জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা

0

 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা

আজকের এই ব্লগে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র ( WB Class 11 history chapter 4 question answers in bengali ) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো বা জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা' বিস্তারে আলোচনা করবো। এবং এই বিষয়ে একটি সুন্দর নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো || জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা 

ভূমিকাঃ- ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়। টমাস নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি পর যারা আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন জন লক। 1688 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের জনগন শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে বিল অফ রাইটস আদায় করে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে রক্তপাতহীন সেই বিপ্লব গৌরবময় বিপ্লব নামে পরিচিত। এই সময়ে গৌরবময় বিপ্লবের পটভূমিতে জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল 'Two Treaties Of Government' যেখানে তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি আলোচনা করেছেন। 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি হল- 

জনগণের প্রাকৃতিক অধিকারঃ- 

জন লক মনে করতেন যে, যখন রাষ্ট্র তৈরি হয়নি তখন সেই অবস্থায় মানুষ প্রাক-রাজনৈতিক অবস্থায় বসবাস করতো। জন লক প্রাক রাজনৈতিক বলতে প্রকৃতির রাজ্য বা প্রকৃতির স্বাধীন সমাজের কথা বলেছেন যেখানে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় আইনের অস্তিত্ব ছিল না। সেখানে মানুষের জীবন ছিল অত্যন্ত সহজ সরল এবং স্বাভাবিক। তখন মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য ছিল না এবং সকলেই ছিল স্বাধীন। সবাই প্রাক রাজনৈতিক অবস্থায় বসবাস করতো বলে সবাইকে প্রাকৃতিক আইন মেনে চলতে হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে সম্পত্তির অধিকারকে কেন্দ্র করে সমাজে বৈষম্য, যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।।

রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাঃ-

জন লকের মতে মানুষ যখন প্রাক রাজনৈতিক বা শুধুমাত্র সমাজ জীবনে বসবাস করতো,তখন তাদের সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ায় তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। এবং সেই যুদ্ধ সংঘর্ষ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল। এরপর রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা বা সার্বভৌম ক্ষমতা তারা নিজেদের ওপরেই অর্পন করেছিল। মানুষ শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণ সাধনের শর্তেই শাসক গোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা বা রাষ্ট্রের চরম কৃতিত্ব অর্পন করেছিল। কিন্তু সেই শাসকগোষ্ঠী বা শাসক বা সরকার যদি জনগণের কল্যাণে অসমর্থ হয় বা তার ওপর থেকে যদি জনগণের আস্থা হারায়,   জনগণ সেই সরকার অথবা শাসককে তার ক্ষমতা থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকারী বলে স্বীকার করেছেন।

রাষ্ট্রের সরকারের কর্তব্যঃ- 

জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূল বক্তব্য হলো, জনগণ বা মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। তাই রাষ্ট্রের সরকার রাজতান্ত্রিক,অভিজাত তান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র যাই হোক না কেন... সরকারকে সবসময়ই রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্দিষ্ট রীতিনীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এবং তার কাজের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে এবং এসব কাজের মধ্যে জনগণের কল্যাণের জন্য সরকারকে বিভিন্ন বিভাগ গঠন করতে হবে।।সুশাসনের প্রয়োজনে তিনি সরকারকে  আইন রচনা এবং প্রয়োগের দায়িত্ব পৃথক কতৃপক্ষের ওপর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।।

সম্পত্তির অধিকারঃ- 

জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় জনগণের সম্পত্তির অধিকারকে রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে উল্লেখ করেছেন। জন লকের মতে ঈশ্বর সকলের জন্য সমান ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন এবং তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের সরকারের কোনো রকম হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। তার মত্র যে সরকার জনগণের সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করে প্রাকৃতিক অধিকার খর্ব করতে চায়, সেই সরকার কোন ভাবেই বৈধ সরকার হতে পারে না।

জনগণের স্বাভাবিক অধিকারঃ- 

জন লক তার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনগণকে কিছু স্বাভাবিক ক্ষমতা অধিকারের অধিকারী বলেছেন। তার মতে যে সরকার বা রাষ্ট্র জনগণের ওপর অত্যাচার, শোষন এবং নির্যাতন ইত্যাদি চালায় সেই সরকারের বিরোধিতা করে সেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা জনগণের অধিকার বলে তিনি মনে করতেন। যে সরকার এরুপ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিপ্লব ও বিদ্রোহের কথা না বললেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।।

জন লকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিভিন্ন ত্রুটি এবং গুরুত্বঃ- 

জন লক আধুনিক রাষ্ট্র সম্পর্কে যে সমস্ত বিষয়গুলির কথা উল্লেখ করেছেন,  সেই প্রতিপাদ্য বিষয় গুলিতে যেমন বিভিন্ন ভুল ত্রুটি রয়েছে, ঠিক তেমনই তার বেশ কিছু গুরুত্বও রয়েছে। যেমন- 

জনকের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত প্রতিপাদ্যের কিছু ত্রুটি - 

স্ববিরোধিতা- লক একদিকে স্বাভাবিক অধিকারের কথা বললেও অন্যদিকে সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করায় তাঁর মধ্যে স্ববিরোধিতা লক্ষ করা যায়। ও সামাজিক বৈষম্য- লক সাম্যের আদর্শ প্রচার করলেও বাস্তবক্ষেত্রে সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বৈষম্যমূলক সমাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এর ফলে তাঁর সাম্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতার তত্ত্ব গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। 

বুর্জোয়া মানসিকতা- লক মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের কথা স্বীকার করে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধানকে পরোক্ষে সমর্থন করেছেন। এজন্য ম্যাকফারসন লককে ' বুর্জোয়া চিন্তানায়ক' বলে অভিহিত করেছেন।

দাসদের প্রতি উদাসীনতা- লক শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের রাজনৈতিক সমাজের স্বাধীন ও পূর্ণ সদস্য হিসেবে মেনে নেননি।

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বঃ- 

জন লকের রাষ্ট্রচিন্তায় কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা গেলেও, জন লকের রাষ্ট্রচিন্তায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর তত্ত্বের বিভিন্ন গুরুত্বও অনস্বীকার্য। যেমন—

অভিনবত্ব- লকের রাষ্ট্রচিন্তায় নতুনত্ব কম থাকলেও যথেষ্ট অভিনবত্ব ছিল। কেন-না, তাঁর পূর্ববর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের বিক্ষিপ্ত ও অসংলগ্ন তত্ত্বগুলিকে লক অসাধারণ দক্ষতা সহকারে সুসংবদ্ধভাবে এক জায়গায় উপস্থাপন করেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি- আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে লকের রাষ্ট্রনৈতিক তত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। লকের রাষ্ট্রচিন্তায় আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছায়া লক্ষ করা যায়। 

দুই যুগের সংমিশ্রণ- ওয়েপারের মতে, লক ছিলেন একদিকে মধ্যযুগীয় বিশাল ঐতিহ্যের অন্যতম শেষ প্রবক্তা এবং অপরদিকে আধুনিক যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি যেমন সম্পত্তির অধিকারকে পবিত্র অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যযুগীয় ধারাকে অনুসরণ করেছেন, তেমনি উদারনীতিবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রভৃতির প্রচার করে আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। 

আইনের শাসন- লক ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে আইনের শাসনের অধীনে আনার যে চিন্তা করেছিলেন তা আধুনিক বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইনের শাসনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।

আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র ( WB Class 11 history chapter 4 question answers in bengali ) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'জন লকের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোচনা করো বা জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা'  সম্পর্কে যে নোট শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে লাগবে।

Tags : 

wb class 11 history question answer | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 11 history suggestion 2023 | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উএর | WB Class 11 History Question Answer & Notes | wb Class 11 History Notes | WB Class 11 History Suggestion 2023



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top