আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প ঈর্ষা |
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা আশাপূর্ণা দেবীর ছোট গল্প (Bengali Short Stories Of Ashapunra Debi) হিসেবে ঈর্ষা ( Arthahin By Ashapurna Debi) নামক একটি ছোট বাংলা গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। পরবর্তীকালে আমরা আশাপূর্ণা দেবী সহ অন্যান্য বিখ্যাত লেখক লেখিকাদের বিভিন্ন ধরনের বাংলা ছোটগল্প এবং বিভিন্ন উপন্যাসের গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
বাংলা ছোট গল্প ঈর্ষা- আশাপূর্ণা দেবী
সুজাতার ঘরের বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সুমন্ত একটা ছোট্ট চিরুনি দিয়ে জোরে চুল আঁচড়াচ্ছিল, অথবা বলা যায় আঁচড়েই চলছিল। কারণ তার মাথায় চুলের যা চাপ, তাতে তাঁত বসাবার মতো দাঁত ওই ক্ষুদে চিরুনিটার নেই। গায়ে হাত বুলোনোর মতো ভেসে যাচ্ছিল সুমন্তর প্রবল চেষ্টাতেও।
সুজাতা মোমবাতি নিতে ঘরে ঢুকে, ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ওটা কী হচ্ছে?
চিরুনিটা ভেঙে যাবে যে? তোর চুলে ওই চিরুনি!
সুমস্ত একইভাবে হাত চালাতে চালাতে অগ্রাহ্যের গলায় বলল, তোমার চিরুনি নেওয়া
হয়নি। সুজাতা ভুরু কুঁচকে বলল, চমৎকার! খুব 'ম্যানার্স শেখা হচ্ছে।
সুমন্তদের স্কুলে 'ম্যানার্স' সম্পর্কে বিশেষ নজর রাখার ব্যবস্থা আছে এবং সুমন্ত না কি তাতে একটা সার্টিফিকেটও পেয়েছে। কিন্তু স্কুলের ব্যবহার স্কুলে, তাকে বাড়িতেও নিয়ে
আসতে হলে পেরে উঠবে কেন? হাত পা খোলাবার জন্যে খেলামাঠের দরকার হয় না? সুমন্ত মায়ের থেকেও অধিকভাবে ভুরুজোড়া কুঁচকে একবার মার মুখের দিকে তাকাল। কোনও কথা বলল না। আবার একই কাজ করতে লাগল। আজকাল এই এক বাহাদুরী হয়েছে সুমন্তর, ক্লাস ইলেভেন-এ উঠে পর্যন্তই বোধহয় হয়েছে, ইচ্ছে করে মা-বাপকে অগ্রাহ্য দেখান। বাহাদুরী ছাড়া আর কি? তবে বাবা বলে, তুমি আর শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না সুজাতা ! বাহাদুরী নয় লায়েক হাওয়া। দেখ তোমার ওই ছেলে ক'দিন পরেই কী মূর্তি ধরে।...
এরকম সময় 'তোমার ছেলে' বলাই বিধি।
সুজাতা অবশ্য বাহাদুরী বলেই ধরে আছে এখনও। নতুন বড় হওয়ার সুখে এটা একটা নতুন সথ। এই আর কি। তবু ছেলের ওই ভুরু কোঁচকানো দেখে রাগে গা জ্বলে গেল। এবং মাতৃঅধিকারের শক্তিটা কাজে লাগাতেই বোধহয় জোরে জোরে বলল, বেরোচ্ছিস কোথায়?
বেরোচ্ছে, এটা সাজ সঙ্গতেই বোঝা যাচ্ছে। সুমন্ত তখন চিরুনিখানা প্যান্টের হিপ্ পকেটে পুরে ফেলে ধীরে-সুস্থে বলল, কোনও
একদিকে নিশ্চয়ই। কেন, কিছু আনতে হবে? কিছু আনার ব্যাপারে অবশ্য সুমন্ত এখনও একপায়ে খাড়া। আট-দশ বছর বয়েস থেকে হরদম ছেলেকে দোকানে পাঠিয়ে তার এই নেশাটি ধরিয়ে দিয়েছে সুজাতা।
সুজাতা কঠিন গলায় বলল, না। কিছু আনতে হবে না, জানতে হবে। কী জানতে হবে? এই সন্ধের মুখে, লোডশেডিংয়ের মধ্যে যাচ্ছিস কোথায় সেটাই জানতে হবে।
কেন? আমি কি হাজতের আসামি? তাই এক পা বেরোলেই বলে যেতে হবে? বাঃ চমৎকার! ক্রমশই বেশ বোলচাল শেখা হচ্ছে। তোর বাবা এখনো কোথাও বেরোলে বলে বেরোয় দেখিস না?
স্রেফ্ স্নেভ্ মেন্টালিটি। বলে সুমন্ত সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় তরতরিয়ে। কিন্তু মায়ের মতো জাতবেহায়া আর কে আছে? তাই সুজাতাও সঙ্গে সঙ্গে নেমে যায় দু'চার সিঁড়ি। চেঁচিয়ে বলে বেশি দেরি করবিনা কিন্তু! আকাশটা দেখ। দারুণ বৃষ্টি আসছে। কথার জবাব অবশ্য পায় না সুজাতা।
ঘুরে এসে রাস্তার দিকের বারান্দাটায় সুজাতা দাঁড়ায়। তরতরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সুমন্ত, নেহাৎ 'ছেলে' বলেই বুঝতে পারছে, নইলে দেখার কথা নয়। সত্যিই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। তার সঙ্গে চন্দ্র-সূর্যের অমোঘ নিয়মের মতো লোডশেডিংয়ের অবদান তো আছেই। তবু হাঁটার ওই পরিচিত ভঙ্গিটা থেকেই হঠাৎ আবিষ্কার করে বসে সুজাতা ওর গতিভঙ্গিটা ঠিক ওর বাপের মতো গঠনভঙ্গিও। এই বয়সেই বাপের মতো লম্বা হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ পুরো দৈর্ঘ্যটাই এসে গেছে ওর এখনই...এই তো কটা মাস হল ক্লাস নাইন পার করেছে। বড় তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল ছেলেটা।
ঘরে চলে এসে জানলা-টানলাগুলো বন্ধ করতে করতে ভাবল সুজাতা, বাপের মতো আকৃতি পাচ্ছে। এই প্রকৃতিটা তো পাচ্ছে না?
শ্রীমন্তর মধ্যে কত শান্ত সভ্য নির্বিরোধী ভাব। কাউকে উঁচু কথাটি বলতে জানে না। এই তো নতুন বাহাদুরীতে ছেলে তো শুধু মাকে কেন, বাপকেও 'ডোন্টকেয়ার' ভাব দেখিয়ে মজা পায়। সুজাতার ভয় হয় ফট্ করে না ধাড়ি ছেলের গালে একটা চড় কষিয়ে দেয় শ্রীমন্ত, কিন্তু তেমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে না। বড়জোর স্বগত মন্তব্য করে কিছু। মন্তব্য করে সরে যায়, ভালো! ভালো। শিক্ষাদীক্ষা ভালোই হচ্ছে। ইংলিস মিডিয়াম স্কুল তো—'
এই ব্যঙ্গটুকু অবশ্য সুজাতার উদ্দেশে চারবছর বয়েসে ছেলেকে পাড়ার স্কুলে ভরতি করে দিয়েছিল শ্রীমন্ত, যে স্কুলে নিজে পড়ে বড় হয়েছে। তখন তো শ্রীমন্তর মা দিব্যি ডাটো। ... 'পাড়ার ইস্কুল' বলে সুজাতা একটু খুৎ খুঁৎ করায় সতেজে বলেছিলেন, কেন? ওই পাড়ার ইস্কুলে পড়ে কি মন্ত্র আমার 'অমানুষ' হয়েছে?' তোমার ছেলে যদি আমার ছেলের মতো হয়, তা হলেই বর্তে যেও বাছা।
তবু দু'বছর পর থেকেই সুজাতা ইংলিস মিডিয়াম, ইংলিস মিডিয়াম' বলে এমন অস্থির হল, শাশুড়ি নিজেই বললেন, 'তবে দে বাবা, ছেলেকে সাহেবের ইস্কুলে ভরতি করে দে। বৌমার যখন এত ভয় ভাবনা, বাংলা ইস্কুলে পড়লে ছেলে বিলেত যেতে পারবে না, দিল্লি মুম্বাইয়ের চাকরি পাবে না।---শেষে আবার হয়তো তোকে দুষবে, মা বুড়ীর প্ররোচনায় পড়ে
ছেলেটার পরকাল খেয়ে রেখেছ তুমি। চোস্ত সতেজ কথাবার্তা ছিল মহিলার।
হয়তো সেইজন্যেই শ্রীমন্তর স্বভাবটা এত শান্ত শান্ত। বলতে গেলে মায়ের আওতাতেই তো জীবনটা কাটল। মহিলা মারা গেছেন তো এই সেদিন। যখন সুমন্ত বেশ বড় হয়ে গেছে। আড়ালে মায়েতে ছেলেতে শ্রীমন্তর 'মাতৃভক্তির' প্রাবল্য নিয়ে হাসাহাসি করেছে। সুজাতা বলত, ঠাকুমা বলেছেন? ও বাবা। মাতৃভক্ত বিদ্যাসাগর ওর আর নড়চড় করতে পারেন?
সুমন্ত হাসত হি হি করে।
আবার মায়ের অসুখের সময় শ্রীমন্তর অস্থিরতা দেখে চিন্তাও প্রকাশ করেছে, মা-বাপ তো
মানুষের চিরদিন থাকে না। ঠাকুমা গেলে তোর বাবা যে কী করবে! কিন্তু আশ্চর্য! মায়ের মৃত্যুর পর কোনও অধীরতা দেখা গেল না শ্রীমন্তর মধ্যে। বরং আরও বেশি শান্ত হয়ে গেল। পরিবর্তনের মধ্যে, সাতজন্মে পুজোপাঠ সন্ধ্যা গায়ত্রীর দিক দিয়ে যেত না, সেটাই হয়েছে। অবশ্য মায়ের ঠাকুরঘরের দুর্দ্দশা দেখতে পারবে না বলেই।
অশৌচান্তর পর থেকেই শ্রীমন্ত সকাল-সন্ধে দু'বেলা মায়েরই পুরোনো একখানা গরদের থান জড়িয়ে উঠে যায় তিনতলায় মায়ের ঠাকুর ঘরে। কী করে না করে সুজাতা দেখতে যায় না, তবে সকালে পুজো করে নেমে আসা শাশুড়ির কপালে যেমন ছোট্ট একটি চন্দনের টিপ দেখতে পেত, তেমনি ছোট্ট একটি টিপ্ শ্রীমন্তর কপালেও দেখতে পায়। ভাত খেতে বসেও রয়ে যায় সেটা, অফিস যাবার সময় মুছে ফেলে।
সুমন্ত এক একদিন হেসে হেসে বলে, বাবা নির্ঘাৎ একদিন বোষ্টম হয়ে যাবে মা, দেখো তুমি।
সুজাতা তো ছেলের কথায় সায় দেবেই, ছেলেকে নিজের পক্ষে না রাখতে পারলে পৃষ্ঠবল কোথায়? শ্রীমন্তকে তো কোনওদিনই ঠিক ‘নিজপক্ষ' করে তুলতে পারেনি। মরে গিয়েও যেন ছেলের জীবনের বেশ খানিকটা নিজের দখলে রেখে দিয়েছেন সেই পরলোকগতা। অথচ কী বুদ্ধিসুদ্ধিহীন গ্রাম্য মহিলাই ছিলেন। আশ্চর্যই লাগে। শ্রীমন্তকে তো বুড়ো বয়েস পর্যন্ত বকে 'ধুড়ধুড়ি' নেড়ে দিতেন।' (এটি তারই ভাষা) পান থেকে চূণ খসলে রক্ষে রাখতেন না।
শ্রীমন্তর ছোটবোন খুকুর শ্বশুরবাড়ি ভবানীপুরে। এই ঢাকুবিয়ার বাড়ি থেকে নেহাৎ কম দূর নয়, তবু প্রতি সপ্তাহে বোনকে দেখতে যাওয়া চাইই চাই। কোনও কারণে একটা সপ্তাহ বাদ গেলেই মহিলা অনায়াসে বলতেন, তোর যে একটা বাপমরা ছোটবোন আছে সেটা বোধহয় এবার ভুলতে চেষ্টা করছিস মন্তা? আর আশ্চর্য, শ্রীমন্ত রেগে দু'কথা শুনিয়ে দেওয়ার বদলে পরদিনই বোনের প্রিয় খাদ্য
গড়িয়াহাটার দোকানের ডালমুট আমসত্ত্ব শোন্ পাপড়ি নিয়ে ছুটত তার কাছে। মাতৃভক্তির পরাকাষ্ঠাতেই বোধহয় এখনও হপ্তায় হপ্তায় 'খুকুর বাড়ি' যাওয়াটি অব্যাহতই
আছে। আজই তো যাবার সময় বলে গেছে, খুব সম্ভব খুকুর বাড়ি হয়ে আসব, দেরি হলে ভেব না।'
সুজাতা বলে ফেলেছিল, 'এই তো গেলে সেদিন শ্রীমন্ত কিছু বলেনি, জুতোর ফিতে বেঁধে হাত ধুয়ে চলে গিয়েছে। তা বলে সুজাতার
ছেলের মতো ভুরুও কোঁচকায়নি।
দেরি হলে ভাবতে বারণ করেছিল শ্রীমন্ত, তবে দেরি করল না। এসেই গেল ঠিক সময়ে। বলল খুব বৃষ্টি আসছে মনে হল, তাই আর নামলাম না, টানা চলে এলাম। এসেই যথারীতি মায়ের ছেঁড়া গরদ গায়ে জড়িয়ে সবে ঠাকুর ঘরে গিয়ে উঠেছে। আর
তখনই নেমে এল সেই বৃষ্টি যে নাকি এতক্ষণ 'নামব নামাব' করে ভয় বাড়াচ্ছিল। কিন্তু ভয়ের কি থাকত যদি সুমন্তও বাড়ি থাকত। বাড়ির লোকেরা যদি বাইরে না থাকে, বেদম বৃষ্টির মতো মজার কী আছে? কিন্তু এখন বাড়ির আসল লোকটাই তো বাইরে।
এখন ক্রমশ যত বাজ বিদ্যুৎ আর মেঘের দাপট বাড়ছে, ততই সুজাতার প্রাণের মধ্যে হু হু করছে। আর আপন মনে ছেলের উদ্দেশে বলে চলেছে- পাজি হতভাগা ছেলে। এত করে বললাম, শোনা হল না কথা। কোথায় গিয়ে পড়েছিস্, কী ভাবে ভিজে ঢোল হয়ে ফিরবি ভগবান জানেন। দেখতেই লম্বা হয়েছে, আর মনে করছ মস্ত লায়েক হয়েছি। আসলে তো পট্কা। সে হুঁস আছে? এক্ষুনি কাসতে শুরু করবি। আপন মনে অনুপস্থিত ছেলেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বকেই চলে সুজাতা। সামনা সামনি তো একটা কথা বলার সাহস নেই। বৃষ্টি কমবার নাম নেই। বরং বাজ বিদ্যুতের সমারোহ বাড়ছে। আশ্চর্য শ্রীমন্ত দিব্যি নিশ্চিন্ত
মনে ‘টঙে' চড়ে বসে আছে। একবার বুক দুরদুর করছে না, কোথায় কী ঘটছে ভেবে। সুজাতার তো মনে হচ্ছে এটা প্রলয়ের সূচনা। ভাবল ছুটে ঠাকুরঘরে উঠে গিয়ে বলে, তুমি কি মানুষ না পাথর? যেতে হল না। যথাসময়েই নেমে এল শ্রীমন্ত। থান গরদ ছেড়ে সুতি ধুতি পরে চায়ের টেবিলে এসে বলল, বাবু বুঝি এখনও ফেরেননি? সুতাজা ক্ষুব্ধ উত্তেজিত গলায় বলে ওঠে, দেখোনো, এত করে বললাম, ভীষণ মেঘ করেছে, দেরি করিসনি,—তবু এইটুকু ছেলে, এত কীসের আড্ডা! তুমিও তো কিছু বলো না। মায়ের শত কথায় কাজ হয় না, বাপ একটা ধমক দিলে কাজ হয়। ধমক?
শ্রীমদ্ভ চায়ের কাপটাই কপালে ঠেকিয়ে নমস্কারের ভঙ্গি করে বলে তোমার ওই 'হীরো' ছেলেকে আমি দেব ধমক? বলে নিশ্চিন্তভাবে চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে।
কড়কড় করে আবার বাঙ্গের শব্দ!
সুজাতা অস্থির হয়ে জানলা খুলে দেখতে যায়, শ্রীমন্ত বলে, ওটা কী হচ্ছে? ঘর যে ভেসে যাবে।
খুব নিশ্চিন্দি মানুষ বাবা। ছেলেটা কোথায় কী করছে কী আশ্চর্য! পাগল তো নয় যে এই সময় রাস্তায় থাকবে। আছেই বাড়ি-টাড়ি। আটকে পড়েছে। এত ভাবনা করছ কেন?
কোথাও বন্ধুর একথায় আবার রাগ এসে যায় সুজাতার। মনে হয়, খুব একটা বিপদে পড়ে ভিজে নেয়ে বাড়ি আসে সুমন্ত তবে জব্দ হয় লোকটা।...আর তা যদি না হয়, তো আজ ছেলেকেই সুজাতা দেখে নেবে একহাত। ওইটুকু ছেলেকে এত ভয়ই বা পাব কেন আমি?... মনে দুঃখ পাবে বলেই না কিছু বলি না। রাত বাড়তে বাড়তে ক্রমে বৃষ্টি কমে। থামে মেঘের ডাক, বাক্রে ডাক, বিদ্যুৎ চমকানি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, যেন জেরটা বজায় রাখতে চেষ্টা করে। অতঃপর বাড়ি ফেরে সুমন্ত। ফেরে একখানা রিকশা করে। কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
কোথাও না, এই ঢাকুরিয়ার মধ্যেই, সুধাময়দের বাড়ি।
সুজাতা এতক্ষণ মনে মনে ভাঁজছিল ছেলে যদি শুকনো গায়ে মাথায় ফেরে তো দেখে নেবে তাকে। কিন্তু কী করে নেবে দেখে? কোন কথার পিঠে? ছেলে যদি বলে, তা' তুমি যদি ভাবতে বসো আমি বাজ পড়ে মারা গেছি, তা কষ্ট তো পাবেই! আমি কি কচি খোকা যে, তুমি একেবারে অস্থির হয়ে উঠলে?
সুজাতা ভারী মুখে বলে, অস্থির কী সাধে হই। কচিখোকা নও বুঝলাম ধাতটি তো খোকারই মতো। এই যে জোলো হাওয়াটি লাগিয়ে এলি এতক্ষণ, রাতেই কাসতে শুরু করবি। বলছিস তো ভিজিসনি, কই দেখি মাথাটা। যা চুলের রাশ মুছে দিই ঘসে।
সুজাতা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে দেখতে আসে, এক ঝটকায় মার হাতটা ঠেলে দিয়ে বলে ওঠে সুমন্ত, আঃ! ভেবেছ কি তুমি? বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে, বুঝলে? নিজেই তোয়ালে দিয়ে ঘসে ঘসে মাথাটা মুছে নিয়ে জামা বদলে শুয়ে পড়ে।গিয়ে।...সুজাতা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। শ্রীমন্ত ওর ঘরের দরজায় এসে একটু হেসে বলে, কী রে? মার ওপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লি?
রাগ আবার কি!
সুমস্ত পাশ ফিরে বলল, সুধাময়ের মা ছাড়লেন না, জোর করে ওদের সঙ্গে খিচুড়ি বেগুনি ডিমভাজা খাইয়ে দিলেন। ওঃ তাহলে তো আজ তোর মজার দিন গেল।
শুনলে তো?
শ্রীমন্ত বলে উঠল, বন্ধুর বাড়ি খিচুড়ি বেগুনি ডিমভাজা—যাক বেচারি আমরা আমাদের রুটি তরকারি নিয়ে বসিগে। যথেষ্ট রাত হয়ে গেছে। এখন আর লোডশেডিং নেই। দালানের দুটো আলোই জ্বালা। খাবার টেবিলের সামনে দেওয়ালে শ্রীমন্তর মার যে মস্ত ফোটোখানা টাঙানো রয়েছে, তার উপর আলো এসে পড়েছে....খেতে বসে শ্রীমন্ত যথা নিয়মে আগে সেই ছবির দিকে নীরব প্রণামের ভঙ্গিতে একটু চোখ ফেলে খাবারে হাত দেয়। আর কেন কে জানে সেই মুহূর্তে ভয়ানক একটা জ্বালায়
সুজাতার ভিতরটা তোলপাড় করে দু'ঝলক গরমজল এসে যায় দুচোখের কোলে।
ওই অতি সাধারণ প্রায় অশিক্ষিত গ্রাম্যচেহারার মহিলাটির উপর ভয়ানক একটা ঈর্ষা অনুভব করে সুজাতা।
আশা করি আজকের এই ব্লগে শেয়ার করা আশাপূর্ণা দেবীর ছোট গল্প হিসেবে ঈর্ষা ছোট বাংলা গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।। এরকম আরো নানা ধরনের বাংলা ছোটগল্প অনলাইনে পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করতে পারেন।
tags: আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প - অর্থহীন | Bangla Short Stories | bangla golpo | বাংলা ছোট গল্প | বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | Bengali short stories