একাদশ শ্রেণীর দর্শন প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শন প্রথম অধ্যায় দর্শনের ধারণা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। সেটি হলো দর্শন কী বা কাকে বলে? এবং দর্শনের বিভিন্ন বিভাগ যেমন অধিবিদ্যা কী? জ্ঞানবিদ্যা কী? নীতিবিজ্ঞান কী? সমাজদর্শন কী? তর্কবিজ্ঞান কী ইত্যাদি। এর আগেই আমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শনের পাশ্চাত্য দর্শন এবং ভারতীয় দর্শনের প্রায় সমস্ত অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে শেয়ার করেছি। যারা 2030 সালে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেবে তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে একাদশ শ্রেণীর দর্শনের সমস্ত প্রশ্ন উত্তর এবং নোটস, অনলাইন মক টেস্ট,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি সব পেয়ে যাবে।
একাদশ শ্রেণীর দর্শন প্রশ্ন উত্তর || দর্শন কী বা কাকে বলে? দর্শনের বিভিন্ন বিভাগ গুলি সম্পর্কে আলোচনা
উওরঃ গ্রিক শব্দ Philos ( আগ্রহ বা অনুরাগ ) এবং Sophia ( জ্ঞান ) শব্দটির অর্থ হলো মিলিত অর্থ হলো Philosophy। সুতরাং ফিলোসফি কথাটি অর্থ হলো জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ বা আগ্রহ। সুতরাং খুব সহজভাবে বলা যায়, দর্শন হলো এমন একটি বিষয় বা শাস্ত্র যা এই বিশ্বজগতের একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
দর্শনের বিভিন্ন বিভাগ গুলি সম্পর্কে আলোচনাঃ-
দর্শন হলো এমন একটি বিষয় যার আলোচনার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। দর্শন মুলত এই বিশ্ব জগতের সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা করে থাকে। সেই কারণেই দর্শনের আলোচনার বিষয় অসংখ্য। কিন্তু দর্শনের কাজের সুবিধার জন্য দর্শনের আলোচনার বিষয় গুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল জ্ঞান বিদ্যা ; অধিবিদ্যা, নীতিবিজ্ঞান সমাজদর্শন রাষ্ট্রদর্শন এবং তর্কবিদ্যা।
জ্ঞানবিদ্যা (Epistemology):-
দর্শনের প্রথম এবং একটি অন্যতম শাখা হলো জ্ঞানবিদ্যা। জ্ঞানবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Epistemology, যা ‘Episteme ও ‘Logos’–এই দুটি পদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। ‘Episteme' কথার অর্থ হল knowledge বা জ্ঞান এবং ‘Logos' কথার অর্থ হল Science বা বিদ্যা। সুতরাং Epistemology শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল Science of knowledge বা জ্ঞান সম্বন্ধীয় বিদ্যা।
দর্শনের অন্যতম শাখা হিসেবে জ্ঞানবিদ্যা জ্ঞান সম্বন্ধীয় বিবিধ সমস্যার সমাধান করে। বস্তুত, জ্ঞানবিদ্যা হল এমন এক শাস্ত্র, যা জ্ঞানের উপকরণ, সম্ভাবনা, শর্ত, সীমা, স্বরূপ, বৈধতা প্রভৃতি প্রশ্ন জ্ঞানবিদ্যার সংজ্ঞা ও নিয়ে আলোচনা করে। জ্ঞানবিদ্যার মূল প্রশ্নগুলি হল, জ্ঞান কি আদৌ সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তাহলে কীভাবে তা সম্ভব? জ্ঞানের উৎপত্তি কীভাবে হয়? বৈধ জ্ঞানের শর্তগুলি কী কী ? বৈধ জ্ঞানের সঙ্গে অবৈধ জ্ঞানের পার্থক্য কোথায়? যথার্থ জ্ঞানের স্বরূপ কী? জ্ঞানের সীমা কতদূর ? চরম তত্ত্বের জ্ঞান কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, কীভাবে তা সম্ভব? এককথায়, জ্ঞান সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্ন জ্ঞানবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
অধিবিদ্যা বা তত্ত্ববিদ্যা (Metaphysics):-
অধিবিদ্যা হল দর্শনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ বা শাখা। অধিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Metaphysics”। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল (Aristotle) সর্বপ্রথম এই 'metaphysics শব্দটি ব্যবহার করেন। ইংরেজি ‘Metaphysics' শব্দটির অর্থ অনুধাবন করার জন্য আমরা শব্দটিকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হল ‘Meta' এবং অপরটি হল ‘Physics’। Meta + physics = Metaphysics | ‘Meta' কথার অর্থ হল অতিক্রান্ত (beyond) এবং Physics কথার অর্থ হল দৃশ্যমান জগৎ (Physical world)। অতএব, ‘Metaphysics' কথার আক্ষরিক অর্থ হল দৃশ্যমান জগতের অতীত (beyond the physical world) অর্থাৎ ইন্দ্ৰিয়াতীত জগৎ।
‘Metaphysics' শব্দের উপরোক্ত আক্ষরিক অর্থকে অনুধাবন করে বলা যায় যে, অধিবিদ্যা হল দর্শনের এমন এক শাখা, যা ইন্দ্রিয়াতীত বস্তুর স্বরূপ বা প্রকৃত সত্তা নিয়ে আলোচনা করে। যেসব বস্তু বা ঘটনাগুলিকে আমরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে পাই না, যেমন—চিৎ, অচিৎ, ঈশ্বর, দেশ, কাল, দ্রব্যত্ব, কার্যকারণ তত্ত্ব প্রভৃতি; সেগুলির প্রকৃত স্বরূপ নির্ণয় করাই অধিবিদ্যার কাজ। এককথায়, অতীন্দ্রিয় জগৎ হল অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
নীতিবিজ্ঞান (Ethics):-
নীতিবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Ethics' কথাটি গ্রিক শব্দ ‘Ethos’ থেকে উদ্ভুত হয়েছে। ‘Ethos' কথার বাংলা অর্থ হল 'চরিত্র' (Character), যা আবার ‘রীতিনীতি (custom) এবং 'অভ্যাস' (habit) শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অনেকে আবার ‘Ethics' শাস্ত্রটিকে ‘Moral Philosophy বা ‘নৈতিক দর্শন' নামে অভিহিত করেন। এই ‘Moral Philosophy'-র ‘Moral' কথাটি উদ্ভূত হয়েছে ল্যাটিন শব্দ‘Mores’ থেকে, যার বাংলা অর্থ হল ‘অভ্যাস' বা ‘রীতিনীতি । কাজেই, ধাতুগত অর্থে 'নীতিবিজ্ঞান হল মানুষের অভ্যাস ও রীতিনীতি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।
নীতিবিজ্ঞান হল মানুষের স্থায়ী আচরণের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় এবং আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান এই আচরণের ভালো ও মন্দের উপর তার
আবার, কোনো কোনো নীতিবিদ মনে করেন, মানুষের আচরণ (Conduct) হল তার চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ; কারণ মানুষের চরিত্র তার চরিত্রের ভালো ও মন্দ নির্ভর করে। এই অর্থে বলা যায়, নীতিবিজ্ঞান হল মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। নীতিবিদ ম্যাকেঞ্জির ভাষায়, নীতিবিজ্ঞান হল এমন এক শাস্ত্র, যা মানুষের আচরণের ঔচিত্য বা মঙ্গলের কথা আলোচনা করে।
আবার, অনেকে মনে করেন, আমাদের আচরণের ভালো, মন্দ, ন্যায়, অন্যায়, উচিত, অনুচিত প্রভৃতি ধারণাগুলিকে বিচার করার জন্য আমাদের সামনে একটি ‘নৈতিক আদর্শ' (Moral standard) রাখতে হয়, যাকে বলা যেতে পারে মানবজীবনের পরমার্থ সম্পর্কিত বিজ্ঞান পরমার্থ বা পরমকল্যাণ (Supreme Good or Summum Boxum)। কিন্তু যদিও এই পরমকল্যাণ মানবজীবনের চরম লক্ষ্য, তবুও পরমকল্যাণের স্বরূপ নিয়ে নীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। নীতিবিজ্ঞান এই পরমকল্যাণের প্রকৃত স্বরূপটি নির্ণয় করে এবং এই পরমকল্যাণ লাভের সহায়ক নৈতিক নীতিগুলি নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। এজন্য অনেকে বলেন, 'নীতিবিজ্ঞান হল মানবজীবনের পরমার্থ বা পরমকল্যাণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান।’
সমাজদর্শন (Social Philosophy):-
সমাজদর্শন হল দর্শনের একটি নবীন শাখা। যে শাস্ত্র দর্শনের । চিন্তানি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যক্তি তথা সমাজ সম্বন্ধে এক চরম ব্যাখ্যা দানের চেষ্টা করে, তাকে সমাজদর্শন বলে।।সমাজদর্শন হল দর্শনের এমন একটি শাখা যা প্রধানত সমাজের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও মূল্য নিয়ে আলোচনা করে।
রাষ্ট্রদর্শন (Political Philosophy):-
রাষ্ট্রদর্শন দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। যে শাস্ত্র দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রদর্শন কী থেকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্বাস ও ধ্যানধারণাকে যুক্তিতর্কের সাহায্যে বিচার করে, তাকে রাষ্ট্রদর্শন বলে। অনেক চিন্তাবিদ মনে করেন যে, রাজনৈতিক আলোচনা দু-প্রকার হতে পারে : বর্ণনামূলক ও নির্দেশমূলক। বর্ণনামূলক আলোচনার ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনে মানুষের রাজনৈতিক আচরণ, রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্বন্ধ, সমাজে রাষ্ট্রশক্তির ভূমিকা, রাষ্ট্রের শাসনপ্রণালী প্রভৃতির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মানুষের রাজনৈতিক আচরণ কীরূপ হওয়া উচিত, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে কীরূপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত—এই সকল বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয় না।
অপরপক্ষে, নির্দেশমূলক আলোচনার ক্ষেত্রে নাগরিকের পক্ষে কীরূপ রাজনৈতিক আচরণ করা উচিত, নাগরিকের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের কীরূপ কার্য সম্পাদন করা উচিত—এইসব বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তর্কবিদ্যাঃ
তর্কবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Logic' কথাটি গ্রিক শব্দ ‘Logike’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আবার ‘Logike' শব্দটি হল ল্যাটিন (Latin) বিশেষ্য পদ ‘Logos’-এর বিশেষণ, যার বাংলা অর্থ হল 'চিন্তা' বা 'ভাষা' (Thought or Language)। কিন্তু যদিও ‘Logos শব্দের আক্ষরিক অর্থ চিন্তা এবং ভাষা উভয়ই, তবুও চিন্তা ও ভাষা শব্দদুটি সমার্থবোধক নয়। ভাষা হল চিন্তার মাধ্যম বা বাহন, কেন না আমরা ভাষার মাধ্যমেই আমাদের চিন্তাকে প্রকাশ করি। এজন্যই বলা যায়, চিন্তার সঙ্গে ভাষার এক নিবিড় সম্পর্ক আছে। আমাদের মনের চিন্তা ভাষায় প্রকাশিত না হলে, তার সত্যতা বা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করা যায় না, অর্থাৎ তা নিয়ে তর্ক করার সুযোগ হয় না। কাজেই, চিন্তাকে তর্কবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হওয়ার জন্য ভাষার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। এই কারণে, ‘Logos শব্দের আক্ষরিক অর্থ চিন্তা ও ভাষা উভয়ই। এই ব্যুৎপত্তিগত অর্থের দিকে লক্ষ রেখে বলা যায়, তর্কবিদ্যা হল ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা-সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান (Logic is the science of thought expressed in language)।
Tags : একাদশ শ্রেণীর দর্শন প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণীর দর্শন সাজেশন | দর্শনের ধারণা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণীর দর্শন প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11 Philosophy Question Answer And Suggestion