সমাস কাকে বলে সমাস কত প্রকার এবং কি কি || দশম শ্রেণীর বাংলা সমাস প্রশ্নোত্তর 2023
সমাস কাকে বলে সমাস কত প্রকার এবং কি কি |
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ অথবা দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ সমাস অধ্যায় থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর এবং সমাজের বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। আজকে ব্লগের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ সমাস থেকে
সমাস কী বা কাকে বলে? সমাস কত প্রকার এবং কি কি? দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে? দ্বন্দ্ব সমাস কত প্রকার এবং কি কি? কর্মধারায় সমাস কাকে বলে? কর্মধারয় সমাস কত প্রকার এবং কি কি?, তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে তৎপুরুষ সমাস কত প্রকার এবং কি কি?, বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে, বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি?, দ্বিগু সমাস কাকে বলে? দ্বিগু সমাস কত প্রকার এবং কি কি এবং অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে এবং অব্যয়ীভাব সমাস কত প্রকার এবং কি কি?-এই সমস্ত কিছু নিয়ে আলোচনা করবো। এবং সমাস সম্পর্কে তোমাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আজকের বিষয়ঃ-
• সমাস কী বা কাকে বলে?
• সমাস কত প্রকার এবং কি কি?
• দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?
• দ্বন্দ্ব সমাস কত প্রকার এবং কি কি?
• কর্মধারায় সমাস কাকে বলে?
• কর্মধারয় সমাস কত প্রকার এবং কি কি?,
তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
• তৎপুরুষ সমাস কত প্রকার এবং কি কি?
সমাস কী সমাস কত প্রকার ও কী কী? || মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ সমাসের প্রশ্ন উত্তর
উওরঃ- সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
যেমন দেশের সেবা দেশসেবা, বই ও পুস্তক – বইপুস্তক, নেই পরোয়া যার বেপরোয়া। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়োগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত গদ।সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদগুলোকে সমস্যমান পদ বলে। সমাসযুক্ত পণের প্রথম অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরবর্তী অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ।সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
উদাহরণ-বিদাত ফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে বিলাত-ফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন এ তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ও রকম বিলাত হতে ফেরত রাজার কুমার সিংহ চিহ্নিত আসন এগুলো হচ্ছে ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে 'বিদাত', ফেরত', 'রাজা, 'কুমার, 'সিংহ', 'আসন' হচ্ছে এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাত-ফেরত, রাজকুমার এবং সিংহাসন সমস্ত পদ। বিলাত, রাজা ও সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ এবং ফেরত, কুমার আসন হচ্ছে পরপদ।
সমাস কত প্রকার এবং কী কী?
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বন্ধুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস। দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাাণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি বয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি,অব্যয়ীভাব। কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলোচনা করা গেল। এছাড়া, খাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি। কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলোরও আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন তাল ও -মাল, দোয়াত ও দোয়াত-কলম। এখানে তাল ও তমাল এবং দোয়াত ও কলম প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে। বহু সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। যেমন মাতা ও পিতা মাতাপিতা।
দ্বন্দ্ব সমাস কত প্রকার এবং কি কি?
দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
১. মিলনার্থক শব্দযোগে- মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট ইত্যাদি।
২. বিরোধার্থক শব্দযোগে - দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি।
৩. বিপরীতার্থক শব্দযোগে- আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো, লাভ-লোকসান ইত্যাদি।
৪. অঙ্গাবাচক শব্দযোগে- হাত-পা, নাক-কান, বুক-পিঠ, মাথা-মুগ্ধ, নাক-মুখ ইত্যাদি।
৫. সংখ্যাবাচক শব্দযোগে-সাত-পাঁচ, নয় ছয়, সাত-সতের, উনিশ-বিশ ইত্যাদি।
৬. সমার্থক শব্দযোগে- হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভি, খাতা পত্র ইত্যাদি।
৭. প্রায় সমার্থক ও সহচর শব্দযোগে-কাপড়-চোপড়, পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া, বৃত্তি-চাদর ইত্যাদি।
৮. দুটি সর্বনামযোগে- যা-তা, যে-সে যথা- তথ্য, তুমি আমি, এখানে-সেখানে ইত্যাদি।
৯. দুটি ক্রিয়াযোগে-দেখা-শোনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-ঘোওয়া ইত্যাদি।
১০. দুটি ক্রিয়া বিশেষণযোগে-ধীরে-সুস্থে, আগে পাছে, আকারে-ইঙ্গিতে ইত্যাদি।
১১. দুটি বিশেষণযোগে- ভালো-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি বকেয়া ইত্যাদি।
অলুক দ্বন্দ্ব :- যে সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে।
• তিন বা বহু পদে বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
•যেমন: সাহেব-বিবি-গোলাম, হাত পা-নাক-মুখ-চোখ ইত্যাদি।
২. কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের সবই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। শান্ত অথচ শিষ্ট – শান্তশিষ্ট। কাঁচা অথচ মিঠা কঁচামিঠা
কর্মধারয় সমাস কত প্রকার এবং কি কি?
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
১. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে। যেমন- যে চালাক সেই চতুর চালাক চতুর।
২. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা কতুকে বোঝালে। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব জজ সাহেব।
৩. কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন আগে ধোয়া পরে মোছা ধোয়ামোছা
৪. পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন সুন্দরী যে লতা সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি মহাকীর্তি।
৫. বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, 'মহৎ' ও 'মহান' স্থানে "মহা" হয়। যেমন মহৎ যে জ্ঞান- মহাজ্ঞান, মহান যে নবি মহানবি।
৬. পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু' স্থানে 'কং' হয়।
যেমন - কু যে অর্থ - কাৰ্থ, কু যে আচার - কলাচার।
৭. পরপদে 'রাজা' শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে 'রাজ' হয়। যেমন মহান যে রাজা মহারাজ।
৮. বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়।
যেমন –সিদ্ধ যে আলু আলুসিদ্ধ, অধম যে নর- নরাধম।
কর্মধারয় সমাস কত প্রকার এবং কী কী?
কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার মধ্যপদলোপী, উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস।
১. মধ্যপদলোপী কর্মধারয়ঃ-
যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা- সিংহ চিহ্নিত আসন সিংহাসন, সাহিত্য বিষয়ক সভা- সাহিত্যসভা, মুক্তি রক্ষার্থে সৌধ- স্মৃতিসৌধ।
২. উপমান কর্মধারয়ঃ-
উপমান অর্থ তুলনীয় বন্ধু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে। যেমন ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ ভ্রমরকৃষ্ণবেশ। এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ হলো সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যথা তুষারের ন্যায় শুভ্র তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাস্তা অনুপরা
• উপমিত কর্মধারয়:- সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় গণের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়। এ সমাসে উপমের পদটি পূর্বে বসে।
• যেমন- মুখ চন্দ্রের ন্যায় চন্দ্রমুখ। পুরুষ সিংহের ন্যায় সিংহপুরুষ।
৪. রূপক কর্মধারয়ঃ-
উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পল পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে 'রূপ' অথবা 'ই' যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়।
যেমন- ক্রোধ রূপ অনল-ক্রোধানল, বিষাদ রূপ সিন্ধু বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি- মনমাঝি।
আরও কয়েক ধরনের কর্মধারয় সমাস রয়েছে। কখনো কখনো সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে।
যেমন অব্যয় কুকর্ম, যথাযোগ্য। সর্বনাম: সেকাল একাল।
সংখ্যাবাচক শব্দ: একজন, দোতলা। উপসর্গ: বিকল, সকাল, বিদেশ, বেসুর।
৩. তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
উওরঃ পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনো বিভক্তি থাকতে পারে। আর পূর্বপদের বিভক্তি
অনুসারে এদের নামকরণ হয়।
যেমন বিপদকে আপন্ন বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি 'কে' গোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ। তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার : দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, যষ্ঠী, সপ্তমী, নঞ, উপপন ও অলুক তৎপুরুষ সমাস।
১. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা: দুঃখকে প্রাপ্ত দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন বিপদাপন্ন, পরলোকে গত পরলোকগত ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী চিরসুখী। এরকম গা-ঢাকা, রথদেখা, বীজবোনা, ভাতরাধা, ছেলে- বুলানো (ছড়া), নভেল পড়া ইত্যাদি।
২. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (যারা মিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোগে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা মন দিয়ে গড়া মনগড়া, শ্রম দ্বারা পথভ্রমণ, মধু দিয়ে মাথা- মধুমাখা। ঊন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা : এক যারা উন- একোন, বিদ্যা দ্বারা হীন বিদ্যাহীন, জ্ঞান যারা শূন্য জ্ঞানশূন্য, পাঁচ দ্বারা কম পাঁচ কম। উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা: স্বর্গ দ্বারা মণ্ডিত স্বর্ণমণ্ডিত। এরূপ-হীরকমচিত, চন্দনচর্চিত, রত্নশোভিত ইত্যাদি।
৩. চতুর্থী তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) শোপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- গুরুকে ভক্তি গুরুতরি, আরামের জন্য কেদারা আরামকেদারা, বসতের নিমিত্ত বাড়ি- বসতবাড়ি, বিয়ের জন্য পাগলা বিয়েপাগলা ইত্যাদি। এরূপ-ছাত্রাবাস, ডাকমাশুল, চোষকাগণ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, হজ্বযাত্রা, মালগুদাম, রান্নাঘর মাপকাঠি, বালিকা বিদ্যালয়, পাগলাগারদ ইত্যাদি।
৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি যেতে, থেকে ইত্যাদি লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়,তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- খাঁচা থেকে ছাড়া খঁচাছাড়া, বিলাত থেকে ফেরত - বিলাতফেরত ইত্যাদি।সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিব্রত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন স্কুল থেকে পালানো স্কুলপালানো, জেল থেকে মুক্ত জেলমুক্ত ইত্যাদি। এ রকম জেলখালাস, বোঁটাখসা, আগাগোড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত ইত্যাদি। কোনো কোনো সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে 'এর' 'চেয়ে' ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যথা- পরাণের চেয়ে প্রিয় পরাণপ্রিয়।
৫. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদে যষ্ঠী বিভক্তির (র এর) সোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা চায়ের বাগান চাবাগান, রাজার পুত্র রাজপুত্র, খেয়ার ঘাট খেয়াঘাট। অনুরূপভাবে ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি।
জ্ঞাতব্য
১. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে 'রাজা' 'রাজ', পিতা, মাতা, তাতা সালে যথাক্রমে 'পিতৃ', 'মাতৃ', 'ভ্রাতৃ' হয়। যেমন গজনীর রাজা গজনীরাজ, রাজার পুত্রা রাজপুত্র পিতার ধন পিতৃধন, মাতার সেবা মাতৃসেবা, আতার স্নেহ ভ্রাতৃয়েহ পুত্রের বধূ-পুত্রবধূ ইত্যাদি।
২. পরপদে সহ, তুল্য, নিত, প্রায় সহ, প্রতিম এসব শব্দ থাকলেও যন্ত্রী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন পত্নীর সহ পত্নীসহ, কন্যার সহ কন্যাসহ সহোদরের প্রতিম সহোদরপ্রতিম ব সোদরপ্রতিম ইত্যাদি।
৩. কালের কোনো অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যথা- অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ পূর্বাহ্ণ। ৪. পরপদে রাজি, গ্রাম, কৃষ্ণ, গণ, যূথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়।
যথা ছাত্রের কৃপ ছাত্রবৃপ, গুণের গ্রাম-গুণগ্রাম, হস্তীর যূদ্ধ হস্তীমূ ইত্যাদি।
৫. অর্থ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন- পথের অর্থ- অর্থপর, দিনের অর্ধ-অর্থদিন।
৬. শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন মৃগীর শিশু মৃগশিশু, ছাগীর মুখ্য ছাগনুল ইত্যাদি।
৭. ব্যাসবাক্যে 'রাজা' শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে। যেমন পথের রাজা রাজপথ, হাঁসের রাজা = রাজহাস। অলুক যন্ত্রী তৎপুরুষ সমাস ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ, মামার বাড়ি, সাপের পা, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি। কিন্তু, ভ্রাতার পুত্র ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)।
৬. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসঃ-
পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন গাছে পাকা গাছপাকা, দিবায় নিদ্রা দিবানিদ্রা। এরূপ বাকপটু, গোলাভরা, ভালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপন সমস্তপদের পূর্বে আসে। যেমন পূর্বে ভূত – ভূতপূর্ব, পূর্বে অশুভ অশ্রুতপূর্ব, পূর্বে অদৃষ্ট অদৃষ্টপূর্ব।
৭. তৎপুরুষ সমাস না বাচক অব্যয় (না নেই, নাই, নয়। পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে না্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- ন অচার অনাচার, ন কাতর = অকাতর। এরুপ অনাদর,
নাতিদীর্ঘ, নাতিষর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।
৮. উপপদ তৎপুরুষ সমাসঃ-
যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কুলন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন জলে চরে যা – জলচর, জল দেয় যে জলদ, পঙ্কে জন্মে যা পঙ্কজ। এরূপ গৃহস্থ, সত্যবাদী, ইন্দ্রজিৎ, ছেলেধরা, ধামাধরা, পকেটমার, পাতাচাটা, হাড়ভাঙ্গা, মাছিমারা, ছারপোকা, ঘরপোড়া, বর্ণচোরা, গলাকাটা, পা-চাটা, পাড়াবেড়ানি, ছা-পোষা ইত্যাদি।
৯. অলুক তৎপুরুষ সমাসঃ-
যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অনুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন গায়ে পড়া গায়ে পড়া। এরূপ ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।
দ্রষ্টব্য : গায়ে হলুদ, হাতেখড়ি প্রভৃতি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুদ বা
খড়ি বোঝায় না, অনুষ্ঠান বিশেষকে বোঝায়। সুতরাং এগুলো অলুক তৎপুরুষ নয়, অলুক বহুব্রীহি সমাস।
আশাকরি যে, দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ অথবা মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ সমাস সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে লাগবে।
tags : মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর সমাজ প্রশ্নোত্তর | সমাস কাকে বলে বা সমাস কী | সমাস কত প্রকার এবং কি কি | দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে | কর্মধারয় সমাস কাকে বলে | তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে | বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে | দ্বিগু সমাস কাকে বলে | অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে