একাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায়ঃ রাষ্ট্রের এবং তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর || WB Class 11 History Question Answer 2023

0

 

একাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায়ঃ রাষ্ট্রের এবং তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর || WB Class 11 History Question Answer 2023

আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 3 in Bengali) রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং তার শাসনযন্ত্র ( wb class 11 history question answer and suggestion 2023) থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ class 11 history mcq question answer, modern Indian history saq question answer, and wb class 11 history LA Question Answer And History Notes তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এর আগের পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন 2022-23 তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। এবং তারপর আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন 2022-23 হিসেবে যে সমস্ত প্রশ্ন রেখেছিলাম, আর তার বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা চাইলে তার উওর সেখান থেকে দেখে নিতে পারো।।


একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11 History MCQ Question Answer

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11 History MCQ Question Answer
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উওর

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর || WB Class 11 History MCQ Question Answer


1. কাকে ‘ভারত ইতিহাসের ম্যাকিয়াভেলি' বলা হয়?

A- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে 

B- কৌটিলাকে

C- অশোককে

D- আলাউদ্দিন খলজিকে

উওর : কৌটিলাকে


2. অর্থশাস্ত্রে কয় প্রকার বিবাহের উল্লেখ আছে?

A- ১৬

B- ৯

C- ৮

D- ১২

উওর : ৮


3. 'ফতোয়া-ই-জাহান্দারি' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন— 

A- ইসামি

B- সিরাজ

C- বরনি

D- আফিফ

উওর : বরনি


4. ‘ফতোয়া-ই-জাহান্দারি’ গ্রন্থের মূল আলোচ্য বিষয় হল

A- রাষ্ট্রনীতি 

B - ধর্ম

C-  সমাজ 

D - অর্থনীতি


5. কোন্ দেশের রাজতন্ত্রকে দিল্লি সুলতানির অনুসরণ করা উচিত বলে বরনি মনে করতেন?

A- মিশরের 

B- স্পেনের 

C- আরবের 

D- পারস্যের

উওর : পারস্যের


6. কবে বাগদাদের খলিফাতন্ত্রের পতন ঘটে? 

A- ১১৯২খ্রি. 

B- ১২০৬ খ্রি. 

C- ১২৫৮ খ্রি. 

D- ১২৯৬ খ্রি.

উওর : ১২৫৮ খ্রি. 


7. দিল্লির কোন্ সুলতান সর্বপ্রথম খলিফার স্বীকৃতি পান?

A- কুতুবউদ্দিন আইবক

B- ইলতুৎমিস

C- বলবন

D- আলাউদ্দিন খলজি

উওর : ইলতুৎমিস


8. 'অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি' নামে আইনটি কবে পাস হয়? 

A-১৪৮৫ খ্রি. 

B- ১৫৩৪ খ্রি. 

C- ১৫৩৬ খ্রি. 

D- ১৫৪৯ খ্রি.

উওর : ১৫৩৪ খ্রি. 


9. কোন্ রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে নিয়ে রাষ্ট্র-সমবায় গঠনের স্বপ্ন দেখতেন

A-প্লেটো

B- টমাস ক্রমওয়েল

C- সিসেরো

D - রুশো

উওর : সিসেরো


10. কবে ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লব সংঘটিত হয়? 

A-১৫৩৪ খ্রি. 

B- ১৫৪৯ খ্রি. 

C- ১৬০২ খ্রি.

D- ১৬৮৮ খ্রি.

উওর : ১৬৮৮ খ্রি.


11. বিশেষ ধরনের টুপি ব্যবহার করতেন - 

A- ম্যান্ডারিনরা

B- স্যাট্রাপরা

C- মনসবদাররা 

D- ইক্তাদাররা 

উওর : ম্যান্ডারিনরা


12. কোন্ সম্রাট মনসবদারি প্রথার প্রচলন করেন? 

A- আলাউদ্দিন খলজি

B- ইস্তাদাররা

C- জাহাঙ্গীর

D- আকবর

উওর : আকবর


13. কৌটিল্যের অপর নাম হল

A- চাণক্য 

B- শ্যাম শাস্ত্রী

C- বিরুশর্মা

D- রাধাগুপ্ত

উওর : চাণক্য।


14. কৌটিল্যের মতে—

A- সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী হল স্বভাবজাত মিত্র 

B- সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী হল স্বভাবজাত শত্ৰু

C- শান্তিই যুদ্ধের সৃষ্টি করে। 

D- রাজা হবেন স্বেচ্ছাচারী

উওর : সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী হল স্বভাবজাত শত্ৰু


15. অর্থশাস্ত্র অনুসারে- 

A- রাজা তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখবেন।

B- রাজা হবেন সাম্রাজ্যবাদী

C- রাজা হবেন কুটনীতিপরায়ণ 

D- রাজা দরিদ্র মেয়েদের বিবাহদানের ব্যবস্থা করবেন

উওর : রাজা তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখবেন।


16. জিয়াউদ্দিন বরনি মনে করেন যে—

A- ধর্মীয় বিষয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা অনুচিত।

B- রাজা ও সভাসদদের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য রাজার হস্ত ও প্রচুম্বন প্রথা বাতিল হওয়া উচিত

C- রাজার বংশকৌলীন্য থাকা উচিত 

D- রাষ্ট্রের বিচারের ফল সর্বদা রাজার পক্ষে থাকা উচিত

উওর : রাজার বংশকৌলীন্য থাকা উচিত 


17.সিসেরো ছিলেন - 

A- একজন প্রখ্যাত রোমান আইনজ্ঞ

B- অ্যারিস্টটুলের ছাত্র

C - একজন রোমান শাসক

Ð- একজন রোমান বিচারক

উওর : একজন প্রখ্যাত রোমান আইনজ্ঞ


18. সপ্তম হেনরি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে - 

A- নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলা 

B- স্টুয়ার্ট রাজতন্ত্র বলা হয়। হয়

C- মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজতন্ত্র বলা হয় D- নতুন রাজতন্ত্র' বলা হয়।

উওর : নতুন রাজতন্ত্র' বলা হয়।


19. ইংল্যান্ডে নতুন রাজতন্ত্রের কালে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল -

A- বিচারবিভাগের ক্ষমতা হ্রাস

B- ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত

C-  পার্লামেন্টের ক্ষমতা হ্রাস

D- সামাজিক স্থবিরতা 

উওর : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত


20. টমাস ক্রমওয়েল অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি' নামক আইনের দ্বারা - 


A- বড়ো মঠগুলি বাজেয়াপ্ত করেন 

B- ছোটো মঠগুলির ওপর আধিপত্য বৃদ্ধি করেন

C-  মঠের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নিজের আত্মীয়দের দান করেন।

D-  বিদ্রোহী নেতাদের মৃত্যুদণ্ড বা কারাদণ্ড দেন।

উওর : ছোটো মঠগুলির ওপর আধিপত্য বৃদ্ধি করেন


21. কৌটিলা ছিলেন___প্রধানমন্ত্রী।

A- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের

B- অশোকের

C- বিন্দুসারের 

D- সমুদ্রগুপ্তের যুগের

উওর : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের


21. জিয়াউদ্দিন বরনি ছিলেন____ যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক।

A- আদি-মধ্য 

B- সুলতানি 

C- মোগল

D- গুপ্ত

উওর : সুলতানি


22. ড. শ্যামশাস্ত্রী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে____ গ্রন্থটি আবিষ্কার করেন। 

A- অর্থশাস্ত্র

B- মুদ্রারাক্ষস 

C- ফতোয়া-ই-জাহান্দারু

D- রাজতরঙ্গিণী 

উওর : অর্থশাস্ত্র


23. অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য রাষ্ট্রের_____টি অঙ্গের কথা বলেছেন।

A- 7 টি

B- 8 টি

C- 9 টি

D- 18 টি

উওর : 7 টি


24.সিসেরো _____ শাসনের সমর্থক ছিলেন।

A- রাজতান্ত্রিক

B- প্রজাতান্ত্রিক

C- নৈরাজ্যবাদী

D- অভিজাত তান্ত্রিক

উওর : প্রজাতান্ত্রিক


25. দ্য প্রিপ' গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন - 

A- ম্যাকিয়াভেলি

B- টমাস ক্রমওয়ে

C- হবস 

D- রুশো 

উওর : ম্যাকিয়াভেলি


26- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক' নামে পরিচিত - 

A- ম্যাকিয়াভেলি

B- টমাস ক্রমওয়ে

C- হবস 

D- রুশো 

উওর : ম্যাকিয়াভেলি

 

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো || WB Class 11 History Question Answer And Suggestion 2023 


কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর


 কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর

উওর : চতুর্থ শতকের ভারতের বিখ্যাত কূটনীতি পরায়ন ব্রাহ্মণ কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত তার " অর্থশাস্ত্র " গ্রন্থে রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। বিষ্ণুগুপ্ত বা  কৌটিল্যের রচিত অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটির নাম শুনে স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে,যে এটি ধন সম্পদ বা আর্থিক বিষয় বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বাস্তবে এটি এমন একটি গ্রন্থ যেখানে কৌটিল্য তার নিজস্ব রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন।

কৌটিল্যের রচিত এই অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে আমরা রাজ্য পরিচালনা অথবা রাষ্ট্রপরিচালনা এবং রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে রাজার বিভিন্ন কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারি।  

◆ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি -

◆ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ : কৌটিল্য একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন ভাগ এর কথা উল্লেখ করেছেন. আমাদের দেহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যেমন পঞ্চ ইন্দ্রিয় ঠিক থাকা প্রয়োজন,ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য - রাজা,আমললগোষ্ঠী, দুর্গ - শহর,  অর্থভাণ্ডার,শাস্তি,বিধান ও বন্ধুরাজ্য -  এই সাতটি উপাদান থাকা প্রয়োজন।

◆ রাষ্ট্রের আয়তন : কৌটিল্যে তার

অর্থশাস্ত্রের রাষ্ট্রের আয়তন সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনো মতবাদ প্রকাশ করেননি। কিন্তু অনেকে এটা মনে করেন যে - কৌটিল্য বৃহদায়তন রাষ্ট্রের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে একটি রাষ্ট্রের আয়তন যত বেশি হবে, সেও রাষ্ট্র থেকে সম্রাট ততো বেশি পরিমাণ রাজস্ব অথবা খাজনা আদায় করতে পারবেন।এবং সেই আদায় করা খাদ্যের মাধ্যমে রাজকোষ বা সাম্রাজ্যের অর্থভাণ্ডার যতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সুতরাং রাষ্ট্রের আয়তন  বৃহৎ হওয়া উচিত বলেই তিনি সমর্থন করতেন।

◆ রাজার ক্ষমতা : কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের রাজা অথবা সম্রাটকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলে উল্লেখ করেছেন। রাজাকে হতে হবে কূটনীতি পরায়ন। সম্রাট অথবা রাজাই হবেন তার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং সর্বোচ্চ শাসক। সম্রাট বা রাজার উপরে কেউ থাকবে না।

◆ ধর্মনিরপেক্ষতা : কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সম্রাট অথবা রাজা যে কোনো ধর্মেরই হোক না কেন,সেই রাষ্ট্রের অথবা সাম্রাজ্যের সমস্ত প্রজাকেও যে সম্রাটের অথবা রাজার ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, তিনি সেরকম কথা বলেননি। রাজার রাজ্য প্রজারা তাদের নিজস্ব যে কোনো ধর্ম পালন করতে পারেন। এবং সেক্ষেত্রে রাজা বা সম্রাটের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।।

◆ রাজার কার্যাবলী : অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য রাজার জন্য এবং তার রাজ্য পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ একটি রাজ্যকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একজন রাজার কি কি করনীয়, তিনি তা খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।

◆ প্রজা কল্যান : কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে  বলা হয়েছে যে - একজন রাজা কখনোই স্বৈরাচারী হবেন না। অর্থাৎ তিনি কখনোই এমন কাজ করবেন না, যার দ্বারা তার প্রজাদের ক্ষতি হতে পারে। রাজা এমন কোনো কাজ করবে না, যার মাধ্যমে সেই রাজ্যের প্রজাদের উপর দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি নেমে আসবে।। সম্রাট হবে এমন একজন যে সবসময়ই তার রাজ্যের প্রজাদের কল্যাণের কথা ভাববে। এবং সেই অনুযায়ী প্রজা কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কাজ করবে।

◆ প্রজাদের আর্থিক সাহায্য : কৌটিল্যে এই কথা উল্লেখ করেছেন যে - রাজাকে তার প্রজাদের- প্রাকৃতিক  দুর্যোগ অথবা দুর্ভিক্ষের সময় তাদের প্রজাদের গিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। এবং মহামারি প্রতিরােধ, অসহায় বৃদ্ধ ও বিধবাদের ভরণ-পােষণের, ত্রান, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে হতে ইত্যাদি।

◆ নগর ও দুর্গ নির্মাণ : বিভিন্ন বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য, কৌটিল্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে এবং রাষ্ট্রের চারিদিকে বিভিন্ন নগর দুর্গ তৈরি করার কথা উল্লেখ করেছেন।

◆ মন্ডলতত্ত্ব : কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রের মন্ডল তত্ত্বের উল্লেখ করেছেন। কৌটিল্যের মতে মন্ডল তত্ত্ব হলো - সীমান্তবর্তী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হলো শত্রু কিন্তু তার পরবর্তী রাষ্ট্র হল মিত্র। রাজাকে এই মন্ডলতত্ত্ব অনুসারে কোনটি তার শত্রু দেশ এবং কোনটি তার মিত্রদেশ তা বুঝে নিতে হবে। 

◆ যুদ্ধ : কুটিলতা অর্থশাস্ত্রে যুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। তিনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেকোনো পন্থাকেই সমর্থন করেছেন। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, যুদ্ধই হলো শান্তির একমাত্র পথ। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে -  কৌটিল্য একজন প্রাচীন ভারতের কূটনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও,তিনি তার অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে উৎকর্ষের প্রমাণ দিয়েছেন,তা সবসময়ই প্রশংসনীয়। 


সপ্তাঙ্গ বলতে কি বোঝো? কৌটিল্য ভূমির ব্যবহার ও কৃষি এবং আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি সম্পর্কে কী বলেছেন তা আলোচনা করো

WB Class XI History Question Answer & Notes | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উওর


ভূমিকাঃ প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত কূটনীতিবিদ কৌটিল্য তার রচিত অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে' একটি রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জীবদেহে যেমন বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে, ঠিক তেমনই কৌটিল্যের মতে একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি অঙ্গ থাকা দরকার। এই সাতটি হল - স্বামী ( রাজা ), অমাত্য ( আমলাগোষ্ঠী ) পুর ( দুর্গ - শহর ), জনপদ ( রাষ্ট্র ), কোষ ( অর্থভাণ্ডার ), দন্ড ( শাস্তি বিধান ) এবং মিত্র অর্থাৎ বন্ধু রাজা।। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কিত এই মতবাদ সপ্তাঙ্গ নামে পরিচিত। অর্থ শাস্ত্রের মতে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এই সাতটি অঙ্গের পৃথক পৃথক কাজ রয়েছে। তাই একটু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই সাতটি অঙ্গ থাকা একান্ত প্রয়োজন।।

◆ ভূমির ব্যবহার ও কৃষি কৃষি  : 

প্রথমতঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের পর্যাপ্ত বিকাশের প্রয়োজনে কৌটিল্য রাষ্ট্রীয় ভূমি সঠিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ভূমির উপর সর্বদা রাষ্ট্রীয় তদারকি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। 

দ্বিতীয়তঃ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মতে কৃষি কাজের প্রতি রাষ্ট্রের সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত। জমিতে বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত সময় চাষিকে সমগ্র প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সাহায্যে করা উচিত।।

◆ আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো বাণিজ্যের দিক এবং অপরটি হল বাণিজ্য কর বা শুল্কের দিক। 

প্রথমতঃ কৌট্যল্য বলেছেন রাষ্ট্রের অর্থনীতি কখনোই বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল হবে না। রাষ্ট্রের অর্থনীতি হবে সম্পূর্ণভাবে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল।। তাই কৌট্যল্য তাঁর এই মতবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। 

দ্বিতীয়তঃ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্যসামগ্রীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে বন্দরে শুল্ক আদায় করতে হবে। তবে বাণিজ্যের সুবিধার এবং শুল্ক ফাঁকি রোধ করার জন্য শুল্কের পরিমান কম রাখতে হবে। 

উপসংহার : সবশেষে বলা যায়, কৌট্যল্য প্রাচীন ভারতের একজন রাষ্ট্রনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও,তিনি তার অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে' রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন তা,সত্যিই বিস্ময়কর। এজন্য প্রশংসা করেন অধ্যাপক আলতেকার বলেছেন যে, - কৌটিল্য শুধু একজন বিখ্যাত রাষ্ট্রনীতিবিদ ছিলেন না,তিনি রাষ্ট্রনীতিবিদ একটি ধারাও প্রবর্তন করেছিলেন। 

একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর || WB Board History Question Answer And Notes Chapter 4

WB Class XI History Question Answer & Notes | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উওর


ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে উল্লেখিত জিয়াউদ্দিন বরনির রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো। | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

ভুমিকা : দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সভাসদ ছিলেন জিয়াউদ্দিন বরনী। জিয়াউদ্দিন বরনি রচিত ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে তিনি রাষ্ট্র এবং ও রাজতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। জিয়াউদ্দিন বরনী রচিত ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থ উল্লেখিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। - 

ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে উল্লেখিত জিয়াউদ্দিন বরনির রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা

◆ রাজা বা সুলতান ই হলেন সর্বোচ্চ শাসক : জিয়াউদ্দিন বরনী তার ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সাম্রাজ্যে সুলতান ই হবেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি হবেন সব প্রকার বাঁধন থেকে মুক্ত। সুলতানের ক্ষমতা হবে বংশানুক্রমিক অর্থাৎ সুলতানের পর তার জ্যেষ্ঠপুত্রই পরবর্তী শাসক। বরনি দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যেকে পারস্যের সাসানীয়া সাম্রাজ্যের অনুকরণে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।। 


◆ সদস্যমন্ডলী : বরনি ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে একপ্রকার বিশেষ সদস্য মন্ডলীএ কথা উল্লেখ করেছেন,,যারা সুলতানকে তার রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া অথবা প্রশাসনিক কার্যে সুলতানকে সাহায্য করতে পারবে।। সুলতানের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সুলতান তার বিশিষ্ট মন্ত্রী মণ্ডলের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করবেন। এবং সেখানে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিজস্ব মতামত প্রকাশ করবেন। এবং সুলতান তাদের মতামত বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে তিনি স্বাধীনভাবে সেই বিষয়ে তার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

◆ আইনকানুন : বরনি তার ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে যে সমস্ত আইন কানুনের কথা বলেছেন, তা মূলত ইসলামের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরানের বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ।  জিয়াউদ্দিন বরনী ইসলামের বিভিন্ন নির্দেশকে মেনেই সুলতানের শাষন পরিচালনার কথা বলেছেন। 

◆ ইসলামের প্রচার ও প্রসার : বরনি তার ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে সুলতানকে বা রাজাকে ইসলাম ধর্মের সংরক্ষণ,তার প্রচার এবং প্রসারের নির্দেশ দিয়েছেন। জিয়াউদ্দিন বরনী মতে একজন মুসলিম শাসক হিসেবে সুলতানেএ কর্তব্য হলো ইসলামের সমস্ত আদেশ মেনে চলা। এবং ধর্মের সংরক্ষণ, প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

◆ ন্যায়বিচার : ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে সুলতানকে বা রাজাকে তার শাসনে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাতা করার কথা বলা হয়েছে। ন্যায়বিচার বলতে এখানে সত্য, ন্যায় ও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাকে বোঝানো হয়েছে। বরনির মতে ঈশ্বরের রাজ্যে সকলেই সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।।তাই রাষ্ট্রে কেউই কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত হব ন। এবং সেই সম্পর্কে রাজা বা সুলতানকে বিশেষ নজর দিতে হবে।  রাজা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করবেন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথে যাবতীয় বাধাকে প্রতিহত করবেন।। প্রয়োজনে এ বিষয়ে রাজাকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে তাকে তাই করতে হবে বল তিনি মনে করতেন।


একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর || WB Board History Question Answer And Notes Chapter 4


একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | WB Class 11 History Question Answer & Notes
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্য লেখ

বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী?

উওরঃ ভারতে বৈদিক যুগে আর্যদের বসতিএ প্রসার ঘটলে,গৌরবর্ণ আর্যরা এদেশের কৃষ্ণবর্ণ অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক রাখার প্রয়োজনীয়তা, এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মের জন্য শ্রম বিভাজনের প্রয়োজনীয়তায় আর্যরা সমাজব্যবস্থাকে যে চারটি পৃথক বর্ণে আলাদা করে রেখেছিল, তাই হল বর্ণপ্রথা। এই বর্ণ প্রথা অনুসারে সমাজব্যবস্থা তখন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য এবং ক্ষুদ্র - এই চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল।।

বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্যঃ-

ভূমিকাঃ প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগে শুরু হওয়া বর্ণপ্রথা এবং জাতিভেদ প্রথা হলো দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ধারণা বা সমাজব্যবস্থা। ভারতে মূলত বৈদিক যুগে যখন আর্যদের বিস্তার ঘটতে শুরু করে, তখন বর্ণপ্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। বর্ণপ্রথা সৃষ্টির পরেই জাতিভেদ প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের সেই বর্ণপ্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে আমরা একাধিক ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারি। যেমন - 

বর্ণ ও জাতি প্রথার উদ্ভবের সময়ঃ 

• ভারতে বর্ণ প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল মূলত বৈদিক যুগে যখন ভারতে আর্যদের বিস্তার করতে শুরু করে, তখন আর্যরা নিজেদের প্রয়োজনেই বনলতা সৃষ্টি করে। 

• বৈদিক যুগে ভারতে বর্ণ প্রথা সৃষ্টির পড়ে নানা কারণে ভারতের জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল। 


নতুন বর্ণ ও জাতির উদ্ভবঃ 

• বৈদিক যুগে চতুর্বর্ণ প্রথার যে চারটি বর্ণ ছিল অর্থাৎ,- ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র,তা পরবর্তী কালে পরবর্তী বৈদিক যুগেও চতুর্বর্ণ প্রথায় সেই চারটি বর্ণের ই অস্তিত্ব ছিল। 

• বৈদিক যুগের জাতিভেদ প্রথায় যে সমস্ত জাতির অস্তিত্ব ছিল,তার পরবর্তী বৈদিক যুগে এবং মৌর্য পরবর্তী যুগে জাতিভেদ প্রথায় অন্যান্য জাতির সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল।

অস্পৃশ্যতার অস্তিত্বঃ 

• বর্ণপ্রথায় যে চারটি বর্ণের অস্তিত্ব ছিল অর্থাৎ, ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র - এই চারটি বর্ণ ছিল সমাজে স্বাধীন এবং মুক্ত। বর্ণপ্রথায় কোনো অস্পৃশ্যতা বর্ণের অস্তিত্ব ছিল না। 

• কিন্তু অপরদিকে জাতিভেদ প্রথার আমরা অস্পৃশ্যতার উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারি। জাতিভেদ প্রথায় যে প্রধান চারটি জাতি ছিল, অর্থাৎ- ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র -এই জাতি ছাড়াও পরবর্তী বৈদিক যুগে জাতিভেদ প্রথা দুটি অস্পৃশ্য জাতির অস্তিত্ব ছিল। তারা ছিল ব্রাত্য ও নিষদ, যারা সমাজের পতিত ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত ছিল।।

 গঠন শক্তিঃ 

• বর্ণ প্রথার মূল গঠন শক্তি ছিল ধর্ম।  বর্ণ প্রথার গঠন শক্তি হিসেবে বংশানুক্রমিতা গ‍ৌণ ছিল। 

• প্রথম পর্যায়ে জাতির মূল গঠনশক্তি ধর্ম হলেও, পরবর্তীতে বংশানুক্রমিতাই জাতির প্রধান গঠনশক্তি হয়ে পড়ে।

বর্ণ ও জাতি প্রথার উৎপত্তির কারণঃ 

• প্রথমদিকে বর্ণপ্রথার উত্পত্তি হয়েছিল মূলত আর্যদেরহপেশা বা বৃত্তির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু যদিও পরবর্তীকালে এই বিষয়টি মূখ্য ছিল না।

•  অন্যদিকে, হার্বাট রিজলের মত ভারতের জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তি পেছনে নানা কারণ রয়েছে। একাধিক উপাদান ভারতে জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তিতে সাহায্য করেছিল।।


মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভবঃ 

• ভারতে যে চতুর্থ বর্ণ প্রথা প্রচলিত ছিল, তার মাধ্যমে ভারতে কোনো প্রকার মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেনি। 

• কিন্তু গুপ্ত পরবর্তী যুগের জাতি প্রথার মাধ্যমে একাধিক বহিরাগত অনার্যদের ভারতে প্রবেশ এবং ভারতীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে ভারতে মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছিল।।

অস্তিত্বঃ 

• হিন্দুসমাজে বর্ণ হল একটি ধারাণাগত কাঠামাে মাত্র। বর্ণপ্রথার বাস্তব অস্তিত্ব সেরকমভাবেও মজবুত নয়। বর্ণপ্রথা হলো একটি মানসিক ও সামাজিক ধারণা, যার মাধ্যমে সমাজ বিভক্ত হয়ে রয়েছে।

• অন্যদিকে জাতি হল একটি বৃত্তি বা পেশাবাচক ধারণা। বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশার জনগােষ্ঠী নিয়ে জাতি গড়ে ওঠে। জাতি হল হিন্দুসমাজের বাস্তব অবস্থার পরিচয়। তাই জাতির অস্তিত্ব নিয়ে কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই।


নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর



নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো

ভূমিকাঃ পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থানের বৌদ্ধিক বা দার্শনিক ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাসকের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার সপক্ষে মতবাদ প্রচার করেন।(যে সকল রাষ্ট্রচিন্তাবিদ প্রথম পর্বের আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশের রাষ্ট্রনীতি বিষয়ে চর্চা করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, জাঁ বোঁদা, টমাস হস, জন লক প্রমুখ। এঁদের মধ্যে হস এবং লক চুক্তি মতবাদী রাষ্ট্রচিন্তাবিদ নামে পরিচিত।


নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাঃ ইতালির বিখ্যাত রাষ্ট্রচিন্তাবিদ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এজন্য নিকোলো ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়।। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তার রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ গুলি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে।  দা প্রিন্স হল সেরকম ই একটি গ্রন্থ যেখানে ম্যাকিয়াভেলি তার রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ তুলে ধরেছেন।। 

মানব প্রকৃতিঃনিকোলো ম্যাকিয়াভেলির মতে মানুষ হল সহজাতভাবে স্বার্থপর, লোভী এবং আত্মকেন্দ্রিক এবং ন্যায় নীতিবোধহীন চরিত্র-বৈশিষ্ট্য। মানুষ সব সময় নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় এবং মানুষের বর্তমানে যা রয়েছে এবং তার চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করার জন্য মানুষের নীতি বিসর্জন দিতে কখনো কোনো আপত্তি থাকে না। এবং মানুষের এই ন্যায়নীতিবোধ হীনতার জন্যই মানুষ মানুষে বিরোধ এবং সংঘর্ষ দেখা যায়। যার ফলে রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।।

ধর্ম এবং নীতিবোধঃ  ম্যাকিয়াভেলির মতে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের ভূমিকা থাকলেও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের কোনো ভূমিকা থাকতে পারেনা। ম্যাকিয়াভেলি বলেন যে,রাষ্ট্রশক্তি কখনোই যাজক বা চার্চের শক্তির অধীনস্থ থাকতে পারেনা। রাষ্ট্রী হবে সবসময়ই ধর্ম এবং নীতিবোধ থেকে স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। শাসককে তার ব্যক্তিগত ধর্মনীতি বোধের উর্ধে উঠে কঠোরভাবে রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র কখনো ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে নাও।।


রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতাঃ আধুনিক চিন্তাবিদদের মধ্যে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবং তিনি আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের তত্ত্ব পেশ করেন। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্র দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রাষ্ট্রক্ষমতা। দ্য প্রিন্স গ্রন্থের তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, সংরক্ষণ এবং প্রয়োগের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংরক্ষণ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের হাতে অসীম ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। এবং সেই অসীম ক্ষমতাই হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা।।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃনিকোলো ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রতত্ত্ব থাকে আমরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাই। যেমন - 

• রাষ্ট্র হবে সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ এবং চার্জ এবং যাজকের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। 

• রাষ্ট্র যেহেতু মানুষের স্বার্থ সিদ্ধি এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্যই সৃষ্টি হয়, সেজন্য রাষ্ট্রে সবসময়ই মানুষের গুরত্ব থাকবে। 

• ম্যাকিয়াভেলির মতে প্রতিটি রাষ্ট্র ই সর্বদা নিজের নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

• নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি মধ্যে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।এবং যেই রাষ্ট্রের শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে, সেই রাষ্ট্র ই হবে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র ও সরকারের স্বরূপঃ দার্শনিক অ্যারিস্টোটলকে অনুসরণ করে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলিও রাষ্ট্র এবং সরকারের মূলত তিনটি স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যথা রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র। তিনি এই তিন প্রকার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর The Prince গ্রন্থে রাজতন্ত্র এবং The Discourse On The First Ten Books Of Titus Livius  গ্রন্থে প্রজাতন্ত্রের সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। ম্যাকিয়াভেলি পরিস্থিতি অনুসারে রাজতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন।।


রাজতন্ত্রের স্বরূপঃ ম্যাকিয়াভেলি রাজতন্ত্রকে এক সাহসী, দৃঢ় ও শৌর্যবীর্যসম্পন্ন বীরত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি রাজতন্ত্রের স্বরূপ সম্পর্কে বলেছেন যে, রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখাই হল রাজার প্রধান দায়িত্ব। এ ছাড়া রাজাকে রাষ্ট্রের জনগণের কাছে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে রাজা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করবেন, নিজে সুদক্ষ যোদ্ধা হবেন, সকল বিরোধী শক্তিকে কঠোর হাতে দমন করবেন এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

প্রজাতন্ত্রের স্বরূপঃম্যাকিয়াভেলি প্রজাতান্ত্রিক শাসনকে মুক্ত রাষ্ট্র (Free States) বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, রোমান প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতা বিরাজমান ছিল। কিন্তু জুলিয়াস সিজার ও অন্যান্য সম্রাটগণ প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করে সকল রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে কেন্দ্রীভূত করলে সেখানে স্বাধীনতা ধ্বংস হয়। তিনি প্রজাতন্ত্রকে অন্য সব ধরনের শাসনের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর বলে স্বীকার করেছেন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, “জনগণের কণ্ঠই হল ঈশ্বরের কণ্ঠ।”


টমাস হবসের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো। || WB Class 11 History Question Answer And Suggestion 2023

টমাস হবসের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো। || টমাস হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


টমাস হবসের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো। || টমাস হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকাঃ চুক্তিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে একজন টমাস হবস তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত সমস্ত মতবাদ গুলি 1651 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত লেভিয়াথান নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। এখানে আমরা টমাস হবসের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারি। টমাস হবসের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ গুলি হল - 

প্রকৃতির রাজ্যঃ টমাস হবসের মতে রাষ্ট্র সৃষ্টির আগে মানুষ প্রাক সামাজিক অবস্থায় বসবাস করতো। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সৃষ্টির আগে সমাজের অস্তিত্ব ছিল। মানুষ যে প্রাকসামাজিক অবস্থায় বসবাস করতো সেখানে কোন নিয়ম কারণ বা আইন-কানুন ছিল না বলে সেখানে মানুষের জীবন ছিল অনিয়ন্ত্রিত বা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। 

 তখন মানুষের জীবন ছিল নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, ঘৃণ্য এবং স্বল্পস্থায়ী। মানুষ এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং শান্তির খোঁজে রাষ্ট্র সৃষ্টি কথা ভাবে। এবং মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। 

সার্বভৌমিকতাঃ আদিম মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে সমস্ত ক্ষমতা কোনো একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সংসদের হাতে অর্পণ করেন। এবং পূর্ণ ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তি সংসদ হলেন সার্বভৌম শক্তির কেন্দ্রস্থল। মানুষ চুক্তির মাধ্যমে যে ব্যক্তির হাতে সর্বশক্তি তুলে দেয়,সেই হলো চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। এবং তার নির্দেশ ই হলো চূড়ান্ত আইন। এবং কেউই সেই আইনের  বিরোধিতা করতে পারবে না। এভাবে মানুষ চুক্তি করার মাধ্যমে যে একজন ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে বলে টমাস হবস উল্লেখ করেছেন।।

8888

আচরম আনুগত্যঃ টমাস হবসের মতে মানুষের নিজেদের স্বার্থের ক্ষেত্রে অর্থাৎ নিজেদের নিরাপত্তা এবং নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার জন্যই তারা সমস্ত সার্বভৌম ক্ষমতা একজন ব্যক্তিগত ব্যক্তি বা ব্যক্তি সংসদের হাতে তুলে দিয়েছে এবং সেকারণেই নিজেদের শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনে প্রত্যেককে সেই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি অথবা ব্যক্তি সংসদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। একবার রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কথা বলার কোনো অধিকার থাকতে পারে না অর্থাৎ জনগণের পক্ষ থেকে সার্বভৌম শক্তির বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ অধিকার জনগণের নেই। কারণ চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার যেকোনো ধরনের চুক্তির ঊর্ধ্বে।।

রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা হিসেবে রাজতন্ত্রঃ টমাস হবসের মতে অভিজাততন্ত্র,রাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র -এই তিন প্রকার শাসন ব্যবস্থার মধ্যে রাজতন্ত্র ই হল রাষ্ট্রের পক্ষে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। সমাজে শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রাজতন্ত্র সবচাইতে কার্যকরী শাসনব্যবস্থা বলে তিনি উল্লেখ করেছন। এক্ষেত্রে তিনি প্রাচীন এথেন্সের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে এসেন্সের পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে নির্দেশ করেছেন। 

টমাস হবসের রাষ্ট্রচিন্তার সমালোচনাঃ

 টমাস হবস তার রাষ্ট্রচিন্তা যে সমস্ত মতামত ব্যক্ত করেছেন, সেই মতামত গুলিকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা করা হয়। যেমন- 

কাল্পনিক মতবাদঃ প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবসের মতবাদ সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। 

একপক্ষের চুক্তি অসম্ভবঃ চুক্তি হয় সর্বদা একাধিক পক্ষের মধ্যে। কিন্তু হবস তাঁর আলোচনায় বলেছেন যে, চুক্তি হয়েছিল কেবল একপক্ষের মধ্যে। এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব বিষয়।

888

নিন্দুকের দৃষ্টিভঙ্গিঃ হবস সর্বদা নিন্দুকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মানব চরিত্রের কেবলমাত্র ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলিই প্রত্যক্ষ করেছেন। মানুষের চরিত্রের বিভিন্ন ভালো দিকগুলি তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। 

চরম ক্ষমতাকে সমর্থনঃ হবস রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার নামে বাস্তবক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের চরম স্বৈরাচারী ক্ষমতাকেই সমর্থন করেছেন। এক্ষেত্রে টমাস হবস রাষ্ট্রের স্বৈরাচারীতাকে সমর্থন করেছেন।

টমাস হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদ এর গুরুত্বঃ 

টমাস হবসের রাষ্ট্র সম্পর্কিত যে সমস্ত মতবাদ রয়েছে, সেগুলিকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হলেও তার কিছু গুরুত্ব রয়েছে।  যেমন— 

আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের ভিত্তিঃ হবস উল্লেখ করেছেন যে, মানুষের নিজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের এবং চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য জানানো কর্তব্য। এভাবে তিনি ইউরোপের শক্তিশালী আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। 

আধুনিক সার্বভৌম তত্ত্বের প্রবক্তাঃ সার্বভৌমতত্ত্ব বলতে আধুনিক কালে আমরা যা বুঝি তার প্রবক্তা হলেন হবস। তিনি সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা প্রদান করেন এবং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রঃ টমাস হবস রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করেছেন.. তিনি রাষ্ট্রকে ধর্মের উপরে স্থান দিয়েছেন। বর্তমানে প্রকৃতপক্ষেই প্রত্যেক রাষ্ট্রের ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন।। 

রোমান আইনজ্ঞ সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন বা রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || Class 11 History Question Answer & Notes


রোমান আইনজ্ঞ সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন বা রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


রোমান আইনজ্ঞ সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন বা রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো 

ভূমিকাঃ সিসেরো ছিলেন একজন প্রাচীন রোমান আইনজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদ সিসেরো De Republica, De Legibus এবং De Offices ইত্যাদি নানা গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি তার রাষ্ট্র দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সিসেরোর রচিত গ্রন্থের তার যে রাষ্ট্রদর্শন প্রকাশিত হয়েছে, তা হলো - 

প্রাকৃতিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় আইনঃ

প্রখ্যাত রোমান আইনজ্ঞ এবং এবং রাষ্ট্রনীতিবিদ সিসেরোর রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল বিষয় ছিল আইন-বিধি। সিসেরো মতে আইন মূলত দুই প্রকার।   যথা -প্রাকৃতিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় আইন। 

প্রাকৃতিক আইনঃ প্রাকৃতিক আইন হলো সমস্ত আইন যার মাধ্যমে ইশ্বর এই জগত পরিচালনা করেন। প্রকৃতির মধ্যে যে সমস্ত সাধারণ নিয়ম রয়েছে,যেগুলো কখনোই পাল্টানো সম্ভব নয় এবং যেগুলোই দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে, সেগুলো হলো প্রাকৃতিক আইন।। সিসেরোর মতে প্রাকৃতিক আইন হলো সর্বজনীন। তাই সবার সেই প্রাকৃতিক আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা উচিৎ।।

রাষ্ট্রীয় আইনঃ অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় আইন হলো মনুষ্যসৃষ্ট ম ব্যক্তি নিজ এবং সমাজের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ করে। তাই ব্যক্তির উচিত প্রাকৃতিক আইনের মতো রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতিও আনুগত্য প্রদর্শন করা। সিসেরোর মতে প্রাকৃতিক আইনকে অনুসরণ করে যদি রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন করা হয়, তাহলে কখনই সে আইন নিয়ে রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।।


ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাঃ দার্শনিক প্লেটোর রিপাবলিক গ্রন্থের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে সিসেরো তার ডি রিপাবলিকা গ্রন্থের বেশ অনেকটা জুড়ে ন্যায় বিচার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সিসেরো রাষ্ট্রে ন্যায় পরায়নতা এবং ন্যায় বিচারকে সমর্থন করেছেন। সিসেরোর মতে ন্যায় নীতি হল প্রকৃতির দান এবং অধিকার ও ন্যায়-নীতি প্রাকৃতিক আইনের অংশ। আবার মানুষও প্রকৃতির অংশ। সেই হিসেবেই মানুষ প্রাকৃতিক আইনের অধিকার ও ন্যায়নীতি সম্পর্কে সচেতন। ন্যায় বিচারের অভাবেই সমাজে বা রাষ্ট্রে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় সু। তরাং রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে এবং রাষ্ট্রকে সুগঠিত করতে হলে রাষ্ট্রে সবসময়ই ন্যায়পরায়নতা এবং ন্যায়বিচার থাকা আবশ্যক।।

রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাঃ প্রাচীন রোমান আইনজ্ঞ সিসেরো মনে করতেন? যে প্রাচীনকালে মানুষ ভয়-ভীতি? সন্ত্রাস বা অন্যান্য কোনো কারণে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেনি। তারা মূলত নিজেদের সহজাত ইচ্ছা এবং সামাজিক প্রবণতা থেকেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই রাস্ট্র কোনভাবেই কৃত্তিম প্রতিষ্ঠান এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিষ্ঠান। সিসেরো রাষ্ট্রকে জনগণের সম্পত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। যেখানে সকলের কল্যাণের উদ্দেশ্যে, রাষ্ট্রে সকলের অংশগ্রহণকে সমর্থন করা হয়েছে।।

সাম্যনীতিঃ সিসেরো রাষ্ট্রে অসাম্যের বিরোধিতা করেছেন এবং সাম্যনীতিকে থেকে সমর্থন করেছেন। সিসেরো মধ্যে প্রাকৃতিক আইনের ক্ষেত্রে যেমন সকলেই সমান ঠিক একইভাবে রাষ্ট্রীয় আইনের ক্ষেত্রেও সকলেই সমান হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা-সংস্কৃতি,আর্থিক শক্তি, শারীরিক গঠন প্রভৃতি বিষয়ে মানুষের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, সকল মানুষই প্রকৃতিগতভাবে সমান। তাই রাষ্ট্রের সকলের মধ্যেই সাম্যতা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাম্য বলতে বোঝানো হয়েছে রাষ্ট্রে সকলের সমান অধিকার। 


সরকারঃ পূর্বতন চিন্তাবিদ পলিবিয়াস এর অনুকরণে সিসেরো মূলত তিন প্রকার সরকার কথা উল্লেখ করেছেন। যথা রাজতন্ত্র,অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র।  কিন্তু সিসেরো উক্ত তিন প্রকার শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কোনো একটিকেও রাষ্ট্রের পক্ষে আদর্শ বলে উল্লেখ করেননি। তার মতে যেকোনো সময় এই তিন প্রকার সরকার বা শাসন  ব্যবস্থা দুর্নীতি গ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে। এজন্য তিনি উক্ত তিন প্রকার সরকারের গুনাবলির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এক নতুন ধরনের সরকারকেই রাষ্ট্রের পক্ষে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। সিসেরোর মতে সেই মিশ্র সরকার কল্যাণকামী আদর্শ গ্রহণে সক্ষম বলে মনে করতেন। তাই তাঁর মতে মিশ্র সরকারই হল রাষ্ট্রের পক্ষে অন্যতম।।

জনকল্যাণঃ সিসেরোর যেহেতু মানুষের নিজের কল্যাণের প্রয়োজনেই বিবর্তনের হাত ধরে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল,সুতরাং জনকল্যাণ ই হওয়া উচিৎ রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য ম আইন সঙ্গতভাবে গঠিত সমাজ সংগঠনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সমাজের কল্যাণ করা এবং এই মানব কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রে ন্যায় পরায়নতা,সাম্য এবং  প্রাকৃতিক আইন প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরী। 

বিশ্ব নাগরিকত্বঃ সিসেরো সমগ্র বিশ্বকে একটি রাষ্ট্রসমবায় অথবা একটি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলি কে নিয়ে একটি রাষ্ট্র সমবায় বা কমনওয়েলথ গড়ে তোলার আদর্শ প্রচার করতেন। তার মতে সমগ্র বিশ্বজুড়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সকল মানুষ সেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। এবং সেই রাষ্ট্রে ধনী-দরিদ্র সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে এবং সবাই প্রাকৃতিক আইন মেনে চলবে।।

সিসেরোর মতের সমালোচনাঃ সিসেরোর রাষ্ট্র দর্শনের যে সমস্ত মতবাদ রেখেছেন,সেই সমস্ত মতবাদ গুলোকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হয়। যেমন- 

সামান্য অবদানঃ কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন যে,রাষ্ট্রচিন্তায় সিসেরোর মৌলিকত্ব এবং অবদান খুবই সামান্য ছিল। তিনি তার পূর্বসূরীদের রাষ্ট্রচিন্তাকে অনুসরণ করেই রোমান ব্যবস্থার সঙ্গে একে সম্পর্কযুক্ত করেছিলেন মাত্র। 


মৌলিকতার অভাবঃ স্যাবাইন বলেছেন যে, সিসেরো রাষ্ট্রচিন্তায় কোনো মৌলিকত্ব নেই। তিনি পলিবিয়াসের অনুকরণে রাষ্ট্রের তিন ধরনের শাসন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। প্লেটো ও স্টয়ি দার্শনিকদের ন্যায়বিচার ও প্রাকৃতিক আইনের ধারণা গ্রহণ করে তিনি এই আইন গুলি রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রয়োগের কথা বলেছেন।।

WB Class 11 history chapter 4 question answers in Bengali || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি কেমন ছিল? || WB Class 11 History Question Answers And Suggestion 2023
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উএর


দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র কী ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র ছিল? || সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি কেমন ছিল?

ভূমিকাঃ- সাধারণ দিক থেকে দেখতে গেলে দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতিকে ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যেতে পারে। কিন্তু দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করলে দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্র ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র ছিল কিনা অথবা দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়। যেমন- 

সুলতানি রাষ্ট্র ধর্মাশ্রয়ী ছিল কিনা তার স্বপক্ষে যুক্তিঃ- 

সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনী তার ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থের সুলতানি রাষ্ট্রকে জাহান্দারি অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু ডঃ রামশরণ শর্মা, ডক্টর আর.পি. ত্রিপাঠি সুলতানি রাষ্ট্রকে ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলে উল্লেখ করেছেন। এর স্বপক্ষে যে যুক্তি গুলো দেওয়া হয়,হলো- 

খলিফার প্রতি আনুগত্যঃ- 

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি যে ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের মতো ছিল, তার স্বপক্ষে সবচাইতে বড় যুক্তি হলো- হজরত মহম্মদের মৃত্যুর (৬৩২ খ্রি.) পরবর্তীকালে মুসলিম জগতের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু ও শাসক হিসেবে খলিফাতন্ত্রের উত্থান ঘটে। শরিয়ত অনুসারে, অন্যান্য মুসলিম শাসকরা খলিফার অনুগত নায়েবমাত্র। দিল্লির অধিকাংশ সুলতান খলিফার প্রতি তাঁদের আনুগত্য জানিয়ে নিজেদের খলিফার ভৃত্য বলে পরিচয় দিতেন। এছাড়াও আলাউদ্দিন খলজি ছাড়া দিল্লির সব সুলতানই খলিফার স্বীকৃতি গ্রহণ করেন। ইলতুৎমিস ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে খলিফার স্বীকৃতি লাভ করেন।১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে খলিফাতন্ত্রের পতন ঘটলেও দিল্লির সুলতানগণ খলিফার প্রতি তাঁদের আনুগত্যের বন্ধন ছিন্ন করেননি। তাঁরা নিজেদের ‘খলিফার সহকারী' হিসেবে পরিচয় দিতেন, মুদ্রায় খলিফার নাম খোদাই করতেন এবং খলিফার নামে ‘খুত্বা’ পাঠ করতেন।

উলেমা শ্রেণীর গুরুত্বঃ- 

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, শাসক তার শাসন ব্যবস্থায় উলেমাশ্রেনির গুরুত্বকে স্বীকার করেন। সম্রাট উলেমাশ্রেনির বা পুরোহিত শ্রেণীর নির্দেশমতো তার শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকেন। দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও এরুপ উলেমাশ্রেনির গুরুত্ব লক্ষ্য করা যেত।।

দিল্লি সুলতানি শাসন ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনের এবং বিচার বিভাগের উচ্চ পদ গুলো উলেমাশ্রেণির লোকেরা দখল করতো। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সুলতানরা, উলেমা শ্রেণীকে খুশি করার জন্য অনেক সময় তাদের ভূমি দান করতেন, তাদের মসজিদ নির্মাণ করতেন এবং মাঝে মধ্যে হিন্দুদেরও বিরোধিতা করতেন।।

শরিয়তের গুরুত্বঃ 

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের মনুষ্যসৃষ্ট আইনের গুরুত্ব চেয়ে ধর্মীয় আইন বা নিয়মকানুন গুরুত্ব বেশি থাকে। দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ লিখেছেন যে, সুলতানি আমলে সামাজিক আইনগুলি ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্র শরিয়তের বিধান অনুসারে রচিত হয়েছিল।শরিয়তের ভিত্তিতে উলেমা শ্রেণি সুলতানকে যে ১২টি কর্তব্য পালনের পরামর্শ দিয়েছেন তা মহম্মদ-বিন-তুঘলক ছাড়া অন্য সকল সুলতানই মেনে চলতেন। 

ইসলামি করব্যবস্থাঃ- 

ভারতবর্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ হলেও শরিয়তে নির্দেশিত করব্যবস্থা এদেশে প্রবর্তিত হয়েছিল। ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ বলেছেন যে, শরিয়তের বিধান অনুসারে সুলতানি করব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল।। এছাড়াও অ-মুসলিমরা মুসলিম শাসনে ‘জিম্মি' হিসেবে পরিগণিত হত এবং তাদের কাছ থেকে ‘জিজিয়া কর’ আদায় করা হত।

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের বিপক্ষে যুক্তিঃ- 

উপরোক্ত কিছু আলোচনা থেকে দিল্লির সুলতানি শাসন ব্যবস্থাকে ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলে মনে হলেও ডক্টর সতীশচন্দ্র, ডঃ মোঃ হাবিব, ডঃ হাবিব উল্লাহ প্রমুখ দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কোনভাবেই ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেন না। তাদের মতে, দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত ছিল যা একে ধর্মাশ্রয়ী হিসেবে প্রমাণ করে না। যেমন- 

সুলতান হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারীঃ- 

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র অনুসারে ঈশ্বর হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।  এবং ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে খলিফাদের স্বীকার করে নেওয়া হয়।কিন্তু ভারতের সুলতানি শাসনকালে শরীয়তের বিধান অনুসারে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক কোন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এবং এক্ষেত্রে সুলতানরাই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তারা কিছু ক্ষেত্রে ধর্মকে প্রাধান্য দিললেও তাদের শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ধর্মকে কখনোই প্রাধান্য দেননি।

খলিফাদের প্রতি আপাত আনুগত্য প্রদর্শনঃ-

ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের খলিফাদের অনেক প্রভাব থাকে এবং সুলতানকে খলিফাদের প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করতে হতো। কিন্তু দিল্লির সুলতানদের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি এরূপ আনুগত্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। তারা কিছু ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কারণে ছিল।

শরিয়ত-বহির্ভূত নির্দেশঃ-

সুলতানি শাসনকালে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘনের বহু উদাহরণ পাওয়া যায়।যেমন- 

• শরিয়তে মুসলিমদের প্রাণদণ্ড নিষিদ্ধ হলেও অধিকাংশ সুলতানের আমলেই মুসলিমদের প্রাণদণ্ডের প্রথা চালু ছিল।

• শরিয়তে সুদ গ্রহণ নিষিদ্ধ হলেও ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রয়োজনে সুলতানি আমলে ঋণদান ও সুদগ্ৰহণ চলত। 

• শরিয়তের বিধান অনুসারে মুসলিম রাষ্ট্রে পৌত্তলিকদের কোনো স্থান না থাকলেও সুলতানি আমলে পৌত্তলিক হিন্দুদের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল।

• মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অ-মুসলিমদের ‘জিজিয়া কর দানের নিয়ম থাকলেও সুলতানি রাষ্ট্রে ব্রাহ্মণ, মহিলা, শিশু ও অসহায় ব্যক্তিরা ‘জিজিয়া’ প্রদান থেকে অব্যাহতি পেতেন।

• শরিয়তের ব্যাখ্যাকর্তা উলেমা শ্রেণিও সুলতানের কাছ থেকে সর্বদা ভালো ব্যবহার পেতেন না। একদা ঘটনা প্রসঙ্গে আলাউদ্দিন খলজি কাজি মুঘিসুদ্দিনকে জানান যে, “কোন্‌টি শরিয়তের বিধানসম্মত, কোন্‌টি বিধানসম্মত নয় তা আমি জানি না। রাষ্ট্রের পক্ষে যা কল্যাণকর বা আপৎকালে যা জরুরি বলে আমার মনে হয়, আমি তা-ই করি।”

সুলতানের স্বাধীনতাঃ- 

ইসলামি আইন অনুসারে সমগ্র কিন্তু মুসলিম ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় জগতের প্রধান হলেন খলিফা। অন্যান্য মুসলিম শাসকগণ তাঁর নায়েব মাত্র। ভারতের সুলতানি শাসনে খলিফার এরূপ সীমাহীন ক্ষমতা স্বীকৃতি লাভ করেনি। এখানে কোনো কোনো সুলতান রাজনৈতিক প্রয়োজনে নিজেকে ‘খলিফার প্রতিনিধি’ বলে প্রচার করেছেন মাত্র। বাস্তবে দিল্লির সুলতান ছিলেন। সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। ধর্মীয় বিষয় অপেক্ষা সুলতানগণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বেশি নজর দিতেন বলে অধ্যাপক নুরুল হাসান উল্লেখ করেছেন।

হিন্দুদের গুরুত্বঃ-

সুলতানি শাসকগণ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও এই সময় ভারতে হিন্দুরা একেবারে গুরুত্বহীন ছিল না।কোনো কোনো সুলতান রাজকার্যের উচ্চপদে হিন্দুদের নিয়োগ করতেন। সুলতানি শাসনকালে ভারতের সর্বত্র বহু ছোটো ছোটো হিন্দু সামন্ত রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। স্থানীয় প্রশাসনে হিন্দুরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। গ্রামীণ প্রশাসনেও হিন্দুদের একাধিপত্য ছিল। তা ছাড়া সুলতানগণ তাঁদের শাসনকে কখনোই ইসলামীয় শাসন বলে ঘোষণা করেননি।

উপসংহারঃ- সুতরাং সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে বলা যায় দিল্লি সুলতানি শাসন ছিল সামরিক বাহিনীর দ্বারা এবং দিল্লি সুলতানি শাসনের যোগ্যতা এবং বুদ্ধির সাহায্যে গঠিত একটি সাম্রাজ্য যেখানে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হলেও দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র ছিল না।এজন্য ডক্টর সতীশচন্দ্র সুলতানি রাষ্ট্রকে সামরিক এবং অভিজাত তান্ত্রিক বলে অভিহিত করেছেন এবং ডক্টর মুজিব সুলতানি রাষ্ট্রকে প্রকৃতিগতভাবে স্বৈরতান্ত্রিক এবং এককেন্দ্রিক বলে উল্লেখ করেছেন।।

একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্রের বড় প্রশ্ন উওর || WB Class 11 history chapter 4 question answers in bengali
 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা


জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা 

ভূমিকাঃ- ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়। টমাস নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি পর যারা আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন জন লক। 1688 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের জনগন শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে বিল অফ রাইটস আদায় করে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে রক্তপাতহীন সেই বিপ্লব গৌরবময় বিপ্লব নামে পরিচিত। এই সময়ে গৌরবময় বিপ্লবের পটভূমিতে জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল 'Two Treaties Of Government' যেখানে তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি আলোচনা করেছেন। 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি হল- 

জনগণের প্রাকৃতিক অধিকারঃ- 

জন লক মনে করতেন যে, যখন রাষ্ট্র তৈরি হয়নি তখন সেই অবস্থায় মানুষ প্রাক-রাজনৈতিক অবস্থায় বসবাস করতো। জন লক প্রাক রাজনৈতিক বলতে প্রকৃতির রাজ্য বা প্রকৃতির স্বাধীন সমাজের কথা বলেছেন যেখানে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় আইনের অস্তিত্ব ছিল না। সেখানে মানুষের জীবন ছিল অত্যন্ত সহজ সরল এবং স্বাভাবিক। তখন মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য ছিল না এবং সকলেই ছিল স্বাধীন। সবাই প্রাক রাজনৈতিক অবস্থায় বসবাস করতো বলে সবাইকে প্রাকৃতিক আইন মেনে চলতে হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে সম্পত্তির অধিকারকে কেন্দ্র করে সমাজে বৈষম্য, যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।।

রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাঃ-

জন লকের মতে মানুষ যখন প্রাক রাজনৈতিক বা শুধুমাত্র সমাজ জীবনে বসবাস করতো,তখন তাদের সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ায় তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়।এবং সেই যুদ্ধ সংঘর্ষ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল। এরপর রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা বা সার্বভৌম ক্ষমতা তারা নিজেদের ওপরেই অর্পন করেছিল। মানুষ শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণ সাধনের শর্তেই শাসক গোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা বা রাষ্ট্রের চরম কৃতিত্ব অর্পন করেছিল। কিন্তু সেই শাসকগোষ্ঠী বা শাসক বা সরকার যদি জনগণের কল্যাণে অসমর্থ হয় বা তার ওপর থেকে যদি জনগণের আস্থা হারায়,   জনগণ সেই সরকার অথবা শাসককে তার ক্ষমতা থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকারী বলে স্বীকার করেছেন।

রাষ্ট্রের সরকারের কর্তব্যঃ- 

জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূল বক্তব্য হলো, জনগণ বা মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। তাই রাষ্ট্রের সরকার রাজতান্ত্রিক,অভিজাত তান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র যাই হোক না কেন... সরকারকে সবসময়ই রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্দিষ্ট রীতিনীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে।এবং তার কাজের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে এবং এসব কাজের মধ্যে জনগণের কল্যাণের জন্য সরকারকে বিভিন্ন বিভাগ গঠন করতে হবে।।সুশাসনের প্রয়োজনে তিনি সরকারকে  আইন রচনা এবং প্রয়োগের দায়িত্ব পৃথক কতৃপক্ষের ওপর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।।

সম্পত্তির অধিকারঃ- 

জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় জনগণের সম্পত্তির অধিকারকে রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে উল্লেখ করেছেন। জন লকের মতে ঈশ্বর সকলের জন্য সমান ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন এবং তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের সরকারের কোনো রকম হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।তার মত্র যে সরকার জনগণের সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করে প্রাকৃতিক অধিকার খর্ব করতে চায়, সেই সরকার কোন ভাবেই বৈধ সরকার হতে পারে না।

জনগণের স্বাভাবিক অধিকারঃ- 

জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনগণকে কিছু স্বাভাবিক ক্ষমতা অধিকারের অধিকারী বলেছেন। তার মতে যে সরকার বা রাষ্ট্র জনগণের ওপর অত্যাচার, শোষন এবং নির্যাতন ইত্যাদি চালায় সেই সরকারের বিরোধিতা করে সেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা জনগণের অধিকার বলে তিনি মনে করতেন। যে সরকার এরুপ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিপ্লব ও বিদ্রোহের কথা না বললেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।।

জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিভিন্ন ত্রুটি এবং গুরুত্বঃ- 

জন লক আধুনিক রাষ্ট্র সম্পর্কে যে সমস্ত বিষয়গুলির কথা উল্লেখ করেছেন,  সেই প্রতিপাদ্য বিষয় গুলিতে যেমন বিভিন্ন ভুল ত্রুটি রয়েছে, ঠিক তেমনই তার বেশ কিছু গুরুত্বও রয়েছে। যেমন- 

জনকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত প্রতিপাদ্যের কিছু ত্রুটি - 

স্ববিরোধিতা- লক একদিকে স্বাভাবিক অধিকারের কথা বললেও অন্যদিকে সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করায় তাঁর মধ্যে স্ববিরোধিতা লক্ষ করা যায়। ও সামাজিক বৈষম্য- লক সাম্যের আদর্শ প্রচার করলেও বাস্তবক্ষেত্রে সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বৈষম্যমূলক সমাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এর ফলে তাঁর সাম্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতার তত্ত্ব গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। 

বুর্জোয়া মানসিকতা-লক মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের কথা স্বীকার করে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধানকে পরোক্ষে সমর্থন করেছেন। এজন্য ম্যাকফারসন লককে ' বুর্জোয়া চিন্তানায়ক' বলে অভিহিত করেছেন।

দাসদের প্রতি উদাসীনতা- লক শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের রাজনৈতিক সমাজের স্বাধীন ও পূর্ণ সদস্য হিসেবে মেনে নেননি।

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বঃ- 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তায় কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা গেলেও, জন লকের রাষ্ট্রচিন্তায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর তত্ত্বের বিভিন্ন গুরুত্বও অনস্বীকার্য। যেমন—

অভিনবত্ব- লকের রাষ্ট্রচিন্তায় নতুনত্ব কম থাকলেও যথেষ্ট অভিনবত্ব ছিল।কেন-না, তাঁর পূর্ববর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের বিক্ষিপ্ত ও অসংলগ্ন তত্ত্বগুলিকে লক অসাধারণ দক্ষতা সহকারে সুসংবদ্ধভাবে এক জায়গায় উপস্থাপন করেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি- আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে লকের রাষ্ট্রনৈতিক তত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। লকের রাষ্ট্রচিন্তায় আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছায়া লক্ষ করা যায়। 

দুই যুগের সংমিশ্রণ- ওয়েপারের মতে, লক ছিলেন একদিকে মধ্যযুগীয় বিশাল ঐতিহ্যের অন্যতম শেষ প্রবক্তা এবং অপরদিকে আধুনিক যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি যেমন সম্পত্তির অধিকারকে পবিত্র অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যযুগীয় ধারাকে অনুসরণ করেছেন, তেমনি উদারনীতিবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রভৃতির প্রচার করে আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। 

আইনের শাসন-লক ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে আইনের শাসনের অধীনে আনার যে চিন্তা করেছিলেন তা আধুনিক বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইনের শাসনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।

আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 3 in Bengali) রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র ( wb class 11 history question answer and suggestion 2023) থেকে যে class 11 history mcq question answer, modern Indian history saq question answer, and wb class 11 history LA Question Answer And History Notes তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে তা তোমাদের কাজে আসবে।

Tags : 

একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের mcq প্রশ্ন উত্তর | রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের mcq প্রশ্ন উত্তর | রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর ২০২৩ | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র অধ্যায়ের বড় প্রশ্নোত্তর ২০২৩ | WB Class 11 History MCQ & SAQ Question Answer | wb class xi history question answer | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর চতুর্থ অধ্যায় | WB Class 11 History Question Answer & Notes | Class 11 History MCQ | Class 11 History SAQ Question Answer | Class 11 History Notes | Class 11 History Suggestion

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top