আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল আলোচনা করো।' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ ওয়ারেন হেস্টিংসের পর লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য 1789 খ্রিস্টাব্দে এবং 90 খ্রিস্টাব্দে দশসালা বন্দোবস্ত এবং 1793 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত শুধুমাত্র বাংলা,বিহার এবং উড়িষ্যার উপর লাগু হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের দিকে সেরকম ভাবে কোনও ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয়নি। সেকারণেই দক্ষিণ ভারতে নতুন ভাবে ভূমি বন্দোবস্ত চালু করার জন্য রাওয়াতওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী?
উওরঃ ভারতের দক্ষিনে এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার রীড এবং স্যার টমাস মনরোর নেতৃত্বে এক ধরনের নতুন ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয় যেখানে সরকার সরাসরি কৃষকের থেকে খাজনা আদায় করার বা ট্যাক্স আদায় করার নিয়ম চালু করে। 1820 খ্রিস্টাব্দে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাজনা আদায় করার এই ভূমি বন্দোবস্তই রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। টমাস মনরোকে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত জনক বলা হয়।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ-
1820 খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত এই নতুন ভূমি বন্দোবস্ত বা রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন-
• রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে কোন মধ্যস্বত্বভোগীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত না। রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরকার এবং কৃষকের মাঝখানে কোনো জমিদার বা ইজারাদার থাকত না ফলে কৃষককে সরাসরি সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব দিতে হতো।
• রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে কৃষকের জমির উপর কোনো স্থায়ী মালিকানা থাকত না। কৃষক শুধুমাত্র সেই জমিতে কাজ করার অধিকার পেত এবং নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব না দিতে পারলে তাকে সেই জমি থেকে উৎখাত করা হতো।
• রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় জমির রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি হতো এবং সাধারণত কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর পর পর সেই রাজস্বের পরিমান পরিবর্তন করা হতো। যার ফলে কৃষককে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব দিতে গিয়ে চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হতো।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলাফলঃ-
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বিভিন্ন কুফল লক্ষ্য করা গিয়েছিল যেমন-
ভারতীয় জমিদারদের জমিদারি হারানোঃ-
রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটাই যে, সরকার যেহেতু কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল, সেই কারণে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করার অধিকার বিভিন্ন জমিদার এবং ইজারাদাররা হারিয়ে ফেলে। এভাবে ভারতের প্রাচীন জমিদার পরিবারগুলি তাদের জমিদারী সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়ে ফেলে। জমিদারি হারানোর ফলে জমিদার পরিবার গুলিকে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারঃ-
জমিদারি প্রথার অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু কালক্রমে কৃষকরা জমিদারদের পরিবর্তে সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারের শিকার হয়। তারা রায়তের অস্থাবর সম্পত্তি ক্লোক করে কৃষককে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত। ঐতিহাসিক ড. তারা চাঁদের মতে, রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় প্রজারা বহু জমিদারের' পরিবর্তে 'এক বিরাট জমিদার' বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাজস্বের বিপুল হারঃ-
এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি ছিল। উৎপন্ন ফসলের শতকরা ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধের সামর্থ্য কৃষকদের ছিল না।
কৃষকদের উচ্ছেদঃ-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো স্থায়ী রাজস্বের হার রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় ধার্য করা হয়নি। সরকার ইচ্ছা করলে কুড়ি বা ত্রিশ বছর পরপর রাজস্বের হার বৃদ্ধি করতে পারত। কৃষক এই বাড়তি রাজস্ব না দিলে তাকে জমি থেকে উৎখাত করা হত। এক কথায়, এই ব্যবস্থায় কৃষকরা ভাড়াটিয়ায় পরিণত হয়। সরকার প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে যে, সরকার রাজস্ব হিসেবে যা আদায় করে, তা খাজনা (tax) নয়, ভাড়া (rent) মাত্র।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্দশাঃ-
খরা, বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলহানি ঘটলেও রাজস্ব প্রদানের হাত থেকে কৃষকরা অব্যাহতি পেত না। তা ছাড়া কোম্পানি রায়তকে রূপোর মুদ্রায় রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ দেয়। ফলে সরকারি রাজস্ব মেটাতে গিয়ে কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত বলেছেন যে, “এই ব্যবস্থায় শোষণের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের চেয়ে তা অধিকতর ক্ষতিকর ছিল। জমির অস্থায়ী বন্দোবস্তই ছিল জনসাধারণের দারিদ্রা ও দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ।"
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কী? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল আলোচনা করো।' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023