পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023

0

 

পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো বা সিরাজদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || সিরাজদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ আলোচনা করো

ভূমিকাঃ- বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার অথবা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ক্ষেত্রে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশীর যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিরাজ দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের বা পলাশীর যুদ্ধের পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন - আনুগত্য প্রদর্শন করতে বিলম্ব, সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সিরাজের শত্রু কৃষ্ণ দাসকে ইংরেজদের আশ্রয়দান,সিরাজের বিনা অনুমতিতে দুর্গ নির্মাণ,নারায়ণ দাস কে অপমান প্রভৃতি পলাশীর যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কারণ। 

সিরাজের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বিলম্বঃ- 

সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাবী সিংহাসনে বসার পর স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রতি সাধারণ শ্রদ্ধা জানাতে বা স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করতে হতো। কিন্তু নবাব সিরাজদৌলার প্রতি ফরাসি,  ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিগুলি উপঢ‍ৌকণ পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছে করে উপঢ‍ৌকণ পাঠাতে অনেক দেরি করে। এতে সিরাজ যথেষ্ট পরিমাণে অপমানিত  এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর যথেষ্ট পরিমাণে ক্রোধিত হন।

সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রঃ- 

সিরাজদৌলার বাংলার সিংহাসনে নবাব হিসেবে শাসন পরিচালনা করার বিষয়টি তার সভাসদদের মধ্যে কয়েকজন,যেমন -মীরজাফর, জগৎশেঠ,রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ এমনকি সিরাজের মাসি ঘষেটি বেগম পর্যন্ত মেনে নিতে পারেননি। সেই কারণে তারা সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার নবাবি সিংহাসন থেকে উৎখাত করার জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন।সিরাজদ্দৌলা যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারেন,তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতি তার ক্ষোভ জন্ম নেয়।।

সিরাজদৌলার বিনা অনুমতিতে ব্রিটিশদের দুর্গ নির্মাণঃ- 

দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের অজুহাতে ফরাসিরা এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের উভয় পক্ষই বাংলায় নিজেদের দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই খবর পেয়ে সিরাজ উভয় পক্ষকেই দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফরাসিরা সিরাজের আদেশের মান রেখে নিজেদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ রাখেন। কিন্তু সিরাজের আদেশের পরেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেদিকে কোনো কর্ণপাত করে না। তারা মাঝে মধ্যে নিজেদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবার তা অমান্য করতে শুরু করে।।

কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দানঃ- 

সিরাজের শাসনে থাকা ঢাকার দেওয়ান এবং ঘষেটি বেগমের প্রিয় পাত্র রাজবল্লভকে রাজস্বের সঠিক হিসাব এবং নবাবের প্রাপ্ত অর্থ সহ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সিরাজ তাকে মুর্শিদাবাদে সিরাজ ডেকে পাঠান। কিন্তু আর্থিক তোছরূপের দায়ে অভিযুক্ত রাজবল্লভ সেই হিসাব এবং প্রাপ্য অর্থ বুঝিয়ে না দিয়ে তার পুত্র কৃষ্ণবল্লভকে ধনরত্ন এবং আত্মীয়স্বজনসহ কলকাতায় ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেয়। ইংরেজরা সিরাজের নির্দেশ উপেক্ষা করে কৃষ্ণবল্লভকে নবাবের হাতে ফেরত না দিয়ে তাকে কলকাতায় আশ্রয় দিয়েছিল। সিরাজের আদেশ অপেক্ষা করার জন্য এই ঘটনা সিরাজকে যথেষ্ট পরিমাণে অপমানিত এবং ক্রোধিত করেছিল।।

দস্তকের অপব্যবহারঃ- 

প্রথম থেকেই কোম্পানির কর্মচারীরা দস্তকের অপব্যবহারও করতে শুরু করেছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বাণিজ্য করার সুযোগ পেলেও কোম্পানির অন্যান্য কর্মচারীদের সেই অধিকার দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরাও বাংলার অভ্যন্তরে বাণিজ্যে অংশ নিতে থাকে। এমনকি সেই বিষয়ে সিরাজ এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করলেও ইংরেজরা তাতে কর্ণপাত করেনি।।

আলিনগরের সন্ধিরঃ- 

ব্রিটিশদের বিভিন্ন কার্যকলাপে সিরাজদ্দৌলা তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে কলকাতা আক্রমণ করেন এবং কলকাতা আক্রমণ করে কলকাতা জয় করে সিরাজ কলকাতার নতুন নাম রাখেন আলিনগর। সেখানে তিনি মানিক চাঁদকে কলকাতার শাসনকর্তা রূপে নিযুক্ত করে মুর্শিদাবাদের ফিরে আসেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই রবার্ট ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে একটি নৌবহর কলকাতা দখল করে। এ ঘটনার পর সিরাজ পুনরায় কলকাতা অভিযান করেন। কিন্তু সিরাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের কারণে সিরাজ পরাজিত হয়ে আলিনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হন। কিন্তু কিছুদিন পরেই রবার্ট ক্লাইভ বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার এবং বাংলাকে দখল করার জন্য আলিনগরের সন্ধি ভঙ্গের মিথ্যা অজুহাতে সিরাজের উপর বা মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করেন। এবং এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়েই 1775 খ্রিস্টাব্দে 23 শে জুন শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধ।।

পলাশীর যুদ্ধের কয়েকটি ফলাফলঃ- 

1775 খ্রিস্টাব্দের বাংলা শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন- 

বাংলার শাসনকার্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যঃ- 

পলাশীর যুদ্ধের পর এই মূলত বাংলায় প্রকৃত নবাবী শাসনের অবসান ঘটে। সিরাজদৌলার পরে যে সমস্ত নবাব বাংলার সিংহাসনে বসে ছিলেন, তারা মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাতের পুতুল পরিণত হয়েছিলেন। 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব বৃদ্ধিঃ- 

পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যথেষ্ট আধিপত্য এবং প্রভাব বৃদ্ধি পায়। পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় শুধুমাত্র ব্রিটিশদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তারা বাংলা থেকে ফরাশি.ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিক শ্রেণীকে বিতাড়িত করে।

মিরজাফরের সিংহাসন লাভ এবং পলাশীর লুণ্ঠনঃ- 

পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়েছিল। এই সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অবাধ অধিকার এবং 24 পরগনার জমিদারি লাভ করেছিল।। মীরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার এবং জমিদারি লাভের পর বাংলা থেকে যে পরিমাণ সম্পত্তি লুণ্ঠন করেছিল, তা ইতিহাসে পলাশীর লুণ্ঠন নামে পরিচিত।।

কিং মেকারঃ-

পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিত যে,বাংলার সিংহাসনে কে বসবে। ব্রিটিশ কোম্পানির দ্বারা মনোনিতে শাসক বাংলা সিংহাসনে বসার পরেই মূলত শাস্পক তাদের হাতের পুতুল হিসেবে পরিণত হতো। মূলত নবাবের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই বাংলাকে শাসন করতো। এভাবে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার কিং মেকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে 'পলাশীর যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো বা সিরাজদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top