সমাজ এবং শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'সমাজ এবং শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা বা উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
সমাজ এবং শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা || উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা
ভূমিকাঃ-
উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা, নারীদের যথেষ্ট অধিকারের অভাব, নারী শিক্ষার অভাব ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষরা সমাজ থেকে সেই খারাপ দিকগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন, বা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন,তাদের মধ্যে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে একজন সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও তিনি নিজেকে সংস্কৃত শিক্ষার মধ্যে এবং হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান, কুসংস্কার ইত্যাদির মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি এই সমস্ত কিছু থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি তার আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তার এই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি বাংলার শিক্ষার এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
Read More👇
What Is Car Insurance? Best Car Insurance Plan & Companies সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
What Is Car Insurance | Types Of Car Insurance | Best Car Insurance Plan For You
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষার সংস্কারঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তৎকালীন সমাজের উন্নতির জন্য তিনি প্রথমত শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি মূলত দুই ভাবে বাংলা শিক্ষার বাংলার শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমত তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গ্রন্থ এবং পাঠ্যপুস্তক এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।।
নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর সহকারী পদে থাকাকালীন, বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলার নারীদের জন্য 35 টি বালিকা বিদ্যালয় এবং 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।
পাঠ্যপুস্তক রচনাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি। তিনি শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও নিজের উদ্যোগেই রচনা করেছিলেন। যেমন শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়,কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি ইত্যাদি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এইসব গ্রন্থ গুলি ছিল মূলত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য।
নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বঃ
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জিনিসটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বর্তমান সমাজের উন্নয়নের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য সমাজে নারীদের শিক্ষার প্রসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে মায়ের শিক্ষার হাত ধরেই ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষায় আগ্রহী হবে বা সমাজ শিক্ষিত হবে। এজন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের ভূমিকাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেমন বাংলার শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, ঠিক একইভাবে তিনি বাংলার সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন, নারীশিক্ষার প্রসার, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ছিল উল্লেখযোগ্য।।
বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকাঃ-
সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো। এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না।
যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1857 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।
বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহের বিরোধিতাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের নারীদের উন্নয়ন এবং নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন সময়ে সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ এবং বহু বহুবিবাহের তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করার পর তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৎকালীন সময়ের জন্য বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ বাল্য বিবাহ বন্ধের আন্দোলন সেখানেই থেমে যায়। কিন্তু এই আন্দোলন পরবর্তীতে ব্রাহ্ম সমাজের মধ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা উত্সাহ জুগিয়ে ছিল।
অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরোধিতাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন আধুনিক চিন্তাশীল ব্যক্তি হওয়ার কারণে, তার কাছে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কূপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ অর্থহীন। হিন্দু সমাজ তথা প্রাচীন বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এবং বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রসার এবং কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা তৈরী করার চেষ্টা করেছিলেন।
উপসংহার,সবশেষে বলা যায়,বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত বাঙালি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে, তিনি সমাজ সংস্কারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের শিক্ষা, নারীদের অধিকার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধিতা,শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কাজ কর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত এবং শিক্ষিত করে তোলার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'সমাজ এবং শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা বা উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল | সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | hs History question answer