প্রশ্নঃ- কিউনিফর্ম লিপি, হায়ারোগ্লিফিক, হিন্দু এবং সোহগোর লিপি কী?
উওরঃ-
প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার আদিবাসীরা যে লিপির আবিষ্কার করেছিল তা কিউনিফর্ম লিপি নামে পরিচিত। সুমেরীয় সভ্যতা এক প্যাপিরাস না থাকায় সুমেরীয় বাসিন্দারা কাদামাটির চাকরি বা প্লেট তৈরি করে সেখানে সূচোলো কোনো নলখাগড়া অথবা নরুন দিয়ে টিপে টিপে তাতে নিজেদের লিপি তৈরি করতো। এরপর সেই লিপি তৈরি করার পর তা আগুনে পোড়ানো হতো এবং আগুনে পোড়ানোর ফলে সেই মাটির প্লেট মজবুত হয়ে যেত। এভাবে যে লিপি আবিষ্কার করা হতো তা কিউনিফর্ম বা কোনাক্ষর লিপি নামে পরিচিত।।
প্রশ্নঃ মিশরীয় লিপি বা হায়ারোগ্লিফিক লিপি কাকে বলে?
উওরঃ- প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার লিপি আবিষ্কারের পরে মিশরীয় সভ্যতার লিপি আবিষ্কার হয়েছিল। কিন্তু পরে আবিষ্কার হলেও মিশরীয় সভ্যতার লিপি অনেকটাই আধুনিক ছিল। মিশরীয় সভ্যতার মানুষ মন্দিরের গায়ে, এবং বিভিন্ন স্থানে পাথরের উপর বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করে বা বিভিন্ন অক্ষর তৈরি করে যে লিপি আবিষ্কার করেছিল, তা হায়ারোগ্লিফিক নামে পরিচিত।। মিশরের লিপির প্রচলন হয় সুমেরের কিছু পরে এবং অল্প দিনের মধ্যে মিশরের লিপি সুমেরের চেয়ে উন্নততর হয়ে ওঠে। পণ্ডিতরা মনে করেন যে, চিত্রলিপি থেকে মিশরীয় লিপির উদ্ভব হয়েছে। প্রথমে মিশরীয়রা পাথরের ওপর ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করত। ছবি এঁকে মনের সব কথা প্রকাশ করা যেত না।
প্রশ্নঃ- হায়ারোগ্লিফিক লিপিঃ-
চিত্রলিপি বিবর্তিত এল হায়ারোগ্লিফিক হয়ে (Hieroglyphic) লিপি। মিশরীয়রা এর নামকরণ করেছিল দেবলিপি। মন্দিরগাত্রে, কবরস্থানে, রাজকীয় বা ধর্মীয় ব্যাপারে এই লিপি ব্যবহৃত হত। এই লিপি খুব জটিল হওয়ায় ব্যাবসাবাণিজ্য ও দেনাপাওনার কাজে খুব অসুবিধা হত।
হায়রেটিক লিপিঃ-
এর ফলে এক নতুন লিপি আবিষ্কৃত হল—নাম হায়রেটিক লিপি। এ লিপিও বেশ জটিল। এর উদ্ভাবক ও ব্যবহারকারী ছিলেন মিশরের পুরোহিতরা। ডিমোটিক লিপি এরপরে উৎপত্তি হল ডিমোটিক লিপির। এটিই ছিল প্রকৃত জনসাধারণের লিপি। প্রাচীন মিশরীয়রা ‘প্যাপিরাস’ (Papyrus) বা শর জাতীয় গাছের ছালে লিখবার পদ্ধতি আবিষ্কার করে। প্যাপিরাস থেকেই এসেছে 'পেপার' শব্দটি। আমাদের দেশেও পাতা বা পত্রের ওপর লেখা হত। বলে আমরা বলি কাগজ-পত্র', বইয়ের ‘পাতা'।
প্রশ্নঃ- সিন্ধু লিপি কাকে বলে?
উওরঃ- সিন্ধু লিপি বলতে ভারতের সিন্ধু সভ্যতায় যে লিপি পাওয়া গিয়েছিল, তা সিন্ধু লিপি নামে পরিচিত। পশ্চিম ভারতে সিন্ধু উপত্যকায় প্রাচীন সভ্যতার যে ইতিহাস আবিষ্কৃত হয়েছে, সেখানেও লিপির প্রচলন ছিল। এগুলি সিন্ধু লিপি নামে পরিচিত। মহেন-জো-দারো ও হরপ্পা-সহ অন্যান্য প্রত্নক্ষেত্রে এমন প্রচুর সিল আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলির ওপর নানা চিহ্ন বিদ্যমান। ফাদার হেরাস, গ্যাড, স্মিথ, ল্যাংডন, হান্টার, স্বামী শঙ্করানন্দ প্রমুখ দেশি-বিদেশি বহু পণ্ডিত সেগুলি পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। এগুলির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি— তা সম্ভব হলে সুমের, ব্যাবিলন, মিশর প্রভৃতির মতো ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনতম লিখিত বিবরণ আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠত। এ কথা অবশ্য প্রমাণিত যে সিন্ধুলিপি চিত্রলিপি থেকে উদ্ভূত। এই লিপি চিত্রলিপির স্তর অতিক্রম করেছিল, কিন্তু ধ্বনিযুক্ত আক্ষরিক লিপিতে রূপান্তরিত হতে পারেনি।
প্রশ্নঃ- সোহগোর তাম্রলিপি কাকে বলে?
উওরঃ- ভারতের ক্ষেত্রে সোহগোর তাম্রলিপি (Sohgaura Copper Plate)-কেই প্রাচীনতম লিপি বলা হয় এই লিপি সম্রাট অশোকের জন্মের পঞ্চাশ বছর পূর্বে রচিত। সম্রাট অশোকের লিপিগুলি ভারত ইতিহাসের মূল্যবান সম্পদ। বলা যায় যে, এই লিপিগুলি সংখ্যায় যেমন প্রচুর, তেমনই তার বিষয়বস্তুও বৈচিত্র্যময়। এই লিপিগুলির আবিষ্কার ভারত ইতিহাসের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করেছে।