলাম ধর্মের মধ্যে থাকা বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস এবং কূপ্রথা, অমুসলিম প্রথা ইত্যাদি দূর করে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ করা। 


• হাজী শরীয়ৎউল্লাহের মতে যেহেতু ভারতবর্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বাসযোগ্য নয়, সেজন্য তিনি তাঁর ফরাজি বিদ্রোহের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে দার উল হারব অর্থাৎ বিধর্মীর দেশ থেকে দার উল ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। 

• ভারত বর্ষ থেকে অত্যাচারী জমিদার এবং নীলকরদের বিতাড়িত করে তিনি মুসলিম কৃষক, কারিগর এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষদের তাদের শোষণ অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

ফরাজি আন্দোলনের প্রধান নেতা : 

ফরাজি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মূলত তিনজন। অর্থাৎ প্রধানত তিনজন ব্যক্তি ফরাজি বিদ্রোহে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিলেন। 

ফরাজি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন - প্রথমত ফরাজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়ৎউল্লাহ।

 দ্বিতীয়ত : হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুর পর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর পুত্র মোহাম্মদ মুসিন বা দুদুমিয়া। 

 এবং সর্বশেষে দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুদুমিয়ার পূত্র নোয়ামিয়া।

ফরাজি আন্দোলনের ব‍্যর্থতার কারণ বা ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন?


ফরাজি আন্দোলনের ব‍্যর্থতার কারণ | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

ভূমিকা : হাজী শরীয়ত উল্লাহের দ্বারা শুরু হওয়া ফরাজি আন্দোলন দীর্ঘসময় ধরে তাদের সংঘর্ষ চালিয়ে গেলেও,শেষ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। এবং আন্দোলনকারীরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই উদ্দেশ্য গুলি তারা সফল করতে পারেননি। ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন - 

◆ যোগ্য নেতৃত্বের অভাব :যেকোনো আন্দোলনকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নেতৃত্ব যদি সঠিক না হয় তাহলে যে কোনো আন্দোলনই ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফরাজি আন্দোলনের প্রথম দিকে নেতৃত্বে ছিলেন শরীয়তউল্লাহ এবং তার মৃত্যুর পর নেতৃত্বে ছিলেন দুদুমিয়া। কিন্তু দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়ামিয়ার সময়ে সঠিক নেতৃত্ব দানের অভাবে ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে।

◆ সাম্প্রদায়িকতা : ফরাজি আন্দোলন মূলত ধর্মীয় কারনে শুরু হয়েছিল বলে মুসলিম কৃষক, কারিগর এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষেরা যোগদান করলেও, হিন্দু শ্রেণির কৃষক, কারিগররা এই বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল। 


◆ শুধুমাত্র ধর্মীয় আন্দোলন : ফরাজি আন্দোলনের প্রথম দিকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে,তারা অত্যাচারী জমিদার এবং নীলকরদের উৎখাত করে তাদের শোষণ অত্যাচার থেকে নিজেদের মুক্ত রাখবে। কিন্তু শরীয়তউল্লাহ এবং দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর নোয়া মিয়া যখন এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে শুরু করে, তখন এই বিদ্রোহ অত্যাচারি জমিদার ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে শুধুমাত্র ধর্মীয় সংগ্রামে পরিণত হয়। যার ফলে ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এবং এভাবে আন্দোলন ঝিমিয়ে পরে।

◆ সংহতির অভাব :সংকীর্ণ ধর্ম বোধ দ্বারা এই ফরাজি আন্দোলন পরিচালিও হওয়ার কারণে উদারপন্থী মুসলমান সমাজ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে ছিল। ফলে ফরাজি আন্দোলনে সংহতির অভাব দেখা গিয়েছিল।

◆ আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা : ফরাজি আন্দোলন মূলত পূর্ববঙ্গের কিছু স্থানেই সীমাবদ্ধ ছিল। যার ফলে এই আন্দোলন সেরকম ভাবে কোনও শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি।।

◆ সমর্থন লাভের অভাব :ফরাজি আন্দোলন চলাকালীন বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা একসময় উগ্রসাম্প্রদায়িকতা, জোর জুলুম এবং সন্ত্রাসের নীতি গ্রহণ করেছিল।। যার ফলে এই আন্দোলন সবার কাছে সেরকম ভাবেও সমর্থন যোগ্য হয়ে ওঠেনি।


উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও ফরাজী বিদ্রোহের ব্যর্থতার আরো নানা কারণ ছিল। যেমন 

• ফরাজি আন্দোলনের নেতা দুদুমিয়া ব্যক্তিগত জীবনে নিজেও একজন খুব ভালো মানুষ ছিলেন না। দুদুমিয়া আঠারোটি বিয়ে করেছিলেন এবং বিভিন্ন সম্পত্তি লুট করে তিনি সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করতেন। ফলে অনেকেই তাকে পছন্দ করতো না।।

•  ফরাজি আন্দোলন নেতারা বিভিন্ন সময় তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে সরে গিয়েছিল। ফলে আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল ইত্যাদি। এরকম কিছু কারণের জন্য ফরাজী বিদ্রোহ সম্পূর্ণভবে ব্যর্থ হয়েছিল এবং বিদ্রোহীরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।

ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃতি -

◆ ধর্মীয় আন্দোলন : হাজী শরীয়ত উল্লাহ মূলত ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ এবং ভারতবর্ষকে ইসলামের দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় উদ্দেশ্যেকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল। 

◆ কৃষক বিদ্রোহ :ফরাজী বিদ্রোহ ধর্মীয় উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও,তা খুব অল্পসময়ের মধ্যেই কৃষক বিদ্রোহের রুপ নিয়েছিল। হাজী শরীয়ৎউল্লাহ অত্যাচারি জমিদার ও নীলকরের বিরুদ্ধে  মুসলিম কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে এই বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিলেন।। সুতরাং ফরাজি আন্দোলন ছিও ধর্মীয় মোড়কে মোড়া একটি কৃষক আন্দোলন।

◆ ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন : ফরাজি আন্দোলন দুধুমিয়ার নেতৃত্বে থাকাকালীন আন্দোলনে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা গিয়েছিল। অর্থাৎ এই আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন থেকে বেরিয়ে এসে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও নোয়ামিয়ার সময়, এটি পুনরায় ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।


ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয়
পুনর্জাগরণের আন্দোলন ছিল? | ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় আন্দোলন ছিল

ফরাজি আন্দোলন প্রথম দিকে হাজী শরীয়ত উল্লাহের নেতৃত্বে যখন শুরু হয়েছিল,তখন এটি মূলত ধর্মীয় আন্দোলন ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ফরাজি আন্দোলন কৃষক বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে নোয়া মিয়ার নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ পূনরায় ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। সুতরাং ফরাজি আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন না হলেও,কিছুটা ধর্মীয় পুনর্জাগরণের

আন্দোলন ছিল।


সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | সন্নাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ, ফলাফল

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | সন্নাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ


Table Of Contents | আজকের ব্লগে যেই সমস্ত বিষয়ের উওর দেওয়া হবে

• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের উল্লেখ আছে কোন উপন্যাসে?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা ছিলেন?
• সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
• সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল কী?
• ভবানী পাঠক কোন বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?

সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | সন্নাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

ভূমিকা : ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন এবং শোষণের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ ছিল সন্ন্যাস - ফকির বিদ্রোহ। কৃষিজীবী সন্নাসী এবং ফকিরদের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1763 খ্রিস্টাব্দে এবং 1800 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রায় 37 বছর ধরে এই বিদ্রোহ করার পেছনে সন্ন্যাসী ও  ফকিরদের একাধিক কারণ ছিল। যার জন্য তারা এই দীর্ঘ বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন। নিচের আলোচনার মাধ্যমে আমরা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ-

◆ রাজস্ব বৃদ্ধি : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1765 খ্রিষ্টাব্দে মোগল বাদশার কাছ থেকে বাংলার দেওয়ানি লাভ করে।  দেওয়ানি লাভ করার পর ব্রিটিশ সরকার বাংলার কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। সন্ন্যাসী ও ফকিররা নামে সন্নাসী ও ফকির হলেও, পেশাগত দিক থেকে তারা মূলত ছিলেন কৃষক। সুতরাং তাদের জমিতে এত পরিমান উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি করলে তারা সেই পরিমাণ কর দিতে গিয়ে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পরে। যার ফলে সন্ন্যাসী ও ফকিররা কোম্পানির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

◆ সন্ন্যাসী ও ফকিরদের অধিকার কেড়ে নেওয়া : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে সন্ন্যাসী ও ফকিররা জায়গীর এবং দান হিসেবে তাদের ভক্ত বা অন্যের কাছ থেকে কিছু জমি পেতেন। এবং তার ওপর সন্ন্যাসী - ফকিরদের সম্পূর্ণ অধিকার থাকতো।  কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর কোম্পানি সন্নাসী ফকিরদের সেই অধিকার কেড়ে নেয়। যার ফলে সন্নাসী ও ফকিররা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যকলাপে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

◆ জমিদার ও মহাজনদের শোষণ : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া, কোম্পানি এবং কৃষকদের মাঝখানে এমন জমিদার, মহাজনদের জন্ম দিয়েছিল,যারা মুনাফা লাভের জন্য এবং উচ্চহারে কর আদায়ের জন্য,কৃষকদের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারতো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এটা বলেছিল যে, যে জমিদার / ব্যক্তি নিজের এলাকা থেকে সর্বোচ্চ কর আদায় করে দিতে পারবে, ব্রিটিশ সরকার তাকেই কর আদায়ের অধিকার দেবে। ব্রিটিশ সরকারের এই ঘোষণার পর প্রত্যেক জমিদার বা স্থানীয় নেতারা সন্ন্যাসী - ফকিরদের কাছ থেকে বা কৃষকদের কাছ থেকে জোড় করে বেশি কর আদায় করে নিজের মুনাফা লাভের চেষ্টা করতো। যার ফলে সন্ন্যাসী - ফকিরদের নানা রকম অত্যাচার সহ্য করতে হতো।

◆ তীর্থকর ও নিষেধাজ্ঞা : ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নিজেদের তীর্থক্ষেত্র বা ধর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য কোনোরকম কর বা খাজনা দিতে হতো না। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর ব্রিটিশ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সন্ন্যাসী ও ফকির তীর্থক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কর আদায় করা শুরু করে।
ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মুসলিম ফকিরদের দাড়ি রাখার উপরেও কর আদায় করার পদ্ধতি চালু করে। এবং ফকিরদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কোম্পানি তাদের ধর্মীয় দরগায় যাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এসব কার্যকলাপ থেকে সন্ন্যাসী ও ফকিররা মারাত্মক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

◆ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা জারি : সন্ন্যাসী ও ফকিররা ভারতের বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যেই ঘুরে বেড়াতেন। যার ফলে তারা আত্মরক্ষার জন্য অথবা অন্যান্য কিছু কারণে নিজেদের সঙ্গে কিছু অস্ত্র রাখতেন। কিন্তু ওয়ারেন্ট হেস্টিং একটি ঘোষণার মাধ্যমে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নিজেদের সঙ্গে অস্ত্র রাখার এই অধিকার কেড়ে নেয়। এক সরকারী ঘোষণাপত্রের মধ্যে জারি করা হয়, কেউ যত্রতত্র নিজেদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে পারবে না। ওয়ারেন হেস্টিংস এর সরকারি নিষিদ্ধ করার পরে, সন্নাসী ও ফকিররা সরকারের এই ঘোষণার প্রতি যথেষ্ট রেগে যায়।

◆ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : 1770 খ্রিস্টাব্দের দিকে ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্য, উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি, নানা শোষণ অত্যাচার,অনাবৃষ্টি, অজন্মা ইত্যাদির ফলে 1770 সাল থেকে বাংলায় ভয়ংকর ছিয়াত্তরের মন্বন্তর শুরু হয়। বাংলার এই দুর্দিনেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের শোষণ অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। যার ফলে বহু শিল্পী, কারিগর,কৃষকরা বাংলা থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।।পরবর্তীতে তারাই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

উপসংহার : উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণে কৃষিজীবী সন্ন্যাসী ও ফকিররা এই বিদ্রোহের প্রধান কিছু নেতারা যেমন ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, চিরাগ আলি, পরাগল শাহ, অনুপ নারায়ন প্রমুখের নেতৃত্বে ব্রিটিশ কোম্পানির শোষণ অত্যাচার এর বিরুদ্ধে তাদের উৎখাত করার জন্য 1763 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু করেছিল। যেই বিদ্রোহ দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলার পর 1800 খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে গিয়েছিল।

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন | সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন | সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ

ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল 1763 খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলার পর 1800 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে গিয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে দীর্ঘ 37 বছর ধরে চলা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতা একাধিক কারণ ছিল একাধিক। যেমন -

 আধুনিক অস্ত্রের অভাব : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর কাছে ছিল সমস্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের কাছে সেরকম ভাবেও কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। যার সাহায্য তারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারতো।

◆ বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক পরিকল্পনার অভাব : একটি বিদ্রোহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্রোহের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। কিন্তু সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের সেরকম কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না,যে তারা কিভাবে এই বিদ্রোহকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

◆ সঠিক নেতৃত্বের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের শুরুর দিকে ভবানী পাঠক, মজনুশাহ,দেবী চৌধুরানী প্রমুখ নেতারা থাকলেও,পরবর্তীকালে বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক নেতার অভাব হয়ে পড়ে। যার ফলে অযোগ্য নেতাদের হাতে পড়ে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।।

◆ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের জন্য। তাই প্রথম দিকে হয়তো তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের সেসব শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া। কিন্তু মনে করা হয় যে,বিদ্রোহীদের অনেকের মধ্যেই এই বিদ্রোহের লক্ষ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিলনা। কিন্তু অনেক সময় এটা দেখা গেছে যে, বিদ্রোহীরা ইংরেজদের বিভিন্ন কুটির আক্রমণ করে সেখানে ডাকাতি করেছে। তাই উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ডাকাত  বা দস্যু বলে অভিহিত করেছিলেন। সুতরাং সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের লক্ষ্য যদি ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করে তাদের শোষণ অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া হতো,তাহলে তারা ডাকাতি করার পরিকল্পনা কেন করতেন। তাই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের সঠিক লক্ষ্য কী ছিল তা, বলা মুশকিল।

◆ আর্থিক সমস্যা : একটি বিদ্রোহকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়।  বিদ্রোহীদের থাকা-খাওয়া,  অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সন্ন্যাসী ও ফকিরদের প্রচুর পরিমানে অর্থের ক্ষয় হয়। এবং শেষ দিকে তাদের কাছে বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মত সঠিক অর্থ ছিলনা বলে মনে করা হয়।

◆ অন্যান্য কারণ : বিদ্রোহের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের মধ্যে নেতৃত্ব দান এবং অন্যান্য কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে আদর্শগত আত্মকলহ এবং বারংবার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে থেমে যাওয়ার পথে এসে দাড়ায়।

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের চরিত্র প্রকৃতি বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন | সন্ন্যাসী ও ফকির কারণ | সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ

ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম সংগঠিত সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের মধ্যে নানা চরিত্র লুকিয়ে রয়েছে। যেমন -

◆ ধর্মীয় আন্দোলন : 1763 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ মূলত সন্নাসী এবং প্রকৃতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল বলে, অনেকে একে ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে মনে করেন।

◆ কৃষক বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সন্ন্যাসী উপকৃত দ্বারা শুরু হলেও মূলত এটি ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ। কারণ সন্ন্যাসী ফকিররা ছিলেন মূলত কৃষিজীবী মানুষ। এবং সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কারণ হিসেবে রাজস্ব বৃদ্ধি,জমির অধিকার অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি কারণগুলো ছিল বলে,এই বিদ্রোহের মধ্যে একটি কৃষক বিদ্রোহের ছাপও রয়েছে। উইলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন

◆ পেশাদার ডাকাতদের বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ চলাকালীন বিদ্রোহীরা ইংরেজদের নানা কুটির আক্রমণ করে সেখানে লুটপাট চালাতো। যার ফলে তারা এক প্রকার পেশাদার ডাককতে পরিণত হয়েছিল। তাই ইংরেজি ইতিহাস উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ডাকাত বা দস্যু বলে অভিহিত করেছেন।

◆ সন্ন্যাসী - ফকিরদের বিদ্রোহ ; 1763 খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ছিল মূলত গিরি ও দশানন সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী ও মারাঠি সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের আন্দোলন।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলিম কৃষকরা যৌথভাবে অংশগ্রহণ করে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের প্রতিষ্ঠা করেছিল।

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

উওর : 1787 খ্রিস্টাব্দে ভবানী পাঠকের মৃত্যুর পর সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ থেমে যায়। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখা যায়নি।

◆ ফকির বিদ্রোহের প্রধান নেতা | সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান নেতাদের মধ্যে ছিলেন - ভবানী পাঠক ও মজনু শাহ। এছাড়াও সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম মহিলা নেতা ছিলেন দেবী চৌধুরানী। চিরাগ আলি, পরাগল শাহ, অনুপ নারায়ন, মুসা শাহ, পীতাম্বর শ্রীনিবাস, নূরল মোহাম্মদ প্রমুখ।

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?

◆ বিদ্রোহের স্থান : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়েছিল ঢাকায়।  পরবর্তীতে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ বাংলা এবং বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ রাজশাহী,রংপুর, বিহার, উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেছিল।ম

 আনন্দমঠ উপন্যাস : 1763-1800 খ্রিষ্টাব্দের সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তাই সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার আনন্দমঠ উপন্যাস এবং দেবী চৌধুরানী উপন্যাসে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করেছিলেন


 নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল 

Table of Contents

• নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল
• নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব
• নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
• নীল বিদ্রোহের সময়কাল
• নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতার নাম
• নীল বিদ্রোহের অঞ্চল
• নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


ভূমিকা : বাংলার কৃষক বিদ্রোহের মধ্যে, একটি উল্লেখযোগ্য সফল কৃষক বিদ্রোহ ছিল 1859 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ। উনিশ শতকে উউরোপে বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটলে,নীলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই চাহিদা মেটাতে কিছু ইংরেজ বণিকরা ভারতে এসে নীল চাষ শুরু করে। নীলকর বণিকদের হয়ে ভারতের মূলত নীল চাষ করতো ভারতীয় চাষিরাই। নীল চাষ করার সময় চাষীদের নানারকম শোষণ-অত্যাচার এবং এবং দুর্ভোগের শিকার হতে হতো। সেসব শোষণ - অত্যাচার ও দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস,  দিগম্বর বিশ্বাস,বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখের নেতৃত্বে 1859 চাষিদা সংঘবদ্ধভাবে যে ভয়ঙ্কর বিদ্রোহ শুরু করেছিল, তাই নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।


1859 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় চাষীদের নীল বিদ্রোহ করার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। নীল বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করার মাধ্যমে আমরা সেই কারণগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

◆ নীল বিদ্রোহের কিছু উল্লেখযোগ্য নেতা : 1859 খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশকিছু স্থানীয় নেতা নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। যেমন - নদীয়ার বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, বিশ্বনাথ সর্দার, বৈদ্যনাথ সর্দার,আসননগরের মেঘাই সর্দার, খুলনার কাদের মোল্লা, পাবনার মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালদহের রফিক মন্ডল, বাঁশবেড়িয়ার  নড়াইলের জমিদার রাম রতন মল্লিক, চন্ডিপুরের জমিদার শ্রীহরি রায়, রানাঘাটের জমিদার শ্রীগোপাল পাল চৌধুরী, সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এবং তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমি নীল বিদ্রোহ একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল।

◆ নীল বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?
সর্বপ্রথম নদীয়ার চৌগাছা গ্রামে
বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস অন্যান্য কিছু নেতাদের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নীল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।


◆ নীল বিদ্রোহের বিস্তার ;
নদীয়ার পর,পরবর্তীতে বিশ্বনাথ সর্দার, বৈদ্যনাথ সর্দার,আসননগরের মেঘাই সর্দার, খুলনার কাদের মোল্লা, পাবনার মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালদহের রফিক মন্ডল, বাঁশবেড়িয়ার  নড়াইলের জমিদার রাম রতন মল্লিক, চন্ডিপুরের জমিদার শ্রীহরি রায়, রানাঘাটের জমিদার শ্রীগোপাল পাল চৌধুরী, সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নদীয়া, যশোর, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, বারাসাত প্রভৃতি স্থানের  প্রায় 60 লক্ষ কৃষকদের মধ্যে এই নীল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল।

ক্লাস টেনের ইতিহাস মকটেস্ট দিতে নিচের লিঙ্কের ওপর ক্লিক করো👇


1859 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের কারণ -


◆ দাদন প্রথা : দাদন প্রথা বলতে বোঝায় অগ্রিম অর্থ প্রদান এই পদ্ধতিতে নীলকর সাহেবরা চাষির নিজের জমিতে নীলচাষ করার আগে কিছু সামান্য পরিমাণ অগ্রিম অর্থ দিয়ে, চাষির সঙ্গে একপ্রকার চুক্তি করে নিতো। কিন্তু চাষিকে তার জমি অনুযায়ী নীল চাষ করার জন্য যে পরিমাণ টাকা বা দাদন দেওয়া হতো,তার পরিমাণ হতো খুবই কম।  যার ফলে চাষির,তার জমিতে নীল চাষ করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ তার খরচ হত তা, সেই নীলকর সাহেবের দেওয়া  দাদনের তুলনায় অনেক বেশি হতো।। ফলে চাষির নিজের সঞ্চিত টাকা খরচ করে নীল সম্পন্ন করতে হতো। ফলে দাদম নিয়ে নীল চাষ করার ফলে চাষির কোনো প্রকার লাভ তো হতোই না, বরং লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হতো।

◆পঞ্চম আইন পাস : তৎকালীন সময়ে ইংরেজ নীলকর বণিকদের চাপে পড়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার 1830 খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম আইন পাস করে। এই আইনে নীলকর বণিকদের পক্ষ নিয়ে বলা হয় যে,কোন নীলচাষী যদি কোনো নীলকরের কাছ থেকে দাদন নিয়ে অথবা অগ্রিম অর্থ নিয়ে পরবর্তীতে নীল চাষ করতে রাজি না হয়,তাহলে সেই নীলকর সাহেব চাষিকে জেলে পাঠাতে পারবে। এবং সামরিক কালের জন্য সেই চাষির সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এই আইনের পর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার এবং চাষীদের দুর্দশা আরও বাড়ে।

◆ খাদ্য সংকট : নীলকর সাহেবদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নীল চাষ করার ফলে চাষীরা তাদের নিজের জমিতে অন্য কোনো খাদ্য ফসল,যেমন - ধান গম ইত্যাদি চাষ করার সুযোগ পেত না। যার ফলে তাদের ঘরে খাদ্য ফসলের অভাব হয়ে পড়ে। এবং একসময় চাষীদের খাদ্য সঙ্কটে ভুগতে হয়।।


◆ অর্থসংকট : নীলকর সাহেবের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নীল চাষ করার ক্ষেত্রে চাষীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের সঞ্চিত অর্থ খরচ করে সেই নীল চাষ সম্পন্ন করতে হতো।।যার ফলে তাদের নিজস্ব অনেক টাকাই খরচ হয়ে যেত।
দ্বিতীয়তঃ জমিতে নীল চাষ করার জন্য চাষিরা নিজের জমিতে অন্য কোন চাষ করার সুযোগ পেত না। যার ফলে তারা কোনো অর্থকরী ফসল চাষ করে সেই  অর্থকরী ফসল বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতে পারত না। যার ফলে চাষীদের ঘরে প্রবল অর্থ সংকট শুরু হয়।

◆ নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার : নীল বিদ্রোহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল নীলকর সাহেবদের চাষিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার। নীলকর সাহেবরা নীলচাষিদের উপর বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার করতো। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ছিল নীলচাষীদের নীলকুঠিরে নিয়ে গিয়ে চাবুকের আঘাত করা। নীলকর সাহেবরা চাহিদার উপর কখনো কখনো এমন ভয়ানক অত্যাচার করতো, যে কখনও কখনও চাষিরা সেই ভয়ানক অত্যাচারের, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষ পযর্ন্ত মারা যেত।

◆ পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থা : নীল চাষীদের উপর যে সমস্ত নানা ধরনের অত্যাচার করা হতো, সে সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে চাষীরা যদি কোনো অভিযোগ নিয়ে আইন,প্রশাসন অথবা সরকারের দ্বারস্থ হতো,তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি আদালত শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের পক্ষ নিয়ে নীলচাষীদের কোনো অভিযোগকেই গুরুত্ব দিত না। ফলে নীলচাষীরা তাদের উপর হওয়া বিভিন্ন অত্যাচারের কোনো সঠিক বিচার সরকারের কাছ থেকে পেত না।

◆ নীল বিদ্রোহের ফলাফল | নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব


নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

ভূমিকা : 1859-60 খ্রিস্টাব্দে দিগম্বর বিশ্বাস,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস,বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় 60 লক্ষ কৃষক মিলে ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের শোষণ- অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং এদেশ থেকে নীলচাষকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার উদ্দেশ্যে " নীল বিদ্রোহ " বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। নীল বিদ্রোহের নেতাদের সঠিকভাবে নেতৃত্বদান ও বিদ্রোহ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতার জন্যই শেষ পর্যন্ত নীল বিদ্রোহ একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে হয়েছিল। নীল বিদ্রোহএকটি সফল কৃষক বিদ্রোহ হওয়ার কারণে নীল বিদ্রোহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। যেমন -

◆ নীল কমিশন গঠন : নীলচাষিদের চাপে পড়ে সরকার 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠন করে।। এই নীল কমিশনের কাজ ছিল নীলচাষীদের বিভিন্ন অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখা। এবং সেই অভিযোগগুলি সত্য বলে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।


◆ অষ্টম আইন : 1830 খ্রিস্টাব্দে পাশ হওয়া পঞ্চম আইনের মাধ্যমে সরকার পরোক্ষভাবে নীল চাষীদের নিয়ে নীল চাষ করার বাধ্য করেছিল।  কিন্তু নীল বিদ্রোহের পর 1860 খ্রিস্টাব্দে " অষ্টম আইন " পাশ করা হয়। এবং এই আইনের মাধ্যমে " নীল চুক্তি আইন "  বন্ধ করা হয়। যার ফলে নীল চাষ করা চাষীদের সম্পূর্ণ ইচ্ছার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারের মাধ্যমে চাষীদের এই অধিকার দিলে, চাষিরা নিজেদের এই ভয়ঙ্কর নীলচাষ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনার সুযোগ পায়।

◆ ঐক্যের প্রতিষ্ঠা : নীল বিদ্রোহে দিগম্বর বিশ্বাস,বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, বিশ্বনাথ সর্দার প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় 60,000 হিন্দু এবং মুসলিম কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছিল।

◆ জাতীয় চেতনার বিকাশ : জাতীয় চেতনার বিকাশে নীল বিদ্রোহ কাজ করেছিল।  বাংলায় নীল বিদ্রোহের মাধ্যমেই বাংলায় প্রথম কৃষক, জমিদার, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয়।
◆ নীল বিদ্রোহের প্রথম সহিদ হলেন বিশ্বনাথ সর্দার।

উপসংহার : সবশেষে বলা যায়, নীলকর সাহেবদের নানা শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নীল বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এবং দীর্ঘদিন বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার পর নীল বিদ্রোহ ভারতের প্রথম একটি সফল কৃষক বিদ্রোহে প্রণীত হয়।


আশাকরি যে, দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (WBBSE Class 10 History Question Answer & Notes in Bengali) অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্নের উওর (WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ), গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Suggestion 2023 ) এবং গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class 10 History Question Answer and notes ) WBBSE Class 10 History Question Answer And Suggestion 2023 || মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের উপকারে আসবে।।

Tags ; 

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | ক্লাস টেনের প্রতিরোধ ও বিদ্রোহপ্রশ্ন উওর | ক্লাস 10 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উওর | দশম শ্রেণির প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | মাধ্যমিকের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | wb class 10 history question answer  | wb class 10 history short question answer | wb class 10 history saq question answer | wb class 10 history mcq question answer | Madhyamik History question and answer | Madhyamik History question and answer Bengali | history question answer | history saq | history question answer | class 10 history short question answer | class 10 history question answer | history question answer | class 10 history question answer | class 10 history notes | wb class 10 history notes in Bengali | wb class 10 history question answer chapter 3 | wb class 10 history chapter 3 question answer in Bengali

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top