দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া অধ্যায়ের MCQ Question Answer || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্নোত্তর
West Bengal Class 12 History MCQ Question Answer |
1. বি. বি. মিশ্র ব্রিটিশ-ভারতের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে কয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন?
• ২টি
• ৩টি
• ৪টি
• ৫টি
• উওরঃ- ৩ টি
2. কার উদ্যোগে কলিকাতা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা হয়?
• ক্লাইভ
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• কার্টিয়ার
• কর্নওয়ালিশ
• উওরঃ ওয়ারেন হেস্টিংস
3. প্রথম বাংলা সংবাদপত্র কোনটি?
• সমাচার দর্পণ
• হিন্দু পেট্রিয়ট
• সোম প্রকাশ
• বন্দেমাতরম্
• উওরঃ সমাচার দর্পণ
4. 'জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন-এর বর্তমান নাম হল -
• প্রেসিডেন্সি কলেজ
• লেডি ব্রেবোন কলেজ
• স্কটিশচার্চ কলেজ
• লরেটো কলেজ
• উওরঃ স্কটিশচার্চ কলেজ
5. ভারতে জনশিক্ষার উদ্দেশ্যে বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত কত খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে হয়?
• ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের
• ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের
• ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের
• উওরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের
6. ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে
সরকারি নীতি হিসেবে ঘোষণা করেন-
• বেন্টিঙ্ক
• কর্নওয়ালিশ
• রিপন
• ডালহৌসি
• উওরঃ বেন্টিঙ্ক
7. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়—
• ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে
• ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে
• উওরঃ ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে
8.হান্টার কমিশন স্থাপিত হয়—
• ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে
• ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে
9. ‘আধুনিক ভারতের জনক' বলা হয়-
• ডিরোজিওকে
• রামমোহন রায়কে
• ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে
• স্বামী বিবেকানন্দকে
• উওরঃ রামমোহন রায়কে
10.আত্মীয় সভা' প্রতিষ্ঠিত হয়—
• ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে
11. 'ইন্ডিয়ান মিরর' পত্রিকা প্রকাশ করেন -
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
• রামমোহন রায়
• কেশবচন্দ্র সেন
• ডিরোজিও
• উওরঃ কেশবচন্দ্র সেন
12. 'নববিধান' ঘোষণা করেন—
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
• রামমোহন রায়
• কেশবচন্দ্র সেন
• শিবনাথ শাস্ত্রী
• উওরঃ কেশবচন্দ্র সেন
13. 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন'-এর মুখপত্র ছিল—
• এথেনিয়াম
• পার্থেনন
• হেসপেরাস
• ক্যালাইডোস্কোপ
• উওরঃ এথেনিয়াম
14. ‘মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন'-কে প্রতিষ্ঠা করেন?
• রাজা রামমোহন রায়
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
• রাধাকান্ত দেব
• ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
• উওরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
15. সত্যশোধক সমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন-
• কেশবচন্দ্র সেন
• জ্যোতিবা ফুলে
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
• নারায়ণ গুরু
• উওরঃ জ্যোতিবা ফুলে
16. ভাইকম সত্যাগ্রহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন -
• নারায়ণ গুরু
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
• বীরসালিঙ্গম
• জ্যোতিবা ফুলে
• উওরঃ নারায়ণ গুরু
17. থিয়োডোর বেক যুক্ত ছিলেন—
• সতীদাহ প্রথা নিবারণের সঙ্গে
• হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে
• বিধবা বিবাহ প্রচলনের সঙ্গে
• আলিগড় আন্দোলনের সঙ্গে
• উওরঃ আলিগড় আন্দোলনের সঙ্গে
18. বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়—
• ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে
• ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
19. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা কাদের বিরুদ্ধে হয়েছিল ?
• পতিদারদের
• সাহুকারদের
• দেওয়ানদের
• মধ্যবিত্তদের
• উওরঃ সাহুকারদের
20. ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন কোনটি?
• গিরনি কামগার ইউনিয়ন
• নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস
• ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন
• মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন
• উওরঃ মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন
21. পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়—
• ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
• ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
• ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
• ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে
• উওরঃ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
22. সংস্কারের দাবিতে চিন সম্রাটের কাছে আবেদনপত্র জমা দেন—
• সাই উয়ান-পেই
• কাং ইউ ওয়ে
• কোঁয়াংসু
• চেন-তু সিউ
• উওরঃ কাং ইউ ওয়ে
23. প্রথম বাঙালি মধ্যবিত্তের কথা কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
• বঙ্গদর্শন
• বঙ্গদূত
• দিগদর্শন
• সমাচার দর্পণ
• উওরঃ বঙ্গদূত
24. কে রাজা রামমোহন রায়কে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন?
• মুঘল বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর
• ঔরঙ্গজেব
• দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ
• আকবর
• উওরঃ মুঘল বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর
25. কে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন?
• উইলিয়াম বেন্টিং
• লর্ড ডালহৌসির
• লর্ড ক্যানিং
• ওয়ারেন হেস্টিংস
• উওরঃ উইলিয়াম বেন্টিং
26. কাকে দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর বলা হয়?
• স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
• শ্রী নারায়ণ গুরু
• জ্যোতিবা ফুলে
West Bengal Class 12 History SAQ Question Answer || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের SAQ প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
1- সর্বপ্রথম কোন পত্রিকায় এবং কবে প্রথম বাঙালি মধ্যবিত্তের কথা বলা হয়েছিল?
উত্তর - সর্বপ্রথম 1829 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদূত পত্রিকায় সর্বপ্রথম বাঙালি মধ্যবিত্তের কথা বলা হয়েছিল।
2- ঔপনিবেশিক ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি পেশার নাম লেখ।
উওর- মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কয়টি উল্লেখযোগ্য হল সরকারি কর্মচারী, ছোট ব্যবসায়ী, শিক্ষক ডাক্তার প্রভৃতি।
3- কবে এবং কার উদ্যোগে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর- উইলিয়াম জোনসের উদ্যোগে 1784 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
4- কাদের উদ্যোগে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর- উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোশুয়া মার্শম্যান - এই তিনজন খ্রিস্টান মিশনারীর উদ্যোগে 1800 খ্রিষ্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
5- কবে এবং কাদের উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উওর- 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার, রাজা রাধাকান্ত দেব, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, স্যার হাউজ ইস্ট প্রমুখের উদ্যোগে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
6- কে এবং কবে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- লর্ড ওয়েলেসলি 1800 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
7- 1857 খ্রিস্টাব্দে ভারতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়?
উওর- 1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে,বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
8- কে এবং কত খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- রাজা রামমোহন রায় 1828 মতান্তরে 1829 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
9- উডের ডেসপ্যাচ কী?
উওর- ভারতের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পযর্ন্ত শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান সমাধান করার জন্য বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি স্যার চার্লস উড 1854 খ্রিস্টাব্দে যে নির্দেশনামা জারি করে তা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।
10- কে এবং কত খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন?
উওর- ভারতের বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 829 খ্রিস্টাব্দে 4 ডিসেম্বর XVII নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথার অবসান ঘটান।
11- কাকে এবং কেন বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয়?
।
উওর- রাজা রামমোহন রায় ধর্ম সংস্কার এবং একেশ্বরবাদের প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলা পুস্তিকা এবং উপনিষদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। যার ফলে গদ্য সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। এজন্য রাজা রামমোহন রায়কে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয়।
12- তিন আইন কী?
উওর- ব্রাহ্ম সমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেনের আন্দোলনের ফলে সরকার 1872 খ্রিস্টাব্দে তিন আইন বা সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাস করার মাধ্যমে বাল্য বিবাহ বন্ধ করে। এই আইনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, 18 বছরের নিচে কন্যা বিবাহ বেআইনি।
13- ইয়ংবেঙ্গল নব্য বঙ্গ আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
উওর- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার তরুণ অনুগামীদের নিয়ে গঠিত নব বঙ্গ গোষ্ঠী,উনিশ শতকে বাংলায় যে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল,তাই ইয়ংবেঙ্গল বা নব্য বঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।
14- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও কে ছিলেন?
উওর- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ছিলেন ভারতের জন্মগ্রহণকারী এক ইঙ্গ পর্তুগিজ পরিবারের সন্তান। তিনি হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক এবং নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন।
15- কে এবং কবে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও তার তরুণ অনুগামী ছাত্রদের নিয়ে 1828 খ্রিষ্টাব্দে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
16- কে এবং কবে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- শ্রী রামকৃষ্ণদেব শীর্ষ স্বামী বিবেকানন্দ 1897 খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
17- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখ।
উওর- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বর্ণপরিচয়,বোধোদয়, কথামালা,নীতিবোধ, সীতার বনবাস,শকুন্তলা প্রভৃতি।
18- কে এবং কবে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
19- কে, কবে আলীগড় কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- সৈয়দ আহমেদ খান 1875 খ্রিস্টাব্দে আলীগড় কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
20- কে নিরাকারী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উওর- বাবা দয়াল সিংহ নিরাকারী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
21- কাদের দিকু বলা হত?
উওর- ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে যেমন -সাঁওতালি, মুন্ডা, কোল, চুয়ার,ওরাও প্রভৃতি অঞ্চলে বহিরাগত ব্যবসায়ী এবং মহাজনদের দিকু বলা হত।
22- বাংলার দুজন দলিত নেতার নাম লেখ।
উওর- বাংলার দুজন উল্লেখযোগ্য দলিত নেতা হলেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর এবং যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
23- সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি কি?
উওর- ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে দুর্বল করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ডের পরিকল্পনায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের হিন্দু সমাজকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে,তাদের যে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে তা,সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি নামে পরিচিত।
24- 4 মে-র আন্দোলন কবে এবং কোথায় হয়েছিল?
উওর- 4 মে-র আন্দোলন 1919 খ্রিষ্টাব্দে চিনের তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে হয়েছিল।
25- কে চীনের 4 মে-র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
উওর- চেন-তু-শিও 4 মে-র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
26- কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম চীনের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক বাইরে পাঠানো হয়?
উওর- 1808 খ্রিষ্টাব্দের 12 ই অক্টোবর প্রথম চীনের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ত্রিনিদাদে পাঠানো হয়।।
ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
ভূমিকাঃ- ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বলতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পেশার সঙ্গে যুক্ত এমন এক শ্রেণীকে বোঝাত, যারা সমাজে উচ্চশ্রেণী এবং সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মধ্যবর্তী পর্যায়ে বসবাস করতো। ব্রিটিশ শাসনকালে অন্যান্য প্রেসিডেন্সি শহরগুলোর তুলনায় মূলত বাংলাতেই মধ্যবিত্ত লোকেদের সংখ্যা বেশি ছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে বিভিন্নভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছিল। যেমন-
প্রশাসনিক কর্মচারীঃ-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুবিশাল ভারতকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়োগ করতো।সেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ পদগুলো ইংরেজরা দখল করলেও কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয়রা নিম্নপদে চাকরি পেত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অভ্যন্তরে চাকরি করা সেই সকল মানুষই মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীঃ-
ব্রিটিশ শাসনকালে বহু ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ভারতীয়কে ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যেত। ছোট ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ এবং কিছু ক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যে করে যে মুনাফা লাভ করতো, তার দ্বারা তাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল ছিল।আর্থিক অবস্থা সচ্ছল থাকার ফলে তারা পরবর্তীকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সামরিক বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মীঃ-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক বাহিনীর উচ্চপদ ইংরেজরা দখল করলেও কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয়রাও সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদে চাকরি পেতো। উচ্চ পদে চাকরি পাওয়ার ফলে তাদের সমাজে তাদের যথেষ্ট মান সম্মান ছিল। উচ্চ বেতনসহ সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সেই সমস্ত শ্রেণি পরবর্তীকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে উঠে আসে।।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষঃ-
ব্রিটিশ শাসনকালে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের ফলে অনেকেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তরে বিভিন্ন চাকরি করতো।যারা চাকরি করতো না তারা বিভিন্ন ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি পেশা যেমন -শিক্ষক, উকিল, ডাক্তার, সরকারি আমলা প্রভৃতি হিসেবে নিজেদের কর্মজীবন শুরু করতো। এর ফলে তাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভাবে ভালোই থাকতো। স্বি সমস্ত পেশায় কর্মরত ব্যক্তিরাই পরবর্তীকালে মধ্যবিত্ত সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়।।
মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিঃ-
ব্রিটিশ শাসনকালে প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, রায়তওয়ারি, মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ইত্যাদির ফলে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এই শ্রেণি কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে জমিদার বা ইজারাদারদের হাতে দিতো।ইজারাদার বা জমিদার সে খাজনা আবার ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দিত। জমিদার এবং কৃষকের মাঝখানে থাকা সেই শ্রেণির মানুষ ই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।।
উপরিক্ত আলোচনা ছাড়াও আরও নানা উপায়ে ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের প্রধান প্রেসিডেন্সি অর্থাৎ কলকাতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল।।
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা || WB Class 12 Modern Indian History Question Answer And Suggestion 2023
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর |
বিষয়ঃ-
• ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভূমিকা
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উডের ডেসপ্যাচের ভূমিকা
• ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় ডেভিড হেয়ার ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন এবং অন্যান্যদের ভূমিকা
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভূমিকা
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উডের ডেসপ্যাচের ভূমিকা
• ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় ডেভিড হেয়ার ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন এবং অন্যান্যদের ভূমিকা
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা ||ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ইতিহাস বর্ণনা করো
ভূমিকাঃ- 1813 খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত ভারতে নাতো সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আর নাতো বেসরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের বা আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাসের পর ব্রিটিশ সরকার সরকারিভাবে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়। সরকার ছাড়াও ভারতের কিছু শিক্ষা অনুরাগী এবং সমাজ সংস্কারক ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগে নিয়েছিল।ভারতীয় ছাড়াও ভারতের কল্যাণকামী কিছু বিদেশীরাও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খ্রিষ্টান মিশনারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। মূলত এভাবেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস শুরু হয়।।
বেসরকারি উদ্যোগে মিশনারীদের উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ-
ভারতের সর্বপ্রথম আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা হয়েছিল বেসরকারী উদ্যোগর খ্রিস্টান মিশনারীদের হাত ধরেই। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকরা তাদের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার অথবা তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের মুলনীতির প্রসারের উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।ভারতীয়রা যাতে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারে, সেই কারণে খ্রিস্টান মিশনারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন যেমন জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং উইলিয়াম কেরি যাদের একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হয়, তারা সর্বপ্রথম 1800 খ্রিষ্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা করেছিলেন।। শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন 1818 শ্রীরামপুর একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এছাড়াও শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন, চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং লন্ডন মিশনারী সোসাইটির উদ্যোগে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কিছু আধুনিক ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।আলেকজান্ডার ডাফ 1836 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউট যা বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত, সেটি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ ভারত বাংলায় বিভিন্ন স্থানে আধুনিক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় যা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগঃ-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে মূলত দুই ভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে ছিল। প্রথমত টমাস বেবিংটনের মেকলে মিনিট প্রস্তাবের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়তো 1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত উডের ডেসপ্যাচ এর মাধ্যমে।
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে টমাস ব্যাবিংটন মেকলের মেকলে মিনিট-
1813 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সনদ আইনে প্রতিবছর ভারতের শিক্ষা খাতে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়কিন্তু এই এক লক্ষ টাকা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার পদ্ধতিতে ব্যয় করবে, তা নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত টমাস ব্যাবিংটন মেকলে তার মেকলে মিনিটের মাধ্যমে ভারতের প্রাচ্য শিক্ষা পদ্ধতিকে নিকৃষ্ট বলে দাবি করে পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতিকে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব জানায় যে মেকলে ভারতীয়দের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের রক্ত মাংসে ভারতীয় কিন্তু শিক্ষা, নীতি, মানসিক চিন্তাধারা ইত্যাদি দিক থেকে ইংরেজে পরিনত করতে চেয়েছিল। ম্যাকলের প্রস্তাব কে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে পাশ্চাত্য শিক্ষা কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।এর পরেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, বোম্বাই 1835 খ্রিস্টাব্দে এলফিস্টোন ইনস্টিটিউট, 1857 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো একাধিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উডের ডেসপ্যাচ:-
বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি চার্লস উড ভারতের উচ্চ শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর এক নির্দেশনায় তিনি ভারতের বিভিন্ন শহরে আরো বেশি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ এবং প্রতিটি প্রেসিডেন্সি শহরে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।এবং তিনি শিক্ষক- শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নারীশিক্ষার প্রসার ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন। উডের ডেসপ্যাচকে গুরুত্ব দিয়ে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন স্থানে কিছু আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিল।
ব্যক্তিগত বা বেসরকারী উদ্যোগে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ-
ভারতে বিশেষ করে বাংলায় যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায়,ডেভিড হেয়ার,রাধাকান্ত দেব, ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন সাহেব প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন।
রাজা রামমোহন রায়ঃ-
রাজা রামমোহন রায় সর্বপ্রথম ভারতের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি 1815 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক একটি ইংরেজী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়াও পরবর্তীকালে তিনি অন্যান্য আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।
ডেভিড হেয়ার, ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকাঃ-
রাজা রামমোহন রায়ের পরবর্তীকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার কলকাতা হিন্দু কলেজ, 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ফিমেল স্কুল, স্কুল বুক সোসাইটি, পটলডাঙ্গা একাডেমি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা হয়।এবং রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারকে সমর্থন করে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উপরিক্ত কয়েকজন ছাড়াও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে আরও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
উপসংহারঃ সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ভারতে প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার মূলত বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারী, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সেই সমস্ত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীআধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছিল। ভারতের সেই সমস্ত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে শিল্প, বাণিজ্য, চিকিৎসা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি কাজে নিজেদের নিয়োগ করে দেশের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল।
বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? ||West Bengal Board Modern Indian History Question Answer 2023
বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? |
বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকাঃ উনিশ শতক থেকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার করতে শুরু করলে বাংলায় নবজাগরণের সূচনা ঘটতে শুরু করে,সেই সময় যেসমস্ত ব্যক্তিরা বাংলার সমাজ সংস্কার করে বাংলার উন্নতি ঘটাতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিলেন রাজা রামমোহন রায় রাজা। সেকারণেই রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ, ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত, আধুনিক ভারতের জনক, আধুনিক ভারতের ইমাসরাস, ভারত পথিক ছাড়াও আরও নানা সম্মানিও উপাধি দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়।। রাজা রামমোহন রায় মূলত তিন ভাবে বাংলার সমাজ সংস্কারে নিজের অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। সমাজের কল্যাণের জন্য এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রথা দূর করে সমাজকে উন্নত করে তোলার জন্য তিনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে বিধবা নারীদের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন এবং তৃতীয়তঃ তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটা। যেমন -
শিক্ষা বিস্তারে সমাজ সংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকাঃ-
রাজা রামমোহন রায় সর্বপ্রথম এটা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন যে, ভারতের সার্বিক কল্যাণ তখনই সম্ভব যখন এদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটবে। ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উদাসীন হওয়ার কারণে তিনি নিজ উদ্যোগেই সর্বপ্রথম ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সমাজ থেকে আধুনিক শিক্ষার অভাবকে দূর করে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তিনি সমাজকে আধুনিক করে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।
অ্যাংলো হিন্দু স্কুলঃ-
তৎকালীন সময়ে খুবই কম পরিমাণ ইংরেজি বিদ্যালয় ছিল। তাই সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ছিল প্রচুর।তাই রাজা রামমোহন রায় এই অভাব দূর করতে 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের উদ্যোগেই কলকাতায় " অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক " একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলে।
বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ-
তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে সমাজকে আধুনিক করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূর করে সমাজে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসার করা।
সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠাঃ-
রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে "ব্রাহ্মসমাজ" করা হয়।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনঃ-
রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ গঠন করার পর, তিনি সেই সময়কার সমাজের একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কুপ্রথা " সতীদাহ প্রথা " -র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের সকল নেতারা সেরকমভাবেও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে আসেননি, কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত সেই ভয়ঙ্কর প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।রামমোহন রায় সেইসময়কার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাধারা যুক্ত কিছু মানুষের সইস্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। এবং সেখানে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের দাবি জানান। সরকার রাজা রামমোহন রায়ের এই আবেদন মেনে নিয়ে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 জ ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। ব্রাহ্মসমাজের অথবা রাজা রামমোহন রায়ের এই আন্দোলনের ফলেই সেই সময় সমাজের একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা বন্ধ হয়।
ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতাঃ-
রাজা রামমোহন রায় বিভিন্ন ধর্মে প্রচারিত জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা ইত্যাদি গুলির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।রাজা রাজা রামমোহন রায়ের কাছে পৌত্তিলিকতা, পুরহিততন্ত্র, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল অর্থহীন। রাজা রামমোহন রায় নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন।
নারীদের অধিকারের সমর্থনেঃ-
রাজা রামমোহন রায় সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে প্রসারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে আসেন। এবং ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষার সমর্থন,সমাজে নারীদের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক সংস্কারঃ-
রাজা রামমোহন রায় রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।এক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় 1821 খ্রিস্টাব্দে সংবাদ কৌমুদী নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক গুলি আলোচনা করতেন।
উপসংহারঃ-
সবশেষে বলা যায় যে, রাজা রামমোহন রায় সেই সময়ের একজন আধুনিক চিন্তাশীল মানুষ হয়েও তার মধ্যে যথেষ্ট আধুনিক মানসিকতা ছিল। রাজা রামমোহন রায়ের সেই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি সমাজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভালো -মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাই তিনি সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে এবং সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে এবং নানা ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার ডাফ,ডেভিড হেয়ার প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের নানাভাবে সমর্থন করে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটান। এবং সতীদাহ প্রথার বন্ধ, ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে নারীদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের পুস্কত- পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটান।
উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা || WB Class 12 History Question Answer And Notes 2023
সমাজ এবং শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা |
উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা
ভূমিকাঃ-
উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলার সমাজের হিন্দু ধর্মে নানা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা, নারীদের যথেষ্ট অধিকারের অভাব, নারী শিক্ষার অভাব ইত্যাদি নানা খারাপ দিকগুলো ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষরা সমাজ থেকে সেই খারাপ দিকগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন, বা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন,তাদের মধ্যে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে একজন সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও তিনি নিজেকে সংস্কৃত শিক্ষার মধ্যে এবং হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান, কুসংস্কার ইত্যাদির মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি এই সমস্ত কিছু থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি তার আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তার এই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি বাংলার শিক্ষার এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষার সংস্কারঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তৎকালীন সমাজের উন্নতির জন্য তিনি প্রথমত শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি মূলত দুই ভাবে বাংলা শিক্ষার বাংলার শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমত তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গ্রন্থ এবং পাঠ্যপুস্তক এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।।
নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর সহকারী পদে থাকাকালীন, বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি বাংলার নারীদের জন্য 35 টি বালিকা বিদ্যালয় এবং 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।
পাঠ্যপুস্তক রচনাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি। তিনি শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও নিজের উদ্যোগেই রচনা করেছিলেন। যেমন শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়,কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি ইত্যাদি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এইসব গ্রন্থ গুলি ছিল মূলত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য।
নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বঃ
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জিনিসটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বর্তমান সমাজের উন্নয়নের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য সমাজে নারীদের শিক্ষার প্রসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ মা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে মায়ের শিক্ষার হাত ধরেই ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষায় আগ্রহী হবে বা সমাজ শিক্ষিত হবে। এজন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের ভূমিকাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেমন বাংলার শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, ঠিক একইভাবে তিনি বাংলার সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন, নারীশিক্ষার প্রসার, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ছিল উল্লেখযোগ্য।।
বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকাঃ-
সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো মেয়ে যদি বিধবা হতো, তাহলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গেই জীবন্ত চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হতো।ফলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা হিসেবে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা আইনি ভাবে বন্ধ হওয়ার পর,স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েরা বিধবা হিসেবে তাদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও, সমাজে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মেয়েরা বিধবা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের স্বামীর সম্পত্তি থেকে নিজেদের অধিকার হারিয়ে ফেলতো। এবং অপরদিকে বেশিরভাগ মেয়েরাই পিতার গৃহে ফিরে গিয়ে সেরকম ভাবে ও সুখে থাকতে পারত না।
যার ফলে তাদের নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো। বিধবাদের যাতে এই কষ্ট সহ্য করতে না হয়,সেজন্যই বিদ্যাসাগর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করার অধিকার আইনে ভাবে পাশ করানোর জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।তিনি চেয়েছিলেন যে, কোনো স্ত্রী যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়, তাহলে সে যেন সরকারিভাবে পুনরায়, নিজের পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করার অধিকার পায়। এবং পুনরায় বিয়ে করে নতুন সংসার জীবনে ফিরে যেতে পারে। এবং এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই বিদ্যাসাগর 1857 খ্রিস্টাব্দের দিকে তার বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।
বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহের বিরোধিতাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের নারীদের উন্নয়ন এবং নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন সময়ে সমাজের প্রচলিত বাল্যবিবাহ এবং বহু বহুবিবাহের তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করার পর তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন।কিন্তু মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৎকালীন সময়ের জন্য বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ বাল্য বিবাহ বন্ধের আন্দোলন সেখানেই থেমে যায়। কিন্তু এই আন্দোলন পরবর্তীতে ব্রাহ্ম সমাজের মধ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা উত্সাহ জুগিয়ে ছিল।
অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরোধিতাঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন আধুনিক চিন্তাশীল ব্যক্তি হওয়ার কারণে, তার কাছে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কূপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ অর্থহীন। হিন্দু সমাজ তথা প্রাচীন বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এবং বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রসার এবং কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা তৈরী করার চেষ্টা করেছিলেন।
উপসংহার,সবশেষে বলা যায়,বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত বাঙালি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে, তিনি সমাজ সংস্কারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের শিক্ষা, নারীদের অধিকার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধিতা,শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কাজ কর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত এবং শিক্ষিত করে তোলার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।।
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো বা ঔপনিবেশিক ভারতে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো || ঔপনিবেশিক ভারতে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- উনিশ শতকে ভারতের বাংলায় সর্বপ্রথম বিভিন্ন আধুনিক চিন্তাধারা যুক্ত এবং সমাজের কল্যাণকামী মানুষের হাত ধরেই সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে বাংলা অনুকরনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বাংলায় এই সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব নাথ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, শ্রীরামকৃষ্ণ, নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ। বাংলার এই সমাজ সংস্কারকদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং তীব্র আন্দোলনের ফলে বাংলা সমাজে এর বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন-
আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ-
সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের ফলেই ভারতে বিশেষ করে বাংলায় তৎকালীন সময়ে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরেই বাংলায় সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজা রামমোহন রায় সরকারি দিক থেকে কোনো সাহায্য না পেয়ে তিনি নিজেই 1815 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে রাজা রামমোহন রায় 1823 খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্ট একটি চিঠির মাধ্যমে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে।
সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস এবং কুপ্রথা হ্রাসঃ-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,রাজা রামমোহন রায়, নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ ছাড়াও আরো অন্যান্য বিভিন্ন আধুনিক চিন্তা সম্পন্ন মানুষের তীব্র আন্দোলনের ফলে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস, কুপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, আচার অনুষ্ঠান প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রচার চালনোর ফলে তৎকালীন সময়ে হিন্দু সমাজে বিশেষ করে ভারতীয় সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস, কুপ্রথা ইত্যাদি অনেকটাই কমে গিয়েছিল।। যেমন 1829 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের তীব্র আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়। পরবর্তীকালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তীব্র আন্দোলনের ফলে বিধবা বিবাহ প্রচলিত হয়। এবং পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে সরকার চাপে পড়ে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাস করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করে। অন্যদিকে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী প্রমুখের আন্দোলনের ফলে বাংলার বিভিন্ন ধর্মীয় কুসংস্কার,অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদি অনেকটাই কমে যায়।
নারী সমাজের উন্নতিঃ-
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ব্রাহ্ম সমাজের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে তৎকালীন সময়ে নারী সমাজের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনের ফলেই বিধবা নারীর প্রাণে বেঁচে যায়। দ্বিতীয়তঃ বিধবা অবস্থায় সারাজীবন কাটানোর থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীদের হয়ে তীব্র আন্দোলন করে। ফলে সরকার বিধবাদের পুনরায় বিধবা বিয়ে করার অধিকার দেয়। এবং সবশেষে ব্রাহ্মসমাজের তীব্র আন্দোলনের ফলে সরকার চাপে পড়ে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ করে। এরপর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ড্রিংক ওয়াটার বেথুন এবং অন্যান্য কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে বিভিন্ন নারী শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান বা স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে অনেক নারীরা শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়েছিল।।
জাতীয়তাবাদের বিকাশঃ-
বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলে বাংলায়,বিশেষ করে কলকাতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছিল। প্রথম দিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ব্রিটিশ সরকারকে ভারতের জন্য কল্যাণকর বলে মনে করলেও পরবর্তীতে তারাই বুঝতে পেরেছিল যে,ব্রিটিশ সরকার কখনোই ভারতের জন্য কল্যাণকর নয়। সেজন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই প্রথম ভারতের নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে পরবর্তীতে তা মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার হয়।।
উপসংহার, সুতরাং দেখা যায় যে, উনিশ শতলে বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে যে সমাজ সংস্কার আন্দোলন এবং শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ দেখা দিয়েছিল, তা মূলত বাংলা সমাজে বিশেষ করে ভারতীয় সমাজে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন এবং শিক্ষার প্রসার উদ্যোগ ভারতীয় সমাজকে কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস সহ আরও বিভিন্ন বিভিন্ন খারাপ দিক গুলি ত্যাগ করতে শিখিয়েছিল। এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলনের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাগরিত জাতিয়তাবোধ পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনে শক্তি জুগিয়ে ছিল।।
নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী কারা? সমাজ সংস্কারে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ভূমিকা আলোচনা করো || WB Board Class 12 History Question Answer And Suggestion 2023
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 |
নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী কারা? সমাজ সংস্কারে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ভূমিকা আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ছিল উল্লেখযোগ্য। হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার অনুগামী ছাত্রদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীই সর্বপ্রথম বাংলার হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে কুঠারাঘাত করেছিল এবং তাদের মাধ্যমেই মূলত বাংলায় সর্বপ্রথম আধুনিক মানসিকতা গড়ে উঠেছিল।।
নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল কাদের বলা হত?
উনিশ শতকে বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনে বাংলার সমাজে বিশেষ করে হিন্দু সমাজে বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা এবং ধর্মীয় গোড়ামী প্রচলিত ছিল। উনিশ শতকে বাংলার সমাজেদ বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই আধুনিক চিন্তাধারা বা যুক্তিবাদী চিন্তা ধারা ছিল না। যার ফলে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কূপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজকে পেয়ে বসেছিল। সেই সময় হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজ থেকে সেই সমস্ত কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করে সমাজে যুক্তিবাদী এবং আধুনিক চিন্তাধারা প্রসারের উদ্দেশ্যে,তার কয়েক জন অনুগামীদের নিয়ে যে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাই ছিল ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। এবং হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার কয়েকজন অনুগামীদের বলা হত ইয়ং বেঙ্গল অথবা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী।।
নব্য বঙ্গ আন্দোলন অথবা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। যেমন -
1- বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস গুলি বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চালিয়ে সমাজ তা থেকে দূর করা। এবং সমাজে আধুনিক এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়ে, সমাজকে আধুনিক করে তোলা।
2 - ছাত্র সমাজের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের মধ্যে সেই সমস্ত সামাজিক এবং ধর্মীয় কুপ্রথার প্রভাব দূর করে তাদের বিজ্ঞান মনষ্ক করে তোলা।
3 - সমাজের নারী শিক্ষার অধিকার আদায় করা এবং নারীদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
4 - দেশীয় সংবাদপত্র গুলির স্বাধীনভাবে লেখা প্রকাশের অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য আন্দোলন করা ইত্যাদি।।
সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর ভূমিকাঃ-
হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস যেমন- জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর ছাত্র মন্ডলীদের নিয়ে তাদের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেই সময়টা জুড়ে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন চলদছিল, সেই সময়ের সবটা জুড়েই তারা সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গিয়েছিলেন। যেমন -
অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনঃ-
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর অথবা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল 1827 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত তাদের অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন।নববঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে,,তারা সমাজে প্রচলিত অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা,সতীদাহ প্রথা, মূর্তিপূজা ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে, সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রচার করার চেষ্টা করতেন।।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশঃ-
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী সদস্যরা সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথা গুলির বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য বেশ কিছু পত্র-পত্রিকার সাহায্য নিয়েছিলেন। যেমন- এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা ক্যালাইডোস্কোপ প্রভৃতি পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশ করতেন।। নব বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা প্রভৃতি পত্রিকায় শিক্ষা নারী স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। এবং অন্যদিকে ক্যালাইডোস্কোপ পত্রিকার ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজদের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখনি প্রকাশ করেছিলেন।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের অবসানঃ-
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল বলে, তারা খুব শীঘ্রই রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের কাছে একপ্রকার পথের কাটা হয়ে দাড়ায়। নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল সমাজকল্যাণে। কিন্তু সমাজকল্যাণে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। 1831 খ্রিস্টাব্দে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও মৃত্যুর পর,এই আন্দোলন ধীরে ধীরে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে। এবং একসময় নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
উপসংহারঃ- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার অনুগামী ছাত্রদের নিয়ে গড়ে ওঠা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হলেও মূলত তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু করেছিলেন,তা অনেকাংশেই সফল হয়েছিল। নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী মূলত ভারতে তথা বাংলার হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান, যাগযজ্ঞ, কু-প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাজ থেকে দূর করতে চেয়ে ছিলেন। তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলার মানুষ মধ্যে যুক্তিবাদী হয়ে উঠেছিল। মূলত তারাই সর্বপ্রথম সমাজের এই খারাপ দিক গুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে মানুষকে আধুনিক হয়ে ওঠার পথ দেখিয়েছিলে।
WB Board Class 12 History Question Answer And Suggestion 2023 || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 |
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব এবং শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো || ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং 1764 খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সরকার অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ভারতের অভ্যন্তরেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। সেই শিল্প-কারখানায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়। প্রথম দিকে শ্রমিকদের অবস্থার ভালো থাকলেও ধীরে ধীরে শ্রমিকদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার এবং শোষনের শিকার সেই শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে শুরু করে। এবং সেই ক্ষোভের কারণেই তারা বিভিন্ন নেতার নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনে শামিল হয়।
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভবঃ-
1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং 1764 খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সরকার অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ভারতের অভ্যন্তরেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলে।ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের উদ্যোগে এদেশে লৌহ ইস্পাত, শিল্প,কাগজ শিল্প,চা শিল্প, পাট শিল্প,কয়লা শিল্প,সুতিবস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট,কাচ, দেশলাই রাসায়নিক প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল এই সমস্ত কলকারখানা গুলিতে কাজ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল বিরাট সংখ্যক শ্রমিকের। সেই চাহিদা মেটানোর জন্যেই ভারতের অত্যন্ত গরীব সাধারন মানুষদের তারা শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করেছিল। মূলত এভাবেই ভারতে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।।
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের কারণঃ-
ভারতে যে কয়েকটি শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল,তার পেছনে নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ ছিল। সেই কারণ গুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো-
• বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত ভারতীয় শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিম্নমানের মজুরি দেওয়া হতো।
• ভারতীয় শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হতো,তাদের তাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যেত।
• দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছিলো।
• অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের কাজের সময় সীমার তুলনায় ভারতীয় শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা ছিল অনেক বেশি।
• উপরিক্ত কারণ গুলির বিরুদ্ধে তিলক এবং শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের হোমরুল আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন শ্রমিকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং এই সমস্ত কারণেই ভারতীয় শ্রমিকরা,শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের সূচনাঃ-
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য ভারতের সর্বপ্রথম শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা 1917 খ্রিস্টাব্দে। ভারতে সর্বপ্রথম আমেদাবাদের বস্ত্রশিল্পের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু করে। এছাড়াও এই সময় রেলওয়ে কারখানা, গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে,বোম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প, ডাক বিভাগের শ্রমিকরাও ধর্মঘটে সামিল হয়। এরপর 1919,20 খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাসা ছাড়াও আরও একাধিক স্থানে রেল কারখানা, চা বাগান,বস্ত্র শিল্প, চট কারখানা, সিমেন্ট কারখানা,প্রভৃতিতে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়।।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গঠনঃ-
ভারতের বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া সেই সমস্ত শ্রমিক আন্দোলন গুলিকে আরও জোরদার করার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে।এর মধ্যে 1918 খ্রিস্টাব্দে বি.পি.ওয়াদিয়ার নেতৃত্রে মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন, জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে 1920 খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতাদের উদ্যোগে গঠিত ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টি, 1931 খ্রিস্টাব্দের রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, 1934 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি প্রভৃতি শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে।।
শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকাঃ-
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্ডে এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতারা ভারতের শ্রমিক আন্দোলন গুলিকে আরো শক্তিশালী করে তোলার এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ সালে ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ, তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ,ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অর্জন, জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন করার আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তারা এই বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য, গণবানী, শ্রমিক, সোসালিস্ট, লেবার কিষণ গ্যাজেট ইত্যাদি সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন।।
ভারতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং কমিউনিস্ট পার্টির ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন জোড়ালো হয়ে ওঠে। বোম্বাই, বাংলা, বিহার, মাদ্রাসে রেল কোম্পানিতে, বস্ত্র শিল্পে, চা শিল্পে, পাট শিল্প প্রভৃতি শিল্পে ব্যাপক শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘট শুরু হয়।।
শ্রমিক আন্দোলন দমনঃ-
ব্রিটিশ সরকার ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতা এবং জোড় বুঝতে পারে। সেই কারণে সরকার সমস্ত শ্রমিক আন্দোলন গুলি দমন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভারতের শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতের কমিউনিস্ট নেতাদের প্রভাব রোধের চেষ্টা করে।এজন্য তারা ভারতে শিল্পবিরোধ বিল এবং জননিরাপত্তা বিল নামে দুটি শ্রমিক স্বার্থবিরোধী বিল পাস করে। শিল্প বিরোধ বিলের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতে সমস্ত রকম শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘটকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। এবং জন নিরাপত্তা বিলের মাধ্যমে তারা ভারতে কমিউনিস্টদের প্রভাব রোধ করে। শ্রমিক আন্দোলন থেকে দূরে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার 33 জন কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করে। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত সেই মিথ্যে মামলায় কয়েকজন বিদেশি নেতাসহ ভারতের নামকরা কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয় এবং তাদের দীর্ঘ মেয়াদী এবং অন্যান্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে তারা শ্রমিক আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু এত কিছুর পরেও ব্রিটিশ সরকার কখনোই ভারতে সম্পূর্ণরূপে শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘটকে দমন করতে পারেনি।।
আশাকরি যে, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ History MCQ Question Answer,WB Class 12 Modern Indian History SAQ Question Answer,Class 12 History Long Question Answer And History Notes তোমাদের কাজে আসবে।
Tags :