দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো বা ঔপনিবেশিক ভারতে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো || ঔপনিবেশিক ভারতে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- উনিশ শতকে ভারতের বাংলায় সর্বপ্রথম বিভিন্ন আধুনিক চিন্তাধারা যুক্ত এবং সমাজের কল্যাণকামী মানুষের হাত ধরেই সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে বাংলা অনুকরনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বাংলায় এই সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব নাথ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, শ্রীরামকৃষ্ণ, নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ। বাংলার এই সমাজ সংস্কারকদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং তীব্র আন্দোলনের ফলে বাংলা সমাজে এর বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন-
আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ-
সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের ফলেই ভারতে বিশেষ করে বাংলায় তৎকালীন সময়ে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরেই বাংলায় সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজা রামমোহন রায় সরকারি দিক থেকে কোনো সাহায্য না পেয়ে তিনি নিজেই 1815 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে রাজা রামমোহন রায় 1823 খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্ট একটি চিঠির মাধ্যমে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে।
সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস এবং কুপ্রথা হ্রাসঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,রাজা রামমোহন রায়, নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ ছাড়াও আরো অন্যান্য বিভিন্ন আধুনিক চিন্তা সম্পন্ন মানুষের তীব্র আন্দোলনের ফলে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস, কুপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, আচার অনুষ্ঠান প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রচার চালনোর ফলে তৎকালীন সময়ে হিন্দু সমাজে বিশেষ করে ভারতীয় সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস, কুপ্রথা ইত্যাদি অনেকটাই কমে গিয়েছিল।। যেমন 1829 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের তীব্র আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়। পরবর্তীকালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তীব্র আন্দোলনের ফলে বিধবা বিবাহ প্রচলিত হয়। এবং পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে সরকার চাপে পড়ে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাস করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করে। অন্যদিকে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী প্রমুখের আন্দোলনের ফলে বাংলার বিভিন্ন ধর্মীয় কুসংস্কার,অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদি অনেকটাই কমে যায়।
নারী সমাজের উন্নতিঃ-
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ব্রাহ্ম সমাজের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে তৎকালীন সময়ে নারী সমাজের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনের ফলেই বিধবা নারীর প্রাণে বেঁচে যায়। দ্বিতীয়তঃ বিধবা অবস্থায় সারাজীবন কাটানোর থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীদের হয়ে তীব্র আন্দোলন করে। ফলে সরকার বিধবাদের পুনরায় বিধবা বিয়ে করার অধিকার দেয়। এবং সবশেষে ব্রাহ্মসমাজের তীব্র আন্দোলনের ফলে সরকার চাপে পড়ে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ করে। এরপর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ড্রিংক ওয়াটার বেথুন এবং অন্যান্য কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে বিভিন্ন নারী শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান বা স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে অনেক নারীরা শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়েছিল।।
জাতীয়তাবাদের বিকাশঃ-
বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলে বাংলায়,বিশেষ করে কলকাতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছিল। প্রথম দিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ব্রিটিশ সরকারকে ভারতের জন্য কল্যাণকর বলে মনে করলেও পরবর্তীতে তারাই বুঝতে পেরেছিল যে,ব্রিটিশ সরকার কখনোই ভারতের জন্য কল্যাণকর নয়। সেজন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই প্রথম ভারতের নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে পরবর্তীতে তা মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার হয়।।
উপসংহার, সুতরাং দেখা যায় যে, উনিশ শতলে বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে যে সমাজ সংস্কার আন্দোলন এবং শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ দেখা দিয়েছিল, তা মূলত বাংলা সমাজে বিশেষ করে ভারতীয় সমাজে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন এবং শিক্ষার প্রসার উদ্যোগ ভারতীয় সমাজকে কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস সহ আরও বিভিন্ন বিভিন্ন খারাপ দিক গুলি ত্যাগ করতে শিখিয়েছিল। এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলনের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাগরিত জাতিয়তাবোধ পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনে শক্তি জুগিয়ে ছিল।।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো বা ঔপনিবেশিক ভারতে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল | সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | hs History question answer