ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

0

 

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা অথবা ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ইতিহাস বর্ণনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

আজকের বিষয়ঃ- 

• ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা 
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভূমিকা 
• ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উডের ডেসপ্যাচের ভূমিকা
• ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় ডেভিড হেয়ার ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন এবং অন্যান্যদের ভূমিকা

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা ||ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ইতিহাস বর্ণনা করো

ভূমিকাঃ- 1813 খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত ভারতে নাতো সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আর নাতো বেসরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের বা আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাসের পর ব্রিটিশ সরকার সরকারিভাবে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়। সরকার ছাড়াও ভারতের কিছু শিক্ষা অনুরাগী এবং সমাজ সংস্কারক ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগে নিয়েছিল। ভারতীয় ছাড়াও ভারতের কল্যাণকামী কিছু বিদেশীরাও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খ্রিষ্টান মিশনারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। মূলত এভাবেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস শুরু হয়।।

বেসরকারি উদ্যোগে মিশনারীদের উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ- 

ভারতের সর্বপ্রথম আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা হয়েছিল বেসরকারী উদ্যোগর খ্রিস্টান মিশনারীদের হাত ধরেই। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকরা তাদের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার অথবা তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের মুলনীতির প্রসারের উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতীয়রা যাতে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারে, সেই কারণে খ্রিস্টান মিশনারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন যেমন জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং উইলিয়াম কেরি যাদের একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হয়, তারা সর্বপ্রথম 1800 খ্রিষ্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা করেছিলেন।। শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন 1818 শ্রীরামপুর একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এছাড়াও শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন,  চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং লন্ডন মিশনারী সোসাইটির উদ্যোগে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কিছু আধুনিক ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আলেকজান্ডার ডাফ 1836 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউট যা বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত, সেটি প্রতিষ্ঠা করেন।  এছাড়াও খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ ভারত বাংলায় বিভিন্ন স্থানে আধুনিক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় যা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগঃ- 

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে মূলত দুই ভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে ছিল। প্রথমত টমাস বেবিংটনের মেকলে মিনিট প্রস্তাবের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়তো 1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত উডের ডেসপ্যাচ এর মাধ্যমে।

পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে টমাস ব্যাবিংটন মেকলের মেকলে মিনিট-

1813 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সনদ আইনে প্রতিবছর ভারতের শিক্ষা খাতে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিন্তু এই এক লক্ষ টাকা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার পদ্ধতিতে ব্যয় করবে, তা নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত টমাস ব্যাবিংটন মেকলে তার মেকলে মিনিটের মাধ্যমে ভারতের প্রাচ্য শিক্ষা পদ্ধতিকে নিকৃষ্ট বলে দাবি করে পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতিকে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব জানায় যে মেকলে ভারতীয়দের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের রক্ত মাংসে ভারতীয় কিন্তু শিক্ষা, নীতি, মানসিক চিন্তাধারা ইত্যাদি দিক থেকে ইংরেজে পরিনত করতে চেয়েছিল। ম্যাকলের প্রস্তাব কে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি শিক্ষা নীতি হিসেবে পাশ্চাত্য শিক্ষা কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর পরেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, বোম্বাই 1835 খ্রিস্টাব্দে এলফিস্টোন ইনস্টিটিউট, 1857 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো একাধিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।

পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উডের ডেসপ্যাচ:-

বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি চার্লস উড ভারতের উচ্চ শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর এক নির্দেশনায় তিনি ভারতের বিভিন্ন শহরে আরো বেশি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ এবং প্রতিটি প্রেসিডেন্সি শহরে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন। এবং তিনি শিক্ষক- শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নারীশিক্ষার প্রসার ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন। উডের ডেসপ্যাচকে গুরুত্ব দিয়ে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন স্থানে কিছু আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ব্যক্তিগত বা বেসরকারী উদ্যোগে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ- 

ভারতে বিশেষ করে বাংলায় যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায়,ডেভিড হেয়ার,রাধাকান্ত দেব, ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন সাহেব প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন। 

রাজা রামমোহন রায়ঃ- 

রাজা রামমোহন রায় সর্বপ্রথম ভারতের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।  তিনি 1815 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক একটি ইংরেজী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়াও পরবর্তীকালে তিনি অন্যান্য আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

ডেভিড হেয়ার, ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকাঃ- 

রাজা রামমোহন রায়ের পরবর্তীকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার কলকাতা হিন্দু কলেজ, 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ফিমেল স্কুল, স্কুল বুক সোসাইটি, পটলডাঙ্গা একাডেমি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবং রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারকে সমর্থন করে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উপরিক্ত কয়েকজন ছাড়াও ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে আরও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

উপসংহারঃ সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ভারতে প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার মূলত বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারী, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সেই সমস্ত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছিল। ভারতের সেই সমস্ত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে শিল্প,  বাণিজ্য, চিকিৎসা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি কাজে নিজেদের নিয়োগ করে দেশের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূচনা ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা অথবা ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ইতিহাস বর্ণনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top